#বেদনার_রঙ_নীল
তেতাল্লিশতম পর্ব
লিখা- Sidratul Muntaz
তুলি সিঁড়ি থেকে পা পিছলে পড়ে যাওয়ায় মাথায় আঘাত পেয়ে জ্ঞান হারিয়েছে। তাকে অতি দ্রুত হাসপাতালে নেওয়ার ব্যবস্থা করা হয়। প্রণয় তখন ইউনিভার্সিটিতে ছিল। আর শান ছিল স্কুলে। রাইফা খবর পেয়ে সবার আগে হন্তদন্ত হয়ে ছুটে আসে। তারপর আসে প্রণয়। মিষ্টি চিন্তিত কণ্ঠে বলল,” মেয়েটা ইদানীং খুবই অন্যমনস্ক থাকে। হাঁটতে গিয়ে হোচট খায়। সেদিন রান্না করতে গিয়ে ওরনায় আগুন ধরিয়ে ফেলল।”
প্রণয় চোখ প্রসারিত করে বলল,” এতোবড় একটা ঘটনা আমাকে জানালি না কেন তোরা?”
মিষ্টি একটু কাঁচুমাচু হয়ে গেল। তারপর বলল,” তুলিই জানাতে নিষেধ করেছিল৷ তুই শুনলে যদি আবার রেগে যাস, তাই! এরপর থেকে তো ছোটমা ওর রান্নাঘরে ঢোকাই বন্ধ করে দিল।”
রাইফা নিশ্চুপ হয়ে কথাগুলো শুনছে। তার চেহারায় অপরাধী ভাব। তুলির অন্যমনস্কতার কারণ সে ভালো করেই জানে। প্রণয় তাকে লক্ষ্য করেই প্রশ্ন করল,” তুলির কি হয়েছে রাইফা? আমি মনে হচ্ছে তুমি জানো কিছু। ও আজ-কাল খুবই টেনশনে থাকে।”
রাইফা আমতা-আমতা করে ভাবছিল এখন সত্যি কথাটা বলেই দিবে। নাহলে একটু পর সবাই এমনিতেই জেনে যাবে। কিন্তু তুলিকে জিজ্ঞেস না করে বলাটা উচিৎ হবে কি-না সে বুঝতে পারছে না! তুলি যেমন তার ভালো বন্ধু তেমনি প্রণয়ও তার বন্ধু। কারো কাছেই রাইফা কথা লুকাতে পারে না। প্রণয় প্রশ্নের উত্তর জানার জন্য তাকে একদম জেঁকে ধরল। তখনি একজন নার্স এসে বলল,” এখানে পেশেন্টের সবচেয়ে ঘনিষ্ট কে আছেন?”
প্রণয় এগিয়ে গেল, ” আমি আছি। আমি ওর হাসব্যান্ড।”
” চলুন। ডাক্তার কথা বলবে।”
প্রণয় নার্সের সাথে গেল। তুলির রিপোর্ট লিখে দিতে দিতে একজন মহিলা ডাক্তার বললেন,” পেশেন্টের শরীর খুবই দূর্বল। তার এই মুহূর্তে বিশেষ যত্নের প্রয়োজন।”
প্রণয় কৌতুহল নিয়ে জানতে চাইল,” বেবি ভালো আছে তো ম্যাডাম? ”
ডাক্তার একটু অবাক হয়ে বললেন,” বেবি মানে? উনার তো রিসেন্টলি গর্ভপাত হলো।”
প্রণয় চমকে উঠল। আহত স্বরে উচ্চারণ করল, ” কি!”
ডাক্তার সহজ হেসে বললেন,” জ্বী। আপনি জানতেন না?”
