মন_কেমনের_বৃষ্টি #পর্ব_১৪

0
665

#মন_কেমনের_বৃষ্টি
#পর্ব_১৪
#পুষ্পিতা_প্রিমা

আদি চুড়ি আর নূপুরটি হাতে নিয়ে অনেকক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকে। যখনি তার বোধগম্য হলো মিনি ও চলে গিয়েছে ওই মেয়েটির সাথে সে চিন্তিত হয়ে পড়ল। সে ভাবনায় পড়ে গেলল,
‘ তার মিনি কোথায় গেল? মিনি কি তাহলে হারিয়ে গেল? একা একা আবার তার কাছে ফিরবে তো? ওই মেয়েটাই কি তাহলে মিষ্টি?
উগ্র রোষে সে ফেটে পড়ল। কিসব লুকোচুরি খেলা হচ্ছে তার সাথে। আইমি ও বোধহয় কিছুই জানেনা। জানলে সে বলবে না কেন? মিষ্টি মেয়েটি কে হয় আমার?
কোনো প্রশ্নের উত্তর সে পেলনা। পেছন থেকে আইমির ডাক ভেসে এল। আদি পিছু ফিরল না। শক্ত হয়ে দাঁড়িয়ে রইল। আইমি তার কাছে এগিয়ে এল। হাসিমুখে জানতে চাইল,
‘ কি হয়েছে। তোমার জন্য অপেক্ষা করতে করতে বোর হয়ে যাচ্ছি। আর তুমি এখানে দাঁড়িয়ে আছ? মিনি কোথায়? এক নাগাড়ে প্রশ্ন ছুড়ল আইমি। আদি তারপর ও শক্ত হয়ে দাঁড়িয়ে রইল। আইমির হাতের ছোঁয়ায় তার সম্ভিৎ ফিরে এল। আইমি আদির কাঁধে হাত দিয়ে ডেকে বলল,
‘ এনিথিং রং আদি?
আদি হাতের কব্জিতে পড়া ঘড়ির দিকে তাকাল। ব্যস্ত হয়ে বলল,
‘ আমাকে ইমার্জেন্সি হসপিটালে যেতে হবে। ইমি তুমি ঘুরো, ফিরো,মজা করো। আমাকে যেতে হবে। মন খারাপ করোনা।
আইমির মন খারাপ হয়ে যায় সাথে সাথে। সে মাথা নামিয়ে বলে
‘ আচ্ছা।
আদি হনহন করে এগিয়ে যায় গাড়ির কাছে। তাকে সত্যি সত্যি চলে যেতে দেখে আইমির চোখের জল টলমল করে উঠে। বন্ধুদের চোখের আড়াল করতে সে অন্যদিকে মুখ করে রাখে। আচমকা পেছন থেকে আক্রমণ আসে। আদি তার কাধে থুতনি রেখে বলে,
‘ প্লিজ রাগ করোনা। সরি। সরি। সরি।
আইমির জমে উঠা অভিমান মুহূর্তেই গলে যায়। সে হেসে উঠে আদিকে ধাক্কা দেয়। বলে,
‘ সবার সামনে এসব কি আদি?
আদি বোকার মত এদিকওদিক তাকায়। বলে,
‘ সবাই সবার কাজে ব্যস্ত। আদি ইমির প্রেমলীলা দেখতে বসে নেই। আর দেখলেই বা কী? আদি এসব কেয়ার করেনা।
আইমি ভ্র উঁচিয়ে বলে,
‘ আচ্ছা।
আদি তার মত করে বলে,
‘ জ্বী, ম্যাডাম।
আইমি হাসে। বলে
‘ আচ্ছা, ঠিকআছে যাও। তবে পরে পুষিয়ে দিতে হবে কিন্তু।
আদি পিছু পিছু হাটতে হাটতে বলে,
‘ থ্যাংক ইউ সো মাচ ইমি। তোমার মত করে যদি সবাই বুঝত?
আইমি হাত নেড়ে বলে, আইমির মতো করে আদিকে কেউ বুঝবে না।

