বধুয়া পর্ব- ১০

0
1811

বধুয়া পর্ব- ১০

হুহুওও.. হুহুওইইই… তানহা ফুপিয়ে কেঁদে উঠলো।
– কাঁদছিস কেন?
” পরদেশী পরদেশী যানা নেহি….” দেখছিস আমার শাহরুখের কত কষ্ট! কত দুঃখ ! ওর দুঃখ দেখে মনে পড়ছে
আমারও অনেক দুঃখ। তাই কাঁদছি!
– হ তোর তো অনেক দুঃখ। বিরাট দুঃখ!
তানহার দুঃখে আমার চোখে পানি এসে গেছে।
-বইন ক কে তোরে দুঃখ দিছে?!তুই একবার নাম ক শালার… সেনাপতি,আমার সুলেমানি তলোয়ার দাও…
নীরা কুর্নিশ করে বললো – জো হুকুম জাহাপনা
– আমার জামাই নাইইই… ইইই,তানহা আবারও কাঁদছে!
ইসসস! মানুষের দুঃখ সহ্য করতে পারিনা! বোনের কষ্ট সহ্য করবো কিভাবে?
– সেনাপতি, যুদ্ধ করে ছিনিয়ে আনো জামাই…আক্রমন…
নীরা আর আমি যুদ্ধে ঝাপিয়ে পড়ি সুলেমানী তলোয়ার নিয়ে মানে হাতের চামচ নিয়ে।
ক্লান্ত হয়ে আবার বসে পড়ি।

– ভাবি!
– উউ… কে ভাবি?? আমি ভাবি না। আমি হুহু.. হুহু
– হুহ.. হুহুহু.. হুহুহু…. হিহিহিহি..
– হুসসস!
নীরা ঠোঁটে আঙুল রেখে চুপ করতে বলে।
– হুসস!
নীরা বললো -একটা জোকস বলি, কাউকে বলবা না কিন্তু।।
– বলবো না। তানহাকে বললাম, একদম কাউকে বলবি না।
– একটা ছেলে বউকে বলেছিলো হানিমুনে তারা নেপাল যাবে, সে বউ নিয়া কাঠমুন্ডু গেছে! হাহাহা…. কাঠ – মুন্ডু…. কাঠদিয়ে ফার্নিচার বানাবে…. হাহাহা।
– হিহিহিহি… হিহিহি
কি জোকস শুনালি… হাসতে হাসতে পেট ব্যথা করতেছে!

-ও নীরা! আমি উড়ছি! তানহা, দেখ! দেখ! আমি উড়ছি!
– ও আল্লাহ! সত্যিই আমি উড়ছি!
– ওমা! আমি উড়ে উড়ে তোমার কাছে চলে আসছি।
ওমা! কি কান্ড!
কি কান্ড!!হিহিহি.. হিহি….
আমি মাহিরের গলায় জড়িয়ে ধরে আছি।আমার ঠোঁটের কোনে প্রশস্ত মুচকি হাসি।
গভীর ভাবে দেখছি।
– হাসছিস কেন?
– চুমু খাবো!
– কি?
-;উওম্মাহ!
মাহিরের ঠোঁটে চুমু খেলাম।
– কেন চুমু দিয়েছি বলো?
– কেন??
– যুদ্ধ বিমান কিনেছি। চাঁন্দে যাবো।
আসো আমরা উড়ি… আসো আসো।
উড়ি… উড়ি যায়… উড়ি উড়ি যায়…
যায়….
গেল…
মামণি!
ও মামণি …. তোমার ছেলে কথা শুনে না…
না না….
হুহু….হুহহু….পানিতে ভেজাল। পানিতে ডুবে যাচ্ছি কেন??।।
বাঁচাও! বাঁচাও!
– কি হয়েছে? চেঁচাচ্ছিস কেন?
– ভেজাল পানিতে ডুবে যাচ্ছি, আমারে বাঁচাও- আমি সাঁতার জানি না, পানি খেয়ে পেট ভরে গেছে।
ও মাহিরগো আমি মরে গেছি… মরে গেলাম!
আমি পানিতে ডুবে পানি খেতে খেতে মরে গেছি! সেই দুঃখে কাঁদতে কাঁদতে …. আমি ঘুমিয়ে পড়ি।

