সেই তুমি?
পর্ব -১৬
Samira Afrin Samia(Nipa)
ইয়াশ দরজায় নক করছে আর ইশিতা কে ডেকে যাচ্ছে। অনেকক্ষণ ডাকার পর ও ইশিতার কোন সাড়া না পেয়ে জোরে জোরে দরজা ধাক্কাতে শুরু করলো।
— ইশিতা দরজা খুলো। ইশিতা দরজা লক করে তুমি ভিতরে কি করছো?
ইয়াশ আর ধৈর্য ধরে রাখতে পারলো না। ইয়াশ দরজা ভেঙে ফেলার চেষ্টা করতে লাগলো। ইয়াশের রুম থেকে এমন বিকট শব্দ শুনে নাজমা চৌধুরী নিজের রুম থেকে বের হয়ে আসলেন।
— কি হয়েছে ইয়াশ? কিসের শব্দ পাচ্ছি এসব? আর তুই দরজায় এমন ভাবে ধাক্কাছিস কেন?
— মা ইশিতা রুমে দরজা লক করে রেখেছে।
— দরজা লক করে রেখেছে বলে এমন ভাবে দরজা ধাক্কাতে হবে নাকি?
ও হয়ত ঘুমিয়ে গেছে।
— না মা তুমি বুঝতে পারছো না। অনেকক্ষণ ধরে ডাকছি কিন্তু ও কোনো সাড়া দিচ্ছে না। ঘুমালে তো এতো ডাকার পর উঠে যাওয়ার কথা। এভাবে কেউ ঘুমায় নাকি?
— অনেকক্ষণ ডাকার পরও যখন উঠছে না দরজা খুলে দিচ্ছে না তাহলে তো সত্যিই চিন্তার কথা।
ইয়াশ তার শরীরের সর্বোচ্চ শক্তি দিয়ে দরজায় ধাক্কা দিচ্ছে। এক পর্যায়ে দরজা ভেঙে গেলে ইয়াশ রুমের ভেতর ঢুকে দেখতে পেল ইশিতা নিচে পড়ে আছে। ইয়াশ দৌঁড়ে ইশিতার কাছে এসে নিচে বসে ইশিতা কে কোলে তুলে নিয়ে বেডে গিয়ে শুইয়ে দিল। এসব কি হচ্ছে নাজমা চৌধুরী কিছুই বুঝতে পারছেন না।
— ইয়াশ কি হয়েছে ইশিতার?
ও এভাবে নিচে পড়ে ছিল কেন?
— জানি না মা। তুই রুমে যাও। তুমি টেনশন নিলে এখন আবার তুমিও অসুস্থ হয়ে পড়বে।
— আমি ইশিতার কাছে থাকি ওই ডক্টর কে ফোন কর।
— বলছি তো মা তুমি রুমে যাও।
ইয়াশের কথায় নাজমা চৌধুরী রুমে চলে গেল।
ইয়াশ বেড সাইড টেবিল থেকে পানির গ্লাস হাতে নিয়ে ইশিতার মুখে কয়েক ফোঁটা পানি ছিটিয়ে দেয়। তার পরও ইশিতার জ্ঞান ফিরছে না। ইয়াশ ইশিতার কপালে হাত দিয়ে বুঝতে পারলো ইশিতার জ্বর উঠেছে। জ্বর তো সাধারন মাপের জ্বর না ভীষণ তীব্র মাত্রায় জ্বর উঠেছে। জ্বরে গা পুড়ে যাচ্ছে। কপালে হাত রাখা যাচ্ছে না। ইশিতা হঠাৎ করে এমন জ্বর বাধালো কি করে তা ই ভাবছে ইয়াশ। ইয়াশ কিছু বুঝতে না পেরে ওদের ফ্যামিলি ডক্টর কে ফোন করে বাসায় আসতে বললো।
ইশিতা বেঘোর হয়ে পড়ে আছে। ইশিতা কে দেখে ইয়াশের বড্ড মায়া হচ্ছে। ইশিতার চোখ মুখ শুকিয়ে গেছে। চোখ ফোলা গাল লাল হয়ে আছে।
ইফান ইশিতার সাথে অনেক অন্যায় করেছে। এতদিন যা করেছে তার জন্য ইফান কে হ্মমা করে দিলেও আজ যা করেছে তার জন্য মোটেও হ্মমা করবে না। ইফানের আজকে অপরাধের জন্য ইয়াশ ওকে উপযুক্ত শাস্তি দিবে। নিজের ভাই বলে ওকে একটু ও ছাড় দিবে না।
ডক্টর এসে ইশিতা কে চেকআপ করছে। ইয়াশ ইশিতার হাত ধরে ইশিতার পাশে বসে আছে।
ডক্টর ইয়াশের দিকে তাকিয়ে
— ইয়াশ ও কি প্রেগন্যান্ট?
