বেদনার_রঙ_নীল চল্লিশতম পর্ব

0
205

#বেদনার_রঙ_নীল
চল্লিশতম পর্ব
লিখা- Sidratul Muntaz

থমথমে নীরবতাকে পাশ কাটিয়ে প্রণয় অনুতাপসূচক কণ্ঠে বলল,” স্যরি।”
তুলি অন্যপাশে মুখ ঘুরিয়ে গাঁট হয়ে বসে আছে। গাড়ির পেছনের সিটে রাইফা। সে প্রণয় আর তুলির ব্যক্তিগত গোপনীয়তা রক্ষা করার নিমিত্তে বলল,” আমি বাইরে ওয়েট করছি। তোমরা কথা বলো।”

রাইফা উঠে গিয়ে নিজের গাড়ির সামনে দাঁড়লো। তুলি সেদিকে তাকিয়ে রইল চুপচাপ। প্রণয় আবার নরম কণ্ঠে বলল,” কথাও কি বলবে না আমার সাথে?”

তুলি এই পর্যায়ে খিটমিটে স্বরে বলল,” যে জনসম্মুখে আমার গায়ে হাত তুলতে পারে তার সাথে আমি কথা বলার প্রয়োজনবোধ করি না।”

” বললাম তো স্যরি। ভুল হয়েছে আমার।”

তুলি কোনো জবাব দিল না। গাড়ির দরজা খুলে সে বেরিয়ে যেতে নিলেই প্রণয় শক্তহাতে তাকে থামালো। তুলি ক্রোধে উন্মত্ত হয়ে চিৎকার করে বলল,” ডন্ট টাচ মি।”

প্রণয় তাকে ছেড়ে দিয়ে বলল,” আচ্ছা ইনাফ, আমি টাচ করছি না তোমাকে। কিন্তু যথেষ্ট বাড়াবাড়ি করছো তুমি। আমার উপর দয়া হয় না বুঝলাম৷ তাই বলে কি একটা নিষ্পাপ বাচ্চার উপরেও দয়া হয় না তোমার? কি করে ওকে মেরে ফেলার কথা ভাবলে? তুমি না ওর মা?”

তুলি রাগত স্বরে চেঁচালো,” হ্যাঁ ঠিক। আমি ওর মা। তাই আমার বাচ্চার সাথে আমি যা ইচ্ছা করবো। নান অফ ইউর বিজনেস। আপনি এখানে ইন্টারফেয়ার করার কেউ না বুঝেছেন?”

প্রণয় নির্বাকচিত্তে তাকিয়ে থেকে একটু পর বলল,” তুমি কি পাগল হয়ে গেছো? মানে কি বলছো এসব? তুমি ওর মা হলে ওর বাবা কে? আমার কি কোনো অধিকার নেই ওর উপর? রাইফা আমাকে না জানালে তো আমি জানতেও পারতাম না কিছু। তাছাড়া আমি এখনও বুঝতে পারছি না যে এটা কিভাবে হলো? তুমি প্রেগন্যান্ট কবে থেকে? ”

তুলি শান্ত কণ্ঠে বলল,” দুইমাস রানিং। আমি জানতে পেরেছি দুইদিন আগে।”

প্রণয় তাচ্ছিল্য হেসে করুণ কণ্ঠে বলল,” এই দুইদিনেই তাকে মেরে ফেলার সিদ্ধান্ত নিলে? একবার আমার সাথে আলোচনা করতে পারতে। আমি তো ভাবতেও পারিনি যে এমন কিছু হয়ে যাবে। মাত্র একরাতেই এটা কিভাবে সম্ভব?”

শেষ বাক্যটি প্রণয় বিড়বিড় করে আওড়ালেও তুলি শুনে ফেলল। রুঢ় কণ্ঠে বলল,

” এজন্যই আপনাকে নিষেধ করেছিলাম। কিন্তু আপনি আমার কথা শোনেননি। যদি সেদিন আমার কথা শুনতেন তাহলে আজকে এমন কিছুই হতো না!”

” আচ্ছা ওয়েট, আমি কখন তোমার কথা শুনিনি?”

তুলি বিস্ফারিত চোখে তাকাল। প্রণয় কি ভুলে যাওয়ার ভাণ ধরছে নাকি আসলেই ভুলে গেছে? যে রাতের কথা তুলি এক মুহূর্তের জন্যেও মাথা থেকে বের করতে পারেনি সেই রাতের কথা প্রণয় এতো দ্রুত ভুলে গেল? তুলিকে নিশ্চুপ দেখে প্রণয় আন্দাজ করে বলল,” তুমি কি আমাদের বিয়ের রাতের কথা বলছো?”

