#অন্তরীক্ষে_অন্ধকার
পর্ব ৪
লিখা- Sidratul Muntaz
[কঠোরভাবে প্রাপ্ত মনস্কদের জন্য]
জিসানকে শাস্তি দেওয়ার পর রত্নাকেও এলোপাতাড়ি চড় লাগালো রাইসা। রত্নার অপরাধ হলো জিসানের কষ্ট দেখে কাঁদা। রাইসা কটমট করে রত্নার গাল চেপে ধরল। ক্রোধে কিড়মিড় করে বলল,” তোর এতো দরদ কেন আমার স্বামীর জন্য? ওর কষ্ট দেখলে তুই কেন কাঁদবি? কাঁদবো আমি। শুধু আমি কাঁদবো। বুঝেছিস?”
রত্না কাঁপতে কাঁপতে রাইসার দিকে তাকায়। রাগের সময় রাইসাকে সবচেয়ে ভয়ংকর লাগে। মনে হয় কোনো অতৃপ্ত পিশাচিনী। যে মানুষের র’ক্ত চোষার পিপাসায় কাতর হয়ে আছে। রত্নার গা আরও বেশি কাঁপতে থাকে। শরীরের লোম খাড়া হয়। রাইসা হঠাৎ রত্নার গলা চিপে ধরল। হিমশীতল কণ্ঠে বলতে লাগল,” তোকে আমি খু’ন করে ফেলবো। তুই থাকলে আমাদের সংসার টিকবে না। আর আমাদের সংসার যদি না টিকে তাহলে আমি তোকেও টিকতে দিবো না।”
রাইসা এতোজোরে রত্নার গলা ধরে ঝাকাচ্ছিল যে রত্না চোখ-মুখ উল্টে প্রায় দম আটকে ফেলল। অস্বাভাবিক গোঙানির আওয়াজ শুনে ডাইনিং রুম থেকে র’ক্তাক্ত হাতেই দৌড়ে এলো জিসান। রত্নার অবস্থা দেখে রাইসাকে অনুরোধ করল করুণ গলায়,” প্লিজ রাইসা, প্লিজ ওকে ছেড়ে দাও। মেয়েটা কষ্ট পাচ্ছে।”
রাইসা এই কথায় আরও রেগে গেল। রত্না কষ্ট পেলে জিসান খুব অস্থির হয়ে ওঠে। কিন্তু রাইসার কষ্ট তো সে বোঝে না! এইযে রাইসা এতো বেশি কষ্ট পাচ্ছে, তার অন্তর দহনে ছাড়খাড় হয়ে যাচ্ছে ; এই নিয়ে কি কোনো মাথাব্যথা নেই জিসানের? শুধু রত্না-রত্না করে সে। আর রত্নাও শুধু ভাইজান-ভাইজান করে। কেন? তাদের কি সমস্যা? রাইসা ধাক্কা মেরে রত্নাকে বিছানায় ফেলে দিল। দেয়ালের কোণার সাথে লেগে মাথা ফেটে গেল রত্নার। র’ক্ত বের হতে থাকল। জিসান এই অবস্থা দেখে রেগে উচ্চারণ করল,” ইনাফ রাইসা! সহ্যের একটা সীমা থাকে! তুমি এসব কি করলে?”
রাইসা কোনো কথা না বলে জিসানের হাত ধরে ঘর থেকে বেরিয়ে এলো। জিসান পেছনে ঘাড় ঘুরিয়ে একবার তাকাল রত্নার অবস্থা দেখার জন্য৷ কপালে হাত দিয়ে অচেতনের মতো পড়ে আছে মেয়েটা। জ্ঞান আছে তো তার?
