এখানে বেলি ফুলের মালা-৩,০৪

0
392

এখানে বেলি ফুলের মালা-৩,০৪

০৩
————————-

সরাব এসেছে তার ছোট কাকার বাড়িতে। ছোট কাকা, আব্দুল মিয়া এলাকার এক সাধারণ দিনমজুর। সরাবের বাবা বেচেঁ থাকাকালীন তাদের সাহায্য করতেন। এখন উনি মারা যাওয়ার পর সরাব করে। আব্দুল মিয়ার বাড়িটা সাধারণ টিন সেটের বাড়ি। ঘর তিনটা…. খাওয়ার ঘর, আব্দুল মিয়া ও তার স্ত্রীর ঘর এবং তাদের মেয়ে রুনার ঘর। এছাড়া তাদের বাড়ির সামনে খানিকটা জায়গা জুড়ে আঙিনা আছে।

আব্দুল মিয়ার অবস্থা কোনোকালেই তেমন ভালো ছিল না। বাড়ন্ত বয়সে আবেগে আপ্লুত হয়ে পড়াশোনা ছেড়ে দিয়েছিলেন যার কারণে ভাইয়ের সঙ্গে ব্যবসায়ে যোগ দেওয়ার যোগ্যতাও ছিল না। সেই কারণেই দিন খেটে এখন দিন মজুরের কাজ করে যতটুকু আয় হয় তাতে নিজেদের খরচ চালিয়ে মেয়েকে কলেজ পাঠান।

আব্দুল মিয়ার একমাত্র মেয়ে রুনা। পড়াশোনায় সাধারণ গোছের। এবার সে ইন্টারে পড়ছে। কলেজে উঠলে কি হবে ? পড়াশোনায় তার বিন্দুমাত্র মনযোগ নেই। তার সব মনযোগের কেন্দ্রবিন্দু সরাব। সরাবকে সে ভীষন পছন্দ করে আবার খানিকটা সমীহও করে যেহেতু তার কাকার ছেলে। এই যে এখন সরাব এসেছে, তাদের সঙ্গে মেঝেতে বসে ডিম আলুর তরকারি খাচ্ছে সে তাতেই ভীষন খুশী।

সরাবকে অনেকদিন পর পেয়ে তসলিমা বেগম ভাতিজার প্লেটে আরও বেশি করে ভাত তুলে দিলেন। ব্যস্ততায় সরাব তাদের বাড়ি আসে না। শুধু প্রত্যেক মাসে সময় করে কারোর হাত দিয়ে পাঁচ হাজার টাকা পাঠিয়ে দেয়। ওই পাঁচ হাজার টাকায় তাদের অনেকটা সাহায্য হয়।

সরাব খেতে খেতে হাত দেখিয়ে তসলিমা বেগমকে থামিয়ে দিয়ে বললো ‘ আর দেওয়ার প্রয়োজন নেই কাকী। এটুকুই যথেষ্ট। ‘ সরাবের কথায় তসলিমা বেগম আর ভাত দিলেন না তবে বললেন ‘ আপার কি অবস্থা সরাব ? শরীরটা ভালো তো ? কয়দিন হলো দেখা করতে পারিনা। আসলে ঘর,সংসারে এতই ব্যস্ত হইয়া যাই যে সুযোগ হয়না। ‘

সরাব তসলিমা বেগমের কথার জবাবে কিছু বললো না। তবে গলা ঝেড়ে অন্য কথা তুললো ‘ কাকা আমার আপনার সঙ্গে একটা জরুরী কথা ছিল। ‘
ভাই পোর কথা শুনে আব্দুল মিয়া একটু নড়েচড়ে বসলেন। সরাবের এত আয়োজন করে কথা রাখার ভঙ্গিই বলে দিচ্ছে ব্যাপারটা গুরুগম্ভীর। উনি হেসে বললেন ‘ বলো না বাবা। আমি শুনছি। ‘

সরাব প্লেটের শেষ নলা মুখে তুলে পানি খেয়ে বললো ‘ আপনি রাজি থাকলে আমি রুনাকে বিয়ে করে ঘরে তুলতে চাই। ‘

—-

বিনীর বিদায়ের ঘণ্টা বেজেছে কিছুক্ষণ পূর্বেই। বিদায়ের সময় পুরো বাড়ি শুদ্ধ মানুষ যেন আকাশ,বাতাস কাপিয়ে কাদছিল। বিনীর বাবা জহির সাহেবও নাক টেনে খানিকটা কেঁদেছেন। সালমা ইসলাম মেয়ের বিদায়ের সময় কাদেননি তবে মেয়ের মাথায় হাত বুলিয়ে দোয়া পড়ে ফু দিয়ে দিয়েছেন। মায়ের মত বিনীও কাদেনি। কান্নাকাটি করা তাদের মা মেয়ের ধাঁচে নেই।

