মন_পাথরে_হঠাৎ_ঝড় #পর্ব_২৬

0
267

#মন_পাথরে_হঠাৎ_ঝড়
#পর্ব_২৬
Tahrim Muntahana

ঝিরঝির বৃষ্টিতে শহরের পিচঢালা রাস্তা চিকচিক করলেও ; গ্রামে এর ব‍্যতিক্রম। কাঁদাযুক্ত রাস্তায় হাটা মুশকিল। শহরে এই সময়ে, স্নিগ্ধ পরিবেশে কুপোতকুপোতিরা প্রেম কুড়াতে বের হলেও গ্রামের মানুষরা কাঁদা পায়ে বৃষ্টি মাথায় নিয়ে জীবিকার তাড়ানায় বের হয়। মা, বোন, সহধর্মিনী চাতক পাখির মতো অপেক্ষা করে তাদের ফেরার আশায়। খেটে খাওয়া মানুষরা একটু বেশীই স্ট্রং হয় বোধ হয় তাইতো ঝড়, বৃষ্টি, ঝলসানো রোদ ও তাদের দমাতে পারেনা। কাঁদাযুক্ত রাস্তায় হাঁটছে হৃদান। পায়ে কাঁদা লেগে আছে সেদিকে তার ধ‍্যান নেই; সে গ্রামের স্নিগ্ধতায় ঘেরা পরিবেশটা দেখতে ব‍্যস্ত। কিছু কৃষক শাক তুলে তুলে তাদের ভ‍্যানে তুলছে। কি সুন্দর পটু হাতে একেরপর এক শাকের পুটলি ভ‍্যানে রাখছে। আবার কিছু কৃষক ধান গাছের আগাছা বাছতে ব‍্যস্ত। এই হালকা বৃষ্টি ধানের জন‍্য খুব উপকারী। মাটি নরম রাখতে সাহায‍্য করে। আগাছা গুলো পরিষ্কার করে দিলে মাটিতে বৃষ্টিকণা গুলো খাপ’খাবে। মুগ্ধ চোখে কৃষকদের কাজ গুলো পর্যবেক্ষণ করছিলো হৃদান। পাশে রয়েছে নাসির চৌধুরী। অনেকদিন সে গ্রাম দেখতে বের হয় না। আজ তার মন খুব ভালো তাই তো গ্রামের প্রত‍্যেকটা মানুষের খোঁঝ খবর নিতে বের হয়েছে। শুধু হৃদান, নাসির চৌধুরী নয় সাথে আদর তারিম ওরাও আছে। প‍্যাঁচালো সব কথাবার্তা কে দূরে ঠেলে হালকা বিনোদন নিতে বের হয়েছে। নাসির চৌধুরীকে দেখে কৃষক রা কাজ ফেলে দৌড়ে আসলেন। সম্মানের সহিত সালাম দিলেন। চোখে মুখে নাসির চৌধুরী নামক মানুষটার জন‍্য কতটা শ্রদ্ধা! নাসির চৌধুরী সবার সাথে কুশল বিনিময় করে বলে উঠলেন,

তোমরা তো জানো না। ওরা আমার ছেলে-মেয়ে; আমার ছোট ভাই নাবিলের ছেলে-মেয়ে! আর ও আমার আরেক ভাই আহনাফের মেয়ে! আমি বলেছিলাম না তোমাদের একদিন আল্লাহ চাইলে অবশ‍্যই ওদের পাবো!

নাসির চৌধুরী চোখ মুখে উৎফুল্লতা। গ্রামের সবাই কিছুক্ষণ অবাক হয়ে ওদের দেখলেন। হৃদান চৌধুরীকে সবাই চেনে। গ্রামের মোডে টিভি দেখতে গিয়ে কত দেখেছে মুখটা। হৃদান বুঝলো সবার অভিব‍্যক্তি। হেসে কথা বলল। সবাই প্রাণভরে দোয়া করলেন। এই ভাবে গ্রামের শেষ পযর্ন্ত নাসির চৌধুরী ঘুরেছেন আজ। আদর-তারিমের পা ব‍্যাথা করলেও কিছু বলেনি। ভালো লাগছে ঘুরতে। কেন সবার মজাটা নষ্ট করবে! সবাই কিছুক্ষণ বসলেও ওরা দুজন হেটেই চলছে। তাই হয়তো পা ব‍্যাথাটা দুজনের হচ্ছে। নাসির চৌধুরীও বেশ হাপিয়ে গেছে। অনেকদিন পর এতটা পথ হাটলেন। বয়স তো কম হয়নি। নাসির চৌধুরীর দিকে তাকিয়ে বলে উঠলেন,

তোমার কি এখন বউ লাগবে বড়বাবা? যেভাবে হাপিয়ে গেছো। চুমুটুমু লাগবে কিনা তাই ভাবছি! এখন কিন্তু সম্ভব নয়; আরো অনেকটা পর বাড়ি; ইচ্ছেটা চেপে যাও, বাড়ি গিয়ে সুদে-আসলে নিজের ভাগ আদায় করে নিবে!