ইয়াশ মাথা নাড়িয়ে হ্যা বললো
— এ সময়ে ওর এতো চাপ নেওয়া ঠিক না। এখন টেনশন নিলে ও আর ওর বাচ্চা দু’জনের জন্য ই হ্মতি হতে পারে। একেতো ও প্রেগন্যান্ট তার উপর ও মনে হয় খাওয়া দাওয়া ঠিক মত করে না। এখন এমন হেঁয়ালী করলে বাচ্চা টার খুব বড় হ্মতি হয়ে যাবে।তুমি ওর হাজবেন্ড ওর খেয়াল রাখা তোমার দায়িত্ব। ওর শরীর ভীষণ দূর্বল।
— আমার ভুল হয়ে গেছে ডক্টর এখন থেকে আমি নিজে ওর খাওয়ার প্রতি নজর রাখবো।
— হুম ওয়াইফের একটু খেয়াল রাখতে পারো না কেমন হাজবেন্ড তুমি?
যা হয়েছে তা তো হয়েছে ই। এখন থেকে তোমার ওয়াইফ আর তোমার বাচ্চার সম্পূর্ণ দায়িত্ব তোমার। ওদের এখন খুব যত্নের প্রয়োজন।
— আচ্ছা ডক্টর আমি যথাসম্ভব চেষ্টা করবো। আমি ওকে এক মিনিটের জন্য ও চোখের আড়াল হতে দিবো না।
— তাহলে আমি কিছু মেডিসিন লিখে দিয়ে যাই। তুমি ওগুলো আনিয়ে নিও।
— হুম।
ডক্টর প্রেস্কিপশন লিখে দিয়ে গেল।
— আজ তাহলে আমি উঠি। তুমি ওর খেয়াল রেখো। আর হ্যা টেনশন নিও না কিছু দিন রেস্ট নিলে ও একদম ঠিক হয়ে যাবে। কিছু দিন ভালো ভাবে দেখাশুনো করলেই ও পুরোপুরি সুস্থ হয়ে উঠবে।
— থেংক্স ডক্টর।
— আরে থেংক্স বলতে হবে না এটা তো আমার কাজ ই।
— আসুন আমি আপনাকে এগিয়ে দিয়ে আসি।
ইয়াশ ডক্টর কে বাহির পর্যন্ত ছেড়ে আসলো। ইয়াশ রুমে এসে ইশিতার পাশে বসে ইশিতার দিকে এক নজরে তাকিয়ে থেকে মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে দিতে
— ইফান যা করেছে তার জন্য ওকে কঠিন শাস্তি পেতে হবে। ওর পাপের কোনো হ্মমা নেই। ইফান আজ ওর সীমা অতিক্রম করে ফেলেছে। আমি ওকে জ্যন্ত পুঁতে ফেলবো।একবার শুধু ওকে হাতের কাছে পাই।
