#মন_নিয়ে_কাছাকাছি
#পর্ব_২৫,২৬
লেখনীতে #পুষ্পিতা_প্রিমা
২৫
সকালের নাশতা তৈরির সময় রাহাকে কাছে পেয়ে মনোয়ারা বেগম আর খানসা বেগম কিছু কথা বলার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। রাহাকে স্বাভাবিক দেখে ভেবে নিলেন কথাটা বলবেন। দু’জনেই টুকটাক কথা বলার ফাঁকে রাহার কাজ দেখছিলেন। বেশ ভালোই পটু। মাথায় ঘোমটা টেনে চুপচাপ কাজ করছে সে।
আমেনা বেগম রান্নাঘরের বাইরে যেতেই মনোয়ারা বেগম কথাটা বলার সুযোগ পেলেন। ধীরেসুস্থে বললেন…
যেহেতু বিয়েটা হয়েই গেছে আর কিছু তো করার নেই। তোমার বরকে একটু বুঝাও মেয়ে । যাতে বাড়ি ফিরে। এই বাড়িটা তো থাকবে বলে তুলেনি। ভাড়া দেয়ার কথা ছিল। ওই বাড়িতে ওর বউয়ের জন্য ঘর আছে। আমাদেরই তো ছেলে।
রাহা কথাগুলো শোনার সময় হাতের কাজ বন্ধ রাখলো। আবার পুনরায় কাজে হাত লাগিয়ে বলল
আমি এসব ব্যাপারে উনার সাথে কথা বলিনা জেম্মা । উনি আমার মুখে এসব প্রস্তাব শুনলে খুশি হবেন না।
না মানে তুমি তো বউ। যদি বুঝিয়ে বলো শুনতেই পারে…
আসলে ওর সাথে ওর চাচা জেঠুর একটু কথা কাটাকাটি হয়েছিল আমেরিকা যাওয়ার আগে। সেটা ধরে আর তোমার বিষয়ে একদম বাড়ি যাওয়ার কথা ভাবছেনা। ওর চাচা জেঠুরা এই বিষয়টা নিয়ে বাড়িতে সারাক্ষণ অশান্তি করে। কথা কাটাকাটি হয়। সারাক্ষণ এসব হলে তো আর ভালো লাগেনা। আমরা কখনো ভাবিনি ওকে কখনো আলাদা করব। কখনো আলাদা চোখে তো চাইনি আমরা। একটু বুঝিয়ে বলো।
রাহা সেদ্ধ ডিমের খোসা ছাড়াতে ছাড়াতে ভাবলো, আমাকেই তো নিজের কাছে রাখবেন না উনি। আমি আবার কি বলব?
শোনো মেয়ে তোমার পরিবারের সাথে আমাদের পরিবারে একটা শত্রুতা আছে তা তো তুমি জানোই। তুমি জানতে না তোমাদের বিয়েটা হলে একেকটা সমস্যা হবে। তারপরও বিয়ে করলে কেন? তোমার সাহস আছে বৈকি। তোমার কি এখন মনে হচ্ছেনা বিয়েটা করে ভুল করেছ?
রাহাকে তখনি ঘাড় ঘুরিয়ে চাইতে দেখে উনি থামলেন। বললেন
মানে অশান্তি হচ্ছে তাই বলছিলাম। তুমি নিজেও তো শান্তি পাচ্ছনা। ছেলেটার পেছনে বিপদ লেগেই আছে। এই চৌদ্দ বছর আমরাই তো মানুষ করেছি। ও আমাদের কিছু মনে না করলেও ওর কিছু হলে আমাদের আগে লাগে। পেটে ধরিনি তাই আগ বাড়িয়ে কিছু বলতে গেলেও সবাই মনে করে আলগা দরদ দেখাচ্ছি। আমাদের কতটা লাগে সেটা আমরাই জানি। ও থাকতে পারে আমাদের ছাড়া। যত জ্বালা আমাদের। আগলে রাখতেও পারিনা। ছাড়তেও পারিনা। তোমার শ্বশুর শ্বাশুড়ি উচিত হয়নি ছেলেটাকে আমাদের হাতে ছেড়ে যাওয়া। তুমি মাত্র ক’দিন থেকেছ ওর সাথে। বুঝবে এবার ও কেমন ছেলে। তুমি নিজেও ভাবতে পারবেনা ওর মনে কি চলছে এবং ও কি করতে চায়। বুঝা মুশকিল।
আপনাদের ছেলে আপনাদের কাছে ফিরে যাবে। চিন্তা করবেন না।
মনোয়ারা বেগম খুশি হলেন। খানসা বেগম এবার কথা বললেন
আচ্ছা?তোমাকে বলেছে এরকম?
বলেনি। আমার মনে হচ্ছে।
সত্যি হলে ভালো। তোমাকে কিন্তু আমাদের সাথেই থাকতে হবে তখন।
উনি আমাকে ওই বাড়িতে নিয়ে যাবেন না।
কেন কেন?
যতদিন উনার চাচা জেঠু খুশিমনে মেনে না নেয়।
কিন্তু তুমি যে বললে ও যাবে।
উনি যাবেন কিন্তু আমি না।
দু’জনকে ধাঁধায় ফেলে রাহা বেরিয়ে গেল রান্নাঘর থেকে। পথে মিনার সাথে দেখা হতেই সে বলল
খালি পেটে ভাইয়ার মেডিসিন আছে। আগে ওটা খাইয়ে দিস।
রাহা মাথা নাড়লো। চলে যেতে উদ্যত হতেই মিনা বলল
শোন!
