এখানে বেলি ফুলের মালা-১৩,১৪

0
289

এখানে বেলি ফুলের মালা-১৩,১৪

১৩
—————————

আজমল সাহেবের একমাত্র ছেলে শাহরিয়া সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ারিংকে নিজের ক্যারিয়ার হিসেবে বেছে নিয়েছিল। সেই সূত্রেই অনার্স শেষে আরও উচ্চশিক্ষার জন্য পাড়ি জমিয়েছে দূর দেশে। দীর্ঘ চার বছর পর সেই পড়াশোনার পাট চুকিয়েই দেশে ফিরে এসেছে সে। বয়স বেড়ে উনত্রিশ তাই এখনই আজমল সাহেব বিয়ে দিয়ে ছেলের সংসার গোছাতে চাচ্ছেন।

আজমল সাহেবের স্ত্রী মারা গেছেন শাহরিয়ার যখন দশ বছর তখন। স্ত্রী মারা যাওয়ার পর তিনি ছেলের মুখ চেয়ে আর দ্বিতীয় বিয়ের কথা ভাবেননি। একা হাতেই ছেলেকে বড় করেছেন। একলা বাবা হয়ে চাকরি সামলে ছেলেকে বড় করার পথ সহজ ছিল না। কিন্তু জাহানারার জন্য উনার অনেকটা সুবিধা হয়েছে।

মা হারা একমাত্র ভাতিজাকে আগলে নিয়েছিলেন জাহানারা। উনি যখন ছোট ছিলেন তখন এই শাহরিয়ার বাবাই উনাকে আগলে আগলে রেখেছেন। তাই ভাইয়ের দুর্দিনে একজন বোন হিসেবে দূরে সরে যাওয়ার অপরাধটা করতে পারেননি। তাই সময় সুযোগ হলেই ভাতিজাকে নিজের বাড়ি এনে রাখতেন। সেই থেকেই শাহরিয়ার সঙ্গে আবিরদের বাড়ির সকলে অনেক ভালো সম্পর্ক।

ভালো সম্পর্ক হওয়ায় শাহরিয়া আর জাবিয়ার বিয়ের কথা শুনে কেউই আপত্তি করতে পারেননি। উল্টো সাজ্জাদ সাহেবের খুশি যেন ধরতে চায় না। শাহরিয়ার মতো এত ভদ্র ও মার্জিত ছেলেকে নিজের জামাই করার সুযোগ কোনো বাবাই হাতছাড়া করতে চাইবে না। উনি তো খবর পেয়ে সঙ্গে সঙ্গে রাজি হয়ে গেছেন মেয়েকে বিয়ে দিতে। আজাদ সাহেব যাও বা জাবিয়ার বয়স নিয়ে কথা তুলেছিলেন কিন্তু সাজ্জাদ সাহেব ব্যাপারটায় বেশ কয়েকটা অকাট্য যুক্তি দেখিয়ে আজাদ সাহেবকে রাজি করিয়ে নিয়েছেন বিয়েতে।

জাবিয়ার বিয়ের খবরে যেমন বিনী খুশি হতে পারেনি তেমনই জাবিয়া নিজেও খুশি হতে পারছে না। খবরটা শোনার পর তার পায়ের তলার মাটির নড়বড়ে হয়ে উঠেছে। তার মনে হচ্ছে সে এখনই মাথা ঘুরে পড়ে হবে। সে কোনোমতে আশপাশ দেওয়াল হাতড়ে নিজের ঘরে ঢুকলো তারপর নিঃশব্দে দরজাটা লাগিয়ে বিছানায় পা থেকে মাথা অব্দি কাথা মুড়ি দিয়ে শুয়ে পড়লো।

—-

বাহিরে তুমুল বর্ষণ হচ্ছে। আবির বাড়ি ফিরেছে কাক ভেজা হয়ে। হসপিটাল থেকে সে রোজ গাড়ি দিয়েই ফিরে কিন্তু আজ পথে গাড়ি নষ্ট হয়ে গিয়েছিল। তাই গাড়ি গ্যারেজে পাঠিয়ে দিয়ে তাকে পায়ে হেঁটেই বাড়ি ফিরতে হয়েছে। বাড়ি ফেরার সময় অর্ধেক রাস্তা অব্দি পরিবেশ শান্তই ছিল কিন্তু হঠাৎই বাড়ির খানিকটা কাছে আসতেই তুমুল বৃষ্টি শুরু হলো। উপায় না পেয়ে ব্যাগ কাধে দৌড়ে বাড়ির পথে হাঁটা দিলো আবির। কিন্তু শেষ রক্ষা আর হলো না তার। সেই বৃষ্টিতে ভিজে কাক ভেজা হয়েই ফিরলো সে।

আজ কয়েকদিন পর ছুটি কাটিয়ে হাসপাতালে জয়েন করাতে রোগীর চাপ বেশি ছিল তাই ফিরতেও দেরি হয়েছে। যার ফলে সে ফিরতে ফিরতে সকলে ঘুমিয়ে পড়েছে। তবুও ঝড় বাদলের দিন বলে বিনীর সঙ্গে সঙ্গে শাহিদা খাতুনও বসেছিলেন। দুই শাশুড়ি বউ বৃষ্টির মরশুমে আদা চা খেয়ে সময় কাটাচ্ছিলেন। তাকে ফিরতে দেখে শাহিদা খাতুন উঠে দাড়ালেন এবং তাকে জামা কাপড় বদলে খেয়ে দেয়ে শুয়ে পড়তে বলে নিজেও ঘরের দিকে গেলেন।