বর্তমানে বিনী ও আবির বিনীর শশুর বাড়ির উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করেছে। ওদের বিয়ের গাড়ি হিসেবে আবিরের বাড়িরই একটা গাড়ি সাজানো হয়েছে। আবিরের বড় ভাই আনিসসহ তার পরিবার এবং জাবিয়া, জাদিদ ওরা অন্য দুই গাড়িতে করে রওয়ানা দিয়েছে। আবির এবং বিনী পাশাপাশি বসে আছে। কারোর মুখে রা নেই।

কথাটা প্রথমে বিনীই শুরু করলো। আবির কেমন উসখুশ করছে। হাতের ঘড়ি ধরে টানা হেঁচড়া করছে। বিনী বললো ‘ চাইলে ঘড়িটা খুলে রাখতে পারো। ‘
বিনীর কথার বিপরীতে কিছু বললো না আবির। ও হাতের ঘড়ি খুললো। তারপর পকেট থেকে শুভ্র রুমাল বের করে রুমালে ঘড়ি পেঁচিয়ে ফেললো যাতে হাত থেকে পড়ে গেলেও ঘড়ি ভেঙে না যায়।

বিনী চুপচাপ বসে আছে। গাড়ির জানালা দিয়ে বাইরে প্রকৃতি দেখছে। আবিরের সঙ্গে সেই একবারই কথা হয়েছে। এরপর আর কথা আগায়নি সে। আবির নিজেও হয়তো ইচ্ছুক না কথা আগাতে তাই বিনী আর আগ বাড়িয়ে কিছু বলেনি। বিনী বাহিরে তাকিয়ে থাকতে থাকতেই লক্ষ্য করলো বাহিরের গতিশীল প্রকৃতি থেমে গেছে। বিনী ঘাড় ঘুরিয়ে আবিরকে দেখলো। আবির ওকে দেখে বললো ‘ নামো, বাড়ি এসে গেছি। ‘

বিনী গাড়ি থেকে নামতে নামতে ভাবলো বাপের বাড়ি থেকে শশুর বাড়ি আস্তে তার বেশি সময় লাগেনি। পথের দূরত্ব কম, তারমানে যাওয়া আসার ঝামেলায় ট্রাফিক জ্যামে বেশি পড়তে হবে না। আরামেই বিয়ের দুই একদিন পরে যাওয়ার যে ব্যাপারটা সেটা একদিনের মাথাতেই সেরে ফেলতে পারবে।

বাড়ির সামনে এসে দাঁড়িয়েছে বিনী, আবিরসহ বিয়ের বর যাত্রী যারা ছিল তারা সকলে। আবিরদের বাড়ি শুভ্র রঙ্গা দোতলা এক বাড়ি। বাড়ির বাহ্যিক নকশা বলছে বাড়িটা বেশ পুরনো। হয়তো ব্রিটিশ আমলের। অনেক আগের বাড়ি অথচ এখনও দেওয়ালের শুভ্র রং রাতের আধারেও জ্বলজ্বল করছে।

বিনী আর আবিরকে আবিরের মা শাহিদা খাতুন বরণ করলেন। বরণ শেষে শাহিদা খাতুন উনার জা জাহানারাকে বললেন ‘ জাহান নতুন বউরে নিয়া তুমি আর আফিফা আবিরের ঘরে যাও। ‘
বড় জায়ের আদেশ এক বাক্যে মেনে নিলেন জাহানারা। আফিফাকে ইশারায় উনার পিছন পিছন আস্তে বললেন। আফিফা ইশারা বুঝে জাহানারা এবং বিনীর সঙ্গে এগিয়ে চললো।

বিয়ে বাড়ি হাজার মানুষের জায়গা। বিয়ের মৌসুমে বাড়ির মেয়ে বউদের হাজার কত কাজ থাকে। সেসব কাজেই ব্যস্ত থাকেন শাহিদা খাতুন। শাশুড়ির সাহায্য করা প্রয়োজন বলে আবিরের বিয়েতে যেতে পারেনি আফিফা। জায়ের সঙ্গে হাতে হাত লাগিয়ে কাজ করবেন বলে জাহানারাও যাননি। আবিরের বাবা এবং কাকাও এতজন মানুষ নিয়ে বরযাত্রী হিসেবে গিয়ে মেয়ের বাড়ির লোকজনকে বিপদে ফেলার প্রয়োজন মনে করেননি কাজেই তারাও যাননি।

বিনীদের বাড়ি থেকে আবিররা খেয়ে এসেছে। তাই তাদের আর খাওয়ার প্রয়োজন পড়েনি। বাকিরাও খাওয়া দাওয়া শেষ করে ফেলেছে ওদের পৌঁছতে পৌঁছতে। শাহিদা খাতুন সব একা হাতে সামলাচ্ছিলেন। বিনীকে আবিরের রুমে দিয়ে এসে আফিফা এবং জাহানারাও কাজে হাত দিলেন। আবির তখন বাবা আজাদ সাহেব এবং চাচা সাজ্জাদ সাহেবের সঙ্গে কথা বলতে ব্যস্ত।

