#শরৎের_তৃতীয়_দিবস,অন্তিমপর্ব
#Tahmina_Akhter
মেহেরের চোখে দিয়ে উপচে পরছে জল দুঃখের নয় সুখের। না পাওয়া ভালোবাসা হুট করে যখন হৃদয়ে সুখ অনুভূতি দান করে তখন বুঝি চোখের কোণায় সুখের কান্নারা ভীড় জমায়।
হাত বাড়িয়ে আহনাফের ডানহাত নিজের মুঠোয় নিয়ে ফিসফিসিয়ে মেহের বললো,,
— তুমি বোকা তাই ভালোবাসি বলতে ভয় পাও। কিন্তু,, আমি তো বোকা নই। আজ যখন জানতে পারলাম তুমি কেবলই আমার, এই যে হাতটা ধরলাম আর কখনো এই হাত ছাড়ব না। মৃত্যু কেবল এই হাতকে আমার থেকে তোমাকে মুক্ত করতে পারবে।
আহনাফের চোখেমুখে উপচে পরছে খুশি। হয়তো রাস্তায় দাঁড়িয়ে আছে বলে নয়তো মেহেরকে শক্ত করে বুকের মাঝে চেপে ধরত অসংখ্য চুমুতে ভরিয়ে তুলত মেহরের কপালে।
—- আমাকে সত্যি ভালোবাসিস মেহু???
মেহের মাথা নাড়িয়ে হ্যা বোঝালো। আহনাফের ঠোঁটে মুচকি হাসি ফুটে ওঠে। তবুও যেন প্রেয়শীর মুখে “ভালোবাসি” শব্দটি শোনার জন্য আহনাফের হৃদয় ব্যাকুল হয়ে আছে। আহনাফ জোর করে না মেহেরকে। কারণ,, “ভালোবাসি” বলায় কি আসে যায়! এই যে তারা দু’জন একে-অপরকে ভালোবেসে একটু একটু করে ক্লান্ত হচ্ছিল তা কি কেউ টের পেয়েছে। নিরবে নিভৃতে খুব যত্ন নিয়ে গভীর ভালোবাসা যায়। পুরো পৃথিবী জানে এমন ভালোবাসা কটা পূর্ণতা পেয়েছে। ভালোবাসায় অপূর্ণতার চেয়ে পূর্ণতা ভালো। জীবন তো একটাই। ভালোবাসা একটাই। তবে অপূর্ণতা দিয়ে কেন পরিসমাপ্তি ঘটবে?ভালোবাসার পূর্ণতায় রূপান্তর হোক পৃথিবীর সকল ভালোবাসার মানুষগুলোর।
কিছুসময় ওভাবে কাটে দুজনের। মেহেরের কিছু একটা মনে পড়তেই আহনাফকে উদ্দেশ্য করে বললো,,
— আহনাফ? খালা যে আমার বিয়ে ঠিক করে ফেলেছে? এখন কি করব?
মেহেরের উদ্বিগ্ন কন্ঠ শুনে আহনাফ বিচলিত হলো ঠিকই কিন্তু মনে সাহস রেখে মেহেরের হাত নিজের হাতের মুঠোয় বন্দি করে বললো,,
— আয় আমার সঙ্গে। তোকে কোনোকিছুর জন্য জবাবদিহি করতে হবে না। তুই যেহেতু আমার তবে তোর খালার নেয়া কোনো সিদ্ধান্ত আমাদের জীবনে বিরূপ প্রভাব ফেলবে না।
মেহেরের হাত ধরে বাড়ির ভেতরে পা বাড়ায় আহনাফ। বাগান পেরিয়ে সদর দরজার কাছে যেতেই পাতলা গড়নের আনুমানিক একুশ-বাইশ বছর বয়সী একটি ছেলের সামনে পরলো আহনাফ এবং মেহের। মেহের সেই ছেলেকে দেখে আহনাফের হাত থেকে নিজের বন্দী হাত মুক্ত করতে চায়। কিন্তু,, আহনাফ আরও শক্ত করে মেহেরের হাত ধরে রাখে।
— আপনে গুন্ডা নাকি? ম্যাডামের হাত ছাড়েন।
— আহ্ জাকির চুপ করো। আহনাফ আমার হাত ছাড়ো। প্লিজ!!!