__________________________

বাসায় ফিরে রিপ অবাক হলো মিনির মুখে চটপট কথা শুনে। সে বিস্মিত চোখে মিনির দিকে চেয়ে রইল। দেখে মনে হচ্ছে মিনি কতকাল ধরে ইশাকে চেনে। ইশা ভয়ে ভয়ে বলল,
‘ রিপদা ও মিনি। আমার এক বন্ধুর পোষা টিয়ে পাখি। ও আমাকে চেনে তাই চলে এসেছে। আমি ওঁকে ফোন করে জানিয়ে দেব।
রিপ বলে,
‘ তা ঠিকআছে। কিন্তু এ তো দেখছি পরীর চাইতে ও দ্রুত কথা বলতে পারে?
ইশা কিছু বলার আগেই মিনি ডাক দিল,” নাইস বয়। নাইস বয়। মিনি। মিনি।
রিপ চোখ পাকিয়ে চেয়ে রইল মিনিকে।
মিনি ইশার কাঁধে গিয়ে বসে। ডাকে,
‘ মিষ্টি। মিষ্টি।
মুনা এগিয়ে আসে। বলে,
‘ মিষ্টি কি তোকে ডাকছে রে ইশু?
ইশা হেসে মাথা নাড়ায়। বলে,
‘ হ্যা। আমাকেই মিষ্টি ডাকে।
রিপ সোফায় বসে পড়ে বলে,
‘ ইশুরে আমি মিনিকে আর কোথাও যেতে দেবনা। তোর বন্ধুকে বলিস প্রাইজটা বলে দিতে। আমি কিনে নেব। আমার মিনিকে খুব পছন্দ হয়েছে।
ইশা মিনিকে আঙুল দিয়ে রিপকে দেখিয়ে বলে,
‘ মিনি ওই দেখো। নাইস বয়টার নাম রিপ। তুমি আজ থেকে রিপ বলে ডাকবে।
মিনি আচমকা রিপের কাঁধের উপর গিয়ে বসে। রিপ দূরে সরে পড়ে। কাঁধ চুলকিয়ে বলে,
‘ ওরে বাপরে আমার সুড়সুড়ি লাগে।
মিনি আবার ও তাকে আক্রমণ করে। গালের একপাশে ঠোকর মেরে বলে,
‘ রিপ ব্যাড বয়। ব্যাড বয়।
রিপ মাথায় হাত দিয়ে বলে,
‘ ও মাই গড। এসব ও জানে?
ইশা হেসে কুটিকুটি হয়। বলে,
‘ রিপদা ও সব জানে।
ইশা মুনার কোলে থাকা পরীর দিকে তাকায়। মিনিকে বলে,
‘ মিনি ওঁনার নাম মুনা। আর এটা আমাদের প্রিন্সেস।
মিনি ডানা ঝাপটায় খুশিতে। ডেকে উঠে,
‘ মুননা, প্রিন্সেস।
বাঁশির সুরের মতো চিকন গলায় সবার নাম উচ্চারিত হওয়ায় জহির মিয়া আর তালহা বেগম এগিয়ে এলেন। বললেন,
‘ এ আবার কোন আপদ নিয়ে এলি?
জহির মিয়া বাঁধা দিয়ে বলে,
‘ আহা, কি মিষ্টি একটা পাখি। এভাবে বলছ কেন?
মিনি তাদের কথা শুনে চট করে ডেকে উঠে, মিনি। মিনি।
ইশা হেসে উঠে। বলে,
‘ মামা তুমি কি মিষ্টি একটা পাখি বলেছ তাই রাগ করেছে। ওর নাম মিনি।
জহির মিয়া চশমা ঠিক করে বলে,
‘ ওর নাম মিষ্টি হলেই ভালো হতো।
ইশা কিছু বলার আগেই মিনি উড়ে যায় জহির মিয়ার কাছে। জহির মিয়ার মাথায় আচঁড় মেরে ইশার কাছে চলে আসে। ক্ষোভ নিয়ে ডাকে,
‘ মিষ্টি। মিষ্টি। মিষ্টি।
উপস্থিত সবাই হো হো করে হেসে উঠে। ইশা হাসতে হাসতে সোফার সাথে লেপ্টে পড়া ছেলেটাকে দেখে অবাক হয়। ভ্রু কুঁচকে বলে,
‘ রিপদা কি করছ? এভাবে কেউ হাসে?
রিপ পেট ধরে উপরে উঠতে উঠতে বলে,
‘ আমি যাই। এখানে আর বেশিক্ষণ থাকলে পেটে খিল ধরে যাবে।
জহির মিয়া সোফায় বসতে বসতে বলে,
‘ এ পাখিটির মালিকের ভয়ংকর রাগ বলতে হবে। পাখিটি ও তাই শিখেছে।
নিমেষেই হাসিমুখ অন্ধকারে চেয়ে যায় ইশার। আনমনা হয়ে যায় সে। ভয় বাসা বাঁধে বুকে। হাত পায়ে ঠান্ডা শিরশিরে অনুভূত হয়। কি হতে চলেছে তার সাথে। সে সব পিছুটান ফেলে চলে এসেছে বহুদূর। আবার কেন তাকে সেই অতীত তাড়া করে বেড়াচ্ছে? আবার ও কি তাকে মুখোমুখি হতে হবে সেই জঘন্য অতীতের? মুখোমুখি সে কি করে হবে? তার হাতে যে কেনোকিছুই নেই। হঠাৎ তার মনে পড়ল,আলব্যামের কথা। ডক্টর কি আলব্যাম পেয়ে গেছে? পেয়ে গেলে বোধহয় মিষ্টির খোঁজে ফেটে পড়ত। তারমানে পায়নি। ওই আলব্যামের ভাঁজে চিরকুট রেখে সে খুব বড় ভুল করেছে। এই ভুলের মাশুল সে কি করে দেবে? আচ্ছা মিনুমা কি আছে? মিনুমা আলব্যাম থেকে চিরকুট গুলো সরাতে সাহায্য করবে তো? ওই চিরকুট গুলো কিছুতেই ডক্টরের হাতে পড়তে দেওয়া যাবেনা? ডক্টর যদি একবার সব বুঝে যায় তার সম্বলটুকু ও সে হারিয়ে ফেলবে। আজিজ চৌধুরী তার বেছে থাকার একটিমাত্র প্রদীপটুকু ও কেড়ে নেবে। ডক্টর কি এটুকু নিয়ে ও তাকে বাঁচতে দেবে না। ডক্টর তো আর তাকে চাইনা। শুধু শুধু অতীত জানতে চাইবে। জেনেই বা কি লাভ হবে? হয়ত ভালো মানুষ সাজার জন্য আবার দয়া দেখাবে ইশার প্রতি। কিন্তু এই দয়া তো সে কখনোই চায়নি। সে ডক্টরের সাথে ভালো থাকতে চেয়েছিল। ডক্টরের একটুখানি ভালোবাসা চেয়েছিল। এটাই তার জন্য কাল হয়ে দাঁড়াল। ডক্টরের জীবনে অন্যকেউ আছে জেনে ও ডক্টরকে সে চেয়েছিল এটাই তার দোষ। তার অপরাধ। সে কেন রক্ষিতা থেকে বউ হতে চেয়েছিল?

