এখানে বেলি ফুলের মালা-২২

0
265

এখানে বেলি ফুলের মালা-২২
———————

পড়ন্ত বিকেল, কাকের কা কা শব্দে পরিবেশ মুখরিত। শাহিদা খাতুন সুপারী কাটা দিয়ে সুপারী কাটছেন। বিনী তারই ঘরে মেঝেতে কাপড় বিছিয়ে বসে সবজি কুটছে। আজ সে সন্ধ্যার নাস্তায় সবজি সমুচা করবে ভেবে রেখেছে। বিনী শাহিদা খাতুন সঙ্গে আছে বিধায় আফিফা আর জাহানারা নিশ্চিন্তে নিজের ঘরে গেছেন।

বিকেলের সময়টা বিনী শাহিদার ঘরেই কাটায়। আবির দুপুরে বাড়ি আসে না কাজেই তার ঘরে গিয়ে লাভ নেই। এর থেকে ভালো সে যদি শাহিদা খাতুনের সঙ্গে গল্পগুজব করতে করতে কাজ করে তাহলে সময়টা কাজে দিবে। শাহিদা খাতুন সুপারী কাটতে কাটতে বললেন ‘ তোমার আব্বা ছিল শিকারী মানুষ। সুযোগ পাইলেই জঙ্গলে যাইতো। ‘

শাহিদা খাতুনের কথা শুনে বিনীর আগ্রহ হলো। সে তুমুল উত্তেজনা নিয়ে বললো ‘ কি কি শিকার করতেন আব্বা ? আপনি গেছেন কখনও তার সাথে ? ‘
‘ উনি শিকার করতেন অতিথি পাখি। আমি পারছি না তার সাথে যাইতে। সে নিবো আমারে ? সে নিত মৃন্ময়ীরে। মৃন্ময়ী তার শিকার করা দেখেছে। আমি তো ওর মুখ থেকা শুইনাই জানতে পারছি। ‘

‘ মৃন্ময়ী ‘ বিস্মিত গলায় বলল বিনী। এই নারীই নাম সে আগে শুনেনি।
শাহিদা খাতুন বললেন ‘ হ মৃন্ময়ী। তোমার আব্বার প্রত্তম বউ আর আমার সতীন। হে আছিলো তোমার আনিস ভাইজানের মা আর আমার ছোটবেলাকার সখি। ‘

এবার যেন রীতিমত বাজ ভাঙলো বিনীর মাথায়। সে অবাকের চরম পর্যায় গিয়ে কণ্ঠ খাদে নামিয়ে নিলো কারণ তার ধারণা বলছে এই কথা কেউ জানেনা। কাজেই সবাই জানলে ভাইয়েদের মাঝে বিভেদ সৃষ্টি হবে। সে মৃদু গলায় বললো ‘ আব্বার প্রথম বউ আর আপনার সতীন মানে ? আপনি আব্বার নিজের বউ ছিলেন না ? ‘

বিনীর বোকামো কথায় ধমকে উঠলেন শাহিদা। ধমকটা খানিক জোরে দিয়েই বললেন ‘ বউ আবার আপন পর হয় কেমনে ? বউ তো বউ হয়, আমি তার দ্বিতীয় বউ আছিলাম। আমার আগের ঘরে একখান বিয়া হইসিলো। কিন্তু হেই সংসার টিকে নাই তাই ছাইড়া দিসি। তারপর মৃন্ময়ী আনিসরে জন্ম দিয়া মরলো আর আমার ভাই,ভাবি তোমার আব্বা কাছে বিয়া বয়ায় দিলো। তোমার আব্বাও আমারে বাধ্য হইয়া বিয়া করছিলেন আর আমিও তারে বাধ্য হইয়া বিয়া করছিলাম। ‘

‘ তাহলে কি আম্মা আপনি আব্বাকে ভালোবাসেন না ? ‘ বিনীর তির্যক প্রশ্ন।

‘ বোকার মত কথা কইও না বউ। তোমার আব্বার লগে আমার বিয়াল্লিশ বছরের সংসার। তারে ভালো না বাইসা কি করে থাকুম ? এক ঘরে থাকতে থাকতে ভালবাসাডা হইয়া যায়। মায়া বইল্লাও একখান ব্যাপার আছে। ‘

শাহিদা খাতুনের কথায় সায় দিল বিনী। শাহিদা ভুল বলেননি। এক ঘরে থাকলে আসলেই মায়া তৈরি হয়ে যায়। যেমনটা তার হয়েছে আবিরের প্রতি। শাহিদা হাসতে হাসতে বললেন ‘ তবে তোমাগো আব্বার প্রত্তম আর শেষ প্রেম আছিলো মৃন্ময়ী। হেরে সে বড্ড ভালোবাসতো। এত সে আমারে ভালোবাসতে পারে নাই। ‘

