#আসক্তি Mr_Arrogant_4
#পর্ব_৩২
#Writer_Sanjana_Shabnam_Fahmida
‘তোমার শুকরিয়া আদায় করার মতো ভাষা নেই আমার কাছে অপূর্ব। একমাত্র তোমার জন্য আজ আমি ভাইজানের বিরুদ্ধে কেসটা জিততে পেরেছি।আর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ আমার ভাই তার অপরাধের শাস্তি পেয়েছে। থ্যাংক ইউ সো মাচ্।’ – খুব বিনয় স্বরে কথা গুলো বললেন শফিক সাহেব।
অপূর্ব একটা সাদা রুমাল দিয়ে নিজের কপালের কাঁটা দিকটা চেপে ধরে নিজের গাড়িতে বসে ছিল, শফিক সাহেবের কথা গুলো শুনে মৃদু হেঁসে রুমালটা কপাল থেকে নামিয়ে হাতে পেঁচিয়ে মাথা উঁচিয়ে শফিক সাহেবের দিকে তাকিয়ে বলে ও, ‘এখানে শুকরিয়া আদায় করার মতো কিছুই দেখছি না আমি মিস্টার খন্দকার। আমি শুধু আমার কাজ করেছি, কারো উপকার না। আর সবাই জানে অপূর্ব শেখাওয়াত ফ্রিতে কিছুই করে না, আশা করি আপনার আমাদের ডিলের কথা মনে আছে।’
শফিক সাহেব হেসে বললেন, ‘ অবশ্যই মনে আছে। ডোন্ট ওয়ারি তোমার কাজ হয়ে যাবে।’
‘গুড! আরেকটা কথা, গাড়িটা রিপেয়ার করে আমার বাসায় পৌঁছে দিবেন। অ্যাকচুয়ালি আমার এখন হসপিটালে যাওয়া উচিত মনে হচ্ছে। – আঙ্গুল তুলে কপালের দিকটায় তাক করে বলল অপূর্ব।
‘সমস্যা নেই আমি পৌঁছিয়ে দিব, ডোন্ট ওয়ারি।’ – বললেন শফিক সাহেব।
অপূর্ব আর কোনো কথা বাড়লো না। গাড়ির গ্লাসটা উঠিয়ে গাড়ি স্টার্ট দিয়ে চলে যায় ও।
অপূর্ব যেতেই শফিক সাহেব নিজের গলার টাইটা ঢিলে করে জোরে হাঁফ ছাড়লেন, তারপর বিরবির করে বলতে শুরু করলেন – ‘অপূর্ব শেখাওয়াতকে হ্যান্ডেন করা সত্যিই কঠিন।’
অন্যদিকে,
রওশন একটা ফাইল পড়ছে আর হাঁটছে আর সুবহা ওর পিছু পিছু যাচ্ছে। নীলের জন্মদিনের পার্টির জন্য কিছু প্ল্যানিং করেছে সুবহা আর সেগুলোর জন্যই পারমিশন নেওয়ার জন্য রওশনের পিছু পিছু ঘুরছে ও।
কিন্তু সুবহার পরিকল্পনা গুলো যেন রওশন ইচ্ছে করে এভয়েড করছে, ওকে কিছু বলার সুযোগই দিচ্ছে না ও। রওশনের এমন কাজে বিরক্ত হচ্ছে সুবহা, রাগও হচ্ছে ওর।
‘রওশন শোনেন তো! আপনি এভাবে আমাকে এভয়েড করছেন কেন? – একপ্রকার চেঁচিয়ে উঠল সুবহা।
রওশন থেমে গেল। ফাইলটা ঠাস করে বন্ধ করে রেগে পেছনে ঘুরে ও। হঠাৎ রওশনের এমন রাগি লুক দেখে সুবহা ঘাবড়ে যায়, দুই তিন কদম পিছিয়ে যায় সুবহা, জোরপূর্বক ঠোঁটে হাসি টানার চেষ্টা করে মিনমিনিয়ে বলতে শুরু করে ও – ‘স্যরি! আমি একটু জোরেই বলে ফেলেছি।’
‘একটু না অনেক জোরে বলে ফেলেছো।’ – দু হাত বুকে ভাঁজ করে বলল রওশন।
সুবহার মুখটা ছোট হয়ে যায়, অপরাধীর মতো মাথা নিচু করে নেয় ও।
রওশন একটা গভীর নিঃশ্বাস ফেলে তারপর শান্ত স্বরে বলে – ‘সুবহা তুমি ডিজনি থিম নিয়ে নীলের বার্থডে পার্টি থ্রু করতে চাচ্ছো? আর ইউ সিরিয়াস? তুমি হয়ত ভুলে গেছ যে নীল ছেলে, মেয়ে না। ওর একদমই এই থিম পছন্দ হবেনা।’
রওশনের কথা শুনে সুবহা ভাবনায় পড়ে যায়। সত্যিই তো বলছে রওশন। ডিজনি থিম অবশ্য মেয়েদের জন্য পারফেক্ট ছেলেদের জন্য না।
সুবহা মন খারাপ করে নেয়, তারপর আহত স্বরে বলে – ‘আমার তো খেয়ালই ছিল না!’