জামা কাপড় বদলে বিছানায় বসেছে আবির। বিনী ওর ভেজা জামা কাপড়গুলো বাথরুমে পরিষ্কার করতে ব্যস্ত। আবিরের এখন আর খেতে মন চাইছে না। ব্যস্ততায় আজ বিনীর জন্য বেলি ফুলের মালা আনতে পারেনি তাই মন মেজাজ ভালো না। বিনী অবশ্য সেসব নিয়ে উচ্চবাচ্য করেনি। ঝড় বাদলের সময় ফুলের মালা নিয়ে তর্ক করার মতো বোকা সে নয়।

বিনীর সঙ্গে কথা বলার জন্য ছটফট করছে আবির। অথচ বিনীর সেইদিকে খেয়াল নেই। সে আপনমনে আবিরের ময়লা কাপড়চোপড় খচেই যাচ্ছে। এতে আবির বেশ বিরক্ত। বাধ্য হয়ে সে একসময় বললো ‘ এই কাপড়গুলো কি কাল বুলুকে দিয়ে ধোয়ানো যেত না ? রাত বিরাতে এসব ধোয়ার প্রয়োজন কি ? ‘

‘ এখন ধুয়ে মেলে দিলে কাল রোদ উঠলে দ্রুত শুকাবে। তুমি খাবে না নাকি ? খাবার তো দিয়ে রেখেছি, খেয়ে শুয়ে পড়ো। ‘ বিনী কাজ করতে করতেই বললো।

‘ আজিব তো। আমি কি তোমাকে ছাড়া খাবো ? তুমি খেয়ে ফেলেছো ভালো কথা তাই বলে একটু খাওয়ার সময় আমার সঙ্গে বসবে না ? খেতে খেতে একটু কথা বলা উচিত না আমাদের ? তুমি চুড়িগুলোও পড়নি ‘

আবিরের কথায় হাসলো বিনী। কাপড় চিপতে চিপতে বললো ‘ ধুস!! কাজের সময় চুড়ি পড়লে কাজ করবো কি করে ? এভরিথিং হ্যাস এ পারফেক্ট টাইমিং। সময় হলেই পড়ব। ‘
বিনীর কথায় আবির চোখ দুটো গোলগোল করে বললো ‘ তা আপনার সেই সময় কবে হবে ম্যাডাম ? আমি বুড়ো হলে ? ‘

‘ না না তোমাকে অত অপেক্ষা করাবো না। একদিন দেখবে হুট করে শাড়ি, চুড়ি,নূপুর আর বেলি ফুলের মালা সব পড়ে সেজেগুজে তোমাকে চমকে দিয়েছি। ‘

‘ তোমার সেই একদিনের অপেক্ষায় থাকবো আমি। আই উইশ দ্রুত আসুক সেই একদিন। ‘

তারপর বিনী আর আবিরের মাঝে আরও কথা চললো। বিনী কাজ করতে করতেই সেই বার্তালাপ চালালো। বিনী আবিরের জামা কাপড় বারান্দায় মেলে দিলো, ঘরের জানালাগুলোর খিল আটলো, পর্দা দিলো, বিছানা ঝেড়ে দিয়ে আবিরকে মশারি করতে বলে সে নিচে গেলো। পুরো বাড়ির সব ঘরের বাতি পর্যবেক্ষণ করে একবারে ঘরে এলো। ততক্ষনে আবিরের মশারি করা হয়ে গেছে। সে বারান্দার দরজা আটকে দিয়ে শুতে এলো।

‘ রাগ করলে ? ‘

বিনী তখন উল্টো দিকে ফিরে শুয়েছিল। জাবিয়ার ব্যাপারটা নিয়ে জাহানারার সঙ্গে কথা বলা প্রয়োজন তার। জাবিয়ার মতামতও নেওয়া প্রয়োজন কারণ দিনশেষে বিয়েটা হলে সংসার সেই করবে। কিন্তু আবিরের কথায় আবিরের দিকে ফিরে শুলো। অবাক গলায় জিজ্ঞেস করলো ‘ তোমার কেন মনে হলো আমি রাগ করেছি ? ‘

‘ আজ তোমার জন্য ফুলের মালা আনতে পারিনি। বিশ্বাস করো বের হতে এত দেরি হয়েছে যে ফুলওয়ালাকে খুজেই পাইনি। ‘

বিনী মৃদু হাসলো। বললো ‘ আমি পাঁচ বছরের বাচ্চা নই আবির। যে কারোর পরিস্থিতি বোঝার মতো বুদ্ধি আমার আছে। আমি জানি তুমি আনোনি তারমানে পরিস্থিতি তোমার অনুকূলে ছিল না। এত ছোট কথায় রেগে যাই না আমি। আমাকে রাগিয়ে দেওয়া এত সহজ না। এর জন্য তোমাকে শত সহস্র বছর সাধনা করতে হবে। ‘

