অন্তরীক্ষে_অন্ধকার পর্ব ১

0
1128

#অন্তরীক্ষে_অন্ধকার
পর্ব ১
লিখা- Sidratul Muntaz

“একটা মানুষ মে’রে ফেলা সহজ কাজ না। আর মানুষটি যদি হয় নিজের স্ত্রী, দুনিয়ার একমাত্র আপনজন, তাহলে কল্পনা করুন সেই কাজটি কত কঠিন! এই কঠিন কাজটিকেই আমি সহজ বানানোর চেষ্টা করছি গত আটমাস যাবৎ। কারণ আমি আমার স্ত্রীর সঙ্গে আর থাকতে পারছি না। বিয়ের আগে যে মেয়েটিকে দেখলে আমার মনে ভালোবাসা আসতো এখন তাকে দেখলেই রাগে, বিতৃষ্ণায় আমার ভেতরটা অস্থির হয়ে ওঠে। ইচ্ছে করে ওই মুহূর্তে তার গলাটা চিপে ধরি। তাকে শেষ করে ফেলি। ভয়ংকর ক্রোধ আমার মনে তৈরী হয়েছে ওর জন্য। কি আশ্চর্য তাই না? আগে যাকে দেখলে মনে হতো আমার জীবনের সকল সমস্যার সমাধান! এখন তাকে দেখলে মনে হয়,আমার জীবনের একমাত্র সমস্যা! আর এই সমস্যা যেকোনো মূল্যে জীবন থেকে সরাতে হবে। নাহলে আমি বেঁচে থাকতে পারবো না। মোটকথা আমি আমার স্ত্রীর সঙ্গে আর বেঁচে থাকতে চাইছি না। যে পৃথিবীতে ও আছে সেই পৃথিবীতে আমি থাকবো না। যেকোনো একজনকে অবশ্যই ম’রতে হবে। আত্মহত্যা করার সাহস আমার নেই। তাই আমি সিদ্ধান্ত নিয়েছি স্ত্রীহত্যা করবো।”
সাইক্রিয়াটিস্ট নোভা মনোযোগ দিয়ে শুনছেন। জিসান দম নেওয়ার জন্য একটু থামল। তার ভারী নিঃশ্বাসের অদ্ভুত শব্দ বিচরণ করছে এয়ারকন্ডিশনার যুক্ত রুম জুড়ে। জিসানের চোখ দু’টি লাল। দেখে মনে হচ্ছে, মাত্রই সে কাউকে খু’ন করে এসেছে। এতো রাগ! এতো ক্রোধ! তাও নিজের স্ত্রীর প্রতি? কেন? হাজারও কৌতুহল জন্ম নিল নোভার মনে। দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে নোভা প্রশ্ন করল,” আপনাদের বিবাহিত জীবনের সময় কতটুকু?”
প্রশ্নটি শুনে জিসান একটু হাসল। মনে হলো এমন প্রশ্নে সে মজা পেয়েছে। ভ্রু উঁচু করে বলল,” মাত্র আড়াই বছর। এপ্রোক্সিমেটলি তিনবছর বলতে পারেন। কারণ আর কয়েকমাস পরেই আমাদের এনিভার্সেরী। খুব অল্প সময় তাই না? কিন্তু এই অল্প সময়েই ওর প্রতি আমার অনেক পরিমাণ ঘৃণা জন্মে গেছে। এই আড়াই বছরের সংসারকে মনে হচ্ছে আড়াই বছরের যাবজ্জীবন কারাদন্ড। মানুষ মনে হয়, জাহান্নামেও এতো যন্ত্রণা সহ্য করবে না। যতটা যন্ত্রণা এই কয়েকবছর ধরে আমি সহ্য করে যাচ্ছি।”
নোভা ভ্রু কুচকে হাত নাড়িয়ে জিজ্ঞেস করল,” নিজের স্ত্রীর প্রতি আপনার কেন এতো রাগ? সে আপনার কি ক্ষতি করেছে? নাকি আপনিই অন্যকারো মায়ায় জড়িয়ে গেছেন? যে কারণে স্ত্রীকে আর সহ্যই হচ্ছে না!”
