ঝরে_যাওয়া_বেলীফুল #পর্ব_৩৩,৩৪

0
220

#ঝরে_যাওয়া_বেলীফুল
#পর্ব_৩৩,৩৪
লেখিকা : আফরোজা আক্তার
৩৩

সময়ের সাথে সাথে পুরানো ক্ষত গুলো মিশে যায় । কিন্তু সেই ক্ষতের যন্ত্রণার রেশটুকু যেতে যেতেও থেকে যায় । বেলী সব ভুলে ইরফানের সাথে সেইভাবেই মিশে গেছে যেভাবে চুম্বক লোহাকে আটকে রাখে । ইরফানের বাবা কয়েকবার বেলীকে নিয়ে যেতে চেয়েছিলেন । এমনকি তিনি এই কথাতেও উপনীত হয়েছেন যে তিনি শুধুমাত্র বেলীকে তার মেয়ে হিসেবে পরিচিত করবেন এবং ওনার স্থাবর অস্থাবর সমস্ত সম্পত্তি তিনি বেলীকে দিয়ে দিবেন তবে তার আগে গ্রামে বিচার সভা বসিয়ে সবাইকে সব কিছু জানিয়ে বেলীর সাথে ইরফানের তালাক করিয়ে দিবেন । কারণ তিনি বেলীর এই অবস্থার জন্যে একমাত্র নিজেকে দায়ী করেন ।

একজন বাবা কতটা অসহায় হয়ে গেলে এমন সিদ্ধান্তে উপনীত হন তা সেই বাবা-ই জানেন । ইরফানের অপরাধ এতটাই বেশি ছিলেন যে রহমান আলী বেলীর সামনেই বলেছিলেন ,

– দুনিয়াতে এত ভালো মানুষরা মরে যায় আল্লাহ পাক এই এর মত দুই একটা শয়তান এই দুনিয়াতে রেখে দিছে ।

শ্বশুরের কথা শুনে বেলীর আত্মাটা কেঁপে ওঠে ।

– বাবা কি বলেন এইসব আপনি ? আপনি আমার বিধবা হওয়াটা দেখতে পারবেন তো বাবা ? আর যেখানে আমি সব ভুলে গেছি আপনিও ভুলে যান বাবা । আর সব থেকে বড় কথা বাবা , মানুষটা তার সব ভুল বুঝতে পারছে । যে মানুষ তার ভুল বুঝতে পেরে অনুতপ্ত হয় তাকে ক্ষমা করে দেয়া উচিত । বাবা ক্ষমা করা মহৎ গুন । ও-কে ক্ষমা করে দিন বাবা ।

ছেলের বউয়ের কথা শুনে রহমান আলী অনেক অবাক । এ কেমন নারী , যে কিনা এত কিছু সহ্য করার পরেও বলে ক্ষমা করে দেয়ার কথা ।

– তুই এই শয়তানটারে ক্ষমা করে দিতে কিভাবে বলস মা ?
– বাবা , সে মানুষ । তাকে শয়তান বলবেন না । আমার স্বামী সে বাবা । এইসব বলবেন না দয়া করে ।
– দেখলা তো ইরফান , যে তোমার সম্পর্কে সামান্য কটু কথা শুনতে পারে না সেই মেয়েটারে তুমি দিনের পর দিন এইভাবে এত বাজে ব্যবহার কিভাবে করছো তুমি ?

বাবার কথায় ইরফান আরও মাটিতে মিশে যাচ্ছে লজ্জায় । পরিস্থিতি আরও অবনতির দিকে যাচ্ছে দেখে বেলী তার শ্বশুরকে বুঝিয়ে শুনে অন্য রুমে পাঠিয়ে দেয় । আর ইরফান তখন রুমে গিয়ে ওয়াসরুমে ঢুকে যায় ।