রাহা পিছু ফিরলো।
বলো।
আমার কথায় রাগ করিস না। আমার মাথা ঠিক ছিল না তখন। কি বলতে কি বলে ফেলেছি।
রাহা মাথা দুলিয়ে চুপচাপ হেঁটে চলে গেল। মিনা দীর্ঘশ্বাস ফেলল। আম্মা আব্বাটা থাকলে তাদের জীবনের সমীরণটা অনেকটা সহজ থাকতো।
_____________
রাহা ঘরে যেতেই দেখলো বিছানা খালি। তানজীব জানালার পাশে দাঁড়িয়ে। বামহাতের তোয়ালে দিয়ে ভেজা মুখ মুছছে। ডান হাতে ফোন টিপছে। রাহা ড্রয়ার খুলে ঔষধ বক্স খুঁজতেই তানজীব তাকে ঘাড় ঘুরিয়ে চাইলো।
রাহা ঔষধ নিয়ে তানজীবের পেছনে গিয়ে দাঁড়ালো। বলল
ঔষধ খেয়ে নিন।
তানজীব ফোন কানে দিয়ে রাহার দিকে ফিরলো। রাহা ঔষধটা বাড়িয়ে দিল। পানির গ্লাস বাড়িয়ে দিতেই তানজীব পানিটা খেয়ে নিয়ে বলল
আমায় ডেকে দাওনি কেন?
এলার্ম বেজে উঠলেই উঠে যাবেন তাই।
ওকে।
বাম হাতে রাহার কোমড় পেঁচিয়ে জানালার দিকে মুখ করে দাঁড়ালো সে আবার। বড় ইউক্যালিপটাস গাছে দুটো হলুদ পাখি ডাকাডাকি করছে,
রাহা কিছু বলার আগেই সে বলল
ফোনটা সেরে নেই। ওয়েট।
ফোনে কথা বলার পুরোটা সময় রাহা ওর মুখের দিয়ে তাকিয়েছিল। কি এক অপূর্ব সুখোবেদনায় কেঁপে উঠছিল তার ভেতরটা।
মেজরের মাথার চুলগুলো খানিকটা বেড়েছে। এরকম কখনো হয় না। গালভর্তি কাটছাট দাঁড়ি গুলো গেঁথে রয়েছে শ্যামবরণ গালে।
কথোপকথনের শেষার্ধে তানজীব সমাপ্তি টেনে বলল,
ওকে। এখন রাখছি । দেখা হচ্ছে তাহলে।
ফোনটা কেটে যেতেই তানজীব পকেটে ফোনটা রেখে রাহার চোখে চোখ রাখলো। ভুরু উঁচিয়ে বলল,
কি বলতে চান বলে ফেলুন।
রাহা কিছুক্ষণ ভারমুখে চেয়ে রইলো। কিয়ৎক্ষণ পর চোখ নামিয়ে বলল..
আপনি আর ক’দিন আছেন?
পনের দিনের মতো। তার কমবেশি হতে পারে। হেলথ কন্ডিশনের উপর ডিফেন্ড করে। পুরোপুরি সুস্থ না হওয়া অব্দি যাওয়া বারণ আছে।
রাহা সংশয় নিয়ে আবারও চোখ তুলে তাকালো। তানজীবের ষষ্ঠ ইন্দ্রিয় বুঝে নিল রাহা কিছু জিজ্ঞেস করতে চায়।
নাক জোরে টেনে দিয়ে বলল
বি ইজি। আজ ক’দিন যেন!
তিনদিনের সংসার।
তিনদিন! ইন্ট্রেস্টিং। তিনদিনের সংসার।
বলেই হাসলো তানজীব। রাহা ক্ষিপ্ত গলায় বলল
হাসবেন না।
তানজীব মাথাটা নিচে নামিয়ে বলল
ওকে। হাসলাম না। কি জানতে চাও ফটাফট বলো।
কালকে যা বলেছিলেন তা সত্যি সত্যি?
হ্যা পেপার রেডি করে দিয়েছি অধীরকে।
কিসের পেপার?
এগ্রিমেন্ট পেপার সেনা কমান্ডোর তরফ থেকে। এই পেপারে সাইন করা মানে আর কোনো অপরাধে শনাক্ত হলে সরাসরি কারাদণ্ড। এইবারের মতো মুক্তি।
রাহার দুচোখের তারা অপ্রত্যাশিত খুশিতে চকচক করে উঠলো। ঠোঁটের কোণায় একঝলক হাসিরছটা দেখা গেল।
আব্বা আর জেঠু এবার বুঝবে আপনার কদর। না?
তানজীব চোখ ঘুরিয়ে বলল
হয়ত।
রাহা তার শার্টের খোলা বোতামগুলো লাগিয়ে দেয়ার জন্য হাত লাগালো। বলল
আর রোস্তম শিকদার?
সেইম।
রাহা বিমূঢ় চোখে চাইলো। তানজীব তার বিস্ময় বিহ্বলিত চোখজোড়া দেখে হাসলো কেমন তুচ্ছ করে।
ওর চাকরিটা তো গেছে প্রাণো। যে পোশাক ওর থেকে খুলে নেয়া হয়েছে সেটা ও আর কখনো ফিরে পাবেনা। এটাই ওর সবচেয়ে বড় শাস্তি। ওর মাকে কাঁদতে দেখেছিলাম ওইদিন। ভদ্রমহিলা নিজের মুখেই ছেলেকে দোষারোপ করছেন। কিন্তু ছেলেকে ওখানে দেখতেও পারছেন না। মায়ের মন বলে কথা। সেসব দেখে আম্মাটার কথা হঠাৎ মনে পড়ে গেলো। তোমার মনে আছে স্কুলের মাঠে খেলতে গিয়ে প্রচন্ড আঘাত পেয়েছিলাম পায়ে। আম্মা সেদিন পুরোটা সময় কেঁদেছিল। আর বলছিল
আমি এত চোখে চোখে রাখার পরেও তোর এ দশা। আমি না থাকলে কি হবে তোর?
