শ্যামাঙ্গণা-২০,২১

0
228

শ্যামাঙ্গণা-২০,২১

২০
————-

জানালার ধারে দাঁড়িয়ে আছে শাওমি। বাহিরে মুশল ধারে বৃষ্টি হচ্ছে। জানালা খোলা থাকায় বড় বড় বৃষ্টির ছেটা শাওমির গায়ে পরছে। বৃষ্টির ফোঁটা গায়ে পড়তেই মনে হচ্ছে শরীর জুড়ে ঠান্ডা হাওয়া হুটোপুটি খেলছে। শাওমি চোখ বন্ধ করে আছে। প্রকৃতির শীতলতা অনুভব করছে সে। হয়তো ঋতু পরিবর্তন হবে বলেই বৃষ্টির আগমন।

আজ ঝুমুরের বিয়েটা হয়েই গেছে তার স্বপ্ন পুরুষের সঙ্গে। ভালোবাসার মানুষটার উপর এখন অন্য কারোর সিল মোহর জানার পর শাওমির খুশি হওয়ার কথা নয় তবে তবুও সে খুশি। অন্তত ছোটবেলার সখীর খুশির কারণ তো হতে পেরেছে। শাওমি ছিনিয়ে নেওয়াতে নয় ফিরিয়ে দেওয়াতে বিশ্বাসী। ফাহমান ও ঝুমুরকে একসঙ্গে দেখলে তার হৃদয় যেমন অসহনশীল যন্ত্রণায় কাতরায় তেমনই প্রিয় সখীর সুখের কথা ভেবে সুখ সুখ অনুভূতিও হয়।

নারী জাতি সহজাতবশত হিংসুটে প্রকৃতির। নিজেদের জিনিস তারা কখনও বিলিয়ে দিতে চায় না। দরকার পড়ে সেচ্ছায় মৃত্যু গ্রহণ করবে কিন্তু স্বামী কিংবা ভালোবাসার মানুষটাকে কখনো ভাগ করবে না। এমনই তারা। কিন্তু শাওমি অন্যরকম। সে কোনোদিনই যা তার নয় তা নিজের করার চেষ্টা করেনি। বরং যেটা যার তাকেই ফিরিয়ে দিয়েছে।

আজ শাওমির মন উচাটন। নিজের জন্য খারাপও লাগছে আবার সখীর জন্য ভালোও লাগছে। আপাতত নিজের কষ্টের কথা সাইডে সরিয়ে রাখলে সে নিজের একমাত্র সখীর জন্য খুবই খুশি। তার খুশির কোনো অন্তত নেই। সে তো জানে ঝুমুর ফাহমানকে কত ভালবাসে। কাজেই ঝুমুরের জন্য সে বেজায় খুশি।

—-

খাওয়া দাওয়া শেষে রান্নাঘরে বাসন কোসন গ্লাভস হাতে ধুচ্ছে ঝুমুর। সবার খাওয়া ইতিমধ্যে শেষ। মনোয়ারা বেগম মিস মারিয়ামের সঙ্গে বসার ঘরে কথা বলছেন। শাওমি রান্নাঘরে ঝুমুরকে সাহায্য করছে। খাবার ঘর থেকে একে একে সব প্লেট, বাটি এনে দিয়েছে সে। সেই সঙ্গে ঝুমুর যা ধুচ্ছে সেগুলো পানি ঝরতে দিচ্ছে। ঝুমুর থালা বাসন ধুতে ধুতেই খেয়াল করলো মিস মারিয়ামের গলা পাওয়া যাচ্ছে। উনি বলছেন এখন উঠবেন।

ঝুমুর সঙ্গে সঙ্গে গ্লাভস পড়া সাবান ভরা হাতে এগিয়ে গেলো। মিস মারিয়াম বেরিয়ে যাওয়ার জন্য রান্নাঘরের কাছে এসেই দাড়িয়েছিলেন। তিনি ঝুমুরকে দেখা মাত্র এগিয়ে এসে জড়িয়ে ধরলেন। ঝুমুরের হাতে থাকা গ্লাভস সাবান ভরা হলেও সে তার কব্জি মিস মারিয়ামের পিঠে রেখে বললো ‘ কাল দেখা হবে মণি। আমি বিকেলে যাবো তিন তলায়। তারপর দুজন মিলে ক্রইসান্ট বানাবো। তুমি আমাকে শিখিয়ে দিও কিন্তু। ‘

ঝুমুরের কথা শুনে হাসলেন মিস মারিয়াম। ঝুমুরকে নিজের কাছ থেকে ছাড়িয়ে নিয়ে ঝুমুরের ললাটে চুমু খেয়ে বললেন ‘ আচ্ছা, শিখাবো তোকে। ঠিক মতো পড়াশুনা করিস আর ভালো মতো পরীক্ষা দিবি। তোকে যে আমার বাড়ি নিয়ে যাওয়ার অনেক তাড়া। ‘