বিনী লক্ষ্য করলো শাহিদা খাতুনের কথা শুনে তার জন্য মায়া হচ্ছে ওর। কারোর কাছ থেকে ভালোবাসার বদলে ভালোবাসা না পাওয়া যে কতটা কষ্টের সে সে ভালই জানে। সে ভালোবেসেছিলো সরাবকে। কিন্তু নিয়তি তাদের এক হতে দেয়নি। তাই তো জীবন পথে তারা এখন দুজন দুদিকে।

‘ আচ্ছা আম্মা আপনার কষ্ট হয়না ? আপনি তো বললেন আব্বা মৃন্ময়ীকে বেশি ভালবাসতেন। ‘

‘ সম্মান দিয়া কথা কও বউ। হে তোমার সৎ শাশুড়ি হইলেও তোমার মা সমান। হেরে তুমি নাম ধইরা ডাকবার পারো না। ‘

বিনী বুঝলো শাহিদা রেগেছেন। তাই সে অপরাধী সুরে বলল ‘ ভুল হয়েছে আম্মা। ক্ষমা করবেন। আর এমন করবো না। ‘
‘ আমার কষ্ট!! ওটা প্রত্তম প্রত্তম হইতো না কারণ তারে আমি তখন ভালবাসতাম না। কিন্তু সময় যত বাড়লো কষ্টও তত বাড়লো। মনে হইলো বুকটা তখন পাষাণ ভারে নাইমা যায়। মৃন্ময়ী আমার যত ভালো সখিই হোক কিন্তু আছিলো তো হে আমার সতীনই। হেরে তোমার আব্বা এত ভালোবাসতো যে আমার হেরে হিংসা হইতো। ‘

বিনীর খারাপ লাগলো। শাহিদা নিজেকে বাহির থেকে যতটা শক্ত দেখান মনের দিক থেকে সে ঠিক ততটাই নরম। শুধু উপর থেকেই নিজেকে শক্ত দেখানোর চেষ্টা করেন এই যা। যারা গম্ভীর ও চাপা স্বভাবের তারা ভেতর থেকে নিজেদের স্বভাবের প্রখরতার থেকেও বেশি দূর্বল হন।

‘ কিন্তু আমি মৃন্ময়ীরে ভালোও বাসতাম। হে আছিলো আমার সুখ দুঃখের সাথী। হের লেইগাই তোমাগো আব্বারে পাইসি আমি। তাই আমার কোনো আফসোস নাইগা। ‘

‘ আম্মা আপনি এখন আর আমার চুলে আগের মত তেল দিয়ে দেন না। আপনি তো জানেন চুলে আমি তেল দিতে পারিনা। ‘ শাহিদার কথা ঘুরাতে বিনী বললো।

‘ ঐ দেখ কি বলে। তো এই কথাখান স্বামীরে কইবার পারো না ? আমারে তো ঠিকই তেল দিয়া দিতে বলবার পারো। তাহলে হেইডা স্বামীরে বলতে সমস্যা কই ? ‘ শাহিদা খাতুন কপট রাগ দেখিয়ে বললেন।

‘ ওহ ব্যস্ত থাকে আম্মা। সেই সকালে যায় আর রাতে আসে। রাতে এসেও খেয়েই ঘুমিয়ে পড়ে। ‘

শাহিদা উঠলেন সুপারী রেখে। সুপারীর বাটি একপাশে সরিয়ে রেখে তেল নিয়ে বসলেন। তাকে তেল নিয়ে বসতে দেখে বিনী উঠে গিয়ে শাহিদার পায়ের কাছে বসলো। শাহিদা চুলে তেল দিতে দিতে বললেন ‘ এমনে চললে হইবো ? স্বামী স্ত্রী এক লগে সময় না কাটাইলে কেমনে হইবো ? ভালোবাসা তো উইড়া যাইবো। তোমারে আমি কইতাছি। আমার মতো ভুল কইরো না। আবিররে বাইন্ধা রাখ নিজের লগে। যে একবার চইলা যায় হে আর ফিরা আয় না। ‘

কথাগুলো বলে এক নজর জানালা দিয়ে বাহিরে তাকালেন শাহিদা। বারান্দার রেলিংয়ে এক হলদে কালো প্রজাপতি এসে বসেছেন। নিশ্চিত ধ্যানে বসে সেই প্রজাপতি। প্রজাপতির ঘরে আসা মানে ঘরে নতুন অতিথি আসা। কিন্তু কে সেই অতিথি ?

