#মন_পাথরে_হঠাৎ_ঝড়
#পর্ব_১৩
Tahrim Muntahana
হৃদানের রুমটা ঘুরে ঘুরে দেখছে আদর। এতবড় রুম! তার ও রুমটা বড় তবে এতটা বড় না। রুমের সব জিনিস ই কালো। তবে আলাদা একটা সৌন্দর্য ফুটে উঠেছে ঘরটাই। হৃদান সোফায় বসে অপলক দেখছে আদরকে। এত দেখে তবুও যেন স্বাদ মেটেনা। আদরের দেখা শেষ হতেই হৃদানের পাশে এসে বসলো।তখনও হৃদান আদরের দিকেই তাকিয়ে আছে। আদর মুচকি হেসে হৃদানের কাঁধে মাথা দিয়ে বসে রইলো। হৃদান সুযোগ বুঝে আদরের কোমর নিজের হাত দিয়ে চেপে ধরে আরেকটু কাছে নিয়ে আসলো। সময় যেন দুজন দুজনার। কারো মুখেই কথা নেই, দুজনেই চুপটি করে সময়টা উপভোগ করছে। ঠিক তখনি নক পড়লো দরজায়। আদর ছিটকে দূরে সরে বসলো। হৃদান বিরক্ত হলো। এই সময়টাই ই আসতে হলো। শান্তি তে একটু প্রেম ও করতে পারবে না! কে না কে আসলো ভেবে আদর সোফার পেছনে লুকিয়ে পড়লো। হৃদান চোখ মুখ কুচকে আদরের কান্ড দেখছে। বিরক্ত নিয়ে বলে উঠলো,
তুমি চোরের মতো লুকাচ্ছো কেন?
ফুসে উঠলো আদর। তাকে চোর বলল? সে চোর? আদর আহমেদ চোর? এই কথাটাও তার শুনতে হলো! চেঁচিয়ে বলে উঠলো,
ইউ ক্যাবলাব্রিটিশ আপনার সাহস তো কম না আমাকে চোর বলেন! আপনাকে আমি খুন করে ফেলবো!
হৃদান এবার ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গেলো। সে তো শুধু উদাহরণ দিয়েছিলো। এ মেয়ে তো সত্যিই ভেবে নিয়েছে।
আরে না তুমি চোর হতে যাবে কেন। আমি তো জাস্ট এক্সামপল দিয়েছি।
হৃদান এমন কথাতেও আদরের মন গললো না। আবার চেঁচিয়ে বলে উঠলো,
আপনার এক্সামপলের গুষ্টির তুষ্টি। আপনি আমাকে চোর বললেন! থাকবো না এখানে। চলে যাবো। এই আদর আহমেদ কে চোর বলা; আপনাকে যদি আমার ভাইয়ার হাতে কেলানি না খাওয়াইছি দেখবেন!
এই বলে চলে যেতে নিবে হঠাৎ করেই কিছু একটা মনে করে থেমে গেলো। পেছনে ঘুরে ভাব নিয়ে দাড়ালো। হৃদান কিছুই বুঝতে পারলো না। এ মেয়ের কখন কি মনে আছে বুঝা বড় দায়। আদর চোখ ছোট ছোট করে বলল,
আমি কেন যাবো। এটা তো আমার ওয়ান এন্ড অনলি শশুড় বাড়ি। শশুড়বাড়িতে ছেলর থেকে বউয়ের অধিকার বেশী। ইউ ক্যাবলাব্রিটিশ গেট লস্ট ফ্রম মাই হব্বু রুম!
আদের এমন কথায় হেসে দিলো হৃদান।এই মেয়েটা তাকে কিভাবে হাসায় নিজেই জানেনা। হৃদানের মুখে হাসি দেখে আদর ও হাসলো। এগিয়ে গেলো দরজার দিকে হৃদান। দরজা খুলতেই চোখে পড়লো পান্চু কে। মুখ তার গম্ভীর। পান্চু যে মানুষ তার মুখে অলটাইম হাসি থাকে সেখানে গম্ভীর মুখ দেখে হৃদান বুঝলো ইমপরটেন্ট কিছুই। হৃদান কে দেখে পান্চু সালাম জানালো। তারপর বলল,
বস প্রশিক্ষণ রুমে অচেনা একজন ছেলে ছিলো। গোপন রুমে রেখে এসেছি। আমার মনে হচ্ছে পার্টিতে কিছু একটা হবে। তাই আপনাকে সাবধান করতে আসলাম। আপনি গার্ড ছাড়া কোথাও যাবেন না!