হাতের টুকটাক কাজ সেড়ে রুমে চলে আসে বেলী । এসে দেখে ইরফান শুয়ে আছে । বেলীর মন বলছে ইরফান ভালো নেই । সে আজ তার বাবার কাছে সব স্বীকার তো করে নিয়েছে কিন্তু সেই সাথে সে ভিষণ লজ্জিত তার সব অপরাধের জন্য । তাই বেলী আর বাড়তি কোন কথাতে যায় নি । চুপ করে লাইট অফ করে শুয়ে পড়ে ইরফানের পাশে । আজ ইরফান ওপাশে মুখ ফিরিয়ে শুয়ে আছে । অন্যান্য দিন ইরফান তার দিকে মুখ করে ঘুমায় । কিন্তু আজ বিপরীত হলো । এই বিপরীতের কারণ হয়তো কিছুক্ষণ আগে ঘটে যাওয়া ঘটনা ।

জীবনে কিছু ঘটনা ঘটে যায় যার উপর সবার হাত থাকে না তেমনি ইরফান আর বেলীর জীবনে ঘটে যাওয়া এই ঘটনাটিও আপত্তিজনক । তবে আপত্তিজনক হলেও এটাই হয়তো নিয়তি ছিল । হয়তো এটাই তাদের দুজনার ভাগ্যে লিখা ছিল ।

আজ বেলীর মনটা বড় কাতর হয়ে আছে । ইরফান যদি এইভাবে থাকে তাহলে সেদিন তার মন বড়ই বিচলিত থাকে । আজ বেলীও অপরপাশে মুখ করে শুয়ে আছে । বৈশাখীর ঝড় আজ বেলীর অন্তরে বয়ে যাচ্ছে ।

রাতের মধ্যাংশে বেলী কিছু অনুভব করতে পারে । কেউ একজন তাকে আষ্ঠেপৃষ্ঠে জড়িয়ে রেখেছে । বেলীর পিছন দিকটা কেউ একজন জড়িয়ে ধরে আছে । হাতের স্পর্শ বলে দিছে এ হাতের ছোয়া অন্য কারো না । এ হাতের স্পর্শ তার বরের ।

ইরফান বেলীকে জড়িয়ে আছে । ইরফানের হাতটা সরিয়ে নিয়ে ইরফানের দিকে ঘুরে শোয় বেলী ।
শান্ত নয়নে ইরফান চেয়ে আছে বেলীর দিকে ।

– কি হয়েছে ? কি দেখছেন ,
– তোমাকে ,
– ওইদিকে মুখ করে শুইলেন কেন আজকে ?
– ভালো লাগছিল না ।
– শরীর খারাপ ?
– উহু ,
– তাহলে ?
– আমি কি আসলেই শয়তান ?
– উহু , মানুষ কখনো শয়তান হয় না ।
– বাবা কি বললো , শুনলা না ?
– বাবা হয়তো কষ্ট পাইছে তাই বলে ফেলছে , আপনি কষ্ট পাইয়েন না ।

বেলীকে শোয়া অবস্থায় জড়িয়ে নেয় ইরফান । বেলীও ইরফানকে জড়িয়ে নেয় ,

– বেলীফুল কিভাবে পারিস রে তুই ?
– কি কিভাবে পারি ?
– এইযে এত উদার কিভাবে হোস ?
– আমি উদার না , আমি পারি না কারো সাথে খারাপ আচরণ করতে আর আপনার সাথে তো একদমই না । কারণ আমি আপনাকে ভালোবাসি ।
– কতটা বাসিস ভালো ?
– অনেকটা ,
– আয় না , আজকে মিশে যাই ?
– মিশেই তো আছি আমি আপনার সাথে ,
– আরও মিশতে হবে ,
– তাহলে মিশিয়ে নেন ।

রাতের গভীরতায় দুজন মানুষের ভালোবাসা গুলো আরও গভীর হয় ।
কিছু রাগ কিছু অভিমান সব কিছুই মিলিয়ে যায় একটু ভালোবাসার ছোয়ায় ।

– বেলী,,,,,,,,,,,?
– হু ,
– আরেকটা বেলী আসলে কি খুব বেশি ক্ষতি হবে ?