_________________________

এত চুপচাপ, নির্জীব আদিকে কয়েকদিন ধরে খেয়াল করছেন আলিয়া চৌধুরী। মিনিকে ও কোথাও দেখা যাচ্ছে না। কি সমস্যা? আইমি ও কয়েকদিন আসেনি। আফাজ আহমেদের কথা অনুযায়ী বিয়ের ব্যাপারে কথা বলতে এসেই আদিকে এমতাবস্থায় দেখে আলিয়া চৌধুরী ভড়কে গেলেন। আদি মায়ের উপস্থিতি টের পেল। বলল,
‘ এদিকে এসে বসো মা। কি বলবে বলে যাও।
আলিয়া হাসল। আদির পাশে এসে বসল। মাথায় চুলে হাত বুলিয়ে বলল,
‘ আইমির সাথে কথা হয়েছে?
আদি হ্যা জবাব দিল। আলিয়া চৌধুরী এদিকওদিক তাকিয়ে বলল,
‘ মিনি কোথায়? কয়েকদিন ধরেই দেখছিনা।
আদির সাবলীল জবাব,
‘ হারিয়ে গেছে।
আলিয়া চৌধুরী চমকাল না। মানসিক ভারসাম্যহীন আদির মিনিকে প্রয়োজন হলে ও এই আদির মিনিকে কোনো প্রয়োজন নেই।
আদি আলিয়াকে চমকাতে না দেখে বলল,
‘ তুমি অবাক হচ্ছো না মা। মিনি আমাকে ছেড়ে চলে গেছে। সবাই কি শুধু আমায় ছেড়ে চলে যায়?
ছেড়ে চলে যায়? কথাটি শুনে হঠাৎ আলিয়া ভড়কে গেল। বলল,
‘ কেন চলে যাবে? আদি চৌধুরীকে কি ইগনোর করা যায়? মিনি কোথায় হারিয়েছে?
আদি উত্তর দিল না। উরুর উপর দুহাত মুষ্টিবদ্ধ করে রেখে মুখ বরাবর রাখল। চিন্তায় মগ্ন সে। হঠাৎই বলল,
‘ মিষ্টি কে ছিল মা? কে হয় আমার?
আলিয়া যেন এই ভয়টাই পাচ্ছিলেন। দাঁড়িয়ে পড়লেন। বললেন,
‘ কে মিষ্টি? কার কথা বলছ? আমি এমন কাউকে চিনি না।
আদি মায়ের চোখ থেকে চোখ নামিয়ে নিল। বলল,
‘ কেউ জানেনা সেটা বিশ্বাস করতে কষ্ট হচ্ছে। কেউ তো জানে! কেউ তো ছিল! কিন্তু কে বলবে আমায়? কে সে?
আলিয়া বিপদের আশঙ্কা দেখে তাড়াতাড়ি বেরিয়ে পড়লেন রুম থেকে। যে করেই হোক আজিজের সাথে কথা বলতে হবে। আদির মনমগজ থেকে পুরোপুরি মিষ্টি নামটি মুছে ফেলতে হবে। যাতে আদি ভুলে ও ওই নামটি উচ্চারণ করতে না পারে। এতবছর পর হঠাৎ করে মিষ্টির কথা কি করে মনে পড়তে পারে আদির? যেখানেই তার কোনোকিছুই মনে পড়ার কথা নয়। তখনকার কোনো স্মৃতি সে সংরক্ষণ করতে পারেনি। তাহলে মিষ্টিকে কি করে মনে পড়ল। ওই মেয়েটা এখন কোথায়? আদির সামনে না পড়ার ব্যবস্থা করতে হবে। আইমির সাথে আদিকে জুড়ে দিতে হবে।