নাসির চৌধুরী এবার ফুসে উঠলেন। এই ছেলে পেয়েছে টা কি। সে নাহয় বউ কে একটু বেশীই ভালোবাসে। বউ চুমু না দিলে তার অস্থির অস্থির লাগে; তাই বলে এমন করবে? সেদিন নাহয় বউকে চুমূ খাওয়ার সময় হৃদান দেখে ফেলেছিলো তাই বলে এভাবে ক্ষেপাবে। তার কি মান সম্মান নেই? দাঁতে দাঁত চেপে বলে উঠলো,

চুপরাওওওও বেয়াদপ ছেলে; আমি তোমার বড়বাবা হই বন্ধু না যে এসব বলবে। এসব শুনলে মানুষ কি বলবে, হাসাহাসি করবে। এসো, আমি গেলাম।

বলেই তিনি হাটা ধরলেন। হৃদান হো হো করে হেসে দিয়ে চিৎকার করে বলে উঠলো,

হ‍্যা হ‍্যা যাও যাও চুমু প্রয়োজন তোমার আগেই বুঝেছি; এই জন‍্যই বলে মানুষের ভালো করতে নেই!

আবার হাসতে শুরু করলো। আর সবাই মুচকি মুচকি হাসলেও আদর পারলো না। বুড়ো মানুষটার সাথে এমন করার মানেই হয়। অপ্রস্তুত হয়ে যায় না সে? কপট রেগে বলে উঠলেন,

আপনার কি আক্কেল নেই? কিসব বলেন; উনি আপনার বড়বাবা, এবার তো মুখে লাগাম দিন।

বলছি আমারো না প্রেম প্রেম পাচ্ছে! চলো প্রেম করবো, চুমু চাইনি কিন্তু!

আদর হতাশার শ্বাস ফেললো। বড্ড আফসোস হয় তার। কিভাবে যে এই মানুষটা এমন ঠোঁটকাটা স্বভাবের হয়ে গেলো! আতইয়াব রেগে হৃদানের দিকে তাকালো। হৃদান বাঁকা হাসলো। মজা পেয়েছে বোধ হয়! আতইয়াব হৃদানের দিকে তাকিয়ে বলে উঠলো,

বউউউউ! চলো চুমু খাবো। আমার বাসর বাসর ফিলিংস আসছে। গ্রামসাইড হানিমুনটা বেশ জমবে। তুমি রাজি থাকলে আমরা দুজন; একেবারে তিন নাহয় চারজন হয়েই যাবো!

আদর-তারিম এবার কানে হাত দিয়ে চিৎকার করে উঠলো। এরা দুই হালাল শত্রু; কখন কি বলে ঠিক নেই। দুজন এতটা ঠোঁটকাটা স্বভাবের কেউ একটু যদি বুঝতো; লাগাম টা আগেই টানিয়ে দিতো। এত এত কথা শুনতে হতো না! ওদের দুজনের এমন চিৎকারে সবাই হালকা শব্দ করে হেসে দিলো। এতকিছুর মাঝেই একমাত্র একজনই চিন্তিত। গভীর ভাবে চিন্তা করছে সে। টাক মাথায় হাত বুলাতে বুলাতে হৃদান কে দেখছে আর চিন্তায় মনোযোগ দিয়েছে পান্চু। একটু পর পর হতাশার শ্বাস ফেলছে। না এই জীবন আর রাখা যায় না। তার কাঠখোট্টা প্রকৃতির বস প্রেম করে ফেলল, আবার প্রেম প্রেম কথাও বলে, হা-ডু-ডু টাইপ স‍্যার নয়া প্রেমে মজে আছে অথচ সে! সে কি করছে? পাহারা দিচ্ছে? শুধুই পাহারা? না সে তো তার বসের প্রেমের ও সাক্ষী হচ্ছে! এ মানা যায় না। এতো তার মতো মিঙ্গেল হতে চাওয়া সিঙ্গেলদের উপর চরম অত‍্যাচার। এর জন‍্য বসকে চরম শাস্তি পাওয়া উচিত। কিন্তু কে দিবে? সে তো পারবে না! বসের ঝারি শুনলেই তার হিসু পায়; শাস্তি তো আল্লাহ মালুম! কথাগুলো ভেবেই উদাসীন হয়ে গেলো পান্চু। আহা জীবন; একদম রসহীন!পান্চু উদাস মনে আকাশের দিকে তাকিয়ে বলে উঠে,

বেঁচে আছি প্রেমিকা ছাড়া
আমি কেন প্রেম করিনা
বিয়ে করলে বুঝবি একদিন
প্রেমিকা তুই খুঁজবি সেদিন
তখন তো পাবিনা
আয় না রে তাড়াতাড়ি আয়
টাক মাথায় হাত টা রাখ
মুচকি হেসে চাইবো আমি
বেহুশ হয়ে পড়বে তুমি!

