প্রেমমানিশা-২৬,২৭

0
191

#প্রেমমানিশা-২৬,২৭

(২৬)

বসার ঘরে বিস্তর আলোচনা চলছে। ফারহান আর সানাহ্ বিয়ে নিয়েই সব আলোচনা। সকলে মিলে আলোচনা করলেও এই আলোচনার নিরব শ্রোতা দর্শক হিসেবে সানাহ্, ফারহান আর অতসী গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। ওরা তিনজন খুবই মনযোগ দিয়ে বড়দের আলোচনা শুনছে। বিয়ে সানাহ্ আর ফারহানের হলেও বিয়ের সব কাজের দায়ভার যেন মিসেস আশা আর মিসেস কায়নাতই নিয়েছেন। দুজনে ঘণ্টার পর ঘন্টা শুধু এটাই আলোচনা করছেন গয়নাগাটি, সানার বিয়ের লেহেঙ্গা এসব নিয়ে।

অতসী মনমরা হয়ে বসে আছে আর ফারহান সানাহ্ নীরবে ইশারায় ইশারায় প্রেম নিবেদন করে চলেছে। হঠাৎ সানার কানে ওর মায়ের বলার একটা কথা যেতেই সানার মস্তিষ্ক সজাগ হয়ে উঠলো। এতক্ষণ ফারহানের দিকে মনযোগ দিয়ে রেখেছিল বলে পূর্বের আলোচনা কিছুই কানে ঢুকেনি। মনে হলো জননীদের এখনই থামানো দরকার নাহলে ওর বিয়ে অথচ কোনোকিছুই ওর ইচ্ছা মতো হবে না।

সানাহ্ কিছু বলতে যাচ্ছিল কিন্তু ফারহান ইশারায় ওকে থামতে বলল। ফারহানের ইশারায় সানাহ্ আর কিছু বললো না তবে এবার ফারহান বললো ‘ আঙ্কেল আমি জানিনা আপনারা আমার কথা কিভাবে নিবেন কিন্তু আমি কথাগুলো বলতে বাধ্য। কাল পরশু সানাহ্ আর আমার বিয়ে। দুই দিন পর আমরা স্বামী স্ত্রী হতে যাচ্ছি তাই এই কথাগুলো ক্লিয়ার না করলে আমাদের ভবিষ্যৎ জীবনে এটার প্রভাব পড়বে।

আমি শুনেছি আপনারা বলছিলেন যে বিয়ের অনুষ্ঠান আপনারা ধুমধাম করে করবেন। আমি তাতে কোনো দোষ দেখছিনা কারণ সানাহ্ আপনাদের বড় মেয়ে। কিন্তু একটা প্রবলেম আছে। এত লোকজনকে নিয়ে বিয়ের অনুষ্ঠানে সানাহ্ আদৌ খুশি তো ?

আমি যতটুকু জানি ও হলো নিঃসঙ্গতা প্রিয় মানুষ। তাই এতজন মানুষ নিয়ে বিয়ের অনুষ্ঠানগুলো ওর পছন্দ হওয়ার কথা না। আমি নিজেও চাইবো না এতজন মানুষের মধ্যে এতগুলো অনুষ্ঠান করতে। তার থেকে বিয়ের অনুষ্ঠানগুলো বাদ দেওয়া যায়। আপনাদের একান্তই ইচ্ছা থাকলে বিয়ের বৌভাত করতে পারেন।

আবার সানার গয়না নিয়েও আপনারা আলোচনা করছিলেন যে আপনারা সানাহ্কে ভরি ভরি গয়না দিবেন আর আমার কিছু দেওয়ার প্রয়োজন নেই। আমি কি জানতে পারি কেন আমি কিছু দিবো না ? সানার সঙ্গে বিয়ে হচ্ছে তাই সে আমার থেকে সবকিছু পাওয়ার দাবিদার। আমি যদি দিতে অক্ষম হতাম তাহলে একটা কথা ছিল। কিন্তু আমার সামর্থ্য অনুযায়ী সানাহ্কে গয়না দেওয়া আমার জন্য কঠিন কোনো ব্যাপার না। হ্যাঁ হয়তো আপনাদের মতো লাক্সারিয়াস গয়না দিতে পারবো না কিন্তু দিতে তো
পারবো আর আই থিঙ্ক সানাহ্ তাতেই খুশি। ব্যাস আপনার এগুলোই বলার ছিল। এখন আপনারা যদি রাজি থাকেন তাহলে তো ভালই নাহলে কিইবা আর করবো। ‘ কথাগুলো বলেই ফারহান সানার দিকে দৃষ্টি দিলো। সানাহ্ ফারহানের দিকে নির্নিমেষে তাকিয়ে আছে। গভীর সেই দৃষ্টি। যেন দৃষ্টিতে ডুবে আছে সানার প্রতি এক রাশ ভালোবাসা।

ফারহান যতটা আশা করেছিল সকলে ততটা শকিং রিয়াকশন দেয়নি বরং অনেকটা স্বাভাবিক ভাবেই ফারহানের প্রস্তাব মেনে নিয়েছে। আবার মিসেস কায়নাত আর মিস্টার কবির ফারহানের সিদ্ধান্তে বেশ অনেকটা খুশি হয়ে ফারহানের অনেক প্রশংসাও করেছেন। সেই সঙ্গে বিয়ের আগেই সানার মন বুঝতে পারার কথা বলে এক রাশ লজ্জা তো আছেই। ফারহান সবটাই নতমুখে মেনে নিয়েছে।