—-

বাড়ি ফিরে সরাব শুনতে পেলো রুনা তেতুলের আচার খাওয়ার জন্য জেদ ধরেছে। তবে নূরজাহান আর সিরাত ওকে বোঝাচ্ছে এত টক খেলে পেট ব্যাথা করবে। কিন্তু সে শুনলে তো। সরাবের আজ মেজাজের ঠিক নেই। দোকানে বিক্রি হচ্ছে না। দোকানের বিক্রি আকস্মিক কমে গেছে কারণ সরাবের দোকানের ঠিক সামনেই আরেকটা কাপড়ের দোকান বসেছে।

সরাবদের এলাকায় একমাত্র সরাবের দোকানটাই ছিল যেখানে ভালো মানের এক নাম্বার কাপড় পাওয়া যেত। কিন্তু এখন নতুন এক ভালো মানের দোকান গড়ে উঠায় লোকজন সেই নতুন দোকানে বেশি ভিড় করছে। কে জানে ব্যবসার অবস্থা ফিরবে কিনা ? এই নিয়েই সরাবের মন মেজাজের ঠিক নেই। তাই রুনাকে এমন জেদ করতে দেখে সে রেগে ধমকে উঠল। জোরে বলল ‘ যেটা বলছে সেটা শোন চুপচাপ। আমার মাথা গরম করাস না রুনা। এমনিতেই মেজাজের ঠিক নেই। বাড়াবাড়ি করলে খারাপ হয়ে যাবে বলে দিলাম। ‘

সরাবের ধমকে কেপে উঠলো রুনা। সিরাত ভাইয়ের ব্যবহারে হতভম্ব। তার আদো জীবনে সে সরাবকে এভাবে রাগতে দেখেনি। তার ভাই তো তার বাবার থেকেও ঠান্ডা মেজাজের ছিল। তাহলে রেগে গেলো হঠাৎ কি দেখে ? ছেলেকে আদরের মেয়ের উপর রাগারাগি করতে দেখে নূরজাহান রেগে গেলেন। রেগে কয়েক কথা শুনিয়েও দিলেন। কিন্তু সরাব সেসব গ্রাহ্য করলো না। সে ধীর পায়ে ঘরে গিয়ে ভেতর থেকে দরজা দিয়ে দিলো।

রুনা বাক্য হারা সরাবের ধমকে। এর আগেও একদিন ধমক দিয়েছিলো সরাব তাকে। কিন্তু সেদিন এভাবে এতটা কর্কশ স্বরে কিছু বলেনি। সরাবের এরকম ব্যবহারের সাক্ষী হয়ে রুনার বেদনায় মুখটা কালো হয়ে গেলো। চোখ ভরে জল এলো। তবে রুনা সেই জল হাতের উল্টো পিঠ দিয়ে মুছে হাত ধুয়ে খেতে বসলো।

ভাতের সঙ্গে সঙ্গে কান্নাও গলাধঃকরণ করছে রুনা। ভাতের একটা দানাও সেচ্ছায় তার গলা দিয়ে নামতে চাইছে না। তবে সে সবটা জোর করেই মুখে পুড়ছে। নিজের লুকোনো অশ্রুগুলো সে দেখাতে চায় না কাউকে। বিশেষ করে নূরজাহানকে তো একেবারেই নয়। তিনি দেখলেই কথাটা ছেলেকে বকতে বকতে অজান্তেই ছেলের কানে তুলবেন। তখন নিশ্চই সরাব ভাববে রুনা ছিচকাদুনে, দূর্বলতম এক নারী। মোটেই রুনা সেরকম মেয়ে নয়। সে নিজেকে সামলে নিতে জানে।

খাওয়া দাওয়া শেষ করলো রুনা। হাতটা কল পাড়ে ধুয়ে সিরাতকে শুভ রাত্রি জানিয়ে ঘরে ঢুকলো সে। সরাব ভাত খেতে আসেনি। বলেছে সে নাকি বাহির থেকে খেয়ে এসেছে। এতে রুনার অভিমানের পারদ আরও গাঢ় হয়েছে। মানুষটা জানে রুনার শরীর এখন আর আগের মত নেই। তবুও রুনা তার জন্য খালি পেটে অপেক্ষা করে। কিন্তু সেই মানুষের মনে মায়া দয়া থাকলে তো। যখন ইচ্ছে করবে তখন ভালোবাসবে আর যখন ইচ্ছা করবে তখন খারাপ ব্যবহার করবে। রুনাকে যেন সে পুতুল পেয়েছে।