নদীর পাড়ে এসেছে সবাই। কি সুন্দর বাতাস বইছে। ওদের দেখেই বাঁশ দিয়ে তৈরি করা বসায় জায়গা টায় বসতে দিলো গ্রামের কিছু মানুষ। মহাখুশি সবাই। হৃদান সবার হাসিমুখটাই চোখ ছোট ছোট করে দেখছে। এখানকার মানুষদের হাসি কতটা প্রাণোচ্ছল। অন‍্যজনের খুশিতে কতটা খুশি হয়! দুজন মহিলা ছোট গামলায় আমড়া ভর্তা করে এনেছে ওদের জন‍্য। আদরের তো দেখেই জিভেতে পানি চলে আসছে। রাখার সাথে সাথে গপাগপ দু’তিনটা মুখ পুরে নিয়েছে। সবাই খেলেও ইতস্তত করছে হৃদান-আতইয়াব-ফালাহ। হৃদান এসব কখনোই খাইনি; আর আতইয়াব-ফালাহ ইতস্তত করছে ডক্টর মানুষ এমন পরিবেশে খেলে কেমন দেখায়! অসুস্থ হয়ে পড়লে! কিন্তু আদরের খাওয়ার সিস্টেম দেখে ওদের খেতে ভিষণ ইচ্ছে করছে। কেমন চপরচপর শব্দ করে খাচ্ছে। ওদের দিকে তাকিয়ে ঠোঁট চোখা করে শব্দ করছে। এমন ভাবে খেলে কার না খেতে ইচ্ছে করবে। হৃদান আদরের হাতের টাই নিজের মুখে পুরে নেয়। আদর হাসে। মিষ্টি ভাবে হাসে! আরেকদফা প্রেমে পড়ে হৃদান! এমন সময় হৃদান বলে উঠে,

তোমরা শুনবে আমি কেন বড় বাবার সাথে এভাবে কথা বলি?

সবার মুখের দিকের একপলক তাকায়। প্রশ্নাত্মক চাহনী সবার। হৃদান মুচকি হাসে।

যখন আমরা দুটানায় ভুগছিলাম আমি একবার পরখ করতে চেয়েছিলাম বড়বাবাকে। দরজায় উঁকি দিয়ে দেখি। বড়বাবা বড়মার ভালোবাসা! কতটা ভালোবাসে এখনো দুজন দুজনকে। বড় বাবা বলছিলো কি জানো? বাবা মামা আর উনার সম্পর্ক নাকি এতটা ফ্রি ছিলো যে ওরা একটা মেয়েকে পছন্দ করলে তিনজন ই পেছনে ঘুরতো। বড়বাবা বড়মার বাড়িতে যখন উঁকি মারতো তখন নাকি বাবাও যেত। কত রকমের দুষ্টুমি করেছে। বড়বাবার বাসর রাতেও নাকি বাবা মামা অনেক জ্বালিয়েছে; সকাল বেলা এসব নিয়ে কত মজা করেছে। কিন্তু বাবা যখন মা কে নিয়ে পালিয়ে যায় তারপর থেকে সব মজা উবে যায়। যখন কথা হতো তখন ভালোমন্দ জিজ্ঞেস করতেই কয়েকমিনিট চলে যেত। বড়বাবা এসব খুব মিস করে। আমি চাই বড়বাবা এসব মিস করে হাসুক; কষ্ট না পাক। তাই তো বাবার কাজ টা ছেলে হয়ে আমি করছি। উপরে উপরে রাগ দেখালেও আমি বড়বাবার ঠোঁটে সুক্ষ্ম হাসি দেখেছি; তৃপ্তির হাসি! আমি চাই আমাদের সম্পর্ক বাবা-ছেলের সাথে বন্ধুত্বের হোক! হ‍্যাঁ ছেলের মুখে এসব কথা কিছুটা দৃষ্টিকটু হলেও ; আমরা তো কত দৃষ্টিকটু কাজ করে ফেলি, জেনে হোক না জেনে হোক করি তো, তাহলে ভালোর জন‍্য এটা করলে দোষ কোথায়?

সবার মাঝেই অবাকতা। এতটা গভীর ভাবে হৃদান ভেবেছে! কিছুদিন আগেও মানুষটা ভালোবাসা বুঝতো না; পরিবার কি বুঝতো না অথচ এই মানুষটাই এখন নিজ পরিবারের কথা ভাবে; ভালোবেসে সবার মুখে হাসি ফুটাতে চেষ্টা করে। আতইয়াব আলতো করে হৃদানের কাঁধে হাত রাখে। হৃদান তাকায়, মুচকি হাসি দেয়। বিনিময়ে আতইয়াব ও মুচকি হাসি ফেরত দেয়। তারা নিজেদের বোনকে নিয়ে যতই ঝগড়া করুক না কেন; এক জন আরেকজনের প্রেমে হুট করেই বাঁধা হোক না কেন তারা যে দুজন দুজন কে মন থেকে সম্মান করে তা দুজনই জানে। উপরে উপরে হালাল শত্রুতার সম্পর্কটা বজায় থাকুক। ভালো তো!

মলিন মুখে বসে আছে রিয়া! তার মন ভালো নেই। কারণ হিমেল নেই। শহরে গিয়েছে সে। হৃদানের কাছে আবদার করেছে নিজের হাতে বাবা-মা কে বন্দি করতে চায় সে। সে আসলে কে? কে তার বাবা-মা? এসব নিজ কানে শোনা না পযর্ন্ত সস্থি নেই তার। হৃদান ও সায় জানিয়েছে। হিমেলের চেয়ে ভালো এই কাজ কেউ করতে পারবে না। সে করলে কিছু টা লোক জানাজানি হবেই। আর হিমেল নিজের বাড়িতেই নিজের মানুষ দের কিডন‍্যাপ করলে কে জানবে?

