সুখবৃষ্টি-২

0
303

#সুখবৃষ্টি-২

নিজের মায়ের এমন হঠাৎ অজ্ঞান হয়ে যাওয়ার ক্ষমতা দেখে বিস্মিত হয়েছিল ইলহানও। কিন্তু অরিনকে খুব করে বোঝাতে চাইল,” আসলে আমার মা এমনই। সব বিষয়ে একটু বেশি উত্তেজিত হয়ে পড়েন। অতিরিক্ত অবাক হলে জ্ঞানও হারিয়ে ফেলেন। তোমাকে মা এতোদিন ইলমির ফ্রেন্ড হিসেবে জানতো। হঠাৎ বধূবেশে দেখে চমকে গেছেন। তাই এমন হয়েছে।”
অরিন সন্তুষ্ট হলো না। ইলমির বান্ধবী হিসেবে অরিন যতবার এই বাড়িতে এসেছে, একবারও মিসেস ইলোরার সঙ্গে তার দেখা হয়নি। আজই প্রথম দেখা হয়েছে। তাই অবশ্যই তিনি অরিনকে চেনেন না। তবুও কেন জ্ঞান হারিয়ে ফেললেন? কারণ সুন্দর ছেলের বউ হিসেবে কালো আর দরিদ্র মেয়েকে মেনে নিতে পারেন নি। মনের কথা মনেই লুকিয়ে রাখল অরিন। ইলহানকে বুঝতে দিল না। পুরো দশদিন ইলোরা অরিন অথবা ইলহান কারো সাথেই কথা বলেননি। পরে ইলহান কিভাবে মাকে মানিয়েছে তা সে-ই জানে। অন্যদিকে অরিনের শ্বশুর যেন একদম ভিন্ন মাটিতে গড়া মানুষ। অরিনকে মেনে নিয়েছেন স্বাচ্ছন্দ্যেই। মাঝে মাঝে অরিনকে সামনে বসিয়ে গল্প করেন। বিভিন্ন ধরণের গল্প, রাজনৈতিক বিষয়ের গল্প, মিডিয়ার জগৎ নিয়ে গল্প, গাছ-পালা নিয়েও গল্প করেন। অরিনের শ্বশুরের বাগান করার শখ আছে। তাঁর ছুটির দিনগুলো কাটে গাছ নিয়েই। ভদ্রলোক কি সুন্দর করে যে অরিনকে মা বলে ডাকেন! অরিনের নিজের বাবার কথা মনে পড়ে যায়।
” বুঝলে মা, ভাবছি বাগানে একটা পদ্মফুলের বিল করবো। বিশাল বাথটাব বসিয়ে দিবো। পানিভর্তি বাথটাবে পদ্মফুলের লতাপাতা ঝুলবে। এতে কি মশা-মাছির উপদ্রব হওয়ার সম্ভাবনা আছে?”