পরদিন যখন ঘুম ভাঙে দেখি জোহরের আজান দিচ্ছে। মাথা ভনভন করছে। আবার শুয়ে পড়লাম। চোখ খুলে দেখি একেবারে বিকাল গড়িয়ে যাচ্ছে। তাড়াতাড়ি উঠে বসলাম।
মাথা একদম ফাঁকা ফাঁকা লাগছে। চিনচিন ব্যথা করছে।

তাড়াতাড়ি শাওয়ার নিলাম । পেটের নাড়িভুড়ি বের যাবার অবস্থা ক্ষুধায়।নীরা, তানহার কি অবস্থা কে জানে! খোঁজ নিতে হবে। এদিকে মোবাইল অফ হয়ে গেছে।
কিন্তু একটা জিনিস মেলাতে পারছিনা।আমি তো নীরার রুমে ছিলাম। আমার রুমে কখন গেলাম??
নীরা আর তাহনার খোঁজ নিতে রুমে গিয়ে ওদের পেলাম না, তারা বোধ হয় নিচেই আছে। আগে পেট ঠান্ডা করতে হবে। নিচে গিয়ে খালাকে বললাম খাবার দিতে।
এদিকে নীরা আর তানহা সোফায় চুপচাপ বসে আছে। আমাকে দেখেও কিছু বললো না।আমিও ঘাঁটালাম না বেশি,
শুধু বললাম – এখনো ঝিমাচ্ছিস? খা বেশি করে খা!
ডাইনিং এ বসার পর দেখি খালা – গ্রীল আর চিলি পরটা দিলো খেতে!
দেখে একটি ভড়কে গেলাম। রাতের কথা মনে পড়ছিলো।
– খালা,এগুলো খাবো না। ভাত দাও।
এমন সময় টেবিলে আমার পাশে একটা বোতল রাখে, কে রাখছে সেটা দেখার আগে বোতল দেখে মাথা নষ্ট!
কাল রাতের ওয়াইনের বোতল! এখনো অনেকটা রয়ে গেছে।
বোতল কে রাখলো দেখার জন্য পিছনে তাকালাম। দেখে আমার মুখ দিয়ে কোনো কথা বের হচ্ছে না।

‘এটাও খেতে হবে সাথে, না হলে জমবে না’ বলে বোতলটা আরও এগিয়ে দিলো।
কোনো রকমে বললাম – আমি ভাত খাবো।

খালা ভাত নিয়ে আসে।এক গ্লাস তেতুল সরবত হাতে ধরিয়ে দিয়ে বলেন – আগে এটা খাইয়া নাও।
চুপচাপ সেটা খেয়ে ভাত খেতে বসলাম। মনে হচ্ছে কতদিন পরে যেন খাচ্ছি!
যদিও খাবার গলা দিয়ে নামার কথা নয়! নীরা আর তানহা এভাবে কেন বসে আছে এবার বুঝলাম।
যা হবার হবে, আগে পেট ঠান্ডা করতে হবে।
বলা তো যায় না, বাসা থেকে বের করে দিলে না খেয়ে মরতে হবে!

খাবার পরে খালা এককাপ কড়া লিকারের চা দিলেন। মনে মনে এটাই চাইছিলাম কিন্তু সাহস করে বলতে পারছিলাম না।
ড্রয়িং রুমে এসে দেখি তানহা-নীরা কানে ধরে ফ্লোরে হাটুমুড়ি দিয়ে বসে আছে মুখ কালো করে।
মাহির সামনের সোফায় বসে ফোনে কথা বলছে।
যেখানে বাঘের ভয়,সেখানেই সন্ধ্যে হয়!
আমার মাথা পুরো আউলিয়ে যাচ্ছে। মাহির যে বিষয়টি জেনে গেছে সেটা বলার অপেক্ষা রাখে না, কিন্তু কখন আসলো কখন কি!
মনে হয় সকালে আসছে।
ফোনে কথা বলতে দেখে ভাবলাম চুপচাপ কেটে পড়ি।রুমে চলে যাই।যেই সিড়িতে পা দিয়েছি অমনি ডাক পড়লো – কুহু
– কি?
– কোথায় যাচ্ছিস? এদিকে আয়।

চলবে…

# Munni

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here