ঝরে_যাওয়া_বেলীফুল #পর্ব_৩

0
341

#ঝরে_যাওয়া_বেলীফুল
#পর্ব_৩
লেখিকা : আফরোজা আক্তার

রাতে ইরফান বাসায় এসে দেখে রুবি বাসায় নেই । এমনিতেই অফিসে প্রেজেন্টেশনের চাপ ছিল । তার উপর বাসায় এসে দেখে বউ নাই মেজাজ আরও গরম হয়ে গেছে । এক কাপ কফির জন্য বেলীকে প্রায় ৫/১০ বার ডেকেছে ইরফান । বেলীও সাড়া দেয় নাই । মেজাজ আরও খারাপ হয়ে যায় ইরফানের । বাসায় পরা রাবারের স্লিপারটা হাতে নিয়ে বেলীর রুমের দিকে যায় সে । আজকে বেলীকে জুতোপেটা করবে ইরফান । মিনু তখন ড্রইং রুমে বসে স্টার জলসায় ‘ কে আপন কে পর ‘ সিরিয়াল দেখছিল । মিনু আবার স্টার জলসা , জি-বাংলা বলতে অজ্ঞান । টিভিতে এইসব দেখে আর সিরিয়ালের ভিলেনদের ইচ্ছামত গালমন্দ করে সে ।
ওদিকে স্যান্ডেলটা নিয়ে রুমের সামনে গিয়ে দেখে দরজাটা আটানো , পুরোপুরি লক না । ইরফান বাহিরে দেখেই বকাবকি করতেছে ,

– নবাবজাদি দরজা দিয়ে আরাম করতেছে আজকে ওর আরাম ছুটাবো আমি , এত ডাকার পরেও সাড়া দেয় নি ।

ইরফান দরজাটা জোরে ধাক্কা মেরে খুলে দেয় । ‘ বেলী ‘ বলে রুমে ঢুকেই দেখে বেলী জায়নামাজে সিজদাহে আছে । ওড়নাটা দুই পেচ দিয়ে পুরো হাত ঢেকে নামাজ পড়তেছে বেলী । ইরফান পুরো থ হয়ে যায় । সে কাকে জুতা দিয়ে মারবে । ইরফান হাতে থাকা ঘড়ির দিকে তাকায় , ৮ টা বাজে তার মানে এখন এশা নামাজের ওয়াক্ত । বুঝতে পারে যে বেলী নামাজে থাকার জন্য সাড়া দিতে পারে নি । জুতা টা আস্তে করে হাত থেকে নামিয়ে নেয় ইরফান । রুম থেকে বেরিয়ে ইরফান মিনুর কাছে যায় । মিনু তখন সিরিয়াল দেখছে আর একা একা বক বক করছে ।

– কেমন অসিভ্য মাতারি , জবারে কেমনে কথা শুনায় । আহারে জবা মাইয়াডা কামের মানুষ দেইখা কি হইছে হেয় তো এহন এই বাড়ির বউ , এই বৌদি না ফৌদি এই মাতারি ডা আসলেই খারাপ ।

এরই মাঝে ইরফান ডেকে বসে মিনুকে ,

– এই মিনু ?
– জ্বে , কিছু কইবেন ভাই ?
– এক কাপ কফি করে দে তো , আর সারাদিন এইগুলি কি দেখস ?
– কে আপন কে পর , মাতারি ডা অনেক খারাপ ভাই , জবারে দেখতে ফারে না । জবা ছেমড়ি ডার কফাল আমাগো বেলী ভাবীর মত

এটা বলেই জিহবায় কামড় দেয় মিনু । টিভি অফ করে দিয়ে তাড়াতাড়ি পাশ কাটিয়ে যেতে নিলে ইরফান আটকায় তাকে ।

– রুবি কখন বের হইছে বাসা থেকে ?
– ছোড ভাবী বিকালে বের হইছে ।
– ওহ ,
– বেলী ভাবী কই ভাই ,
– ঘরে তুই থাকস , তুই জানস না । সারাক্ষণ টিভি আর সিরিয়াল নিয়ে থাকলে জানবি কিভাবে । বেলী নামাজ পড়ে ।
– আইচ্ছা আমি বানাইয়া দিতাছি