অরিন হেসে উত্তর দেয়,” জানি না বাবা। চেষ্টা করে দেখতে পারেন। পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করে রাখলে মশা-মাছি হওয়ার কথা না।”
” তা অবশ্য ঠিক বলেছো। বাগানের জন্য একটা মালি রেখে দিলেও হয়।”
তিনি খাবার-দাবার নিয়েও জমিয়ে গল্প করতে পারেন। অরিনের কাছে প্রায়ই এটা-ওটা খাওয়ার আবদার করেন। অরিন হাসিমুখে রান্না করে দেয়। সেদিন বলছিলেন ইলিশ মাছ আর কাঁচকলা দিয়ে একটা প্রিপারেশন করতে। পুরো রেসিপি তিনিই বললেন। অরিন শুধু রেঁধেছে। খাওয়ার পর শায়িখ সাহেবের চেহারা তৃপ্তিতে ভরে উঠল। আঙুল চাটতে চাটতে বললেন,” বাবর্চির হাতের রান্না সবসময় ভালো লাগে না। আর তোমার শাশুড়ী তো রান্নাঘরে ঢুকতেই চায় না। অনেক দিন পর মনে হচ্ছে মায়ের হাতের খাবার খেলাম।”
অরিনের চোখে অশ্রু জমানোর জন্য এইটুকু প্রশংসা বাক্যই যথেষ্ট। এভাবে আগে কেউ কখনও তার প্রশংসা করেনি। সব মিলিয়ে সংসারটা চলছে চমৎকারভাবে। শুধু মাঝে মাঝে মিসেস ইলোরার থেকে কটূবাক্য শুনতে হয়। তিনি অহংকারী মানুষ। তাই অরিন এই ব্যাপারটা এড়িয়েই চলে। কিন্তু ইদানীং আর এড়িয়ে চলা সম্ভব হচ্ছে না। তিনি নিশ্চয়ই অরিনকে নিয়ে বড় কোনো ষড়যন্ত্র করছেন। সেদিন রুমে নিয়ে মেয়েদের বায়োডাটা দেখালেন। তারপর বললেন অরিন নাকি ইলহানকে ঠকাচ্ছে। আর এটাও নাকি তিনি প্রমাণ করবেন। কি আশ্চর্য!
আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে অরিন কাজলটা আবার ঠিক করল। আচ্ছা, কাজল দেওয়ার কারণে কি তাকে বেশি কালো লাগছে? কাজলটা মনে হয় মুছে ফেলা উচিৎ। অরিন টিস্যু দিয়ে মুছতে নিবে এমন সময় ড্রয়িংরুম থেকে তাড়া দিল ইলহান,” দ্রুত এসো অরিন।সবাই চলে এসেছে।”
অরিন কাজল মুছল না। তার খুব মনখারাপ লাগছে। কারো সামনে যেতে ইচ্ছে করছে না। কিন্তু না গেলেও তো খারাপ দেখায়। অরিন মাথায় কাপড় টেনে গাঢ় আড়ষ্টতা নিয়ে ড্রয়িংরুমে এলো। সোফাভর্তি মানুষজন। একসাথে এতো মানুষ আসবে অরিন ভাবেনি। সবার নজর তার দিকেই। অরিন লজ্জায় কুঁকড়ে গেল। ইলহানের পাশে দাঁড়াতেও অস্বস্তি লাগছে। আজ বোধ হয় ইলহানকে একটু বেশিই সুন্দর লাগছে। সে কমলা রঙের টি-শার্ট পরেছে। এই ধরণের গাঢ় রঙে ইলহানকে আরও ফরসা দেখায়। কিন্তু এমন রঙ অরিন যদি পরতো, তাহলে কেবল কাপড়টাই দেখা যেতো। তাকে আর দেখা যেতো না। অরিন মাথা নিচু করে দাঁড়ালো ইলহানের পাশে। ইলহান অরিনের হাতে চু’মু দিয়ে সবাইকে পরিচয় করালো,” দিস ইজ মাই প্রিটি ওয়াইফ। অরিন তাবাসসুম।”