কাপড় বিহীন লজ্জা চোখে ইরফানের মুখের দিকে তাকায় বেলী । ইরফানের মুখ থেকে বেরিয়ে যাওয়া কথাটা শুনে বেলীর কলিজাটা এক লহমায় শান্ত হয়ে যায় ।

– কি হলো , বল , আমাদের দুজনের মাঝে আরেকজন আসলে কি খুব বেশি ক্ষতি হবে ?

বেলী আর কিছু বলতে পারে নি সেই মুহুর্তে । শুধু দুইহাত দিয়ে ইরফানকে জড়িয়ে নেয় আর ইরফানের বুকে নিজের মুখ লুকিয়ে নেয় ।

.
.

চলবে………………………..

#ঝরে_যাওয়া_বেলীফুল
#পর্ব_৩৪
লেখিকা : আফরোজা আক্তার

সকালের দিকে বেলী নিজ হাতে সব কিছু করে । নাস্তা বানানোর কাজে ব্যস্ত সে । বেলীর শ্বশুর আজ চলে যাবেন গ্রামে । ওনার জন্যেও রান্না করতে হবে । এদিকে ইরফানেরও অফিস আছে । সব মিলিয়ে প্রচুর ব্যস্ত সে ।
সকালের নাস্তার ঝামেলা মিটিয়ে নিয়েছে বেলী । স্বামী এবং শ্বশুর উভয়ের জন্যে নাস্তা রেডি করে টেবিলে সাজিয়ে রেখে দিয়েছে বেলী । মিনুও হাতে হাতে সাহায্য করে দিচ্ছে বেলীকে । অন্যদিকে সকালে ইরফান রেডি হবে , তবে সে তার প্রয়োজনীয় জিনিস খুৃঁজে পাচ্ছে না । সেখানেও বেলীকে তলব করে সে । বেলী আবার রান্নাঘরের কাজ ফেলেই দৌড় দেয় ইরফানের কাছে । সব মিলিয়ে ঘুড়ির মত উড়তে হয় বেলীকে সকালের সময়টা । ইদানীং ইরফান বেলী ছাড়া কিছুই বুঝে না এবং বুঝতেও চায় না । তার সব কিছুতেই বেলীকে চাই । বেলী না হলেই তার চলেই না অনেকটা ছোট বাচ্চাদের মত (তীর ছাড়া যেমন তাদের চলেই না) তেমনি ইরফানের বেলাতেও তাই হয়েছে । ইরফানের ডাকে সে রুমে আসে ।

– ডেকেছিলেন ?
– জ্বি আপনি কোথায় থাকেন ।
– আপাতত রান্নাঘরে ছিলাম ।
– আমার ওয়ালেট কোথায় ?
– ড্র‍য়ারে ,
– আমার লাল ফাইলটা কোথায় ?
– ড্রয়ারে কালকে তো নিজেই রাখলেন ।
– ওহ ,
– এইবার যাই ?
– নাহ , টাই বেঁধে দিয়ে যাও ।

ইরফানের ছোট ছোট আবদার গুলো বেলীকে বড্ড বেশি বিরক্ত করে তবুও সে চুপ করে থাকে । বহু কষ্টের পর ইরফানের ভালোবাসা পেয়েছে সে । এই ভালোবাসা হারাতে চায় না বেলী । তাই লক্ষী মেয়ের মত ইরফানের সামনে দাঁড়িয়ে ইরফানের বুকের উপরে হাত উঠিয়ে ইরফানের টাই ঠিক করে দেয় বেলী । আর ইরফান মনে হয় এই সুযোগটার অপেক্ষাতেই ছিল । ঝট করেই বেলীর কোমড় জড়িয়ে ধরে ইরফান । বেলী একটু নড়ে ওঠে ইরফানের এইভাবে ছোয়াতে ।