আম্মারা চলে যাওয়ার পরদিন থেকেই আমি বদলে গেছি অন্যরকম ভাবে। বোনকে আগলে রেখেছি। শুধু নিজের দায়িত্ব নয় বোনের দায়িত্ব নিয়েছি। এই আমাকে দেখলে আম্মা কতটা খুশি হতো আমি তোমায় বুঝাতে পারব না প্রাণো।
রাহা পূর্ণমনোযোগ দিয়ে দেখলো নিরেট কঠিন একরোখা আর্মি অফিসারের গলার স্বর কাঁপছে। এতটা আবেগী হয়ে পড়তে কখনো সে দেখেনি মেজরকে।
আম্মা আব্বা থাকলে আমাদের বিয়েটা অনেক ঝাঁক ঝমক করে হতো। তোমাকে এত কষ্ট করতে হতো না। তুমি তাদের একমাত্র ছেলের বউ হতে। আম্মা তোমাকে কত স্নেহ করতে সে ব্যাপারে তোমার ধারণাই নেই। আমি রেগে গেলে বলতো, প্রাণো তোকে কি করে সামলাবে আমি জানিনা। ওর বোধবুদ্ধি হোক দেখবি ও নিজেই বলবে আন্টি তোমার গবেট ছেলেকে আমি বিয়ে করব না।
আমি তখন তোমার নামটা শুনেই রেগে যেতাম। আম্মা আর আব্বা তখন মিটমিট করে হাসতো। তোমার দাদা শুধু ওদের শেষ করেনি প্রাণো। ওদের স্বপ্নগুলোকে, আমাদের দু ভাইবোনের আশ্রয়, ভালোবাসা,স্নেহ মমতা সব কেড়ে নিয়েছে। তোমার থেকে সুন্দর একটা সংসার কেড়ে নিয়েছে। ওরা তছনছ করে দিয়েছে সব। সব শেষ করে দিয়েছে প্রাণো।
রাহাকে ছেড়ে দিয়ে ফিরে গেল সে। কিছুক্ষণ নীরবতা পালন করে গলা পরিষ্কার করে বলল
যাইহোক খেয়েছ?
রাহা তার সামনে গিয়ে দাঁড়ালো। শক্ত করে জড়িয়ে বুকের একপাশে মাথা রেখে বলল
মেজর আমাদের সুন্দর একটা পরিবার হবে। আমরা খুব ভালো থাকব। আপনি শুধু আমাকে দূরে সরিয়ে দেবেন না। আপনার পাশে থাকতে দিন প্লিজ। আমি তো আপনার এককথায় রাজী হয়ে গিয়েছিলাম। আপনাকে ভালো রাখার চেষ্টা করব বলে। আমি খুব সুন্দর করে আপনার পরিবারের সাথে মানিয়ে নিতে পারব। আপনি প্লিজ ওদের দূরে ঠেলে দেবেন না। ওদের নিজের করে ভাবুন। ওরা দিনশেষে আপনার আপন। আপনার ভালো চায়। প্লিজ মেজর। ওদের কাছে ফিরে যান। ওই বাড়িতে থাকলে আপনার চারপাশটা এত বিষন্ন লাগবে না। একা লাগবে না। আপনি নিজেও জানেন না ওরা আপনাকে নিয়ে কতটা ভাবে। প্লিজ।
না।
রাহা সাথেসাথেই মাথা তুললো। তানজীবের স্থির চোখে চোখ মিলিয়ে বলল
কি না?
তানজীব ওর কানের নিচে হাত গলিয়ে ওর মুখটা দুহাতে আগলে ধরলো।
ওরা আমাকে ভালোবাসে জানি। কিন্তু ওদের তাকেও ভালোবাসা উচিত যাকে আমি ভালোবাসি।
রাহার সারা শরীরজুড়ে শীতল আবহ সৃষ্টি হলো। বুকের ভেতর অপ্রতিরোধ্য সুখের উতালপাতাল ঢেউ তুলছে। কেমন সুখ সুখ লাগলো কথাটা শুনে।
তাই আমি চাইনা ওরা আমার মুখ চেয়ে তোমাকে ঘরে তুলুক। তোমাকে হেঁটে ওই বাড়িতে যেতে দেব না আমি। একজন মেয়ে তার শ্বশুর বাড়িতে যেই সাজে যায়, যেভাবে যায়, যদি যেতে হয় তুমি সেভাবেই যাবে। ওই কথা যতদিন ওদের মুখ থেকে না বেরোয় যতদিন তাদের ওই কথা উপলব্ধি না হয় ততদিন আমি তোমাকে ওই বাড়িতে নিয়ে যাব না। এটা আমার প্রমিজ।
আমি তো বিয়েটা করে নিয়েছিলাম নিশ্চিন্তে ইউএসএ গিয়ে কোর্সটা কমপ্লিট করার জন্য। তোমাকে এখানে রেখে গেলে আমার মন বসতো না তাই। তোমাকে হারিয়ে ফেললে জীবনের অনেক বড়সড় কিছু একটা হারিয়ে ফেলতাম আমি। আমার নিজের মানুষ হারাতে যে ভীষণ ভয় প্রাণো। কে কি বলবে তা নিয়ে ভাবতে ইচ্ছে হয় না। তোমার বাবা এমনিতেও আমার সাথে তোমার বিয়ে দিত না। কাউকে না জানিয়ে বিয়ে করেছি, হ্যান করেছি ত্যান করেছি এসব শোনার ভয়ে আমি তোমাকে নিয়ে রিস্ক নিতে পারতাম না। আমার এ নিয়ে কোনো আফসোস নেই।
রাহার গাল বেয়ে বড় বড় কয়েকটা জলফোঁটা গড়িয়ে পড়লো।
আপনি এজন্যই আমাকে গ্রামে পাঠিয়ে দেবেন?