মিনু যেতেই নেয় ওমনি ইরফানের হাতের জুতাটা দেখে ফেলে । মিনুও সব বুঝে যায় । জুতাটা কি কাজে ব্যবহার করতো ইরফান তাও জানে মিনু ।

– ভাই জুতা নিছেন কিত্তে , বেলী ভাবীরে বাইরাইবেন নাহি ?
– তুই তোর কাজ কর , যা । আমি ফ্রেশ হতে যাই , কফিটা রুমে রেখে আসিস ।
– আইচ্ছা ।

ইরফান রুমে এসে টাওয়াল নিয়ে ওয়াসরুমে ঢুকে যায় । প্রায় ১০ মিনিট পরে কফির মগ হাতে বেলী রুমে ঢুকে ।
কফিটা মিনু-ই বানাতো , কিন্তু বেলী নামাজ শেষ করেই রান্নাঘরের দিকে যায় সে ।

– মিনু তোমার ভাই আসছে ?
– হ , হেই কোন সময়ই তো আইছে ।
– রুমে গেছিলো , আমি নামাজের মাঝে ছিলাম তাই উত্তর দিতে পারি নি ।
– হাতের জুতাডাও দেহেন নাই ?
– মানে ,
– মানে সেতের ছোড বউ বাহিরে গেছে আপনেরে আইসা ডাকছে আপনি সাড়া দেন নাই তাই জুতা নিয়া গেছিলো বাইরাইতে ।
– ওহ ,
– হুদা ওহ কইলেন ।
– কি আর করবো , এইসব তো পানি ভাত আমার কাছে । তুমি কি করো ?
– কইলো কপি বানাইয়া দিয়া আইতাম ।
– আচ্ছা যাও , তুমি নাটক দেখো আমিই বানিয়ে নিয়ে যাচ্ছি ।
– আইচ্ছা ।

তখন বেলীই কফি বানিয়ে নিয়ে যায় । সারা রুমে জায়গায় জায়গায় রুবি আর তার বরের ছবির ফ্রেম । দেয়ালে টাঙানো , বিছানার পাশে থাকা টেবিলে রাখা , সবত্র জায়গাতেই তাদের ছবি টাঙানো । নিজের বরের পাশে সতীনের ছবি । বুকের ভেতর আগুন জ্বললেও ঠোঁটে হাসি টা অবিচল । ভালোবাসার মাত্রা বেশি না হলেও অল্প তো আছে । সেখানেই জ্বালাটা বেশি ।
এরই মাঝে ইরফান ওয়াসরুম থেকে বের হয়ে যায় । আর দেখে বেলী দাঁড়িয়ে আছে হাতে কফির মগ ।

– কিরে তুই ?
– আপনার কফি ,
– রাখ টেবিলে ,
– হু ,

বেলী চলে যেতে নিলে ইরফান বলে ওঠে ,

– আজকে অফিসে অনেক চাপ ছিল , তোর জামার কাপড়ের কথা একেবারেই ভুলে গেছি । কাল আনবো ,
– আচ্ছা ,

রাত প্রায় ১০ টায় রুবি বাসায় আসে । কিছু শপিং ব্যাগ সাথে তার । ইরফানকে রুমে দেখে বলে ,

– কখন এলে ?
– দুই ঘন্টা হবে ,
– ওহ ,
– এত রাত করে ফিরলা ।
– ফিরতেই পারি , বন্ধুদের সাথে ঘুরলাম , খেলাম , শপিং করলাম ।
– ওহ ,
– একটা নেকলেস কিনেছি ।
– ভালো করেছো ।
– তুমি খেয়েছো ?
– নাহ , তোমার জন্যেই অপেক্ষা করছিলাম ।
– ওহ তাহলে খেয়ে নেও , আমি খেয়ে আসছি ।
– ভালো করেছো ।
– আমি ফ্রেশ হয়ে শুয়ে পড়বো , ওকে ?
– হুম ।

রুবি ওয়াসরুমে ঢুকে যাওয়ার পরে ইরফান ডাইনিং রুমে যায় । বেলী টেবিল সাজাচ্ছিল সেখানে ।