আবির এবার খানিকটা আশ্চর্যই হলো। তবে বিনী রাগ হয়নি জেনে প্রশান্তি পেলো তার উত্তাল হৃদয়খানা। সে মৃদু গলায় বললো ‘ তাহলে আমি অবশ্যই চেষ্টা করবো যেকোনো মূল্যে তোমাকে রাগিয়ে দেওয়ার জন্য। ‘
‘ শুনেছিলাম লোকে বিয়ের পির চেষ্টা করে যাতে বউ কোনক্রমেই রেগে না যায় আর তুমি উল্টো চাইছো আমি যেন রেগে যাই। ভেরি স্ট্রেঞ্জ!!! ‘

‘ আমি চাই আমার বউ রেগে যাক। যেই মানুষটাকে তিন কবুল বলে বিয়ে করেছি, যার শরীরের প্রত্যেকটা ভাজে ভাজে আমার স্পর্শ তার রাগ, দুঃখ, অভিমান সবকিছুই সহ্য করার মতো সাহস আমার থাকা উচিত বলেই আমি মনে করি। যেই মানুষ আমার জন্য আমার পরিবারের সঙ্গে মানিয়ে চলতে পারে, নিজের হাত পুড়িয়ে রাধতে পারে, রাত বিরাতে আমার ময়লা কাপড় ধুয়ে দিতে পারে তার জন্য আমি এতটুকু করতেই পারি। ‘

শেষের কথাটা আবির বিনীর বাম হাতটা টেনে ধরে পুড়ে যাওয়া জায়গায় নিজের অধর ছুয়ে দিয়ে বললো। বিনীর হাতে এই ক্ষত তৈরি হয়েছে আজ বিকেলে আবিরের শার্ট আইরন করতে গিয়ে, বেখেয়ালে হাতে লেগে গেছে গরম ইস্ত্রি। বিনী সেটা কোনক্রমেই টের পায়নি অথচ আবির কিছুক্ষণ থেকেই লক্ষ্য করে ফেলেছে। বিনী মুগ্ধ আবিরের ব্যবহারে। এই মানুষটা এমন কেন ? তার প্রত্যেকটা জানা,অজানার খেয়াল রাখে সেই প্রথম দিন থেকে।

আবির বিনীকে নিজের বুকে জড়িয়ে নিলো। বিনীর ঘর্মাক্ত মুখে চুমু খেয়ে বললো ‘ এখন থেকে আমি বাড়ি ফিরলে আর কাজ করবে না। ‘
বিনী ওর কথা শুনে বললো ‘ তাই ? তা ঘরের কাজগুলো কি আমার ভুত করে দিয়ে যাবে ? ‘

‘ প্রয়োজনে কাজ মিটিয়ে রাখবে কিংবা পরের দিন করবে কিন্তু আমি যতক্ষণ বাড়ি থাকবো ততক্ষণ আমার সঙ্গে সঙ্গে থাকবে। আমায় ভালোবাসবে, যত্ন করবে। বুঝলে ? ‘

বিনী এবার আবিরের কথায় নিজেকে আবিরের কাছ থেকে ছাড়িয়ে নিলো। গলা টেনে বলল ‘ উ… আমার আর খেয়েদেয়ে কাজ নেই। তোমার এত আশেপাশে ঘুরলে আম্মা অন্য কিছু ভাববেন। আর কথা পাও না না ? আমি বুঝি তোমার কোলে বসে থাকবো ? ‘
‘ দরকার পড়লে তাই করবে তবুও আমি ঘরে থাকলে কাজ করা যাবে না। আমি যতক্ষণ আশেপাশে থাকবো আমি চাই তোমার সমস্ত মনযোগের কেন্দ্রবিন্দু তখন আমিই হবো। ‘

বিনী হাসলো। আর কথা বাড়ালো না সে। সে জানে আবির যখন বলেছে তখন মানতেই হবে। আবিরকে বিয়ের পর এই কদিনে যা বুঝেছে তাতে ও এক কথার মানুষ ঠিক তার মায়ের মতো। তাই আবিরকে আর ঘাটালো না সে। তুমুল বর্ষণ শেষে উকি দিয়েছে এক ফালি চাঁদ। সেই চাঁদের আলো পর্দার ফাঁক গলে ঘরের ভিতর উকি দিচ্ছে। টুকরো টুকরো চাঁদের আলোয় ঘরটা অন্যরকম মায়াবী লাগছে। মায়াবী আলোয় দুই কপোত কপোতী ডুবেছে তাদের ভালবাসার অনন্ত মায়ায়।

—-

জাহানারা বিছানা গুছিয়ে রাখছেন। বাহিরে সাজ্জাদ সাহেব খেতে বসেছেন। জাবিয়া এখনও ঘর ছেড়ে বের হয়নি। অবস্থা ভালো না দেখে জাহানারা তাকে ঘরে গিয়ে দেখে এসেছেন। জাবিয়ার শরীর কাপিয়ে জ্বর এসেছে তাই আপাতত সে ঘরেই আছে। শরীর ভালো না হওয়া পর্যন্ত কলেজে যাওয়া হবে না।