কাজের মাঝে শাহিদা খাতুন ছেলেকে হাক ডাকলেন। মায়ের ডাকে বাবার আড্ডা ছেড়ে উঠলো আবির। সে এগিয়ে আসতেই শাহিদা খাতুন বললেন ‘ ঘরে বউ রাইখা বাপ ভাইয়ের সঙ্গে কি অত ফুসুর ফুসুর করো ? বিয়া কি করছো বউ সাজায় রাখার জন্য ?ঘরে যাওনা কি জন্য ? ‘

মায়ের ধমকে আবির দ্রুত সিড়ির দিকে হাঁটা দিলো। আবিরকে উঠে যেতে দেখে আফিফা এগিয়ে এলো। আস্তে করে বললো ‘ ঘরে গিয়ে এরকম বাংলার পাঁচপান্নর মতো মুখ বানায় রাখবা না। আমার জা যেন কোনো অভিযোগ করার সুযোগ না পায়। পারলে একটু আদর,সোহাগ করিও ভাই। তোমরা ভাইয়েরা যা নিরামিষ। ‘

আফিফার কথায় আবির লজ্জায় পড়ে গেলো। আফিফা বয়সে তার ছোট হলে কি হবে ? সম্পর্কে বড় বলে যখনই দেখা হয় লজ্জায় ফেলার মতো পরিস্থিতি তৈরি করে ফেলে তার জন্য। আবিরের মনে হলো আফিফাকে এগিয়ে আসতে দেখে দাড়িয়ে যাওয়াটা তার সবথেকে বড় ভুল। তাই ভুল শুধরাতে ও কোনো কথা না বলে দ্রুত পা চালিয়ে সিড়ি দিয়ে উঠে গেলো।

আবির ঘরে এসে দেখলো ঘরময় ফুলেল সুবাস। আজ তাদের বাসর রাত বলে ঘরকে গোলাপ ফুলের পাঁপড়ি দিয়ে সাজিয়েছে। কিন্তু বিনী আবিরের আসা পর্যন্ত অপেক্ষা করেনি। তার আগেই কাগজ দিয়ে বিছানার উপর থেকে ফুলের পাপড়িগুলো সরিয়ে ফেলছে। আবিরকে আসতে দেখে বিনী বলল ‘ আসলে গোলাপে আমার এলার্জি আছে তাই সরিয়ে ফেলেছি। তোমার কোনো সমস্যা হবে ? ‘

বিনীর কথা শুনে আবিরের কুঞ্চিত ভ্রু সোজা হলো। ও স্বাভাবিক ভঙ্গিতেই ঘরে ঢুকে দরজার খিল এঁটে দিলো। গায়ের পাঞ্জাবি খুলতে খুলতে বললো ‘ জী না। বিছানায় ফুলের পাঁপড়ি রেখে ঘুমানো সম্ভব নয়। তাই আমার আসার আগেই সরিয়ে ফেলার জন্য ধন্যবাদ। কাল বুলুকে বলে দিলেই হবে, ও ঘর পরিষ্কার করে দিবে। ‘

—-

দরজা পেটানোর শব্দে ছুটে এলেন নূরজাহান বেগম। বিরক্তিতে মুখ ছেয়ে আছে। এভাবে দরজা ধাক্কালে রাগ না উঠা কি স্বাভাবিক ?দ্রুত দরজা খুলে নূরজাহান বিশ্রী গালি আউড়ে বললেন ‘ তোর সমস্যা কি ছোটলোকের বাচ্চা ? ‘

কিন্তু কথাগুলো বলে সামনে দৃষ্টি দিতেই একটু ভরকে গেলেন। সরাবের সঙ্গে রুনা দাড়িয়ে আছে। নূরজাহান এবার একটু অপ্রস্তুত হাসলেন। রুনা নূরজাহানের মুখ থেকে গালিগালাজ শুনে মুখ নামিয়ে ফেলেছে। নূরজাহানের অবস্থা এত খারাপ তার জানা ছিল না। নূরজাহান ভাতিজিকে দেখে হেসে বললেন ‘ রুনা নাকি ? কতদিন পর এলি। আয় ভিতরে আয়, একলা এসেছিস নাকি ? তোর মা কোথায় ? ‘

সরাব রুনার আগেই বাসায় ঢুকলো। মায়ের এসব গালিগালাজে অভ্যস্ত সে। বাসায় ঢুকে নিজের ঘরের দিকে যেতে যেতে বলল ‘ রুনাকে ঘরে ঢোকান আম্মা। এখন থেকে ও আমাদের সঙ্গেই থাকবে। আপনার আর সারা বাসায় একা একা থাকতে হবে না। ‘

সঙ্গী পেয়ে নূরজাহান খুশিতে বলেন ‘ তাই ? রুনা বুড়ি বুঝি কলেজে পড়াশোনা ছেড়ে দিয়েছে ? বাইরে দাঁড়িয়ে আছিস কেন বুড়ি ? বাসায় ঢোক। ‘
সরাব ভিতরের ঘর থেকেই নূরজাহানের কথা শুনছিল। সে গলা চড়িয়ে বললো ‘ আমি রুনাকে বিয়ে করেছি আম্মা। তাই এখন থেকে ও এখানেই থাকবে আপনার সাথে। কাকা কাকী কাল এসে দেখা করে যাবে আপনাদের সাথে। ‘