সন্ধ‍্যা হয়ে আসছে। সবাই উঠে দাড়ালো। ওখানের মানুষদের থেকে বিদায় নিয়ে হাটা ধরলো। আদর-তারিম হাত ধরে আস্তে আস্তে হাটছে। দুজন ই চোখে চোখে কথা বলছে। হয়তো একজন আরেকজনকে ব‍্যাথায় শব্দ করতে বারণ করছে। সবার থেকে হালকা পিছিয়েও গেছে দুজন। সবাই তাকালেই দুজন স্বাভাবিক হাটার চেষ্টা করে। কিন্তু বলে না যারা ভালোবাসে তারা সবটা জেনেই ভালোবাসে। হুট করেই হৃদান-আতইয়াব নিজেদের বোনদের কোলে তুলে নেয়। হৃদান মিহি স্বরে বলে উঠে,

পা ব‍্যাথা করছে ভাইয়াকে বললে খুব খারাপ হতো বুঝি? আমি তোমাকে যত আগলে রাখতে চাই তুমি আমাকে তা করতে দিচ্ছো না কেন হৃদু?

তারিম ছোট ছোট চোখে তাকিয়ে থাকে হৃদানের দিকে। একসময় হৃদানের বুকে মুখ গুজে ফুপিয়ে কেঁদে উঠে। হৃদান কিছু বলে না। কাঁদুক একটু! আতইয়াব আদরের দিকে তীক্ষ্ম চোখে তাকিয়ে আছে। আদর আমতা আমতা করছে; কিছু বলতে পারছে না! আতইয়াব কিছু মলিন মুখে বলে,

আগে তো একটু ব‍্যাথাতেই কেঁদে কেটে ভাইয়াকে বলতে। ভাইয়া না থাকলে চলতো না। কিন্তু এখন বুঝি খুব বড় হয়ে গেছো? ভাইয়াকে লাগবে না?

আদরের চোখ ছলছল করে উঠে। সে তো এমন কিছু ভেবে করেনি। সবার মজাটা নষ্ট হবে ভেবেই চুপচাপ ছিলো। আদরের ছলছল চোখ দেখে আতইয়াব মুচকি হাসলো। আদর আতইয়াবের গালে টুস করে চুমু বসিয়ে দিয়ে খিলখিল করে হেসে উঠে। প্রাণ ভরে উঠে আতইয়াবের!

বাড়ি ফিরতে ফিরতে সন্ধ‍্যা সাতটা বেজে যায়। যে যার ঘরে গিয়ে বিশ্রাম করে কিছুক্ষণ। তারপর ড্রয়িং রুমে এসে বসে আড্ডার জন‍্য। দিনগুলো বেশ যাচ্ছে তাদের। কথা বলতে বলতেই ডিনারের সময় হয়ে যায়। কিন্তু খাওয়া আর হয়ে উঠে না। তার আগেই হন্তদন্ত হয়ে উপস্থিত হয় হিমেল। চোখ লাল হয়ে ফুলে আছে কেমন। রিয়া ছুটে গিয়ে প্রশ্ন করে,

কি হয়েছে তোমার? এমন লাগছে কেন? এত তাড়াতাড়ি ফিরে আসলে?

হিমেল রিয়ার গালে হাত রেখে আশ্বস্ত করে, কিছু বলে না। হৃদানের দিকে তাকিয়ে ইশারা করতেই হৃদান ছুটে বাইরে চলে যায়। যা ভেবেছে একদম ঠিক ই। হিমেল এত তাড়াতাড়ি কাজটা সম্পূর্ণ করবে সে ভাবতেই পারেনি। হিমেল ও যায় পিছু পিছু। হিমেল হিয়ান ও রিনিশা কে তুলে এনেছে। দুজন গার্ড ওদের ভেতরে নিয়ে আসে। নাসির চৌধুরী কিছু বলে না। নিজে দাড়িয়ে থেকে শাস্তি দেওয়ার ঘরটা খুলে দেয়। আগুন জ্বলছে তার চোখে। ভাইয়ের হত‍্যার প্রতিশোধ নেওয়ার বুঝি খুব তাড়া!

দুজন কে চেয়ারে বসিয়ে শক্ত করে বেঁধে দেয়। ড্রয়িং রুমে ফিরে আসে হৃদান রা। ডিনারের জন‍্য টেবিলে গিয়ে বসে। হৃদানের মতিগতি কেউ বুঝতে পারে না। তাই চুপচাপ খেয়ে নেয়। খাওয়ার সময় একটা কথাও বলে না কেউ। গুমোট একটা পরিবেশ। আদরের ভয় করছে হৃদান কে নিয়ে। বকবক ছাড়া সে খেতে পারেনা। অল্প খেয়ে উঠে পড়ে। যখন বকবক করতে পারবে তখন খাবে!