জাহানারাকে একাকি দেখে বিনী ঘরের দরজা কড়া নাড়লো। বিনীকে দেখে জাহানারা হেসে ভিতরে ঢোকার অনুমতি দিলেন। জিজ্ঞেস করলেন ‘ কিছু বলবা নাকি বউ ? আজ হঠাৎ রাস্তা ভুলে আমার ঘরে ? আপা কি কাজ করতে মানা করেছে ? ‘

‘ না কাকী আসলে জরুরি এক ব্যাপারে কথা ছিল। আপনি যদি কিছু মনে না করেন তাহলে বলতাম। ‘ বিনী সংকোচ ঠেলে বললো।
বিনীকে এত আমতা আমতা করতে দেখে জাহানারা নির্ভয় দেখিয়ে বললেন ‘ আরে এত ভয় পাওয়ার কিছু নেই। তুমি শুধু বলো, আমি শুনছি। ‘

‘ শুনলাম জাবিয়ার মামাতো ভাইয়ের সঙ্গে ওর বিয়ের কথা চলছে। বলছিলাম যে জাবিয়ার সঙ্গে কথা বললে ভালো হতো না ? না মানে ওর কোনো আলাদা পছন্দ আছে কিনা ? ‘

জাহানারা মন দিয়ে বিনীর কথা শুনলেন। অতঃপর ঘর ঝাড়ু দিতে দিতে বললেন ‘ জীবনটা বাচ্চাদের উপর নির্ভর করলে চলে না আম্মা। আমার বিয়ের পঁচিশ বছর আর জাবিয়ার বয়সই আঠারো বছর। আমি ওর থেকে অনেক বেশি দুনিয়াদারি দেখেছি কাজেই কে ওর জন্য ভালো সেটা আমি জানি। ওর সাময়িক সুখের কথা ভেবে আমি ওর ইচ্ছা মতো জীবন সঙ্গী বেছে দিতে রাজি হলে ওর শেষ জীবনটা আফসোসেই কাটবে যেটা আমি মা হিসেবে চাইনা। ‘

এরপর আর কিছু বলতে পারলো না বিনী। জাহানারা আর জাবিয়ার সঙ্গে তার সুন্দর সম্পর্ক। জাবিয়ার প্রেমিক তুষারের কথা তুলে দুজনের সঙ্গে সম্পর্কটা সে নষ্ট করতে চাইছে না। তবে জাবিয়ার সুখের কথা ভেবে চুপও থাকা যাচ্ছে না। কিছু একটা করা প্রয়োজন। জাবিয়ার সঙ্গে কথা বলা প্রয়োজন।

—-

বাড়িতে একটা হইচইয়ের আমেজ তৈরি হয়েছে। প্রিয় ভাগ্নির জ্বরের খবর পেয়ে ছেলেকে নিয়ে ছুটে এসেছেন আজমল সাহেব। এত বছর ছেলের সঙ্গে সঙ্গে তিনিও বিদেশে ছিলেন তাই ভাগিনা, ভাগিনির সঙ্গে দেখা সাক্ষাৎ হয়না অনেকদিন। তার উপর দিয়ে জাবিয়ার এমন জ্বরে পড়ার খবর শুনে আর স্থির থাকতে পারলেন না তিনি। পুত্র এবং পারিবারিক ডাক্তার সমেত হাজির হলেন তিনি।

ডাক্তার দেখে দিয়েছেন জাবিয়াকে। জানিয়েছেন ঋতু পরিবর্তনে ভাইরাল ফিভার হয়েছে। পর্যাপ্ত বিশ্রাম আর সেবা নিলে দিন দুই তিনের মাঝেই সুস্থ হয়ে উঠবে। চেক আপ শেষে আজমল সাহেব ডাক্তার সাহেবকে এগিয়ে দিতে ঘর থেকে বেরিয়ে গেলেন আর বাকিরা যার যার মতো বেরিয়ে গেলো। বিনী ভেবেছিল সে জাবিয়ার কাছে বসবে কিন্তু পরে আবার ভাবলো জাবিয়া এখন অচেতন প্রায় কাজেই বসে থেকে তাকে বিরক্ত করে লাভ নেই। তাই সে জাবিয়াকে দেখে বেরিয়ে গেলো।

~চলবে ইনশাআল্লাহ্…

( সবাই দেখছি বিরহে নুয়ে পড়েছেন। এত কষ্ট পেলে হবে ? আমার পাঠক হয়ে এত দূর্বল হলে তো চলে না। এই উপন্যাস আগামীতে কেমন হতে চলেছে সে তো আপনারা জানেনই। কাজেই কষ্ট না পেয়ে সবটা উপভোগ করুন কারণ আমি কিছুটা বাস্তবতা দিয়ে লিখার চেষ্টা করছি। )

এখানে বেলি ফুলের মালা-১৪
—————————

ডাক্তার সাহেবের ওষুধের প্রভাবে জাবিয়ার জ্বর নামতে শুরু করেছে। ঘুমের ঘোরেই সে ঘেমে উঠছে। নাকের উপর জমেছে বিন্দু বিন্দু ঘাম। জাবিয়া ঘুমের মধ্যেই পাশ ফিরলো। তার ঘুম হালকা হয়ে এসেছে। কিছুক্ষণ পরেই জাবিয়া পুরোপুরি চোখ খুললো। সে উঠে বসলো বিছানা ছেড়ে। জ্বরের প্রকোপে শরীরটা বড্ড দূর্বল লাগছে, মাথাও ঘুরছে।

