আসক্তি Mr_Arrogant_4 #পর্ব_৩৩

0
399

#আসক্তি Mr_Arrogant_4
#পর্ব_৩৩
#Writer_Sanjana_Shabnam_Fahmida

কপালে ব্যান্ডেজ করা শেষ করে কিছু সময়ের জন্য অপূর্বকে রেস্ট করতে বলে বের হয় ডক্টর। কিন্তু ক্লিনিকের মত একটা জায়গায় শুয়ে রেস্ট করার আইডিয়াটা যেন একদমই পছন্দ হলো না অপূর্বর।

মাথায় তেমন একটা আঘাত পড়েনি। কপালটা শুধু হালকা ফেটে রক্ত বের হয়েছিল, আসলে বলতে গেলে অপূর্ব ভালোই বুঝতে পারে কতটুকু জোরে আঘাত করলে কতটুকু ক্ষতি হবে। তাই সে অনুযায়ীই নিজের উপর আঘাত করে ও, কারন আজকে এমন ঘটনা প্রথম ঘটেনি বরং অরহর প্রায়ই এ ধরণের ঘটনা ঘটাচ্ছে অপূর্ব। হয়ত নিজের সাথে নয়ত অন্যের সাথে।

বিষয়টা হাস্যকর হলেও সত্য যে, অপূর্ব নিজের জিত হাসিল করার জন্য যে কোনো কদম উঠাতে পারে। এমনকি নিজেকে সেটার জন্য আহত করতেও পিছপা হয় না ও।

ডক্টর চলে যেতেই উঠে বসে অপূর্ব। সাইড টেবিল থেকে ফোনটা তুলে উঠে দাঁড়ায় ও। জুতো পড়ে কেবিন থেকে বেরিয়ে আসে। কিছুটা দূর আসতেই একটা কেবিনের সামনে অয়নকে দেখতে পেয়ে থমকে যায় ও।

চিন্তিত অয়ন কেবিনের বাইরে পায়চারি করছে। ওকে এখানে দেখে অপূর্ব কিছুটা অবাক হয়। কিন্তু সাথে সাথেই আড়ালে লুকিয়ে পড়ে ও।

‘রওশন রায়জাদার রাইট হ্যান্ড উপ্স এসিস্ট্যান্ট অয়ন না এটা?’ – অপূর্ব আবারো অয়নের দিকে তাকিয়ে ভালো করে নিশ্চিত হয়। তারপর আবার লুকিয়ে পরে।

‘ইয়াহ, এ তো সে’ই। কিন্তু ও এখানে কেন?’ – অপূর্ব দূর থেকেই অয়নের উপর নজরদারি করতে শুরু করে।

এর মধ্যেই ডক্টর কেবিন থেকে বেরিয়ে আসে। অয়ন হন্তদন্ত হয়ে ডক্টরকে ঘিরে ধরে বলতে শুরু করে, ‘ডক্টর বসের অবস্থা কেমন? উনি ঠিক আছেন তো?’

ডক্টর মাথা নাড়িয়ে অয়নকে আস্বস্ত করে বলতে শুরু করে, ‘মিস্টার রায়জাদা এখন আউট অফ ডেঞ্জার আছেন। ডোন্ট ওয়ারি। ছু*রির আঘাত একদম সাইডে লাগার কারণে বড় ধরনের ক্ষতি হয়নি, কিন্তু র*ক্ত প্রচুর গেছে। উনি বিপদমুক্ত থাকলেও র*ক্ত যাওয়ার ফলে অনেক দূর্বল হয়ে পরেছেন। তাই উনাকে ব্লা*ড চড়াতে হবে।’

‘চড়াতে হবে তাহলে আপনি অপেক্ষা করছেন কিসের? ডু ইট রাইট আওয়ে।’ – বিচলিত হয়ে বলল অয়ন।

কিছুক্ষণ ভেবে বলতে শুরু করেন ডাক্তার সাহেব, ‘মিস্টার রায়জাদার ব্লা*ড গ্ৰুপটা অনেক রেয়ার, আর‌ এই মুহূর্তে আমাদের ক্লিনিকে সেটা এভেলেবল‌ নেই। কিন্তু আমরা অন্য ক্লিনিকে যোগাযোগ করেছি, তারা খুব শীঘ্রই পাঠাচ্ছে ব্লা*ড। আপনি শান্ত হয়ে বসুন।’