তানজীব সহাস্য হেসে তার বৃদ্ধাঙ্গুল চেপে জল মুছে দিল। মুড চেঞ্জ করে বড় করে শ্বাস নিল।
একেবারের জন্য তো না। এটা আমার তোমার মধ্যে থাকবে। ওকে? সবাই বুঝবে আমি তোমার উপর এটা চাপিয়ে দিচ্ছি এবং সবাই যাতে ভুলটা বুঝতে পারে। বেশিদিন না ম্যাডাম। আপনাকে ছাড়া থাকতে তো আমারও কষ্ট হয়। না? আমি তো পাথর না। তিনমাস বারোদিন পর আমি আপনার কাছে হাজির। হ্যা আমাদের ফোনে যোগাযোগ থাকবে। রাত এগারোটা বারোটার মধ্যে ফোনে কথা হবে। ওকে? তোমার পরিবার আমার পরিবার ওদের সবাইকে তো বুঝাতে হবে।
রাহা ঠোঁটের কোণায় হাসি টানলো আঁখিজলে।
আবার বিয়ে করার শখ?
অফকোর্স ম্যাডাম। টোপর তো পড়িনি না।
রাহা হেসে উঠলো। বুকে আবারও মাথা ঠেকিয়ে বলল
আচ্ছা। এই পনেরদিন তাহলে আমার।
তানজীব হাসলো।
ওকে।
রাহা মাথা তুললো। ভুরু কুঁচকে বলল,
ওয়েট ওয়েট টোটাল কতদিন যেন। এদিকে তিনদিন ওদিকে পনের। হুমম আমার আঠারো দিনের সংসার।
তানজীব তার কোমল গালে অধর ছুঁয়ে বলল
হুম। আঠারো দিন।
রাহা অভিমানী গলায় বলল
কিন্তু এরজন্য আপনি আমাকে আঠারো মাস অপেক্ষা করান মেজর।
রাহাকে আরও নিকটে টেনে গ্রীবাদেশে মুখ লুকোলো তানজীব। রাহা নড়েচড়ে উঠে বলল
আল্লাহ! পুরো বাড়ি ভর্তি মানুষ।
সো হোয়াট? ডোন্ট ডিস্টার্ব মি ননসেন্স।
চলবে………
#মন_নিয়ে_কাছাকাছি
#পর্ব_২৬
লেখনীতে #পুষ্পিতা_প্রিমা
ঘড়ির কাঁটা টিকটিক করে ঘুরছে। একমুঠো সোনালি রোদ জানালা ফুঁড়ে মেঝেতে এসে পড়েছে। দুটো দোয়েল পাখি আরামসে বসে পালক ঝাড়ছে গাছে। একে অপরের সাথে খুনসুটিতে মেতে উঠেছে তারা। হঠাৎ চাপা গলার স্বর ভেসে এল….
ম্যাডাম খেতে আসুন।
রাহা পাখিগুলোর দিক থেকে চোখ সরিয়ে ঘাড় ঘুরালো। তানজীব আঙুলের ইশারায় আবার ডাকলো।
কাম।
আপনি যান। আমি আসছি।
ওকে। তাড়াতাড়ি কিন্তু।
হুম।
জানালার পর্দা টেনে আঁচল টেনে মাথা ঢেকে রুম থেকে বের হতেই সানজু এসে বলল
তুমি নিজেই সব রেডি করে এখানে এসে বসে আছ? তাড়াতাড়ি আসো। ওরা আমাকে টিকতে দিচ্ছেনা।
একটু বেশি করে না?
মারাত্মক করে। তানজীব ভাই তো আরও বেশি। সবাই কত করে বলছে তোমাকে নিয়ে বাড়ি ফিরতে। না যাবেনা। এক কথা। তুমি বুঝাও না রাহা আপু সরি থুক্কু ভাবি।
রাহা হাসলো। বলল
আপু ডেকো। ভালো লাগে।
ওকে তাহলে তো আরও ভালো।
রাহাকে আসতে দেখে সবাই তানজীবের দিকে চাইলো। গালের ভেতর কি একটা যেন চিবোতে চিবোতে সে ফোন টিপছে। রাহান বলল
আরেহ রাহা এসো। তোমার জন্যই তো বসে আছি।
রাহা মিনার পাশে গিয়ে বসলো।
বাবু কোথায় আপা?
ওর ঘুম আটটায় ভাঙে। নে খাওয়া শুরু কর।
সেলিম সাহেব আর সাজ্জাদ সাহেব তানজীবকে সেই তখন থেকে পরখ করে যাচ্ছে।
খাওয়ার সময় ফোন টিপা বন্ধ রাখ। আগে পেট শান্তি কর।
তানজীব চোখ তুলে চাইলো।
তোমরা খাও না। সারাক্ষণ আমার পেছনে পড়ে থাকো কেন? আজব!