ইফান কে তো আমি পরে দেখে নিবো তার আগে তোমাকে সুস্থ স্বাভাবিক করে তুলতে হবে। তোমার সাথে যা হয়েছে তা মেনে নিতে তোমার কষ্ট হবে কিন্তু তোমাকে সব কিছু ভুলে তোমার জন্য, তোমার বাচ্চার জন্য নতুন করে বাঁচতে শিখতে হবে। আমার জন্য তোমাকে আবার হাসতে শিখতে হবে। আমি তোমাকে আর কষ্ট পেতে দিবো না। তোমার কষ্টের দিন শেষ। আমি পৃথিবীর সব সুখ গুলো তোমার হাতের মুঠোয় এনে দিব। কোনো কষ্ট এখন আর তোমাকে স্পর্শ করতে পারবে না।
ইয়াশ ইশিতার মাথায় বিলি কেটে দিচ্ছে। প্রায় ঘন্টা খানেক পর ইশিতার জ্ঞান ফিরলো।ইশিতা একটু একটু করে মিটমিট করে চোখ খোলার চেষ্টা করছে।
এখনও মাথা তেমন ব্যথা করছে। চোখ মেলে তাকাতে ও কষ্ট হচ্ছে। কথা বলার শক্তি টুকু ও যেন পাচ্ছে না।
ইয়াশ ইশিতা কে চোখ মেলতে দেখে ব্যস্ত হয়ে উঠলো
— ইশিতা তুমি ঠিক আছো তো?
কি হয়েছিল তোমার মেঝেতে পড়ে ছিলে কেন?
ইশিতা খুব কষ্ট করে চোখ মেলে তাকিয়ে উঠে বসার চেষ্টা করলে ইয়াশ হাত ধরে ইশিতা কে উঠে বসিয়ে দেয়। ইয়াশ একটা বালিশ নিয়ে ইশিতার পিঠের নিচে রেখে হেলান দিয়ে ইশিতা কে বসিয়ে দেয়।
ইশিতা কিছু বলার চেষ্টা করেও বলতে পারছে না। ইফান ইশিতার হাত ওর হাতের মুঠোর মধ্যে নিয়ে
— হ্যা বলো। কি বলতে চাচ্ছো বলো।
ইশিতা অস্পষ্ট ভাবে বললো
— পা,,পানি।
— পানি খাবে?
ইশিতা একবার মাথা উপর নিচু করে হ্যা বুঝালো।
ইয়াশ পাশের টেবিলের উপর থেকে পানির গ্লাস নিয়ে ইশিতার মুখের সামনে ধরলে। ইশিতা এক ডুক পানি খেয়ে। আর খাবে না তা মাথা নাড়িয়ে না করে দিলো।
— তুমি একটু বসো আমি আসছি।
ইয়াশ রুম থেকে বের হয়ে গিয়ে ইশিতার জন্য প্লেটে করে খাবার নিয়ে এলো।
ইয়াশ নিজের হাতে ইশিতা কে খাইয়ে দিতে চাইলে ইশিতা খাবে না বলে না করে দিয়ে মুখ ঘুরিয়ে নিলো।ইয়াশ রাগী কন্ঠে
— খাবে না বললেই হলো?
না খেয়ে খেয়ে নিজের কি অবস্থা করেছো একবার চেয়ে দেখো। আজ ও মাথা ঘুরে নিচে পড়ে ছিলে। আমি না আসলে কেমন হতো?
নিজেকে নিয়ে না ভাবো।নিজের বাচ্চা টা কে নিয়ে তো একটু ভাববে। ওর কিছু হয়ে গেলে তখন কি করবে তুমি?