রাত এগারোটা। বাড়ির কেউ ঘুমায় নি। আজ রাতে অনেক কিছু হবে। সেই জন‍্যই তো সবাই অধীর আগ্রসে বসে আছে। হৃদান ঘর থেকে বের হতেই সবাই পিছু নেয়। হৃদান বুঝে, টু শব্দ করে না; সবার সামনেই আজ তার হিংস্র রূপ দেখাবে! ঘরের সামনে পৌঁছাতেই গার্ড দরজা খুলে দেয়। আরেকজন দুজনের মুখে গামলা ভর্তি পানি ঢেলে দেয়। পিট পিট করে তাকায় দুজন। পাঁচ মিনিট বুঝে উঠতে পারেনা কি হচ্ছে; কোথায় তারা! হঠাৎ বিকেলের কথা মনে হতেই দুজন চমকে উঠে। দাড়াতে চাইলেও পারেনা। এত শক্ত করে বেঁধেছে ; ব‍্যাথায় হালকা শব্দ করে উঠে দুজন। ঝিরঝির বৃষ্টির ফলে পরিবেশ ঠান্ডা। এর মধ‍্যে গায়ে পানি পড়ায় শীত করছে দুজনের। হিমেল ওদের সামনে এসে দাড়ায়। রিনিশা চেঁচিয়ে উঠে,

হিমেললল, কোথায় আমরা? কোথায় নিয়ে এসেছো আমাদের?

হিমেল চুপ থাকে। হৃদান সামনে দাড়িয়ে যায়। রিনিশা চমকে উঠে। কাঁপতে থাকে সে। হিয়ান অবাক চোখে তাকিয়ে আছে। তার মাথায় কিছুই ঢুকছে না। হৃদান বাঁকা হেসে ভিডিও টা ওপেন করে। হিয়ানের কাঁপাকাঁপি শুরু হয়ে যায় এবার। তার বুঝতে বাকি নেই ওই সুন্দর পৃথিবীর সে আর কিছুক্ষণের অতিথি। হৃদান হিয়ান কে কিছু বলে না। রিনিশার সামনে গিয়ে বলে,

সবটা বলবেন নাকি অন‍্য ব‍্যবস্থা নিবো?

রিনিশা হো হো করে হেসে উঠে। এই মুহূর্তে তাকে পাগল ছাড়া কিছু মনে হচ্ছে না কারো। রাগ হয় হৃদানের। চুপ থাকে; হাসুক, কিছুক্ষণ পর এই কন্ঠনালিই থাকবে না। রিনিশা হাসতে হাসতে চুপ হয়ে যায়। রেগে বলতে থাকে,

ভালোবেসেছিলাম, কি হতো আমাকে একটু ভালোবাসলে? নাহ নাবিল রিদিমা কে ভালোবাসে। আমাকে না। বুঝালাম কত। বুঝলো না। রিদিমার বিয়ের ব‍্যবস্থা করলাম বাবাকে বলে। নাবিল ওকে নিয়ে পালিয়ে গেলো। আমার সব প্ল‍্যান ফ্লপ হলো। বাবাকে উস্কে দিলাম। বাবাও আমার নিয়ন্ত্রণে এসে গেলো। কিন্তু আমি ভালো ছিলাম না। রিদিমার সব প্রাপ্তিতে আমার শরীর জ্বলতো। প্রতিশোধের নেশা আমাকে তিলে তিলে শেষ করে দিচ্ছিলো। কিন্তু বাবা একসময় মেনে নিলো। ওর ভাগের সম্পত্তিও ওর নামে লিখে দিতে চাইলো। ঘুমের মধ‍্যেই বালিশ চেপে মেরে ফেলি। সব সম্পত্তি আমার নামে করেনিই। আর হিয়ানের সাথে তো নাবিলের আগে থেকেই শত্রুতা। হিয়ান ও তো রিদিমা কে পছন্দ করতো। কিন্তু রিদিমা পাত্তা দিতো না। রিদিমার মরার পর ওর ও জেদ চাপে। ব‍্যাস বিয়ে করে নিই ওকে। বাবাকে মেরে বিয়ে করে সব সম্পত্তি নিয়ে ঢাকা চলে যাই। বিজনেস শুরু করি। বংশের নাম পাল্টে দিই। হিয়ান খুঁজে বের করে নাবিল কে। মেরে ফেলে। আমি দাড়িয়ে থেকে ভিডিও করি। ওর ছোট ভাই হাসান শিকদার ও ছিলো। হৃদযা কে নিয়ে যায় কিন্তু হারিয়ে ফেলে। বেচে দিলে টাকা পেতাম। হৃদান কেও খুঁজে পাইনা। নাসির চৌধুরী কেইস করেছিলো। টাকা দিয়ে সব কেইস অফ করে দিই। চলছিলো ভালোয়। কে জানতো আমার ভাই আবার তদন্ত শুরু করবে। রিদিমাকে ভাইয়া বেশী ভালোবাসতো। জেদ ছিলো। ভাবলাম মেরে ফেললেই সব শেষ। হামলা করলাম। কিন্তু ওর মেয়েকে ও অনত্র রেখে এসেছিলো। ওকেই মেরে দিই। ঝামেলা শেষ। কিন্তু নাহ। ঝামেলা শেষ হয়েও হলো না। জার্নালিস্ট রাতাফ আহমেদ ঝামেলা শুরু করলো। গাড়িতে পিষে মেরে ফেললাম। একেবারের জন‍্য শেষ করে দিলাম সব ঝামেলা।
আবার সেই ঝামেলাই শুরু হলো। নাবিল চৌধুরীর মেইন গার্ডকে টাকা দিয়ে কিনেছিলাম তাকে হৃদান খুঁজে পেয়ে গেলো। ঠিক হার্ট বরাবর গুলি করলাম। আভার পরিস্থিতি আমার বিপক্ষে, ডক্টর আতইয়াব বাঁচিয়ে নিলো। হাসান শিকদারের নাম ফাঁস হলো। নিজের ভাই কে বাঁচিয়ে নিলেও সে তো জানেই না তাদের পেছনে আমি আছি। হিয়ান ও তো জানেনা এসব। সব আমি নিজে করেছি। নিজে!