সবাই ঠোঁট টিপে হাসলো। রাহান বলল
সারাক্ষণ প্যাঁচাল পাড়তে থাকে। আম্মা এই দুটোকে কি চাকরি ধরিয়ে দেব? ব্যবসা এদের জন্য না।
হাহ? তোমার টাকা কি আমরা খরচা করি যে চাকরি ধরিয়ে দেবে? তোমার ডাক্তারি আর ওর মিলিটারির টাকায় আমরা চলিনা। সিগারেটের খরচাও লাগেনা।
তানজীব ভুরু উঁচিয়ে বলল
ঠেস মারছো?
মনোয়ারা বেগম বললেন
বাবু তোরা কথা বলিস না। সানজু বলল
মাগোমা খাবার টেবিলেও ঝগড়াঝাঁটি। শান্তি নাই।
সাজ্জাদ সাহেব কিছু বলতেই যাচ্ছিল। তানজীব হাত দিয়ে থামিয়ে বলল…..
এখন খেতে দাও। আর কোনো কথা বলবেনা।
হ্যা কথা সব আমরাই বলি। সব আমাদের দোষ। তুই যে দোষ করোস সেটা তো বলিস না। স্বীকারও করিস না।
আমি কোনো দোষ করছিনা।
রাহান বলল
চাচ্চু চুপ করবে?
সাজ্জাদ সাহেব চুপ করলেন না। এবার রাহাকে বললেন
শোনো মেয়ে তোমার জামাইকে বুঝাও। বিয়েটা তো আর না মেনে উপায় নেই। এবার যাতে বাড়ি ফেরে। ও কাজে চলে গেলে তোমার এখানে কেউ থাকবে না। আমেনা আর রমিজ মিয়া তো সারাবছর পড়ে থাকতে পারবেনা এখানে। ওদেরও বাড়িঘরে যেতে হবে।
রাহা তানজীবের দিকে তাকালো প্রশ্নসূচক দৃষ্টিতে।
তানজীব মুখ দিয়ে চ’ কারাম্ত শব্দ করে বলল
এত জেরা করছে কে বলোতো তোমাদের? এত জোর করে মেনে নিতেই বা কে বলছে? আমি জোর করেছি?
রাহার দিকে তাকাতেই রাহা কপাল কুঁচকালো। আশ্চর্য মানুষ! একটু শান্ত গলায় বুঝিয়ে বললে কি হয়।
তানজীব তোয়াক্কা করলো না রাহার দৃষ্টি। বলল
শোনো ওকে ওর বাপের বাড়ি পাঠিয়ে দেব। ওখানেই থাকবে।
সবাই হা করে তাকালো। মিনা বলল
কিন্তু ভাইয়া এটা কি ঠিক? কেন এই সিদ্ধান্ত? এমা এটা হয় না।
সব হয়।
খানসা বেগম বললেন
মানুষে কি বলবে? বলবে বউকে খাওয়াতে পড়াতে পারেনা তাই বোধহয়….
কে কি বলবে তা আমি ভাবিনা।
সেলিম সাহেব খাওয়া শেষ করে দাঁড়িয়ে পড়লেন। বললেন
হ্যা তুমি তো হিরো। কার কথায় কি যায় আসে? এই তোমরা ওর সাথে আর একটা কথাও বলবে না। ঘাড়ত্যাড়া ছেলে। তোর বাপ থাকলে লাঠি পেটা করে সোজা করে দিত। মরে গিয়ে আমাদের ঘাড়ে ঘাড়ত্যাড়া একটাকে তুলে দিয়েছে।
তানজীব কান চুলকালো। রাহা তার দিকে নাক ফুলিয়ে তাকাতেই চোখ টিপলো সে। বিস্ময়ে দুঠোঁট ফাঁক হয়ে এল রাহার। এত অসভ্য মানুষ! সবাইকে চেঁতিয়ে দিয়ে এখন চোখ টিপছে?
রাহান বলল
তুই কি করতে চাইছিস আমি জানিনা। কিন্তু রাহাকে ওখানে রাখাটা ভালো হচ্ছেনা। তোর সিদ্ধান্তকে আমি সবসময় রেসপেক্ট করি কিন্তু আমার কথাটা ভেবে দেখিস।
সানজু বিরক্ত গলায় বলল
কোথায় ভেবে রেখেছি রাহা আপুর সাথে ভালো সময় কাটাবো। ধুরর।
তানজীব আর রাহান চলে যেতেই মিনা রাহাকে বলল
কি রে তুই কিছু বলবি না? ভাইয়া হুটহাট সিদ্ধান্ত নিচ্ছে আর তুই চুপচাপ?
খানসা বেগম বলল
ওরজন্য জল্লাদ বউ দরকার ছিল। এরকম নরমতরম বউ পেয়ে যা খুশি করছে।
তানজীবের ডাক ভেসে এল তক্ষুণি। মিনি প্রাণোকে ডেকে দে..
মিনা বলল
যাহ তো।
রাহা বলল
এগুলো গুছিয়ে দিয়ে যাই?
আমরা আছি। যা তো বাবা। ভাইয়াটা একেকটা বলে একেক সময়।
রাহা মাথা দুলিয়ে চলে গেল। ঘরে গিয়ে ক্ষিপ্ত গলায় বলল
আপনি কি বলুন তো? সবসময় ওদের রাগিয়ে দেওয়ার তালে থাকেন । মুরব্বিরা উনারা। আপনি কি?
আমি ওদের চিনি ম্যাডাম। আপনি মাত্র দুদিন ধরে চিনছেন। ওদের টাইট দিতে হবে। আপনার ওসব ব্যাপারে মাথা ঘামানোর দরকার নেই।
আপনি ভীষণ পাজি একটা লোক।
আই নৌ দ্যাট। রেডি হয়ে নিন। থানায় যাব।
আমিও?