” হ্যাঁ।” সলজ্জে জবাবটি দিয়েই অন্যদিকে নজর ঘুরালো তুলি। প্রণয় চোয়াল শক্ত করল। সামান্য রাগী কণ্ঠেই বলল,” সেদিন কি আমি কোনোভাবে তোমাকে ফোর্স করেছিলাম?”

” হ্যাঁ করেছেন।”

” ইম্পসিবল। তোমারও কনসেন্ট ছিল এখন মিথ্যা বলো না।”

তুলি দ্বিধান্বিত কণ্ঠে বলল,” আমি তখন বুঝতে পারিনি। যদি জানতাম এমন কিছু হবে তাহলে আপনাকে অবশ্যই আটকাতাম।”

” তুমি এমনভাবে বলছো যেন আমি সব জানতাম! এটা একটা এক্সিডেন্ট। আমাদের কারোই কিছু করার ছিল না। তাই বলে তুমি আমাকে কিছু না জানিয়ে একা এতোবড় সিদ্ধান্ত নিতে পারো না। আমি তোমাকে কোনোভাবেই এটা করতে দিবো না। কি আশ্চর্য ব্যাপার! আজকে রাইফা সব ধরতে না পারলে হয়তো আমার অজান্তেই আমার বেবিটা মরে যেতো। কোনোদিন জানতেও পারতাম না যে আমার একটা সন্তান পৃথিবীতে আসতে চেয়েছিল। কিন্তু তার নিষ্ঠুর মা সেটা হতে দেয়নি।”

তুলি রুক্ষভাবে বলল,” একদম ঠিক বলেছেন। আমি নিষ্ঠুর, সেলফিশ৷ নিজের স্বার্থ ছাড়া কিছুই বুঝি না৷ তাই এই বাচ্চা আমি জন্ম দিতে পারবো না৷ ও জন্মালে আমার জীবনটা কঠিন হয়ে যাবে। আমি মাথা তুলে দাঁড়ানোর আগেই মুখ থুবড়ে পড়বো। মা হওয়া আমার জীবনের লক্ষ্য না প্রণয়। আপনার যদি এতোই সন্তানের জন্য দরদ উতলে উঠে তাহলে আরেকটা বিয়ে করে তারপর বাচ্চা জন্ম দিন। আমার কাছে এসব কিছু এক্সপেক্ট করবেন না।”

প্রণয় ক্ষণে ক্ষণে বিস্মিত হচ্ছে। তুলির এমন রূপ তার ধারণার বাইরে ছিল। সে গমগমে গম্ভীর কণ্ঠে বলল,” আমি এতোকিছু বুঝতে চাই না৷ আমার বাচ্চাকে আমি মারতে দিবো না। তোমাকে এই বাচ্চা জন্ম দিতেই হবে। কথা এখানেই শেষ। ”

তুলি আশ্চর্য দৃষ্টিতে তাকালো।

” কি বললেন আপনি? এখন কি আপনি আমাকে জোর করে বাচ্চা জন্ম দেওয়াবেন?”

” অবশ্যই। আমি আমার বেবিকে চাই। ওর গায়ে যেন ফুলের টোকাও না লাগে। বি কেয়ারফুল।”

তুলি উৎকণ্ঠিত হয়ে বলল,” আপনি কি আমাকে হুমকি দিচ্ছেন?”

” ধরে নাও তাই। আমার বেবির কিছু হলে তোমাকে আমি ছাড়বো না তুলি।”

তুলি মুখে হাত ঠেঁকিয়ে তাচ্ছিল্য হাসল। ক্রোধপূর্ণ গলায় বলল,” ইম্পসিবল। আমি ওকে জন্ম দিতে গিয়ে নিজের ক্যারিয়ার ভাসাতে পারবো না।”

প্রণয় ভারী আওয়াজে বলল,” আই ফা*/ক ইউর ক্যারিয়ার। আমি শুধু আমার বাচ্চাকে চাই।”

প্রণয়ের মুখে এমন জঘন্য শব্দ শুনে তুলি ড্যাবডেবে দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল কিছুক্ষণ। একটু পর নিজেকে শান্ত করে বলল,” ঠিকাছে। আপনি শুধু বাচ্চাকে চান তো? নিশ্চয়ই পাবেন। আমি ওকে জন্ম দিবো। কিন্তু এরপর আপনার সাথে আমার আর কোনো সম্পর্ক থাকবে না। রাজি?”