অয়নকে বুঝিয়ে সুঝিয়ে ডাক্তার সাহেব চলে আসেন। অপূর্ব আড়াল থেকে তাদের সব কথাই শুনতে পায়। ওর বুঝতে বাকী নেই যে রওশনের কিছু একটা হয়েছে যার ফলে ও হসপিটালে এডমিট।

অপূর্ব দ্রুত ডাক্তারের পিছু যায় তাকে কিছু জিজ্ঞেস করার জন্য। তখনই একজন নার্স এসে পড়ে, সে ডাক্তার সাহেবকে জানায় যে যেই হসপিটাল থেকে ব্লা*ড আনার কথা ছিল তারা কল করে জানিয়েছে কিছু কারণবশত তারা ব্লা*ড পাঠাতে পারবে না। তার কথা শুনে ডাক্তার সাহেব বিপাকে পড়ে যান, শেষ মুহূর্তে এখন কোথা থেকে ব্লা*ড এরেঞ্জ করবে ভেবে পাচ্ছে না সে।

অপূর্ব পেছন থেকে তাদের সব কথাই শুনতে পায়। রওশনের ব্লা*ড গ্ৰুপ কী সেটাও জানতে পারে ও। বিষয়টা বেশ সময় নিয়ে ভাবে অপূর্ব। ফোনটা‌ হাতে ঘুরাতে ঘুরাতে বিরবির করে বলতে শুরু করে, ‘হেল্প করব? কী করব না? করব? কী করব না? করব? কী করব…’ – ফোনটা ঘোরানো বন্ধ করে দেয় ও। ঠোঁটে হালকা সড়ু মুচকি হাসি টেনে পেছন থেকে ডাক্তারের উদ্দেশ্য বলে উঠে ও ‘আমি ব্লা*ড দিতে চাই!’

অপূর্বর কথা কানে যেতেই ডাক্তার সাহেব পেছন ফিরে তাকান। অপূর্ব বড় একটা হাসি দিয়ে ডক্টরের সামনে এসে দাঁড়িয়ে বলে, ‘রওশন রায়জাদাকে ব্লা*ড আমি দিতে‌ চাই।’

ডাক্তার সাহেব অপূর্বর কপালের ব্যান্ডেজের দিকে লক্ষ্য করে বলতে শুরু করেন, ‘স্যরি বাট আপনি ব্লা*ড দিতে পারবেন না। আপনি নিজেই আহত, আর আপনার শরীর থেকে এমনিতেই অনেক ব্লা*ড গেছে।’

‘কিন্তু আমি দিতে চাই’ – স্পষ্ট ভাষায় বলল অপূর্ব।

ওর এমন ব্যবহারে ডাক্তার সাহেব বিরক্ত হলেন, অপূর্বকে বোঝানোর জন্য ঠান্ডা ভাবে বললেন – ‘দেখুন এটা নিয়মের বাইরে। বোঝার চেষ্টা করুন।’

‘নিয়ম তৈরি করাই হয় ভাঙ্গার জন্য। আমি যেহেতু বলেছি ব্লা*ড আমি দিব তো আমিই দিব।’ – অপূর্ব নিজের কথায় একদম স্ট্রিক্ট হয়ে থাকে।

ডাক্তার সাহেব হাজারটা বুঝিয়েও ব্যর্থ হন, এক পর্যায়ে বিরক্ত হয়ে বলেন তিনি – ‘আপনি রওশন রায়জাদার কী হোন যে তাকে ব্লা*ড দেওয়ার জন্য এতো উঠে পড়ে লেগেছেন।’

অপূর্ব হেসে বলে, ‘আমি রওশন রায়জাদার কেউ নই। না বন্ধু না শত্রু।

‘তাহলে অযথা তার‌ জন্য এতো চিন্তা আর কেয়ারের কারণ কী?’ – প্রশ্ন করলেন ডাক্তার।

‘অপূর্ব শেখাওয়াত ফ্রিতে কিছুই করে না। না কারো চিন্তা আর না কারো কেয়ার। আমি রওশন রায়জাদার হেল্প এজন্য করছি কারণ তার কাছে আমাকে দেওয়ার জন্য খুব গুরুত্বপূর্ণ কিছু আছে।’

অপূর্বর অদ্ভুত কথার মানে কিছুই বুঝতে পারে না ডাক্তার, কিন্তু তার‌ কথায় এতটুকু স্পষ্ট যে কোনো এক কারণেই সে রওশনের প্রতি এতটা সহানুভূতি প্রকাশ করছে। হয়ত এর পেছনে তার নিজের ব্যক্তিগত কোনো মতলব লুকিয়ে আছে।

