#মন_নিয়ে_কাছাকাছি
#পর্ব_২৭ অন্তিম পাতা
লেখনীতে #পুষ্পিতা_প্রিমা
আড়াইমাস পর।
বর্ষাবিকেলের স্নিগ্ধতা আর মাধুর্যতা হারিয়ে তখন সবে পাতা ঝড়ার দিন শুরু হয়েছে। দখিনা বাতাসে ফুল বাগানের আঙিনায় ঝড়া ফুলের গালিচা । চারাগাছগুলো দুলছে এপাশ থেকে ওপাশ। উঠোনে ধুলোর উপস্থিতি দ্বিগুণ হারে বেড়েছে।
শরীরটা দুর্বল লাগায় দোতলার বারান্দায় নাইরাকে নিয়ে চেয়ার পেতে বসেছিল রাহা। সামনেই তার সেমিস্টার। পড়াতেও মন বসেনা। জ্বর হওয়ার পর থেকে মুখে তেঁতো ধরে গিয়েছে।
নোরার বাচ্চার আকিকা অনুষ্ঠানের দাওয়াত পড়েছে। বাচ্চার দুমাস বয়সও হয়নি।
রাহা গ্রামের ফেরার দু’দিন আগেই নোরাকে হসপিটালে ভর্তি করা হয়েছিল। সন্ধ্যায় ছেলে বাবু হলো তার।
বাড়ির সবার সাথে রাহার দেখা হয়ে গেল হসপিটালে। সেখান থেকে সবার সাথে তার পরের তার বাড়ি ফেরা। মেজর তাকে বিদায় জানিয়েছিল রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে হাত নেড়ে মিষ্টি হেসে।
তারপর থেকে রাত বারোটার পর ফোনে আলাপ। মাঝেমধ্যে কিছু ব্যতিক্রম ঘটে। তানজীবের গলার স্বর যখন ভীষণ ক্লান্ত শোনায় তখন রাহা নিজে থেকে ফোন রেখে দেয়। নয়ত আলাপ চলতেই থাকে। কথার কি শেষ আছে? কত কথা তাদের।
উঠোনে বাপ ভাইয়ের গলা শুনে তার ধ্যান ভাঙলো। নাইরাকে কোলে তুলে বাইরে যেতেই দেখলো চারজোড়া কবুতর কিনে এনেছে তারা। নাইরা রাহার কোল থেকে নেমে গিয়ে আশরাফের কাছে গেল কবুতরগুলোকে আঙুল বাড়িয়ে ডাকলো।
আয় আয়। পাকখি আয়।
সবাই তার কথা শুনে হাসলো। রাহা বলল
এগুলো আপার জন্য নিয়ে যাবে?
হ্যা। তুই নাকি যাবিনা বলেছিস?
আমার ভালো লাগছেনা ভাইয়া। জার্নি করতে একদম ইচ্ছে হচ্ছেনা।
আমজাদ সাহেব বলল….
ওখানে বড় ডাক্তার দেখাবো। নোরা বলল ভালো না লাগলেও যেতে হবে। তোর কোনো কথা শুনব না।
রাহা মুখ দিয়ে চ’ কারান্ত শব্দ করে ঘরে চলে গেল।
_________________
সন্ধ্যার দিকে তাদের গাড়ি রওনা দিল। রাত হতে হতে তারা পৌঁছে গেল। নোরা বলল
কি হাল হয়েছে তোর? এত শুঁকিয়েছিস কেন? তোর বর দেখলে বলবে তার বউয়ের যত্ন হয়নি।
রাহা ভাগিনাকে কোলে তুলে আদর করে বলল
ওসব কথা বাদ দাও আপা। জ্বর হওয়ার পর থেকে খাওয়াদাওয়া কমে গেছে। খেতে পারলে আবার মোটা হয়ে যাব। আমার আব্বাটা কেমন আছে? ওর নাম কি দেবে আপা?
এখনো ঠিক হয়নি। তোর জিজু লম্বা একটা লিস্ট ধরিয়ে দিয়েছে আমাকে। উনি পারছেনা সব নাম দিতে।
মিনা আপার বাবুর নাম তো আহান।
হ্যা ওর নামের সাথে মিলিয়ে দেওয়ার কথা ছিল। কিন্তু রিজু বলল ও ওর ভাইয়ের নাম দেবে।
ভালোই তো।
পরদিন সকালে শেখাওয়াত বাড়ির সবাই এল। রাহা সবার সাথে দেখা করলো। কুশলাদি বিনিময় করার সময় মনোয়ারা বেগম বললেন
তোমার এ কি অবস্থা বউ? তোমার মা বাপ পরের বাড়ির বউ বলে খাবার দাবার কিছু দেয়নি নাকি? এভাবে মানুষ শুকায়? কালোও হয়ে গেছ।
রাহা মৃদু হাসলো শুধু। মিনা তাকে একপাশে টেনে এনে বলল
তোর এই হাল কেন?