________________

রাতের খাবার টেবিলে আজিজ চৌধুরী আদিকে সরাসরি জিজ্ঞেস করল,সে বিয়েতে এ মুহূর্তে রাজী আছে কিনা। আইমির বাবা আর অপেক্ষা করতে পারবেনা। আদিকে অনেক সময় দেওয়া হয়েছে। আদির অমন অসুস্থতার সময় আদির পাশে আইমিই ছিল। ওই মেয়েটা ছিল আদির পাশে সবসময়। আছে। ভবিষ্যতে ও এমন হাজার ও পরিস্থিতি আসলে আইমি যে আদির পাশে থাকবে সেটা বলতে অপেক্ষা রাখেনা। কিন্তু তারপর ও কোথাও একটা কিন্তু থেকে যায়। সেই কিন্তুটা নিয়ে বেশি ভয়ে থাকেন আজিজ চৌধুরী।
আদি চুপচাপ খেতে থাকে। কোনো জবাব দেয়না। আজিজ চৌধুরী আবার প্রশ্ন ছুড়ে,
‘ তোমাকে কিছু জিজ্ঞেস করেছি আদি। কিছু বলছ না কেন?
আদি খাওয়া রেখে উঠে দাঁড়ায়। ভুক্তাবশেষ পড়ে থাকে। পানি খেয়ে বলে,
‘ আমার তো কখনো অমত ছিলনা। তাহলে এভাবে জিজ্ঞেস করার কোনো কারণ দেখছিনা। আমি রেডি।
আজিজ আর আলিয়ার ঠোঁটের কোণায় হাসিটা দেখার সময় ও হলোনা আদির। সে সিড়ি বেয়ে বেয়ে উপরে উঠতে লাগল। দেখা হলো রাইনার সাথে। রাইনা বলল,
‘ কিছু বলবি আদি?
আদি মাথা নাড়ায়। বলে,
‘ আমার ঘরে এসো। গল্প করব।
রাইনা মাথা নাড়ায়। নিচে নেমে আসে। আদি তার ঘরে চলে যায়।
রাইনাকে আজিজ আর আলিয়া ধমকে বললেন,
‘ তুমি যাবেনা রাইনা। আদির সাথে অতীত নিয়ে কোনোরূপ কথা বলবে না।
রাইনা মুখের উপর জবাব দিল।
‘ বলতে চাইলে এতদিনে বলে দিতাম। বারবার একই কথা বলবেন না। ভালো লাগেনা।
আজিজ চৌধুরীর মাথায় রাগ চেপে বসে। কিছু বলার আগেই রেহান হাজির হয়। আজিজ চৌধুরীকে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরে বলে,
‘ দাদাই এবার তাহলে আইমি আমার বৌমা হবেই।
আলিয়া হাসল। আজিজ ও হাসল। বলল,
‘ হবেই হবে। খুব মজা হবে দাদুভাই। তোমার সব বন্ধুদের এবার দাওয়াত করবে। রেহান খুশিতে হাত তালি দেয়। বলে,
‘ কি মজা হবে দাদাই! তাই না?
আজিজ চৌধুরী তার মাথার চুল এলোমেলো করে দিয়ে বলে, ‘ ইয়েস দাদুভাই।
চেয়ার টেনে বসে পড়ে আফি। রেহানের কথা শুনে বলে,
‘ কোনো বন্ধুটন্ধু আসবে না। তোমার বন্ধুদের কি দরকার? চাচ্চুর বিয়ে হচ্ছে তোমার। তোমার নয়। তোমার হলে তখন দাওয়াত দিও।
রেহানের মুখ কালো হয়ে যায়। বলে,
‘ ওকে ড্যাড। সরি।
আফি হাত নেড়ে বলে, ঠিকআছে। এখন আমার সামনে থেকে যাও।
রাইনার খারাপ লাগে। ছেলেটার সাথে ও কেন এভাবে কথা বলে আফি?
আজিজ আর আলিয়া চৌধুরী রেগে তাকায় আফির দিকে। আফি কারো দিকে তাকায়না। গপাগপ শুধু খেতে থাকে। আলিয়া আর আজিজ চৌধুরীর বিরক্তি বাড়তে থাকে তরতর করে।

