সেই তুমি?
পর্ব -৬
Samira Afrin Samia(nipa)
ইশিতা কাঁদতে কাঁদতে কয়েক পা এগিয়ে ইফানের কাছে এসে
— ইফান এসব কি বলছো তুমি?
ইফান ইশিতার কথা শুনে ইশিতার দিকে তাকিয়ে
— ওহ ইশিতা ডার্লিং তুমি ও এসে গেছো। তুমি আসতে এতো লেট করলে কেন? আমাদের পার্টি দেওয়া তো প্রায় শেষ। আচ্ছা এসেই যখন গেছো তাহলে আসো আমাদের সাথে জয়েন করো।
— তুমি এতক্ষণ এসব কি বলছিলে?
— কি বলছি তুমি শুনো নি। তাহলে আবার প্রথম থেকে বলতে হবে সব কিছু।
এটা বলে ইফান সহ বাকি সবাই হাসতে লাগলো।
রিহা ইফানের পাশে এসে ইফানের সাথে ঘেঁষে দাঁড়িয়ে
— এভাবে বলছো কেন জান। দেখছো না মেয়েটার কান্না করছে। তুমি তো বলেছিলে ওর চোখ কখনও এক ফোঁটা পানি আসতে দিবে না। আরো কি কি যেন বলেছিলে তা ঠিক মনে পড়ছে না।
— ওহ মনে ই তো ছিল না। থেংক্স
রিহা বেবী মনে করিয়ে দেওয়ার জন্য।
রাফি ইফান কে বলে উঠলো
— দোস্ত তুই তো মাল টা কে রিজেক্ট করে দিলি। এখন কি আমাদের কে একটা চান্স দিবি?
— সিউর ওয়াই নট। এমনিতেই তো আমি এক জিনিস একবারের বেশি ব্যবহার করি না।
— তুমি আমার সাথে এমন টা করতে পারলে ইফান?
শুধু মাত্র প্রতিশোধ নেওয়ার জন্য আমার সাথে ভালোবাসার নাটক করেছো। আমি তোমাকে ওই দিন সবার সামনে একটা চড় মেরেছিলাম তুমি তার বদলে আমাকে সবার সামনেই হাজার টা চড় মারতে। তুমি শুধু একটা চড়ের প্রতিশোধ নেওয়ার জন্য আমার এতো বড় হ্মতি না করলেও পারতে। আমি তো তোমাকে বিশ্বাস করেছিলাম। তোমাকে ভালোবেসে ছিলাম। আর তুমি আমার বিশ্বাস নিয়ে এভাবে খেলা করেছো।
আমি তোমাকে কখনও হ্মমা করবো না ইফান।
ইফান ইশিতার কাছে এসে ইশিতার গাল চেঁপে ধরে
— তুই কি ভাবছিলি আমি এতো সহজে তোকে ছেড়ে দিব। এই ইফান চৌধুরীর সাথে ভার্সিটির কেউ উঁচু গলায় কথা বলেনি। আর তুই কি করছিলি। সবার সামনে আমার গালে থাপ্পড় মেরেছিলি। এতো সহজে কি করে ভুলে যেতাম আমি। আর তুই ভাবছিলি আমি সত্যি তোকে ভালোবেসে ফেলেছি, তুই কত বোকা রে। তোর মত একটা অনাথ কে আমি ভালোবাসবো। আমি কোথায় আর তুই কোথায় একবার ভেবে দেখেছিস। ছোট লোক কোথাকার।
— জান এসব মেয়েরা এমন ই মুখে যত বড় বড় কথা কাজে কিছু না। ও ভাবছে বড় লোকের ছেলেকে পটিয়ে নিয়েছে এখন সারা জীবন আরাম আয়েশে কাটাবে।
— রিহা তুমি তো একটা মেয়ে। নিজে একজন মেয়ে হয়ে অন্য একটা মেয়ের সর্বনাশ করতে তোমার একটু ও বাঁধলো না। একবার নিজেকে আমার জায়গায় বসিয়ে দেখতে।
— ওহ জাস্ট সেটআপ তুই আমার সাথে তোর তুলনা দিবি না। কি আছে তোর তুই নিজেকে আমার সাথে তুলনা দিতে আসছিস। আমি তোর মত ছোট লোক না।
ইশিতা ইফানের কাছে গিয়ে ইফানের হাত ধরে