রাইসা জিসানকে ঘরে এনেই দরজা আটকালো। জিসানের হাত থেকে এখনও র’ক্ত বের হচ্ছে। কিন্তু এই নিয়ে জিসানের মাথাব্যথা নেই। এসব অতি সাধারণ ব্যাপার তার জন্য। রোজই হয়। তবে রত্নার জন্য চিন্তা হচ্ছে। এইভাবে চলতে থাকলে মেয়েটা ম’রে যাবে। দিন দিন রাইসা অনেক বেশি হিংসাত্মক হয়ে উঠছে রত্নার প্রতি। যদি জিসান কোনো এক সকালে ঘুম ভেঙে দেখে যে রত্না খু’ন হয়েছে, রাইসা তার গলায় ছুরি বসিয়েছে তাও সে অবাক হবে না। বরং ভাববে, এটাই তো হওয়ার ছিল। রাইসার পক্ষে সব করা সম্ভব। জিসান ড্রয়ার থেকে ফার্স্ট এইড বক্স বের করল। সেখান থেকে তুলো নিয়ে হাতে চেপে ধরল। র’ক্তে টি-শার্টের হাতা নোংরা হয়ে যাচ্ছে। সে জন্যই তুলো দিয়ে র’ক্তপ্রবাহ বন্ধ করার সামান্য চেষ্টা। ব্যথার জন্য নয়। জিসান পাথর হয়ে গেছে। তার শরীরে ব্যথা লাগে না। মন তো আরও আগে থেকেই পাথর। এখন শরীরটাও। রাইসার হঠাৎ কি যেন হলো। সে কাঁদছিল ফ্লোরে বসে। এখন চোখ-মুখ মুছে জিসানের কাছে এলো। বক্সটা নিয়ে বলল,” এদিকে দাও, ব্যান্ডেজটা আমি করে দিচ্ছি।”
জিসান রূঢ় কণ্ঠে জবাব দিল,” কোনো প্রয়োজন নেই।”
রাইসা কাতর দৃষ্টিতে একবার তাকালো। তারপর হুট করে জিসানের পা দু’টো জড়িয়ে ধরে বলতে লাগল,” প্লিজ আমাকে ক্ষমা করে দাও। আর কখনও এমন ভুল হবে না। তোমার গায়ে আঘাত করার আগে আমার যেন মৃত্যু হয়! আমি অনেক বড় পাপ করে ফেলেছি। নিজেকে কিভাবে শাস্তি দিতে হয় আমার জানা নেই। তুমি আমাকে শাস্তি দাও প্লিজ। আমাকে মা’রো, কা’টো, যাই করো শুধু রাগ করে থেকো না। তুমি আমার সাথে কথা না বললে আমি ম’রে যাবো।”
রাইসা বাচ্চাদের মতো কাঁদতে লাগল। তার গোঙানি প্রতিধ্বনিত হচ্ছে দেয়ালে দেয়ালে। এই কান্নার শব্দ শুনলে যে কারো মায়া হবে। জিসানের আগে মায়া হলেও এখন আর হয় না। সে জানে রাইসার এই কান্না, এই অপরাধবোধটুকু ক্ষণিকের জন্য। একটু পর রাইসা আবার আগের রূপে ফিরে আসবে। জিসানকে কষ্ট দিবে, আঘাত করবে, সামান্য ভুলেও অনেক বড় শাস্তি দিবে। জিসান এখনও বোঝে না রাইসা তাকে ভালোবাসে কি-না! মাঝে মাঝে মনে হয় খুব ভালোবাসে। কিন্তু প্রায়ই মনে হয়, ভালোবাসে না। শুধু অধিকার করে রাখতে চায়। জিসানের নিজেকে বন্দী মনে হয়। এই যন্ত্রণাময় জীবন থেকে সে মুক্তি চায়!