অবশেষে দুপুরের খাওয়া দাওয়া শেষে মিসেস আশা আর ফারহান নিজেদের নীড়ে ফিরে গেলেন। যাওয়ার আগে সানাহ্ আর ফারহানের বিয়ের দিনও ঠিক করে গেছেন। পূর্বে নির্ধারিত দিনের এক সপ্তাহ আগেই আকদের দিন ঠিক হয়েছে। এক সপ্তাহ আগে ঠিক করার পিছনে অবশ্য যুতসই কারণ আছে। বিয়ের পরপরই সানার ইয়ার ফাইনাল আর বিয়ের চক্করে কিছুদিন তো তার পড়াই হবে না।। তাই যাতে পরীক্ষার সময় পড়ার সুযোগ হয় এই জন্যই এই ব্যবস্থা।
বিয়ের দিনক্ষণ হিসেবে পহেলা বসন্তের দিন ঠিক হয়েছে। মিসেস আশার বিশ্বাস পহেলা বসন্তের শুভ রং সানাহ্ আর ফারহানের বিবাহিত জীবনেও শুভেচ্ছা বয়ে আনবে। বসন্তের রঙে রাঙিয়ে দিবে সানাহ্ আর ফারহানের পরবর্তী জীবন।

আকদের পরপরই মেয়ে উঠিয়ে নেওয়ার নিয়ম থাকলেও এই ব্যাপারে মিসেস আশা নিজেকে ভিন্নভাবে উপস্থাপন করেছেন। যেহেতু সানার বিয়ের পরপরই ইয়ার ফাইনাল তাই এখনই সানাহ্কে উনি পুত্রবধূ রুপে বাড়িতে তুলে সানার পড়ালেখার উপর থেকে মনযোগ সরাতে চাচ্ছেন না। এক্ষেত্রে সানাহ্ তার পরীক্ষা বাপের বাড়ি থেকেই দিবে এবং পরীক্ষা শেষ হওয়ার পর সানাহ্কে উনি যোগ্য পুত্রবধূ রুপে পূর্ণাঙ্গ সম্মান দিয়ে নিজ হাতে বরণ করে বাড়িতে তুলবেন। এর মধ্যে নাহয় ফারহান ফাঁকে ফাঁকে এসে সানার সঙ্গে দেখা করে যাবে।

ব্যাপারটা সকলেই লাইটলি নিয়েছে। একদিক দিয়ে ভালই হয়েছে। বিয়ের পরপরই সানাহ্ সাংসারিক ব্যাপারে জড়িয়ে গেলে সানার পড়ালেখার ব্যাপারটা হ্যাম্পার হওয়ার পসিবিলিটিজ থেকে যেত তাই মিসেস আশার সিদ্ধান্ত বেশ পছন্দ হয়েছে সবার। ফারহান, সানাহ্ নিজেদের কথা ভেবে মিসেস আশার সিদ্ধান্ত সসম্মানে মেনে নিয়েছে।

‘ আপাই খেতে চল… মা খেতে ডেকেছে ‘

আচমকা অতসীর ডাকে সানার চিন্তায় ছেদ পড়ল। সানাহ্ ব্যস্ত ছিল ওর আর ফারহানের বিয়ের পরবর্তী জীবনের ভবিষ্যৎ ভাবনা নিয়ে। তবে অতসীর ডাকে আর সেই দিকে মাথা ঘামালো না। নিঃশব্দেই অতসীর কথায় সায় দিয়ে রাতের খাবার খাওয়ার জন্য পা বাড়ালো।

—-

‘ আমি জানি তুমি আমাকে ইচ্ছা করে ইগনোর করছো মিস ইন্ডিয়া। আমি এই কদিনে তোমাকে যতগুলো চিরকুট দিয়েছি সেই সব যে তোমার হাতে গেছে সেটা আমাকে সন্ধ্যা জানিয়েছে। কিন্তু আমি এটা বুঝতে পারছিনা তুমি কেন আমাকে এড়িয়ে চলছ। কথা ছিলো তুমি আমার সঙ্গে দেখা করবে কিন্তু তুমি তোমার নামের মতোই মিস ইন্ডিয়া। মিস ইন্ডিয়ার মতো আমার সামনে ধরা দাওনি। প্লিজ আমার সঙ্গে দেখা করো মিস ইন্ডিয়া। আমি ফর দা লাস্ট টাইম তোমার সঙ্গে কথা বলতে চাই। প্লিজ…. ডু ইট ফর মি। প্লিজ ফর গড সেক আমার সঙ্গে দেখা করো নাহলে আমি নিজে তোমাকে খুজে বের করবো। তুমি কি চাও আমি তোমাকে খুজে বের করি ? ‘ হাতে থাকা কালো রঙের চিরকুটে শুভ্র রঙে রাঙা লেখাগুলো দেখে নিজের অজান্তেই অতসীর চোখের কোল বেয়ে গড়িয়ে পড়ল এক ফোঁটা অশ্রু।

অশ্রু যখন কাগজের কোলে আপন মহিমায় শিলায় পরিণত হতে ব্যস্ত অতসী তখন নিজেকে শক্ত করে চিরকুটটা জিন্সের পকেটে রেখে নিজের ব্যাগ থেকে এক টুকরো হলুদ কাগজ বের করে তার পিঠে লিখলো ‘ Ok, meet me at seven in the evening at Dhanmondi lake’s cafe after one week ‘ । চিরকুটটা লিখেই সন্ধ্যার হাতে ধরিয়ে দিল অতসী। সন্ধ্যা অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে অতসীর দিকে। সে অতসীর চোখের অশ্রুর মানে বুঝতে অপারগ তবে এটা বুঝলো তার অতসদি ভালো নেই। একেবারেই ভালো নেই। তবুও কিছু বললো না। চুপচাপ চিরকুট হাতে চলে গেলো।

