সেদিনও_বৃষ্টি_ছিল (পর্ব – ৬)

0
259

#সেদিনও_বৃষ্টি_ছিল (পর্ব – ৬)

জামাই আসবে সে কথা আগে থেকে না জানানোর জন্য শর্মীর মা শর্মীকে অনেক বকলেন। জামাইকে সে এখন মন মত আয়োজন করে খাওয়াবে কীভাবে? শর্মী বলতেও পারছিল না সৈকত তাকে জানিয়ে আসেনি। এত ফাজিল এই ছেলেটা, ইচ্ছে করে মায়ের কাছে বকা খাওয়াচ্ছে। দুপুরে কী কী রান্না হবে জামাইয়ের কী কী পছন্দ সেটা জানতে চাইলে শর্মী বলে দিল, “ওর শুটকি মাছের ভর্তা খুব পছন্দ”। শর্মীর মা শুনে অবাক হলেন, বললেন-

-শুটকি মাছের ভর্তা! কী শুটকি?

-চ্যাঁপা শুটকি।

-ছেলেরা তো শুটকি দেখলেই নাক শিটকায় আর সৈকতের এসব পছন্দ! তাও আবার চ্যাঁপা শুটকি!! এই তুই সত্যি বলছিস? তোকে দিয়ে কোনো বিশ্বাস নেই এগুলা নিশ্চই তোর শয়তানি?

-মা, শয়তানি হবে কেন? এগুলাই ওর পছন্দ। তুমি রান্না কর।

শর্মীর মা সরু চোখে শর্মীর দিকে চেয়ে রইলেন, হয়ত আন্দাজ করতে চাইলেন মেয়ে সত্য বলছে নাকি ফাজলামো করছে? শর্মী মায়ের তাকানোর ভঙ্গি দেখে তাড়াতাড়ি রান্নাঘর থেকে বের হয়ে এলো।

দুপুরে সবাই খেতে বসল। সৈকত বসতেই তার সামনে চ্যাঁপার ভর্তাটা রাখল শর্মী। সৈকতের নাক কুচকে উঠল। এমন পচা স্মেল কোথা থেকে আসছে? খাবার থেকে তো আসার কথা না! কিন্তু মনে তো হচ্ছে খাবার থেকেই আসছে! সে মিনমিন করে বলল-

-কী রান্না করেছেন মা? কেমন অন্যরকম একটা স্মেল পাচ্ছি!

-তোমার পছন্দের চ্যাঁপা শুটকি ভর্তা। ঐ যে তোমার সামনে।

সৈকতের প্রায় বমি এসে গেল, সে অবাক হয়ে বলল- কিন্ত আমার যে চ্যাঁপা শুটকি পছন্দ সেটা আপনাকে কে জানাল?

-কেন, শর্মী বলেছে। ওকে জিজ্ঞেস করলাম তোমার কী কী পছন্দ তখন বলল।

সৈকত চোখ পাকিয়ে আড় চোখে শর্মীর দিকে তাকাল একবার, দেখে সে মুচকি হাসছে। বুঝতে পারল তার নিজের করা কোনো না কোনো সময়ের বাঁদরামিরর ফল এটা। সে এখন কী করবে বুঝে উঠতে পারছে না… মনে মনে দাঁত কিড়মিড় করে বলল- বুশ তোমাকে আমি এমন নাচ নাচাব যে তোর ওসামা বিন লাদেন ইয়াদ আ জায়েগা। শর্মীর মা তখন বলে উঠলেন-

-কী হল বাবা, খাও? ভর্তা তুলে দিব?

সৈকত প্রায় চিৎকার করে উঠল- না না মা, আমি সব নিয়ে নিচ্ছি… কিন্তু ইয়ে মা আসলে হয়েছে কী রাতে বাইরে থেকে খাবার খেয়েছি তো পেটটা কেমন যেন করছে… তাই ভাবছিলাম শুটকি খাওয়া ঠিক হবে কিনা…?