__________________________

কালো সাদা মিশেল পাতলা ফ্রক,মাথার চুল গোল করে কাটা কাঁধ অব্ধি। গুলুমুলু চেহারাটায় অসম্ভব রকম মায়া জড়ানো। ঠোঁটদুটো ফুলিয়ে খেলনাপুতুল দিয়ে খেলছে। সাথে মিনির সাথে ঝগড়া করছে। মিনি কয়েকবার পরীর হাতে ঠোকর ও দিয়েছে। যদি ও গুলুমুলু হাতগুলোতে ঠোকর দেওয়া মিনির পক্ষে একপ্রকার আদর। কিন্তু পরীর কাছে তা আঘাত।
ঠোকর আবার দেওয়ায় পরী চিৎকার করে কেঁদে উঠেছে। মিনিকে ধরতে চেয়ে ও তিনবার ধরতে পারেনি ।

যখন ধরতে পারল মিনিকে কোনোমতে একবার দুই হাতের মুঠো দিয়ে এমনভাবে ধরেছে যাতে মিনি আর পালাতে না পারে। মিনির পালক ছিড়েছে। হাতের মুঠোয় এতটা শক্ত করে ধরেছে যে মুনা এসে ছাড়াতে চেয়ে ও পারল না। পরী রাগে এমনভাবে চেপে ধরেছে গোলাটে চোখদুটো ধারণ করল টকটকে লালরূপ। রিপ দৌড়ে আসল। অনেকভাবে বলে ও পরীর হাত থেকে ছাড়াতে পারল না মিনিকে। মিনি চিৎকার করে চেঁচাতে থাকল। কাউকে ডাকার মত অবস্থায় নেই সে। ইশা দৌড়ে আসল। পরীর চেহারা দেখে সে ভড়কে গেল। এত রাগ কেন এটুকুনি একটা মেয়ের? মিনিকে জোর করে ছাড়াতে চাইলে মিনি আর ও ব্যাথা পাবে।