হঠাৎ এমন কথা শুনে ভ্রু-তে কুঞ্চন সৃষ্টি হলো প্রণয়ের। সবিস্ময়ে জিজ্ঞেস করল সে,” এর মানে?”

” মানে ওর জন্মের পর আমি আপনার থেকে ডিভোর্স নিবো।”

প্রণয় তুলির শীতল বাক্য শুনে কিংকর্তব্যবিমুঢ় হয়ে গেল। কপালের কুঞ্চন মিশে গিয়ে পেশী টানটান হয়ে উঠল। বলার মতো কোনো শব্দ আর খুঁজে পেল না সে। তুলি তার সিদ্ধান্ত জানিয়েই গাড়ি থেকে বের হয়ে গেল। প্রণয় বসে রইল নিথরের মতো। এটাই কি তবে হওয়ার ছিল?

বাড়ি ফিরে আসার পর থেকে তুলি বারান্দায় বসে আছে। সে অবিরত কাঁদছে। রাইফা কয়েকবার তাকে ডাকল। তুলি শুনেও জবাব দিচ্ছে না। বিরক্ত হয়ে রাইফা বারান্দায় ঢুকল।

” তোর কি হয়েছে আমাকে বলবি না? এইভাবে কেন কাঁদছিস? ঠিকাছে তোর এবোর্শন করার এতো ইচ্ছা থাকলে আয় সকালে আমিই তোকে নিয়ে যাবো। প্রণয়কেও এই ব্যাপারে ম্যানেজ করবো। খুশি এবার?”

তুলি দুইপাশে মাথা নাড়ল। কাঁদতে কাঁদতে চোখ ফুলে এসেছে তার। একহাতে চোখের জল মুছে সে হাতের মোবাইলটি রাইফার দিকে বাড়িয়ে দিল। রাইফা অবাক হয়ে বলল,” কি?”

” দ্যাখ।”

রাইফা মোবাইলের স্ক্রিনে দেখল প্রণয়ের ম্যাসেজ। সে লিখেছে,” আই নিড মাই বেবি। সেজন্য যদি তোমাকে হারাতেও হয়, আই ডন্ট কেয়ার। তুমি ওকে জন্ম দেওয়ার ব্যবস্থা করো। আমি ডিভোর্সের ব্যবস্থা করছি।”

ম্যাসেজটি পড়ার পর রাইফা বিস্মিত গলায় বলল,” বুঝলাম না। এখানে ডিভোর্সের কথা আসছে কেন? তোদের কি হয়েছে?”

” আমিই ওকে বলেছিলাম। যদি বাচ্চা জন্ম দিতেই হয় তাহলে আমি ওকে ডিভোর্স দিবো। ও রাজি হয়ে গেছে!”

” ও ডিভোর্সের জন্য রাজি হয়ে গেছে বলে তুই কাঁদছিদ নাকি বাচ্চা জন্ম দিতে হবে বলে কাঁদছিস?”

তুলি চোখ মুছতে মুছতে বলল,” দুটাই।”

আক্ষেপ নিয়ে দীর্ঘশ্বাস ছাড়ল রাইফা। সামান্য হেসে বলল,” তুই কি চাস? প্লিজ আমাকে বুঝিয়ে বল।”

তুলি অভিযোগ করার উদ্দেশ্যে বলল,” ও আমাকে সামান্য পরোয়াও করে না রাইফা। ওর শুধু ওর বাচ্চাকেই চাই। আমি মরলাম কি বাঁচলাম তাতেও ওর কিছু যায়-আসে না। ধর বাচ্চাটা জন্ম দিতে গিয়ে যদি আমার কিছু হয়ে যায়, যদি এমন একটা ক্রিটিক্যাল সিচুয়েশন তৈরী হয় যে কেবল একজনকেই বাঁচানো সম্ভব, তাহলে হয়তো প্রণয় তার বাচ্চাকেই বাঁচাতে চাইবে৷ আমাকে নিয়ে তার একদম মাথাব্যথা নেই।”

” ধূর, এসব কি বলছিস? তুই কি এখন এইটা ভেবে কাঁদছিস?”