শর্মীর বাবা বললেন- তাই নাকি? তাহলে তো বাবা তোমার এসব তেল মশলা টাইপ কোনো খাবারই খাওয়া ঠিক হবে না। তুমি বরং সাদা ভাত খাও করলা ভাজি দিয়ে। ডালও খাও। সৈকতের যে এই অবস্থা আগে বললি না কেন শর্মী? তাহলে কাঁচা কলার ব্যবস্থা করা যেত। খাওয়া শেষ হলে শিহাবকে দিয়ে স্যালাইন আনিয়ে দিস।

সৈকত করুন চোখে খাবারের দিকে তাকিয়ে আছে… টেবিল ভর্তি এত লোভনীয় সব খাবার… সব তারই উদ্দেশ্যে রান্না করা হয়েছে অথচ তাকে কিনা শুধু করলা ভাজি আর স্যালাইন খেতে হবে? বুশ, তোমাকে আমি… তারপর মিনমিন করে একবার বলল- আসলে বাবা তেমন খারাপ অবস্থা না, আমি খেতে পারব এসব…

না না, তুমি বললে তো হবে না। তোমরা ইয়াং জেনারেশন সব কিছুতে পাওয়ার দেখাতে চাও, আর ভাবো আমরা কিছুই জানি না। এ বেলা আমার কথা শোনো, যা বলছি তাই খাও। তারপর দেখ কেমন লাগে? ভালো লাগলে অন্য সব খাবার খেও পরে।

আসলে হয়েছে কী বাবা আমার আবার পেট খারাপ এক বেলার বেশি থাকে না। ঠিক আছে, সমস্যা নেই। আমি করলা ভাজি খাচ্ছি।

শর্মীর মা শর্মীর দিকে তাকিয়ে রইলেন। শর্মী সেটা খেয়াল করে চোরের মত খেতে লাগল।

খাওয়া শেষ করে ঘরে এসে সৈকত চুপ করে বসে রইল। শর্মী এসে পাশে বসে বলল-

-আপনার যে পেট খারাপ সেটা বলেননি তো?

-আমার যে শুটকি মাছ পছন্দ সেটা কবে বলেছিলাম?

-আপনি তাহলে আম্মুর কাছে মিথ্যে বলেছিলেন কেন যে, আপনি আসার কথা আমাকে জানিয়েছেন? আম্মু আমাকে সকাল সকাল বকে শেষ করল।

-ও আম্মুর বকাটাই বেশি হয়ে গেল আর আমি যে তোমার জন্য এত দূর থেকে কষ্ট করে এলাম সেটা কিছু না? আমার ভালোবাসাটা কিছু না?

-আচ্ছা সরি…

-সরি দিয়ে আমি কী করব? শ্বশুরবাড়ি এসে একটা ভালো কিছু খেতে পারলাম না…

-“সরি” বললাম তো।

-সারা রাত জার্নি করে এসেছি, আমার এখন ঘুম পেয়েছে, সরো তো। বলে সৈকত শুয়ে পড়ল।

শর্মীর তখন একটু অপরাধবোধ লাগল… কাজটা ঠিক হয়নি আসলে… সে চুপ করে বসে ভাবল কী করা যায় এর রাগ ভাঙাতে? তখন ওর মা ওকে ডাকলেন। মায়ের কাছে যেতেই মা বললেন-

-ঘটনা বল?

-কী ঘটনা?

-ঢং করবি না। কী জানতে চাইছি তুই নিশ্চই বুঝেছিস। তাড়াতাড়ি বল।

শর্মী বুঝল লুকিয়ে লাভ নেই। যা বোঝার মা বুঝেই ফেলেছে। তাই সে সব স্বীকার করল। এটাও বলল তার এখন মন খারাপ লাগছে। শর্মীর মা আরও কিছু বকা দিলেন মেয়ের গাধামির জন্য। তারপর বললেন- পায়েস রান্না করতে চাচ্ছিলাম সৈকতের নাকি পছন্দ।

-আমি করি?

-তুই পারবি?

-তুমি দেখিয়ে দিলেই হবে।

-ঠিক আছে চল।

শর্মী নীল প্রজাপতি আঁকা একটা সাদা শাড়ী পরল। হাতে নীল রেশমি চুড়ি পরল। তারপর গিয়ে সৈকতের পাশে বসল। সে এখনো ঘুমাচ্ছে… শর্মী ওর কানের কাছে হাত নিয়ে চুড়ির শব্দ করল। সৈকত আস্তে করে তাকাল। তাকিয়ে শর্মীকে দেখে একটু অবাক হল। কিন্তু কিছু বলল না, আবার চোখ বন্ধ করে ফেলল। শর্মী তখন ওর বুকের উপর হাত রেখে ওর দিকে ঝুকে বলল- বিকেল হয়ে গেছে, উঠবেন না?