এই টুকু বলেই হাসতে আরম্ভ করলো আবার। বদ্ধ করে হাসিটা কেমন বিদঘুটে শোনা যাচ্ছিলো। হিয়ান অবাক চোখে দেখছে রিনিশাকে। সে তো নাবিল কে মারা পযর্ন্তই ছিলো। ভিডিও করেনি সে। নাবিল কে মারার পর আর কিচ্ছু করেনি।
রিনিশা হাসি থামিয়ে আবার বলল,

হিমেল যখন আদর আদর করতে শুরু করলো তখনই বুঝেছিলাম দুধ দিয়ে কালসাপ পুষেছি। ওর প্ল‍্যানে ওকেই মাত দিতে চেয়েছিলাম। সেদিন সন্ধ‍্যায় আদর যখন রাস্তায় অজ্ঞান হয়ে যায় তখন আমার লোক ওকে কিডন‍্যাপ করতে চেয়েছিলো কিন্তু হিমেলের জন‍্য পারেনি। গাড়িতে উঠিয়ে কোথায় চলে গেলো, আহম্মকের দলেরা টের ই পায়নি। অপেক্ষা করছিলাম সকালের। আমি বুঝেছিলাম হিমেল, চৌধুরী বাড়িতেই যাবে। তাই তো চুপ ছিলাম। জানতে হবে তো কি প্ল‍্যান করছে হৃদান চৌধুরী! ড্রয়িংরুমে আগে থেকেই চিপ রেখে দিয়েছিলাম। পার্টির দিন আদরের উপর আমার লোকেরাই আক্রমণ করেছিলো। চিপের সাহায‍্যে সব কথা শুনতে পাই। আমি তো প্রথমে অবাক হয়েছিলাম এতদিন কাজের লোক হিসেবে আমার শত্রুর মেয়েকে পুষছিলাম। আমার শশুড় যে এতবড় বেইমান হবে কে জানতো। সেদিন ই রিয়াকে মারতে চেয়েছিলাম কিন্তু সুযোগ হয়ে উঠছিলো না। তোদের আগে গিয়ে আমার বিরদ্ধে পেনড্রাইভ গুলো সরিয়ে দিই। হিয়ানকে আমার দরকার নেই। ও মরলো কি বাঁচলো কিচ্ছু যায় আসে না আমার। আমি ভেবেছিলাম নাসির চৌধুরীর নামে এসব শুনে হৃদান হিয়ান নাসির কে তৎক্ষণাৎ মেরে ফেলবে কিন্তু কে জানতো আগের হৃদান চৌধুরী পাল্টে গেছে। আদর আহমেদ মেয়েটা নিজের বুদ্ধি দিয়ে নাসির চৌধুরী নিদোর্ষ প্রমাণ করে ফেললো। আর আমি সামনে চলে আসলাম! আমি ধ্বংস চাই চৌধুরী পরিবারের। কাউকে বাঁচতে দিবো না। কাউকে না!

হৃদানের চোখ রক্তবর্ণ হয়ে গেছে। রাগে শরীর কাঁপছে তার। নাসির চৌধুরীর চোখ থেকে টপটপ পানি পড়ছে। হৃদান এগিয়ে গেলো। শান্ত স্বরে বলে উঠলো,