ঘরের জানালা খুলে দিল জাবিয়া। জানালা খুলতেই উত্তাল দখিনা বাতাস এসে হাওয়া লাগিয়ে গেলো জাবিয়ার সমস্ত অঙ্গে। জাবিয়া মলিন হাসলো। এই দখিনা হাওয়া সে কত উপভোগ করেছে তুষারের সঙ্গে তার ইয়াত্তা নেই। অথচ কিছুদিন পরেই সেসব মনে করাও তার জন্য নিষিদ্ধ হয়ে দাঁড়াবে। এটা কি আদৌ সম্ভব ? মনে একজনকে রেখে আরেকজনের সঙ্গে সংসার করা ?

নিজের ভবিষ্যৎ জীবনের কথা ভেবে জাবিয়ার গলা উপচে কান্না উঠছে। সে জানালা ধরে বসে পড়লো। হু হু শব্দে কেঁদে উঠলো মৃদু স্বরে। কেউ শুনে ফেলবে সেই ভয়ে গলা চড়িয়ে কাদতেও পারছে না। কাদতে পারলে হয়তো মনটা হালকা হতো। জাবিয়ার জানা ছিলনা কাউকে ভালোবাসলে এত কষ্ট পেতে হয়। জানলে সে নিজ দায়িত্বে এসব থেকে সরে দাঁড়াত।

জাবিয়ার মনে পড়লো তুষারের সঙ্গে কাটানো সোনালী দিনগুলোর কথা। তুষার এক সময় তাদেরই কলেজের স্টুডেন্ট ছিল। জাবিয়াদের কলেজে দুটো সেকশন। একটা স্কুল সেকশন আর আরেকটা কলেজ সেকশন। সেই কলেজ সেকশনেরই এক দুর্দান্ত ছাত্র ছিল তুষার। জাবিয়া তখন সপ্তম শ্রেণীতে ছিল যখন তুষার পড়তো ইন্টার শেষ বর্ষে। দেখা সাক্ষাৎ তাদের রোজই হতো কিন্তু প্রেমটা তখনও জমেনি।

তুষার আর জাবিয়া, দুজনের প্রেম তখন হলো যখন মেট্রিক শেষে জাবিয়া একই কলেজের ইন্টার সেকশনের ভর্তি হলো যেখানে তুষার ইন্টার পড়েছিল। দুর্দান্ত ছাত্র হওয়ায় কলেজের সব শিক্ষকদের বিশেষ নজরে ছিল। বিশেষ অনুষ্ঠানগুলোতে তার ডাক প্রায়ই পড়তো। সেখান থেকেই তাদের প্রণয়ের আজ এক বছর পূর্ণ হয়েছে। অথচ সময় কত তাড়াতাড়ি দেখতে দেখতে পেরিয়ে যায় তাইনা ?

জাবিয়ার আজও মনে হয় সেই তো কালই তো সে কলা কৌশলে তুষারকে মনের কথা জানিয়েছিল। অবশ্য প্রণয়ের সূচনা তুষারই করেছিল কিন্তু ভালোবাসার কথাটা মুখে সর্ব প্রথম তো জাবিয়াই এনেছিল। অথচ জাবিয়াকেই এই ক্ষণস্থায়ী প্রণয়ের ইতি টানতে হবে। শুরুটা তুষার করলো অথচ শেষ করবে সে এক হৃদয়হীনার তকমা নিয়ে। ভালোবাসা এতটা কেন নির্দয় ?

জাবিয়া কান্নাকাটি শেষে চেয়ার টেবিল টেনে লিখতে বসলো। তুষারকে কথাগুলো তার নিজ মুখে বলা সম্ভব না। তাই সেসব চিঠিতে লিখবে। আর দিয়ে বলবে চিঠিটা যেন সে যখন তাকে দিয়ে ফিরে আসবে তখন পড়ে কারণ তুষারের সেই ডাগর ডাগর চোখগুলো দেখার সাহস তার নেই। দেখলেই মনে হবে মানুষটার সঙ্গে অপরাধ করেছে সে।

চিঠি লিখা শেষে উঠে দাঁড়ালো জাবিয়া। চিঠিটা নিজের কলেজ ব্যাগে মোটা একখানা বইয়ের ভিতর ঢুকিয়ে রেখে ঘর ছেড়ে বেরোলো। সিড়ি দিয়ে ত্রস্ত পায়ে নেমে এলো। মেয়েকে নামতে দেখে জাহানারা হাক ছাড়লেন। সকালের নাস্তা খেতে ডাকছেন তিনি। জাবিয়া জ্বরের ঘোরে এতক্ষণ বেসামাল ছিল বলেই খাওয়ানোর চেষ্টা করেননি। এখন যখন উঠেছে তখন খেয়ে নেওয়াই ভালো।