প্রণয়ের গলা শুকিয়ে এলো। ভ্যাবাচেকা খেয়ে বলল, ” আপনি হয়তো ভুল করছেন। আমার স্ত্রীর নাম তুলনা সরকার।”
” আমি একদমই ভুল করছি না। তুলনা সরকারের কথাই বলছি। ”
প্রণয় কাছে এসে বলল,” ওর গর্ভপাত কিভাবে হলো? ও তো উঁচু জায়গা থেকে পড়েনি। আর এতোটাও আঘাত লাগেনি।”
” উনার তো এই ইন্সিডেন্টের কারণে গর্ভপাত হয়নি। আরও আগে হয়েছিল।”
এবার প্রণয়ের মাথায় আকাশ ভেঙে পড়ল। তীক্ষ্ণ অবিশ্বাসী দৃষ্টিতে তাকিয়ে থেকে সে ভ্রু কুচকে বলল,” কি বলছেন এসব? আপনি শিউর?”
” একদম আমি নিশ্চিত হয়েই বলছি। ”
প্রণয়ের চোখ টলমল। একদম বিশ্বাস হচ্ছে না তার। ডাক্তার বলে গেলেন,” উনি শারীরিকভাবে খুব দূর্বল। গর্ভপাতের পর সব মেয়েদের এই অবস্থা হয়। খাওয়া-দাওয়া করছেন না। আমি একটা খাদ্য চার্ট লিখে দিচ্ছি। আপনি খেয়াল রাখবেন..”
প্রণয় কথাগুলো ঠিকমতো শুনল না। তার মস্তিষ্ক কাজ করা বন্ধ করে দিয়েছে অনেক আগেই। বুকের বামপাশে তীব্র যন্ত্রণা অনুভব হচ্ছে। তুলি এতো বড় অন্যায়টা না করলেও পারতো। শেষমেষ এবোর্শনটা সে করেই ছেড়েছে। আবার কাউকে কিছু জানানোর প্রয়োজনও মনে করল না! প্রণয় কি তাহলে তুলিকে চিনতেই ভুল করেছিল? তার জীবনের প্রথম ভুল তুলিকে ভালোবাসা। আর দ্বিতীয় ভুল তুলিকে বিশ্বাস করা। এই দু’টো জিনিসের একটিরও যোগ্য ছিল না তুলি। প্রণয় সবার অগোচরে হসপিটাল থেকে বের হয়ে গেল।
জ্ঞান ফেরার পর তুলি সবার আগে প্রণয়ের সাথে কথা বলতে চেয়েছিল। কিন্তু প্রণয়কে কোথাও খুঁজে পাওয়া গেল না। ইতোমধ্যে বাচ্চা হারানোর দুঃসংবাদটি সবাই জেনে গেছে। অজান্তা তুলির মাথায় হাত বুলিয়ে সান্ত্বনার স্বরে বললেন,” মনখারাপ কোরো না মা। আল্লাহ যা করে ভালোর জন্যই করে। ইনশাআল্লাহ আবার দ্রুত সুসংবাদ আসবে।”
তুলি জড়ানো কণ্ঠে বলল,” প্রণয় কি সব জেনে গেছে ছোটমা? সে কি খুব কষ্ট পেয়েছে?”
অজান্তা আন্দাজ করে বললেন,” ডাক্তারের সাথে তো ও আলাদা কথা বলেছিল। তাহলে বোধ হয় আগেই সব জেনেছে। কষ্ট তো একটু পাবেই। এতো আশা ছিল ওর বাচ্চাটা নিয়ে.. কিন্তু তুমি টেনশন কোরো না৷ এইখানে তো তোমার দোষ নেই।”
তুলি মনে মনে স্বগতোক্তি করল,” আমারই সব দোষ। আমিই তো ওকে প্রথমে রাখতে চাইনি। তাই আল্লাহ ওকে আমার থেকে কেঁড়ে নিলেন। মানুষ কেঁদেও বাচ্চা পায় না। আর আমি পেয়েও হারিয়ে ফেললাম!”