ঝুমুর উত্তরে কিছু বললো না। আড়চোখে আশেপাশে তাকাল কিন্তু যাকে খুঁজছে সেই নেই। হয়তো সে আগেভাগেই সিড়ি দিয়ে উঠে গেছে। ফাহমান বেরিয়ে গেছে ভাবতেই ঝুমুরের মন খারাপ হলো। মানুষটা এমন কেন ? যাওয়ার আগে একবার বলেও গেলো না। বলে গেলে কি এমন ক্ষতি হতো ? হঠাৎ হঠাৎ কেন যে এমন অদ্ভুত ব্যবহার করে কে জানে। যেন ঝুমুর তার পাকা ধানে মই দিয়েছে।

ঝুমুর মন খারাপ নিয়েই কাজগুলো শেষ করলো। কাজ শেষে রান্নাঘরের সবকিছু গুছিয়ে পরিষ্কার করলো এবং শাওমিকে ঘরে আসতে বলে নিজে এগিয়ে গেলো। শাওমি তখন ফোন দেখতে ব্যস্ত। সোফায় বসে সে। ঝুমুরের কথায় হা না কিছু উত্তর দিলো না কারণ সে জানে ঝুমুর নিজের রুমে ফিরে আর ওকে নিজের ঘরে চাইবে না। আজ আর ওই ঘরে শাওমির প্রয়োজন নেই।

—-

ওড়নায় হাত মুছতে মুছতে ঘরে ঢুকলো ঝুমুর। ঘর জুড়ে অন্ধকারেরা হুটোপুটি করছে। ঝুমুর সুইচ বোর্ডের গায়ে হাত চালিয়ে রুমের টিমটিমে হলুদ ছোট ছোট বাতিগুলো জ্বালিয়ে দিল। বাতি জ্বলে উঠতেই আবছা আলোতে ঝুমুর দেখলো তার ঘরের জানালার কাছে কেউ দাড়িয়ে আছে। অবয়ব তার লম্বাটে এবং আবছা আলোতে তমসায় ঘেরা। অবয়বের চেহারা দেখা না গেলেও ঝুমুর তার দৈহিক গড়ন দেখেই বুঝতে পারলো ওটা ফাহমান।

ফাহমানকে নিজের ঘরে আশা করেনি ঝুমুর। ভেবেছিল ও হয়তো সবার আগেই উপরে চলে গেছে। কিন্তু এখন দেখা যাচ্ছে সে উপরেই যায়নি উল্টো দরজা দিয়ে ওর ঘরেতেই বসেছিল। ঝুমুর ভাবলো ওর আর ফাহমানের একান্তে একটু সময় কাটানো দরকার। এই রাত নিয়ে তার কত স্বপ্ন ছিল। ফাহমানের সঙ্গে গল্প করবে, নিজের অনেক পুরনো স্মৃতি চারণ করবে।

এই রাত প্রত্যেকের জীবনে একবারই আসে অথচ ঝুমুর কিনা আজকের রাতটা বিবাহিত হয়েও স্বামীহীন কাটাতে হবে ভেবেছিল। তারমানে এই জন্যই শাওমি ঘরের বাইরে বসেছিল। নাহলে শাওমি বরাবরই ঝুমুরের ঘর ছাড়া আর কোনো ঘরে বসে না।
কিন্তু ফাহমানই বা কেন বৃষ্টির মধ্যে জানালা খুলে দাড়িয়ে আছে ? জানালা তো লাগানো দরকার নাহলে বৃষ্টির ফোঁটা ফাহমানের গায়ে পড়ে ঠান্ডা লাগবে।

‘ ডাক্তার সাহেব!! এভাবে যে জানালা খুলে দাড়িয়ে আছেন কোনো খবর আছে ? বৃষ্টি তো সব গায়েই পড়ছে। ঠান্ডা বেধে গেলে কি বিচ্ছিরি কান্ড হবে ভাবেন তো। দেখি সরেন, আমি জানালা লাগাচ্ছি। ‘

ফাহমান যখন জানালার ধারে দাঁড়িয়ে দাড়িয়েই বাইরের দৃশ্য দেখছিল তখনই পাশ থেকে ঝুমুরের গলা পেলো। ঝুমুরকে নিজের কাছে পেয়ে আর সামলে রাখতে পারল না। সহসা জড়িয়ে ধরলো ঝুমুরকে। এমন জড়িয়ে ধরাতে ঝুমুর চমকে উঠলো। তার ছোট্ট শরীর পিষে যাচ্ছে ফাহমানের পেশি বহুল বলিষ্ঠ শরীরে। ঝুমুরের দম ফেলতে কেমন কষ্ট হচ্ছে।

তবে শারীরিক কষ্টের থেকেও বিস্মিত ভাবটা প্রকট ঝুমুরের মধ্যে। ফাহমান হঠাৎ কেমন অদ্ভুত ভঙ্গিতে জড়িয়ে ধরেছে তাকে। ফাহমানের চোখ বেয়ে গড়িয়ে পড়া নোনা অশ্রু ঝুমুরের কাধের কাছটা ভিজিয়ে দিচ্ছে। ঝুমুর বুঝতে পড়ছে ফাহমান কাদঁছে। কিন্তু কেন ? ঝুমুর শুনেছিল ছেলেরা সহজে কাদে না। সে নিজেও প্রত্যক্ষ সাক্ষী এই ঘটনার। ওর অমনির মৃত্যুতে মোতালেব সাহেব কাদেননি, শুধু ঠায় বসেছিলেন।

