সেই তুমি ? পর্ব -১

0
6940

–ইশিতা তুমি এই বাচ্চা টা নষ্ট করে ফেলো।
ইফানের এই কথা টা শুনে ইশিতার মাথায় আকাশ ভেঙে পড়লো। ইশিতা নিজের কান কে বিশ্বাস করতে পারছে না। ইফানের মুখ থেকে কি সত্যি ই একথা টা বের হয়েছে। ইফান এ কথা টা কিভাবে বলতে পারলো?
— বাচ্চা নষ্ট করে ফেলবো মানে? তুমি কি বলছো এসব। তুমি যা বলছো তা ভেবে চিন্তে বলছো তো?
— আমি যা বলছি সব ভেবে চিন্তেই বলছি। তুমি বাচ্চা টা নষ্ট করে ফেলো।
— আমার গর্ভে তোমার সন্তান। ও তোমার রক্ত, তুমি ওর বাবা। আমাদের ভালোবাসার প্রতীক ও।আমাদের ভালোবাসার ফলসরুপ আল্লাহ ওকে আমার গর্ভে দিয়েছেন। আর তুমি বলছো। ও এই পৃথিবীতে আসার আগেই, ওর বাবা মা’কে দেখার আগেই আমি ওকে মেরে ফেলি?
ইশিতা কান্নামাখা কন্ঠে কথা গুলো ইফান কে বলছে। ইশিতার চোখে পানি টলমল করছে। এবার শুধু চোখ থেকে গড়িয়ে পড়ার পালা।
— তুমি বুঝতে পারছো না আমার কথা।
–আমি তোমার কোন কথাটা বুঝতে পারছি না?
আমি সব বুঝতে পারছি। আমার আর কিছু বুঝার বাকি নেই।
— আমি তো অস্বীকার করিনি আমি এই বাচ্চার বাবা। করেছি কি?
আমি তো তোমাকে এটা বলছি না, যে এটা আমার বাচ্চা না। আমি জানি ও আমাদের ভালোবাসার ফল। কিন্তু ও এখন এই পৃথিবীতে আসতে পারবে না। আমাদের এখনও বিয়ে হয়নি। আমাদের সম্পর্কের কোনো নাম নেই। এখন যদি এই বাচ্চা টা দুনিয়াতে আসে তাহলে একেক জন তোমাকে একেক ধরনের কথা শুনাবে। এই সমাজ আমাদের সন্তান কে কখনও মাথা তুলে বাঁচতে দিবে না। তোমাকে ও শান্তিতে বাঁচতে দিবে না এই সমাজের মানুষ গুলো।
— আমাদের সম্পর্কের কোনো নাম নেই, শুধু তাই এই বাচ্চা পৃথিবীতে আসতে পারবে না তাই তো?
তাহলে চলো আমরা আজ ই বিয়ে করবো। আমরা বিয়ে করে নিলে তো কেউ আমাদের সন্তান কে নাজায়েজ বলতে পারবে না। আর আমাকেও কোনো কথা শুনাবে না।
— তুমি যা বলছো তা সম্ভব না।
— সম্ভব না?
কেন সম্ভব না ইফান? ওহ,,, তুমি আমাকে ভালোবাসো না তাই তো?
তুমি শুধু আমার শরীর ভোগ করতে চেয়েছিলে। এখন তোমার উদেশ্য পূরণ হয়ে গেছে। এখন তুমি আমাকে বিয়ে করবে কেন?
ইশিতার এই কথা শুনে ইফান রেগে গিয়ে ঈশিতার হাত ধরে ঝাঁকিয়ে ঝাঁকিয়ে
— কি যা তা বলছো তুমি?
ইশিতা এক ঝটকায় ইফানের হাত ছাড়িয়ে নিয়ে
— আমি যাতা বলছি?
এখন তো আমার কথা তোমার কাছে যা তা বলেই মনে হবে।