তোমাকে তো বলেছিলাম আপা। জ্বর হয়েছে খুব। তারপর থেকে শুকিয়ে যাচ্ছি। খেতে পারিনি তো তাই।
ডাক্তার দেখিয়েছিস।
হ্যা। আবার এখানে দেখাবো ভাবছি।
আচ্ছা তোর ডাক্তারকে বলব আমি। কিছু চেক-আপ করানো দরকার। ভাইয়া কি বলবে তোকে দেখে।
রোহিনী পাশ থেকে প্রত্যুত্তর করলো
বরের অভাবে রাহা শুকিয়ে যাচ্ছে।
রাহা জিভে কামড় দিল। মিনা হেসে উঠে বলল
আচ্ছা আর লজ্জা পেতে হবেনা। শোন এবার আমাদের সাথে চলে আয়। ভাইয়ারও আরও এক মাস আছে। নাকি বর না গেলে যাবিনা।
রাহা বিপাকে পড়ে বলল
আরেহ না না। এভাবে কেন বলো? উনি না বললে আমি কিভাবে যাব? এরকম শোভা পায় বলো?
আচ্ছা!
ভাইয়া আর তুই দুজনে মিলে ফন্দি এঁটেছিস? ভালো। কিন্তু চাচ্চু আর জেঠুরা বলল যে কিছু লোকজন খাইয়ে দাইয়ে নিয়ে যাবে। কারণ লোকমুখে কথার তো শেষ নেই।
রাহা আশ্চর্যান্বিত হয়ে বলল
আবারও বিয়ে?
হ্যা।
রাহা মনে মনে ভাবলো মেজরের বুদ্ধি কাজে লেগে গেল। হাউ জিনিস হি ইজ!
শোন আমি আন্টির সাথে এ ব্যাপারে কথা বলব। এখন তোর কাজ হচ্ছে তোর মেজরকে রাজী করানো। ভাইয়া রাজী না হলে তো সব আয়োজন জলে যাবে।
রাহা চুপ থাকলো পুরোটা সময়। এমনিতেই সে শান্তিতে নেই তারউপর বিয়ে সাজ খাওয়াদাওয়া। আরেহ বাপরে সে তো মরেই যাবে। মেজরকে বলে থামাতে হবে। কিন্তু উনি তো টোপর পড়বেন বলে জেদ ধরে বসে আছেন। আজব লোক একটা।
মিনা রাজিয়া বেগম, মাহফুজা বেগম আর আশরাফের সাথে আলাপ আলোচনা সাড়লো। আশরাফ সায় জানালো। সামাজিকতার মাধ্যমে তাদের বোনকে তুলে দিতে হলে তাতে কোনো আপত্তি নেই কিন্তু এখন বিষয় আমজাদ সাহেবের। উনি মেয়েকে শ্বশুর বাড়ি পাঠাবেন এমন ধরণের কথা শুনতেও রাজী নন। কেমন গা ছাড়া ভাব। হয়ত মুখোমুখি হতে চান না বলেই।
নোরার বাবুর আকীকার অনুষ্ঠান শেষ হতেই সবাই আলোচনায় বসলো। সেখানে তিন বাড়ির লোকজন উপস্থিত। আমজাদ সাহেব সেই ঘটনার পর সবার সাথে মেলামেশা বন্ধ করে দিয়েছেন। হয়ত চক্ষুলজ্জায়। ভুল তো ভুলই।
তবে সিদ্ধান্ত নেয়া হলো তানজীব ফিরলেই রাহাকে ছোটখাটো আয়োজন করে শেখাওয়াত বাড়িতে তুলবে। এই কথা থাকলো।
রাহারা সবাই গ্রামে ফিরে এল। সাথে নোরাও নাইওর এল। রাহার সেমিস্টার পরীক্ষার সবেমাত্র শুরু। দু-তিনটে পরীক্ষার পর চতুর্থ পরীক্ষার দিন পরীক্ষার হলে অজ্ঞান হয়ে পড়লো সে। সবখানে হৈচৈ পড়ে গেল। পরে বাড়িতে জানানো হলে তার বাপ ভাই জেঠা সবাই এসে বাড়ি নিয়ে গেল তাকে। মেয়ের জন্য এবার ভারী দুশ্চিন্তা হলো আমজাদ সাহেবের।
রাহার জ্ঞান ফেরার সবাই তাকে জেরা করলো। রাজিয়া বেগম বললেন
চা খেয়ে মানুষ পরীক্ষার হলে যায়? কতকরে বললাম তোকে ভাত খেয়ে যা। আমার কথা না শুনেই তো তোর এই দশা।
নোরা বলল
আহা বকছ কেন আম্মা? রাহা তুইও এত জেদী কেন? খাওয়া দাওয়া না করলে তোকে কতদিন পর কঙ্কালের মতো দেখাবে।
রাহা উপুড় হয়ে শুয়ে পড়ে বলল
আমার খিদে নেই। উফফ। তোমরা যাও তো।
রাজিয়া বেগম দুপুরে নিজ হাতে জোর করে খাওয়ালেন। বললেন
ছেলেটা এসে তোকে এই অবস্থায় দেখলে বদনাম আমাদেরই হবে।
মা সবসময় উনাকে টেনে কেন কথা বলো বুঝিনা। উনি ওরকম নন। ধুরর।
হ্যা জানি ওরকম না। মুখ ফুটে না বললে মনে মনে তো ঠিকই বলবে।
জোর করে খাওয়ানোর কারণে কিছুপরেই সব উগলে দিল রাহা। বমির চোটে শেষমেশ তেঁতো পানি বেরোলো। দুর্বল হয়ে একদম বিছানায় লেগে গেল সে।
নোরা বলল
তুই গতবার ডাক্তারের কাছে যাসনি। কিন্তু এবার আমি নিয়ে যাব তোকে। তুই আর বাহানা করিস?