বাড়ি ফেরার পর থেকে তুলি অধীর হয়ে প্রণয়ের জন্য অপেক্ষা করছে। তুলিকে হাসপাতাল থেকে বাড়ি আনা হলো কিন্তু প্রণয় ছিল না। তার কি এমন গুরুত্বপূর্ণ কাজ? সে কোথায় গেছে? তুলি তাকে কয়েকবার ফোন করল। কিন্তু মোবাইল বন্ধ। মিষ্টি বলল,” অস্থির হওয়ার কিছু নেই। মনে হয় রিসবের সাথে দেখা করতে গেছে। আর রিসব যে ধরণের অঞ্চলে থাকে সেখানে বেশিরভাগ সময় নেটওয়ার্ক পাওয়া যায় না।”
মিষ্টির সান্ত্বনায় তুলি নিশ্চিন্ত হতে পারল না। প্রণয়ের সাথে একবার কথা না বললে সে কিছুতেই শান্ত হতে পারবে না। পুরো দিনটা কাটল অস্থিরতায়। রাতে মিষ্টি তুলিকে ঔষধ খাইয়ে বিছানায় শুয়ে পড়তে বলল। প্রণয়ের জন্য অপেক্ষায় না থেকে ঘুমিয়ে পড়ার পরামর্শ দিল। কিন্তু তুলি ঠিক করল সে জেগেই থাকবে। যদিও শেষমেষ তার চোখ লেগে এলো। ঘুম ভাঙল ভোরের দিকে। তুলি হড়বড় করে জেগে উঠে দেখল এখনও প্রণয় আসেনি। বিছানার পাশের জায়গা এখনও খালি! তুলি মোবাইল নিয়ে প্রণয়কে ফোন করল। এবার অবশ্য প্রণয়ের মোবাইল খোলা পাওয়া গেল। কিন্তু প্রণয় ফোন ধরছে না। বিচলিত মন নিয়ে নিচে নামল তুলি। তখন দেখল ড্রয়িংরুমের সোফায় প্রণয় ঘুমিয়ে আছে। তুলি তাকে দেখে একই সাথে বিস্মিত এবং আহত হলো। প্রণয় এখানে কেন ঘুমাচ্ছে? রুমে কেম আসেনি? অনেক প্রশ্ন সূচের মতো পীড়া দিচ্ছিল মাথায়। তুলি প্রণয়কে ডাকল।
” প্রণয়, এই প্রণয়।”
চোখ মেলে তুলিকে দেখেই বিরক্তির ভঙ্গিতে কপাল কুচকাল প্রণয়। চোখ চুলকে ঘুম জড়ানো গলায় জিজ্ঞেস করল,” কি ব্যাপার?”
তুলি সেন্টার টেবিলে প্রণয়ের মুখোমুখি বসল। প্রশ্ন করল তার চোখে চোখ রেখে,” আপনি এখানে কেন শুয়ে আছেন?”
প্রণয় হাই তুলে দায়সারা জবাব দিল,” এমনি।”
” উপরে আসেননি কেন?”
“আমার ইচ্ছা।”
তুলি প্রণয়ের উত্তর শুনে আঘাত পেল মনে। থতমত খেয়ে বলল,” মানে? আপনার ইচ্ছামতোই সব করবেন নাকি? আমি যে সারারাত অপেক্ষায় ছিলাম..”
প্রণয় রুক্ষ স্বরে বলল,” তুমি যেমন নিজের ইচ্ছায় সবকিছু করো, অন্যকারো কথা ভাবার সময় নেই তেমনি আমিও ঠিক করেছি এখন থেকে নিজের ইচ্ছায় সব করবো।”
তুলি অবাক হয়ে কিয়ৎক্ষণ তাকিয়ে থেকে বলল,” এই কথার মানে কি?”