মায়ের ডাকে খাবার ঘরে ঢুকলো জাবিয়া। রান্নাঘরে বিনীরা কাজ করছে। জাহানারা জাবিয়ার প্লেটে পাতলা খিচুড়ি ঢেলে দিলেন। আজ সকালের নাস্তায় খিচুড়ি করা হয়েছে যেহেতু কাল রাতের তুমুল বর্ষণে একটু ঠাণ্ডা ঠাণ্ডা ভাব আজ। হিজল গাছের পাতায় এখনও বিন্দু বিন্দু বৃষ্টির ফোঁটা। বাতাসে ভেসে বেড়াচ্ছে ভেজা মাটির গন্ধ।

জাবিয়া খেতে খেতে বসার ঘরের দিকে তাকালো। বসার ঘরে সোফায় শাহরিয়া সাজ্জাদ সাহেবের মুখোমুখি বসে দুই হাঁটুতে হাত রেখে মনযোগ দিয়ে কথা শুনছে। পরনে সফেদ শার্ট আর ঢোলা কালো প্যান্ট। মানুষটাকে দেখেছে জাবিয়া দশ বছর পূর্বে অথচ এতদিন পর দেখেও তার ভিতর কোনো আগ্রহ বা কৌতূহল জন্মাচ্ছে না মানুষটার প্রতি। কিন্তু এই অনুভূতিহীন হৃদয় নিয়েই তাকে মৃত্যুর আগ অব্দি মানুষটার সঙ্গে সংসার করে যেতে হবে।

আসলে কপালে যা লেখা থাকে তাই ঘটে। অদৃষ্টের লেখন খন্ডানোর ক্ষমতা কারোর নেই। তাই জাবিয়াও মেনে নিয়েছে তার নিয়তিকে। জাবিয়া খাওয়া শেষে নিজের ঘরের দিকে গেলো। বিনীদের সব কাজ মিটিয়ে উঠতে উঠতে দুপুর হয়ে গেলো। বিনী দ্রুত ঘরে গিয়ে শাড়ি বদলে নিলো। গোসল সে সকালেই সেরে নিয়েছে। শাড়ি বদলে বেরিয়ে আফিফা আর সে মিলে দুপুরের খাবার পরিবেশন করলো সবাইকে।

শাহরিয়া এখনও বাড়ি ফিরেনি। জাহানারা তাকে বহু পীড়াপীড়ি করে রেখে দিয়েছেন। বলেছেন একবারে সন্ধার নাস্তা খাইয়ে তবেই ছাড়বেন। সত্যি বলতে এতদিন পর একমাত্র ফুপুর দেখা পেয়ে শাহরিয়াও আর বাড়ি ফেরা নিয়ে মাতামাতি করেনি। এই বাড়িতে আসতে তার ভালই লাগে। আগে বাংলাদেশে থাকাকালীন তো কতই এসেছে এই বাড়িতে। এখন তফাৎ শুধু এটা এখন থেকে সে আসবে ভিন্ন পরিচয়ে।

খাওয়া দাওয়া সেরে সকলে যখন খাবার টেবিলে বসে জাবিয়া আর শাহরিয়ার বিয়ে ঠিক হওয়ার খুশিতে মিষ্টি খেতে ব্যস্ত তখন জাহানারা জাবিয়াকে বললেন ‘ জাবু, মা আমার শাহকে একটু আমাদের ছাদখানা দেখিয়ে আন। কতদিন পর এলো ছেলেটা বাড়িতে। কে জানে ভুলেই গেছে কিনা। ‘

জাহানারার কথায় হাসলো শাহরিয়া আর কিঞ্চিৎ বিরক্ত হলো জাবিয়া। দশ বছরের দূরত্বে কেউ গোটা বাড়ির নকশা ভুলে যেতে পারে সেটা জাহানারার কথা না শুনলে সে জানতে পারতো না। শাহরিয়া হেসে বললো ‘ আমার স্মৃতি অতটাও দূর্বল নয় ফুপিজান। ছাদের রাস্তা আমার মনে আছে। ‘

‘ তবুও জাবুর সঙ্গে যা তুই। দুজনে মিলে ছাদ থেকে একটু খোলা হাওয়া খেয়ে আসবি। ‘

অগত্যা জাহানারার কথায় জাবিয়া আর শাহরিয়া কেউই আপত্তি করলো না। মানুষটার সঙ্গে যখন ঘর করতেই হবে তখন এখন থেকেই মানিয়ে নেওয়া শিখতে হবে। বিনা বাক্য ব্যয়ে জাবিয়া শাহরিয়ার দিকে তাকিয়ে ইশারায় তার পিছু নিতে বলে এগিয়ে গেলো। শাহরিয়া জাবিয়ার ইশারা লক্ষ্য করে হাতে থাকা মিষ্টির বাটি টেবিলের উপর রেখে হাঁটা ধরলো জাবিয়ার পিছন পিছন।

—-

ঘরের কাজকর্ম সব সেরে নূরজাহানকে জানিয়ে বই খাতা নিয়ে পাশের বাড়ির রুমা খাওয়ার কাছে ছুটলো রুনা। সরাব স্পষ্ট বলে দিয়েছে সে যেন পড়াশোনায় ঠিক মতো মন দেয়। পড়াশোনায় গাফিলতি সরাবের পছন্দ নয়। তাই রুনা ঠিক করেছে যাই হয়ে যাক না কেন সে ঠিকই পড়াশোনা চালিয়ে যাবে। তাকে ভালো নাম্বার করতেই হবে, সরাবের জন্য।