জরুরী এক হিসাব নিয়ে বসেছে লিজা। কিছুতেই হিসাব মিলাতে পারছে না সে। বারবার যেন হিসাবে গরমিল লেগে যাচ্ছে। মনে হচ্ছে এই উল্টাপাল্টা হিসাবের জেরে লিজার গরম মাথাটাই না ব্লাস্ট হয়ে যায়। নাহ এখন এই হিসাব রেখে এক কাপ গরম ধোঁয়া ওঠা চা খাওয়া উচিত। তাহলে যদি মাথাটা এক ঠান্ডা হয়। কী অদ্ভুত কথা তাইনা ? গরম খেলে মাথা ঠান্ডা হবে। এটাই তো পার্থিব পৃথিবীর অপার্থিব চাওয়া।

ফোন করে বলতেই লিজাকে এক কাপ ধোঁয়া ওঠা চা দিয়ে গেলো পিয়ন। লিজা সেই চা নিয়ে কেবিনের জানালার ধারে এক রাশ মুগ্ধতা নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। এক সিপ এক সিপ করে চা খাচ্ছে আর বাহিরের মনোরম পরিবেশ দেখছে। হঠাৎ কেবিনের দরজায় কারোর করাঘাত শুনে লিজার ভাবনায় ছেদ ঘটলো। হাতে থাকা খালি চায়ের কাপটা ডেস্কে রেখে নিজের জায়গায় গিয়ে বসলো। আবার নিজের কাজে মনযোগ দিয়ে দ্রুত গলায় বললো ‘ কাম ইন প্লিজ ‘

লিজার বরাবর সামনে অতসী বসে আছে। অতসীর মুখের দিকে তাকাতে পারছে না লিজা। কাদতে কাদতে যেন অতসীর চোখ মুখ বসে গেছে। অতসীর এই অনবরত কান্নার কারণ জানা নেই লিজার। তবে সে কারণ জিজ্ঞেস করেছে কিন্তু ক্রন্দনরত অতসী কিছুতেই সেই প্রশ্নের উত্তর দিচ্ছে না। বারবার শুধু কেঁদেই চলেছে। অতসীকে এভাবে কাদতে আগে কখনও দেখেনি লিজা। তবে কান্নার কারণ না জানলে তো লিজা কিছু করতে পারবে না। এক পর্যায় লিজা রাগী গলায় বললো ‘ কি হয়েছে তুমি কি আমাকে কিছু বলবে অতসী ? যদি কান্নাই করার থাকে তাহলে তুমি এই রুম থেকে বের হয়ে যেতে পারো। আমার কেবিনে কান্নাকাটি এলাউ না। নেক্সট টাইম সাইন বোর্ড ঝুলিয়ে দিবো যেন দ্বিতীয়বার কেউ কাদতে না আসে। ‘

এবার মনে হয় লিজার কথা কিছুটা কাজে দিয়েছে। অতসী তার ফ্যাসফ্যাস করা কান্না বন্ধ করেছে। মুখ চেপে জোরে জোরে নিশ্বাস নিচ্ছে। এতক্ষণ কান্না করার কারণে নিশ্বাস নিতেও যেন কষ্ট হচ্ছে। অতসী কোনোমতে ওর মুখ চেপে বড় বড় নিশ্বাস নিল। তারপর নিজেকে শান্ত করলো। এবার নিজেকে শান্ত করে ধীর স্থীর গলায় বললো ‘ আমি তোমাকে আমার ফ্রেন্ড মানি লিজা তাই ফর দা লাস্ট টাইম তোমার কাছে একটা সাহায্য চাইছি। তুমি কি আমাকে সাহায্য করবে লিজা ? আই রিয়েলি নিড ইউর হেল্প…ফর দা লাস্ট টাইম ‘ ।

লিজা অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে অতসীর দিকে।আজকের মতো বিদ্ধস্ত অবস্থায় অতসীকে সে আগে কখনও দেখেনি। এমন কি কখনও মনেও হয়নি এরকম ভাবে অতসীকে দেখতে হবে। অতসীর এরকম অবস্থায় পিছনে কারণ কি ? অতসীকে জিজ্ঞেস পড়ার পরও তো সে কিছু বলেনি। তাহলে কি ব্যাপারটি প্রেম ঘটিত কিছু ?

কাদতে কাদতে অতসীর চোখ মুখ ফুলে লাল হয়ে উঠেছে। বিভৎস দেখাচ্ছে তাকে। যেই অতসীর দিকে লোকে একবার তাকাল ফের একবার তাকালে বাধ্য হতো সেই অতসীকে আজ দেখলে লোকে দেখতেই চাইবে না। কোথায় গেলো অতসীর রূপ লাবণ্য ? সব কি ধুয়ে মুছে গেছে প্রণয়ের বিরহে ? কেন অতসী নিজেকে প্রণয়ের কাছ থেকে দূরে সরিয়ে রাখতে চাইছে ? কেউ জানেনা এই প্রশ্নের উত্তর..