– প্লেট একটা দে , আরেকটা সরা ।
– রুবি আপু খাবেন না ?
– নাহ খেয়ে আসছে ও ।
– জ্বি আচ্ছা ,

খেতে বসে যায় ইরফান । বেলী ভাত বেড়ে দুই রকমের ভাজি , মুরগীর ঝোল সব সামনে এগিয়ে দেয় । ভাতে হাত দিয়ে বেলীর দিকে তাকায় সে । পাশে দাঁড়িয়ে টুকিটাকি নাড়াচাড়া করছিল সে । বেলীর হাত গুলো ইদানীং কাঁপে ।

– তুই খাইছিস ?
– পরে খাবো নে ,
– কোন পরে খাবি ?
– আপনি খেয়ে যান , আমি আর মিনু খেয়ে নিবো নে ।

আর কিছুই বলে নি ইরফান । চুপচাপ খেয়ে চলে যায় সে । রুমে গিয়ে দরজা আটকে দেয় ইরফান ।

পরদিন সন্ধ্যার পর ইরফান বাসায় এসে আগে বেলীর রুমে যায় । বেলী তখন কোরআন শরীফে ইয়াসিন সূরা পাঠ করছিলো । ইরফান রুমে গিয়ে কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থেকে বেলী বলে ডাক দেয় । ইরফানের ডাকে এদিক ফিরে চায় সে । কোরআন শরীফ বন্ধ করে মোনাজাত দিয়ে উঠে যায় বেলী ।

– কিছু বলবেন ?
– এই নে তোর কাপড় ,
– আচ্ছা ।
– সাথে স্নো আর তেলও রাখা আছে ।
– শুধু জামার কাপড় চাইছিলাম এত কিছু আনলেন যে ?
– বানাবি কোথায় এইগুলি ?
– মিনুর কাছে দিয়ে দিবো , ও সেলাই করে আনবে ।
– আচ্ছা তাহলে এই টাকাটা রাখ , সেলাইয়ের টাকা দিয়ে দিস ।
– পরে চেয়ে নিবো নে ।
– রাখ এখন , পরে না-ও থাকতে পারে ।

টাকাটা দিয়ে রুম থেকে বেরিয়ে নিজের রুমে যায় ইরফান । রুবি তখন পা এর উপর পা তুলে ম্যাগাজিন পড়ছে । ইরফানকে দেখেই শুরু করে ।

– ইদানীং কি ভালোবাসা বেড়ে গেছে নাকি ?
– মানে ?
– বাসায় এসেই বড় বউয়ের ঘরে ঢুকে গেলে , তাই বলছিলাম আর কি ।
– ওর জন্যে কয়টা জামার কাপড় এনেছিলাম , ওইগুলাই দিতে গেছি ।
– বাহ বাহ , আবার জামার কাপড়ও আনো নাকি ।
– এত কথা কেন বলতেছো রুবি ।
– কি এত কথা বললাম , তুমি কেন যাবা ওই ঘরে হ্যাঁ কেন যাবা ।
– রুবি এই পুরা বাসাটাই আমার , ওকে ?
– তো ? তাই বলে তুমি ওই শালীর রুমে যাবা ?
– রুবি , বড্ড বেশি করতেছো কিন্তু ?

রুবির প্রচন্ড পরিমাণ মেজাজ খারাপ লাগে । তার কথা হচ্ছে বেলীকে কিছুই দেয়া যাবে না । ইনফ্যাক্ট সে একেবারেই বেলীকে বের করে দিতে চায় । রুবি বুঝতে পেরে গেছে কোথাও না কোথাও ইরফানের মনে বেলীর জন্যে মায়া দয়া আছে । আর যেটা তার একদম পছন্দ না । ইরফান যখন বেলীকে মারধর করে সেটা দারুণ ভাবে এঞ্জয় করে রুবি । আর সে এমন কিছু কিছু কর্মকান্ড করে যার পুরো দায়ভার গিয়ে পরে বেলীর উপরে । বেচারি সাদা-সিধে মেয়েটাও বোবা হয়ে থাকে তখন ।