না আপা আমি যাব না। এত মোটা মোটা ঔষধ দেয়। আমার গলায় আটকে যায়। না না বাবা আমি যাব না। তোরা আমাকে ছেড়ে দে আপা। আমি একটু ঘুমালেই সব ঠিক হয়ে যাবে।
না তোর ছাড় নেই।
নোরা সমস্ত ঘটনা তানজীবকে বলল সেই রাতে। রাহার পাশে ঘুমানোতে ফোনটা সে ধরেছিল। রাহা তখন ঘুম।
তানজীব আশ্বস্ত করলো সে ব্যাপারটা দেখছে।
_____________
একদিকে শারিরীক অসুস্থতা অন্যদিকে পরপর পরীক্ষা। সব মিলিয়ে রাহার মাথার উপর দিয়ে যাচ্ছে সব। পরীক্ষায় কি কি লিখলো সে নিজেও জানেনা। পরীক্ষা শেষে তাকে দেখে মিলি বলল
বিয়ের পর মানুষ মোটা হয়, সুন্দর হয়। তুই শুকিয়ে কালো হয়ে গেছিস ।
মেঘনা রহস্য হেসে বলল
আমার তো মনে হচ্ছে শী ইজ গোয়িং টু বি মাম্মি।
বলেই তারা দুজন হেসে উঠলো একসাথে।
রাহা ৩৬০ ডিগ্রী ভোল্টেজে শক খেল যেন। বড় বড় চোখে তাকিয়ে বলল…
কি বলিস?
মেঘনা হেসে বলল
মজা করছি। সেটা তো তুই ভালো জানিস বাঁধাকপি। বল বল কতদূর গিয়েছ?
বলেই দু’জন হাসিতে ফেটে পড়লো।
রাহা স্তব্ধ হয়ে গেল। ঠিকই তো এদুমাস তার পিরিয়ড মিস। খাওয়ার পর বমি। ও আল্লাহ! শারিরীক মানসিক এত পরিবর্তন সব এজন্যই?
বুকের কাঁপুনি থামছেনা তার। আর হাতের তালু অসম্ভব রকম ঘেমে গেছে।
আমার সত্যি শরীর খারাপ লাগছেরে। কোথাও একটু বসি?
দু’জন তাকে ধরে বেঞ্চিতে বসলো। বলল
পানি খাবি?
রাহা দুপাশে মাথা দুলালো। বলল
ওরকম কিছু হলে কি করতে হয়?
দুজনেই ফিকফিক করে হেসে উঠলো। মেঘনা বলল
আরেহ তুই সিরিয়াস বান্ধবী? মেজর সাহেব কি জানে নাকি?
না আমি সিউর না।
তাহলে চল মেডিক্যালে যাই? ওখানে মহিলা ডাক্তার আছে। সরকার মেডিক্যাল। ভালো। চল
নাকি তোর বাড়ি যাবি?
না না বুঝার চেষ্টা কর। আমি বাড়িতে কিভাবে বলব?
মিলি পিঠ চাপড়ে বলল
আচ্ছা চল। আগে সিউর হয়ে নে।
রাহার ভেতরে তখন অন্যরকম মিশ্র অনুভূতিরা দলা পাকাচ্ছে । এর পরে কি হবে সে জানেনা। কিন্তু এটা কি সত্যি?
সরকারি মেডিক্যালে মহিলা ডাক্তার টেস্ট করিয়ে জানান দিলেন বিষয়টা সত্যি। সেনা অফিসারের অগাধ প্রণয়ের এক টুকরো অংশ ধীরে ধীরে বেড়ে উঠছে তার গর্ভে।
সাথে রাহাকে বকাঝকা ও করলো ডাক্তার।
এই যুগে এসে মানুষ এত বোকা হয় কি করে? আপনার সপ্তম সপ্তাহ রানিং । রক্তশূণ্যতায় ভুগছেন আপনি। বাড়িতে কেউ নেই? খাওয়া দাওয়া ঠিকমতো করবেন। কি একটা অবস্থা! এরকম হলেও নিজেও যাবেন, বাচ্চাও যাবে। আপনার স্বামী কোথায়? এই আয়রনগুলো খাবেন। যান।
মিলি আর মেঘনা রাহাকে বাইরে নিয়ে এল। রাহা এখনো কাঁপছে। কাঁপতে কাঁপতে তার চোখ ভিজে উঠছে। এখন সে কি করবে?