সৈকত কথাটা শুনে পাশ ফিরল। শর্মী মন খারাপ করে উঠে যাচ্ছিল সৈকত তখনও কিছু বলল না। শর্মী বারান্দায় গিয়ে ভাবতে লাগল এর এত রাগ! আগে তো সেটা বোঝেনি? কী করবে এখন? তখন সৈকত এসে ওর পেছনে দাঁড়াল, শর্মী অবাক হয়ে ওর দিকে তাকাল… সৈকত কোনো কথা না বলে বেলি ফুলের মালা বের করে বলল-

ওদিক ফিরো, তারপর মালাটা চুলের খোপায় লাগিয়ে দিয়ে বলল- বাস থেকে নামার পর পাশেই এক ফুলের দোকানে মাত্র ফুলগুলো এনে নামাল। বেলি ফুল দেখেই মনে হল তোমার ভালো লাগবে আর ফুলগুলোও একেবারে তাজা, তাই নিয়ে ফেললাম। মনে মনে চেয়েছিলাম বিকেলে তুমি শাড়ি পরবে। ফুল গুলোর জন্য তোমাকে দেখতে ভালোই লাগছে।

শর্মী হেসে ফেলল। ওর মুখোমুখি দাঁড়িয়ে বলল- আমি কিন্তু আপনার জন্যই সেজেছি।

সৈকত শর্মীর একটু ঘনিষ্ঠ হতে চাইল আর তখনই দরজায় নক পড়ল, শিহাব চেঁচিয়ে বলল- আপু ভাইয়ার জন্য যে স্যালাইন এনেছিলাম ভাইয়া কী খেয়েছে? আব্বু জিজ্ঞেস করছিল…

শিহাবের চিৎকারে সৈকত আর শর্মী দুজনই প্রায় লাফিয়ে উঠেছে। শিহাবের কথা শুনে সৈকত চাপা গলায় বলল- শালার তো কমন সেন্স বলে কিচ্ছু নেই! এদের নাম এইজন্যই মনেহয় শালা। সময় পেল না আর স্যালাইন খাওয়ানোর… যাও, খাও এবার স্যালাইন।

শর্মী মুখ চেপে হাসতে হাসতে অস্থির। শিহাবকে বলল- আব্বুকে বল তোর ভাইয়া ঠিক হয়ে গেছে আর লাগবে না স্যালাইন।

শিহাব বলল- আব্বু বলেছিল সৈকত ভাইয়া এরকমই কিছু বলবে। তাই আমি যেন দাঁড়িয়ে থেকে এক গ্লাস স্যালাইন খাইয়ে দিয়ে যাই…

সৈকত আর ধৈর্য রাখতে পারল না, বলল- শালা শিহাব গেলি তুই? শর্মী হাসতে হাসতে শেষ…

পরদিন সকালে শর্মীকে নিয়ে সৈকত ঢাকায় চলে এলো। সৈকত সুপ্তির জন্য এক কার্টন আইসক্রিম নিয়ে এসেছে সেদিন বকেছিল বলে। সুপ্তি আইসক্রিম পেয়ে খুশি হল কিন্তু ভাইয়ার উপর তার নতুন করে মেজাজ খারাপ হয়েছে। মেজাজ খারাপের কারণ, ভাইয়া একা কেন শ্বশুরবাড়ি গেল? তাকে নিয়ে যেতে পারল না? তারও তো বেড়াতে ইচ্ছে করে? কিন্তু হঠাৎ করে ওবাড়ি যাবার এত ইচ্ছে কেন হল সেটা কেউ বুঝতে পারছে না। শর্মী প্রতিশ্রুতি দিল নেক্সট টাইম সে যখন বাড়ি যাবে তাকে নিয়ে যাবে।