রওশন সুবহার গোমড়া মুখের দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থাকে, ঠোঁটে সড়ু মুচকি হাসি দেখা যাচ্ছে রওশনের।
হয়ত কিছু একটা ভেবে হাসি পাচ্ছে ওর, কিন্তু কথাটা মনেই রাখল রওশন প্রকাশ করল না।
সুবহা মাথা উঁচু করে রওশনের দিকে তাকাতেই রওশনের হাসিটা ওর নজর কাড়ে। অবাক দৃষ্টি নিয়ে তাকায় সুবহা রওশনের দিকে। রওশনের ঠোঁটে হাসি খুব কমই দেখা যায় তাই এই মুহূর্তটা যেন একদম রেয়ার সুবহার কাছে। অবাক ভাবমূর্তি নিয়ে জিজ্ঞাসা করে সুবহা, ‘রওশন আপনি হাসছেন?’
সুবহার কথাটা কানে আসতেই সাথে সাথে রওশন আবারো তার গোমড়া ফেস মোড অন করে নেয় আর বলে উঠে – ‘কই নাতো! ভুল দেখেছো তুমি। আর পার্টির দায়িত্ব তোমার তাই নীলের পছন্দ অনুযায়ী সবকিছু করা তোমার কাজ। আমাকে এ বিষয়ে একদম ডিসটার্ব করবে না।’
কথাটা এক নাগাড়ে বলেই রওশন হনহনিয়ে দ্রুত বাসা থেকে বেরিয়ে যায়। সুবহা এখনো হতভম্ব হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। ও নিশ্চয়ই চোখে ভুল দেখেনি। কিন্তু কী এমন কথা ভেবে রওশনের মুখে হাসি ফুটলো সেটা ভাবতে লাগল সুবহা।
এইদিকে,,
কলেজের সামনে গাড়ি থামিয়ে রেখেছে ওহি। বাইরে বের হচ্ছে না ও। ভয় হচ্ছে ওহির যদি আভি আশেপাশে থাকে আর ও বের হতেই ওকে ধরে ফেলে। এই ভয়ে গাড়ি থেকে বের হওয়ার সাহস টুকু পাচ্ছে না বেচারি। বাসা থেকেও বের হওয়ার সময় আশেপাশে দেখে লুকিয়ে বের হয়েছে ও। আজ যেন ওহি স্পষ্ট বুঝতে পারছে কেউ যদি স্টক করে কেমন অনুভূতি হয়।
এতদিন ও আভির সাথে লুকোচুরি খেলে ওর পিছু করেছে আর আজ আভি এই কাজটা করছে।
ওহি টাইম চেক করে ক্লাসের সময় হয়ে গেছে আর বেশিক্ষণ বসে থাকা যাবে না। তাই বাইরে ভালো করে চোখ বুলিয়ে বের হওয়ার জন্য দরজা খুলতে নিলেই হঠাৎ পাশের সিটের দরজা খুলে আভি ভেতরে বসে পরে।
ওহি পুরো শকড্। আভি আচমকা কোথা থেকে আসল আর এসেই কিভাবে ওর গাড়ি খুঁজে পেল। আজ ওহি অন্য গাড়ি নিয়ে বের হয়েছে যেন আভি ওকে চিনতে না পারে কিন্তু এতেও লাভ হলো না। সেই ওকে খুঁজেই নিল আভি।
‘গুড মর্নিং!’ – ওহির দিকে তাকিয়ে বড় একটা হাসি নিয়ে বলল আভি।
ওহি কি বলবে ভেবে পাচ্ছেনা। ও এমনিতেই আভিকে দেখে ভয়ে জড়সড় হয়ে আছে। তার উপর আভির হাসি যেন ওকে এবার কাঁদিয়েই দিবে।
ওহি নিজের ভয়টা আড়াল করে সাহসী ভাব নিয়ে আভির দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করে, ‘আপনি আমাকে খুঁজে বের করলেন কিভাবে?’
আভি হেসে গাড়ির দরজা লক করে দু হাত বুকে গুঁজে সিটে হেলান দিয়ে আরামে বসে বলতে শুরু করে – ‘আমি আভি রায়জাদা আমার ডিকশনারিতে ইম্পসিবল ওয়ার্ড বলতে কিছুই নেই।’
ওহি আভির কথায় কপাল কুঁচকে বলে, ‘ কোথা থেকে কিনেছেন এমন ফালতু ডিকশনারি?’