তুমি তো আমার খালা তাইনা? যানো খালা আমি আমার মা কে এত ভালোবেসেছি তবুও আমাকে ছেড়ে চলে গেলো। মায়ের যাওয়ার পর যখন বাবাকে আর পুতুল বোনটাকে আকড়ে ধরে বাঁচতে চাইলাম সেটাও এই ভাগ‍্যে জুটলো নাহ। বাবাও উপারে চলে গেলো, হারিয়ে ফেললাম আমার ছোট্ট পুতুল টাকে। জানো খালা আমার ছোট্ট পুতুল টার গায়ে আমি একটা আঁচ ও লাগতে দেয়নি। সবটা সময় সাজিয়ে গুজিয়ে রেখে দিতাম। মাটিতে পা পড়লেই যেন ব‍্যাথা পাবে তাইতো বেশী হাটার সুযোগ ই দিতাম না। আমার কিছু হলেই না ছোট্ট বোনটা হঠাৎ করেই বড় হয়ে যেত। শাসন করতো আমাকে। বাবা দুই-ভাইবোনের ভালোবাসা তৃপ্তি নিয়ে দেখতো জানো! আমার ভালোবাসায় আবার কেউ ভয়ংকর থাবা বসালো। যে থাবায় দুইজনকে উঠিয়ে নিতে পারলেও বেঁচে গেলাম আমি। সুপারহিরোর সাথে দেখা হয়েছিলো কিছুদিন আগে। বাবার মৃত‍্যতে উনি কেন কষ্ট পেয়েছিলো আমি আগে বুঝতে পারিনি। সুপারহিরোর সাথে ভালোয় চলছিলো দিন। তাও কারো সহ‍্য হলো না। নিখোঁজ হয়ে গেলো। অন্ধকার দেখতে লাগলাম। ততক্ষণে সুপারহিরো পৃথিবীতে কিভাবে বেঁচে থাকতে হয় সব শিখিয়ে দিয়েছে। শুরু করলাম বাঁচার তাড়নায় লড়াই। আস্তে আস্তে আরো বুঝতে শিখলাম নিজেকে সর্বোচ্চ ক্ষমতাশীল করার জেদ চাপলো। আমার মুখের উপর কথা বলতেও যেন দশবার ভাবতে হয়। এমন ভাবেই গড়ে তুললাম। হয়ে উঠলাম নিষ্ঠুর হৃদয়হীন হৃদান চৌধুরী। এতকিছুর মাঝে হুট করে মনে হলো বাবার মেইন গার্ডের বেইমানির কথা। মৃত‍্যুর কিছুদিন আগেও সে বাবাকে হুমকি দিয়েছিলো। খুঁজে বের করলাম। কিন্তু কে যেন গুলি চালিয়ে দিয়েছে। তখন সন্দেহ টা গাঢ় হলো যে ও কিছু তো জানে। অপারেশন করার জন‍্য মি. ডক্টর কে চাপ দিলাম। কিন্তু আমি ভুল ছিলাম, সবাই হৃদান চৌধুরীকে ভয় পায় না। তার মধ‍্যে মি. ডক্টর অন‍্যতম। রাগ হয়েছিলো ভিষণ। তার বোনকে কিডন‍্যাপ করলাম। মি. ডক্টর বুদ্ধি দিয়ে বাঁচিয়ে নিলো। পিয়াস কে যখন মেয়েটি বলছিলো হৃদান চৌধুরীর চুল ছিড়বে তখন অন‍্যরকম লাগছিলো ব‍্যাপারটা। বুকের ভেতর হঠাৎ করেই উথালপাতাল শুরু হয়ে গিয়েছিলো। তারপর হঠাৎ করে দেখা। তার চুল টেনে দিয়ে দৌড়ে যাওয়া। আমাকে ভয় না পেয়ে পান্চুর সাথে মজা করা। সব কিছুই আমাকে দিশেহারা করে দিচ্ছিলো। বুকেতে যে ঝড় সৃষ্টি করেছিলো সেটি একা বহন করি কি করে, তাকেও সাথে নিয়ে নিলাম। সুখ যেন আমার বাসায়। ভালোবাসতে শুরু করলাম, নিষ্ঠুর দয়ামায়া হীন পুরুষটাও একটা মেয়ের জন‍্য পাগলামি করতে শুরু করলো। তারিমের সাথে দেখা। আমার আন্ডাবাচ্চাটার খুব প্রিয়। যার জন‍্য মন খারাপ করে নিজেকে ঘরবন্দি করে রেখেছে। নিয়ে আসলাম নিজের কাছে। বোন ভাবতে লাগলাম। কিন্তু সে যে সত‍্যিই আমার বোন হয়ে যাবে একটুও বুঝি নি। হ‍্যাঁ আমার ছোট্ট পুতুল বোনটাকে আমি ফিরে পেয়েছি সব আদরের জন‍্য। রিয়ার দেওয়া ডায়েরীটা আদর পেয়েছিলো।‍ যার ফলে মামার খোঁজ পেলাম। সব রহস‍্য জানতে পারলাম। নিজের আপনজন বড়বাবা বড়মা বোনের খোঁজ পেলাম। সবটা আমার ভালোবাসার জন‍্য। কতটা করেছে ও আমার জন‍্য। তোমার তো নিজের বাবা ভাই বোন কাজিন ভাগ্নে-ভাগ্নী ছিলো। তুমি কি করে পারলে এমনটা করতে? একবারো বুক কাঁপলো না। আমার মনে ভালোবাসা উদয় হয়েছে বলে ভেবো না আমি একেবারেই পাল্টে গেছি। আগে ফুলফর্মে ছিলাম এখন শর্টফর্মে আছি। আর আমার শর্টফর্ম ই কতটা ভয়াবহ এবার দেখবে তুমি! খালা! তো মায়ের মতো হয়, তুমি এমন হলে কেন? এতগুলা আপনজন থাকতেও কতটা বছর দূরে রেখোছো। এর শাস্তি কতটা ভয়াবহ হওয়া দরকার বলো তো?

রিনিশা চুপ করে আছে। চোখেতে আগুন জ্বলছে তার। হৃদানের মায়া মায়া কথাগুলো শুনে সবার চোখে পানি আসলেও তার চোখে আসেনি। সে পাষাণ! এতকিছুর মাঝেও হিয়ান বলে উঠলো,

তুমি আমাকে ভালোবাসোনি রিনি? আমার মরায় তোমার কিচ্ছু যায় আসে না? তোমার জন‍্য আমি রাহেলা কে ছেড়ে দিয়েছি। আর তুমি এই প্রতিদান দিলে?