মিলি বলল
বাঁধাকপি তোমার মেজরকে আগে ফোন দাও সোনা।
না আমি এটা কাউকে বলতে পারব না।
মাগোমা ঢং কত! সব করতে পেরেছ আর…
রাহা বলল
এত ঠোঁটকাঁটা কেন তোরা? মেজরও এমন। উনি আরও বিশ্রী বিশ্রী কথা বলবেন এটা শুনলে।
দু’জনই অট্রহাসিতে ফেটে পড়লো। মেঘনা বলল
আরেহ বুদ্ধু এটা খুশির খবর। সবাই কত খুশি হবে তুই ভাবতেও পারছিস না। চল তোকে গাড়িতে তুলে দিই।
না। আমি এখন বাড়ি যাব না। আমার দিকটা একটু বোঝ। আমি সত্যি কাউকে কিছু বলতে পারব না।
বলতে বলতে আবারও কাঁদতে লাগলো সে। মিলি বলল
এই পাগল এগুলো প্রথম তো তাই এমন হচ্ছে। তুই যেরকম ভাবছিস বিষয়টা তেমন না। তুই বলতে দেরী করলে সবাই আরও বেশি কথা শোনাবে তোকে। তুই সত্যিই বোকা। নিজের পরিবর্তন নিজেই বুঝতে পারলি না।
কি করে বুঝব ? আমার আগেও এরকম দু একমাস পিরিয়ড মিস থাকতো। আম্মা এরজন্য কত পানিপড়া খাওয়াতো। আমি তাই ব্যাপারটা নরমাল ভেবে নিয়েছিলাম।
আচ্ছা আচ্ছা কোনো সমস্যা নেই। পরিস্থিতি বুঝে জানাবি। নইলে ইঙ্গিত দিবি। নোরা আপা তো আছে কীটটা এমন জায়গায় রাখিস যাতে আপার চোখে পড়ে। ব্যস হয়ে গেল।
একদম না। আমার লজ্জা করে। আমি আপাকেও এসব বলতে পারব না।
আচ্ছা সবার প্রথমে মেজর সাহেবকে জানা।
কিভাবে?
ফোনে বলতে অসুবিধা হলে টেক্সট করে জানা।
টেক্সট করে?
হ্যা।
রাহা কিছু একটা ভেবে মাথা নাড়ালো।
আচ্ছা।
মিলি আর মেঘনা তাকে গাড়িতে তুলে দিল। বাড়ি পৌঁছুতেই সবাই রাহার শুকনো মুখ দেখে কিছু একটা বলার চেষ্টা করলো। রাহা ভাবলো সবাই তার দিকে এভাবে তাকিয়ে আছে কেন? এমা মিলি, মেঘলা কি ফোন করে কিছু জানিয়েছে নাকি?
তার ধারণা ভুল হলো অন্তরার কথায়।
ননদিনী আপনার মেজর বউকে পাঠিয়ে দিতে বলেছেন উনার কাছে।
রাহা চমকালো।
এ্যাহ?
এ্যান না হ্যা।
নোরা বলল
ভাবি সত্যি বলছে। উনি নাকি এখন খাগড়াছড়ি সেনা ক্যাম্পে। ওখানে পাঠিয়ে দিতে বলেছে তোর জিজুকে। তারপর উনিও আর ক’দিন পর একসাথে বাড়ি ফিরবে।
সব রাহার মাথার উপর দিয়ে যাচ্ছে। সে বলল
আগে সরো বাপু। আমি আগে ঘরে যাই।
ঘরে বিছানায় শুয়ে পড়লো সে। ডানহাতটা আলতোকরে পেটে রাখতে না রাখতেই চট করে সরিয়ে নিল। এত সুন্দর ভয়ংকর অনুভূতির সাথে সে এই দ্বিতীয় বার পরিচিত। প্রথম তো মেজর।
________________
রাহার খাগড়াছড়ির যাত্রাটা বেশ কঠিন ছিল না, আবার খুব সহজও ছিল না। ড্রাইভার পাহাড়ের প্রদেশে ঢুকার সময় গাড়ি থামিয়ে নিয়েছিল পরবর্তী আদেশের জন্য। ড্রাইভারের সাথে অধীর আর তানজীবের যোগাযোগ তখন মিনিট পরপর। গাড়ি থামাতেই রাহা ড্রাইভারকে বলল…
উনি এখানে আসবেন বলেছেন?