হুমম।
রাহা খুশিতে আবারও জিজ্ঞেস করলো
সত্যি?
হ্যা।
থ্যাংকস মেজর।
ওয়েলকাম মাই ওয়াইফি।
____________________
থানায় যেতে না যেতেই রাহা রাজিয়া বেগম, আশরাফ আর অন্তরাকে দেখতে পেল। সাথে তার মামারাও আছে। আমজাদ সাহেবের দু একজন বন্ধু দেখা গেল। সাথে গণ্যমান্য রাজনৈতিক ব্যক্তিবর্গ।
রাহা মা ভাইকে দেখে আবেগে আপ্লুত হয়ে পড়লো। যে অজানা একটা অনুতাপে দগ্ধ হচ্ছিল এতদিন মা আর ভাইকে পেয়ে তার অনুতাপ অনুশোচনার ভার কেমন যেন কমে গেল। রাজিয়া বেগম মেয়েকে আদর করলেন। বললেন
তোর বাপ তোকে বিধবা করতে চাইলো রে মা। আমার ছোট মেয়ে তুই। আমি কত আদরে বড় করেছি। গায়ে একটা আঁচড় লাগতে দেয়নি কখনো। আর তোর বাপ নিজের হাতেই তোর সর্বনাশ করতে চেয়েছে। আজ তোর বাপ ছাড়া পাবে। কিন্তু পরে যদি আবারও ছেলেটার পেছনে লেগে থাকে?
রাহা মায়ের গাল মুছতে মুছতে বলল
আম্মা আম্মা এভাবে কেঁদো না। দেখো উনাকে তখনও আব্বা শত্রু ভাবছিলেন। আব্বা জানত না আমার সাথে উনার বিয়ে হয়েছে। জেনেশুনে মেয়ের ক্ষতি করতো না আব্বা। আমি আব্বা আর জেঠুকে আর কোনো ভুল করতে দেব না আম্মা। উনার সম্পর্কে বাজে ধারণা দূর করে দেব আম্মা।
রাজিয়া বেগম কেঁদে ওড়না দিয়ে মুখে গুঁজলেন। রাহা গাল মুছে দিতে দিতে বলল
আমায় ক্ষমা করেছ তো আম্মা? আমি তোমাদের জানানোর সময়টুকুও পাইনি আম্মা।
রাজিয়া বেগম মেয়ের মুখে হাত বুলিয়ে দিলেন।
তানজীবের মা তোদের কত স্নেহ করতো। আচ্ছা, ও তোকে দেখতে পায়?
হ্যা। উনি আমার কথায় তো আব্বা আর জেঠুকে ছাড়ানোর ব্যবস্থা করেছে। উনি খুব ভালো মানুষ আম্মা। তুমি জানো এই কাজের জন্য উনাকে কত জবাবদিহিতা দিতে হবে? উনি আমাদের পরিবারের কারো ক্ষতি চান না আম্মা। উনি নিজের প্রাণের তোয়াক্কা না করে দেশের জন্য কাজ করেন। আব্বার তো গর্ব হওয়া উচিত। আব্বা আর জেঠু যদি এবার না শোধরায় আমি নিজেই উনার সামনে গিয়ে দাঁড়াতে পারব না আম্মা। মুখ দেখাতে পারব না।
আশরাফ তার মাথায় হাত বুলিয়ে দিল। বলল
শোন বনু, কাঁদা বন্ধ কর। আব্বা আর জেঠুর এটা শেষ চান্স। নিজেদের মর্জি মতো অনেক কাজ করেছে। এবার থেকে ওদের আমি দেখে নেব। তুই আমাদের সাথে বাড়ি যাবিনা?
রাহা নাক টানলো। চোখ মুছে বলল…..
উনি বলেছেন আমাকে আর ক’দিন পর দিয়ে আসবে।
আচ্ছা।
রাহা অন্তরার কাছে গিয়ে বলল
আমার মা টা কোথায়?
তোর মা নোরার কাছে। রেখে এসেছি। আচ্ছা ননদিনী চুপিচুপি বিয়ে করে নিয়ে…
আচ্ছা শোনোনা।
এই চুপ। বলতে দে। এখন লজ্জা পেয়ে কি হবে? আচ্ছা তোকে উনি ভালোটালো বাসে? না আমি শুনেছি আর্মিগুলো খুব কঠোর হয়। তোর সাথে ভালো করে কথা বলে?
রাহা ব্যঙ্গ করে বল
শুধু কথা? একপ্রকার বকবক করে মাথা খায়।
সত্যি? দেখে মনে হয় না।
উনাকে উপরে বুঝাই যায় না। আমি তোমার সাথে আজ পরিচয় করিয়ে দেব ভালো করে।
তোকে কি দিল?