– কি হলো , কারেন্টের শক খেলে নাকি , এইভাবে কেঁপে উঠলা যে ?
– আমি তো বুঝতে পারছি ?
– কিহ ,
– আপনি এইসব করার জন্যেই আমায় দিয়ে টাই বাঁধান ।
– হা হা হা
– আবার হাসে ,
– হাসবো না , তো কি করবো কান্না করবো ?
– বেহায়া ,
– কিহহহ , আমি কি ?
– বেহায়া ,
– আর ?
– বেশরম ,
– আর ,
– বেলাজা
– সেটা কি ?
– যাদের লাজ-লজ্জা নাই ।
– হুপ ,
– এইবার তো ছাড়েন , নাস্তা করবেন কখন চলেন ।
– বাবা এসেছেন ডাইনিংয়ে ?
– তখন তো দেখি নাই , এখন এসেছেন কিনা জানি না ।
– হু ,

বেলী খেয়াল করে ইরফানের মুখটা মুহুর্তের মাঝেই কালো হয়ে যায় । ইরফানের নিশ্চয়ই কিছু মনে পড়ে গেছে তাই হয়তো হঠাৎ করেই মন টা খারাপ হয়ে গেছে । বেলী ইরফানের মুখের দিকে তাকিয়ে বলে ,

– কি হয়েছে ?
– কিছু না ,
– বাবার কথা মনে গেছে , তাই তো ?
– নাহ , তেমন কিছু না ।
– বাবা যা বলেছেন সেটা ভুলে যান । হয়তো তিনি মনের কষ্টে বলে ফেলেছেন ।
– জানি আমি , অপরাধ করেছি আমি । তাই তো শুনতেও হয়েছে আমায় ।
– হয়েছে তো , বাদ দিন না । চলুন খেতে চলুন ।
– তুমি যাও আমি আসছি ।
– আচ্ছা ।

নাস্তার টেবিলে একপাশে রহমান আলী আরেক পাশে ইরফান বসে আছে । বেলীও পাশে বসা আছে ইরফানের । নাস্তার টেবিলে শুধুই নিরবতা বিরাজ করছে । ইরফানের নজর দিকে , সে চোখ তুলে তাকাতে পারছে না তার বাবার দিকে । আর রহমান আলীও তাকায় নি ইরফানের দিকে । এক পর্যায়ে ইরফানকে উদ্দেশ্য করে রহমান আলী বলে উঠে ,

– আজকে নজর নিচু করতে হচ্ছে কেন তোমায় ?
-…………..

বাবার কথায় একদম চুপ হয়ে যায় ইরফান । তার মুখে কোন কথা নেই । কাজই করেছে সে এমন । কথা বলবে কিভাবে সে । রহমান আলী দম নিয়ে আবারও বলা শুরু করে দেয় ।

– জীবনে এমন কিছু কাজ করতে হয় যেই কাজের জন্যে মাথা উঁচু হয় এমন কাজ করা উচিত নয় যেই কাজের জন্যে নিজের মাথা এবং নজর দুটোই নিচু হয় । তুমি আজকে যা করছো তাতে তুমি যদি অনুতপ্ত হও তাহলে আলহামদুলিল্লাহ , আর না হলে কিছুই করার নাই আমার । যেখানে বেলীর মত একটা মাটির দলারে তুমি এত কষ্ট দিছো সেখানে তোমার থেকে আমি আর কি আশা করতে পারি । আমি রহমান আলী যে লোকটা কামরাঙ্গিরচরের সব বিচার করি আজ সেই আমার ছেলেই কিনা এত জঘন্য পাপ করছে । তুমি বাইচা গেছো এটা শহর বইলা এটা যদি গ্রাম হইতো তাহলে তোমারে সবাই জুতার মালা গলায় পরিয়ে গ্রাম ছাড়া করতো

রহমান আলীর কথা গুলো সোজা বুকে গিয়ে লাগে ইরফানের সাথে বেলীরও । বেলীর নজর ততক্ষনাৎ ইরফানের দিকে যায় । বেলী বেশ বুঝতে পারছে ইরফানের খাওয়া ভেতরে যাচ্ছে না । ইরফান হয়তো এখনি না খেয়েই উঠে যাবে , তাই বেলীই তার শ্বশুরের কথার মাঝে কথা বলে উঠে ,