সৈকত রাতে চলে গেল চট্টগ্রামের উদ্দেশ্যে। পরদিন অফিসে গেল মিষ্টি নিয়ে। সৈকতের হাতে মিষ্টি দেখে সবাই অবাক। সৈকত প্রথমে মিষ্টি তার বসের জন্য নিয়ে তার কেবিনে ঢুকল। বিয়ের কথা শুনে বস ভীষণ খুশি হলেন। তার নতুন জীবনের জন্য শুভকামনা জানালেন। সেখান থেকে বের হয়ে লাঞ্চ আওয়ারে সবাইকে অফিস ক্যান্টিনে ডাকল তারপর সবাইকে মিষ্টি দিল। সবাই উৎসুক হয়ে মিষ্টি খেয়ে অপেক্ষা করছে ঘটনা কী জানার জন্য। সৈকত বলতে শুরু করল- সে বিয়ে করে ফেলেছে। কবে, কোথায়, কীভাবে বিয়ে করেছে তা শর্ট করে জানিয়ে বলল, আজ সবাইকে ডিনার করাবে রেস্টুরেন্টে। বলার পর সে তিথিকে আড় চোখে দেখে নিল। তিথি এতক্ষণ বেশ আগ্রহ নিয়ে অপেক্ষা করছিল কিন্তু সৈকত বিয়ের কথা বলতেই তার হাত থেকে মিষ্টিটা পড়ে গেল। তারপর গটগট করে হেঁটে চলে গেল। সবাই ভীষণ খুশি হল। তবে তিথির এমন আচরণের মানে অনেকেই বুঝল না। তবে যাদের কাছে তিথি সৈকতকে ভালাবাসার কথা বলেছিল তারা অবাক হয়ে গেল কিন্তু কেউ কিছু বলল না তখন। খাওয়া শেষ করে সবাই সৈকতকে শুভকামনা দিয়ে যে যার ডেস্কে চলে গেল। সৈকতও তার কেবিনে চলে এলো। এসে দেখল তিথি বসে আছে সেখানে। সৈকত তার চেয়ারে বসতেই তিথি বলল-

-কেন করলে এমন?

-কী কেমন করলাম?

-তুমি এতদিন আগে বিয়ে করেছ আর সেটা আজ কেন বললে?

– তোমার কী মনেহয় না এরপরেও এসব প্রশ্ন অবান্তর? আর আমার ব্যক্তিগত বিষয় নিয়ে কবে বলব না বলব সেটা সম্পূর্ণ আমার ব্যাপার। আমি পারতাম সেদিনই তোমাকে পুরো ব্যাপারটা বলতে। বলিনি কারণ তুমি হয়ত তখন মানতে পারতে না। কষ্ট বেশি পেতে কিংবা আমাকে ভুল বুঝতে।

-বাহ্ আমার কষ্ট পাওয়া নিয়ে খুব ভাবো তাহলে?

-বন্ধু ছিলে শত্রু তো নও।

-“বন্ধু ছিলে” বলছ? এখন তাহলে বন্ধুত্বটাও নেই?

-বন্ধুত্ব রক্ষা করায় আমার কোনো সমস্যা নেই। কিন্তু তোমার সমস্যা হবে। তুমি এই ব্যাপারটা থেকে বের হতে পারবে না। আমি তোমাকে কোনো রকম দ্বিধায় রাখতে চাই না। আমি অন্য আর ৫টা সস্তা ছেলের মত মেন্টালিটি নিয়ে ঘুরে বেড়াই না যে তোমাকে বন্ধুত্বের নাম দিয়ে তোমার আবেগের সাথে খেলব। তাই এখন থেকে আমাদের ভেতর কলিগের সম্পর্কটাই বিদ্যমান থাকুক।

-তিথি আর কিছু বলল না, চলে গেল।

তিথি চলে যাবার কিছুক্ষণ পর সৈকতের রুমমেট কলিগ এসে বলল-

-সৈকত ভাই এটা কী করলেন আপনি? আপনার কাছ থেকে এমনটা আশা করিনি।

-কী করেছি আমি?

-বুঝতে পারছেন না? আপনি এত দিন তিথির সাথে ঘুরলেন ফিরলেন আর এখন কাউকে না জানিয়ে দুম করে বিয়ে করে নিলেন? এসবের মানে কী?

-কী আশ্চর্য, আমি কবে তিথির সাথে ঘুরলাম ফিরলাম?

-মানে অফিসে আপনাদের মাঝে খুব ভালো একটা সম্পর্ক দেখতাম। তিথি বলত আপনারা দুজন দুজনকে পছন্দ করেন? তাহলে এখন এসবের মানে কী?

-তিথি কেন এসব বলেছে আমি জানি না। আমি কখনোই ওকে এমন কিছু বলিনি যেটাতে ওর প্রতি আমার ভালোবাসা প্রকাশ পায়। আমি ওকে আগেই বলেছি ওর সাথে আমার কিছু ছিল না আর কখনো কিছু হবারও নয়। তারপরও কেউ কিছু নিয়ে আঁকড়ে থাকলে সেটা তারই সমস্যা।

-আপনাদের মাঝে সত্যিই কিছু ছিল না?