উস্কানিমূলক উক্তিটি শুনে জিসান এতো বেশি ক্ষেপে উঠল যে হাত দিয়ে জোরালো শব্দ প্রয়োগ করল ডেস্ক টেবিলে। তার হাতের চাপড়ে টেবিল কেঁপে উঠল সাথে নোভাও। জিসান খিটমিট করে বলল,” মেয়ে মানুষের এই একটা সমস্যা। সবসময় পুরুষের দোষ খুঁজে বেড়ায় তারা। কেন মেয়েদের কি দোষ থাকতে পারে না? একটা কথা ভুলে যান কেন?মেয়েদের দোষের কারণেই কিন্তু আমরা পৃথিবীতে এসেছি। নাহলে আজ আমরা বেহেশতেই থাকতাম। আদম ফল চুরি করে খায়নি, খেয়েছিল হাওয়া। হাহ! পৃথিবীর সূচনা কাল থেকেই মেয়েরা ভুল করে আসছে। কিন্তু শাস্তি পেয়ে যাচ্ছে ছেলেরাও। কি ডিসগাস্টিং একটা ব্যাপার!”
নোভা নরম কণ্ঠে বলল,” আপনি এতো রেগে যাবেন না। প্লিজ মাথা ঠান্ডা করে বসুন। আমি শুধু আপনাকে প্রশ্ন করেছি। দোষারোপ করিনি কিন্তু।”
জিসান চোখ-মুখ কুচকে অভিযোগ করল,” আপনিও দেখা যাচ্ছে আমার স্ত্রীর মতো। সন্দেহ করে বলছেন শুধু প্রশ্ন করেছি! আপনি আমার চরিত্র নিয়ে সন্দেহ করেছেন। যে কাজটি আমার স্ত্রীও সবসময় করে। অথচ আমি আজ পর্যন্ত নিজের স্ত্রী ছাড়া অন্যকোনো মেয়ের কথা চিন্তাও করতে পারিনি। কিন্তু আপনি জানেন? আমার স্ত্রী তবুও আমাকে বিশ্বাস করে না। একদিন শপিংমল থেকে ফেরার পর ও নিজের ওরনা দিয়ে আমার চোখ বেঁধে দিল। আর বলল, আগামী তিনদিন আমি চোখের পট্টি খুলতে পারবো না। এমনকি কিছু খেতেও পারবো না। ভাবতে পারছেন? তিনটি দিন আমাকে ঘরে তালাবদ্ধ করে ঠিক ওইভাবে রেখে দেওয়া হয়েছিল। এই কাজটি ও করেছিল শুধুমাত্র সন্দেহবশত। শপিংমলে নাকি আমি কোন গোলাপী স্লিভলেস পরা মেয়ের বুকের দিকে তাকিয়ে ছিলাম। অথচ আমি আজ পর্যন্ত মনে করতে পারিনি যে শপিংমলে আসলেই কোনো গোলাপী স্লিভলেস ছিল কি-না। আর ভুলবশতও তার দিকে আমার চোখ গিয়েছিল কি-না!”
নোভা তার এসিস্ট্যান্ট ফারিহার দিকে তাকালো। ফারিহার চোখের ভীত দৃষ্টি দেখেই বোঝা যাচ্ছে সে মনে মনে বলতে চাইছে,” ডেঞ্জারাস কেইস ম্যাম! ইটস হরিবল।”
নোভা একটু ভেবে বলল,” আপনি আপনার স্ত্রীর এতো বাধ্য কেন? সে আপনাকে তিনদিন চোখ বেঁধে ঘরে আটকে রাখল আর আপনিও ওইভাবে থাকলেন?”