কি আশ্চর্য! রাইসা জিসানের পা জড়িয়ে ধরেই ঘুমিয়ে পড়েছে। মেয়েটা অদ্ভুত হয়ে যাচ্ছে। পায়ের কাছে এভাবে একটা মানুষ ঘুমিয়ে থাকলে অস্বস্তি লাগে৷ জিসান রাইসাকে কোলে করে বিছানায় এনে শোয়াল। ঘুমন্ত রাইসার মুখ কত নিষ্পাপ! জিসান চায় রাইসা সবসময় এমন নিষ্পাপ থাকুক। সেজন্য তাকে চিরনিদ্রায় শায়িত করতে হবে। রাইসা সারাজীবনের জন্য নিশ্চুপ হয়ে যাবে। আর কখনোই উচ্চ বাচ্য করবে না। যন্ত্রণা থেকে মুক্তি পাওয়ার এর চেয়ে ভালো কোনো পন্থা আর নেই। জিসান রাইসার পাশে শুয়ে পড়ল। শরীর ক্লান্ত লাগছে তার। ঘুমে চোখ জড়িয়ে এলো। কিন্তু মনে অশান্তি নিয়ে ঘুমানো যায় না। জিসান সেদিনই শান্তিতে ঘুমাতে পারবে যেদিন রাইসার ঘুম ভেঙে যাওয়ার ভয়টা আর থাকবে না! জিসান তবুও চোখ বন্ধ করল। উদ্দেশ্য ঘুম নয়। স্মৃতিপথে বিচরণ। বর্তমানে সুখ না থাকলেই মানুষ অতীত হাতড়ে সান্ত্বনা খোঁজে। জিসানের অতীতের কিছু স্মৃতি ছিল চমৎকার সুন্দর। তেমনই একটি স্মরণীয় স্মৃতি হলো, রাইসার সঙ্গে প্রথম দেখা হওয়ার দিনটি।
আসাদ সাহেবের সাথে জিসানের সম্পর্ক তখন বেশ ভালো। রোজ আসাদ সাহেব জিসানকে অফিসরুমে ডেকে গল্প করেন। কাজ সংক্রান্ত গল্প নয়, নিজের সুখ-দুঃখের গল্প। পুরো অফিসে একমাত্র জিসানকেই তিনি অসম্ভব পছন্দ করতেন। এর কারণ হতে পারে জিসানের সরলতা। আসাদ জিসানের সাথে এমন কোনো ব্যাপার নেই যা শেয়ার করেননি। আসাদের ব্যক্তিগত ব্যাপার থেকে শুরু করে প্রায় সমস্ত কথাই জিসানের জানা ছিল। কোন ব্যাংকে তিনি কত টাকা রেখেছেন, জীবনে কত সঞ্চয় করেছেন, বাকি জীবন কিভাবে কাটাবেন এমনকি মৃত্যুর পর তাঁকে কোথায় দাফন করতে হবে তাও জিসানের মুখস্ত ছিল। প্রতিদিন জিসান অফিসে প্রবেশের সাথে সাথেই তার ডাক পড়ে স্যারের রুমে। কিন্তু সেদিন ডাক পড়ল না। তবুও জিসান নিজে থেকে গেল। দরজা খুলে ভেতরে প্রবেশ করতেই অপ্রীতিকর পরিস্থিতির সৃষ্টি হলো। একটি মেয়ে পেছন ফিরে দাঁড়িয়ে আছে৷ তার পিঠ সম্পূর্ণ নগ্ন। চুলগুলো ছোট হওয়ার কারণে স্পষ্ট ভেসে আছে সুগঠিত, সুন্দর, ফরসা দেহ। জিসান স্তব্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে রইল। মুখ দিয়ে আওয়াজ বের হলো না এমনকি সে নড়াচড়াও করতে পারল না৷ রাইসা হঠাৎ পেছনে তাকিয়ে লজ্জায় আড়ষ্ট বনে যাওয়া জিসানকে দেখতে পেল। আর দেখেই ভূত দেখার মতো চেঁচিয়ে উঠল রাইসা। তীক্ষ্ণ চিৎকার শুনে জিসান চমকে গেল। দ্রুত দরজা বন্ধ করে বাহিরে চলে এলো। বড় করে শ্বাস ছাড়তে লাগল। হৃৎস্পন্দন তখন চরমে। চোখেমুখে ঝাপসাও দেখছিল সে। এর পাঁচমিনিট পরেই গায়ে রঙিন শাড়ি জড়িয়ে বেরিয়ে এলো মেয়েটি। জিসানকে জহুরী চোখে অবলোকন করল কয়েকবার। জিসান সুন্দরীর রাগী দৃষ্টি দেখে আতঙ্কে অস্থির। পকেট থেকে রুমাল বের করে কপালের ঘাম মুছল। রমিজ চাচা গরম পানীয় নিয়ে হাজির হলেন ওইসময়। মেয়েটির উদ্দেশ্যে বললেন,” রাইসা মামণি, তোমার লাইগা চা।”
নামটি শুনে জিসান মনে মনে নিজের জন্য আফসোস করল। আসাদ সাহেবের মেয়ের সাথে তার প্রথম দেখাটা এতো নোংরাভাবেই কেন হতে হবে? কেন? এবার চাকরিটা না গেলেই হয়। আর চাকরি না গেলেও আসাদ সাহেবের সাথে সম্পর্ক নষ্ট হবে তা নিশ্চিত। তিনি তো বুঝবেন না যে জিসানের কোনো ভুল ছিল না।
রাইসা রমিজ চাচাকে ধন্যবাদ জানাল। তারপর বক্রদৃষ্টিতে জিসানের দিকে তাকালো। জিসান অস্বস্তিতে অন্যদিকে ফিরে রইল।যেখানে বাঘের ভয় সেখানেই সন্ধ্যা হয়। রমিজ চাচাকেই কেন এই মুহূর্তে এখানে আসতে হলো? মেয়েটি যদি এখন রমিজ চাচাকে বলে,” এই লোক একটা অসভ্য। আমার সাথে ভয়ংকর অসভ্যতা করেছে। একে এখনি ঘাড় ধাক্কা দিয়ে বের করে দিন।” তখন রমিজ চাচা ছোট ম্যাডামের আদেশ নিশ্চয়ই পালন করবেন। সাথে পুরো অফিসে এই ঘটনা রটিয়ে দিবেন। কি সর্বনাশের কান্ড হবে! ভাবতেই ভয় লাগছে, আল্লাহ!