” মানেটা তুমি ভালো করেই বুঝেছো।”
তুলি করুণ গলায় বলল,” আমি বুঝতে পেরেছি আপনি কেন এমন করছেন। যদি ভেবে থাকেন এতে আমার হাত ছিল তাহলে ভুল ভাবছেন। আমিও ততটাই কষ্ট পেয়েছিলাম যতটা কষ্ট আপনি পেয়েছেন।”
প্রণয় অবজ্ঞাসূচক হাসি হেসে বলল, ” তুমি কষ্ট পেয়েছো? সিরিয়াসলি? কিন্তু কেন? তোমার তো খুশি হওয়ার কথা! এটাই তো চেয়েছিলে তুমি।”
তুলি দুইপাশে মাথা নেড়ে বলল,” একদম না। আমি এটা কেন চাইবো?”
প্রণয় চোয়াল শক্ত করে বলল,” মিথ্যা বোলো না৷ তুমি না চাইলে এটা হলো কিভাবে?”
তুলি কাতরভাবে বলল,” এক্সিডেন্ট। বিশ্বাস করুন, এক্সিডেন্ট ছিল। আমি ইচ্ছে করে কিছুই করিনি। আই সুয়্যার! আমার কথা বিশ্বাস না হলে রাইফাকে জিজ্ঞেস করুন। আমি সেদিন রাতে টিনাদের বাড়ি থেকে ফিরছিলাম। মাঝরাতে আজমীর ভাইয়ের সাথে দেখা হলো। আমি খুব ভয় পেয়েছিলাম। মামীর কাছে শুনেছি ভয় পেলে নাকি মিসক্যারেজ হয়। দেখুন সেটাই হলো। ”
” এইসব কথা তো তুমি আমাকে আগে বলোনি!”
তুলি অপরাধীর মতো মাথা নিচু করল। চাপা কণ্ঠে বলল,” আপনি রেগে যেতেন সেজন্য বলিনি।”
তারপর মাথা তুলে আকুতির স্বরে বলল, “ভুল হয়েছে আমার। স্যরি।”
প্রণয় কঠোর ভঙ্গিতে বলল,” এতোরাতে তুমি আমাকে না জানিয়ে টিনাদের বাড়িতে কেন গেছিলে? আমাকে বলতে পারতে আমি নিয়ে যেতাম তোমাকে। বার-বার সতর্ক করেছিলাম সাবধানে থেকো। কিন্তু তুমি আমার একটা কথাও পাত্তা দাওনি। সব আমার থেকে লুকিয়েছো। আর শেষমেষ এইটা হলো। এর জন্য কে দায়ী তুলি?”
” হ্যাঁ আমিই দায়ী। স্বীকার করছি তো। আমারই সব দোষ। কিন্তু বিশ্বাস করুন সব ঠিক হয়ে যাবে।”
” তাই? কিভাবে ঠিক হবে সব?”
তুলি মিষ্টি করে হেসে বলল,” আমরা আবার বাচ্চা নিবো।”
প্রণয় সঙ্গে সঙ্গে উঠে দাঁড়িয়ে বলল,” এটা অসম্ভব।”
তুলির চেহারা দপ করে নিভে গেল। বিস্মিত হয়ে বলল,” অসম্ভব কেন?”
প্রণয় ধারালো কণ্ঠে বলল,” তোমার উপর আমার আর ভরসা করতে ইচ্ছে করছে না। তাছাড়া তুমি যেমন চেয়েছিলে তেমনই তো হয়েছে! এখন তুমি নিজের ক্যারিয়ারে ফোকাস করার অনেক সময় পাবে। মন দিয়ে পড়াশুনা করতে পারবে। এক্সট্রা কোনো ঝামেলা নেই, প্রেশার নেই। দেখো তোমার মনের ইচ্ছাই পূরণ হয়ে গেছে। কংগ্রেটস!”
