সেই তুমি? পর্ব -৩

0
3880

সেই তুমি?
পর্ব -৩
Samira Afrin Samia(nipa)

আজিম সাহেব অনেকক্ষণ ধরে হাঁটছে। চেনা পরিচিত কিছু আত্মীয়দের বাড়ি ও এলাকার আসেপাশের প্রায় সব জায়গায় ই ইশিতা কে খুঁজেছে। কিন্তু কোথাও পায়নি। আজিম সাহেবের ভয় হচ্ছে। কোথায় গেল ইশিতা?
আজিম সাহেব হাঁটতে হাঁটতে ব্রিজের কাছে এসে গেল। হঠাৎ আজিম সাহেবের কানে কোনো মেয়ে মানুষের কান্নার আওয়াজ ভেসে গেল। সাথে সাথে আজিম সাহেব হাতে থাকা র্টচ লাইট টা ব্রিজের ওপাশে ধরলো যেখান থেকে কান্নার আওয়াজ শুনা যাচ্ছিল। হ্যা এটা ইশিতা। আজিম সাহেব ইশিতা কে এভাবে দেখে ব্যস্ত হয়ে দৌঁড়ে ইশিতার কাছে গেল। হঠাৎ করে চোখের উপর আলো এসে পড়ায় ইশিতার চোখ বুজে গেল। মিটমিট করে দুচোখ খুলে তাকিয়ে দেখে সামনে ওর মামা বসে আছে। ইশিতা তার মামা কে দেখে ডুকরে কেঁদে উঠলো। আজিম সাহেব ও ইশিতার এ অবস্থা দেখে চোখের জল আটকে রাখতে পারলেন।
— কি রে মা। এতো রাতে এখানে এভাবে বসে আছিস কেন? বাড়ি যাবি না রাত তো অনেক গভীর হয়ে এলো। তোর যদি কিছু একটা হয়ে যেত তখন আমার কি হতো এটা একবার ও ভাবলি না?
এই বুড়ো মামা টার প্রতি কি একটু ও মায়া হয়না?
ইশিতা তার মামার কথা শুনে তার মামা কে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে লাগলো। আজিম সাহেব ইশিতার মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে আলতো করে ইশিতা কে বুকের সাথে জড়িয়ে নিলো।
— আমি আছি তো তোর পাশে। তোর মামা থাকতে কিসের ভয় তোর। আমি বেঁচে থাকতে তোর উপর একটা আঁচ ও আসতে দিবো না।
— আমাকে হ্মমা করে দাও মামা। আমি তোমাদের সন্মান রাখতে পারলাম না। নিজের একটা ভুলের জন্য সমাজে তোমাদের মাথা নিচু করে দিয়েছি। তোমরা এখন কারো সামনে মাথা তুলে দাঁড়াতে পারবে না। কারো চোখাচোখি হয়ে কথা বলতে পারবে না। সব আমার জন্য। আমার বেঁচে থাকার কোনো অধিকার নেই। তুমি আমাকে মেরে ফেলো মামা।
— চুপ একদম এসব কথা বলবি না। আমি জানি তুই জেনেশুনে এমন কোনো কাজ করবি না যার জন্য তোর মামার সন্মান নষ্ট হবে। যে যাই বলুক না কেন আমি কারো কথা বিশ্বাস করি না। আমি তো জানি আমার ইশু মা কেমন? ছোট থেকে তোকে মানুষ করেছি তুই কেমন তা আমার থেকে ভালো কেউ বলতে পারবে না।
ইশিতা তার মামার কথা গুলো শুনে জোরে চিৎকার করে কাঁদতে লাগলো।
— মামা আমি তোমার বিশ্বাসের যোগ্য না। তুমি কেন আমাকে এতো বিশ্বাস করতে গেলে। আমি তো তোমার বিশ্বাসের মর্যাদা দিতে পারিনি।
আমি তোমাকে ও মামী কে অনেক কষ্ট দিয়েছি। ছোট থেকে তুমি আমার কোন চাওয়া ই অপূর্ণ রাখো নি। এসব কিছুর বদলে আমি তোমাদের কি দিতে পেরেছি?
কিছুই না শুধু অসম্মান আর লাঞ্ছনার মুখোমুখি করেছি। সমাজে তোমাদের সবার চোখে নিচু করে দিয়েছি।
— এসব কথা বাদ দিয়ে এখন বাড়ি চল।সেই সকালে না খেয়ে খালি পেটে বাড়ি থেকে বের হয়েছিস। এভাবে না খেয়ে থাকলে তো তুই অসুস্থ হয়ে পড়বি। চল মা এবার বাড়ি চল।
— না মামা আমি বাড়ি ফিরবো না। তুমি আমাকে বাড়ি যেতে বলছো? আমাকে বাড়ি নিয়ে গেলে পারবে কাল সকালে সবার মুখোমুখি হতে? পারবে কি সবার তেতো কথা গুলো সহ্য করতে?
— তুই এখন বাড়ি না ফিরলে কি সবাই তেতো কথা বলা বন্ধ রাখবে? আর তুই এখন বাড়ি না গেলে কোথায় যাবি?
— এভাবে রাস্তায় রাস্তায় ঘুরে ইচ্ছে করেই হঠাৎ কোনো গাড়ির নিচে এসে যাবো। মুক্তি পারো এই কলঙ্ক মাখা জীবন থেকে। আর তোমাদেরকে ও মুক্ত করে দিয়ে যাবো আমার বুঝা থেকে।
আজিম সাহেব ইশিতার এমন কথা শুনে রাগে না চাইতে ও ইশিতার গালে একটা থাপ্পড় বসিয়ে দেয়।
— খুব বড় হয়ে গেছিস তাই না?
অনেক বুঝিস। মামা মামীর জন্য অনেক চিন্তা করিস। মামা কে তোর বোঝা থেকে মুক্ত করতে চাস? তাহলে যা তোর যেখানে ইচ্ছা সেখানে চলে যা। কিন্তু যাওয়ার আগে, ছোট বেলা থেকে আজ পর্যন্ত তোকে যতটা ভালোবাসা দিয়েছি তা ফিরিয়ে দিয়ে যা।