রাইসা চায়ে চুমুক দিতে দিতে রমিজ চাচাকে প্রশ্ন করল,” উনি কে চাচা?”
রমিজ চাচা জবাব দিলেন হাসিমুখে,” স্যারের অত্যন্ত প্রিয় পাত্র। জিশান মোহাম্মদ।”
জিসান অন্যদিকে চেয়ে থেকেই বলল,” হয়নি চাচা। আমার নাম জিসান মাহমুদ।”
মেয়েটি জিসানের দিকে এমনভাবে তাকাল যেন বলতে চাইল, চোরের মায়ের বড় গলা! জিসান অস্বস্তি ঠেকাতে কাশির মতো শব্দ করছিল। রাইসা বলল,” ঠিকাছে চাচা, আপনি যান। আর আপনি ভেতরে আসুন।”
জিসান বিস্মিত কণ্ঠে প্রশ্ন করল,” আমি?”
রাইসা সপ্রতিভ স্বরে বলল,” অবশ্যই আপনি।”
এই কথা বলেই সে ভেতরে ঢুকে গেল। রমিজ চাচা দাঁত বের করা হাসি দিয়ে বললেন,” প্রতিদিন তো স্যারের লগে গপ মারেন। আজকা স্যার নাই। তাই গপ মারবেন ছোট ম্যাডামের লগে। ভালোই দিন আপনের। গপ মারার দিন। এমন দিন আমাগো আহে না।”
রমিজ চাচা টিটকিরি মেরে চলে যাচ্ছেন। জিসান মনে মনে বলল,” এমন দিন কারো না আসুক।”
ভেতরে ঢুকে জিসান এক আজব দৃশ্য দেখল। রাইসা আসাদ সাহেবের চেয়ারে বসে আছে। ঠিক যেই ভঙ্গিতে আসাদ সাহেব বসেন, সেই ভঙ্গিতে। জিসান সালাম দিল। রাইসা কঠিন গলায় বলল,” নক না করে কেন ঢুকেছেন? এ কেমন অভদ্রতা?”
জিসান দ্রুত বাহিরে চলে গেল। তারপর দরজায় নক করল। রাইসা বলল,” কাম ইন।”
জিসান ভেতরে প্রবেশ করল। রাইসা এবার আগের চেয়েও কঠিন গলায় বলল,” প্রথমবার এই কাজটি করলে ইন্সিডেন্টটা ঘটতো না।”
জিসান লজ্জিত কণ্ঠে মাথা নিচু করে বলল,” এক্সট্রিমলি স্যরি। আসলে আপনাকে আমি এখানে এক্সপেক্ট করিনি। আর আপনি দরজা লক করবেন না এটাও এক্সপেক্ট করিনি।”
” নক না করে কেউ বসের রুমে ঢুকে যাবে এটা তো আমিও আমি এক্সপেক্ট করিনি। তাই দরজা লক করা ইম্পোর্ট্যান্টও মনে করিনি।”
জিসান সাহস করে বলল,” তাহলে ভুল দু’জনেরই আছে।”
” অবশ্যই না। ভুল শুধু আপনার। আপনি আমার পেছনে চুপচাপ দাঁড়িয়ে ছিলেন কেন? একটুও শব্দ করেননি! যদি আমি সন্দেহবশত পেছনে না ঘুরতাম তাহলে তো জানতেও পারতাম না।”
” আসলে আমার মুখ দিয়ে শব্দ বের হচ্ছিল না। ফার্স্ট টাইম এমন বাজে পরিস্থিতি ফেইস করেছি।প্লিজ ভুল বুঝবেন না। আমাকে মাফ করে দিন। ব্যাপারটা কাউকে জানানোর দরকার নেই।”
” বাবাকে তো আমি অবশ্যই জানাবো। তিনি আপনাকে এতো পছন্দ করেন! আপনার সম্পর্কে সবকিছু তার জানা উচিৎ! ”
জিসান অনুনয় করল,” ম্যাডাম প্লিজ, আপনার পায়ে পড়ি। স্যার এই কথা জানলে আমার চাকরিও চলে যেতে পারে। আমি..”