পুরো রুম নিস্তব্ধ হয়ে গেল। যেন বউ দেখতে এসে ভূত দেখে ফেলেছে সবাই। এতোটা স্তব্ধ।এখানে উপস্থিত সকলে ইলহানের বন্ধু। ইলহানের বিয়ের খবর পেয়ে সুদূর অস্ট্রেলিয়া থেকে সারপ্রাইজ দিতে চলে এসেছে। আজ সকালেই ইলহান বন্ধুদের ফোন পেয়ে এয়ারপোর্টে ছুটে গিয়েছিল। যাওয়ার আগে অরিনকে বলে গিয়েছিল তৈরী হয়ে থাকতে। সবাই নাকি অরিনকে দেখতেই আসবে আজ। মিসেস ইলোরা এই কথা শুনে হাসছিলেন। অরিনকে ডেকে বলেছেন,” এয়ারপোর্ট থেকে আসতে সর্বোচ্চ আধঘণ্টা লাগবে ওদের। এর মধ্যে আর কি করবে বলো? আরও সময় পাওয়া গেলে নাহয় পার্লার থেকে বিউটিশিয়ান এনে কিছু একটা করা যেতো। সেই উপায়ও নেই। এই চেহারা নিয়েই বসতে হবে সবার সামনে। মাঝখান থেকে আমার ছেলেটার মান-সম্মান যাবে।”
স্পষ্ট অপমান! অরিন গায়ে মাখল না। মৃদু হেসে বলল,” কেন অন্য মানুষের সামনে আমাকে সুন্দর করে সাজতে হবে মা? আমি আমার স্বামীর চোখে সুন্দর, এতেই আমি খুশি। অন্যকারো সামনে নিজেকে শ্রেষ্ঠ প্রমাণ করার ইচ্ছে আমার নেই। ”
তখন শাশুড়ীর সামনে এসব বললেও এখন সবাইকে এমন চুপ হয়ে যেতে দেখে হীনম্মন্যতা তৈরী হলো অরিনের মনে। বোঝাই যাচ্ছে যে ইলহানের স্ত্রী হিসেবে সবাই চোখ ঝলসানো কোনো সুন্দরী মেয়েকেই প্রত্যাশা করেছিল। অরিনের মতো অসুন্দরী, কালো, আনস্মার্ট মেয়েকে দেখে তারা আশাহত হয়েছে বৈকি! দূর থেকে ডাইনিং টেবিলের কাছে দাঁড়ানো ইলোরাকেও দেখা গেল। সবার রিয়েকশন দেখে কেমন তাচ্ছিল্যের হাসি হাসছেন তিনি। যেন আগে থেকেই জানতেন এমন কিছু হবে। অরিনের চোখে প্রায় জল চলে আসছিল। ঠিক ওইসময় একটি কণ্ঠ দরাজ গলায় বলল,” শী ইজ এক্সেপশনাল। সো প্রিটি!”
তারপর প্রায় সাথে সাথেই একটা মেয়ে উঠে এসে অরিনের সাথে হ্যান্ডশেক করল,” হাই, আই এম স্টেলা।”
অরিন হাসল। কিছু বলার আগেই মেয়েটি অরিনকে জড়িয়ে ধরল। যে ছেলেটি প্রথম কথা বলেছিল এবার সেও উঠে এলো,” আই এম ক্লিফোর্ড। নাইস টু মিট ইউ বাবী।”
ইলহান ছেলেটির কাঁধে হাত রেখে ভুল শুধরে দিল, ” ইটস ভাবী!”
” ওকে স্যরি, স্যরি, ভাবী!”
এক নিমেষেই হেসে উঠল মহল। এই হাসির মাধ্যমেই সবাই স্বাভাবিক হয়ে গেল। তারপর একে একে প্রত্যেকেই অরিনের সাথে কথা বলল। আসর জমে উঠল।
রাতে ইলহান অরিনকে সাথে নিয়েই বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা দিচ্ছিল। এতো এতো সুন্দরীর ভীড়ে নিজেকে খুব নগন্য বোধ হলো অরিনের। কোনো একটা কারণে মনখারাপ হলো। সে কি আসলেই ইলহানের যোগ্য ছিল? এই ভেবে বিষণ্ণ লাগল। ইলহান বন্ধুদের সামনেও অরিনের হাত ধরে বসে আছে। অরিন একফাঁকে নিজের হাত ছাড়িয়ে বেডরুমে চলে এলো। ওখানে ভালো লাগছে না তার৷ পাঁচমিনিট পরেই দেখা গেল ইলহানও এসেছে। রুমে ঢুকেই দরজা বন্ধ করল সে। অরিন ইতস্ততবোধ করতে লাগল। ইলহান কঠিন গলায় প্রশ্ন করল,” চলে এলে কেন?”