” প্রণয়, এমন করবেন না প্লিজ। আমি সত্যিই চাই আমাদের একটা বেবি হোক।”
” কিন্তু আমি আর চাই না।”
তুলিকে আর কিছু বলার সুযোগ না দিয়েই প্রণয় চলে গেল। তুলি নিথরের মতো বসে রইল কিছুক্ষণ। তার চোখ দিয়ে টপটপ করে গড়িয়ে পড়ছিল জল।
_________
বাইরে অনেক শোরগোল হচ্ছে। তুলি গোসলে ঢুকেছিল৷ শাওয়ার বন্ধ করে বাইরের কথা শোনার চেষ্টা করল। কয়েকটি পুরুষ কণ্ঠ কানে আসছে। প্রণয়ের কণ্ঠও শোনা যাচ্ছে। বাড়িতে কোনো মেহমান এসেছে নাকি? আর মেহমান এলে তো বেডরুমে আসার কথা না। তুলি তাড়াহুড়ো করে গোসল শেষ করে বের হতেই দেখল কাঠের দোলনাটা সরিয়ে ফেলা হয়েছে। পুরো ঘর বাচ্চাদের খেলনা, জামাকাপড় দিয়ে ভর্তি ছিল। এখন এসব কিছুই নেই। দেয়ালে বাচ্চাদের ছবি টানানো ছিল। সেগুলোও দেখা যাচ্ছে না। প্রণয়কে দরজার বাইরে দাঁড়ানো দেখে তুলি দ্রুত ছুটে গেল।
” এসব কি হচ্ছে প্রণয়? বাবুর জিনিসপত্র সব কোথায়?”
প্রণয় তীক্ষ্ণ কণ্ঠে বলল,” যার কোনো অস্তিত্বই নেই, তার জিনিস রেখে কি হবে?”
তুলি সিক্ত দৃষ্টিতে তাকাল,” মানে? এইজন্য আপনি সব সরিয়ে ফেলবেন নাকি?জিনিসগুলো কোথায় রেখেছেন? স্টোর-রুমে? নিয়ে আসুন প্লিজ! নাহলে আমিই আনছি।”
তুলি দৌড়ে যেতে নিলেই প্রণয় তার হাত চেপে ধরে ভারী গলায় বলল,” স্টোর-রুমে কিছু নেই। আমি সব দান করে দিয়েছি।”
তুলি হতবাক হয়ে প্রশ্ন করল,” দান করেছেন মানে? কাকে দান করলেন?”
” যাদের প্রয়োজন তাদের। আমাদের এসবের কোনো প্রয়োজন নেই।”
তুলি রাগী দৃষ্টিতে চাইল। ক্ষীপ্ত কণ্ঠে বলে উঠল,” আমাদের প্রয়োজন নেই মানে? এমনভাবে বলছেন যেন আর কখনও আমাদের বেবি হবে না! আপনি শখ করে জিনিসগুলো কিনেছিলেন না? তাহলে কেন দিয়ে দিলেন? এগুলো তো ভবিষ্যতে আমাদের কাজেও লাগতে পারে।”
প্রণয় হালকা ঝুঁকে এসে বলল,” এগুলো আমাদের আর কখনোই কাজে লাগবে না তুলি।”
” কেন?”
” ধরো আমাদের আজকেই ডিভোর্স হয়ে গেল। তাহলে এসব আর কেন কাজে লাগবে?”
” কি বলছেন আপনি এসব? আমাদের ডিভোর্স কেন হবে?”
” হতেও তো পারে! ভবিষ্যতের কথা বলা যায় না।”
তুলি স্তব্ধ হয়ে চেয়ে রইল। তার বিশ্বাস হচ্ছে না। প্রণয় তার হাত ছেড়ে দিয়ে চলে যাচ্ছে। কি নিষ্ঠুরভাবেই না সে ‘ডিভোর্স’ শব্দটা উচ্চারণ করে ফেলল। তুলির মাথার শিরা দপদপ করছে। বুকে চিনচিনে ব্যথা! প্রণয় কি সত্যিই তাকে ডিভোর্স দিবে? দিতে পারবে?
চলবে