সরাব জানালার ধারে দাঁড়িয়ে রাতের আকাশ দেখছিল। মারাত্মক এই খারাপ সময়ে অযথা চিন্তা করে প্রেশার না বাড়িয়ে প্রকৃতি দেখাটাই উত্তম। শুধু শুধুই তখন রুনার উপর রাগটা দেখালো। ও তো জানে রুনার এখন শরীর ভালো নেই। থেকে থেকে এটা ওটা খেতে মন চায়। তাহলে এই অমূলক রাগারাগি করাটা বাড়াবাড়ি নয় কি ?

অথচ রুনার কাছে গিয়ে যে ক্ষমা চাইবে সেটাও ইচ্ছা করছে না সরাবের। ক্ষমা চাইলেই রাগারাগির কারণ কি জিজ্ঞেস করে হাজার প্রশ্ন করবে। এর থেকে থাকুক অভিমান করে। কাল ক্ষমা চেয়ে নিলে আর কি কারণে রেগেছিল সেটা জিজ্ঞেস করার কথা খেয়ালে থাকবে না রুনার।
এসব ভাবতে ভাবতেই সরাব পিছন দিকে ফিরল।

রুনা চুলে খোঁপা করে বিছানার দিকে এগোচ্ছিল। মেঝেতে বিছানো আছে এক পুরনো বছরের পাটি। হয়তো সরাব দোকানের হিসাব নিয়ে বসেছিল। সারাদিন দোকানে বসে হিসাব কষেও বাড়ি এসে তার আবারও পুনরায় হিসাব মিলাতে হয়। নয় তার শান্তি মিলে না। যেকোনো কাজ দুই তিনবার তার রোজই করতে হয়।

বেখেয়ালে হাঁটতে গিয়ে পাটির গায়ে লেগে রুনা হঠাৎই ভারসাম্য হারালো। আছড়ে পড়তে নিলো মেঝেতে। কিন্তু ভাগ্যিস সময় মতো সরাব তাকে আগলে নিয়েছিল। নাহলে তার সঙ্গে সঙ্গে আজ তাদের সন্তানও বিপদে পড়তো। বিপদের কথা ভেবে এখনও রুনার বুকটা ভয়ে ধকধক করছে। কি বিপদটাই না হতে যাচ্ছিল।

রুনাকে বেখেয়ালে হাঁটতে দেখে ধমকে উঠল সরাব। বললো ‘ মন কোথায় থাকে তোর ? নিজের প্রতি খেয়াল না রাখ বাচ্চার কথা তো ভাববি। মন কি পুকুর পাড়ে ফেলে এসেছিস ? যতসব বিরক্তিকর!! কি এক মুসিবতে পড়লাম। ‘

না চাইতেও আবার রেগে গেলো সরাব। রাগে তার মুখ দিয়ে বেরিয়ে এলো বিরক্তিকর কিছু শব্দ। যা শুনে রুনা স্তব্ধ। সরাব তার প্রতি বিরক্ত। সরাবের তাকে নিয়ে কোনোই চিন্তা নেই। সে শুধু চিন্তিত নিজের সন্তানকে নিয়ে। কথাটা মেনে নিতে পারলো না রুনা। নীরব মূর্তির মতো এগিয়ে গিয়ে সরাবের পাশে দূরত্ব ঘেঁষে শুয়ে পড়লো। সরাব তার পাশেই শুয়ে আছে সটান হয়ে। হাত তার কপালে।

সরাব বুঝতে পারছে মেজাজের খেই ধরে রাখতে পারছে না সে। সবকিছুই কেমন বিরক্তিকর লাগছে। আবার রুনার সঙ্গে রাগারাগি করেও মনের শান্তি মিলছে না। এতটা অধৈর্য্য আগে কখনো হয়নি সে। কিন্তু এত কষ্ট সে রুনা আর তাদের সন্তানের জন্যই তো করছে। তাদের জন্যই তো এত পরিশ্রম করা। অথচ মেয়েটা তাকে ভুল বুঝে বসে আছে।