[ বিঃদ্রঃ আমাদের সমাজে এমন কিছু নারী আছে , যারা নিজেরা মেয়ে হওয়ার পরেও অন্য মেয়ের ঘর নষ্ট করে । এক বউ আরেক বউয়ের নামে উষ্কানিমূলক কথা বলে স্বামীর কান ভারী করে তুলে । এক সতীন অন্য সতীনের ছায়াও মারায় না । এমনকি ছেলে মেয়েদের মাঝেও হিংসার বীজ বপণ করে দেয় । বহু বিবাহ , কিংবা পরকীয়া নারী অথবা পুরুষ এইসব ঘটে যাওয়া ঘটনা গুলো আমাদের সমাজে অহরহ ঘটছে । আমরা একটু চিন্তা করলে দেখবো আমাদের আশেপাশেও এইসব মানুষের অভাব নেই , যেখানে নারীরাই নারীদের শত্রু । যেখানে নারীরাই অন্য নারীর সম্ভ্রম লুণ্ঠনের চেষ্টায় মত্ত্ব । আমার ব্যাক্তিগত মতামত একজন পুরুষ দ্বারা নারী ধর্ষিত হয় শরীরে , কিন্তু একজন নারী দ্বারাও আরেকজন নারী ধর্ষিত হয় তা হচ্ছে মনে । যে ছেলেটা বিবাহিত জেনেও আপনি হাত বাড়িয়ে দিচ্ছেন একবারও কি ভেবেছেন তার একটা বউ আছে অথবা সে হতেও পারে সন্তানের বাবা । একজন মা যখন বাচ্চার টিউশন টিচারের সাথে পালিয়ে যায় তখন কি সেই মায়ের মনে তার সন্তানগুলোর মুখ ভেসে ওঠে না , তার মনে কি এটা আসে না যে আমার স্বামী বহু কষ্টে থেকে আমাদের শখ আহ্লাদ গুলো পূরণ করে । একজন পুরুষ ঘরে স্ত্রী রেখেও বাহিরে মেয়েদের সাথে লেপ্টে থাকে তার কি ঘরে থাকা স্ত্রীকে মনে পড়ে না যে আমার বউটা তো আমার অপেক্ষাতেই আছে । কাউকে উদ্দেশ্য কিংবা ছোট করার উদ্দেশ্যে বলি নি , বাস্তবতা তুলে ধরেছি মাত্র । আর এই গল্পটা এই ধারাবাহিকতা মেনেই এগুবে । নিজের দেখা কিছু ঘটনাকেও এড করা হচ্ছে এই গল্পে । আমার দ্বারা কারো মনে আঘাত হলে অথবা আমি নিজের অজান্তে কারো মনে কষ্ট দিয়ে থাকলে আমি ক্ষমাপ্রার্থী ]

রাত প্রায় আড়াইটা । বেলীর ঘুম টা ভেঙে যায় । শরীরটা অনেক ব্যাথা তার । মারধরের ব্যাথা গুলো ইদানীং রাত হলেই বাড়ে তার । নিচে মিনু ঘুমায় । আর খাটে বেলী । খাট বলতে শুধুই খাট যাতে একটা তোশক আর সস্তা বিছানার চাদর , একই স্বামীর স্ত্রী হয়ে সে পায় অবহেলা অপর স্ত্রী পায় সুখ । রুবির খাটে দামী মেট্রিক্স , বেড শীট , কোন কিছুর অভাব নেই । আর বেলীর ঘরে তেমন কিছুই নেই । শরীরের ব্যাথায় উঠে বসে বেলী । গলাটা শুকিয়ে গেছে তার , একটু পানি খেলে ভালো লাগতো সাথে একটা নাপা ট্যাবলেট , খেলে যদি ব্যাথাটা কমে । আস্তে আস্তে খাট থেকে নেমে ওষুধের পাতা থেকে ওষুধ নিয়ে দরজা খুলে ডাইনিং রুমের দিকে যায় সে । পুরো বাসাটাই অন্ধকার । তেমন কিছুই দেখতে পাচ্ছে না বেলী । তাও হাতড়ে হাতড়ে এগিয়ে গেছে টেবিলের সামনে । ওয়ালে হাত রেখে রান্নাঘরের লাইট জ্বালায় বেলী । রান্নাঘরের লাইট অন করে সামনে তাকাতেই বেলী আৎকে উঠে ।

– ও মা গোওওও , কেহ ওইদিকে ?