সালেহা বেগম ঘড়ির কাটার দিকে তাকিয়ে দেখে রাত প্রায় বারো টার কাছাকাছি। এখনও আজিম সাহেব বাড়ি ফিরলেন না। সালেহা বেগমের কথার আওয়াজে রুমি, রুনা দুজনের ই ঘুম ভেঙে গেলে। রুমি এবার সেভেন এ আর রুনা ফাইভ এ পড়ে। কিছু দিন ধরে ওদের বাড়িতে কি হচ্ছে তার কিছুই ওরা বুঝতে পারছে না। ওদের মা যেন ইশিতা কে কি বলে তার পর ই ইশিতা কান্না করে। ওরা কিছুই বুঝে না ইশিতা কেন ওসব কথা শুনে দৌঁড়ে রুমে গিয়ে দরজা বন্ধ করে নেয়। অবশ্য অনেক বার ওরা সালেহা বেগমের কাছে জিঙ্গেস করেছে ইশিতার কি হয়েছে। সালেহা বেগম জবাবে শুধু ধমক দিয়ে ওদের চুপ করিয়ে দিছে।

আজিম সাহেব অনেক বুঝিয়ে ইশিতা কে বাড়ি নিয়ে আসলো। আজিম সাহেব ইশিতা কে ধরে গেইট দিয়ে বাড়ির ভিতরে আসলে সালেহা বেগম ইশিতা কে দেখে
— আসছেন মহারানী? বাড়িতে ফিরে এসে আমাদের উপর খুব বড় করুনা করলেন। সমাজে আমাদের মান-সম্মান যেটুকু ছিল তা তো পুরোটাই হারিয়েছি। এখন এতো নাটক করার কি আছে। সবার সামনে ভালো সেজে থাকার কোনো দরকার নেই।
— সালেহা তুমি চুপ করবে?
— চুপ ই তো করে আছি। এতো কিছু ঘটে যাওয়ার পর ও তো আমি তোমার আদরের ভাগনী কে কিছুই বলছি না। সমাজে ওর নাম কলঙ্কিনীর খাতায় উঠে গেছে। এটার মানে কি ও বুঝতে পারছে?
আমাদের ভালোবাসায় কিসের কমতি ছিল? যার জন্য এভাবে আমাদের নাম বদনাম করার আগে একবার ও ভাবলো না।
— আর একটা কথা ও বলবে না তুমি। তুমি তো আমাদের ইশিতা কে চেনো।তুমি বাকি সবার মত ওকে এসব কথা শুনাচ্ছো।
— তুমি মামী কে চুপ করতে বলছো কেন মামা। মামী তো ভুল কিছু বলেনি। মামী যা বলছে সব তো ঠিকই বলছে। আমি জানি তোমরা আমাকে কতটা ভালোবাসো। আমি তোমাদের বিশ্বাস রাখতে পারিনি। মামী অনেক কষ্টের পর ই আমাকে একথা গুলো শুনাচ্ছে। মামীর কথায় আমি কিছু মনে করবো না।
ইশিতা কাঁদতে কাঁদতে চোখ দুটো ফুলিয়ে ফেলছে। ইশিতা কে এমন অবস্থায় দেখে সালেহা বেগম ও নিজের চোখের পানি আটকে রাখতে পারলেন না। সব রাগ অভিমান ভেঙে দৌঁড়ে ইশিতার কাছে গিয়ে ইশিতা কে বুকে জড়িয়ে নিলো। ছোট থেকে নিজের হাতে আদর যত্ন দিয়ে এতো টা বড় করে তুলছে। হাজার ভুল করলেও দূরে সরিয়ে দিতে পারবেন না।
— কেন এভাবে কষ্ট দিস আমাদেরকে? তোকে এমন ভাবে দেখে আমাদের উপর দিয়ে কি যায় এটা ওই বুঝতে পারিস না। তোকে কষ্ট পেতে দেখলে তো আমাদের ও কষ্ট হয় রে মা।
ইশিতা শক্ত করে তার মামী কে আকড়ে ধরলো
— মামী আমাকে হ্মমা করে দিও। আমি তোমাদের অনেক কষ্ট দিয়েছি।
— কাঁদিস না মা সব ঠিক হয়ে যাবে। আমরা তো এখনও বেঁচে আছি নাকি? আমরা তোকে কোন কষ্ট পেতে দিব না। চল ঘরে চল।সকাল থেকে তো কিছুই খাসনি। তোর জন্য তোর মামা ও না খেয়ে আছে।
ইশিতার মামী ইশিতা কে নিজের হাতে খাইয়ে দিয়ে। মাথায় হাত বুলিয়ে ঘুম পাড়িয়ে দিয়ে নিজের ঘরে গেল।
ওদিকে ইফান বন্ধুদের সাথে পার্টি করে ড্রিঙ্ক করে বাসায় ফিরলো। আজ ইফান খুব খুশি। এতো দিনে নিজের অপমানের বদলা নিতে পারলো ইশিতার থেকে। ঐ দিন ইশিতার বলা কথা গুলো আজও মনে রেখেছে ইফান। ইফান মাতাল অবস্থায় রুমে এসে নিজেকে বেডে এলিয়ে দিলো।

চলবে…..

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here