‘ ডাক্তার সাহেব!! আপনি কি কাদছেন ? কিন্তু কেন ? কি হয়েছে ? আমাকে বলুন কি হয়েছে ? এমনও হতে পারে আমি আপনার সমস্যার সমাধান করে দিলাম। ‘

ফাহমানের পিঠে আলতো হাতে হাত বুলিয়ে দিচ্ছে ঝুমুর। যদিও ফাহমান তাকে জড়িয়ে ধরে আছে ভাবতে লজ্জা লাগছে কিন্তু ফাহমানের কষ্টের কাছে সেই লজ্জা কিছু না। এখন ফাহমানের কষ্টের সময় সে তো আর লজ্জায় দোহাই দিয়ে দূরে সরে যেতে পারে না। কাজেই ও ফাহমানকে শান্ত করার সর্বাত্মক চেষ্টা করলো।

‘ কি হয়েছে ডাক্তার সাহেব ? কিছু বলবেন তো ? কেউ কি কিছু বলেছে ? কষ্ট হচ্ছে আপনার ? না বললে কি করে বুঝবো ? ‘

ঝুমুরের কথার জবাবে কিছুই বললো না ফাহমান। সে নিঃশব্দে কেঁদে যাচ্ছে। সত্যি বলতে এত আনন্দের দিন, তার জীবনের স্মরণীয় দিনে তার সুখের হাতছানি পেয়ে ভীষন আবেগী হয়ে পড়েছে সে। আনন্দের এই অশ্রু আর আটকে রাখতে পারেনি। শ্রাবণের বর্ষণ রুপে নেমে এসেছে তারা।

কাদতে কাদতে একসময় ফাহমান নিজেই ঝুমুরকে আগলে ধরে বললো ‘ এগুলো কষ্টের কান্না নয় অঙ্গণা। দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর তোমাকে নিজের করতে পারার সুখের অশ্রু এগুলো। আজ আমার আনন্দের শেষ নেই। তোমাকে পেয়ে জগতের সবথেকে সুখী ব্যক্তি আমি। ‘

ফাহমানের কথা শুনে ঝুমুর বললো ‘ আপনি আমাদের বিয়ে হয়েছে বলে কাদছেন ? শুনে ছিলাম বিয়ের পরে বিদায়ের সময় মেয়েরা কাদে। কিন্তু আমার বিয়েতে তো দেখি সবই অদ্ভুত। আমার বিয়ে হয়ে যায় আমি জানতে পারিনা। আমার পিছন পিছন লাভ ম্যারেজকে অ্যারেঞ্জ ম্যারেজে রুপও দিয়ে ফেলে অথচ আমি জানি না। বিয়ের পরে আমার জায়গায় আমার বর কাদে। এসব হচ্ছে কি ? এভাবে কেউ কাদে ? জানেন আমি কত ভয় পেয়ে গেছিলাম ? ‘

ঝুমুরের কথায় ফাহমান এবার একটু দূরে সরে দাঁড়ালো। চোখ মুছে ঝুমুরের হাত দুটো নিজের হাতে তুলে নিয়ে বললো ‘ এসবের জন্য দায়ী আপনি মিসেস ফাহমান। আপনাকে পাওয়ার জন্য যে কত দীর্ঘ প্রতিক্ষা করেছি জানেন ? সাত দিন কোনো দেখা নেই, কথা নেই, চোখাচোখি নেই। আমিই জানি আমি কিভাবে ছিলাম। ‘

‘ বুঝেছি আপনি অনেক কষ্ট পেয়েছেন। এটা ঠিক আমাদের এক হতে অনেক কষ্ট করতে হয়েছে। যদিও সব কষ্ট আপনি করেছেন কিন্তু আপনাকে না দেখে এতদিন থাকা আমার জন্যও কঠিন ছিল। কিন্তু আই হোপ আমাদের ভবিষ্যৎ জীবন এতটাই সুন্দর হবে যে পিছন ফিরে অতীতের কথা আর ভাবতে হবে না। ‘

ঝুমুরের মায়া ভরা নাক টানা হাসি দেখে ফাহমানের সুখ সুখ অনুভূতি হলো। ও লক্ষ্য করেছে ঝুমুর যখন হাসে তখন নাক টেনে টেনে নাকে শব্দ করে হাসে। আবার রেগে গেলেও নাক টেনে শব্দ করে তা প্রকাশ করে। ঝুমুরের এই নাক টানা হাসি শুনলেই আগে ফাহমানের মনে হতো এই হাসি যদি সে সারাজীবন পেত। অথচ এখন তার ইচ্ছা পূরণ হয়েছে।