মেহেরের অনুরোধ শুনে আহনাফ হাত ছেড়ে দিলো। আর জাকির তো বুঝতেই পারল না ওমন গুন্ডা মাইনষেরে শাসন না কইরা ওকে চুপ করতে বলল ক্যান? আহারে,, পৃথিবী থেইকা বুঝি মানবতা হারায় গেছে। যার জন্য চুরি করতে যায় সে কয় চোর!
— খালা বাড়িতে আছে,,জাকির??
— জি ম্যাডাম খালাম্মায় বাড়িতেই আছে।
এতটুকু কথা শোনার পর আহনাফ আর একমুহূর্তের জন্য দাঁড়ালো না। বাড়ির ভেতরে পা বাড়ায়। আহনাফের পেছনে পেছনে মেহের। মেহেরের পেছনে জাকির।
রুমানা সবে নিউজপেপারে চোখ বুলাচ্ছিলেন এমনসময় একজন এসে তার সামনে উপস্থিত হয়। চোখ উপরে তুলে তাকাতেই কাঙ্ক্ষিত মানুষটাকে দেখে রুমানা ভেতরে ভেতরে আনন্দিত হয় কিন্তু মুখ দেখে তা বোঝার উপায় না কারো৷ হাতের নিউজপেপার সোফার ওপরে রেখে উঠ দাঁড়িয়ে আহনাফকে উদ্দেশ্য করে বললো,,,
— বাব্বাহ্,, আজ তো আকাশের চাঁদ আমার বাড়িতে এসেছে। এই মিজান??
খালাম্মার ডাকে পেছন থেকে সামনে এসে সাড়া দেয় জাকির।
— জি
— রাজুর আম্মারে গিয়ে বলো বাড়িতে মেহমান এসেছে। নাশতা পানির ব্যবস্থা করতে বলো৷।।
রুমানাকে বাঁধা দিয়ে আহনাফ অনুরোধের সুরে বললো,,
— প্লিজ আন্টি,, আমি কিছু খেতে আসিনি। আপনার সাথে আমার আর্জেন্ট কিছু কথা আছে।
— তোমাকে এই বাড়িতে দেখে বুঝতে পেরেছি তোমার আর্জেন্ট কথা আছে আমার সঙ্গে । প্রথমবারের মতো এই বাড়িতে এলে খালি মুখে তো আর যেতে দেয়া যায় না। তাই না মেহের??
খালার কথার জবার না দিয়ে উল্টো ভয়ে কুঁকড়ে যায় মেহের। কারণ,, বৃত্তের সাথে বিয়ে ঠিক করার আগে আহনাফের সঙ্গে ওর কি করে পরিচয় এবং সবশেষে কি করে বিয়ে হলো সবটা জানিয়েছিল। এবং তারা দুজনেই যে এই বিয়েতে বাঁধা পরেনি এটা অব্দি ওর খালাকে জানিয়েছে। তাই তো ওর খালা বৃত্তের সঙ্গে মেহেরের বিয়ের ডেইট ফাইনাল করে ফেলেছে। কারণ,, উনার একটাই কথা ওমন মিছে বিয়ের কথা মনে রেখে জীবনটা নষ্ট করার মতো বোকামি করা ঠিক হবে না।
আহনাফ সোফায় বসে আছে। ওর পাশে মেহের। ওদের মুখোমুখি সোফায় বসে আছে রুমানা। রাজুর আম্মা এসে ট্রে-ভর্তি নাশতা দিয়ে গেছে। রুমানা বিস্কিটের প্লেট আহনাফের দিকে এগিয়ে দেয় কিন্তু আহনাফ হাতের ইশারায় বারণ করলো। রুমানা মুখে হাসি ফুটিয়ে প্লেটটা যথাস্থানে রেখে স্বাভাবিক ভাবে জিজ্ঞেস করলো,,
— কথা কি বেশি জরুরি? আসলে একটু পর বৃত্তের পরিবার আসবে মেহেরকে সঙ্গে নিয়ে যেতে। বুঝোই তো বিয়ের কেনাকাটা। বর-কনে নিজের পছন্দে সব কিনবে।
খালার কথা শুনে মেহের ওর খালার দিকে অসহায় দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো। আহনাফ হুট করে ওর বুকে ব্যাথা অনুভব করলো।মেহেরকে হারানোর ব্যাথা। গলা থেকে বুক অব্দি টনটনে ব্যাথা। ব্যাথা উপশমের জন্য ঢোক গিললো কমলো না বরং ব্যাথা আরও বাড়তে থাকলো।