‘ Ok, meet me at seven in the evening at Rabindra Sarobar’s cafe after one week ‘

লেখাটা আনমনে বারবার পড়ছে প্রণয় তবুও যেন তার বিশ্বাস হতে চাইছে না যে ওর মিস ইন্ডিয়া ওর সঙ্গে দেখা করতে রাজি হয়েছে। বারবার মনে একটাই প্রশ্ন আসছে মিস ইন্ডিয়া এত তাড়াতাড়ি রাজি কি করে হয়ে গেলো ? যেখানে মিস ইন্ডিয়া ওকে তিন চারদিন এমনিতেই ইগনোর করেছে সেখানে একটা হুমকির ভয়ে রাজি হয়ে গেল ? ব্যাপারটা কি অস্বাভাবিক না ? আর রাজিই যদি হয়ে থাকে তাহলে সেটা এক সপ্তাহ পরে কেন ? আজকে কেন নয় ?

নাহ্ আর ভাবতে পারছে না প্রণয়। এই ব্যাপারে যত ভাববে মাথার ভোতা যন্ত্রণাটা ততই বাড়বে। এখন কিছুতেই সে আর এই ব্যাপারে ভাববে না। কিন্তু ভাবতে না চাইলেই কি মন পোষ মানে ? মন তো শুধু তার নিজ ইচ্ছায় চলে। মন বলছে তার মিস ইন্ডিয়া কিছু একটা লুকচ্ছে তার কাছ থেকে ? কিন্তু জিনিসটা কি সেটাই জানা নেই প্রণয়ের।

দুই দিন পর….

ক্লান্ত, উদাসীন আর উদ্ভ্রান্ত টলমলে পায়ে সিড়ি দিয়ে নেমে আসছে সানাহ্। গাঁয়ে এখনও কাল রাতের সেই ফুল হাতা নাইট ড্রেস জড়ানো। চোখগুলো রক্তিম ও টলমলে। কপালের রগ জানান দিচ্ছে আবারও সেই সর্বনাশা জ্বরের প্রকোপে পড়েছে সানাহ্। কাল রাতটা সানার নিদারুণ কষ্টে কেটেছে। আবারও দুশ্চিন্তা আর ডিপ্রেশন ঘর করেছে মনে। নতুন করে বাসা বেধেছে বিয়ে আর ফাইনাল পরীক্ষা নিয়ে চিন্তা।

কাল সারারাত চিন্তায় চিন্তায় এক মুহুর্ত চোঁখ দুটো মেলাতে পারেনি সানাহ্। সানার এই দুশ্চিন্তার শুরু যবে থেকে ওর আর ফারহানের বিয়ের তারিখ ঠিক হয়েছে। বারবার শুধু একই কথা মাথায় ঘুরছে সে পারবে তো সংসার পড়াশুনা সামলে শাশুড়ির মন যুগিয়ে চলতে। সংসারের মত সমরঙ্গণে যেকোনো বীর যোদ্ধাও ভয়ে তার মুখ লুকায়। সেখানে সানাহ্ তো নেহাৎই নস্যি। ছোটো ছোটো ব্যাপারে আত্ম বিশ্বাস হারা হওয়া তার জন্যই স্বাভাবিক বটে।

ক্লান্ত উদ্ভ্রান্ত সানাহ্ দুই দিন ধরেই শান্তির ঘুম বিসর্জন দিয়েছে। এই দুই দিনে আজ যাও বা ভোরের দিকে কয়েক ঘণ্টার জন্য ঘুমিয়েছিল সেটাও এখন উড়ে গেলো। এখন বাজে সকাল আটটা আর এই সময়েই দীর্ঘ দুই ঘণ্টার ঘুম তার পথযাত্রার ইতি টানল।

সানাহ্ ক্লান্ত হলেও তার এখনও কব্জি ডুবিয়ে খাওয়ার শক্তি উধাও হয়নি। সারারাত জেগে থাকায় খিদে এমন লেগেছে যে মনে হচ্ছে খিদের জেরে সানার পক্ষে আট-দশটা ব্রেড টোস্ট খাওয়া মোটেই কঠিন কিছু হবে না। সানাহ্ যখন উদাস ভঙ্গিতে টোস্টেড ব্রেডের গাঁয়ে বাটার লাগাতে ব্যস্ত ঘর্মাক্ত মিসেস কায়নাত তখন এক ঝলক দেখা দিয়ে গেলেন সানাহ্কে যেন মেয়ে তার ডেরাতেই ফিরেছে তার নিশ্চয়তা নিচ্ছেন।মিসেস কায়নাতকে দুই-একবার ঢু মারতে দেখেও সানাহ্ কিছুই বললো না। খিদের তাপে তার এখন কোনদিকেই চোখ দেওয়ার জো নেই। নিজের খুদা মিটানই তার এখন মূল উদ্দেশ্য….

~ চলবে ইনশাআল্লাহ্….

#প্রেমমানিশা(২৭)

রান্নাঘরের কাজ সেরে মিসেস কায়নাত বসার ঘরের সোফায় গিয়ে বসলেন। হাতটা বাড়িয়ে এসির রিমোটটা হাতে নিয়ে এসির টেম্পারেচার আরও কমিয়ে দিলেন। রান্নাঘরে কাজ করতে করতে তার মনে হয় এতক্ষণে এক কেজি ঘাম শরীর থেকে পড়েছে। আগত বসন্তের হালকা এই উত্তাপেই এই অবস্থা, যখন গ্রীষ্মকাল চলে আসবে তখন কি হবে আল্লাহ মালুম।

মিসেস কায়নাত যখন নিজের মতো নিজে জিরিয়ে নিতে ব্যস্ত তখনই বাড়ির সদর দরজার কলিং বেল বেজে উঠলো। মিসেস কায়নাত উঠে গিয়ে দরজাটা খুলে দিলেন। দরজা খুলে দেখলেন লয়ার মিস্টার বড়ুয়া এসেছেন। মিসেস কায়নাত আলতো হেসে মিস্টার বড়ুয়াকে সোফায় বসতে বললেন।মিস্টার বড়ুয়াকে বসিয়ে রেখে মিসেস কায়নাত কিছু নাস্তা পানি আনতে গেলেন।