ঝুমুরকে নিজের করে পাওয়া অনেক দিনের পুরনো ইচ্ছা ফাহমানের। আজ সেই ইচ্ছা পূরণ করতে পেরে সে যেন সাত আসমানে ভাসছে। ঝুমুরকে এখন থেকে রোজ দেখতে পারবে, ইচ্ছে করলে ছুঁয়েও দিতে পারবে ভাবলেই কেমন এক মিশ্র অনুভূতি হয়। যেমন এখনও হচ্ছে। ঝুমুরকে একবারের জন্য ছুঁয়ে দিতে ইচ্ছা করছে। একেবারে নিজের করে নিতে ইচ্ছা করছে।

ফাহমান বরাবরই তার মনের ইচ্ছাকে সর্বাগ্রে প্রাধান্য দেয়। তাই এবারও তার নড়চড় হলো না। আলতো হাতে ঝুমুরকে নিজের দিকে টেনে নিয়ে জড়িয়ে ধরলো সে। ঝুমুরের লম্বা, পাতলা চুলের খোঁপা ছেড়ে দিল। চুলে হাত বুলিয়ে দিতে দিতে মৃদু গলায় ধীর স্বরে বললো ‘ আই লাভ ইউ অঙ্গণা ‘

ফাহমানের এহেন হাবভাবে ঝুমুরের লজ্জায় পড়ি কি মরি অবস্থা। আগে কোনওদিন এমন কিছু হয়নি তার সঙ্গে। কোনওদিন কোনো ছেলের সংস্পর্শে আসার প্রয়োজন পড়েনি। অথচ আজ তার বিয়ে হয়েছে তার ভালোবাসার মানুষটার সঙ্গে এবং তাদের বাসর রাত। ঝুমুর জানে তার ডাক্তার সাহেব তাকে অনেক ভালোবাসে। সেও অনেক ভালোবাসে ফাহমানকে কিন্তু কোনওদিন প্রকাশ করার সুযোগ পায়নি। মাঝে মাঝে ইচ্ছে করে নিজের অনুভূতিগুলো মেলে ধরতে। যেমন আজ করছে তাই সেও ফাহমানকে জড়িয়ে ধরে বলল ‘ আই লাভ ইউ টু ডাক্তার সাহেব। ‘

ঝুমুরের কথা শুনে ফাহমান তাকে আরও নিবিড় ভাবে জড়িয়ে ধরলো। ঘর জুড়ে লেবু ফলের গন্ধ আর বাগানে ফুটে ওঠা শিউলি ফুলের কুঁড়ি নতুন এক জীবনের সংকেত। ফাহমান ভাসিয়ে নিয়েছে ঝুমুরকে তার আগ্রাসী ভালোবাসার দাপটে।

চলবে…
মিফতা তিমু

শ্যামাঙ্গণা-২১
————-

ঘুটঘুটে অন্ধকার রাত্রির পর আবারও নতুন এক সকাল। সেই সঙ্গে ঝুমুরের নতুন এক জীবনের সূচনা। ঘুম ভেংগে নিজেকে ফাহমানের বক্ষস্থলে আবদ্ধ পেলো ঝুমুর। ফাহমান তাকে এমনভাবে জাপটে ধরে আছে যেন ছেড়ে দিলেই তার সুখ পাখি উড়ে যাবে। ঝুমুর লাজ রাঙা হয়ে ফাহমানের কাছ থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে নিল। গায়ে ওড়না ভালো করে জড়িয়ে জামা কাপড় নিয়ে বাথরুমে ঢুকলো গোসল করতে।

গোসল শেষে রোজকার মতো বাগানে এসে দাঁড়ালো ঝুমুর। এই কদিনে গাছগুলোকে দেখেই মনে হচ্ছে যেন সে কত বছর এদের দেখেনি। ক্লান্ত, পরিশ্রান্ত দিন শেষে এই এক ফাহমান ও বাগানই তো তার সুখের আশ্রয়। অথচ এদের ছেড়েই ও এতদিন ছিল। কিভাবে যে ছিল সেটা ভাবতেই অবাক লাগে ঝুমুরের।

বাগান ঘুরতে ঘুরতে ঝুমুর লক্ষ্য করলো তার শিউলি গাছে কুড়ি উঠেছে। তারমানে নতুন ফুল ফুটবে। তাহলে গ্রীষ্মের আগমন ঘটতে চলেছে। কোনো এক অজানা কারণে ঝুমুরের গ্রীষ্মকাল অনেক পছন্দ। গ্রীষ্মের আগমন তার জীবনে সুখবার্তা বয়ে আনে। তার প্রিয় ফুলেরা ফুটতে শুরু করে। কিন্তু এবার জীবনের ১৭টা গ্রীষ্ম পেরিয়ে নতুন গ্রীষ্মে সে তার ভালোবাসার মানুষকেও নিজের করে পেয়েছে। এ যেন এক নতুন অভিজ্ঞতা।