—-

বিছানায় অন্য পাশ ফিরে ঘুমিয়ে আছে আবির। বিনী বাথরুম থেকে গোসল সেরে বেরিয়েছে। বিয়ের ভারী শাড়ি, গয়নাতে থাকা তার জন্য কষ্টদায়ক। তাই সেগুলো বদলে ফেলেছে। ভারী জামা কাপরগুলো বদলে শাড়ি পড়াতে এখন শান্তি লাগছে। বিনী কিছুক্ষণ জানালার কাছে দাড়িয়ে রইলো তারপর বিছানায় গিয়ে আবিরের গা ঘেসে শুয়ে পড়লো। কিছুক্ষণ এপাশ ওপাশ করলো। কিন্তু ঘুম এলো না।

সকাল হয়েছে। বিনী ঘুম থেকে উঠে পরিপাটি হয়ে রান্নাঘরে এসেছে। শাহিদা খাতুন বিনীকে রান্নাঘরে দেখে বললেন ‘ তুমি এই সময় রান্নাঘরে কেন বউ ? ‘
বিনী মাথার কাপড় ঠিক করে বললো ‘ সকালের নাস্তা তৈরি করতে সাহায্য করি আম্মা ? ‘
শাহিদা খাতুন প্রথমে ভেবেছিলেন না করে দিবেন কিন্তু পরে ভাবলেন প্রয়োজন নেই। এখন থেকে রান্নাবান্নার অভ্যাস থাকলে পরে আর সমস্যা হবে না। উনি বললেন ‘ সাহায্য করতে পারো কিন্তু আগে নিজের নখ কাইটা আসো। ‘

শাহিদা খাতুনের কথা শুনে বিনী ওর কাকী শাশুড়ির দিকে তাকালো। জাহানারা বড় জায়ের কথা শুনে আর বিনীর দৃষ্টি দেখে বিপদে পড়লেন। হেসে বললেন ‘ আমি ওকে নখ কাটায় দিচ্ছি আপা। ব্লেড আমার ঘরেই আছে। আসো বউ, আমার সাথে আসো। ‘

—-

বিনী জাহানারার ঘরে বিছানায় বসে আছে। জাহানারা ঝুড়ি খুঁজে ব্লেড এনে বিনীর হাতে দিলেন। তারপর বিনীর পাশে বসলেন। বিনী ব্লেড পেয়ে নখ কাটতে ব্যস্ত। জাহানারা অনুনয় মাখা গলায় বললেন ‘ আপার কথায় রাগ করো না বউ। উনি একটু কড়া ধরনের। সব কথাই গম্ভীর গলায় বলেন। কিন্তু উনি তোমার ভালোর জন্যই নখ কাটতে বলেছেন। এখন তোমার বিয়ে হয়েছে। রোজ রান্নাবান্না করবা, থালাবাসন ধুইবা, সবজি কাটাকুটিও করবা। নখ থাকলে তো সমস্যা কাজ করতে। ‘

বিনী জাহানারার কথা মন দিয়ে শুনছিল। নখ কাটতে কাটতেই সে বললো ‘ আমি বুঝেছি কাকী। ‘
জাহানারা আর কিছু বললেন না। বিনীর নখ কাটা শেষে নিচে নেমে রান্নাঘরে গেলেন তারা। বিনী মোড়ায় বসে রুটি বেলছে রুটির পিড়িতে। জাহানারা সেই রুটি নিয়ে এক এক করে ভাজছেন। আরেক চুলায় আলু ভাজি হচ্ছে। আফিফা সবজি কাটছে আর শাহিদা খাতুন থালা বাসন মাজছেন।

—-

খাবার ঘরে সকলে জড়ো হয়েছেন। আবির একেবারে তৈরি হয়ে দপ্তরের ব্যাগ নিয়ে নিচে নেমেছে। সে খেয়ে একবারে বেরিয়ে যাবে হাসপাতালের উদ্দেশ্যে। আফিফা এবং বিনী মিলে সবাইকে রুটি ও ভাজি দিচ্ছে। আবিরকে নামতে দেখে আফিফা বিনীর কানে কানে বললো ‘ রুটি নিয়ে তোমার বরের কাছে যাও। ‘
বিনী আফিফার কথা শুনে আবিরের কাছে গিয়ে দাঁড়ালো। আবিরকে দুটো রুটি দিয়ে বলল ‘ আরও দিবো ? ‘