— দেখো ইফান এসব নাটক বন্ধ করো।আমি খুব ভালো করে জানি তুমি আমার সাথে এক্টিং করছো। সবাই কে নিয়ে আমাকে বোকা বানিয়ে মজা নিতে চাইছো। তুমি ই তো বলেছিলে তুমি আমাকে ভালোবাসো আমাকে বিয়ে করবে। তোমার ফ্যামিলির কাছে আমাদের ব্যাপারে জানাবে।
ইফান এক ঝটকায় হাত ছাড়িয়ে নিয়ে
— তুই পাগল নাকি বোকা বুঝতে পারছি না। সব কিছু তোর চোখের সামনে পরেও তুই বুঝতে পারছিস না? আমি কোনো দিনও তোকে ভালোবাসিনি আর বাসবো ও না। ফ্যামিলি তো শুধু একটা বাহানা ছিল। আমি নিজেই তো তোকে বিয়ে করবো না। আমি শুধু তোকে বদনাম করতে চেয়েছিলাম। হ্যা প্রথমে তোকে আমার ভালো লাগতো কিন্তু তোর ওই ঘটনার পর থেকে শুধু তোকে ঘৃণা করি।
মনে কর সেদিনের কথা, যেদিন তুই সবার সামনে এভাবেই আমাকে অপমান করেছিলি।
ভার্সিটির প্রথম দিকে
ইফান আগে থেকেই এমন বেখেয়ালি ছিল। কোনো কিছু সিরিয়াসলি নিতো না। বড় ভাই ইয়াসের থেকে যত খুশী তত টাকা আনতো আর বন্ধুদের নিয়ে পার্টি করে বেড়াতো। সব বাজে দিক গুলো ইফানের মধ্যে থাকলেও একটা ভালো দিক ছিল। ইফান কোনো দিন মেয়েদের অসম্মান করতো না। এমনকি কোনো মেয়ের দিকে বাজে ভাবে তাকাবে তো দূর ভালো করে চেয়েও দেখতো না। রিহা ইফানের গার্লফ্রেন্ড। শুধু নাম মাত্র ই। ইফান কখনও রিহার প্রোপজাল এক্সেপ্ট করেনি। তার পরেও রিহা সব সময় ইফানের পিছন পিছন ঘুরতো। ইফান অনেক দিন রিহা কে না করে দিছে কিন্তু রিহা ইফানের কথা শুনে নি। যেভাবেই হোক রিহা ইফানের গার্লফ্রেন্ড এর নাম পেয়ে গেছে। আসলে রিহা কোনো দিন ইফান কে ভালোবাসে নি সব সময় ইফানের টাকার উপর ই রিহার লোভ ছিল। আর তাই রিহা ইফানের আশে পাশে কোনো মেয়েকে ঘেঁষতে দিতো না।
আজ ভার্সিটিতে ইশিতার প্রথম দিন। মামা খুব কষ্ট করে টাকা জোগাড় করে ইশিতা কে এই ভার্সিটিতে ভর্তি করিয়েছে। ইশিতার একটা ই লক্ষ্য জীবনে কিছু একটা করে মামা মামীর ঋণ শোধ করবে।ভার্সিটির দিন গুলো ইশিতার খুব ভালোই কাটছে। ইভার সাথে খুব ভালো বন্ধুত্ব হয়েছে ইশিতার। ইফান মাঝে মাঝে ভার্সিটিতে আসে আসলেও ক্লাসে আসে না ক্যাম্পাসে বসে আড্ডা দিয়ে আবার চলে যায়। একদিন ইফান ক্যান্টিনে বসে আছে ইশিতা ইভার সাথে কথা বলতে বলতে ক্যান্টিনের পাশ দিয়েই যাচ্ছিল।হঠাৎ করে ইশিতার উপর ইফানের চোখ চলে যায়। ইফান চেয়ারে বসা থেকে উঠে দাঁড়িয়ে গেল।
— এই রাফি দেখ তো ওই মেয়েটা কে?
— কোন মেয়েটা? ওই যে ওটা।
— আরে না। ওই যে দুইটা মেয়ে যাচ্ছে যে ব্লু ড্রেস আর হালকা বাদামী ড্রেস পড়া যে।
— ওহ ওদের কথা বলছিস। ওরা নতুন জুটি। কারো সাথে এতটা মিশে না দুজন সারাক্ষণ এক সাথে থাকে। আর পড়াশুনার প্রতি ভিষণ মনোযোগি।
— আমি তোর কাছে এসব জানতে চাইছি?
— আচ্ছা ওই যে ব্লু ড্রেস ওটা ইশিতা আর
রাফি সম্পূর্ণ কথা বলার আগেই ইফান রাফি কে থামিয়ে দিল
— চলবে। আমি ব্লু ড্রেস ওয়ালা টা কে ই চাই।
— মানে?