ইয়াশ জোরে জোরে কথা গুলো বলায় ইশিতা কেঁদে উঠলো।
— আমার কোনো কথা শুনবে না। আবার কিছু বলা ও যাবে না। কিছু বললেই কাঁদতে লাগবে।
ইশিতা কাঁদতে কাঁদতে কি যেন বলতে চাইছিল
— চুপ একদম কোনো কথা বলবে না। আর কান্না থামাও। আমি খাবার দিচ্ছি চুপচাপ খেয়ে নেও।
ইশিতা কেঁদেই যাচ্ছে।
— বলছি না কান্না থামাতে। এখনও কেঁদে যাচ্ছে। এখন কান্না না থামালে খুব খারাপ হয়ে যাবে বলে দিচ্ছি।
ইয়াশের কথা শুনে ইশিতা কান্না থামালে ও এখনও একটু একটু হেঁচকি উঠছে।
ইফান মনের আনন্দে রিহা আর রাফি কে নিয়ে কারে করে পুরো শহর ঘুরে বেড়াচ্ছে। রাফি কার ড্রাইভ করছে রিহা আর ইফান পেছনের সিটে বসে বেয়ার খাচ্ছে। আর ফুল ভলিউমে গান ছেড়ে বসে বসেই হাত পা নাড়াচ্ছে। ইফান রাফি কে উদেশ্য করে
— কি রে তুই দেবদাস এর রুল প্লে করছিস নাকি?
মুখ টা কে বাংলার পাঁচের মত বানিয়ে রাখছিস কেন?
আমরা কত ইনজয় করছি। তুই তো কিছুই করছিস না।
রাফি ড্রাইভ করতে করতে
— তোরা আজ ইশিতার সাথে যা করলি তা মোটেও ঠিক করিস নি। বিশেষ করে ইফান তুই।
তুই তো ওকে ভালোবাসতিস তাই না?
— ভালোবাসা মাই ফুট। তুই এখন ওর কথা বলবি না তো। আমি ওই মেয়েটার কথা মনে করে আমার মোড অফ করতে চাই না। আজ আমি অনেক খুশি। আজকে ওকে উপযুক্ত শাস্তি দিতে পেরেছি।
— কাজ টা কিন্তু মোটেও ঠিক হলো না। আজ এভাবে ইশিতা কে অপমান না করলেও পারতি।
রিহা পিছন থেকে রাফির মাথায় আস্তে করে থাপ্পড় দিয়ে
— ওই মেয়েটার জন্য তোর এতো মায়া হচ্ছে কেন?
— মায়া এজন্যই হচ্ছে কারণ আমি তো আসল সত্য টা জানি।
ইফান রাফি কে কার থামাতে বলে। রাফি ইফানের কথা মত রোডের এক পাশে কার থামালে ইফান কার থেকে নেমে যায়। ইফানের সাথে সাথে রিহা ও কার থেকে নেয়ে দাঁড়ায়।
— কি বললি তুই? আসল সত্য মানে? আসল সত্য বলতে কি জানিস তুই?
রিহা ভয় পেয়ে গেল। এখন রাফি যদি সব কিছু বলে দেয় তাহলে ইফান রিহা কে জানে মেরে ফেলবে ইফানের যা রাগ। রিহা ব্যস্ত হয়ে
— কি সত্য জানিস তুই রাফি?
আজেবাজে কথা বলছিস কেন?
ইশিতা যেমন ওর সাথে তেমন টা ই হয়েছে।
— শালা ইশিতা তোর বোন হয় নাকি?
— বোন না হলেও আমি আমার চোখের সামনে কোনো মেয়ের অপমান হতে দেখতে পারবো না।
তুই ওকে ভালোবাসিস আর না বাসিস। কিন্তু একটা মেয়ে হিসেবে তো ওকে মিনিমাম সন্মান টুকু করতে পারিস।
তুই তো পুরো সীমা অতিক্রম করে ফেলেছিস। কাউকে এতোটা ও নিচু করতে যাস না যার কারনে তুই নিজেই সবার চোখে এমনকি নিজের চোখেও ছোট হয়ে যাস।
— ওরে বাবা! তোর তো দেখছি বন্ধুর থেকে একটা বাইরের মেয়ে বেশি আপন হয়ে গেল। ইশিতার জন্য দরদ উতলে পড়ছে দেখি। এখন কি ওই মেয়েটার জন্য বন্ধদের কে ছেড়ে চলে যাবি?