‘ এত বড় পুরুষ মানুষের দুটো রুটিতে হবে ? আরও তিনটা দাও। ঘরে রুটির অভাব পড়েনি। ‘

বিনীর প্রশ্নের উত্তর দিত আবির কিন্তু মায়ের গলা শুনে আর কিছু বললো না। বিনীর কথা শুনে শাহিদা খাতুনই রান্নাঘর থেকে গলা চড়িয়ে বলেছেন কথাটা। জাবিয়া, জাদিদ বিনী ও আবিরকে একসঙ্গে দেখে হাসছিল কিন্তু শাহিদা খাতুনের কড়া কথায় তাদের হাসি বন্ধ হয়ে গেলো। আজাদ সাহেব ছোট ভাই সাজ্জাদ সাহেবের সঙ্গে ব্যবসা নিয়ে কথা বলতে বলতে খাওয়া দাওয়া শেষ করলেন।

শাশুড়ির কথায় বিনী মন খারাপ করলো নাকি করলো না সেটা তার মুখ দেখে বুঝা গেলো না। মুখোভাব তার স্বাভাবিক। আবির একবার বিনীকে দেখে শেষ ভাগটা খেয়ে সবাইকে বিদায় জানিয়ে ব্যাগ কাধে ঝুলিয়ে বেরিয়ে গেলো। বিনীর চোখ মুখ দেখে হয়তো বোঝা যাচ্ছেনা তার মনের অবস্থা কিন্তু আবির জানে বিয়ের পরের দিনই এরকম একটা কথা শুনে কোনো মেয়েই ঠিক থাকতে পারবে না।

শাহিদা খাতুনের কথায় খারাপ লাগেনি বিনীর। যৌথ পরিবারে বিয়ে হলে যে এরকমভাবে সবার সামনে কথা শুনতে হবে এটাই তার জানা। তার মাকেই তো এমন কত কথা শুনতে দেখেছে সে। যতদিন তার দাদী বেঁচেছিলেন ততদিন তার মা এভাবেই কথা শুনে এসেছে। এছাড়াও ভুল তো তারই। এত বড় একজন মানুষ তো বেশি রুটি খাবেই। সুতরাং নিজের ভুল নিজেই শুধরে নেয়ার বুদ্ধিমানের কাজ।

~চলবে ইনশাআল্লাহ্…
মিফতা তিমু

এখানে বেলি ফুলের মালা-৪
————————-

দুপুরে কাজ শেষে নিজের ঘরে বসেছিল বিনী। সময়টা কেমন ধীর গতিতে কাটছে। এতক্ষণ কাজের মধ্যে ছিল তাই দ্রুত কেটে গেছে কিন্তু এখন তো আলসে সময় যাচ্ছে। বিনী কি করবে খুঁজে পেলো না। আশেপাশে কয়েকবার চোখ ফেরালো। আবিরের ঘরের এক কোণায় বইয়ের শেলফ আছে। বিনী ভাবলো অলস সময় না কাটিয়ে একটা বই পড়া যায়। এমনিতেও শুয়ে বসে থাকতে তার ভালো লাগছে না।

বিনী বেছে বেছে হুমায়ূন আহমেদের প্রিয়তমেষু বইটা হাতে নিল। শেলফের কাছে থাকা বিরাট আরাম কেদারায় শরীর এলিয়ে দিয়ে মুখের সামনে বই মেলে ধরলো। তবে রাতের অনিদ্রার ফলে প্রিয়তমেষুর মতো এত আবেগী বই পড়েও তার জেগে উঠা নিদ্রা কাটানো গেলো না। উল্টো বই পড়তে পড়তে কখন যে সে ঘুমিয়ে পড়েছে টের পায়নি।

বিনীর যখন ঘুম ভাঙলো তখন সন্ধে হয়ে গেছে। বিনী হুড়মুড়িয়ে উঠলো। সন্ধ্যা হয়ে গেছে অথচ সে পড়ে পড়ে ঘুমোচ্ছে। শাহিদা খাতুন তো রেগে বোম হয়ে আছেন মনে হয়। বিনীর ভয় হচ্ছে।

বিনীকে লাফিয়ে উঠতে দেখে জাবিয়া চমকে গেছে। সে এসেছিল বিনীকে ডাকতে। কিন্তু সে ডাকার আগেই বিনী জেগে গেছে। এমনভাবে জেগেছে যে জাবিয়া নিজেই ঘাবড়ে গেছে। জাবিয়া শান্ত গলায় হেসে বললো ‘ ভয় পেলেন ভাবি ? ‘
বিনী এতক্ষণে জাবিয়ার উপস্থিতি টের পেলো। অপ্রস্তুত গলায় বললো ‘ আসলে বই পড়তে পড়তে ঘুমিয়ে গেছিলাম। সন্ধ্যা হয়ে গেছে টেরই পাইনি। আম্মা কি রেগে আছেন ? ‘

বিনীর কথায় অবাক হয়নি জাবিয়া। এমনটাই হয়। যারা শাহিদা খাতুনকে জানেন না তারাই প্রথম দেখায় উনাকে মেজাজি মনে করেন। তবে জাবিয়া জানে বিনী তাদের কাকীকে জানতে শুরু করলে আর এমন ভয় পাবে না আর সেটা বিনী নিজে থেকেই উপলব্ধি করবে। তাই জাবিয়া বললো ‘ আমি জানিনা ভাবি।আপনি নিচে চলুন। কাকী আপনাকে ডাকতেই পাঠিয়ে ছিলেন আমাকে। ‘