ইশা শান্তভাবে বলল, পরী ফিপিকে দিয়ে দাও মিনিকে। মিনি ব্যাথা পাচ্ছে। কাঁদছে। ছেড়ে দাও।। পরী ঠোঁট বাকাল। মিনি যেখানে ঠোকর দিয়েছে সেখানে দেখাল পরী। ইশার মন খারাপ হয়ে গেল। বলল,
‘ উফ তোমাকে মেরেছে মিনি। আচ্ছা আমাকে দাও। আমি খুব মারব।
পরী তারপর ও ছাড়ল না । এক হাতের মুঠোই মিনির গলা অন্যহাতের মুঠোয় মিনির ডানা । বেশিক্ষণ থাকলে মিনির কিছু একটা হয়ে যেতে পারে। ইশা এমনটা কি করে হতে দেয়?
সে ধমক দিল পরীকে। চোখ লাল করে তাকাল। পরী ফুলেফেঁপে মাথা নিচু করে ফেলল। রাগে, অপমানে মিনিকে আর ও জোরে চেপে ধরে ভ্যা ভ্যা করে কেঁদে দিল। হাত আলগা করে ফেলল। মিনি ছাড়া পেয়ে উড়ে চলে গেল দূরে। ইচ্ছেমত বকতে লাগল পরীকে। পরীর কান্নার আওয়াজে ছুটে এল রিক। মুনাকে ধমক দিয়ে বলল,
‘ ওকে এভাবে কাঁদাচ্ছ কেন? কি হয়েছে?
মুনা কাঁচুমাচু করে বলল,
‘ ইশা মিনিকে ছাড়তে বলেছে তাই কাঁদছে।
রিক রেগে তেড়ে এল। পরীকে কোলে তুলে নিল। পরী ইশার দিকে তাকিয়ে ঠোঁট বাকিয়ে কাঁদতে লাগল। পরী চোখের ইশারায় বলল,
‘ সরি মা।
পরী যেন বুঝতে পারল। রাগে চুল টেনে ধরল রিকের। রিক আওয়াজ করে বলে,
‘ পাপা ব্যাথা পাচ্ছি মা। এভাবে কেউ ধরে?
পরী তার কাঁধে শক্ত করে মুখ চেপে ধরে। রিক তুলতে চাইলে আর ও শক্ত করে চেপে ধরে। মাথা তুলে তুলে কিছুক্ষণ পর পর ইশার দিকে তাকায়। আবার মুখ গুজে কাঁদে।
রিপ হাতের তালু ঝেড়ে রিককে বলে,
‘ দাভাই তোমার মেয়ের রাগগুলো ঠিক তোমার মতো। তোমার চাইতে ও বেশি। আমি সত্যিই অবাক।
রিক পরীকে শান্ত করতে করতে নিয়ে যায় উপরে। ইশা তাকায় পরীর দিকে। পরী আবার ও একবার তাকায় ইশার দিকে। ইশার চোখে চোখ পড়ায় আবার চেপে যায় রিকের কাঁধে। থেকে থেকে কেঁদে উঠে। ইশা শুধু অসহায় হয়ে দাঁড়িয়ে থাকে। এটুকুনি বাচ্চা একটা মেয়ে ও তার সাথে রাগ করা ছাড়ল না। রাগ শুধু সে দেখাতে পারেনা। কে দেখবে তার রাগ? কার উপর দেখাবে সে রাগ? কে আছে তার রাগ দেখার জন্য?

__________________________

খড়খড়ে রোদ। ঘেমে উঠেছে চৌধুরী বাড়ির দাড়োয়ান আনোয়ার। সিমেন্টের একটি টিলার উপর বসে রয়েছে সে । চোখেমুখে বিষণ্ণতা ছড়ানো। বোরকা পড়া একটি মেয়েকে এগিয়ে আসতে দেখে তার ভ্রু কুঞ্চন হলো। সে দাঁড়িয়ে পড়ল। মেয়েটি তার সামনাসামনি এসে পড়ল। এদিকওদিক তাকিয়ে মুখ না দেখিয়ে সালাম দিল। বলল,
‘ কেমন আছেন চাচা?
আনেয়ার বুঝার চেষ্টা করছেন কে সেটা বুঝার জন্য। যখন কন্ঠটা পরিচিত মনে হলো তখন তার চোখদুটো চকচক করে উঠল। অনাকাঙ্ক্ষিত, অপ্রত্যাশিত ঘটনা। বেশ উৎফুল্ল হয়ে আনোয়ার জানতে চাইল,
‘ ছোট বৌমণি তুমি এখানে?
ইশা জবাব না দিলে আনোয়ার মাথা চুলকায়। বলে,
‘ ইশা মা,,,,, তুমি এখানে। হঠাৎ। কি মনে করে?
ইশা তার হাতের কাগজটা আনোয়ারের হাতে গুজে দিয়ে বলল,
‘ চাচা বেশিক্ষণ দাঁড়াতে পারব না এখানে। এই কাগজটি আপনি চুপিচাপি মিনুমাকে
দিয়ে দেবেন। নয়ত রাইনা আপুকে। কেউ না দেখে না শোনে মত দেবেন। মেয়ে মনে করে আমাকে এটুকু সাহায্য করুন।
আনোয়ার তাকে অভয় দিল। বলল,
‘ আচ্ছা আমি দিয়ে দেব।
ইশা আর দাঁড়াল না। ব্যস্ত পায়ে হেঁটে এগিয়ে গেল সামনে। গেইট পেরিয়ে বেরোতে দেখল একটি গাড়ি । গাড়িতে বসা আদি। ইশা ব্যস্ত পায়ে হাঁটা ধরল। পিছু ফিরল না আর। মনের মধ্যে অজানা ভয় জেঁকে বসল। মিনুমা তাকে ফোন দেবে তো। কবে দেবে? খুব বেশি দেরি হয়ে যাবেনা তো? আলব্যামের পাতায় থাকা চিরকুট গুলো কিছুতেই হাতে পড়া যাবেনা ডক্টরের। যে মন থেকে অনুভব করতে পারেনা সে চিরকুট পড়ে কিই বা বুঝবে?
কলেজের কাছাকাছি গিয়ে সে বোরকা খুলে ফেলল। মাথার কাপড় দিয়ে মাথা ঢেকে ফেলল। বোরকা ব্যাগে ডুকিয়ে রাখল। দূর থেকে দুটো চোখ তার এসব কান্ডকারখানা খেয়াল করল।