—- খালা,, আমি মেহেরকে চাই। আমার প্রতিটা শ্বাস-প্রশ্বাসে যার বসবাস তাকে অন্যকারো সাথে দেখার সাহস আমার নেই। যাকে প্রতিমূহুর্তে আমার জীবনের প্রতিটা পদক্ষেপে চাই তাকে আপনি অন্যকারো ঘরে পাঠাবেন! আমি চাই না খালা এমন পরিস্থিতি আমার জীবনে আসুক। আপনি যার কাছে কথা দিয়েছেন তাকে বারণ করে দিন। যদি সে রাজি না হয় তবে আমি তার পা ধরে আমার মেহেরকে ভিক্ষা চাইব।
কম্পিত কণ্ঠে প্রতিটা শব্দ অর্নগল বলে গেল আহনাফ। মেহের,, রুমানা নিরবে সবটা শুনে গেলো। মেহেরের তো সুখানুভূতি হচ্ছে। যার হৃদয়ের সবটা জুড়ে কেবলমাত্র তারই বসবাস ছিল।
তার প্রতি এক আকাশসমান অভিমান নিয়ে চলছিল জীবনের প্রতিটাক্ষণ।
রুমানা সোজা হয়ে বসলেন। গম্ভীর গলায় আহনাফকে জিজ্ঞেস করলো,,,
—- এতদিন ধরে কেন অপেক্ষা করালে মেহেরকে?? মানলাম তোমার সঙ্গে মেহেরের বন্ধুত্ব নষ্ট হয়ে যাওয়ার ভয়ে মেহেরকে কিছুই জানাওনি। কিন্তু,, যেই সম্পর্কের এতদিন কোনো ভিত্তি ছিল না আজ সেই সম্পর্কের এত চড়ামূল্যে কেন??? যদি আর কিছুদিন আগে তুমি আমার কাছে মেহেরকে চাইতে বিনাপ্রশ্নে আমি তোমার কাছে মেহেরকে দিয়ে দিতাম। বাট আ’ম সরি। আমি পারব না। বৃত্তের সাথে মেহেরের আগামী শুক্রবার বিয়ে এবং এটাই আমার ফাইনাল ডিসিশন। আমার লয়্যারের সঙ্গে কথা হয়েছে আগামীকালের মধ্যে তুমি ডিভোর্সের নোটিশ পেয়ে যাবে।
কথাগুলো বলে রুমানা উঠে দাঁড়ায়। মেহের দৌঁড়ে গিয়ে ওর খালার সামনে গিয়ে দাঁড়িয়ে বললো,,
— খালা,, আমি একবার বলেছিলাম তোমায় আমার কেমন ছেলে পছন্দ???
মেহেরের কথায় রুমানা ভ্রুকুটি করে একবার আহনাফের দিকে তাকিয়ে আবারও মেহেরের দিকে তাকিয়ে বললো,,,
— সোজাসাপটা ধারালো কথা বলতে পারে এমন মানুষ খুঁজে এনে তোকে খবর দিতে বলেছিস। কিন্তু,, তুই যাকে ইঙ্গিত করছিস সে তো দেখছি কুইকুই করছে কথা বলার সময়। আমি তো ভেবেছিলাম সে তোকে পাওয়ার জন্য হাজারটা পাগলামি করবে কিন্তু না ভদ্রলোক সেজে এসেছে আমার কাছে তোর হাত চাইতে।
রুমানার কথার মমার্থ মেহের আহনাফ কিছুই বুঝলো না। ওদের চেহারার অভিব্যক্তি দেখে রুমানা কঠিন সুরে বললো,,
— ওর বাবা-মাকে নিয়ে আসতে বল। কবে তাদের বাড়ির বৌ নিয়ে যাবে? আমি আর কত কাল তাদের বাড়ির বৌয়ের সুরক্ষার টেনশন করব। তাদের জিনিস তারা এসে নিয়ে যাক। আমি বাঁচি। আর যদি রাজি করাতে না পারে তবে এতক্ষণ যা বললাম সবটা সত্যি সত্যি করব।
আহনাফ এবার রুমানার কথা বুঝতে পারলো। মুখে হাসির রেখা ফুটে উঠেছে। কিন্তু,, মেহেরের মুখ সেই আগের মতোই অমাবস্যার ন্যায় অন্ধকার। দ্বিধান্বিত মনে রুমানাকে বলে বসলো,,,
— কাকে বলছো বৌ এসে নিয়ে যাওয়ার জন্য??