রিনিশা চুপ করে আছে। হিয়ানের কথায় সবার বুঝতে বাকি নেই হিমেল হিয়ানের আগের পক্ষের ছেলে। হিমেল নিজের মায়ের কথা আসতেই চমকে গেলো। সে রিনিশার কাছে কখনোই মায়ের স্নেহ পায়নি। হয়তো নিজের না বলেই। হিমেল হিয়ানের সামনে দাড়ালো। শক্ত কন্ঠে বলে উঠলো,

আমার মা রাহেলা? কোথায় সে?

হিয়ান ছেলের দিকে করুণ দৃষ্টিতে তাকালো। তার ছেলের চোখে ঘৃণা দেখতে পাচ্ছে। রাহেলা কে ছেড়ে আসলেও ছেলের মায়া ত‍্যাগ করতে পারেনি সে। তাই তো সাথে নিয়ে এসেছিলো। হিয়ান আস্তে করে বলে উঠলো,

গ্রামেই হয়তো থাকছে! আমি খোঁজ রাখিনি! দরকার মনে করে…

পাশে থাকা ছুড়িটা কন্ঠনালি বরাবর চালিয়ে দিলো। সারাজীবনের জন‍্য বন্ধ হয়ে গেলো। এত তাড়াতাড়ি হিমেল কাজ টি করে ফেলবে কেউ বুঝতে পারেনি। চমকে গেছে স্বয়ং হৃদান ও। আদর শক্ত হয়ে দাড়িয়ে আছে। তার মাথায় বার বার গাড়িতে পিষে ফেলার কথাটা ভাসছে। হিমেল নিচে বসে হাউমাউ করে কাঁদছে। রিয়া দৌড়ে গিয়ে পাশে বসলো। হিমেল একপলক চাইলো। এই হাতটা তার খুব দরকার ছিলো!

আদর রিনিশার সামনে গিয়ে ঠাস ঠাস করে তিনটা থাপ্পড় দিয়ে বসলো। হৃদান দৌড়ে গিয়ে আদরকে সরিয়ে নিলো। হাত দুটো মেলে ধরে চাপা উত্তেজনায় বলে উঠলো,

স্টপ আদর, তোমার কোনো রাইট নেই আমার অধিকারে হাত দেওয়ার। হাতটা কেমন লাল হয়ে গেছে। ব‍্যাথা করছে না? এর ব‍্যবস্থা আমি করছি, চুপচাপ দাড়িয়ে থাকো।

আদর মায়াময় চোখে হৃদান কে দেখলো। মানুষটা কত ভাবে তার জন‍্য। হাতে ব‍্যাথা পাবে বলে, এ নাকি তার অধিকারে হাত দিচ্ছে। হাসি পেলো আদরের। হালকা হাসলো। লোকটা তাকে না হাসিয়ে রাখেই না। হৃদান রিনিশার কাছে গিয়ে বলল,

সুপারহিরো কে কোথায় রেখেছো? আমি জানি বাঁচিয়ে রেখেছো। নাহলে ভুল ভিডিও টা করতে কেমন করে?

রিনিশা এবার থম মেরে গেলো। কিছুই বলছে না বলে হৃদান দুটো মেয়ে গার্ড কে বললো তাদের কাজ করতে। পিটানো শুরু করলো তারা। হাজার হলেও খালা তো নিজে মারতে পারেনা। রিনিশা অত‍্যাচার সহ‍্য করতে না পেরে বলে উঠলো,

আমাদের বাড়িতে রেখেছি। মেরে ফেল আমাকে। সহ‍্য হচ্ছে না অত‍্যাচার। মেরে ফেল আমাকে। নাহলে তোদের সবাইকে মেরে ফেলবো আমি। রক্ত ভালো লাগে না। শান্তি দেয় মনে!

হৃদান ইশারা করতেই কপাল বরাবর গুলি করে দিলো একজন গার্ড। চোখ বুঝে নিলো হৃদান। চোখের কার্ণিশ বেয়ে দুফোটা পানি গড়িয়ে পড়লো। আজ বাবার হত‍্যার প্রতিশোধ নিয়েছে সে; সাথে সকল অন‍্যায়ের! সবাই বের হয়ে আসলো ঘর থেকে। হৃদান আতইয়াব ফালাহ পিয়াস পান্চু এই পাঁচ জন বেরিয়ে গেলো আহনাফ চৌধুরীর বাড়ির উদ্দেশ্যে। আর সবাই যে যার রুমে চলে গেলো। সবার মাঝে উৎকন্ঠা। পাবে কি আহনাফ চৌধুরী কে? এর মধ‍্যেই আতইয়াব বলে উঠলো,

রিনিশা চৌধুরী স্বাভাবিক হয় মি. মডেল! মানসিকভাবে অসুস্থ সে। অনেকবছরের হিংসা কে মনের মধ‍্যে চাপিয়ে রেখেই এমন অবস্থা হয়েছে।

হৃদান দীর্ঘশ্বাস ফেললো। আজ রাতেই সকল খারাপের অবসান ঘটাবে সে। কাল নতুন ভোরের আগমনে জীবনটাও নতুন ভাবে সাজাবে!

চলবে…?

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here