জ্বি ম্যাডাম। আর্মি জিপ আসবে বলেছিল একটা।
রাহা অপেক্ষা করলো।
সূর্য তখন পশ্চিম দিকে হেলে পড়েছে। হরিদাভ আকাশে তখন রক্তিমা আভা। দলছুট পাখিগুলো ক্লান্ত বিকেলকে বিদায় জানিয়ে নীড়ে ফিরছে।
অন্ধকার যখন গ্রাস করবে ধরণীকে ঠিক সেসময় ধুলো উড়িয়ে বিকট শব্দে আর্মি গাঢ় সবুজ রঙা জিপের দেখা মিললো। রাহা গাড়ি থেকে নেমে গেল দ্রুত। ড্রাইভারও খুশি হলো। অধীরকে জানালো যে স্যার এসে গেছেন আর চিন্তা নেই। অধীর নিশ্চিন্ত হলো এবার।
গাড়ি থেকে দ্রুত পায়ে এগিয়ে এল তানজীব। দীর্ঘদিনের পরিচিত,, বয়সে অনেক বড় মানুষটিকে বুকে জড়িয়ে কৃতজ্ঞতা জানালো উনার স্ত্রীকে এতদূর পৌঁছে দেয়ার জন্য।
ড্রাইভার হাসিমুখে বিদায় নিতেই রাহা গাড়ির সাথে হেলান দিয়ে দাঁড়ালো। নাক-মুখ- কপাল কুঁচকে ঠোঁট ফুঁড়ে শ্বাস নিয়ে বলল…..
উফফ।
মাথায় পড়া অফিসিয়াল ক্যাপ খুলে শ্লথগতিতে হেঁটে এল তানজীব।
রাহা হাতের ব্যাগটা নীচে রাখলো। তানজীব কাছে এসে তার অধর দ্বারা কপাল ভিজিয়ে বলল…..
আপনার এ কি অবস্থা ম্যাডাম?
রাহা বলল….
আপনার জন্য।
______________________
সেনা ক্যাম্পে এসে রাহার ঠিক কিছু মাস আগের সেই কুয়াশাজড়ানো সন্ধ্যার কথা মনে পড়লো। একদম ঘুরে এসেছে সময়গুলো। যদিও এখন শীতটা তেমন ঝাঁকিয়ে বসেনি। তবুও কি সুন্দর চারপাশটা। ঠিক তার স্বপ্নের মতো। এমন একটা সুন্দর নিরিবিলি জায়গায় সে দাঁড়িয়ে আছে। যার কিছুদূরেই হৈহৈ শব্দ। মাথা নোয়ানো মিলিটারি তাঁবু। দখিনা বাতাসে দোল খাওয়া তেরপালের পতপত শব্দ। কাঠ পোড়ার গন্ধ।
তার ঘাড়ে সেই খুব পরিচিত ঘ্রাণ, নিঃশ্বাসের শব্দ, ফিসফিস করে বলা কথা। সব তার স্বপ্ন ছিল। অথচ কিছু ব্যাতিক্রম হলেও সব তার সামনে। কি অদ্ভুত একরকম সুখ। মেজর তাকে তাঁবুর বাইরে বসিয়ে কি পরিমাণ ছোটাছুটি করছে। ওটা জানার পর কি করবেন উনি?
ভেতরে ভেতরে নতুন মিশ্র অনুভূতিদের উতালপাতাল সুখের আবহে ভাসতে ভাসতে একসময় ধ্যান ভাঙলো তার।
তার আশপাশে মেজর নেই? একা তাকে রেখে কোথায় গেলেন উনি। সামনেই দাউদাউ করে কাঠ পুড়ছে। মিনিট দশ পনের পার হলেও মেজরের দেখা নেই। রাহা ভয়ে চুপসে গেল। ওদিকে অনেকের গমগমে গলার আওয়াজ। দৌড়াদৌড়ি ছোটাছুটির আওয়াজ। রাহা গলা বাড়িয়ে ডাকলো
মেজর? মেজর কোথায় আপনি?
কয়েকজন গলা বাড়িয়ে তাকে দেখলো। আবারও কাজে লেগে পড়লো। রাহা কয়েক পা বাড়িয়ে মেজর বলে ডাকতে গিয়ে সবুজ ঘাসের আড়ালে থাকা পাথরে হোঁচট খেয়ে মুখ থুবড়ে পড়লো।
তানজীব এসে তাকে পেট ধরে পড়ে থাকতে দেখে হাত থেকে হাতের খাবার পানি আর বালিশ পড়ে গেল। ছুটে এসে বলল
কি করে হলো? বেশি লেগেছে? প্রাণো?
রাহা চোখমুখ খিঁচে পেট ধরে আছে। তানজীব উদ্বিগ্ন গলায় বলল
প্রাণো কি হলো? পেটে কি হলো? আমার দিকে তাকাও।
ভয়ে রাহা মূর্ছা গেল।
তানজীব হাঁকছেড়ে ডাকলো
ক্যাপ্টেন!
______________
রাহা যখন চোখ মেললো তখন সে তাঁবুর ভেতর। তোশকের উপর।
বাইরে হাসির আওয়াজ ভেসে আসছে। রাহা গলা বাড়িয়ে বুঝার চেষ্টা করলো কারা হাসছে। মেজর কোথায়? আবার কোথায় গেল?