হৃদান চমকে উঠলো। কিছু একটা হবে মানে। তার তো তাকে নিয়ে চিন্তা নেই। চিন্তা তো তার দুই কলিজাকে নিয়ে। এই প্রথম এমন পরিস্থিতিতে তাকে বিচলিত দেখালো। পান্চু নিঃশব্দে হাসলো। হয়তো বুঝতে পেরেছে হৃদান চৌধুরীর বিচলিত হওয়ার কারণ। পান্চু হঠাৎ গম্ভীর কন্ঠে বলে উঠলো,
নিজের সফট পয়েন্ট অন্যকে জানানোর মতো বোকামো হৃদান চৌধুরী কেন করছে বুঝতে পারছি না। এতে তাদের উপর বিপদ হতে পারে বস আপনি বুঝতে পারছেন না? তারিম ম্যামকে এখনি এক্সপোস করার মানেই হয়না বস। এতে উনার উপর আক্রমণ হওয়ার চান্স বেশী।
হৃদানের টনক নড়লো। পান্চু তো কিছু ভুল বলেনি। শত্রুরা এতদিন তার উইক পয়েন্ট খুঁজার চেষ্টা করেছে; পায়নি বলে তার ক্ষতিও করতে পারিনি। একবার যদি হৃদান চৌধুরীর উইক পয়েন্ট সবাই জেনে যায় চারপাশ থেকে শত্রুরা হানা দিবে। একজুট হয়ে প্রতিশোধ নিতে চাইবে। কতসময় লুকিয়ে রাখবে ওদের। একসময় না একসময় বের তো হতেই হবে। সেও সবসময় সাথে যেতে পারবে না। তখন যদি আক্রমণ হয়। মাথা ভন ভন করে উঠলো হৃদানের। পান্চু হয়তো বুঝতে পারলো বসের মনের অবস্থা। এত বছর ধরে বসের মেইন গার্ড হয়ে কাজ করে আসছে বসের মনের অবস্থা একটু হলেও বুঝতে পারবে না! পান্চু সম্মানের সহিত বলল,
বস আপনি আজ পার্টিটাকে নরমাল বলে চালিয়ে দিন। কিন্তু প্রেস? তাদের কি বলা হবে?
হৃদান নিজেকে স্বাভাবিক করে বলল,
কয়েকদিন আগে ডিল কনফার্ম হয়েছে না? রেফারেন্স হিসেবে দেখিয়ে দিতে হবে। সিকিউরিটি বাড়িয়ে দাও। আমি কোনো রিস্ক নিতে চাইনা। নিজেদের সাথে সাথে আমার সকল গার্ডদের সুরক্ষিত দেখতে চাই। একা একা কোথাও নজর রাখবে না। মিনিমাম তিনজন একসাথে থাকবে। ওকে?
পান্চু অবাক হলো। তাদের বস সিকিউরিটিদের কথা ভাবছে? আগে কখনো এমন করতে দেখেনি। বরং রাগলে কাকে কখন মেরে দিতো তার ইয়াত্তা থাকতো না। হয়তো আদরের জন্যই সম্ভব হয়েছে। আদরের প্রতি সম্মান টা বেড়ে গেলো পান্চুর। এ যেন নতুন রূপে দেখছে তাদের বসকে। সম্মতি জানিয়ে চলে গেলো পান্চু। পান্চু যাওয়ার পরেই হৃদান দৌড়ে এসে আদর কে জড়িয়ে ধরলো। কেঁপে উঠলো আদর। হৃদানের এই প্রথম ভয় হচ্ছে। প্রিয়জন হারানোর ভয়ে বুকের মধ্যে কেমন চিনচিন করছে। আরো শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো আদরকে। আদর কিছু না বুঝলেও চুপ রইলো। এই বুকটা তার জন্য নিরাপদ সে এতদিনে বুঝে গেছে। হৃদান হঠাৎ করেই আদর কে ছেড়ে দিলো। মুখটা গম্ভীর করে বলল,
বি এলার্ট আন্ডাবাচ্চা। পাবলিক প্লেসে আমি কে তুমি চিনো না ; না তোমাকে আমি চিনি। হৃদযা কে এখনি এক্সপোস করা পসিবল না। এখন তুমি নিচে যায় আমি আসছি।
আদর কিছু না বলেই চলে গেলো। সে অবুঝ নয় যে বুঝেনা হৃদানের ভয়টা। কিন্তু সেও অপারগ। আসল দোষী কে ধরার জন্য তাকে রিস্ক নিতেই হবে। আবার ঘুরে হৃদানের রুমে ঢুকে পড়লো। হৃদান কিছু বলার আগেই আদর বলে উঠলো,
আমি চাই আজ আমার এক্সপোস হোক আহনাফ চৌধুরীর মেয়ে হিসেবে আর আপনার কাজিন হিসেবে!