— বন্ধুদের ছেড়ে যাবার কথা উঠছে না তো।
আমি শুধু তোকে এটা বুঝাতে চাইছি, এমন কিছু করিস না যার জন্য তুই কোনো দিন ইশিতার কাছে হ্মমা চাওয়ার সাহস টুকু ও না পাস।
— রাফি তুই ইফান কে এসব বলছিস কেন? ইফান তো ভুল কিছু করেনি। ওই মেয়েটা এসবের ই যোগ্য।
— রিহা ভুলে যাস না তুই নিজেও একটা মেয়ে। নিজে একটা মেয়ে হয়ে অন্য একটা মেয়ের সাথে জেনেশুনে এমন কাজ করতে তোর বিবেকে একটু ও বাঁধলো না।
— ওই তুই ঠিক আছিস তো? তুই কি আজ নেশা করছিস?
নেশা না করলে তো এসব বলার কথা না। শালা খুব জ্ঞান দিচ্ছিস তো। তোর ভালো না লাগলে তুই আমাদের থেকে চলে যা তো।
রাফি রাগ করে চলে গেল। যাওয়ায় আগে আবারো ইফান কে কিছু কথা বলে গেল।
— ইফাব সত্যিই তুই একদিন খুব পস্তাবি।সেদিন তোর সাথে তোর পাশে কাউকেই পাবি না। সব থেকে ও তুই একা হয়ে যাবি। পৃথিবীর সবথেকে একা। তুই তোর চারপাশের যাদেরকে তোর আপন ভাবছিস। মোটেও ওরা তোর আপন না। ভুলের হ্মমা হয়। কিন্তু তা একবার। বার বার ভুল করলে তার হ্মমা হয় না। আমি তোর ভালো চাই তাই তোকে একথা গুলো বললাম।
— হুম যা ভাই। আমাকে নিয়ে তোর এতো চিন্তা করতে হবে না। আমার ভালো আমি নিজেই বুঝতে পারি।
রাফি চলে গেলে রিহা হাফ ছেড়ে বাচলো।রিহা মনে মনে বলতে লাগলো
— খুব বাঁচা বেঁচে গেলাম। এই রাফি টার হঠাৎ করে কি হয়েছে। একটুর জন্য ইফান কে সব কিছু বলে দিতে যাচ্ছিল। ওকে চোখে চোখে রাখতে হবে। অনেক কষ্টে ইফান কে আমার করেছি। এখন যতদিন না আমাদের বিয়ে হয় ততদিন ইফান কে কিছু জানতে দেওয়া যাবে না।
— রিহা রাফির কি হয়েছে বলো তো?