” ভালো লাগছিল না।”
” কেন ভালো লাগছিল না?”
” জানি না। ঘুম আসছে।”
অরিন বিছানায় শুতে নিলেই ইলহান বাঁধা দিল। অরিনের হাত ধরে টেনে বলল,” চলো।”
অরিন থতমত খেল। এইরাতের বেলা কোথায় যাবে তারা? ইলহান তাকে ড্রেসিংটেবিলের আয়নার সামনে এনে দাঁড় করালো। নিজে দাঁড়ালো অরিনের পেছনে। অরিনের ছোট্ট মাথার উপর থুতনি ঠেকিয়ে বলল,” আই লভ দিজ কিউটনেস।”
অরিন অবাকচোখে তাকালো। ইলহান গম্ভীর স্বরে বলল,” আমার মনে হচ্ছে, আমি সেই আত্মিবিশ্বাসী অরিনকে হারিয়ে ফেলছি। যার কোমল ব্যক্তিত্বে মুগ্ধ হয়েছিলাম সে নিজেই আমাকে হতাশ করে হীনমন্যতায় ভুগছে। এটা কি ঠিক হচ্ছে?”
অরিন আয়না থেকে চোখ সরাল। অর্থাৎ ইলহানের দৃষ্টি থেকে নিজের দৃষ্টি লুকালো। ইলহান বলল,” যেই রূপ নিয়ে তুমি লজ্জা পাও সেই রূপ আমার কাছে কি জানো? এই রূপ দেখেই আমি দিশেহারা হয়ে তোমাকে চেয়েছিলাম। যদি তুমি এমন না হতে তাহলে আমি তোমাকে কখনোই এতোটা পছন্দ করতাম না অরিন। নিজেকে যদি তুমি খারাপ বলো তার মানে তুমি আমার পছন্দ নিয়ে প্রশ্ন তুলছো। আর কখনও এমন সাহস দেখাবে না। তাহলে কঠিন শাস্তি পেতে হবে বুঝেছো?”
অরিন হঠাৎ করেই কান্না শুরু করল। পেছন ফিরে ইলহানের গলা জড়িয়ে ধরে ফুঁপিয়ে বলল,” কেন আমার মতো কালো মেয়েকেই তোমার পছন্দ হলো? যাকে কেউ মূল্যায়ন করল না তাকেই কেন তুমি এতো মূল্য দিলে?”
” জানি না। হয়তো ছোটবেলা থেকেই আমার পছন্দগুলো অন্যরকম বলে। গতানুগতিক জিনিস আমার কখনোই ভালো লাগে না। আমার জন্য কিছু কিনতে গেলে মা আর ইলমি সবসময় হতাশ হয়ে বাড়ি ফিরতো। কারণ দোকানের কোনো জিনিস আমার পছন্দ হতো না। আর হলেও এমন জিনিস পছন্দ হতো যেটা অন্যকারো চোখেও পড়বে না। আমার ভালো লাগার জিনিসগুলো সবসময় স্পেশাল। তার মধ্যে সবচেয়ে স্পেশাল তুমি।”
অরিন চোখ তুলে তাকালো ইলহানের দিকে। ভেজা কণ্ঠে বলল,” কিন্তু আমার তো খুঁতের অভাব নেই। আর তুমি কত নিখুঁত!”