– বাবা খাওয়ার সময় এইসব বাদ দিন । খাওয়া দাওয়া করুন বাবা ।
– এইভাবে ধামা-চাপা কতদিন দিবা বউমা । তোমাকে নরম পেয়েই তো আজকে এই কাজ করতে সাহস পাইছে । আর তুমিও তো কম যাও না বউমা । এতকিছু হয়ে গেছে মুখ থেকে একটা আওয়াজ পর্যন্ত বের করো নাই ।
– বাবা আওয়াজ বের করলে কি হতো । কথায় আছে আল্লাহ পাক যা করেন বান্দার ভালোর জন্যে করেন । সব কিছুর পরেও আমি তো আলহামদুলিল্লাহ ভালো আছি বাবা । তাই এইসব কথা বাদ দিন , যা হয়েছে ভুলে যান বাবা ।

ছেলের বউয়ের কথা শুনে রহমান আলী কিছুক্ষণ ছেলের দিকে তাকিয়ে থাকেন । তারপর আবার বলেন ,

– বেলীর মাকে সব জানাতে হবে আমাকে ।

এই কথা শুনার পর বেলী আর ইরফান এক সাথে রহমান আলীর দিকে তাকান । বেলীর বুকে আচমকাই কামড় পড়ে যায় ।

– বাবা ভুলেও যাতে আমার মায়ের কানে যাতে এইসব না যায়৷। আমার মা মরেই যাবে বাবা ।
– তাই বলে এত বড় সত্যি জানাবো না আমি ওনাকে ?
– না বাবা ,
– কি বলো এইসব তুমি । এখন জানাইলা না ভালো কথা কিন্তু পরবর্তীতে যদি তোমার মা অন্য কারো মাধ্যমে জেনে যায় তখন কি করবা ।
– জানবে না বাবা ,
– যদি জানে তখন কি করবা ?
– যদি শব্দটার কোন অর্থ নেই বাবা , বাদ দিন এখানেই সব মাটি চাপা দিয়ে দিন । আমি চাই না আমার মা কষ্ট পাক আমি চাইনা আমার স্বামী আমার মায়ের চোখে ছোট হয়ে যাক ।

বেলীর কথায় শেষ বারের মত ইরফানকে ক্ষমা করে দেন রহমান আলী । বাবা হয়ে নিজের সন্তানকেও ছাড় দেয়ার পাত্র নন রহমান আলী । ওনার কাছে যে অন্যায় করবে সেই অপরাধী এইবার হোক সে নিজের ছেলে আর হোক সে বাহিরের অন্য কেউ । এইবারও হয়তো ইরফানকে চরম শাস্তি দিতেন তিনি । কিন্তু একমাত্র ছেলের বউয়ের জন্যে তিনি থেমে গেলেন । বেলীর আকুতি মিনুতি তার হাত পায়ে শিকল পরিয়ে দেয় । তাই তিনি এইবার ক্ষমা করতে বাধ্য হয় হোন তার ছেলে ইরফানকে ।

দুপুরের পরেই খাওয়া দাওয়া করে ঢাকা ত্যাগ করেন রহমান আলী । বেলীকে মন ভরে দোয়া করে বাসা থেকে বিদায় নিয়ে চলে যান তিনি । আর এইদিকে আবার একা হয়ে যায় বেলী । যদিও ইরফান অফিসে থেকেই দুই থেকে তিন বার ফোন করে কথা বলে বেলীর সাথে । যতটা পারে বেলীকে নিজের কাছে রাখতে চায় সে । বেলীকে যতটা সম্ভব ভালো রাখা যায় যতটা সম্ভব আদরে রাখা যায় তার সবটুকু খেয়াল রাখে ইরফান ।