‘ কেমন আছো মামণি ? ‘

সানাহ্ আপনমনে ব্রেড চিবচ্ছিল। লয়ার মিস্টার বড়ুয়া যে বাড়িতে এসেছেন সেটা ওর নজরেই পড়েনি তাই হঠাৎ মিস্টার বড়ুয়ার কথায় চমকে উঠলো। অবাক হয়ে মিস্টার বড়ুয়ার দিকে তাকালো। তারপর মানুষটা কে বুঝতে পেরে স্মিত হেসে বললো ‘ আমি ভালো আছি। তুমি কেমন আছো উকিল আঙ্কেল ? ‘

‘ আমিও ভালো আছি মা। শুনলাম তোমার বিয়ে ঠিক হয়েছে ? আগে তো বিয়েই করতে চাইতে না আর এখন একেবারে বিয়ের দিনক্ষণ ঠিক করে ফেললে। এই জন্যই তো ভাবী আমাকে ডেকে পাঠিয়েছেন। ‘ মিস্টার বড়ুয়া তার পান খাওয়া দাত দেখিয়ে মুচকি হেসে বললেন।

‘ হ্যাঁ সে বিয়ে.. ‘ সানাহ্ কিছু বলতে যাচ্ছিল কিন্তু ওদের কথার মাঝেই মিসেস কায়নাত স্নাকসের ট্রে এনে বসার ঘরের টি টেবিলের উপর রেখে বললেন ‘ এসব কথা নাহয় পড়ে হবে ভাই। আগে যেই কাজের জন্য আপনি এসেছেন সেটা মিটিয়েনী ? প্রপার্টির কাগজ এনেছেন আপনি ? ‘

‘ হ্যাঁ আপনি যেভাবে যেভাবে বলেছিলেন সেভাবেই এনেছি। আপনি বলেছিলেন আপনাদের বান্দরবনের গেস্ট হাউজ বাদে যেসব স্থাবর অস্থাবর সম্পত্তি আছে সেসবের অর্ধেক সানাহ্ আর অর্ধেক অতসী পাবে। বাকি যে ফার্ম হাউজ ওটা একটা অনাথ আশ্রমকে দিয়ে দিবেন তাইতো ? আমি সেই মতোই কাগজ করে এনেছি। আপনি চাইলে দেখে নিতে পারেন ‘ বলে মিস্টার বড়ুয়া মিসেস কায়নাতের দিকে সম্পত্তির কাগজগুলো এগিয়ে দিলেন।

সানার কোনোকালেই এসব সম্পত্তির প্রতি আগ্রহী ছিল না তাই সে এসবে বোর হচ্ছিল। মনে হচ্ছিল যে পারলে সে এখনই এখান থেকে উঠে যায় কিন্তু খিদের বশে সে যে পাঁচ ছয়টা ব্রেড টোস্ট করেছে সেগুলো কে শেষ করবে ? আগে তো মনে হয়েছে খিদার জ্বালায় সে অনায়াসে আট দশটা খেয়ে ফেলতে পারবে কিন্তু ওর ধারণা যে সম্পূর্ণ ভুল সেটা ও এখন বুঝতে পারছে।

তবে যে করেই হোক সানাহ্ খাবারগুলো শেষ করবে কারণ খাবার নষ্ট করা তার পছন্দ নয়। এমন কত মানুষ আছে যারা খেতেই পায় না আর ও খেতে পেয়েও সেগুলো নষ্ট করবে ? এটা একেবারেই অসম্ভব।

সানাহ্ যখন শরীর হেলিয়ে দুলিয়ে কোনোমতে খাবার গিলছে তখনই ওর ট্রাউজারের পকেটে থাকা ফোন তারস্বরে চেঁচিয়ে উঠলো। এই সাত সকালে কে ফোন করেছে দেখার জন্য ফোন বের করতেই সানার ঠোঁটের কোলে হাসি খেলে গেলো। ফোনের ডিসপ্লেতে গোটা গোটা অক্ষরে ‘ আশা আন্টি ‘ লেখাটা জ্বলজ্বল করছে। সানাহ্ বেশ খুশিই হলো যে এই বোরিং টাইমে কেউ অন্তত তাকে সময় দিতে ফোন করলো।
সানাহ্ ফোন রিসিভ করতেই ঐপাশ থেকে মিসেস আশা বললেন ‘ কেমন আছো সানাহ্ ? ‘

জবাবে সানাহ্ মিষ্টি হেসে বললো ‘ আমি ভালো আছি। তুমি কেমন আছো আন্টি ? কি করছো ? তোমাদের কি ব্রেকফাস্ট করা হয়ে গেছে ? ‘

‘ আলহামদুলিল্লাহ ভালো আছি মা। হ্যাঁ আমাদের ব্রেকফাস্ট করা শেষ। এই যে এখন অফিসে যাবো। রোজই অফিসে যেতে হয়। ‘ মিসেস আশা ক্লান্তি মিশানো গলায় বললেন।

‘ এখন তো এগুলো ছেড়ে দিলেই পারো আন্টি। এই সময় আর কত স্ট্রেস নিবে তুমি ? এত আর্ন করে কি লাভ ? ফারহান তো আছেনই। এতদিন তুমি করলে। এখন থেকে নাহয় উনি করবেন। ‘ সানাহ্ চিন্তিত হয়ে বললো।