আসলে ইরফান তখন লেপটপে অফিসের কাজ করছিলো । ড্রইং রুমে সোফায় বসে আরামসে কাজ করছিলো ইরফান । এইভাবে হঠাৎ আলো দেখায় ভয় পেয়ে যায় বেলী । আর তাছাড়া এমনিতেও বেলীর আত্মা ছোট । অল্পতেই ভয় পায় সে । বেলীর হাল্কা চিৎকারে ইরফান তাকায় ওর দিকে । লেপটপ রেখে ডাইনিং রুমের দিকে আসতে আসতে বেলীকে উদ্দেশ্য করে বলে উঠে ,

– ওই চিৎকার দেস কেন ?
– আপনি এত রাতে এইখানে কি করেন ?
– তুই কি করস ?
– একটু অয়ানি খাইতে আসছিলাম ।
– ওহ , আমি কাজ করতেছিলাম । এত ঘামছিস কেন তুই ?
– এমনিতেই ।

ইরফান দেখে বেলী তার ওড়নাটা বুকের মাঝে ভাজ করে সুন্দর করেই পরে আছে । রাতে শোয়াতে চুল খুলে শুইছে । তাই সেই চুল খোলা অবস্থাতেই আছে তবে এলোমেলো । ইরফান চুলের দিকে নজর দিলে দেখে বেলীর হাটু অবদি চুল । ইরফান যখন বেলীর চুল দেখছিলো তখন চুল পিঠ অবদি ছিল এত বড় হয়েছে স্র দেখেও নি । কারণ বেলী দিনের বেলায় মাথায় ওড়না দুই পেচ দিয়ে রাখে । আর ওইদিন মারার সময় বেলীর চুল খোপা করা ছিল । তাই খেয়াল করে নি । ইরফান দেখছে বেলীর জগ থেকে পানি ঢালতেও লেট করছে কারণ ওর হাত গুলো কাঁপছে , কালও দেখছিল তার হাত কাঁপছে ।

– ভালো করে ঢাল , পানি পড়বে তো ?
– হু

বেলী ততটাও ফর্সা না । আবার একেবারে কালো না উজ্জ্বল শ্যামলা রঙের অধিকারীনি সে । ইরফান বেলীর ঘাড়ে নজর করে । সেইদিনের বেল্টের বারির দাগ কালো হয়ে আছে তার ঘাড়ে , মুখটাও শুকনা তবে গালের দাগ গুলো ঝাপসা হয়ে গেছে । ইরফানের সামনে পানি খায় বেলী আর ট্যাবলেটটাও ।

– কিসের ওষুধ খেলি ।
– গা হাত পা ব্যাথা করতেছিল , তাই নাপা খাইলাম ।
– ওহ , সেইদিনের মা’র টা বেশিই হয়ে গেছিল । মাথা গরম হয়ে গেলে কিছুই ঠিক থাকে না আমার ।
– আমাকে মেরে হাত সুখ পেলে ক্ষতি কি ?
– এত মা’র খেয়ে পড়ে থাকিস কেন ?
– যাওয়ার জায়গা আছে ?
– ডির্ভোস দিতে চাইতেছি , তাতেও রাজি হোস না কেন ? ডির্ভোস মানে কি বুঝোস ?
– রুবি আপুর মত ইংলিশে অনার্স না করলেও পেটে বিদ্যা আছে টুকিটাকি । ডির্ভোস মানে তালাক এতটুকু বুঝি । কিন্তু আমি চাই না আপনি আমাকে ডির্ভোস দেন । আমি প্রয়োজনে বাসায় কাজ করেই খাবো । আপনার বাসায় তো কাজের লোকও লাগবে আমিই তো আছি কাজের লোক হিসাবে তবুও ডির্ভোস দিয়েন না আর আমিও সাইন করবো না ।