ঝুমুর যখন শিউলি তলায় দাঁড়িয়ে এক দৃষ্টে গাছ দেখতে ব্যস্ত তখনই পিছন থেকে এক জোড়া উষ্ণ হাত তাকে আষ্টেপিষ্টে জড়িয়ে ধরলো। পরিচিত স্পর্শে ঝুমুর হাসলো। তাদের প্রণয়ে ফাহমান কোনওদিন যেচে তাকে ছুঁয়ে দেখেনি শুধুমাত্র সে অপবিত্র হয়ে যাবে এই ভয়ে। কোনওদিন ফাহমানের স্পর্শ অনুভব করতে না পারা ঝুমুরও স্রেফ কাল রাতে প্রথম বারের মত ফাহমানের স্পর্শ পেয়ে সেই স্পর্শ চিরকালের জন্য চিনে নিয়েছে।

ঝুমুর তার অবিন্যস্ত ভেজা চুল ভর্তি মাথা ফাহমানের বুকে এলিয়ে দিল। ফাহমান আলতো হাতে ঝুমুরকে জড়িয়ে ধরে দাড়িয়ে আছে। ভোরবেলার স্নিগ্ধ পরিবেশে সে তার শ্যামাঙ্গণাকে জড়িয়ে নীরব,অব্যক্ত অনুভূতিগুলো অনুভব করতে ব্যস্ত। জীবনে এতটা সুখী তার কোনওদিন মনে হয়নি যতটা আজ মনে হচ্ছে। আসলেই সে তানিয়া শাহজাহানের কাছে অনেক কৃতজ্ঞ এই ফুলের মত পবিত্র তার শ্যামাঙ্গণাকে তার কাছে সযত্নে তুলে দেওয়ার জন্য।

‘ আমি আজ খুব খুশি। ‘

ঝুমুরের কথায় ফাহমানের ধ্যান ভঙ্গ হলো। ও ঝুমুরের গলায় নিজের নাক ছুঁয়ে দিয়ে আদুরে গলায় বলল ‘ তাই ? তা রাজকুমারীর এই খুশির কারণ কি জানতে পারি ? ‘
‘ এই প্রথম আপনি আমার একান্তই আপনজন, খুবই কাছের একজন মানুষ রুপে আমার বাগানে এসেছেন। বাগান আমার একটা আলাদা রাজ্য। এখানের সবকিছু আমার সুখ,দুঃখ,হাসি কান্না এসবের সাক্ষী। আর সেই রাজ্যেই আপনি আসার সুযোগ পেয়েছেন। আমার বাগানে কেউ তেমন আসে না। আপি আর নানু মাঝে মাঝে আসেন। ‘

ঝুমুরের কথা শুনে ফাহমান বললো ‘ তাহলে বলতে হয় আমি অনেক লাকি। রাজকুমারী ঝুমুর আমাকে তার রাজ্যে ঢুকতে দিয়েছেন। আপনার এত উদার মানসিকতার জন্য আপনাকে কুর্নিশ জানাই রাজকুমারী। ‘

শেষের কথাগুলো ফাহমান ঝুমুরকে ছেড়ে খানিকটা দূরে সরে গিয়ে ঝুমুরের সামনে মাথা ঝুঁকিয়ে বললো। ফাহমানকে এমন করতে দেখে হাসলো ঝুমুর। এগিয়ে গিয়ে ফাহমানের বুকে মাথা রেখে বললো ‘ অনেক ভালোবাসি ডাক্তার সাহেব। এতটা ভালবাসি যতটা হয়তো আমি নিজেও জানিনা। ‘

এই প্রথম মনে হয় ঝুমুরের মুখ থেকে ভালোবাসি কথাটা শুনলো ফাহমান। ঝুমুরের চোখে মুখে সর্বদা নিজের জন্য ভালো লাগা, মুগ্ধতা দেখলেও কোনওদিন ঝুমুরকে বলতে শুনেনি যে সে ফাহমানকে ভালোবাসে। কাজেই এই প্রথম শুনে সে স্তব্ধ। মুখের ভাষা হারিয়েছে। ঝুমুর তাকে নীরব দেখে মাথা তুলল। বললো ‘ চুপ করে আছেন যে। ‘

ঝুমুরের কথায় উত্তর দিলো ফাহমান ‘ কোনওদিন যে ভালোবাসি কথাটা শোনার সৌভাগ্য হবে সেটা ভাবতেই পারিনি। ভেবেছিলাম এই জনমে আর ভালোবাসি শোনা হবে না। ‘
ঝুমুর ফাহমানের কথায় অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলো ‘ ওমা কেন ? ‘

‘ আজ অব্দি হাজারবার পছন্দ করি, ভালোবাসি বলেছি কিন্তু তুই একবারও জবাব দিলি না। উল্টো জবাবে শুধু হাসিস। এই কারণেই ভেবে নিয়েছিলাম জীবনে বোধ হয় আর ভালোবাসি শোনা হবে না। ‘