” কে বলল আমি নিখুঁত? পৃথিবীতে সবারই খুঁত আছে। কিন্তু তুমি যেটাকে খুঁত ভাবছো সেটা খুঁত নয়। সেটা হচ্ছে তোমার পূর্ণতা। আমি যদি কালো হতাম অথবা তুমি যদি আমার মতো সাদা হতে তাহলে দু’জনকেই কেমন অদ্ভুত লাগতো বলোতো?তুমি সাদা হলে তোমার এই সুন্দর চোখ দু’টো এতো ভেসে থাকতো না। চেহারার উজ্জ্বলতায় এই সৌন্দর্য্য ঢাকা পড়ে যেতো। তোমার হাসিতে ঝলক থাকতো না। সেটাও ম্লান হয়ে যেতো। তুমি হাসলে, তাকালে, আর পাঁচটা সাধারণ মেয়ের মতোই স্বাভাবিক মনে হতো। কিন্তু তুমি কালো হওয়ার কারণেই তোমার ওই চোখের দৃষ্টি এতো ধারালো লাগে। তুমি হাসলে এতো সুন্দর লাগে। এই মনে অস্বাভাবিক আলোড়ন শুরু হয়। আমি মুগ্ধ হয়ে তাকিয়ে থাকি। আমার কাছে তুমি তোমার খুঁতের জন্যই নিখুঁত। আর যেই মেয়েটি বৃষ্টি দেখলে পাগলামি করে, দুঃখভরা জীবনেও একটু সুখ পেয়ে ঝলমল করে, যার হাসি এতো প্রাণবন্ত, হৃদয় জুড়ানো, সে আবার অসুন্দর হয় কিভাবে? আমার কাছে তুমি মানেই সুখ অরিন। আর সুখী মানুষ তখনি হতে পারে যখন সে সন্তুষ্ট হতে পারে। তুমিই না বলেছো? তোমাকে পাওয়ার পর আমার মনে হয়েছে পৃথিবীতে আর কিছু চাওয়ার নেই। এখন আমি পরিপূর্ণ সন্তুষ্ট। তাই আমার চেয়ে সুখী মানুষও কেউ নেই।”
অরিন চোখের জল মুছতে মুছতে বলল,” স্যরি।”
” স্যরি আমাকে না, নিজেকেও বলো।”
অরিন আয়নার দিকে তাকিয়ে নিজেই নিজেকে বলল,” স্যরি।”
ইলহান অরিনের কপালের ডান পাশে চু’মু দিয়ে বলল,”চলো শুয়ে পড়ি।”
ইলহানের বন্ধুরা বাংলাদেশে তিনদিন থেকেছিল।তারা বিভিন্ন জায়গায় ঘুরেছে। ইলহান অরিনকেও সাথে নিয়েছে। অরিন ভেবেছিল বন্ধুদের পাল্লায় পড়ে ইলহান নিশ্চয়ই তাকে ভুলে যাবে। কিন্তু এক মুহূর্তের জন্যেও সে অরিনকে একা ছাড়েনি। বন্ধুদের সাথে যেখানেই গিয়েছে, অরিনকেও সাথে নিয়েছে। এভাবে সবার সাথে অরিনেরও একটা ভালো সখ্যতা তৈরী হয়েছে।ইলহানের প্রত্যেক বন্ধু অরিনকে দাওয়াত করে গেছে অস্ট্রেলিয়ায় গেলে তাদের বাড়িতেও বেড়াতে যাওয়ার জন্য।

মোবাইলের রিংটোন অনেকক্ষণ ধরে বাজছে। অপরিচিত নাম্বার দেখলেই অরিন নিশ্চিত হয়ে যায় যে এটা হাসাদ ভাইয়ের ফোন। কত নাম্বার যে ব্ল্যাকলিস্ট করেছে এই পর্যন্ত! কিন্তু লোকটা ঠিকই বেহায়ার মতো নতুন নতুন নাম্বার থেকে ফোন করবে। যতক্ষণ ফোনের রিংটোন বাজে ততক্ষণ অরিনের আত্মা কাঁপতে থাকে। বেশ কিছুক্ষণ বাজার পর অরিন কল রিসিভ করল। আর সাথে সাথেই রুক্ষ গলায় বলল,” আপনার সমস্যা কি? টাকাটা তো পেয়ে গেছেন। আর কি চান আমার থেকে? ”
” দেখা করো।”
” অসম্ভব। আমি কেন আপনার সাথে দেখা করবো?”