-ছিল তো, তবে সেটা বন্ধুত্ব, অন্য কিছু নয়। এই বিষয়টা নিয়ে আমি আর কোনো কথা বলতে চাই না।

-হুম। ঠিক আছে আপনি কাজ করুন আমি যাচ্ছি।

তিথি এরপর আর সৈকতের সাথে যোগাযোগ করেনি। তার সামনে যেন কখনো না পড়ে যায় সব সময় সেই চেষ্টা করেছে। শুধু তাই নয় পরদিনই সে অফিসে রেজিগনেশন লেটার জমা দিতে গিয়েছিল। কিন্তু তার কলিগ আফসানা তাকে বুঝিয়ে রেজিগনেশন লেটার দিতে আটকায়। বলে দেয় ট্রান্সফার নিয়ে নিতে। দু’সপ্তাহের মাথায় তিথি ট্রান্সফার নিয়ে এই অফিস থেকে চলে যায়। যাবার সময় সৈকতের কাছ থেকে বিদায়ও নিতে আসেনি!

পরের দুই সপ্তাহ কাজের চাপে সৈকত ঢাকা যেতে পারেনি। তার বাসার অন্য দুই কলিগের একজন বাড়ি গেছে বিয়ে করবে বলে আর অন্য জন ৫দিনের ট্যুরে গেছে। সৈকতকে এই ক’দিন একাই থাকতে হবে। সৈকতের কলিগরা যেদিন চলে গেল শিহাব সেদিন ফোন দিয়ে বলল- সে কী এক বিশেষ কাজে চট্টগ্রাম আসছে। সৈকত বলে দিল তার ফ্ল্যাটেই উঠতে। ফ্ল্যাট তো খালিই আছে কোনো সমস্যা নেই। সে এড্ড্রেস দিয়ে বলে দিল তার তো অফিস আছে ফ্ল্যাটের চাবি দারোয়ানের কাছে দিয়ে যাবে। আর খিদে পেলে খাবার রাখা আছে, যেন খেয়ে নেয়।

পরদিন শিহাব সকালে চট্টগ্রাম পৌছে গেল। সৈকতকে ফোন করে জানিয়ে দিয়ে সে ফ্ল্যাটে ঢুকে ঘুমিয়ে পড়ল। বিকেলে সৈকত অফিস থেকে বাজার হয়ে আসে। তার একমাত্র শ্যালক এসেছে তার অতিথি হয়ে, তাকে তো স্পেশাল খাতিরযত্ন করতে হবে।

সৈকত বাসায় এসে দরজায় দাঁড়িয়ে কলিংবেল চাপল। দরজা খুলতেই দেখে শর্মী দাঁড়িয়ে আছে! সে অবাক হয়ে বলল- তুমি!!!

শর্মী মুচকি হেসে বলল- কেন, সারপ্রাইজ কী শুধু আপনিই দিতে জানেন?

-তুমি সত্যিই চমকে দিয়েছ। শিহাব কই?

-একটু বাইরে গেছে। চলে আসবে আপনি ফ্রেস হয়ে আসুন। বলে শর্মী বাজারের ব্যাগ নিয়ে রান্নাঘরে চলে গেল। সৈকত নিজের ঘরে ঢুকে দেখল সব সুন্দর গোছানো হয়েছে। সে মনে মনে ভাবল বউ ব্যাপারটা আসলেই অন্যরকম! শর্মীর এভাবে চলে আসায় তার ভেতর অদ্ভুত এক আনন্দ কাজ করছে। সে ফ্রেস হয়ে এসে দেখে শর্মী চা করছে। সৈকত কাছে গিয়ে শর্মীকে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরল। শর্মী বলল-

-কী করছেন… চা করছি দেখছেন না?

-না দেখছি না। কারণ বউ ছাড়া দেখার মত এখানে আর কিছু আমার চোখে পরছে না!

-হাতের উপর চা ঢেলে দেই তাহলে অনেক কিছুই দেখতে পাবেন।

-দাও। বলে সে শর্মীর কাধে মুখ রাখল।

-উফফ সুড়সুড়ি লাগছে…

সৈকত তখন শর্মীকে নিজের দিকে ফিরিয়ে চেপে ধরে বলল- এত কথা বলো কেন তুমি? একদম চুপ। সে শর্মীর মুখের কাছে ঝুকে পড়ছিল আর তখনই কলিংবেল বেজে উঠল। সৈকত বিরক্ত হয়ে বলল- এখন আবার কে আসে?

শর্মী হেসে ফেলে বলল- শিহাব এসেছে মনেহয়। দরজা খুলে দিয়ে আসুন।

সৈকত রেগে বলল- এই ছেলের জন্মই হয়েছে মনেহয় আমার রোমান্স ধ্বংস করতে। একেবারে পার্ফেক্ট সময়ে উদয় হয়!