ইফানের কথা রিহা বাস্তবে ফিরলো।
— জানি না ওর কি হয়েছে। আচ্ছা যাই হোক ওর কথা বাদ দাও তো। আমরা দুজন আজ সেলিব্রেট করবো। তুমি এতদিনে ওই ইশিতা কে উচিত শিক্ষা দিয়েছো।ইয়াশ ইশিতা কে নিজের হাতে খাইয়ে দিয়ে ঘুম পাড়িয়ে দিয়েছিল। এখন দুপুর গড়িয়ে সন্ধ্যা হয়ে গেছে ইশিতা এখনো ঘুম থেকে উঠছে না। ইয়াশ ও ইশিতা কে ডেকে তুলে নি। ইয়াশ অনেকক্ষণ ইশিতার পাশে বসে থেকে একটু আগে রুম থেকে বের হয়ে নিচে এসেছে। ইয়াশ ইফানের অপেক্ষা করছে। কখন ইফান বাসায় আসবে। অনেক হিসাব বাকি আছে ইফানের সাথে।
সন্ধ্যার পরেও ইফান না আসলে ইয়াশ নিচে থেকে অনেকক্ষণ ইফানের জন্য অপেক্ষা করে রুমে চলে যায়।
ইয়াশ রুমে এসে দেখে ইশিতা আগের মতই ঘুমাচ্ছে। ইয়াশ কিছুক্ষণ ইশিতার দিকে তাকিয়ে থেকে ইশিতা কে দেখে। ল্যাপটপ নিয়ে অফিসের কাজ করতে বসে যায়। প্রায় ঘন্টা খানিক পর ইশিতার ঘুম ভাঙ্গে। ইশিতা বেড থেকে উঠে ওয়াশরুমে ফ্রেশ হতে যাচ্ছিল। এতক্ষণ ঘুমিয়ে থাকায় মাথা ভারী ভারী লাগছিল। যেই ইশিতা বেড থেকে উঠে দু’পা হেঁটে ওয়াশরুমের দিকে যাচ্ছিল তখনই ওর মাথা ঘুরে পড়ে যেতে নিচ্ছিল। ইয়াশ পেছন থেকে এসে ইশিতা কে ধরে ফেললে ইশিতা পড়ে যাওয়া থেকে বেঁচে গেল। ইয়াশ ইশিতা দু’জনেই চোখাচোখি তাকিয়ে আছে। ইয়াশের দু’হাত হাত ইশিতার কোমরের পিছনে, ইয়াশ উপুড় হয়ে ইশিতার দিকে একটু ঝুঁকে আছে। আর ইশিতা অর্ধেক পড়ে যাওয়া অবস্থায় ওর দু’হাতে ইয়াশের শার্টে খামচে ধরে আছে।
দুজন কিছুক্ষন এভাবে থাকার পর ইয়াশ নিজে থেকে ইশিতা কে ছেড়ে একটু ঠিক হয়ে দাঁড়াল। ইশিতা ও উঠে দাঁড়িয়ে নিজেকে ঠিক করে নিলো।
— একটু দেখে চলবে তো এখুনি তো পড়ে যেতে নিচ্ছিলে।
— আসলে হঠাৎ করে মাথা টা ঘুরে গেছে।
— মাথা তো ঘুরবে ই। শরীর দূর্বল। খাওয়া দাওয়া করো না তার উপর আবার সারাক্ষণ টেনশন নেও। এতো কিছুর পর মাথা তো ঘুরার ই কথা তাই না?
যাও এখন ফ্রেশ হয়ে এসে হালকা কিছু খেয়ে নেও। ডক্টর মেডিসিন দিয়ে গেছে তা খেতে হবে।
— ডক্টর?
— হুম তুমি তো সেন্স লেস হয়ে ফ্লোরে পড়ে ছিলে। তখন আমি কিছু বুঝতে না পেরে বাসায় ডক্টর ডেকেছি।
— ওহ।
ইশিতা চোখে মুখে পানি দিতে ওয়াশরুমে যায়। ওয়াশরুমে গিয়ে মুখে পানি দেওয়ার সময় ভার্সিটিতে ঘটে যাওয়া আজকের কথা মনে পড়ে গেল। ওসব ঘটনা মনে করে ইশিতা কান্নায় ভেঙ্গে পড়লো।
চলবে…..
(সামনে ২৯ তারিখ থেকে আমার এক্সাম। তাই কিছু দিন রেগুলার গল্প দিতে না পারলেও মাঝে মাঝে ছোট করে হলেও একটা করে পর্ব দেওয়ার চেষ্টা করবো। কেউ কিছু বলবা না কিন্তু প্লিজ?এক্সাম খারাপ হলে তখন ফোন টা ই হাত থেকে চলে যাবে। তখন গল্প কি দিয়ে লিখবো? ?????? সবাই আমার জন্য দোয়া করো যেন এক্সাম ভালো হয়)