সেই তুমি? পর্ব -১২

0
3197

সেই তুমি?
পর্ব -১২
Samira Afrin Samia(nipa)

শেষমেশ ইশিতা আর ইয়াশের বিয়ে সম্পূর্ণ হলো। ঘরোয়া ভাবে কাজী ডেকে খুব সাধারণ ভাবেই বিয়েটা হয়েছে। ইশিতা প্রথমে রাজি ছিল না এমনকি ইশিতার মামা আজিম সাহেব ও এ বিয়েতে রাজি ছিল না। অনেক চিন্তা ভাবনার পর আজিম সাহেব বিয়েতে মত দিলেন এবং ইশিতা কে ও রাজি করালেন। ইশিতা এখন যদি বিয়েতে রাজি না হয় তাহলে ওর পেটের সন্তান কে দুনিয়াতে আনতে পারবে না। ইয়াশের মত সব কিছু জেনে এখন কোনো ছেলে ইশিতা কে বিয়ে করতে আসবে না।
বিয়ের কাজ শেষে কাজী সাহেব চলে গেল। আজ ইশিতা আর ইয়াশ বিয়ের পবিত্র বাঁধনে আবদ্ধ হলো।আজ থেকে ইশিতা মিসেস ইশিতা হয়ে গেল। ইশিতা ইয়াশের বউ হিসেবে নতুন পরিচয় পেল। আজ থেকে ইশিতা আর ইয়াশের এক সাথে পথ চলা শুরু হবে। ইশিতা ইয়াশের সাথে এক নতুন জীবনে পা দিবে। যে জীবনের ভবিষ্যত কি হবে, যে জীবনে ইশিতার জন্য কি অপেক্ষা করছে সে সম্পর্কে ইশিতার বিন্দু মাত্র ধারণা নেই। ইশিতা এখন আর নিজেকে নিয়ে ভাবে না। তার সাথে যা সবার হবে এটা নিয়ে কোনো চিন্তা নেই ইশিতার। এমনিতেই ওর সাথে অনেক কিছু হয়ে গেছে আর কিছু হবার বাকি নেই। তাই আর ইশিতার ভয় ও নেই।