জাবিয়ার সঙ্গে দ্রুত নিচে নেমে এসেছে বিনী। মাথার কাপড় ঠিক করে খাবার ঘরে ঢুকলো সে। বসার ঘরে আজাদ সাহেব ও সাজ্জাদ সাহেব চা, নাস্তা করছেন। জাদিদ খাবার ঘরে বসে চানাচুর খাচ্ছে। কিছুক্ষণ আগেই ভার্সিটি থেকে ফিরে ভাত খেয়ে উঠেছে সে। চা, নাস্তা শেষে জাবিয়া পড়তে বসবে নিজের ঘরে। জুহারিন বসার ঘরে মেঝেতে বসে খেলছে।

বিনী যেমন ভেবেছিল তেমন কিছুই হয়নি। তাকে দেখা মাত্র শাহিদা খাতুন তার হাতে আরও কিছু পাকোড়া ধরিয়ে দিয়ে বললেন যেন আজাদ সাহেবদের দিয়ে আসে। শাহিদা খাতুনের কথা মতোই পাকোড়া নিয়ে এগিয়ে গেলো বিনী। শান্তি লাগছে শাহিদা খাতুন রাগ করেননি।

—-

কাজ কর্ম শেষে শাড়ির আঁচলে হাত মুছে রান্নাঘর থেকে বেরিয়ে এলো বিনী। শাহিদা খাতুন ও জাহানারা যার যার ঘরে আছেন। আফিফা জুহারিনের জন্য ভাত নিচ্ছে প্লেটে। আগে আগে বাচ্চাকে খাইয়ে দিয়ে তারপর সবাইকে ভাত দিবে। বিনী ভাবলো এখন ঘরে ঢুকবে না। ঢুকে লাভ নেই, হয়তো ক্লান্তিতে বিছানায় বসতেই ঘুমিয়ে পড়বে। তাই বিনী জাবিয়ার ঘরে ঢুকলো।

জাবিয়া টেবিলে বসে পড়ছিল। ঘরের দরজায় টোকা পড়তেই সে নড়েচড়ে বসলো। বিনী তার অনুমতি নিয়েই ঘরে ঢুকলো। বিনীকে দেখে জাবিয়া ওকে নিয়ে বিছানায় বসালো। তারপর উঠে গিয়ে একটা মেহেদী এনে বললো ‘ আমি আসফিয়ার কাছে শুনেছি আপনি খুব ভালো মেহেদী দিয়ে দিতে পারেন। আমাকে দিয়ে দিবেন ? ‘

বিনী তার অলস সময় কাটানোর সুযোগ পেয়ে গেছে। সে আগ্রহ নিয়ে জাবিয়ার হাতে মেহেদি দিয়ে দিচ্ছে। মেহেদী দিয়ে শেষ করতে করতেই জুহারিনও হাজির। সে বায়না ধরেছে সেও দিবে। বারবার নাক টেনে বলছে ‘ জুহারিন দিবে কাকী। ‘

জুহারিনের কথা পরিষ্কার তাই বিনীর বুঝতে বেগ পেতে হয়নি। সে বলল ‘ দিয়ে দিবো তো। আগে ফুপিকে দিয়ে দেই। ‘
জুহারিন ভদ্র ধরনের। তাই বিনীর কথা মেনে সে আর কথা বাড়ায়নি। জাবিয়ার বাম হাতে মেহেদি দেওয়া শেষে বিনী জুহারিনের হাতে মেহেদি দিতে শুরু করলো। মেহেদী দেওয়া শেষে জুহারিনের খুশির অন্ত নেই। সে খুশি মনে নাচতে নাচতে তার দাদুকে হাত দেখাতে গেছে।

বিনী ভাবলো এখন একবার ঘরে গিয়ে দেখা উচিত আবির এসেছে কিনা। সকালে জিজ্ঞেস করেনি আবির হসপিটাল থেকে কখন ফিরে। বিনী ঘরে গেলো কিন্তু ঘরে গিয়ে দেখলো ঘরের বাতি আগেই জ্বালানো। বাথরুম থেকেও পানির শব্দ আসছে। বিনী বুঝলো আবির চলে এসেছে।

বিনী আর আফিফা মিলে সবাইকে রাতের খাবার দিচ্ছে। আবির গোসল সেরে খাবার ঘরে এসেছে। বিনী আর আফিফা মিলে সবাইকে খাইয়ে দাইয়ে নিজেরা খেতে বসলো। শাহিদা খাতুন এবং জাহানারাও বউদের সঙ্গে খাবেন বলে আগে খাননি। এই বাড়িতে ছেলেদের খাওয়ার পরই মেয়েদের খাওয়ার নিয়ম।