‘কিনি নি বরং তোমার বাবার কেবিন থেকেই চুরি করেছি।’ – সাথে সাথে পাল্টা উত্তর দিল আভি।
ওহি আভির কথা শুনে নাক ফুলিয়ে রেগে বলে, – ‘এত বড় হয়ে পিচ্চি একটা মেয়ের পিছু করতে লজ্জা হয়না?’
আভি ওহির কথায় ওর দিকে এগিয়ে আঙ্গুল তুলে ওহির কপালে টোকা দিয়ে বলে, – ‘পিচ্চি হয়ে এতো বড় একটা ছেলের পিছু করতে তোমার লজ্জা হয়নি?’
‘আপনি জানেন না আমার বাবা কে?’ – হুমকি স্বরে বলে ওহি।
আভি ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে জবাব দেয়, ‘ঢাকা ব্রাঞ্চের সিবিআই হেড, আই নো অ্যান্ড আই ডোন্ট কেয়ার।’
আভির এমন বেপরোয়া কথা শুনে আর কিছু বলার জন্য শব্দ খুঁজে পায় না ওহি। সত্যিই আভিকে শব্দের মাধ্যমে হারানো খুব কঠিন। সব কথার পাল্টা জবাব ওর ঠোঁটে আগে থেকেই এসে থাকে।
অন্যদিকে,
রওশন অফিসের পার্কিং লটে গাড়ি থামায়। গাড়ি থেকে নামতেই হুড়মুড়িয়ে একজন ওর গাড়ির সামনে চলে আসে। রওশন কিছুটা আশ্চর্য হয় লোকটাকে দেখে।
রওশন ভালো করে পর্যবেক্ষণ করে লোকটাকে। কিন্তু কিছু ভেবে উঠার আগেই আচমকা ঘটনাচক্রে লোকটা পেছন থেকে চা*কুর মতো একটা ধারালো হা*তি*য়ার বের করে রওশনের উপর হাম*লা করে বসে।
হঠাৎ পরিস্থিতি এমন হয়ে গেল যেন রওশন ভাবারও সময় পায়নি। লোকটা রওশনের একদম নিকটে আর তার হাতের চা*কুটা থেকে রওশনের র*ক্ত চুঁইয়ে পড়ছে।
রওশন রক্তিম দৃষ্টি নিয়ে তাকিয়ে তার দিকে, হয়ত লোকটি তার পরিচিত কেউ। আর তার কাছ থেকে এমন কিছু মোটেও আশা করে নি রওশন। লোকটার হাত সহ পুরো শরীর কাঁপছে। চোখে মুখে ভয়ঙ্কর ধরনের ভয়ের ছাপ। অপরাধবোধও কাজ করছে তার দৃষ্টিতে।
অয়ন দূর থেকে ঘটনাটা দেখেই দৌড়ে আসে। কাঁপা কাঁপা হাত থেকে চা*কুটা নিচে পড়ে গেল লোকটার।
এক কদম দু কদম করে লোকটি পেছাতে পেছাতে দৌড় দেয়। অয়ন দৌড়ে রওশনের সামনে আসে, যেখানে রওশন এখনো বিস্ময় দৃষ্টি নিয়ে লোকটির যাওয়ার পানে তাকিয়ে আছে।
ওর পেট থেকে রক্ত চুঁইয়ে চুঁইয়ে পড়ছে কিন্তু সেখানে ওর কোনো ভ্রুক্ষেপই নেই।
‘ব বস আর ইউ ওকে? ওহ গড, এটা…’ অয়ন ঘাবড়ে আছে। ও লোকটার পিছু করার জন্য যেতে নিলেই রওশন তাকে থামায়,
‘ডোন্ট।’ – অয়নের হাত ধরে আটকায় রওশন।
‘লেট হিম গো…’ – ঘনঘন নিশ্বাস ফেলতে ফেলতে বলে রওশন।
‘কিন্তু বস…’ অয়ন আর কিছু বলবে তার আগেই রওশন নিচে বসে পড়ে। শরীরে শক্তি যেন ফুরিয়ে আসছে। দাঁড়িয়ে থাকতে পারছে না আর বেশিক্ষণ।
অয়ন দ্রুত সামলায় রওশনকে। আশেপাশে কোনো মানুষ নেই। অবশ্য পার্কিংয়ে কোনো মানুষ না থাকাটাই স্বাভাবিক। অয়ন নিজের ফোন বের করে গার্ডদের ডাকায়।
রওশন পড়ে থাকা চা*কুটা তুলে নেয়, চা*কুটা ওর পরিচিত। ওর আর বুঝতে বাকি রয়নি যে কার কথায় লোকটি ওর উপর হাম*লা করেছে।
To be continued….