বেলীর আজকের কথা গুলো শুনে অনেকটাই অবাক ইরফান । যেই বেলী চুপচাপ পড়ে থাকতো সেই বেলী এমন কথা বলবে ভাবে নি সে । ইরফান আবারও বলা শুরু করে ,

– রোজকার অশান্তি একদম ভালো লাগে না আমার । তাহলে তুই গ্রামে চলে যা ।
– গ্রামে গেলে আব্বা কষ্ট পাবে । আর আমি তো অশান্তি করি না ।
– তুই করস না ঠিক আছে , কিন্তু রুবি করে । আর ভালো লাগে না আমার ।
– রুবি আপু কিছু বললে আমাকে এসে মেরে যাইয়েন । জানেন তো , পাগলেও নিজের ভালো বুঝে । আর স্বামীর ভাগ পাগলেও দেয় না , একবার ভেবে দেখেন তো আপনার হাতে কয়েক দফা মা’র খেয়ে তার উপর আপনাকে রুবি আপুকে দিয়ে দিছি আমি কেমন পাগল । আমি নিজেকে পাগল ভাবি না । কারণ আগেই বলছি পাগলেও স্বামীর ভাগ কাউকে দেয় না । তাহলে আমি পাগল না আমি হলাম বদ্ধ উন্মাদ । ঘুমাই পড়েন ,

আজ ইরফান বেলীর কথায় একদম স্তব্ধ হয়ে যায় । বেলী আজ প্রথমবার এত গুলো কথা বলেছে ইরফানকে । আসলে দেয়ালে পিঠ ঠেকে গেলে পিঠও তখন কথা বলতে শেখে । বেলী হেটে যাচ্ছিলো তখনই আটকায় ইরফান ।

– শুন ,
– হু
– তোর কি শরীর বেশি খারাপ ?
– নাহ আমি ভালোই আছি ।
– শরীর খারাপ থাকলে বল , আমি ডক্টরকে বলে ওষুধ এনে দিবো ।
– আমরা গরীব মানুষ , পিডা-ই আমাদের ওষুধ । আপনে মারা ব্যাতিত আমার রুমে হুটহাট ঢুকিয়েন না । রুবি আপুর যা অপছন্দের হয় তা করিয়েন না ।

বেলী রুমে ঢুকে দরজা লাগিয়ে দেয় । বেলীর নাক মুখ অনেকটাই ফুলা দেখাচ্ছিল । সোফায় বসে দুই হাত মাথায় দিয়ে নিচু হয়ে ভাবছে ইরফান । কি করবে সে ? কেউই জানে না যে সে দুই বিয়ে করেছে । দুই জায়গায় দুই রকম । কামরাঙ্গীরচরে সবাই জানে রহমান আলীর ছেলে তার বাবার কথায় এক গরীব মেয়ে বেলীকে বিয়ে করেছে । আর অন্যদিকে ঢাকায় সবাই জানে ইরফান আহমেদ বিয়ে করেছে তবে তার বউ প্রভাবশালী এক ধনী লোকের মেয়ে রুবি ইয়াসমিন । দুই জায়গায় দুই রকম পরিচয় তার । আবার বেলীর কথাও ভাবছে সে । এতটা মারধর না করলেও পারতো বেলীকে , আর বেলীও যেমন মা’র শুরু করলে চুপ করে মা’র সহ্য করে যতক্ষণ না মা’র শেষ হয় । কিন্তু কি করবে ইরফান , রুবি যেইভাবে কথা তাকে বলে তার রাগ উঠে যায় ।
ইরফানের অবস্থা এখন , দুই ফুল এক মালি টাইপ । আবার দুই নৌকায় পা দিয়ে চলার মত । অবশ্য এটাও ভুল । ইরফান একজনকে নিয়েই আছে সে হচ্ছে তার দ্বিতীয় স্ত্রী রুবি । তাহলে প্রথম স্ত্রী বেলীর অস্তিত্ব কি তার জীবনে ? প্রশ্ন হাজার কিন্তু উত্তর একটারও নেই , উত্তরের কাগজটা শূন্য পড়ে আছে ।

চলবে…………….

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here