” হ্যাঁ থাকলাম। কারণ আমি আসলেই আমার স্ত্রীর বাধ্যগত স্বামী। ও ছাড়া পৃথিবীতে আমার কেউ নেই। ছোট একটা বোন ছিল। তার বিয়ে হয়ে গেছে। সে এখন হাসব্যান্ডের সাথে সিডনিতে থাকে। মা মারা গেছেন বছর খানেক আগে। ক্যান্সার ধরা পড়েছিল। চিকিৎসা করার টাকা ছিল না। বাবা ছিলেন সরকারী চাকরিজীবি। অল্পকিছু পেনশন পেতেন। আর আমার টিউশনির টাকা। এই দিয়ে চলছিল সংসার। মা মরে যাওয়ার পর আমি একদম নিঃস্ব হয়ে গেলাম। বেস্টফ্রেন্ডের সাহায্যে একটা চাকরি খুঁজে পেয়েছিলাম। সেই অফিসের মালিক কিছুদিনের মধ্যে আমাকে প্রস্তাব দিলেন তার একমাত্র কন্যাকে বিয়ে করার জন্য। সেই থেকে আমার পদোন্নতি হলো। অফিসের কর্মচারী থেকে আমি হয়ে গেলাম বাড়ির কর্মচারী। আমার পোস্ট, বাধ্যগত হাসব্যান্ড হয়ে থাকা।”
নোভা বিস্মিত দৃষ্টিতে তাকাচ্ছে। ফারিহাও তাকাচ্ছে। তাদের হাসি পেয়েছে কিন্তু কষ্ট করে হাসি চেপে রাখতে হচ্ছে। কারণ কথাগুলো যতটা বিদ্রূপ করে বলা হচ্ছে ঘটনাগুলো আসলে ততটা বিদ্রূপাত্মক নয়। বরং খুবই দুঃখজনক ঘটনা। আর দুঃখজনক ঘটনাগুলোই রং-চং মিশিয়ে হাস্যরসাত্মকভাবে উপস্থাপন করছে জিসান নামক সুদর্শন লোকটি। তার বাচনভঙ্গি দেখে যে কারো হাসি পাবে। বউয়ের অত্যাচারে অতিষ্ট এক গোবেচারা।
ফারিহা এতোক্ষণ পর একটা প্রশ্ন করল,” আপনি কি সত্যিই তিনদিন না খেয়ে থেকেছিলেন স্যার?”
জিসান ভ্রু কুচকে বলল,” নাহ। রাইসা ঘুমিয়ে যাওয়ার পর রত্না আমার ঘরে খাবার দিয়ে যেতো। আমি একবেলা খেয়ে তিনবেলা পার করেছি।”
নোভা বলল,” রাইসা কে?”
” আমার স্ত্রীর নাম। তাফাননুম রাইসা। ”
এবার ফেরিহা বলল,” আর রত্না কে?”
” রত্না আমাদের বাড়ির গৃহকর্মী। যার সামনে আমাকে সকাল-বিকাল অপদস্থ করা হয়। ষোল বছরের বাচ্চা মেয়েটির সামনে আমার স্ত্রী আমার গায়ে গরম ডাল ছুঁড়ে মেরেছিল। ভাবতে পারেন? আর এটা তো খুবই সামান্য ঘটনা। কথায় কথায় আমাকে থাপ্পড় মারা রাইসার অভ্যাস। বিনা দোষে, রত্নার সামনেই ও আমাকে আঘাত করে। বিশ্রী ভাষায় গালি-গালাজ করে। শুধু তাই নয়, আসাদ আঙ্কেলের মৃত্যুর পর কোম্পানির সব দায়িত্ব চলে আসে রাইসার হাতে। ও প্রায়ই বাড়ির লিভিংরুমে ক্লায়েন্টদের নিয়ে মিটিং বসায়। সেখানে মাঝে মাঝে আমাকেও উপস্থিত থাকতে হয়। কেন জানেন? চা-কফি সার্ভ করার জন্য। তাদের সামনেও রাইসা আমাকে ধমকায়। চিপ বিহেভিয়ার করে। মানুষ এসব দেখে মুখ টিপে হাসে। নিজেকে আত্মসম্মানহীন পুরুষ মনে হয় তখন আমার। বাধ্যের মতো বউয়ের গোলামি করে যাচ্ছি দিনের পর দিন। এমন জীবনের কি কোনো মানে আছে?”
নোভা একটু ঝেরে কেশে গলা পরিষ্কার করে বলল,” আপনি তো চাইলেই আপনার স্ত্রীকে ডিভোর্স দিতে পারেন। যদি তার সাথে থাকতে এতোই অসুবিধা হয়। অযথা তাকে মা’রতে চাইছেন কেন? মে’রে কি লাভ?”