অস্থির সরাব রুনাকে পিছন থেকে জড়িয়ে ধরলো। কিন্তু রুনা প্রতিক্রিয়া দেখালো না। নীরবে সে পড়ে রইলো। সরাব তার কোনো নড়াচড়া না পেয়ে আরেকটু নিবিড় ভাবে জড়িয়ে ধরলো। রুনার কানের লতিতে নিজের ঠোঁট ছুঁয়ে দিয়ে হেসে চোখ বুজলো। আপাতত অভিমান ভাঙালো না বুড়ির। থাক সে অভিমান জমিয়ে। একবারে কাল ভাঙবে সেই অভিমান সে। কিন্তু কে জানত সে আর এই সুযোগই পাবে না প্রিয়তমার অভিমান ভাঙানোর।চঞ্চল প্রিয়তমা চুপ করে যাবে চিরকালের জন্য।

—-

সকাল থেকে দৌড়াদৌড়ির উপর আছেন সালমা ইসলাম। মেয়ের বিয়ে বলে কথা। কাজ কাম তো কম হবার নয়। তার উপর বিয়েটা বান্ধবীর ছেলের সঙ্গে। বান্ধবীকে দেখাতে তো হবে মেয়ের বিয়েতে তিনি কোনো কিছুর অভাব রাখেননি। মা হয়ে সন্তানের জন্য যা যা করা প্রয়োজন তার সবই করছেন তিনি।

সালমা ইসলাম আসফিয়ার বিয়ের কথা বিনীকে কালই জানিয়েছেন। শত যাই হোক বিনীও তো তার মেয়ে। বোনের বিয়ের খবর পাওয়ার অধিকার তারও আছে। তিনি ভেবেছিলেন বিনী হয়তো মেনে নিবে। এই বিশ্বাস মেয়ের উপর ছিল তার। তবে বিনী তাকে ভুল প্রমাণিত করেছে। বিনী আসফিয়ার বিয়ের কথা শুনে প্রথমেই জানতে চেয়েছে আসফিয়া রাজি কিনা।

সালমা যখন বললেন তার হ্যাঁতেই আসফিয়ার হ্যাঁ তখন বিনী সরাসরি বলল তবে সালমা ইসলাম যেন এটা আশা না করেন বিনী সেই বিয়েতে আসছে। সালমা ইসলামও এই ব্যাপারে আর কথা বাড়াননি। মেয়ের কাছ থেকে এমন ব্যবহার পাওয়া অসম্ভব কিছু নয়। বিনী তো বরাবরই তার কথার অবাধ্য হয়েছে কাজেই বিনীকে আসফিয়ার বিয়ের কথা জানিয়ে তিনি শুধু একজন মা হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন।

আসফিয়ার হাতে মেহেদি দিতে বাহির থেকে মেয়ে আনিয়েছেন সালমা ইসলাম। মেয়েটিকে বলে দিয়েছেন যেন আসফিয়ার হাতে সাহেলের নাম লিখে দেয়। মেয়েটি আসফিয়ার হাতে মেহেদি দিতে দিতে মাথা নেড়ে সায় দিল। এই ফাঁকে আসফিয়ার ঘর আরেকবার গুছিয়ে সালমা ইসলাম বেরিয়ে গেলেন।

লালিমা মাখানো হাতটা চোখের সামনে মেলে ধরেছে আসফিয়া। ফর্সা হাত দুটোর কনুই অব্দি মেহেদীর ছোঁয়া। বাম হাতের তালুতে জ্বলজ্বল করছে সাহেলের নাম। নামটা দেখে কোনো অনুভূতি হচ্ছে না আসফিয়ার। রাগ, দুঃখ,অভিমান কোনোটাই নয়। ভিতরটা অনুভূতিহীন এক রাজ্য লাগছে। অন্তঃসার শূন্য সেই রাজ্যে অনুভূতিদের প্রবেশাধিকার আপাতত নিষিদ্ধ।

—-

বারান্দায় দাড়িয়ে বিকেল বিলাস করছে জাদিদ। আকাশে তখনও বিকেলের সূর্য। আর কিছুক্ষণ!! তারপরই আসফিয়া হয়ে যাবে অন্য কারোর। সে সংসার বাঁধবে অন্য কারোর সঙ্গে। অথচ স্বপ্ন দেখেছিল সংসারটা তাদের দুজনেরই হবে। তবে ইচ্ছা কেন পূরণ হলো না ? আসফিয়ার সংসার করার স্বপ্ন তো পূরন হলো কিন্তু জাদিদের আসফিয়ার সঙ্গে সংসারের স্বপ্ন অধরা রয়ে গেলো। সে দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললো ‘ তুমি অন্য কারোর ছন্দে বেঁধো গান ‘।

~চলবে ইনশাআল্লাহ্…..

(কি মনে হয় ? আসফিয়া আর জাদিদের কি মিল হবে ?)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here