ফাহমানের কথায় হো হো করে হেসে দিল ঝুমুর। ঝুমুর ভালো করেই বুঝতে পারছে অতিরিক্ত ভালোবেসে ফাহমান তাকে তুই তুই করে ডাকছে। যাক ভালোবেসেই বলুক না রাগ করেই ঝুমুরের বড্ড ভালো লাগে ফাহমানের মুখে তুই শুনতে। তবে ঝুমুর ফাহমানের বুকে নাক ঠেকিয়ে বললো ‘ আজ বলেছি তো। এখন তাতেই খুশি হয়ে যান। তাছাড়া ভালোবাসি বলার কাজ শুধু ছেলেদের। মেয়েরা অত ভালোবাসি,ভালোবাসি করে না। ‘

কথাগুলো বলে ঝুমুর শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো ফাহমানকে। ফাহমান ঝুমুরের কথায় রাগ করবে কি উল্টো হেসেই দিলো। ঝুমুরের মুখ তুলে ঠোঁটের কোণায় আদুরে চুমু খেয়ে আবারও জড়িয়ে ধরলো। পূর্বাকাশে সূর্য উঠতে শুরু করেছে। সূর্যের চিকন রশ্মিতে ফাহমান ও ঝুমুরের নব জীবনের সূচনা যেন পরিলক্ষিত।

—-

ঝুমুরের ঘরের দরজা খোলা বলে সাবধানে ঢুকেছিল শাওমি। ঘরে ঢুকে দেখলো কেউ নেই ঘরে। বিছানা এলোমেলো করা। ঘরের জানালা খোলা। ঘরের অবস্থা দেখে হাসলো শাওমি। ঝুমুর বরাবরই খুব গোছালো। অথচ আজ তার ঘরের কি হাল। শাওমি টের পাচ্ছে ঝুমুর আস্তে আস্তে বদলে যাবে। বিয়ে যখন হয়েছে তখন বদলানোটাই স্বাভাবিক। শাওমি এও জানে ঝুমুর যতই বদলে যাক না কেন কখনও ওকে ভুলে যাবে না। এই বিশ্বাস আছে ওর।

শাওমি ঠিক করলো ঝুমুর যখন বেরিয়েছে তখন ঘরটা ওই গুছিয়ে ফেলুক। যেই ভাবা সেই কাজ। শাওমি বিছানা ঠিক করে স্টাডি টেবিলের উপর থাকা বইগুলো গুছিয়ে ফেললো। কলমগুলো জায়গা মতো রাখলো। ঘরের ফার্নিচারগুলো ডাস্টার দিয়ে পরিস্কার করলো। স্মল এন্টিকগুলো ছোট ব্রাশ দিয়ে ঝেড়ে জায়গামতো রাখলো। সবশেষে জানালার ধারে গেলো পর্দা সরিয়ে দিতে।

জানালার পর্দা সরাতেই দক্ষিণের হাওয়া শাওমির গায়ে এসে লাগলো। ভোরের ঠান্ডা হাওয়ায় শাওমি প্রাণ খুলে বড় নিশ্বাস নিল। তারপর জানালার গ্লাস ঠিক করে বাইরের বাগানে চোখ দিলো। চোখে পড়লো ফাহমানের গায়ে হেলান দিয়ে দাড়িয়ে থাকা ঝুমুরকে। যদিও ওদের একসঙ্গে দেখে ওর মনের কোথাও একটা সূক্ষ্ম যন্ত্রণা হচ্ছে কিন্তু নিজের ভালবাসার মানুষগুলোকে একসঙ্গে সুখে দেখে চোখ আরামও পাচ্ছে। সে এক নয়নাভিরাম দৃশ্য।

—-

ফাহমানকে খাইয়ে দিয়ে হসপিটালের জন্য বিদায় দিয়ে তানিয়া শাহজাহানের ঘরে এসে ঢুকলো ঝুমুর। তানিয়া শাহজাহান তার মেয়ে অনামিকাকে নিয়ে ঘুমিয়ে আছেন। অনিল আবার তার মামা ফারুকের সঙ্গে ঘুমিয়েছে। তানিয়া শাহজাহান ও অনামিকা ঘুমানোর পরও বিছানায় অনেকটা জায়গা আছে দেখে ঝুমুর বিড়াল পায়ে বিছানায় নিঃশব্দে উঠলো ঝুমুর। নীরবে তানিয়া শাহজাহানের পাশে শুয়ে তাকে জড়িয়ে ধরলো।

ঝুমুরের হাতের স্পর্শে তানিয়া শাহজাহানের ঘুম হালকা হয়ে এসেছে। উনি মেয়ে অনামিকাকে ছেড়ে ঝুমুরের পাশে ফিরলেন। আদুরে বিড়ালের মতো ঝুমুরকে জড়িয়ে ধরে ঝুমুরের ললাটে চুম্বন করে বললেন ‘ ফাহমান চলে গেছে ? ‘

সত্যি বলতে ঝুমুর কি বলবে বুঝতে পারলো না। ফাহমান কাল তার ঘরে ছিল এটা বাড়ির সকলেই জানে। তবুও যেন বলতে লজ্জা করছে। ঝুমুর কোনোমতে মৃদু গলায় এক কথায় উত্তর দিলো ‘ হু ‘।
ঝুমুরের কথা শুনে হাসলেন তানিয়া শাহজাহান। ঝুমুরকে জড়িয়ে ধরে চোখ বন্ধ অবস্থাতেই হেসে বললেন ‘ এখন লজ্জা পাচ্ছিস কেন ? প্রেম করার সময় মনে ছিল না ? ‘