শাহিদা খাতুন লক্ষ্য করলেন রান্না করা হয়েছে বেশ কয়েক রকমের পদ। গুনে দেখলে দেখা যাবে চার পাঁচ রকমের হয়েছে। অথচ বিনী পাতে শুধু ভাত আর ডাল তুলে নিয়েছে। শাহিদা খানিকটা অসন্তোষ গলায় বললেন ‘ রুই মাছের পেটি নাও বউ। ‘
শাশুড়ির ভয়েই হোক কিংবা কথা না শুনে বেয়াদবি করার ব্যাপারটাতে অনাগ্রহ প্রকাশ করে, বিনী ওর পাতে রুই মাছের পেটি তুলে নিলো। খেতে খেতে সে শাহিদা খাতুনকে একটু ভালো করে লক্ষ্য করলো।

শাহিদা খাতুন বাহিরে দিয়ে যতটা শক্ত পোক্ত দেখান নিজেকে আদতে উনি ততটাই নরম। সকালে বিনীর হাতে বড় বড় নখ দেখে ওকে কাটতে বলেছেন যাতে ওর পরে হাতে না লাগে। তারপর আবার এখন শুধু ডাল দিয়ে খেতে দেখে মাছও নিতে বললেন। অবশ্য মাঝে সকালে তার নির্বুদ্ধিতার জন্য ধমক দিয়েছিলেন কিন্তু সেটা মনে নেয়নি বিনী। বরং শাহিদা খাতুনের ধমকের চেয়ে তার লুকানো ভালবাসাটাই বেশি চোখে পড়ছে তার।

কিছু কিছু মানুষ থাকেন যারা অন্যের কাছে ভালোবাসার প্রকাশটা করতে ভয় পান। তারা মনে করেন কাউকে ভালোবাসা তাদের দূর্বলতা। ভালোবাসা কখনও কখনও ব্যক্তি ক্ষেত্রে দূর্বলতা হয় কিন্তু সবক্ষেত্রে ভালোবাসা লুকিয়ে রাখা যায়না।ভালোবাসা ঝড়ো হাওয়ার মতোই উত্তাল। একে দেখা তো যায়না কিন্তু অনুভব ঠিকই করা যায়।

আজকের মতো সব কাজ গুছিয়ে রেখে ঘরে ফিরে এসেছে বিনী। আবির বারান্দায় দাড়িয়ে আছে। বারান্দার দরজা চাপিয়ে দেওয়া। ঘরের বাতি জ্বলছে। বিনী এগিয়ে গেলো বারান্দায়। বারান্দার দরজা খুলতেই নাকে সিগারেটের উটকো গন্ধ এলো। বিনী খানিকটা হাসলো। আবিরের পাশে দাড়িয়েছে সে। মুখে বলল ‘ সিগারেট খাচ্ছ কোন দুঃখে ? ‘

আবির অন্যমনস্ক ছিল। বিনীর কথায় হকচকিয়ে উঠলো। হেসে বললো ‘ কিছু বললে ? ‘
বিনী মাথা নেড়ে বললো ‘ হ্যাঁ বলছিলাম যে কার দুঃখে এমন সিগারেট খাচ্ছ। কোনো প্রেমিকা আছে নাকি ?’
আবির বিনীর কথায় অবাক হলো। বলল ‘ কোনো ওয়াইফ যে এত স্বাভাবিক মুখ নিয়ে হাজব্যান্ডকে প্রেমিকার কথা জিজ্ঞেস করতে পারে জানতাম না। তোমার কেন মনে হলো আমার প্রেমিকা থাকতে পারে ? ‘

বিনী আবিরের কথা শুনে এমনভাবে হাসলো যেন আবির ওর সঙ্গে রসিকতা করেছে। ও হাসতে হাসতেই বললো ‘ প্রেমিকা থাকা অস্বাভাবিক কিছু না। তাছাড়া আমি শুনেছিলাম ছেলেরা নাকি প্রেমে ছেকা খেয়ে এসব সিগারেট ফিগারেট খায়। ‘

‘ তাহলে বলতে হয় তুমিও ছেকা খেয়েছো কারণ আমাদের বিয়েতে আমি তোমাকে খুশি হতে দেখিনি। ছেকা খাওয়ার ব্যাপারটা তোমার ভুল ধারণা। ছেলেরা সবসময় ছেকা খেয়ে সিগারেট খায় না। মাঝে মাঝে শখ করেও খায়। ‘

আবিরের কথায় বিনী প্রতি উত্তর করলো না। চাঁদনী রাতে আবিরের পাশে ফাঁকা বারান্দায় দাড়িয়ে জোছনায় ঢাকা পরিবেশ উপভোগ করছে সে। আবির বলল ‘ একটা জিনিস আছে তোমার জন্য। ‘
‘ আমার জন্য ‘ বিনী অবাক হয়ে হেসে বললো।