‘ এসব কি আর সাধে করি মা ? চাকরি করাটা একসময় আমার বাধ্য বাধকতা হলেও এটা এখন আমার প্যাশন। আসলে কর্মমুখী মানুষ জীবনের শেষ সময়েও কোনো কাজ না করে থাকতে পারে না। সব যদি ছেড়েই দিতে পারতাম তাহলে এতদিনে ব্যবসাকে এতটা দাড় করাতে পারতাম না। তবে সমস্যা নেই। রুদ্রটা পড়াশুনা শেষ করেই অফিস জয়েন করবে। তখন এমনিতেই আমার উপর আর প্রেসার থাকবে না। ‘ মিসেস আশা স্নিগ্ধ হেসে বললেন।

‘ হ্যাঁ তাতো ঠিক। তোমার মতো মানুষ আমি খুব কমই দেখেছি আন্টি। এতটা ডেডিকেটেড আর এফিশিয়েন্ট নিজের কাজে যে আমার মনে হয় আমিও তোমার মতই হবো। এ ওয়ার্কাহলিক পারসন। ‘

সানার কথা শুনে তীব্র স্বরে হেসে উঠেন মিসেস আশা। সানার এসব অদ্ভুত অদ্ভুত কথা উনাকে বড্ড হাসায়। আসলেই মেয়েটা এতটাই সরল যে সবকিছুকেই সোজা মনে করে। কিন্তু এই নিষ্ঠুর পৃথিবীতে কোনোকিছুই সোজা নয়।। একবেলা পেটের খাবার জুটানোর জন্যও মানুষকে এখানে যুদ্ধ করতে হয়। তবে উনি এখনই স্বপ্নের দুনিয়ায় বাস করা সানার ভুল ভাঙাবেন না। মেয়েটা যতটা পারুক স্বপ্ন দেখুক। এরপর তো বাস্তবতার নিষ্ঠুর ধাক্কায় একসময় আপনিতেই সব বুঝে নিবে। তখন নাহয় আবার জীবনটাকে নতুন করে সাজাবে।

মিসেস কায়নাত সম্পত্তির কাগজপত্র দেখছেন। সবকিছু একবার ভালো করে পরখ করে নিয়ে মিস্টার বড়ুয়াকে বললেন ‘ ঠিকাছে তাহলে আমি এখানে কবির আর আমার সাইন নিয়ে নিলে আপনি এগুলো কাজ করতে দিয়ে দিবেন। আমি চাইছি আগামী দুই এক মাসের মধ্যেই প্রপার্টি সানাহ্ আর অতসীর নামে করে দিতে। ‘

‘ কিন্তু ভাবী একটা সমস্যা দেখা দিয়েছে। এখন সমস্যাটা সলভ না হলে আমি কাজে এগোতে পারছি না। সমস্যাটা একটু অন্যরকম। ‘ মিস্টার বড়ুয়া আমতা আমতা করে বললেন।

‘ সমস্যা ? কি সমস্যা ? ‘ মিসেস কায়নাত ভ্রু কুচকে বিরক্তি নিয়ে মিস্টার বড়ুয়ার দিকে দৃষ্টি দিলেন। মিস্টার বড়ুয়ার এহেন আমতা আমতা ভাব উনার পছন্দ হচ্ছে না। এই ধরনের মানুষদের উনার একেবারেই পছন্দ না যারা সিরিয়ালের মতো সিরিয়াস সিচুয়েশনে এমন তোতলাতে তোতলাতে কথা বলে।

‘ কোম্পানি থেকে বেশ কয়েকদিন আগে অনেক মোটা অঙ্কের টাকা উইথড্র করা হয়েছে কিন্তু কেন উইথড্র করা হয়েছে তার কোনো ক্ল্যারিফিকেশন পাওয়া যায়নি। এই কথাগুলো আমি কোম্পানির ম্যানেজিং ডিরেক্টরের কাছ থেকে জানতে পেরেছি যখন কোম্পানির সব অ্যাকাউন্টস চেক করিয়েছিলাম আপনার কথায়। ‘

মিস্টার বড়ুয়ার কথা শুনে যেন আকাশ থেকে পড়লেন মিসেস কায়নাত । উনি বুঝতে পারলেন না মোটা অঙ্কের টাকা কে উইথড্র করেছে ‘ Flora ‘ থেকে। ‘ Flora ‘ হলো বাংলাদেশের প্রথম সারিতে থাকা ফ্যাশন ডিজাইনিং হাউসের মধ্যে অন্যতম ফ্যাশন হাউজ। ‘ Flora ‘ তে বিভিন্ন ধরনের ক্লাসিক্যাল জুয়েলারি ডিজাইন করা থেকে শুরু করে নয়নাভিরাম সব আউটফিটও ডিজাইন করা হয়।।’ Flora ‘ তে বাংলাদেশের সবথেকে বড় ডিজাইনারদের আবাস।

‘ হিউজ এমাউন্ট মানে ? কে মোটা অঙ্কের ক্যাশ তুলেছে ? ক্যাশ নিশ্চই কোম্পানি শেয়ার হোল্ডারদের বাইরে কেউ তুলতে পারবে না ? ‘ মিসেস কায়নাত অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলেন।

‘ হুম হিউজ এমাউন্ট…. এরাউন্ড ওয়ান মিলিয়ন। কোম্পানির ফিফটি পার্সেন্ট শেয়ার মিস হোল্ডার সাইয়ারা কায়নাত সানাহ্ তুলেছেন। ‘ এক প্রকার ভয়ে ভয়েই কথাগুলো বললেন মিস্টার বড়ুয়া।