কিছুসময় পর তাঁবুর দরজা সরিয়ে লম্বা পুরুষটিকে আসতে দেখে রাহা বালিশে হেলান দিয়ে বসলো। তানজীব তার সামনে গিয়ে বসলো। বলল
সেনা ডাক্তার দেখে গেছে তোমাকে।
কি বলেছেন?
তানজীব রহস্যজনক হাসলো।
কিছু বলেনি। পেট ধরে কাঁদছিলে? কি হয়েছে এখানে?
বলেই সে হাত রাখলো। রাহা শ্লথগতিতে নিকটে গিয়ে তার গলায় মুখ লুকিয়ে বলল…
বাবু।
তানজীব হেসে জড়িয়ে ধরে বলল,
হোয়াট ইজ বাবু?
রাহা তার চুলগুলো জোরে মুঠোয় নিয়ে বলল…
পেটে বাবু।
আচ্ছা! পেটে না থেকে কি মাথায় থাকার কথা?
বলেই হো হো করে হেসে উঠলো সে।
রাহা রেগে গিয়ে গলায় দাঁত বসিয়ে দিতে যেতেই তানজীব তার মুখ তুলে নিল। সারামুখে অসংখ্য ভালোবাসার চুম্বন চিহ্ন এঁকে শক্ত করে বুকের সাথে জড়িয়ে ধরে বলল..
আই লাভ ইউ বিড়ালিনী।
রাহার নাক কেঁপে উঠলো। মিহি স্বরে বলল
ডাক্তার আপনাকে বলেছে?
তানজীব তার মুখ তুলে নাকের ডগায় চুমু খেয়ে বলল
ইয়েস।
রাহা আঁখিজলে হাসলো। তানজীব তার কোলে মাথা রেখে শুয়ে বলল
আপনাকে এখন প্রচুর খেতে হবে। গুলুমুলু হতে হবে ম্যাডাম। তাই এখানে থাকা চলবে না। কালই চলে যাব আমরা।
রাহা বলল
কিন্তু….
তানজীব তার উদরে মুখ গুঁজলো। আলতোভাবে ঠোঁট চেপে বলল….
মাই জুনিয়র।
রাহা হেসে উঠলো। বলল
আপনি একটা পাগল।
_____________
কীটটা পেয়ে নোরা কিছুক্ষণ শক্ত হয়ে দাঁড়িয়ে রইলো। এটা রাহার? কিছুতেই হিসেব মিলছেনা। রাহা কি এজন্যই এতদিন ধরে অসুস্থ। কিন্তু এই কীট?
তারমানে সে আজ জানতে পেরেছে? অথচ বাড়ির কাউকে জানানোর প্রয়োজন বোধ করলো না। সবাইকে ডাকতেই মা, জেঠি আর অন্তরা এসে হাজির।
নোরা অন্তরাকে ডেকে কীটটা দেখাতেই অন্তরা গোলগাল চোখে তাকিয়ে বলল
আরেহ না না আমার না।
আমি বলেছি তোমার? এ ঘরে পেয়েছি।
এ ঘরে তো রাহা থাকে। এমা রাহার?
কপালে হাত দিল সে।
হ্যা এটা ওর।
রাজিয়া বেগম
দুজন ফিসফিস করে কি বলছিস রে?
নোরা বলল
এই দেখো। তোমার মেয়ে কত বোকা দেখেছ? এতদূর যে জার্নি করে গেল ওর যদি কোনো ক্ষতি হয়? মা ও তো আর ছোট নেই।
রাজিয়া বেগম মুখে শাঁড়ির আঁচল গুঁজলেন। মাহফুজা বেগম বললেন
আরেহ তাড়াতাড়ি ফোন করে দেখ না।
নোরা মিনাকে ফোন দিতেই মিনা খুশিতে গদগদকণ্ঠে বলল
শোন না ভাইয়া কিছু আগেই ফোন দিয়েছে। রাহা নাকি?
হ্যা জানি।
জানিস। আমাদের তো বললি না।
ও আমাদের কাউকে বলেনি। এখন কীট পেলাম।
মিনা হেসে উঠলো।
মেয়েটা এত বোকা! ওকে এখন চোখে চোখে রাখতে হবে। এখন চিন্তা নেই। ভাইয়া তো আছে।
আচ্ছা তুই রাখ। আমার নানুর কাছে ফোন উচিত।
আচ্ছা।
____________
রাতের খাবার টেবিলে সবার মন ফুরফুরে। সেলিম সাহেব বললেন
ও ফিরছে কবে? আমার অনেক আত্মীয় স্বজনকে দাওয়াত করতে হবে। খাওয়াদাওয়া যাতে ভালো করে, করে ওর শ্বশুরবাড়িতে।
সানজু বলল
জেঠু রাহা আপুর বাবাকে নয় এখন সব খরচ তোমাকে করতে হবে।
কেন?