রাহা আটকে গেল।
কি দিল? ওহ হ্যা অনেক কিছু। ইয়া বড় ব্যাগ এনেছে। এসবের তালে পড়ে কিছু খুলে দেখা হয়নি। তুমি ভালো কথা মনে করিয়ে দিয়েছ। আজ গিয়ে দেখতে হবে।
বাড়ির সবার সাথে কথা বলে রাহার মন ফুরফুরে হয়ে গেল। আর কোনো দুশ্চিন্তা রইলো না। তানজীব দূর থেকে তাকে এমন ফুরফুরে মেজাজে দেখে হাঁফ ছাড়লো।
_________
সমস্ত নিয়ম কানুন এবং ভেতরকার কাজকর্ম শেষে অপরাধীদের খালাস দেয়া হলো সন্ধ্যার দিকে। রোস্তমের পুরো পরিবার এসেছে। একসাথে সবার সাক্ষাৎ। রাহাকেও দূর থেকে দেখলেন উনারা। রোস্তম কেমন চুপচাপ এবং শিথিল। রোস্তমের মা ছেলেকে পেয়ে হাউমাউ করে কান্না শুরু করে দিলেন। বললেন
আমি ওই ছেলেটার গুণের কথা কখনো ভুলব না। শোন বাবা তুই কোনদিকে কম আছিস? তোর জন্য আমি লাল টুকটুকে বউ আনবো দেখিস। নিজ কর্মদোষে নিজের সম্মান হারিয়েছিস। আর কোনো ভুল করতে যাস না আব্বা।
রোস্তম আঁড়চোখে ওই বহুদূরে হাস্যজ্জ্বল মুখে অনবরত কথা বলতে থাকা কালো বোরকা পড়া মেয়েটাকে দেখলো। মেয়েটা তাকে একদম শেষ করে ছাড়লো শেষমেশ। সর্বনাশিনী।
________________
বাবা আর জেঠুকে দেখে সেদিকে ছুটে গেল রাহা । উনারা কথা বলছিলেন বন্ধু এবং রাজনৈতিক ব্যাক্তিবর্গের সাথে। রাহাকে দেখে সবাই সরে গেল। রাহা কি বলবে কিছু খুঁজে পেল না। ছুটে গিয়ে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে বলল
আব্বা আমায় ছুঁয়ে প্রতিজ্ঞা করো আর কখনো কোনো অন্যায় করবেনা। কোনো অন্যায়কে সমর্থন করবেনা। প্রতিজ্ঞা করো আব্বা।
ওই ছেলে আমায় দয়া দেখালো না? যাতে সবসময় খোঁটা দিতে পারে?
রাহা মাথা তুললো।
তোমাদের উপর উনার কখনো কোনো ক্ষোভ ছিল না আব্বা। কেন এভাবে বলো? তোমরা যা ভাবো উনি তেমন নন।
তৎক্ষনাৎ তানজীব পেছনে এসে দাঁড়ালো। বলল
উনাদের গাড়ি চলে এসেছে প্রাণো। চলে এসো।
না ও যাবেনা।
তানজীব পা বাড়ানো বন্ধ করে অদ্ভুত ভঙ্গিতে ঘাড় ঘুরিয়ে চাইলো। রাহা বলল
আব্বা আমি….
তুই কথা বলিস না।
তানজীব গলা একপাশে হালকা কাত করে পকেটে হাত গুঁজে দাঁড়ালো।
তুমি এসব করে সবার সামনে মহান সেজেছ ভালো কথা। এজন্য তোমার প্রতি কৃতজ্ঞ।
তানজীব মাথা নেড়ে বলল,,
ধন্যবাদ।
আমার মেয়ে আমার সাথে যাবে।
হুম। যাক। সমস্যা কি?
রাহা ভয়াভিভূত চোখে তাকালো।
যেতে বলছ?
জ্বি।
আমজাদ সাহেব রাহার হাত ধরলেন। বললেন
চল।
রাহা তানজীবের দিকে তাকালো।
কিন্তু আব্বা….
রাহাকে নিয়ে এক পা এগোনোর সাথে সাথে ভারী গলাটি ভেসে এল।
দু’দিনের জন্য। তারপরের দিন আমি গিয়ে নিয়ে আসব।
মানে? কেন? ও আমার মেয়ে।
তানজীব উনার দিকে ফিরে বলল
আপনার মেয়ে না কখন বললাম? আপনার মেয়ে আর আমার বিবাহিত স্ত্রী। এখন আমার অধিকার সবচাইতে বেশি।
কিসের অধিকার?
গলার আওয়াজ বড় করতেই রাহা বলল
আব্বা এমন করো না। মেজর আপনি….
এই ছেলে তুমি আমার মেয়েকে একটা পরিবার দিতে পেরেছ? তোমার তো মা বাপ কেউ বেঁচে নেই।
আপনারাই মেরেছেন।
খবরদার।
গলা উঁচু করবেন না। সত্যকে স্বীকার করতে শিখুন।
আশরাফ এসে বলল..
কি হচ্ছে এখানে? আব্বা কি হচ্ছে? চলো।
না। রাহাকেও নিয়ে যাব আমি। এই ছেলে মাসের পর মাস কোথায় পড়ে থাকে। ওকে আমি একা ছাড়ব না এই ছেলের হাতে। আমার মেয়ে ফেলনা নয় যে ওর পায়ের তলায় পড়ে থাকবে। যদিও ওকে কোথাও রাখে তাহলে কোথায় রাখবে সেটা আমার জানা আছে। আমার মেয়ে সারাক্ষণ খোঁচা সহ্য করে থাকতে পারবেনা। আমি এই ছেলের হাতে আমার মেয়েকে তুলে দিয়ে নিশ্চিন্তে থাকতে পারব না। ওর একটা নিশ্চিত ভবিষ্যৎ তৈরি করে দেয়া আমার কর্তব্য। আমি খারাপ মানুষ হতে পারি। কিন্তু আমার মেয়ে ছেলের কাছে আমি তাদের বাবা। পরিবারের ছায়াহীন, অন্যের আশ্রয়ে থাকা ছেলের হাতে আমি আমার মেয়েকে তুলে দেব না। কিছুতেই না।
তানজীব আঁড়চোখে চেয়ে রইলো চুপচাপ। অধীর এসে পরিস্থিতি সামাল দিল।
রাহাকে চুপিসারে জিজ্ঞেস করলো
তুমি যাবে?