উনি এখন ভালো করেই বুঝতে পারছেন যে এরপর এই মা মেয়ের মধ্যে কত বড় ধরণের যুদ্ধ লাগতে চলেছে। যদিও সানাহ্ আর মিসেস কায়নাতকে উনি মাত্র একবারই সম্মুখে দাঙ্গা বাঁধাতে দেখেছেন কিন্তু এই দুই মা মেয়ের সাপে নেউলে সম্পর্কের ব্যাপারে কোম্পানির অনেকেই বেশ খানিকটা জানেন। এর পিছনেও কারণ আছে।

একবার সানাহ্, মিস্টার কবির আর মিসেস কায়নাত একটা বড় ক্লায়েন্ট মিটিংয়ে গিয়েছিলাম। সানাহ্ তখন সবে উনিশে পা দিয়েছে মনে হয়। সেখানে মিস্টার বড়ুয়াও ‘ Flora ‘ র পার্সোনাল লয়ার হিসেবে গিয়েছিলেন। সেখানেই মা মেয়ের মত বিরোধ হওয়ায় দুজনে রীতিমত ঝগড়া করে মিটিং ছেড়ে চলে গিয়েছিল। তারপর থেকেই সকলে মা মেয়ের সম্পর্কের ব্যাপারে অল্প বিস্তর অনেক কিছুই জানে।

মিসেস আশার মেজাজ গরম হয়ে গেলেও নিজেকে ঠান্ডা রাখতে চেষ্টা করলেন। উনি অবশ্যই চাননা বাইরের মানুষের সামনে উনার আর উনার মেয়ের মধ্যে ঝামেলা করে মেয়ের সম্মান নষ্ট করতে। এর আগে একবার এই ভুল করেছেন তাই দ্বিতীয়বার আর এই ভুল করবেন না। উনি শান্ত গলায় বললেন ‘ তাহলে মিস্টার বড়ুয়া আপনি এখন আসতে পারেন। আমি কবিরের সঙ্গে কথা বলে পেপার্স এ সাইন নিয়ে আপনার কাছে পেপারগুলো পাঠিয়ে দিবো। নমস্কার… ‘

মিসেস কায়নাতের বলার পর মিস্টার বড়ুয়ার কাছে বলার মত আর কিছুই থাকে না। উনি মেকি হেসে নমস্কার জানিয়ে বেরিয়ে গেলেন। মিস্টার বড়ুয়া বেরিয়ে যেতেই এবার মিসেস কায়নাত উঠে দাঁড়ালেন। ধীর পায়ে শান্ত মেজাজে এগিয়ে গেলেন সানার দিকে।
নিঃসন্দেহে বসার ঘর থেকে খাবার ঘরের দূরত্ব বেশি নয়। এই তিরিশ সেকেন্ডের দুরত্ব। দূরত্ব কম বলেই সানাহ্ এতক্ষণ মিস্টার বড়ুয়া আর মিসেস কায়নাতের প্রত্যেকটা কনভারসেশন শুনতে পেয়েছে। কিন্তু আজ সানার মোটেই নিজের কোনো কাজের এক্সপ্লেনেশন দেওয়ার ইচ্ছা নেই তাই ও উঠে দাঁড়ালো। মিসেস কায়নাতকে আসতে দেখেও না দেখার ভান করে সিড়ির দিকে পা বাড়ালো।

‘ আই ওয়ান্ট টু টক উইথ ইউ সানাহ্…… কাম হেয়ার ‘ মিসেস কায়নাত খাবার টেবিলের এক কোনায় চেয়ারে বসে শক্ত গলায় বললেন।

মিসেস কায়নাতের কথা শুনে সানার চলন্ত পা জোড়া থেমে গেলো। মিসেস কায়নাতের দিকে চোখ না ফিরিয়েই আগ্রাসী গলায় বললো ‘ বাট আই ডোন্ট ওয়ান্ট টু টক উইথ ইউ মা.. আই অ্যাম গোইং টু মাই রুম সো ডোন্ট ডিস্টার্ব মী। ‘

‘ বাট আই হ্যাভ টু ডিস্টার্ব ইউ ডিয়ার…… ইউ হ্যাভ টু লিসেন মি অ্যান্ড এনসার মি। আমি কি জানতে পারি কেন তুমি কোম্পানির একাউন্ট থেকে এরাউন্ড ওয়ান মিলিয়নের মতো ক্যাশ উইথড্র করেছো ? ‘ মিসেস কায়নাতের গলায় তীব্র ঝাঁঝ শোনা গেলো।

সানাহ্ও ওর মায়ের গলার তেজ বাড়তে দেখে থেমে রইলো না। পূর্বের থেকেও বেশি তেজী গলায় বললই ‘ অবভিয়াসলি ইউ হ্যাভ দা রাইট টু নো বাট আই অ্যাম নট ফোর্সড টু ইনফরম ইউ। ‘

‘ অফকোর্স ইউ আর…… এন্ড ইউ আর মাই ডটার সো ইউ আর ফোর্সড টু ইনফরম মি। ‘ মিসেস কায়নাত এবার তেতে উঠে বললেন।