হোয়াট? কি বলছো আদুপরী?
আমি ঠিক ই বলছি হৃদ। ভেবে দেখুন আহনাফ চৌধুরীর মেয়ে কে দেখার পর আহনাফ চৌধুরীর শত্রুরা বসে থাকবে না? অবশ্যই আমাকে হয়তো মারার চেষ্টা করবে নয়তো কিডন্যাপ করার চেষ্টা করবে। এইটুকু রিস্ক নিতেই হবে হৃদ। বুঝার চেষ্টা করুন।
আদরের কথায় চমকে উঠলো হৃদান। তার এখনি মনে হচ্ছে আদর কে সে হারিয়ে ফেলছে। ধমকে উঠলো সে,
চুপ একদম চুপ। আর একটা কথাও শুনতে চাইছি না। নিচে যাও আদর।
আদর হাসলো। এগিয়ে গিয়ে হৃদানকে জড়িয়ে ধরলো। হৃদান তখনো চুপ গম্ভীর। আদর কিছুক্ষণ পর বললো,
ক্যাবলাব্রিটিশ থাকলে তার আন্ডাবাচ্চার ক্ষতি কিভাবে হয়? এটা সম্ভব? উপর ওয়ালা ব্যতিত কারো ক্ষমতা আছে ক্যাবলাব্রিটিশের থেকে আন্ডাবাচ্চাকে আলাদা করবে?
হৃদান আদরের চোখের দিকে তাকালো। চোখ দুটোতে তার জন্য অগাধ ভরস খুঁজে পাচ্ছে। নিজেও ভাবলো সবকিছু ঠিক করতে একটু রিস্ক নিতেই হবে। সম্মতি দিলো মাথা নেড়ে। তবুও কথা বললো না। তার হৃদপিন্ডটা দ্রুত লাফাচ্ছে। বার বার মনে হচ্ছে সে হারিয়ে ফেলবে আদরকে। আদর নিজেও হৃদান কে ছেড়ে হাটা ধরলো। তার যে ভয় লাগছে না; তা না। প্রচন্ড ভয় লাগছে তার। তবুও কাজটা তাকে করতে হবে।
তারিম সুবাহ দুজনে লুকিয়ে আছে। কারণ আদর এখনো আসেনি। আর আদর কে যদি তাদের সাথে না দেখে আতইয়াব বুঝে যাবে। তাই তাদের লুকিয়ে থাকা। আতইয়াব খুঁজে চলছে আদর কে। মুখ তার গম্ভীর। হয়তো সন্দেহ করেছে আদর হৃদানের সাথেই আছে।
আদরকে সিড়ি দিয়ে নামতে দেখে সুবাহ তারিম দৌড়ে আদরের পাশে দাড়ালো। এতক্ষণ ভয়ে মরে যাচ্ছিলো তারা। তখনি চোখ পড়লো আতইয়াবের। সুবাহ কেবল ই বলতে যাচ্ছিলো আদরকে কি করলো এতক্ষণ। আতইয়াব কে দেখে থেমে গেলো। আতইয়াব আর কিছু বললো না। ফালাহ’র পাশে দাড়ালো। কি ভাবছিলো এতক্ষণ! মাথা মধ্যে শুধু এসবই ঘুরে।