‘ হুম তোমার জন্য ‘ বলে আবির বারান্দা ছেড়ে ঘরে গেলো আর বিনীকে যাওয়ার আগে ইশারা করে গেলো যেন সুবোধ বালিকার মতো বারান্দায় চুপটি করে দাড়িয়ে থাকে। বিনী চুপচাপ দাড়িয়ে আছে রেলিং ঘেঁষে। ভাবছে সরাব কি করছে এখন ? সে কি বিনীর বিয়ের খবর পেয়েছে ? না পাওয়ার কথা না। বিনীকে পাত্রের দেখতে আসার ব্যাপারটা জহির সাহেব লুকিয়ে রেখেছিলেন কিন্তু সেটা বেশিদিন চাপা পড়েনি। বিয়ের দিনই এলাকা জুড়ে সবটা ছড়িয়ে পড়েছে।

—-

ভাতের মাড় গালতে গিয়ে গরম পাতিলে হাত লেগেছে রুনার। রুনার আর্তনাদ শুনে ছুটে এসেছেন নূরজাহান। রান্নাঘরের মেঝেতে থাকা ভাতের পাতিলের মাড় দ্রুত গালতে দিয়ে জিজ্ঞেস করলেন ‘ কি হয়েছে রুনা ? ‘

‘ মাড় গালতে গিয়ে লেগেছে আম্মা। ‘

রুনার কথা শুনে নূরজাহান রুনার হাত ধরে ওকে টেনে তুললেন। কলের নিচে হাত ধরে বললেন ‘ এভাবে অমনযোগী হয়ে কাজ করছিলি কেন ? হাতটা পুড়ল তো। ‘
রুনা অমনযোগী ছিল। সরাবের ব্যবহার ওকে ভাবাচ্ছে। সরাব ওকে বিয়ে তো করেছে কিন্তু এখনও স্ত্রী হিসেবে মেনে নেয়নি। বলা ভালো বিয়ের পর থেকে তাদের মধ্যে কোনো কথাই হয়নি।

রুনা নূরজাহানের কথা শুনল। উত্তরে কিছু বলতে চাচ্ছিল কিন্তু তার কথা অব্যক্তই রয়ে গেলো। সরাব এসেছে। সদর দরজা পেটাচ্ছে সে। বাহির থেকে সে রুনার নাম ধরে ডাকছে। রুনা নূরজাহানকে রেখেই দরজার দিকে ছুটলো। দরজা খুলতেই সরাব বললো ‘ কি করছিলি ? কখন থেকে দরজা ধাক্কাচ্ছি। ‘

‘ দুঃখিত ‘ বলে রুনা সরাবের হাত থেকে পেট মোটা বাজারের ব্যাগটা নিলো। সরাব বাজার করে এনেছে। বাজারের ব্যাগ হাতে রুনা রান্নাঘরের দিকে যেতে যেতে বলল ‘ আম্মার সঙ্গে কথা বলছিলাম তাই তোমার দরজা ধাক্কানো শুনিনি। ‘
সরাব রুনার কথা শুনেনি কিংবা শোনার প্রয়োজন মনে করেনি। তার পূর্বেই সে ঘরে ঢুকেছে। সরাবের বিরুপ আচরণে দীর্ঘশ্বাস ফেললো রুনা। সরাবের নিজের দেওয়া প্রস্তাবে বিয়ের পর সরাবের কাছ থেকে এই ব্যবহার আশা করেনি।

রুনা ভাত আর তরকারী সাজিয়েছে মেঝেতে দস্তরখানা বিছিয়ে। নূরজাহান এসেছেন কিন্তু সরাব এখনও আসেনি। রুনা উঠে গিয়ে সরাবকে ডাকলো কিন্তু সরাব জানালো সে বাহির থেকে খেয়ে এসেছে। রুনা নীরবে শুকনো মুখে ফিরে এলো। নূরজাহানকে সরাবের শরীর ভালো না জানিয়েছে সে। নূরজাহান যদি জানতে পারেন সরাব বাহির থেকে খেয়ে এসেছে তাহলে চেঁচামেচি করবেন যেটা রুনা চায় না। এমনিতেই নূরজাহানের শরীর ভালো না।

—-

উঠান থেকে তুলে আনা কাপড়গুলো গুছিয়ে রাখছে রুনা। সরাব বিছানায় সোজা হয়ে শুয়ে আছে। তার হাতটা কপালে তুলে চোখ ঢাকা। রুনা কাপর গোছাতে গোছাতে বললো ‘ এভাবে বাহির থেকে খেয়ে এসো না। আম্মা ব্যাপারটা ভালো চোখে নিবে না। ‘

‘ আচ্ছা ‘

সরাব উত্তরে শুধু আচ্ছা বললো অথচ রুনা আরও কিছু আশা করেছিল। সরাব কেমন যেন ব্যবহার করছে। রুনার সঙ্গে নিজের কথা আগানোতে তার ভীষন উদাসীনতা। কেমন বিয়ে করেও বউ ছাড়া ছাড়া ভাব যেন তার বিয়েই হয়নি। সারাদিনে কোনো কথাই বলে না। কাজে যখন বাহিরে থাকে তখন খোঁজ নেওয়ার উপায় নেই কিন্তু ঘরে থাকলেও তো কথা বলে না। কালকের পর আজ পর্যন্ত কোনো কথাই বলেনি।

~চলবে ইনশাআল্লাহ্..

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here