এভাবেই কেটে যায় প্রায় এক মাস ,
বেলীর সংসারে সুখের অভাব নেই । তার সংসারের আনাচে কানাচে ভালোবাসারা এখন লুটোপুটি খেলে । ভালোবাসা গুলো দুহাতে কুড়িয়ে নিয়ে আজ বেশ সুখে আছে বেলী আর ইরফান ।
দুজনার সংসারে সুখের কমতি নেই এখন । এর মাঝে রুবি আর ইরফানের জীবনে বিঘ্ন ঘটায় নি । রাজু নামের অতীতটাকে বেলী ভুলে গিয়ে নিজের স্বামীর সাথে সুখে শান্তিতে সংসার করায় ব্যস্ত ।

ইদানীং বেলীর শরীরটা ভালো যাচ্ছে না । কিছুই খেতে পারে না সে । যা খায় তাই মনে হয় বেরিয়ে আসে ভেতর থেকে । শরীরটা খুব খারাপ লাগায় অসময়ে শুয়ে থাকে বেলী । ইরফান অফিস থেকে এসে বেলীকে শুয়ে থাকতে দেখে প্রশ্ন করে ,

– বেলী , এই বেলী ?
– কি হলো আবার ,
– তোমার কি হয়েছে , শুয়ে আছো যে ?
– আমার শরীরটা ভালো লাগছে না , তাই শুয়ে আছি । কিছু লাগবে ?
– নাহ থাক , তুমি শুয়ে থাকো । আমি ফ্রেশ হয়ে নেই ।
– হু ।

বেলী অসুস্থ শুনলেই ইরফানের কলিজায় কামড় পরে । বেলীকে অসময়ে শুয়ে থাকতে দেখে ইরফানের ভেতর টা কু ডাকতে শুরু করে দেয় । ওয়াসরুমে বেলীকে নিয়ে ভাবতে থাকে ইরফান । এরই মাঝে বেলী অনেক জোরে জোরে ওয়াসরুমের দরজায় নক করে ।

– আরে খুলেন দরজা টা , বাথরুমে এতক্ষণ কি করেন হ্যাঁ ?
– আরে ভাই , বের হচ্ছি এক মিনিট ।
– কেমন লাগে মেজাজ টা এখন । আপনি কি কাথা বালিশ নিয়ে বাথরুমে ঢুকেন নাকি , বের হোন ।

বেলীর কথায় ইরফান কোন রকম টি-শার্ট আর ট্রাউজার পরে ওয়াসরুমের দরজা খুলে । ইরফাম দরজা খুলেও স্থির হয় নি ওমনি ইরফানকে নামার সুযোগ না দিয়ে বেলী ওয়াসরুমের ভেতরে ঢুকে যায় । বেলীর এমন তাড়াহুড়ো দেখে ইরফান খানিকটা বোকার মত দাঁড়িয়ে থাকে পাশেই । বেলী ভেতরে ঢুকেই বমি করে দেয় । দাঁড়িয়ে বমি করতে করতে এক সময় বসে পড়ে সে । ইরফান বুঝতে পারে বেলীর খুব কষ্ট হচ্ছে , তাই ইরফান পানির কল ছেড়ে দেয় আর বেলীর মাথার দু’পাশে চাপ দিয়ে ধরে রাখে । বেলীর প্রচন্ড বমি বেগ হচ্ছে । বমির বেগে তার চোখের পানি বের হয়ে গেছে তবুও বেগ কমছে না । ইরফান তখন হালকা পানি হাতে নিয়ে বেলীর মাথায় দেয় । শরীর অত্যন্ত খারাপ লাগছিল বেলীর । নিজে উঠতে পারবে না তাই ইরফানকেই বলে ,

– আমায় ধরেন , উঠান আমায় । শরীরে জোর পাচ্ছি না আমি ।

ইরফান বেলীকে ধরবে কি , সে তো হা হয়ে আছে বেলীর হঠাৎ কি হলো যে একেবারে বমি করে দিলো । এই চিন্তায় সে শেষ হয়ে যাচ্ছে ।

.
.

চলবে……………………

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here