তুলি শুকনো গলায় বলল,” আমি শুধু ভাবছি এটা কেমন মানুষকে বিয়ে করলাম? যে আমার একটুও পরোয়া করে না! তার সমস্ত চিন্তা শুধু তার নিজেকে নিয়ে আর নিজের বাচ্চাকে নিয়ে।”

” নিজের বাচ্চার জন্য চিন্তা করা কি অন্যায়? বরং তুই অন্যায় করেছিস। মা হয়েও বাচ্চার কথা ভাবছিস না। শুধু ক্যারিয়ার পেছনে ছুটছিস। যেই ক্যারিয়ারের জন্য একটা নিষ্পাপ শিশুকে মেরে ফেলতে হয় সেই ক্যারিয়ার দিয়ে হবেটা কি?”

” তোর নিজের বাচ্চা হলে বুঝতি৷ ক্যারিয়ার তো শুধু একটা বাহানা। আমি ওর ভালো চাই বলেই ওকে পৃথিবীতে আনতে চাই না। হয়তো ওর কপালটাও আমার মতো হবে। কারণ আমি যখন জন্মেছিলাম তখন আমার বাবা-মায়ের বিয়ে হয়নি। আমার মা বাবাকে বিশ্বাস করেই আমাকে জন্ম দিয়েছিল কিন্তু তারপর কি হলো দ্যাখ? আমি পোড়া কপালি হয়ে পৃথিবীতে বেঁচে রইলাম। কিন্তু মা আমাকে ছেড়ে চলে গেল। বাবাও আর আমাকে চায় না। ”

” কিন্তু প্রণয় তো ওকে চায়। তোর বাচ্চার কপাল তোর মতো হবে না৷ কেন এতো ভাবছিস? প্রণয় দেখবি তোদের দু’জনকেই খুব ভালো রাখবে।”

তুলি কোনো কথা বলল না। বাবা-মায়ের বিচ্ছেদের পর থেকে সে এই পৃথিবীর কাউকেই আর বিশ্বাস করতে পারে না। তার খুব ভয় হয়। রাইফা তুলির কাছে এসে কাঁধে হাত রেখে বলল,” এখন বুঝতে পারছিস না। কিন্তু বাচ্চা অনেক ইম্পোর্ট্যান্ট। আর এবোর্শন খুব রিস্কি কাজ। এমনও হতে পারে যে একবার এবোর্শনের পর তোর আর বাচ্চা জন্ম দেওয়ার এবিলিটিই থাকবে না। তখন কি করবি? আফসোস ছাড়া আর কিছুই করার থাকবে না।”

তুলি আঁড়চোখে তাকিয়ে বলল,” তুই এমনভাবে বলছিস যেন তোর এই বিষয়ে খুব অভিজ্ঞতা! কয়বার এবোর্শন করিয়েছিস?”

রাইফা ফিক করে হেসে বলল,” এমন সিচুয়েশন অনেক দেখেছি তো। তাই মুখস্ত হয়ে গেছে। আচ্ছা বাই দ্যা ওয়ে, আমি কিন্তু এখনও বুঝতে পারলাম না। এই অঘটন ঘটল কখন?”

” অঘটন মানে?”

” মানে তুই প্রেগন্যান্ট কিভাবে হলি?”

তুলি গরম কণ্ঠে বলল,” এইটা আবার কি ধরণের প্রশ্ন। তোকে কি ডিটেলস বলতে হবে?”

” আরে না, মানে আমি শুধু টাইমিং জানতে চাইছি। কিভাবে হলো এসব? ঢাকায় ফেরার পর থেকে তো তুই প্রণয়ের মুখও দেখিসনি। তাহলে বাচ্চা..”

তুলি আড়ষ্ট গলায় বলল,” সব তো তোর বাড়াবাড়ির ফসল। এখন নাটক করছিস কেন? গ্রামে থাকতে বাসর ঘর সাজানোর আইডিয়া তো তুই-ই দিয়েছিলি। তুই তখন মুখ না খুললে এসব কিছুই হতো না বেয়াদব।”

রাইফার এবার মনে পড়ল। প্রণয় আর তুলির বিয়ের পর বাসর ঘর সাজানোর বুদ্ধিটা সে নিজেই দিয়েছিল। কিন্তু সেজন্য যে এতো কাহিনী ঘটবে সেটা কে জানতো? রাইফা জীভ কেটে বলল,” স্যরি। কিন্তু মাত্র একরাতেই ঘটনা ঘটে গেল? এটা কিভাবে সম্ভব?”

তুলি রাগান্বিত ভঙ্গিতে বলল,” এই ব্যাপারে আর একটা প্রশ্ন করলে তুই আমার হাতে থাপ্পড় খাবি। অসভ্য, সর সামনে থেকে।”

তুলি বারান্দা ছেড়ে বের হয়ে গেল। রাইফা সাথে সাথেই প্রণয়কে ফোন করল।

” হ্যালো।”

” প্রণয়, কোথায় তুমি?”