— কেন আবার তোর আহনাফকে! যার সোজাসাপটা,, ধারালো কথায় আপনার মন বিক্রি হয়ে গেছে।
— তাহলে ; বৃত্ত??
— টাকা হলে ওমন কত বিয়ের কার্ডে পাত্রের নাম বদল করা যায়! আমিও সেরকম কিছু করেছি।
আহনাফের প্রশ্নের উত্তরে রুমানা যখন এই কথা বললো তখন মেহের আর আহনাফের চেহারায় ছিল অবিশ্বাস্যের ছাপ। তারমানে এতদিন ধরে ওর খালা ওদের ধোঁয়াশায় রেখেছিল। বৃত্ত নামের কেউ আদৌও আসেনি মেহেরকে আহনাফের কাছ থেকে ছিনিয়ে নিতে।
— তোকে যেই ছবিটা দেখালাম ওটা আমি আমার এক বান্ধবীর কাছ থেকে নিয়েছিলাম। ওর কোনো এক দূসম্পর্কের আত্মীয় হয়। সেদিন তোর কাছ থেকে সবটা জানার পর আমি অন্যরকম একটা প্ল্যান সাজাই কারণ আমি জানতাম আমার ইমোশনাল ব্ল্যাকমেইলে তুই পটে যাবি। পটেও গেলি। ব্যস,, আহনাফ এবার আমার কাজ আরও সহজ করে দিয়েছে। যেই কাজ বিগত কয়েকবছর আগেও পারেনি সেই কাজ আজ করে ফেললো আহনাফ। আর কি চাই??? এবার নিজেদের অফিশিয়াল ভাবে কবে এক করবি তা নিয়ে আলাপ কর। এরপর আমাকে আর আহনাফের বাবা-মাকে জানা। ধুমধাম করে তোদের চারটা হাত দুটো করে দেই।
শেষের কথাগুলো বলতে বলতে রুমানা ইমোশনাল হয়ে যায়। মেহের অশ্রুশিক্ত চোখে ওর খালাকে জড়িয়ে ধরেছে।
এমন মমতাময়ী কাজ কেবল মা করতে পারে। আজ যে ওর খালা প্রমান করে দিয়েছে জন্ম দিলে কেবল মা হওয়া যায় না। স্নেহ-মমতায়,,ভালোবাসা বিলিয়ে দেয়ার বেলায় তার খালা পৃথিবীর সকল মাকে ছাড়িয়ে গেছে।
পরিশিষ্ট,,,,,
মেহের রিকশায় বসে আছে বিরস মুখে। রাস্তায় প্রচুর জ্যাম। আকাশটা কেমন মেঘলা হয়ে আছে! হয়তো বৃষ্টি আসবে। সন্ধ্যে নামার সময় হয়ে গেছে। হুট করে পুরো রিকশায় ঝাঁকুনি খেলো। মেহের আতঙ্কিত হয়ে রিকশায় শক্ত হয়ে চেপে বসলো।
— সাহস কে দিলো আমাকে না বলে বাড়ি থেকে বের হওয়ার???