রুমা উনুনে কাঠের টুকরো ঢুকিয়ে দিলেন। ভাত চড়িয়েছেন তিনি। রুনাকে ঢুকতে দেখে বললেন ‘ এত দেরি করলে চলবে ? সবকিছুর একটা নির্দিষ্ট সময় আছে তো নাকি ? তোর জামাইয়ের কানে গেলে কি হবে বুঝতে পারছিস ? ‘

রুমার কথায় রুনা দ্রুত মাথা নেড়ে বই তক্তার উপর সাজাতে সাজাতে বললো ‘ আর এমন ভুল হবে না। আসলে বুঝোই তো আপা বাড়িতে আমি আর আম্মা একা। আম্মার কাছে কাজকর্ম রেখে তো আসতে পারিনা। তাই সব কাজ মিটিয়ে আসতে আসতে দেরি হয়ে যায়। ‘

রুনার কথায় রুমা উত্তরে বললেন ‘ সেটা নাহয় আমি বুঝব কিন্তু তোর পরীক্ষায় নাম্বার খারাপ হলে সরাব আর তোর কলেজের মাস্টারদের কে বুঝাবে ? সরাব বলে রেখেছে তোর এবার ফার্স্ট ডিভিশন পেতেই হবে। ঠিক মতো যেন পড়াই তোকে। কাল কি পরীক্ষা ? ‘

রুমার কথায় রুনা মাথা নেড়ে সায় দিয়ে জীব বিজ্ঞানের বইখানা সামনে এগিয়ে দিল। রুমা কিছুক্ষণ তীক্ষ্ণ চোখে চেয়ে রুনাকে পর্যবেক্ষণ করলেন। তারপর বই হাতে তুলে বেছে বেছে প্রত্যেকটা অধ্যায় থেকে ছোট ছোট কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নগুলো সুধালেন। বেশিরভাগ প্রশ্নের উত্তর রুনা সঠিক দিলো তবে মাঝের দুটো ভুল হয়ে গেলো। তাতে প্রশ্নের বাণ সমাপ্ত করে রুমা বললেন ‘ রিভিশন তো মোটামুটি ভালই দিয়েছিস এখন কাল পরীক্ষা কেমন দিবি সে তো আল্লাহই জানেন। আমি তাও আরও কিছু প্রশ্ন দাগিয়ে দিচ্ছি আর হ্যাঁ বিগত পরীক্ষার প্রশ্নগুলো দেখে যাস। কিছু কমন পড়ে যেতে পারে। ‘

রুনা বিনিময়ে স্রেফ মাথা নাড়ল। রুমার কাছ থেকে প্রয়োজনীয় প্রশ্নগুলো দাগিয়ে নিয়ে ফিরে এলো সে। তক্তার উপর দিনের আলোয় বই মেলে পড়তে বসলো সে। ইতিমধ্যে কলেজে টেস্ট পরীক্ষা শুরু হয়ে গেছে তার। এই টেস্টে যেভাবেই হোক ভালো নাম্বার তুলতে হবে নাহলে সরাব তার খবর করে ফেলবে। এমনিতেই রাতে ফিরেই তার পড়ার খবর নিচ্ছে এখন রোজ।

রুনা পড়তে পড়তে একসময় অভ্যাস বশত খাতায় টুকিটাকি লিখা শুরু করলো। এটা তার পুরোনো অভ্যাস। পড়তে পড়তে দু চার লাইনের ছন্দ লেখা। এবারও সে এক ছন্দ লিখেছে। লেখা শেষে সে নিজেই সুর করে পড়লো ছন্দগুলো…

‘ ফাগুন প্রেমের আগুন
কৃষ্ণচূড়ার বনে ছড়ানো রূপের আগুন,
পক্ষিরা অপেক্ষায় আছে প্রেমের প্রহর জুড়ে
কেটে গেছে সময় হাজার বসন্তের ফুলে।

পেরিয়ে যায় সাঁঝের বেলা
উড়ে যায় বসন্তের কোকিল,
ঝরে যায় বৃষ্টি নীরবে
ভালোবাসার কোনো এক সংগোপনে।। ‘

ছন্দগুলো লেখা কাগজটা কেটে একটা সামান্য টিনের বাক্সে জমিয়ে রাখলো রুনা। বাক্সে আরও অনেক এমনই টুকরো টুকরো ছন্দ আছে। রুনা এগুলো কোনো এক বিশেষ দিনে সরাবকে উপহার হিসেবে দিবে। তার বহু দিনের পুরনো ইচ্ছে সরাব নিজে তাকে এগুলো পড়ে শুনাবে। আর সে মুগ্ধ চোখে চেয়ে রইবে সরাবের সেই আখরোটের মতো স্বচ্ছ বাদামি চোখের ভিড়ে।