শিহাব সে রাতেই ঢাকার উদ্দেশ্যে চলে গেল। ও চলে যেতেই সৈকত হাফ ছেড়ে বাঁচল। একবারের জন্যও বলল না থেকে যাও। বরং চলে যাবার জন্য আগ বাড়িয়ে তাকে সব এগিয়ে গুছিয়ে দিল। কারণ ও থাকা মানে তার জীবনে রোমান্স স্বপ্নই থেকে যাবে। সৈকতের এসব কান্ড দেখে শর্মীর মনে মনে খুব হাসি পাচ্ছিল।

শর্মী থাকাকালীন সময়টা সৈকতের খুব ভালো কাটল। ঘুরে বেড়িয়ে আনন্দে সময় কাটল দুজনার। এক বিকেলে সৈকত ওর কলিগদের সাথে শর্মীকে পরিচয়ও করিয়ে দিল। দিনগুলো যেন খুব দ্রুত শেষ হয়ে গেল! আগামীকাল রাতে তারা ঢাকার উদ্দেশ্যে রওয়ানা হবে। শর্মী চলে যাবে ভেবে সৈকতের অনেক মন খারাপ লাগছে। গত ৪টা দিন কেমন করে চলে গেল সে টেরই পায়নি। সৈকত বিছানায় আধশোয়া হয়ে কথাগুলো ভাবছিল। শর্মী হাতের কাজ শেষ করে এসে দেখে সৈকত কেমন উদাস হয়ে বসে আছে। সে বিছানায় উঠে সৈকতের বুকে গুটিসুটি মেরে শুয়ে বলল-

-কী ভাবছেন?

-ভাবছি তুমি তো এসে আমাকে কষ্ট দিয়ে ফেললে?

-কীভাবে?

-এই যে কয়দিন থাকলে এখন এই বাসাটায় সারাক্ষণ তোমার উপস্থিতি আমাকে তাড়া করবে… মন খারাপ লাগবে তখন।

-আমার আপনাকে রেখে যেতে মন চাচ্ছে না…

সৈকত শর্মীর চুলে হাত বুলিয়ে বলল- এক কাজ করলে কেমন হয়?

-কী?

-এখানে আমরা একটা বাসা নিয়ে নেই?

-তাই হয় নাকি? বাসার সবাই কী ভাববে?

-কী ভাববে আবার? বরং আম্মু আমাকে এ কথা বলেছিলই একবার।

-হলে তো ভালোই হয়… তোমাকে ছাড়া থাকতে আমারও খুব কষ্ট হয়…

-ঠিক আছে তুমি যখন “তুমি” ডাকলেই তখন দেখা যাক কী করা যায়। নয়ত আমার কী দায় পরেছে পাশের বাড়ির আন্টির মেয়েকে আমার ফ্ল্যাটে তুলতে?

শর্মী মুখ তুলে বলল- আমি আন্টির মেয়ে?

-তো?

ব্যস শুরু হয়ে গেল মারামারি…

এদিকে সুপ্তি শিহাবকে প্রতিদিনই সকাল বিকাল রাত নিয়ম করে মেডিসিনের মত ম্যাসেজ দিয়ে যাচ্ছে। শিহাবের প্রথম প্রথম বেহায়া নির্লজ্জ মেয়ে মনে হলেও এখন আর তেমন লাগে না। সে মোটামুটি মেয়েটার ম্যাসেজে আসক্ত হয়ে পড়েছে। মাঝে মাঝে সেও ২/৪ টা ম্যাসেজ পাঠায়। যার বেশির ভাগই পড়াশোনা সংক্রান্ত। আর পড়ার কথা বললেই মেয়েটা কেমন ক্ষেপে যায়, কী অদ্ভুত! তার চেয়েও অদ্ভুত বিষয় মেয়েটা শুধু বলে “তুমি তোমার বোনের বাসায় বেড়াতে যাও না? যাও না কেন? একটা মাত্র বোন সপ্তাহে একবার তো যাওয়াই উচিত”! আমি কেন প্রতি সপ্তাহে বোনের বাসায় যাব? আমার পড়া আছে না? এটা বললেও মেয়েটা ক্ষেপে যায়। কথা বলা বন্ধ করে দেয়! শিহাবের তখন খুব মন কেমন করে… পড়ায় মন বসতে চায় না। পড়ায় মন বসতে চায় না সেই চিন্তায় সে বই খুলে বসে থাকে। বই দেখে যদি মন স্থির হয়?

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here