কথাটি বলে একহাত মেহেরের শাড়ি গলিয়ে কোমড় জড়িয়ে ধরে নিজের দিকে টেনে আনলো আহনাফ। আকস্মিক কান্ডে মেহের স্তব্ধ হয়ে তাকিয়ে রয় আহনাফের দিকে কয়েক মূহুর্তের জন্য। এরপর,, কিছু একটা মনে হলো আবারও অভিমানী হয়ে উঠলো মেহের। কোমড় থেকে আহনাফের হাত সরিয়ে দেয়ার চেষ্টা করে কিন্তু আহনাফ যেন আর শক্ত করে চেপে ধরে নিজের দিকে টেনে নেয় মেহেরকে৷
আকাশ থেকে এবার বৃষ্টির ফোঁটা পরছে। মুষলধারে বৃষ্টি। মামা এবার পলিথিন টেনে দিলেন যাতে ওরা ভিজে না যায়। আহনাফ যেন এর অপেক্ষায় ছিল। টুপ করে মেহেরের ঠোঁটে গাঢ় চুমু দিয়ে ফিসফিসিয়ে বললো,,,
— আমার কপাল দেখ নিজের বিয়ে করা বৌকে রিকশায় বসে চুমু খেতে হচ্ছে।
মেহের লজ্জায় কুঁকড়ে যায়। আহনাফের বুক থেকে মাথা তুলে না ঠিকই কিন্তু জবাব দেয়।
— যার বৌয়ের জন্য সময় থাকে না তার এরচেয়েও কঠিন শাস্তি হওয়া প্রয়োজন৷
মেহের অভিমানের কারণ বুঝতে পারলো আহনাফ। খুব শক্ত করে মেহের হাত চেপে ধরে বললো,,
— যার খেয়াল-ভাবনায় আমার দিবস কাটে তাকে নতুন করে কতটা সময় দেয়া যায়? আমার স্নায়ুকোষ খুলে দেখ সেখানে কেবল একটি নাম “আমার মেহের”। জানি ব্যস্ততার কারণে হয়তো তাকে স্ব শরীরে এসে ভালোবাসতে পারি না,, মিষ্টি আদর দিয়ে বিরক্ত করতে পারি না। চেষ্টা তো সবসময় করি তাকে যেন চোখের সামনে রাখি,, ভালোবাসায় বেঁধে রাখি কিন্তু পারি না যে। তবুও বলব,, “ভালোবাসি বৌ”। তোর স্বামীর এতটুকু ভুল তুই ক্ষমা করতেই পারিস।
মেহের এবার কিছুই বললো না আহনাফকে চুপটি করে শুধু আহনাফের বলা প্রত্যেকটি শব্দ,, মিষ্টি স্পর্শ,, বৃষ্টির শব্দ,, আবহাওয়া সবটা উপভোগ করছে। এমন বৈরি আবহাওয়ায় কখনো কি আবারও এক হবে আহনাফ-মেহের? এমন রিকশায় বসে পলিথিনের আড়ালে খুনসুটিময় ভালোবাসায় সিক্ত হতে পারবে দুজনে??? মেহের থাকবে অভিমান নিয়ে আর আহনাফ ভালোবাসা দিয়ে সেই অভিমানের বরফ পাহাড় ভাঙবে?
এমন মূহুর্তগুলো কেন জীবনে বারবার আসে না? মেহের যে রোজ আহনাফের ভালোবাসায় নতুন করে মরে বেঁচে ওঠে। আহনাফের স্পর্শ পাবার জন্য হৃদয়টা হাহাকার করে। দীর্ঘ দশবছরের সংসার জীবনে কি আরও ভালোবাসার প্রয়োজন আছে?? হয়তো অনেকে বলবে নেই। কিন্তু,, মেহেরের মনে হয় যতদিন যাবে ততদিন আরও ভালোবাসা চাই তাও আহনাফের। এই একজীবনে যতদিন বাঁচবে আহনাফের কাছ থেকে ভালোবাসা পেয়ে মরতে চায় মেহের।
— ভালোবাসি আহনাফ,, আকাশের বুকে ভেসে বেড়ানো মেঘের গায়ে যতটা পানি আশ্রয় নেয় তারচেয়ে শতগুণ বেশি আমি তোমায় ভালোবাসি। তোমায় ভালোবেসে আমার প্রতিটা শরৎ কাটুক৷ প্রতিটা শরৎের তৃতীয় দিবস যেন শুধু আমাদের,, মানে শুধু আমাদের একান্তের হয়।
মেহেরের কপালে চুমু দিয়ে আহনাফ ফিসফিসিয়ে বলে উঠলো,,
— আমার জীবনের প্রতিটা দিনই শরৎের তৃতীয় দিবস। কারণ,, শরৎের তৃতীয় দিবসে যে আমার মেহু “আমার মেহের” হয়ে জীবনে এসেছে নতুন বৌ সেজে। যেই বৌ সাজে রোজ রাতে কল্পনায় তাকে সাজাতাম।
ধীরে ধীরে বৃষ্টি থামে। আকাশ পরিষ্কার হয়ে ওঠে। জ্যাম ছুটে যায়। রিকশা নিজ গন্তব্যের উদ্দেশে রওনা দেয়। রিকশায় বসে থাকা দুজন মানুষ তাদের ভালোবাসার মানুষকে নিয়ে ভাবতে ভীষন ব্যস্ত৷ কাছাকাছি বসে আছে তবুও হৃদয়ে নতুন ছক আঁকছে আর কতটা নতুন করে তাকে ভালোবাসা যায়!
সমাপ্ত