ঝুমুর কি উত্তর দিবে ভেবে পেলো না। কাজেই বাধ্য হয়ে কথা ঘুরিয়ে বললো ‘ তুমি যে পিছন পিছন এতকিছু করে ফেলেছ এগুলো আগে বললে কি হতো ? উনাকেও বলতে দাওনি। তুমি জানো এই কদিন আমার উপর দিয়ে কত ঝড় গেছে ?পরীক্ষার সময় এত মানসিক অশান্তি নেওয়াটা কষ্টের। কে জানে পরীক্ষার কি অবস্থা। ‘

ঝুমুরের কথায় তানিয়া শাহজাহান আর ঝুমুর এবং ফাহমানের ব্যাপারে কথা তুললেন না। কথা ঘুরিয়ে উনিও বললেন ‘ ভয় কিসের ?যা রেজাল্ট আসবে তাই মেনে ভবিষ্যতে আরও ভালো করার চেষ্টা করবি।তাছাড়া তোর ডাক্তার বর আছে কি করতে ? ওর কাছে যাবি। তুই তো ঠিক করেই রেখেছিস তার মতো মনোবিজ্ঞান বিভাগেই পড়বি। তাহলে এখন থেকেই প্রস্তুতি নে। ‘

ঝুমুর আর কোনো কথা বললো না। তানিয়া শাহজাহানকে জড়িয়ে ধরে সে ঘুমানোর প্রস্তুতি নিচ্ছে। ঘুমটা ভালো করে হয়নি তার। তাই আরেকটু ঘুমানো দরকার। তানিয়া শাহজাহান ঝুমুরের চুলে বিলি কেটে দিচ্ছেন। আরামে ঝুমুরের ঘুম আসতে বেশিক্ষণ লাগলো না। তার আবার বিছানায় পড়তেই ঘুমানোর অভ্যাস। কাজেই আরাম পেয়ে আদুরে বিড়ালের মতো তার ইমোকে জড়িয়ে ঘুমিয়ে পড়ল।

—-

বিছানায় বসে ফোন দেখে দেখে ভার্সিটির নোটস কভার আপ করছিলো হৈমন্তী। ভাইয়ের বিয়ের খুশিতে গতকাল কলেজ যাওয়া হয়নি। তাই পরিচিত এক ক্লাসমেটের সহায়তায় নোটস পেয়ে গেছে। এখন সেটাই তুলছে। হৈমন্তী যখন তার নোটস তুলছে তখনই ওর ফোনের ডিসপ্লেতে আসিফের নাম ভেসে উঠলো। ফোন সাইলেন্ট থাকায় কল রিংটোন বাজেনি।

আসিফের কল পেয়ে হৈমন্তী বই খাতা ছেড়ে উঠলো। কল রিসিভ করে তার রুমের লাগোয়া ছোট বারান্দাতেই গিয়ে দাঁড়ালো যেখানে ছোট ছোট ইনডোর প্লান্টস লাগানো। আসিফ ফোন রিসিভ হওয়ার অপেক্ষাতেই যেন ছিল। হৈমন্তী তার ফোন রিসিভ করতেই ফোনের ওপার থেকে বললো ‘ শুনলাম শালা বাবু বিয়ে করে ফেলেছে। তা কথাটা বাড়ির একমাত্র জামাই হয়েও জানতে পারলাম না। শেষে কিনা বউ রেখে শাশুড়ির কাছ থেকে শুনতে হলো। এই কি আজীবন ঘটবে আমার নসিবে ? ‘

আসিফের কথায় হৈমন্তীর মনে পড়লো আসলেই সে ফাহমানের বিয়ের কথাটা আসিফের কানে তুলেনি। এত ব্যস্ততা সঙ্গে ভার্সিটির পড়া চালিয়ে যাওয়া তাতে যেন ওর দম ফেলবার ফুরসৎই নেই। এই তো সামনেই তার ইয়ার ফাইনাল। এসবের মধ্যে আসিফকে তার ফোন দেওয়া কিংবা আসিফের জন্য সময় ব্যয় করা খুব কমই হয়। উল্টো আসিফ নিজেই বারবার যেচে তাকে ফোন দেয়।

‘ আম… আই অ্যাম সরি। আসলে ভাইয়ার বিয়ে, ভার্সিটির পড়া এরপর আবার সামনে ইয়ার ফাইনাল। এতকিছুর মধ্যে আপনার কথা যেন মাথাতেই থাকে না। আসলে এখনও অভ্যস্ত নই। ‘