পার্টিতে এসে পৌঁছালো খান পরিবার। সবার নজর যেন সেদিকেই। শর্ট টপস, হাইহিল পড়ে কোমর বাঁকিয়ে হেটে আসছে হিয়া। চোখ দিয়ে গিলে খাচ্ছে ছেলেরা। হিয়ার তো নিজেকে সবার থেকে সুন্দর মনে হচ্ছে কারণ সবার নজর তার উপরেই। পার্টি স্পটে গিয়ে আদর কে দেখেই হিয়া রেগে গেলো। এই মেয়ে এখানে কেন? অনেক মানুষ দেখে কিছু বললো না। অন্যদিকে এগিয়ে গেলো। এদিক ওদিক তাকিয়েই আসছিলো পান্চু। তার চোখ যেন শত্রু পক্ষকে খুঁজতেই ব্যস্ত। হঠাৎ ই কারো সাথে ধাক্কা লেগে নিজের চক্ষু চড়কগাছ হয়ে গেলো। হিলের গুতাটা খেয়ে মাথা তার ভনভন করছে। হিয়া যে এভাবে পড়ে যাবে ভাবেনি। সবার সামনে এরকম লজ্জিত হয়ে ধপ করে রেগে গেলো সে। আদরের রাগটাও পান্চুর উপর খাটালো হিয়া। ঠাস করে চড় বসিয়ে দিলো। চেঁচিয়ে বলে উঠলো,
স্ক্রা!উ!ন্ডে!ল মেয়ে দেখলেই ধাক্কাধাক্কি করতে ইচ্ছে করে। তোর সাহস কি করে হয় হিয়া খানের শরীর স্পর্শ করার।
পান্চু মাথা নিচু করে নিলো। তার ও যে রাগ হচ্ছে না এমন না; কিন্তু সে তো বসের থেকেই শিখেছে মেয়েদের কে সম্মান করাটা। কিন্তু অপমানে সে মাথা তুলে আর তাকাতে পারলো না। নিচু হয়ে চলে আসতে নিবে সামনে এসে দাড়ালো আদর। চোখ মুখে যেন রাগ উপচে পড়ছে। আরেকটা চড় লাগালো আদর। পান্চুর চোখ এবার ছলছল করে উঠলো। আদর ও তাকে ভুল বুঝলো? হিয়ার কথায় অপমানিত হলেও আদরের চড়টা তার বুকে লাগলো একদম। এরকম অপমান সে কোনোদিন ও হয়নি। হৃদান এসে কেবল দাড়িয়েছে ওমনি আদরের এমন কাজে সে হতবাক। এগিয়েও যেতে পারছে না যেন। আদর পান্চুকে খুব পছন্দ করে সে জানে। তাহলে এমন করার কারণ? সবার নজর এখন আদর হিয়া পান্চুর উপরেই। এসব বিষয়ে কৌতুহল সবার বেশীই। আদরও হিয়ার মতো চেঁচিয়ে বলে উঠলো;
এতবড় শরীর কিসের জন্য বানিয়েছো। সবার সামনে অপমানিত হতে? হাত নেই নিজের? হৃদান চৌধুরী তোমাদের এভাবেই প্রশিক্ষণ দিয়েছে? অপমানিত হয়ে লেজু খুটিয়ে পালিয়ে যেতে শিখিয়েছে? ও মেয়ে তাই কি হয়েছে? সম্মান তাকেই করা উচিত যে সম্মানের যোগ্য। নিজের অপমানের সঠিক জবাব দিতে পারো না নিজেকে পুরুষ ভাবো?