এইদিকে,

ওহি কিছুক্ষণ আগেই কলেজে ঢুকেছে। ওকে বেশ কিছুক্ষণ ভয় দেখিয়েছে আভি। অনেক ভালো জব্দ করতে পেরেছে ওহিকে ও। ক্লাসের সময় হয়ে যাওয়য় ওকে যেতে দিয়েছে আভি, কারণ ও চায়নি ওর জন্য ওহির ক্লাস মিস হোক।

এতকিছুর পর ওহিযে আর কখনো ওর পিছু করবে না এতটুকু সিউর হয়েছে আভি। ও এটাই চাইছিল যে ওহি ওর পিছু না করে।

যদিও ওহির মুখ থেকে এই সত্যটা বের করতে পারেনি আভি যে ওহি কেন ওকে ফলো করছিল কিন্তু ভবিষ্যতে যে ও এমনটা আর করবে না এতটুকু নিশ্চিত হয়েছে ও।

অন্যদিকে,

নীলের জন্মদিনের জন্য খুব সুন্দর করে বাড়ি ডেকোরেট করেছে‌ সুবহা। রোবটিক থিমে সব কিছু করেছে ও।

লিভিং রুমটা পুরো রোবটল্যান্ডে পরিনত হয়েছে। নীল সিঁড়ির উপর দাঁড়িয়ে দেখছে সুবহাকে। ওর মন খারাপ। কিন্তু কেন সেটা অজানা।

ও খুব মনোযোগ সহকারে পুরো বাড়িটা দেখছে, সুবহাকে দেখছে, বাড়ির দেয়ালে ঝুলতে থাকা‌ ছবি গুলো দেখছে। সুবহা ওর জন্য কত পরিশ্রম করছে সেটাও দেখছে। কিন্তু আজ নীলের চোখে সে প্রফুল্লতা দেখা যাচ্ছে না যেটা সব সময় থাকে। মনে হচ্ছে ওর মনের ভেতর অনেক কিছু চলছে যা ও প্রকাশ করতে চেয়েও পারছে না।

কাজ করতে করতে সুবহার দৃষ্টি যায় নীলের দিকে। একা দাঁড়িয়ে কিছু একটা ভাবছে। সুবহা আলতো পায়ে সিঁড়ি বেয়ে উপরে উঠে নীলের পেছনে গিয়ে দাঁড়ায়।

তারপর আচমকা ওকে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরে আদুরে গলায় বলতে শুরু করে, ‘বার্থডে বয় একা একা দাঁড়িয়ে কী করছে?’

‘কিছু না তো!’ – পেছন ফিরে স্মিথ হেসে বলল নীল।

‘তাহলে মুড অফ কেন তোমার?’ – নীলের গাল টেনে বলল সুবহা।

‘কই নাতো, আমার মুড একদমই অফ না।’ হালকা হাসলো নীল, তারপর চারপাশে চোখ বুলিয়ে বলল – ‘রওশন ব্রো এখনো আসেনি? কখন আসবে?’

‘আমিও সেটাই ভাবছি, ফোনও করেছি বাট রিসিভ করছে না। তুমি চিন্তা করো না হয়ত জ্যামে আটকে গেছে। এসে পরবে টাইম মত।’ – নীলকে আস্বস্ত করে বলে সুবহা।

‘আই মিস হিম!’ – গোমড়া মুখ করে বলল নীল।

‘মি টু!’ – আনমনে কথাটা বলে চুপ করে যায় সুবহা।

সুবহা খেয়াল করে যে নীলের মন খারাপ হচ্ছে তাই কথা ঘুরিয়ে বলতে শুরু করে ও, ‘নীল দেখ টাইম হয়ে যাচ্ছে, গেস্টরা চলে আসবে। তুমি গিয়ে রেডি হয়ে আসো চটজলদি আমি তোমার রওশন ব্রোকে ফোন দিয়ে বলছি তাড়াতাড়ি আসতে। বলব নীল তাকে অনেক মিস করছে। ঠিক আছে না?’

‘ওকে!’ – নীল সুবহার কথা মেনে মাথা নাড়িয়ে তার রুমে চলে যায়।

নীল‌ যেতেই সুবহা রওশনের ফোনে কল দেয়, কিন্তু এবারো কল রিসিভ হচ্ছে না। ও অয়নের নাম্বারেও কল করে কিন্তু সেও রিসিভ করছে না কল।

‘রওশন কোথায়? কলও ধরছে না। টাইম হয়ে যাচ্ছে তো। আই হোপ রওশন সময় মত চলে আসবেন।’

To be continued…….

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here