জিসানকে আর কথা বলার সুযোগ না দিয়ে রাইসা আচমকা প্রশ্ন করল,” কোথায়?”
জিসান অবাক হয়ে বলল,” কি কোথায়?”
” বললেন না পায়ে পড়ি? কোথায় পড়লেন? এখনও তো আপনি দাঁড়িয়ে আছেন।”
জিসান হাত দিয়ে চশমা ঠিক করল। বড় অসহায় দেখালো তার চোখের দৃষ্টি। রাইসা মুচকি হেসে বলল,” আসুন। সময় থাকতে থাকতে পায়ে পড়ে যান। মুড চলে গেলে কিন্তু আর মাফ করবো না।”
জিসান এই কথা শুনে দ্রুত এসে পায়ে পড়ল। জীবন বাঁচানো ফরজ। আপাতত চাকরিই তার জীবন। তাছাড়া মান-সম্মান হারিয়ে চাকরি থেকে ছাটাই হওয়ার চেয়ে ভালো বদ্ধ ঘরে সুন্দরী মেয়ের পা ধরে বসে থাকা। রাইসা খিলখিল করে হাসতে লাগল। জিসান হাঁটু গেঁড়ে বসে পা ধরতে নিল। তার আগেই রাইসা আরাম করে নিজের পা দু’টি জিসানের হাটুর উপর বিছিয়ে দিল। জিসান অবাক হয়ে তাকাচ্ছে। কি করবে বুঝতে পারছে না। পা কি সে ধরেই রাখবে? নরম গলায় আবারও বলল,” মাফ করে দিন ম্যাডাম। প্লিজ মাফ করে দিন।”
” মাফ করবো। অপেক্ষা করুন।” এই কথা বলে ডেস্কের ড্রয়ার থেকে বিভিন্ন রঙের কয়েকটি নেইল পলিশ বের করল রাইসা। জিসানের কাছে নেইল পলিশ এগিয়ে দিয়ে জিজ্ঞেস করল,” কোন কালারটা আমার শাড়ির সাথে মানাবে?”
জিসান একটা নেইল পলিশ ধরে বলল,” মনে হচ্ছে এটাই।”
রাইসা নেইল পলিশটা হাতে নিয়ে একবার ভালো করে দেখল। তারপর হেসে বলল,” বাহ, ভালোই তো চয়েজ আপনার। এইবার লাগিয়ে দিন।”
” জ্বী ম্যাডাম? আমি লাগাবো?”
” হুম। এটাই আপনার পানিশমেন্ট। খেয়াল রাখবেন, নেইল পলিশ যাতে ভুলেও নখের বাহিরে না যায়। যদি যায় তাহলে কিন্তু মাফ পাবেন না। সুন্দর করে নেইল পলিশ লাগিয়ে দিতে পারলেই মাফ পাবেন।” জিসান সুন্দর করে নেইল পলিশ লাগাতে পারেনি। তবুও সে মাফ পেয়েছিল। তবে রাইসা শুধু মাফ দেয়নি, সাথে মনও দিয়েছিল। যার পরিণতিতে আজ তাদের সম্পর্ক এতোদূর। মাঝে মাঝে জিসানের খুব করে মনে হয়, ওই দিনটি যদি তার জীবনে কোনোদিন না আসতো! রাইসার সাথে তার কোনোদিন দেখাই না হতো! তাহলে আজ জীবনটা কতই না শান্তির হতো!
চলবে