পান্চুর চোখে বিষ্ময়। আদর এভাবে ভেবেছে ব্যাপারটা? আর সে ভাবলো আদর তাকে ভুল বুঝেছে। ঠোঁটের কোণে হাসি ফুটে উঠলো। আদর আর দাড়ালো না হিয়াকে কষিয়ে আরেক চড় বসালো। চমকে উঠলো সবাই। হিয়া নিজেও চমকে উঠেছে। গাল টা যেন ব্যাথায় ছিড়ে যাচ্ছে। সেদিনের রাগটাও আজকে আদর মিটিয়ে নিলো যেন। দাঁতে দাঁত চেপে বলে উঠলো,
তোমার শরীর হাত দিয়ে বা শরীর দিয়ে না পার্টির প্রায় সবাই চোখ দিয়েই স্পর্শ করে যাচ্ছে। এই শরীর নিয়ে গর্ভ করছো। লজ্জা থাকা উচিত। আর এই পার্টিতে এসেছিস ভালো কথা ভালোভাবে থাকবি না হলে এই আদর আহমেদ কি করতে পারে নিশ্চিয় এতক্ষণে বুঝে গেছিস? আর হৃদের আশেপাশে দেখলে তোর গলাটা একদম কে ** টে দিবো। মনে যেন থাকে।
কথাটা বলেই আদর পান্চুর হাত ধরে সোফায় বসালো। গাল টা লাল হয়ে আছে। দুটোই থাপ্পড় একগালে পড়েছে। ব্যাথাও পাচ্ছে মনে হয়। সারভেন্ট কে বলে বরফ আনিয়ে নিজেই সুন্দর করে গালটা মালিশ করে দিলো। হৃদানের কেন জানি হিংসে হচ্ছে না। মনে হচ্ছে আদর বড় বোন হয়ে ছোট ভাইয়ের যত্ন নিচ্ছে। আদরের এসব গুণ ই হৃদানকে বেশী টানে। পার্টির প্রায় সবাই মুগ্ধ আদরের ব্যবহারে। শুধু রেগে আছে হিয়ান খান ও হিয়া খান। কিন্তু তার মধ্যে একজন অপলক দেখছে আদর কে। আদরের এমন রুপ থেকে সে বিমোহিত। সে হলো হিয়ার ভাই হিমেল খান। জীবনে বহুত মেয়ে দেখেছে সে। কত মেয়ের সাথে রিলেশনে গেছে। কিন্তু কারোর প্রতি তার এমন ফিলিংস কখনোই হয়নি। যাও বা একজনের জন্য হয়ে সেতো তাকে ছেড়ে অন্য কাউকে বিয়ে করে নিয়েছে। হিমেলের মুখে মুচকি হাসির রেষ। যেভাবেই হোক তাকে এই মেয়েকে পেতেই হবে!
পান্চু ছলছল নয়নে হাসি মাখা বদনে চেয়ে আছে আদরের দিকে। আদর ব্যাথাতুর মুখ নিয়ে বরফ ডলে যাচ্ছে পান্চুর গালে। আর বিড়বিড় করছে,
সাহস কত বড় মেয়ের! একেতো আমার ক্যাবলাব্রিটিশের দিকে নজর দিয়ে ঘোর পাপ করেছে তার উপর কিসব নান্টুফান্টু ড্রেস পড়েছে। আবার নিজে চোখ থাকতে আন্ধা হয়ে আমার আধা টাকু পান্চু কাকুকে থাপ্পড় মারে। আরেকটা দিতে পারলে শান্তি লাগতো। আরে আদর চাপ নিস না আরেকদিন আরেকটা থাপ্পড় দিয়ে পুষিয়ে নিবি। আদর তুই জিনিয়াস তুই ভুলে গেছিস! হাহ!