” মা’রতেই চাওয়ার কারণ একটাই। ওর প্রতি আমার ক্ষোভ, ক্রোধ, আক্রোশ! দিন দিন আমি মাথা নষ্ট উন্মাদ হয়ে যাচ্ছি। সাইকো মনে হয় নিজেকে আমার। রাইসাকে পাশে নিয়ে যখন আমি ঘুমিয়ে থাকি, তখন হাজারবার কল্পনা করি ওর শরীরটাকে ছুরির আঘাতে ক্ষত-বিক্ষত করে দিচ্ছি। যেই জীভ দিয়ে ও আমাকে গালি-গালাজ করে সেই জীভ টেনে ছিঁড়ে ফেলছি। গ্রাইন্ডার মেশিনে গ্রাইন্ড করছি। ওর হাত দু’টোকে নোড়া দিয়ে পিষে ফেলছি৷ পেঁয়াজ যেমন কুচি কুচি করে কা’টা হয় সেভাবেই ওর আঙুলগুলো আমি কা’টছি। চাপাতি দিয়ে সবজির মতো টু’করো করছি ওর দেহ।”
নোভা আতঙ্কে অস্থির হয়ে বলল,” থামুন প্লিজ।”
নোভার অদ্ভুত অনুভূতি হচ্ছে৷ লোকটি বিদ্রূপের সময় যেমন মজা করে কথা বলে, ক্রোধের সময় ঠিক তেমনই ভয়ংকরভাবে কথা বলে। এই ধরণের কথা শুনলে যেকোনো সাধারণ মানুষের শরীর শিরশিরিয়ে উঠবে। নোভা ছোট্ট করে শ্বাস ছেড়ে বলল,” আগে এইটা বলুন যে আপনি আমার কাছে কেন এসেছেন? আমি নিশ্চয়ই আপনার স্ত্রীকে খু’ন করতে আপনাকে সাহায্য করবো না! তাহলে?”
জিসান হাসি দিল। মাথা নেড়ে বলল,” বলবো। তার আগে..”
আশেপাশে ঘাড় ঘুরিয়ে বাথরুমের দরজায় তাকালো জিসান। সেদিকে আঙুল ইশারা করে বলল,” আমি কি একবার ওয়াশরুমে যেতে পারি?”
নোভা বিনয়ের সাথে অনুমতি দিল,” জ্বী নিশ্চয়ই। যান।”
জিসান চেয়ার ছেড়ে উঠে ওয়াশরুমের দিকে যাচ্ছে। নোভা বড় বড় চোখে তাকিয়ে আছে। লোকটি অস্বাভাবিক লম্বা। ছয়ফিটের উপরে অথবা কাছাকাছি হাইট হবে। গায়ে হলদে-সাদা রঙের চেক টি-শার্ট। সাদা প্যান্ট। বুদ্ধিদীপ্ত দু’টি চোখ আবৃত চশমার কাঁচ দিয়ে। সুন্দর চেহারা। কেউ কি একে দেখলে বুঝতে পারবে যে সে একজন সাইকো কিলার? যদিও খু’ন এখনও করেনি। তবে অবস্থা দেখে মনে হচ্ছে অতি শীঘ্রই সে খু’ন করবে। জিসান চলে যাওয়ার পর পরই দুইহাতে মাথা চেপে ধরল নোভা। মাত্র একবছরের ছোট্ট ক্যারিয়ারে সে অনেক পেশেন্ট দেখেছে। কিন্তু এতোটা দুশ্চিন্তা কারো ব্যাপারে হয়নি। ফারিহা এগিয়ে এসে বলল,” ম্যাম পানি দিবো?”
নোভা অনুভব করল তার গলা আসলেই শুকিয়ে গেছে। পানি খাওয়া দরকার। নোভা ঘাড় নেড়ে সম্মতি দিল,” হ্যাঁ পানি দাও।”
ফারিহা গ্লাসে পানি ঢালতে ঢালতে জিজ্ঞেস করল,” লোকটির কথা শুনে কি মনে হচ্ছে ম্যাম?”
নোভা একঢোকে পানি খেয়ে শেষ করে বলল,” তোমার যা মনে হচ্ছে, আমারও তাই। ডেঞ্জারাস কেইস। ইটস হরিবল!”
” ম্যাম, আপনিই কিন্তু একবার বলেছিলেন এই ধরণের পেশেন্টের সব কথা বিশ্বাস করতে হয় না৷ তারা প্রতিবাক্যে মিথ্যে বলে। অথচ নিজেও বুঝতে পারে না যে তারা মিথ্যে বলছে!”
” রাইট। আমিও মিস্টার জিসানের একটা কথাও বিশ্বাস করিনি ফারিহা। বরং উনি যা যা বলেছেন সবকিছুর ডাবল মিনিং ভেবে রেখেছি।”
ফারিহা কৌতুহলী কণ্ঠে প্রশ্ন করল,” যেমন?”