খুব জোরাজুরির পর ইয়াশ সবার সাথে রাতের খাবার খেয়ে বাসায় যাওয়ার জন্য বের হতে নিলো। রাতে সবাই খেলে ও ইশিতা কিছু খায়নি। আজিম সাহেব ও সালেহা বেগম ইশিতা কে বিদায় দিচ্ছে। রুনা,রুমি দৌঁড়ে ইশিতার কাছে এসে
— আপু তুই কি একেবারে চলে যাচ্ছিস?
— না রে তোদের ছেড়ে আমি একেবারের জন্য কোথায় যাবো? তোরা ছাড়া আমার আর কে আছে?
— তুই আমাদের সাথে দেখা করতে আসবি তো?
ইয়াশ পাশ থেকে
— হুম অবশ্যই আসবে। আমি নিয়ে আসবো তোমাদের আপুকে তোমাদের সাথে দেখা করার জন্য।
আজিম সাহেব ইয়াশের কাছে এসে
— তোমার কাছে আমার একটাই অনুরোধ। তুমি আমার মেয়েটা কে কখনও কষ্ট পেতে দিও না বাবা। এমনিতেই আমার মেয়েটা অনেক কষ্ট সহ্য করেছে।
— আমি আপনাকে কথা দিচ্ছি আমি কখনও ইশিতা কে এতো টুকু ও কষ্ট পেতে দিব না।
সালেহা বেগম আঁচল দিয়ে চোখ মুখে কান্না মাখা কন্ঠে
— ও আমাদের নিজের মেয়ে না। আমরা তো ওর বাবা মা ও না। পরেও কোন দিন আমরা ওকে নিজের মেয়ে থেকে কম মনে করিনি। ওর বাবা মা মারা যাবার পর ছোট থেকে ও আমাদের সাথে আমাদের মেয়ের পরিচয়ে বড় হয়েছে।
— একদম চিন্তা করবেন না মামী। আজ থেকে ইশিতার সব দায়িত্ব আমার। ওর চোখে কোন দিন ও এক ফোঁটা পানি আসতে দিব না। জীবনের শেষ মূহুর্ত পর্যন্ত ওর খেয়াল রাখবো। আমি থাকতে কোন কষ্ট ইশিতা কে স্পর্শ করতে পারবে না। ওর প্রাপ্ত সন্মান টুকু আমি ওকে পাইয়ে দিব। ইশিতার এতটুকু অসন্মান হবে এমন কোনো কাজ আমি কখনও ই করবো না। ইশিতার মুখে সারাক্ষণ হাসি লেগে থাকবে এটা আপনাদের কাছে আমার ওয়াদা।
ইয়াশের প্রতিটা কথা শুনে আজিম সাহেবের মন ভরে গেল। আজিম সাহেব আজ সস্তির নিশ্বাস নিতে পারবেন। আজিম সাহেব আজ এমন একজনের দেখা পেয়েছেন যে ইশিতা কে উনার থেকে ও বেশি ভালোবাসা দিয়ে আগলে রাখবে।ইশিতা আর ইয়াশ সবার থেকে বিদায় নিয়ে বাড়ি থেকে বের হয়ে গেছে। রাত প্রায় দশ টা বাজে। ইয়াশ কার ড্রাইভ করছে ইশিতা পাশের সিটে বসে আছে। রাতের ঘুটঘুটে অন্ধকারে ও ল্যামপোস্টের আলোতে বহু দূর পর্যন্ত দেখা যাচ্ছে। ইয়াশ এক দিক দিয়ে অনেক খুশী। যে মেয়েটাকে প্রথম দেখাতেই সে মন হারিয়েছিল আজ সে মেয়ে তার পাশে বসে আছে তার বউয়ের পরিচয় নিয়ে। এখন থেকে সারা জীবন তার পাশে, তার সাথেই থাকবে। আবার ইশিতার দিক থেকে ভেবে ও কষ্ট হচ্ছে। একজন কে ভালোবেসে অন্য কাউকে বিয়ে করা এটা এতোটা সহজ কাজ না। কিন্তু পরিস্থিতির স্বীকার হয়ে আজ ইশিতা কে এ কাজ টা ও করতে হয়েছে। আর ইশিতার জন্য তো এটা অনেক কঠিন সিধান্ত ছিল। কারণ সে যাকে বিয়ে করতে যাচ্ছে সে হলো তার ভালোবাসার মানুষটা যে তাকে ধোঁকা দিয়েছে তার ই নিজের আপন বড় ভাই। পুরোটা রাস্তায় দুজন নিরবতা পালন করে গেছে। কেউ কোনো কথা বলনি।দু’জনই চুপচাপ কারে বসে আছে।বাসায় এসে গেলে ইয়াশ কার থেকে নেমে গিয়ে কারের দরজা খুলে ইশিতা কে নেমে আসতে বলে। ইশিতা কিছুক্ষণ ইয়াশের দিকে তাকিয়ে থেকে কার থেকে নেমে আসে। ইয়াশ ইশিতা কে নিয়ে মেইন ডোরের সামনে গিয়ে কলিংবেল বাজায়। ইশিতা এদিক সেদিক তাকিয়ে চারপাশ টা দেখার চেষ্টা করলে রাতে অন্ধকারে কিছুই তেমন ভালো ভাবে দেখতে পারেনি।