হৈমন্তীর কথা আসিফের ঠিক পছন্দ হলো না। সে অসন্তোষ গলায় বললো ‘ এখনও অভ্যস্ত নই মানে ? আমাদের বিয়ের কদিন হয়েছে মাথায় আছে ? আজ আমাদের বিয়ের এক মাস পূর্ণ হয়েছে। অথচ আপনার সেটা মনে নেই হৈমন্তী। এটা কি আদৌ আপনার থেকে এক্সপেকটেড ? আমার প্রতি কি আপনার বিন্দুমাত্র অনুভূতি নেই ? আমাদের বিয়ের ডেট মনে নেই, আমার প্রতি অনুভূতি নেই, আমাদের সম্পর্কের প্রতি দায়িত্ব বোধ নেই। আপনার আছেটা কি ? ‘

আসিফের কথায় হৈমন্তী কি বলবে তার হদিস পেলো না। সে ভালো করেই বুঝতে পারছে আসিফ তার উপর রেগে আছে। কারণ সচরাচর আসিফ তাকে বিবিজান ডাকে কিন্তু এখন হৈমন্তী বলে ডেকেছে। তবে এটা ঠিক তার আজ আসলেই তাদের বিয়ের ডেট মনে ছিল না। কিন্তু আসিফের প্রতি তার অনুভূতি নেই কথাটা বললে ভুল হবে। সে তো জানে আসিফ তার জন্য কি। আসিফ বিহীন প্রতিটা প্রহর তার আসিফের প্রতীক্ষায় কাটে। কাজেই এই অন্যায় শালিসী সে মেনে নিবে না। প্রয়োজনে প্রতিবাদ করবে।

‘ কথাটা আপনি ভুল বললেন। আমার আমাদের বিয়ের ডেট মনে নেই এটা সত্যি কিন্তু আপনার কোনো মূল্য আমার কাছে নেই, আপনার প্রতি কোনো অনুভূতি নেই কথাটা ভুল। স্বামী স্ত্রীর সম্পর্কে অনুভূতি না থাকা কি আদৌ বিশ্বাস যোগ্য ? হ্যাঁ হয়তো আমাদের এখনও সংসার শুরু হয়নি কিন্তু মন থেকে আমি আপনাকেই আমার স্বামী হিসেবে মেনে নিয়েছি ‘

এবার যেন হৈমন্তীর কথা আসিফের মনে ধরলো। ও হাসলো নীরবে। তবে কণ্ঠস্বরে কাঠিন্যতা বজায় রেখে বললো ‘ আমরা যেহেতু স্বামী স্ত্রী কাজেই আমাদের কিছু দায়িত্ব ভাগ করে নেওয়া উচিত। আপনি কি রাজি বিবিজান ? ‘

‘ অবশ্যই রাজি। বিয়ে যখন করেছি তখন দায়িত্বও নিশ্চই পালন করবো। ‘

হৈমন্তীর কথা শুনে শান্তির নিশ্বাস ফেলে আসিফ বললো ‘ তাহলে আমাদের যখন সংসার হবে তখন আমাকে রোজ আদা চা করে খাওয়াতে হবে। সকাল সকাল আদা চায়ের স্বাদ আলাদা। ‘

‘ রাজি কিন্তু আমাদের বিয়ের ডেট থেকে শুরু করে আমার জন্মদিন, আপনার জন্মদিন সবকিছুর ডেট আপনার মনে রাখতে হবে। আমার ডেট মনে থাকে না। ‘

‘ আমি রাজি। যতই প্রেশার থাকুক না কেন পড়াশোনা গাফিলতি করা যাবে না। আমি তোমাকে হেল্প করবো। ‘

‘ রাজি। যেদিন বাসায় থাকবেন সেদিন ঘর পরিষ্কার করতে আমাকে সাহায্য করতে হবে। মায়ের বয়স হয়েছে। উনার এখন আর এসব করার প্রয়োজন নেই। ‘

‘ আমি রাজি। আমার কলেজ পেপার করতে হেল্প করতে হবে। টিচারের বউ যখন হয়েছ তখন সাহায্য করা বাধ্যতামূলক। ‘

‘ রাজি। আমার জিনিসপত্র আপনাকে গুছিয়ে রাখতে হবে। আমি অগোছালো। ঘরের সব কাজ গুছিয়ে করতে পারলেও নিজের জিনিস গুছিয়ে রাখতে পারিনা। ‘

‘ রাজি। অ্যান্ড লাস্টলী ঝগড়া করে এক দিনের বেশি কথা বলা বন্ধ করা যাবে না। যেদিন ঝগড়া হবে সেদিন দুজনে আলাদা থাকবো কিন্তু পরের দিন সকালে আবার সব স্বাভাবিক হতে হবে। ‘

‘ রাজি। ‘

এবার হৈমন্তী আর আসিফ দুজনের মুখেই হাসি ফুটলো। তারা যেসব শর্তে রাজি হয়েছে তা সাধারণত মুখে কেউ স্বীকার করে না। কিন্তু তারা মুখের কথায় বিশ্বাসী। নিজেদের মধ্যে ঝামেলা তারা বেশিক্ষন আটকে রাখবে না। যত তাড়াতাড়ি ঝামেলা মিটানো যায় তত ভালো।

চলবে…
মিফতা তিমু

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here