‘ নো আই অ্যাম নট……আই অ্যাম নট ইউর ডটার অ্যান্ড ইউ আর নট মাই মাদার। আসলে লোকে ঠিকই বলে মায়ের থেকে মাসীর দরদ বেশি। তুমি আমার সো কল্ড মাসী ছাড়া কিছুই না। ইউ আর অনলি মাই আন্টি অ্যান্ড ইউ আর নট মাই মাদার। মাই মাদার ইজ মিসেস আয়াত আমরিন। আর ‘ Flora ‘ তে আমার বাবারও শেয়ার আছে তাই আমি ক্যাশ উইথড্র করলে আমি তোমাকে জবাবদিহি করতে বাধ্য নই। রীমেম্বার দেট ইউ আর অনলী মাই আন্টি, নট মাই মাদার।

আজ নেহাৎ আমার মামণি আর বাবাই একটা কার অ্যাকসিডেন্টে আমাকে ছেড়ে চলে গেছে নাহলে আই ডোন্ট নিড ইউ। ইনফ্যাক্ট আমার এখনও তোমাকে দরকার নেই। আই এম এনাফ ফর মাইসেলফ। ইউ আর নাথিং টু মি। সো ডোন্ট ট্রাই টু বি স্মার্ট উইথ মি অ্যান্ড ডোন্ট ট্রাই টু অ্যাক্ট লাইক এ মাদার। ইউ আর অলওয়েজ মাই আন্টি ফর মি…. ‘ বলেই রাগে গজগজ করতে করতে সানাহ্ ধুপধাপ পায়ে কাঠের সিড়ি বেয়ে উঠে গেলো।

সানাহ্ যখন রাগে হিতাহিত জ্ঞান হারিয়ে এতগুলো কথা শুনাচ্ছিল তখনও মিসেস কায়নাত ভাবতে পারেননি সানার কাছে সে আজও মা হতে উঠতে পারেনি। আজও সে সানার সো কল্ড মাসীই রয়ে গেলো। যদি শুধু জন্ম দিলেই মা হওয়া যায় তাহলে নিজে জন্ম না দেওয়া সানাহ্কে যখন নিজ হাতে বড় করলেন তখন উনি কি ? উনি কি শুধুই ওর আন্টি ? কেন আজও উনি সানার কাছে তার মাসীই রয়ে গেলেন ? উত্তর জানা নেই মিসেস কায়নাতের..…

সানাহ্ উঠে যেতেই মিসেস কায়নাত দিশা হারিয়ে দাড়ানো থেকে ধপ করে চেয়ারে বসে পড়লেন। সানার কথা শুনে উনার মাথা ঘুরাচ্ছে। এসব কি বলে গেলো মেয়েটা ? মেয়েটার কাছে কি তবে সে ব্যর্থ মা ? আর কি করলে সে তার মেয়ের কাছে একজন ভালো মা হতে পারবে সেটা মিসেস কায়নাতের জানা নেই। তবে এবার আর মেয়ের মন পাওয়ার জন্য কিছু করার শক্তিও নেই মিসেস কায়নাতের। তবে কি উনার মন অবহেলা পেয়ে পেয়ে মরে গেছে ?

মিসেস কায়নাত যখন চেয়ারে বসেই আপনমনে নিজের ব্যর্থতার গণনা করছিলেন তখনই ধুপধাপ আওয়াজ করে সিড়ি দিয়ে নেমে এলো সানাহ্। দেখে মনে হচ্ছে কোথাও যাচ্ছে কারণ ইতিমধ্যেই তার বেশভূষা বদলে গেছে। পরনে একটা কফি কালারের কুর্তি উইথ কফি অ্যান্ড ব্ল্যাক কম্বিনেশন কোটি আর ব্ল্যাকিশ ব্লু রংয়ের জেগিনস। পায়ে নেভি ব্লু স্নিকার্স আর গলায় অফ হোয়াইট স্কার্ফ। সব মিলিয়ে যেন সানাহ্কে কোনো অপ্সরীর থেকে কম মনে হচ্ছে না। মন মেজাজ খারাপ হওয়ায় সানাহ্ একবারের জন্যও মিসেস কায়নাতকে কোথায় যাচ্ছে সেটা বলে যাওয়ারও প্রয়োজন মনে করলো না।।সোজা হনহনিয়ে বেরিয়ে গেলো।

রিকশায় করে বসুন্ধরা সিটি মলের সামনে এসে দাঁড়ালো সানাহ্। রিকশা থেকে নেমে রিকশাওয়ালার ভাড়া মিটিয়ে দিয়ে রিকশাওয়ালাকে মুক্ত করলো। রিকশাওয়ালা ধুলা উড়িয়ে চলে যেতেই মুক্ত বাতাসে দীর্ঘ শ্বাস ফেলে মলে ঢুকলো সানাহ্। এলিভেটর দিয়ে আট তলায় উঠলো। আট তলায় পৌঁছেই আইস স্কেটিং সেক্টর খুজে বের করলো। তারপর নির্ধারিত জায়গায় নিজের ব্যাগ রেখে এক ঘণ্টার জন্য পে করে আইস স্কেটিং করতে নিজেকে প্রস্তুত করলো।

এটাই হয়ে এসেছে সবসময়। সানার যখনই তীব্র রাগ উঠে কিংবা নিজেকে অসহায় মনে হয় তখনই সে প্রচন্ড মরিচ দিয়ে ঝাল ফুচকা খায় কিংবা বসুন্ধরায় স্কেটিং করতে চলে এসেছে। স্কেটিং শিখেছে সেই ছোটবেলায় তার মামনির তত্ত্বাবধানে। তখন এসব ভালো লাগতো না কিন্তু ওর মামণি জোর করেই এসব করাত। কিন্তু এখন বুঝতে পারছে এই স্কেটিংই তার নিজেকে ঠিক রাখার রসদ।

~ চলবে ইনশাআল্লাহ্….

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here