কাঠের সদর দরজাখানা খোলার শব্দে রুনার কান দুটো সজাগ হয়ে উঠলো। ও ঘরের পিছন দিকে তক্তায় বসে জীব বিজ্ঞান পড়ছিল আর মাঝে চিন্তা ভাবনা করছিলো। কিন্তু দরজার শব্দে উঠে এলো সে। নূরজাহান নিজের ঘরে পানের সুপারি কাটছেন। রুনাকে উঠতে দেখে উনি আর উঠলেন না। রুনা তার ঘরের দরজাটা ভিড়িয়ে দিয়ে এগিয়ে দেখলো সরাব এসেছে। ওর মনে পড়লো দুপুরের খাবার সে রাধতে পারেনি। ঘরের লাকড়ি ফুরিয়ে গেছে। নূরজাহান কাল রাতের রাখা পান্তা ভাত মরিচ আর পেয়াজ মেখে খেয়ে নিয়েছেন।

সরাব রুনাকে দেখে হাতের স্যান্ডেল জোড়া নির্দিষ্ট জায়গায় রেখে বললো ‘ কাল না জীব বিজ্ঞান পরীক্ষা ? রুমা আপা কিছু দেখিয়ে দিয়েছেন নাকি ? ‘
রুনা কথার জবাবে স্রেফ বললো ‘ হু, গিয়েছিলাম আপার কাছে। কিছু প্রশ্ন দাগিয়ে দিয়েছে আর বলেছে পুরনো পরীক্ষার প্রশ্নগুলো দেখে যেতে। ‘
‘ তাহলে তুই আরও কিছুক্ষণ পড়, আমি গোসল সেরে আসছি। তারপর আম্মাকে নিয়ে খেতে বসবো। ‘

‘ আম্মা খেয়ে নিয়েছে। ‘

‘ তাহলে আর কি!! তুই একটু পড়। আমি গোসল সেরে এলে দুজনে মিলে খাবো। ‘

সরাবের কথায় রুনা মাথা নেড়ে সায় তো দিলো কিন্তু বলার সুযোগ হলো না আজকে দুপুরে রান্না হয়নি, ঘরে লাকড়ি ফুরিয়ে গেছে। তার আগেই সরাব গোসলের জন্য ঢুকে গেছে ঘরে আর ভিতর থেকে দরজা বন্ধ করে দিয়েছে। চিন্তিত রুনা আর বই নিয়ে বসতে পারলো না। একবার ভাবলো রুমা খালার কাছে লাকড়ি চাইবে কিনা। পরে মনে হলো সরাব শুনলে রেগে যাবে। সরাবের আত্ম সম্মান বোধ প্রখর। কারোর কাছে হাত পাতা তার মোটেই সয় না।

গোসল সেরে রান্নাঘরে গেলো সরাব। তাকে রান্নাঘরে দেখা মাত্র রুনা উঠে এসেছে। সরাব রুনাকে উঠতে দেখে কিছুই বললো না যেহেতু এখন খেতে বসবে তারা। সে ব্যস্ত চোখে ভাতের পাতিল আর তরকারির কড়াই খুঁজছে। তাদের দেখা না পেয়ে সে অবাক হয়ে সুধালো ‘ ভাত,তরকারি সবগুলোর পাতিল কোথায় রেখেছিস তুই ? ‘

বিস্মিত সরাবের মুখ পানে চেয়ে অপরাধী সুরে রুনা বললো ‘ এই কদিন পড়াশোনায় এত ব্যস্ত ছিলাম যে লাকড়ি ফুরিয়ে গেছে খোঁজ রাখিনি। তাই আজ আর দুপুরের খাবার রাধতে পারিনি। আম্মা কাল রাতের বাসি পান্তা ভাত মরিচ,পেঁয়াজ দিয়ে ডলে খেয়েছে। ‘
রুনার কথা শুনে সরাবের রাগ হলো। ও বিরক্তিতে বললো ‘ তো একটু চোখ, কান খোলা রাখবি না ? এখন খাবি কি ? একটু তো মন দিবি কাজে রুনা ? পড়াশোনা করতে বলেছি তার মানে তো এই নয় জগৎ,সংসার থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যা। ‘

সরাবের কথা শুনে মুখ নামিয়ে নিলো রুনা। তার অপরাধ বোধ যেন উত্তরোত্তর বেড়ে চলেছে। সরাব আর কিছু করতে না পেরে রেগে ঘর থেকে বেরিয়ে গেলো। খিদেতে পেটটা জ্বলছে তার অথচ খেতে পারছে না। খিদা একেবারেই সহ্য করতে পারে না সে। তাইতো রেগেমেগে কড়া কিছু কথা শুনিয়ে দিয়েছে রুনাকে। এখন চোখের আড়াল না হলে হয়তো আরও কিছু শুনাবে। তার চেয়ে বেরিয়ে যাওয়াই শ্রেয়।

সরাবের যাওয়ার পথে তাকিয়ে রইলো রুনা। তার ভীষন কান্না পাচ্ছে। এরকম একটা ভুল কি করে করে ফেললো সে ? মানুষটা যে খালি পেটে রাগারাগি করে বেরিয়ে গেলো। সে রেগে থাকলে যে রুনার শান্তি মেলে না সে কি কেউ জানে ? রুনার মন খারাপ ক্ষণে ক্ষণে বেড়ে চলেছে। ও উদাসী ভঙ্গিতে আকাশ পানে চেয়ে আছে।

~চলবে ইনশাআল্লাহ্…

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here