সবার ঠোঁট হাসি দেখে উনারা দুজনই সন্দিহান চোখে চাইলো।
মানে আর বিয়ে হবেনা। কারণ আমি আবারও ফুপী হতে যাচ্ছি। ইয়েহহ….
এই চুপ।
মায়ের বকুনিতে চুপ হয়ে গেল সানজু। বলল
এমন করো কেন?
সাজ্জাদ সাহেব বললেন,
এটা কি সত্যি?
রাহান বলল
হ্যা।
সেলিম সাহেব বললেন,,
ভালোই হলো। ওর মা বাপ থাকলে আজ অনেক খুশি হতো। ভালো থাকলেই হলো। তাহলে ওকে সোজা এই বাড়িতে আসতে বল। আয়োজন এই বাড়িতে হবে।
মিনা আর সানজু একসাথে বলে উঠলো।
সত্যি?
সবাই তাদের দিকে রুষ্ট চোখে তাকালো।
সেলিম সাহেব বললেন
সত্যি। ও এই বাড়ির ছেলে। আমাদের ছেলে। ওর সন্তান এই বাড়ির বংশধর হবে।
মিনা খুশি হয়ে বলল
থ্যাংকিউ জেঠু।
আমি তোর শ্বশুর। তোর শ্বাশুড়িই না রিনা খান। তারে মা না ডাক আমারে তো বাপ ডাকতেই পারিস।
মনোয়ারা বেগম রক্তচক্ষু নিয়ে তাকালো। মিনা জিভে কামড় দিয়ে মনোয়ারা বেগমের পেছনে গিয়ে জড়িয়ে ধরে বলল
আমি যে বড়মা ডাকি তুমি দেখোনা জেঠু। মা-ই তো বকে। আবার আগলে রাখে।
মনোয়ারা বেগম তার গালে হাত রাখলেন। রাহান তা দেখে হাসলো। বলল
এবার মেজরের অপেক্ষায়।
_______________
রাহা আগুনের সামনে বসা ছিল। তানজীব আরও কয়েকটা কাঠ ফেলে আগুন নেড়েচেড়ে দিয়ে রাহার দিকে তাকালো। ভুরু উঁচিয়ে বলল
ভালো লাগছে?
খুব। আপনার মনে আছে ওই কথা?
তানজীব তার পাশে এসে বসলো।
অফকোর্স। আপনি আমার মান ভাঙাতে এসেছিলেন।
রাহা তার কাঁধে মাথা রাখলো। তার নরম হাতের ভাঁজে কড়াপড়া আঙুলগুলো চেপে বসলো। হাতের উল্টো বলিষ্ঠ ঠোঁটের চুম্বন।
ওরা সবাই খুব খুশি হয়েছে প্রাণো। আমাদের বাড়ি ফিরতে বলেছে।
রাহা মাথা তুলে তাকালো।
আপনি টোপর পড়বেন না?
জুনিয়রকে পড়াবো।
রাহা হেসে উঠে তার বুকে মাথা ঠেকালো।
___________
পুরো বাড়িটা সাজানো হয়েছে। বাইরে খাবারদাবারের বিশাল আয়োজন। রাহার মা ভাবি আর ভাই এল। অধীরের পুরো পরিবার এল। তানজীবের মামার বাড়ির লোকজন আর ঘনিষ্ঠ আত্মীয় স্বজনে বাড়ি ভর্তি। রাহার বাবা আর জেঠু আসেনি। মেয়েকে উনারা এমনিতেই দোয়া করে দিয়েছেন। যদিও রাহা তা জানেনা এখনো।
তানজীব আর রাহা বাড়ি ফিরতেই এত আয়োজন দেখে বিস্ময়ে বিহ্বল। গাড়ি থেকে নেমে বাড়ি আর আশপাশে তাকাতেই তাকাতেই তার কয়েক মিনিট পার হলো। মা বাবা মারা যাওয়ার পর পুরোপুরি ভাবে চাচ্চু আর জেঠুর হাত ধরে এই বাড়িতে এসেছিল সে আর মিনা। রাহাও এত আয়োজন আর এত লোকজন বিস্মায়াবিষ্ট হয়ে পড়লো। তারউপর মা ভাইকে দেখে আরও আবেগি হয়ে পড়লো।
সবাই ফুলের ঢালা নিয়ে এসে তাদের ফুল ছিটানো শুরু করলো। রাহান আর অধীর ফুলের মালা পড়িয়ে বলল
ওয়েলকাম মেজর।
তানজীব মালা খুলে তাদের গলায় পড়িয়ে দিয়ে বলল
মজা ছাড়। এত আয়োজন কে করেছে?
রাহান বুক ফুলিয়ে বলল
কেন আমরা কি তোর কেউ না?