ভেতর থেকে নাজমা চৌধুরী কলিংবেলের শব্দ শুনে নিচে এসে মেইন ডোর খুলে দিলে ইয়াশ কে দেখতে পায়।
— ইয়াশ তুই আজ এতো রাত করলি কেন? কোনো দিনও তো নয়টার বেশি সময় অবধি বাইরে থাকিস না।
— মা একটু জরুরী কাজ ছিল।
— ফোন করে তো একবার জানাতে পারতি।
ইয়াশ পিছনে ফিরে ইশিতা কে ডেকে আনে
— এদিকে আসো ইশিতা।
ইশিতা ইয়াশের পিছন থেকে একটু সামনে এসে মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে।
নাজমা চৌধুরী ইয়াশের সাথে একটা মেয়েকে দেখে অবাক না হয়ে পারলো না।
— ও কে ইয়াশ?
— মা ও তোমার বউ মা।
— বউ মা?
তুই বিয়ে করেছিস? হঠাৎ করে এভাবে বিয়ে করার মানে কি? তুই ওকে পছন্দ করিস তা আমাকে জানালে আমি নিজেই তোর বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে ওদের বাড়ি যেতাম।
— হুম। মা এখন কিছু জিঙ্গেস করো না। আগে ওকে ভিতরে নিয়ে যাও পরে আমি তোমাকে সব কিছু বুঝিয়ে বলবো।
নাজমা চৌধুরী ইয়াশ কে অনেক বিশ্বাস করে। ইয়াশ কোনো দিন ভুল কিছু করবে না এটা ভেবেই আর কিছু জিঙ্গেস না করে ইশিতা কে ভেতরে নিয়ে যায়। ইশিতা ভেতর এসে এক নজর বাড়ি টার দিকে চোখ বুলিয়ে নিলো। অনেক বড় বাড়ি। ঠিক রাজা বাদশাহদের বাড়ির মত। সব কিছু কতো গুজগাজ। ইশিতা এমন বাড়ি খুব কম ই দেখেছে। নাজমা চৌধুরী ইশিতার কাছে এসে
— তোমার নাম কি মা?
ইশিতা মাথা নিচু করা অবস্থায় খুব আস্তে করে উত্তর দিলো
— ইশিতা।
— বাহ! বেশ সুন্দর নাম তো। তা তোমার পরিবারে কে কে আছে?
— মামা মামী আর ছোট দুই মামাতো বোন।
— তোমার বাবা মা?
— উনারা বেঁচে নেই। আমার যখন সাত বছর বয়স তখন উনারা কার এক্সিডেন্টে মারা যায়।
ইশিতার বাবা মা নেই এই কথা শুনে নাজমা চৌধুরীর ইশিতার জন্য খুব মায়া হচ্ছে। নাজমা চৌধুরী ইশিতার কাছে এসে ইশিতার হাতে ধরে
— বাবা মা নেই এটা ভেবে মন খারাপ করো না মা। আজ থেকে আমি তোমার মা। আমার ও নিজের কোনো মেয়ে নেই। তুমি আমার বউ মা হয়ে না আমার মেয়ে হয়ে থাকতে পারবে না?
পারবে না আমাকে নিজের মা মনে করতে?
ইশিতা নাজমা চৌধুরীর কথা শুনে উনাকে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে লাগলো।
— পাগলী মেয়ে কাঁদছো কেন। একদম কান্না করে না।
ইয়াশ পিছন থেকে বলে উঠলো।
— মা মেয়ের কান্নাকাটি পরে হবে। এখন আমি অনেক র্টায়াড। আমি রুমে যাচ্ছি তোমরা থাকো।
এটা বলে ইয়াশ সিড়ি বেয়ে উপরে উঠতে লাগলো। নাজমা চৌধুরী পিছন থেকে
— ইশিতা কে ও সাথে নিয়ে যা। ইশিতা ও তো র্টায়াড হয়ে গেছে।
ইয়াশ পিছনে না তাকিয়ে কোনো কথা কানে না নিয়েই নিজের রুমে চলে গেল।
— দেখো কান্ড! পাগল ছেলে নিজের বউ কে একা রেখে নিজে কি সুন্দর রুমে চলে গেল।
আচ্ছা মা তুমি ও রুমে যাও। ফ্রেস হয়ে নেও রাত তো অনেক হলো। চলো আমি তোমাকে তোমার রুম চিনিয়ে দেই।

ইয়াশ রুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে চেঞ্জ করে একটা টাওজার পড়ে টাওয়াল টা কাঁধে ঝুলিয়ে ওয়াশরুম থেকে বের হয়ে আসে। ইয়াশ টাওয়াল দিয়ে এক হাতে চুল মুছতে মুছতে অন্য হাত দিয়ে ওয়ারড্রব থেকে গেঞ্জি বের করতে নিচ্ছিল। তখনই ইশিতা রুমের সামনে দাঁড়িয়ে দরজায় নক করে।
ইয়াশ একটা গেঞ্জি হাতে নিয়ে ইশিতার দিকে না তাকিয়ে গেঞ্জি টা পড়তে পড়তে
— এখন থেকে এটা তোমার ও রুম। তাই নিজের রুমে আসার আগে নক করে আসার দরকার নেই।
ইশিতা একটু সময় নিয়ে বাইরে দাঁড়িয়ে থেকে রুমের ভেতর আসে।
— তুমি ওয়াশরুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে নেও আমি একটু নিচে থেকে আসছি।
ইশিতা মাথা নাড়িয়ে হ্যা বললো।

চলবে….

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here