— ইশিতা আমরা এখনও স্টাডি কমপ্লিট করিনি। নিজেদের লাইফে আমরা কেউ ই সেটেল্ট হয়নি। এখন বিয়ে করলে আমাদের ম্যারেড লাইফ হ্যাপি হবে না। আর আমার পরিবার ও এখন আমাদের বিয়ে মেনে নিবে না। আমরা আগে স্টাডি কমপ্লিট করি। নিজের পায়ে দাঁড়াই তখন না হয়,আমার ফ্যামিলি কে তোমার কথা জানাবো।
— বাহ! এখন তোমার এসব কথা মনে হচ্ছে। আগে এসব মনে ছিল না? আমি আমাদের ভুলের জন্য একটা নিষ্পাপ প্রান কে মেরে ফেলতে পারবো না। যে এখনও পৃথিবীতে আসেনি, এই পৃথিবীর আলো বাতাস কিছুই উপভোগ করেনি তাকে আমি কি করে মেরে ফেলবো তুমি ই বলো?
— তুমি যেভাবে ভাবছো এভাবে যদি তুমি এই বাচ্চা টা কে পৃথিবীর আলো দেখাতে চাও তাহলে সমাজে তোমারই বদনাম হবে।
— বাহ খুব ভালো! এখন দেখছি আমাকে নিয়ে তোমার খুব চিন্তা হচ্ছে। আমাকে নিয়ে খুব ভাবছো।
— তুমি যদি এর পর ও এই বাচ্চা কে জন্ম দিতে চাও। তাহলে আমার কিছু করার নেই। কিন্তু এটা মনে রেখো, আমি এখন এই বাচ্চার দায়িত্ব নেওয়ার জন্য প্রস্তুত না। আমি তোমাকে এর থেকে বেশি আর কিছু বুঝাতে পারবো না। তুমি বাচ্চা নাও অবুঝের মত আচরণ করে নিজের সর্বনাশ ডেকে আনো।
ইশিতা ইফানের কথা শুনে প্রথমে হাসতে লাগলো। ইফান ইশিতার হাসি দেখে ভয় পেয়ে গেল। এমন একটা পরিস্থিতিতে ইশিতা হাসছে কিভাবে? কিছুক্ষণ পর ই ইশিতা চিৎকার করে কাঁদতে লাগলো আর বলতে লাগলো।
— তোমার মত কাপুরুষ কে ভালোবাসা টা ই আমার সবচেয়ে বড় ভুল ছিল। ভুল যখন করেছি তখন তো এই ভুলের জন্য আমাকে শাস্তি পেতেই হবে। সমাজের মানুষ আমার কি হ্মতি করবে? আমার সবথেকে বড় হ্মতি টা তো তুমি করছো। তোমার মত একটা মুখোশধারি কে বিশ্বাস করে আমি আমার সর্বস তোমার হাতে তুলে দিয়েছি।এটার জন্য তো আমাকে শাস্তি ভোগ করতেই হবে।

ইশিতা ইফানের র্শাটের কলার ধরে কথা গুলো বলে কাঁদতে কাঁদতে নিচে বসে গেল। এই কথা গুলো শুনে ইফয়ানের রাগ উঠে গেল। ইফান ইশিতা কে কিছু না বলে গাড়ি নিয়ে চলে গেল। ইশিতা কাঁদছে আর ইফানের চলে যাওয়ার দিকে তাকিয়ে দেখছে। এতো দিন এই মানুষ টাকে সে পাগলের মত ভালোবেসে গেছে। যে মানুষ টার কাছে তার কোনো মূল্য নেই। তার চোখের পানি গুলোর কোনো দাম নেই।

সেই তুমি ?
পর্ব -১
Samira Afrin Samia(nipa)
চলবে….
(নতুন গল্প নিয়ে আবার সবার মাঝে হাজির হলাম। আশাকরি সবাই পাশে থাকবেন। ভুল ত্রুটি হ্মমার দৃষ্টিতে দেখবেন।কেউ বাজে মন্তব্য করবেন না প্লিজ)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here