আদরের কথা গুলো প্রথমে বিড়বিড় করে বললেও ; পরে হালকা চেঁচিয়ে বলায় পান্চু, আতইয়াব, হৃদান তারিম ওরা ঠিকই শুনেছে। সবাই একসাথে জোরে হেসে দিতেই আদর বুঝতে পারলো সে কি বলে ফেলেছে। জিভে কামড় দিয়ে মাথা নিচু করে নিলো। আতইয়াবের হৃদানের দিকে তাকাতেই অবাক হলো। মুগ্ধতার সহিত তার বোনকে দেখে চলছে হৃদান। চাহনীতে না আছে কোনো খারাপ দিক; একদম স্বচ্ছ ভালোবাসার রেষ। কেন জানি আতইয়াবের মুখে মুচকি হাসি ফুটে উঠলো। আতইয়াব অবাক হলেন। সে বুঝতে পারে তার পরে কোন পুরুষ যদি আদরকে খুব ভালোবাসে সে হলো হৃদান। তবুও ভয় হয়! বোনকে হারানোর ভয় হয় তার।
আদর পরিবেশ স্বাভাবিক করতে পান্চুর দিকে চোখ রাঙিয়ে বলে উঠলো,
এই আধা টাকু পান্চু কাকু আমার সাথে তো খুব ঝগড়া করতে পারো। তখন মুখে কুলুপ এটেছিলে। গাধাআআআআ! যাও আমার চোখের সামনে থেকে। দুচোখে দেখতে ইচ্ছে করছে না তোমাকে। ভিতুর আন্ডা কোথাকার। তোমার বউ টাক হবে দেইখো।
পান্চুর মুখ ভোতা হয়ে এলো। সে টাক এই নিয়ে কম কথা শুনতে হয়? আবার তার বউ ও যদি টাক হয় আল্লাহ মালুম সারাজীবন তাকে খোটা শুনেই বাঁচতে হবে। পান্চু উঠে চলে গেলো। আদর তার ভাইয়ার পাশে দাড়ালো। হৃদান কে ইশারা করতেই হৃদান মাইক নিয়ে ঠিক মাঝখান টাই দাড়ালো,
হেলো এভরিওয়ান। ওয়েলকাম মাই পার্টি। আজকে আমার জন্য একটি বিশেষ দিন। আপনারা আহনাফ চৌধুরীকে নিশ্চয়ই চিনেন? খবরের কাগজ, নিউজ চ্যানেলে উনার সুনাম অনেক শুনেছেন। আজকে আপনাদের মাঝে পরিচয় করিয়ে দিবো আহনাফ চৌধুরী ওরফে আমার মামা’র মেয়ে আদর চৌধুরীকে। এতদিন সে গুপ্ত ছিলো। যার যথেষ্ট কারণ ও আছে। প্লিজ কাম আদর!
আতইয়াব চমকে তাকালো আদরের দিকে। আদর শান্ত হয়ে দেখছে। আতইয়াব কিছু বলবে আদর থামিয়ে দিলো। হাত ধরে বলে উঠলো,
ভাইয়া সবকিছু প্ল্যান মতোই এগোচ্ছে। আমার কিছুই হবে না। তুমি আর হৃদান আছো তো। কিচ্ছু হবে না। প্লিজ!
আতইয়াব হাত ছাড়িয়ে অন্যদিক ঘুরে রইলো। বোন তার কলিজা। কিছু হলে সে বাঁচবে কি করে। ইতিমধ্যে হিয়া ভয়ে কাঁপছে। আদরের পরিচয় আগে জানলে সে কখনোই লাগতে আসতো না। কি হবে এবার? হৃদান কে যদি সব বলে দেয় তার যতই ক্ষমতা থাকুক না কেন তাকে কুচিকুচি করে কা!! ট!! বে! আদরের সাথে সবাই পরিচিত হলো। অনেকেই আহনাফ চৌধুরী সম্পর্কে অনেক কথায় বললো। আবার অনেকেই দুঃখ প্রকাশ করলো। কিন্তু পুরো ঘটনাটা একজন নিরব শান্ত চোখে দেখে গেছে। টু শব্দ পর্যন্ত করেনি। নিজের মেয়েকে সবার সামনে থাপ্পড় খেতে দেখেও এগিয়ে যায় নি হিয়ান খান। তার মাথায় অন্য কিছু চলছে।
সবাই যার যার মতো আড্ডা দিচ্ছিলো। পান্চু উপরে বসে সিসি ফুটেজ দেখছে। তার মন বলছে কিছু হবে। তাই তো চারদিক নজর রাখছে। হঠাৎ একজন কে হৃদানের দিকে এগিয়ে যেতে দেখে পান্চু উঠে দাড়ালো। কারণ তার শার্টে হৃদানের দেওয়া লগো নেই। দৌড় ছুটলো হৃদানের দিকে। আদর ভাইয়ার পাশে বসে ছিলো চুপ করে। ভালো লাগছে না তার। পিপাসা পেতেই উঠে দাড়াতে গিয়ে একজনের হাতে চা**কু দেখে অবাক হলো। ভাবলো কাজ করবে হয়তো। তাই এত কিছু না ভেবে পানি খেতে যেতে নিতেই কেউ তার হাতে ছুরির আঁচড় বসিয়ে দিলো। শব্দ করে উঠলো সে। আতকে উঠলো পার্টির সবাই,,,,,,!
চলবে…?