” বাইরে আছি। কেন?”

” তুমি কি সত্যি তুলিকে ডিভোর্স দিচ্ছো?”

” জানি না। ” প্রণয়ের কণ্ঠে উত্তাপ। রাইফা তরল গলায় বলল,” তুলি বেচারি তো কেঁদে ভাসাচ্ছে। এইরকম কেন করছো তুমি?”

” কাঁদুক৷ ডিভোর্সের কথা ও নিজেই বলেছে। এখন কাঁদলে আমার কি?”

” এতো দায়সারা হওয়া ঠিক না। ও তো রেগে বলেছে। তোমার উচিৎ ওর রাগ ভাঙানো।”

প্রণয় কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে বলল,” শুধু কি ওরই রাগ করার অধিকার আছে? আমার রাগ নেই? ও যেটা করেছে সেজন্য ওকে গুণে গুণে একশোটা চড় দেওয়া উচিৎ ছিল। আমি তো মাত্র একটা দিয়েছি৷ এখনও আমার হাত নিশপিশ করছে। ওকে বলবে আমার সামনে যেন না আসে।”

” ওরে বাবা, এতো রাগ দিয়ে কি জীবন চলে? একজন রাগলে অপরজন রাগ ভাঙাবে এটাই তো নিয়ম। কিন্তু তোমরা দু’জনেই ফুলে ঢোল হয়ে আছো। তাহলে কিভাবে চলবে?”

” তো আমি আর কি করবো বলো? ও আমার বাচ্চা মেরে ফেলতে নিয়েছিল। এখন আবার বলছে বাচ্চা জন্ম দেওয়ার পর আমাকে ডিভোর্স দিবে। এসব কথা শোনার পর মাথা কিভাবে ঠিক রাখা যায়?”

” মাথা ঠিক রাখতে হবে। আচ্ছা শোনো আমি বলি কি করতে হবে। কালকে সকালে বাসায় আসো।”

পরদিন সকালে তুলির যখন ঘুম ভাঙল, সে দেখতে পেল তার পুরো ঘর বাচ্চাদের ছবি দিয়ে ভর্তি। একটা ছবিতে বাচ্চা হাসছে, আরেকটা ছবিতে খেলছে, আরেকটায় বড় বড় চোখ করে তাকিয়ে আছে, আরেকটা ছবিতে দুষ্টমি হাসি। তুলি খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে সবকয়টি ছবি দেখতে লাগল। হঠাৎ দরজার কাছে চোখ পড়তেই দেখল লম্বা দু’টি পা। তুলি উপরে তাকাতেই দেখল প্রণয়কে। তার হাতে বিরাট একটি বাক্স। বাক্সটি নিয়ে তুলির সামনে রেখে বলল,” গুড মর্ণিং।”

তুলি হঠাৎ এমন কিছু আশা করেনি। তাই খুব অবাক হয়ে কথা বলতে পারল না। প্রণয় কাগজের বাক্সটি খুলতেই বেরিয়ে এলো দুই পাউন্ডের একটি চকলেট কেক। কেকের মাঝে প্যাঁচানো অক্ষরে লেখা,” হ্যাপি টু মান্থ এনিভার্সেরী।”

তুলি লেখাটি পড়ে কৌতুহল নিয়ে তাকাল। প্রণয় বলল,” আগামী নয়মাস ধরে প্রত্যেক মাস আমরা এভাবেই কেক কেটে সেলিব্রেট করবো। নাও, এখন ফার্স্ট কেক কাটো।”

প্রণয় ছুড়ি এগিয়ে দিতেই চোখ ভরে এলো তুলির। ভেজা গলায় সে বলল,” আই এম স্যরি। সত্যিই ভুল করতে যাচ্ছিলাম আমি। প্লিজ আমাকে মাফ করে দিন।”

প্রণয় দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বলল,” ঠিকাছে। কিন্তু একটা শর্ত।”

তুলি নিচের দিকে তাকিয়ে আওড়াল,” কি?”

” ডিভোর্স আর এবোর্শন, এই দু’টো শব্দ কখনও মুখে আনা যাবে না।”

তুলি চোখের পানি ছেড়ে দিয়ে উচ্চারণ করল,” আচ্ছা।”

প্রণয় একহাতে তাকে কাছে এনেই জড়িয়ে ধরল।

চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here