” যেমন, মিস্টার জিসান বলেছেন তিনি শপিংমলে কোনো গোলাপী স্লিভলেস দেখেননি।কিন্তু তিনি এটা তো একবারও বলেননি যে তিনি কোনো মেয়ের দিকে কুদৃষ্টিতে তাকাননি! এমনও হতে পারে মেয়েটি গোলাপী স্লিভলেসে ছিল না, অন্য পোশাকে ছিল। আর মিস্টার জিসান তার দিকেই তাকিয়েছিলেন।”
ফারিহা বলল,” আপনার কথায় লজিক আছে ম্যাম। এমন হতেও পারে। কিন্তু এরপর জিসান স্যারের স্ত্রী যেটা করেছেন সেই কাজটি কিন্তু মোটেও সাপোর্ট করার মত নয়। সামান্য একটা ভুলের জন্য কেউ এতো অমানবিক শাস্তি দিতে পারে না!”
” এটাও আমি ভেবেছি ফারিহা। আচ্ছা আমরা কেন ভাবছি যে কাজটি মিসেস রাইসাই করেছেন? এমনও তো হতে পারে যে মিস্টার জিসানই করেছেন।”
” মানে?”
” মানে, মিসেস রাইসা যখন বাড়িতে এসে শপিংমলের ঘটনা নিয়ে ঝগড়া শুরু করলেন তখন মিস্টার জিসানই অতিষ্ট হয়ে স্ত্রীকে ঘরে তালাবদ্ধ করে রেখেছিলেন। স্ত্রীর প্রতি যার এতো ক্রোধ, সে এমন কাজ করতেই পারে। তাছাড়া উনার স্ত্রী কেন উনাকে সন্দেহ করবে?যদি উনি এতোই ভালো মানুষ হোন?”
” কিন্তু ম্যাম, স্ত্রীর প্রতি মিস্টার জিসানের এমন ক্রোধ জন্মানোর কারণ কি? নিশ্চয়ই উনার স্ত্রী এমনকিছু করেছেন।”
” দেখো ফারিহা, আমরা শুধু একপক্ষের গল্প শুনেছি। এক্ষেত্রে আমাদের শুধু সেই পক্ষকেই নির্দোষ মনে হবে। অপর পক্ষ কেমন সেই সম্পর্কে আমরা কিছুই জানি না। তাই আমাদের উচিৎ হবে দোষ-গুণ বিচার করার জন্য দুই পক্ষেরই স্টেটমেন্ট গ্রহণ করা।”
” ঠিক বলেছেন ম্যাম। আপনি কি তাহলে মিসেস রাইসার সঙ্গে দেখা করার কথা ভাবছেন?”
” এক্সাক্টলি।”
ফারিহা একটু চিন্তিত কণ্ঠে বলল,” কিন্তু মিস্টার জিসান কি রাজি হবেন?”
” এটাই তো টেকনিক। তিনি যদি রাজি হোন তাহলে বুঝতে হবে তিনি নিজের স্ত্রীর ব্যাপারে যা কিছু বলেছেন তা শতভাগ সত্যি। আর যদি রাজি না হোন, তাহলে বুঝতে হবে ঘাপলা আছেই।”
ফারিহা উত্তেজিত কণ্ঠে উচ্চারণ করল,” ইটস আ ব্রিলিয়ান্ট আইডিয়া ম্যাম!”
জিসান ওয়াশরুমের দরজা খুলে বের হচ্ছে। ফারিহা নিজের জায়গায় গিয়ে বসল। জিসান চেয়ার টেনে নোভার সামনে বসতে বসতে বলল,” তারপর বলুন ম্যাডাম, আমার কথা-বার্তা শুনে আপনার কি মনে হলো? আমার আচরণ কি সুস্থ মানুষের মতো নাকি অসুস্থ?”
নোভা মৃদু হেসে বলল,” এটা বোঝার জন্য আপনার স্ত্রীর সাথে যে আমাকে দেখা করতে হবে মিস্টার জিসান!”
নোভার প্রস্তাব শুনে জিসানের চেহারার মুহূর্তেই রঙ পাল্টে গেল। হাস্যোজ্জ্বল মুখটি ছেয়ে গেল ঘন অন্ধকারে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here