— বাংলা বুঝিস না? ইশিতা কে ভালো লাগছে। কথা বলিয়ে দে ওর সাথে।
পাশ থেকে রিহা ঝাজালো কন্ঠে
— ইফান আমি তোমাকে ভালোবাসি।
— তুমি আমাকে ভালোবাসো। আমি তো তোমাকে ভালোবাসি না। আমি অনেক বার তোমাকে না করে দিছি এর পরেও তুমি আমাকে ভালোবাসো এটা তোমার প্রব্লেম আমার না।
রাফি আমি কাল ইশিতার সাথে কথা বলবো তুই ব্যবস্থা করে রাখিস।এটা বলে ইফান উঠে চলে গেল। রিহা রাগে ফুঁসতে লাগলো।
— ইশিতা আমি তোকে দেখে নিব। আমি ইফান কে না পেলে তোকে ও পেতে দিবো না।
পরের দিন ইফান ঠিক টাইমে ভার্সিটি এসে গেল। ইফান কে এ সময়ে ভার্সিটিতে দেখে রীতিমত সবাই অবাক। কি হলো আজ ইফানের সবাই অবাক দৃষ্টি নিয়ে ইফানের দিকে তাকিয়ে দেখছে। ইফান ক্লাসে এসে সবার উদেশ্য করে
— হ্যালো গাইস। আমাকে এরকম ভাবে দেখে লাভ নেই। আমি কোনো ভুত না যে তোমরা সবাই আমাকে এভাবে দেখবে। আমি তোমাদের খুব পরিচিত ইফান চৌধুরী। সো আমাকে সবাই নরমাল ভাবেই দেখো।
ইশিতা আজ এখনও ক্লাসে আসেনি। একটু লেট হয়ে গেল আজ। ক্লাসের সব মেয়েরা ইফানের দিকে হা করে তাকিয়ে আছে। তাকিয়ে থাকা টা অস্বাভাবিক কিছু না। প্রথমত এর আগে ইফান কে কেউ কোনো দিন ক্লাসে দেখেনি।আর দ্বিতীয়ত ইফান কোনো হিন্দি ফিল্মের হিরোর থেকে কম না। সব মেয়েরাই ইফান বলতে পাগল। ইফান ইভার দিকে তাকিয়ে
— ওই লম্বা চুল ওয়ালী।
ইভা ইফান এর দিকে তাকিয়ে
— আমাকে বলছেন।
— হ্যা আপনাকে ই বলছি। এই ক্লাসে আপনার চুলের থেকে লম্বা আর কারো চুল হবে কি?
ইভা তো ইফানের মুখে নিজের চুলের প্রসংশা শুনে সাত আসমানে উঠছে। কেউ ইভার একটু প্রসংশা করলেই ইভা ঘলে যায়। ইফান রাফির থেকে আগেই সব কিছু জেনে নিছিলো। ইভা কে হাত করতেন পারলেই ইশিতার সাথে কথা বলতে পারবে
— হুম বলেন।
— আমরা ক্লাসমেট তাহলে আপনি করে না বলে তুমি করে বলি?
— আচ্ছা।
— তোমার ওই ফ্রেন্ড টা কই?
— কে ইশিতা?
— হুম।
— আসছে, রাস্তায় আছে হয়ত।
এটা বলার সাথে সাথেই ইশিতা ক্লাসে ঢুকলো। ইশিতা ইভার সাথে ইফান কে দেখে একটু অপ্রস্তুত ভাবে ইভার কাছে আসলো।
— ওই তো ইশিতা এসে গেছে। ইশিতা এদিকে আয়।
ইশিতা ইশারায় ইভাকে ইফানের কথা জিঙ্গেস করলো
— আরে এনার কথা জিঙ্গেস করছিস। ইনি হলেন ইফান চৌধুরী ভার্সিটির লাভার বয়। সব মেয়েরা ইফান বলতে জান দেয়।
ইফান হ্যান্ডসেক করার জন্য ইশিতার দিকে হাত বাড়িয়ে দিয়ে
— হ্যালো মিস ইশিতা কেমন আছো?
ইশিতা ইফান কে পাত্তা না দিয়ে পাশ কাটিয়ে গিয়ে নিজের সিটে বসে গেল।
ইফান হাত ফিরিয়ে নিয়ে মাথা চুলকিয়ে মুচকি হাসি দিয়ে
— ম্যাডামের দেখছি ভাব আছে অনেক। কিন্তু ম্যাম এই ইফান চৌধুরীর তো ভাব ওয়ালা ম্যাম টা কে ই চাই।
চলবে…..