তানজীব তার শার্টের কলার টেনে কাছে এনে জড়িয়ে ধরলো আষ্টেপৃষ্টে। রাহান হাসতে হাসতে চুপ হয়ে গেল। তানজীব ক্ষীণ গলায় বলল
আই লাভ ইউ মামা।
আই লাভ ইউ ঠু বাবা জীবন।
সবার চোখে জল নামলো খানিকটা হলেও। রাহাকে বাড়িতে ঢুকার আগেই মনোয়ারা বেগম বললেন
শোনো বউ আমি তোমার চাচী ছাড়া এই বাড়ির কর্তী তুমি আর মিনা। এই বাড়ির দু ছেলে। রাহান আর তানজীব। ছোট ছোট ত্যাগে কিছু ক্ষয় হয় না আমাদের। বরং ছোট ছোট ত্যাগ, ছাড়গুলো একসময় আমাদের সোনা হয়ে ধরা দেয়। মিলেমিশে সুখে শান্তিতে থেকো। ঘাড়ত্যাড়া ছেলেটাকে তুমিই সোজা করতে পারবে।
মিনি মিষ্টিমুখ করা।
রাহা সবার হাতে মিষ্টি খেল। তানজীবের নানী আনোয়ারা মুখে হাত বুলিয়ে বললেন
আয় আয় বাড়িতে পা রাখ নাতবৌ। তোর জন্য লাল বেনারসি আনছি আমি। সানজু ওরে সুন্দর কইরা সাজায় দিবি।
অফকোর্স নানু। রাহা আপু চলে এসো। বোরকা পাল্টে গোসল সেড়ে নাও। চলো চলো।
খানসা বেগম বললেন
এই থাম। অনেক জার্নি করে এসেছে। একটু রেস্ট দে। অনেক সময় আছে।
রাহা চলে গেল তাদের সাথে।
____________
রাহাকে সাজিয়ে গুজিয়ে রোহিনী, মিনা, নোরা আর সানজু নিয়ে এল। আনোয়ারা বেগম বললেন
লাল টুকটুকে বউ। তোরে সুন্দর লাগতেছে নাতবৌ। নজর না লাগুক।
রাহা মিষ্টি করে হাসলো।
রাহাকে রাজিয়া বেগম ডেকে নিয়ে বলল
তানজীবের জন্য একটা আংটি বানিয়েছি। এটা কিভাবে দেব?
উনাকে ডেকে দাও না আম্মা। উনি ওখানে আছেন বোধহয়।
অধীর ডেকে আনলো তানজীবকে। গোল্ডেন রঙের পাঞ্জাবিতে অন্যরকম দেখতে লাগছে। রাহা এই দ্বিতীয় বার তাকে পাঞ্জাবি গায়ে দেখলো। তার সুদর্শন মেজর।
রাজিয়া বেগম রুমালে করে আংটিটা দিয়ে বলল
এটা আমার পক্ষ থেকে দিলাম বাবা। ছেলেরা তো স্বর্ণ পড়েনা। এটা রেখে দিও।
তানজীব রাহাকে ইশারায় ডাকলো। রাজিয়া বেগমকে বলল
ওটা আপনার মেয়েকে পড়িয়ে দিন। আমার যা, ওরও তা।
রাজিয়া বেগম মাথা দুলালেন। রাহান বলল
নো নো আন্টি। আপনি কেন পড়াবেন? এদিকে দিন।
তানজীবের হাতে আংটিটা দিয়ে বলল
নে তুই পড়া। এই ক্যামেরা? নোমান?
তানজীবের মামাতো ভাই নোমান ক্যামেরা নিয়ে ছুটে এল।
রাহান বলল
ক্লিক মার। নোমান ক্যামেরা তাক করে বলল…
ভাবি স্মাইল।
রাহা মুখের উপর হাত দিয়ে রাখলো। তানজীব আঙুল টেনে আংটি পড়িয়ে বলল
তোদের ক্যামেরার গুষ্টিরে কিলাই।
সবাই হো হো হাসিতে ফেটে পড়লো। কিছুদূর যেতে না যেতেই মিনা হাত ধরে আবার টেনে আনলো তাকে। বলল
সবার একটা ক্লিক হয়ে যাক?
সবাই একসাথে বলে উঠলো।
হয়ে যাক।
পুরো দুই তিন পরিবারের সব সদস্য বাঁধা পড়লো একটি ফটো ফ্রেমে।
ছবি তোলা সবাই ছবি দেখতে ব্যস্ত। তানজীব রাহাকে চোখ টিপে দিল। রাহা হেসে উঠলো।
কেমন লাগছে ম্যাডাম?
ভীষণ ভালো। আপনার কত সুন্দর একটা পরিবার। আপনি কেন তাদের উপর এত অভিমান করে বাড়ি ছাড়লেন?
তোমাকে নিয়ে ফিরব বলে। কাছাকাছি থাকব বলে। ধন্যবাদ ম্যাডাম আমার জীবনের সমস্ত রঙ আবার ফিরিয়ে দেওয়ার জন্য। এবার জুনিয়রের অপেক্ষায়।
সমাপ্ত।