তানজীব তাকালো তার দিকে উত্তর জানার জন্য। রাহা তানজীবের দিকে তাকিয়ে তারপর দুপাশে মাথা নাড়ালো ঘনঘন।
আমজাদ সাহেব রাহাকে বললেন
তুই কি যাবি নাকি যাবিনা?
আব্বা আমি আর চৌদ্দ দিন পরে যাব। সত্যি যাব আব্বা। তোমাকে দুর্বল দেখাচ্ছে এত উত্তেজিত হইয়োনা আব্বা। প্লিজ আমায় একটু সময় দাও। আমি সত্যি যাব।
তিনি হনহনিয়ে হেঁটে গাড়িতে গিয়ে বসলো।
আশরাফ এসে মাথায় হাত বুলিয়ে বলল
ওকে বনু। যেদিন যাবি তার আগের দিন যাবি।
রাজিয়া বেগম গিয়ে তার হাতটা তানজীবের হাতে ধরিয়ে দিল। ব্যস্ত গলায় বলল,,,,,
ওকে ভালো রেখো বাবা। নিজের খেয়াল রেখো। আসি। হ্যা?
গাড়ি ছেড়ে দিতেই রাহা বড় করে শ্বাস ফেলল। গাল মুছে পেছনে ফিরতেই তানজীবকে দেখে এগিয়ে গেল।
তানজীব তাকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে গাড়িতে গিয়ে বসলো। রাহাও তার পিছু পিছু গেল। অধীর আর রাহান হাঁফ ছেড়ে বাঁচলো। বলল
এবার সব মিটলেই হলো।
তানজীব গাড়িতে উঠে বসতেই রাহাও পাশে এসে বসলো।
কাছাকাছি এসে তানজীবের হাতটা নিজের হাতের মুঠোয় নিয়ে চুমু খেয়ে বলল
অনেক কষ্ট সইতে হবে। বলা ছিল।
আমার কথা আমাকে বলছো?
আর কে আছে আমার?
সিটবেল্ট বাঁধো।
আচ্ছা।
রাগ কমেছে?
শাটআপ। সিটবেল্ট বাঁধো।
রাহা বাঁধলো না। তানজীব সিটবেল্ট টেনে বাঁধার সময় রাহা তার মুখটা ধরে কপালে ঠোঁট ছোঁয়ালো। হেসে উঠে বলল…
আপনাকে এরকম দেখতে ভালো লাগে মেজর।
স্টুপিড।
রাহা হেসে উঠলো আবার।
_____________
ঘড়ির কাঁটায় রাত এগারোটা। রাহা বিছানায় এলোমেলো হয়ে থাকা শাড়িগুলো ভাঁজ করে শুধু লাল রঙের শাড়িটা পড়ার সিদ্ধান্ত নিল। তানজীব ঘরে আসতেই দেখলো ঘরটা আবছা অন্ধকারে ডুবে আছে। ডিম লাইট জ্বলছে। এককোণায় রাহাকে দেখে বলল
ভয় নেই?
রাহা উত্তর করলো।
না।
শোনো নানু ফোন করেছে।
এখন আসবেন না। শাড়িটা পড়া হয়নি।
তানজীব শুনলো না কথা। অর্ধ আবৃত শাড়ি পরিহিত রাহাকে টেনে নিয়ে দু’হাতে কোমর জড়িয়ে কাঁধে থুতনু ঠেকিয়ে বলল
লাল শাড়িতে ভালো লাগছে।
কচু লাগছে। পড়তেই পারিনি এখনো।
আর পড়া লাগবেনা।
ঘাড়ে প্রলম্বিত চুম্বনের ছোঁয়া পেতেই রাহা শিউরে উঠে বলল
নানুর কথা বলছিলেন বোধহয়।
তানজীব মুখ তুলে বলল
হুমম। নানু দাওয়াত দিল নাতবৌকে। যাবে?
কতদূর। বেশি না। তবে মামার বাড়ি অনেক সুন্দর। যাবে?
হুমম। আপনার সাথে কোথাও যাব এটা তো আমার সৌভাগ্য।
ওকে।
রাহাকে পাঁজাখোলা করে তুলে নিতেই রাহা আঁতকে উঠে তার গলা জড়িয়ে ধরে বলল
মামি দুটো না?
হুহ। আর কোনো কথা না। সারপ্রাইজ আছে।
রাহাকে বিছানায় শুয়ে দিয়ে নিজের ব্যাগের কাছে ছুটলো সে। আবছা আঁধারে ব্যাগ হাতিয়ে কিছু পেছনে হাত লুকিয়ে একটা নিয়ে এসে রাহার পাশে এসে শুইয়ে বলল
চোখবন্ধ।
কেন?
চুপ। বন্ধ করো।
রাহা চোখ বন্ধ করলো। কড়াপড়া আঙুলের ছোঁয়া উন্মুক্ত উদরে লাগতেই নেতিয়ে পড়লো রাহা। হাত দিয়ে ছুঁতেই দেখলো কিছু একটা।
বিছা!
তানজীব সেটি পড়িয়ে অধর ছোঁয়ালো উদর ও বক্ষের মধ্যস্থিত অঁচলে।
রাহা শিউরে উঠে মুছড়ে উঠে কুঁকড়ে গেল। অন্যদিকে গলা ফিরিয়ে রাখতেই তানজীব গলদেশে মুখ লুকিয়ে ঠোঁট গুঁজলো।
কিয়ৎক্ষণ পর জানতে চাইলো,
আর ইউ ওকে?
রাহা তার বুকে লুকিয়ে পড়ে বলল
নাউ ওকে।
——–
চলবে……