হাসাদ একহাতে গাল চুলকে নির্বিকার কণ্ঠে বলল,
” দেখা না করলে ঝামেলা আছে।”
” ঝামেলা মানে? কিসের ঝামেলা?”
” তারিন-জেরিনকে প্রতিদিন দেখি। আমার গলি দিয়েই স্কুলে যায়। হঠাৎ যদি একদিন গাড়িতে তুলে ফেলি, কি করবা?”
অরিনের ঠোঁট দু’টো আক্রোশে কেঁপে উঠল। উত্তপ্ত কণ্ঠে বলল,” খবরদার বাড়াবাড়ি করবেন না। আমি আপনার নামে মামলা করবো।”
” কি বইলা মামলা করবা?”
” হ্যারেসমেন্টের কেইস।”
ওই পাশ থেকে ভরাট হাসির শব্দ ভেসে এলো। অরিনের শরীরে অগ্নিস্রোত বয়ে গেল। হাসাদ হাসতে হাসতে বলল,” আমাকে ফাঁসিয়ে তুমি শান্তিতে থাকতে পারবে না অরিন৷ তোমার কপালেও বিপদ আছে৷ তোমার জামাইয়ের নামটা যেন কি? ইলহান মাহদী তাই না? প্রায়ই দেখি রাওয়া ক্লাবের সামনে আড্ডা দেয়। কয়েকবার দেখা হয়েছে। আর তোমার শ্বশুরের অফিসের ঠিকানাও কিন্তু জানি। তোমার-আমার অতীতের সব গোপন কিচ্ছা ফাঁস করে দেই এটাই কি চাও তুমি?”
” আপনার আর আমার মধ্যে কি গোপন কিচ্ছা আছে যা ফাঁস করবেন?”
” আছে তো অনেককিছুই। আমার সাথে ফোনে কথা বলছো এটাও তো একটা কিচ্ছাই৷ আর একদিন রাতে যে তুমি আমি একসাথে ছিলাম, পাড়া-মহল্লায় এই কথা জানাজানি হওয়ার পর সবাই আমাদের বিয়ে দিতে চাইল। মনে নাই সেই কাহিনী?”
অরিন এবার সত্যি ভয় পেল। মায়ের অসুস্থতার সময় একদিন রাতে হাসাদ অরিনদের বাড়িতে থেকেছিল। আলাদা রুমে। কিন্তু অরিন ভোরে ঘুম থেকে উঠে দেখল, হাসাদ ভাই তার রুমে শুয়ে আছে। অরিন চিৎকার দিয়ে উঠেছিল। পরে বুঝতে পেরেছিল হাসাদ ঘুমের ঘোরে চলে এসেছে। ইচ্ছে করে আসেনি। কিন্তু এখন অরিনের মনে হয়, হাসাদ ইচ্ছে করেই এটা করেছিল৷ ক্রোধে কান্না আসছে তার। ইলহানকে বিষয়গুলো জানাতেও ভয় লাগছে। কোনোভাবেই ইলহানের মনে সে সন্দেহ ঢোকাতে চায় না। অরিন বাধ্য হয়ে বলল,” আপনি কি চান?”
” বললাম তো, একবার দেখা করো। এটাই শেষবার। কথা দিচ্ছি।”
অরিন মনে মনে চিন্তা করল, দেখা করা কিছুতেই সম্ভব না। এমনিই শাশুড়ী তাকে সন্দেহের চোখে দেখছেন। তার উপর হাসাদ ভাইয়ের সাথে দেখা করতে গিয়ে যদি ধরা পড়ে তাহলে সর্বনাশ হবে। অরিন তৎক্ষণাৎ সিদ্ধান্তে আসতে পারল না৷ আমতা-আমতা করে বলল,”আমি আপনাকে পরে জানাবো।”

চলবে

লিখা- Sidratul Muntaz

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here