____________________________

উজ্জ্বল ফর্সা গায়ের রং। খানিকটা লম্বা হয়ে আসা তার চুল। হাসলে অপূর্ব সুন্দর লাগা ছেলেটির দিকে তেড়ে গেল ইশা। মিনিকে চট করে নিজের হাতে নিয়ে বলল,
‘ রিপদা তুমি আজকে গিয়ে চুল কেটে আসবে। ভালো লাগছেনা দেখতে।
রিপ তার মাথায় হাত বুলিয়ে বলে,
‘ তুই বলছিস না তাই তো কাটছি না। এখন বলেছিস কেটে ফেলব।
ইশা নাক ফুলায়। বলে, ধুরর মজা নিও না তো। আমি সিরিয়াস। তুমি কত সুন্দর। চুলগুলোর জন্য কেমন জানি লাগছে। একদম সুন্দর করে কেটে আসবে। দেখবে ঠিক আগের মতো সুন্দর লাগবে।
রিপ মাথার চুলগুলোতে হাত বুলাল। বলল, আমি সুন্দর?
ইশা মিনির সাথে খেলতে খেলতে বলে,
‘ হ্যা। তুমি জানো আমার বান্ধবী নীরা তোমার উপর ক্রাশ খেয়েছে। এই শোনো তুমি একটা কাজ করো। এবার প্রেমে ট্রেমে মনোযোগ দাও। তুমি চাইলে আমি লাইন ঠিক করে দেব। নীরা কিন্তু হেব্বি। কাজেকর্মে সেরা। পড়ালেখায় ও সেই। মামির মন কেড়ে নেবে। এই তুমি একবার হ্যা বলো আমি রিস্ক নিতে রাজী আছি। এবার একটু নিজেকে নিয়ে ভাবো। এসব ভবঘুরে বাদ দাও। বউ, বাচ্চার কথা ভাবো।
রিপ চোখ ছোট ছোট করে তাকিয়ে থাকে ইশার দিকে। পুরোটা সময় নীরব থাকে। সোফায় গিয়ে বসে পড়ে। কোনো আওয়াজ করেনা। কোনো শব্দ করেনা।
ইশা মিনিকে নিয়ে রিপের পাশে বসে। বলে,
কিছু বলছ না কেন রিপদা?
রিপ আয়েশ করে বসে। ইশার দিকে ফিরে। ইশা চোখ ছোট করে করে তাকায়। বলে,
‘ কি?
রিপ তুড়ি মেরে বলে,
‘ তোর বান্ধবী তোর মতো দেখতে?
ইশা মাথা নেড়ে বলে,
না আমার চাইতে ও সুন্দর। আমি শ্যামা।
রিপ আবার জিজ্ঞেস করে,
‘ তোর বান্ধবীর চোখগুলো তোর মতো?
ইশা বলে, না। আর ও সুন্দর।
রিপ বলে, তোর বান্ধবীর চুলগুলো তোর মতো?
ইশা এবার ও বলে,
‘ ধুরর, কোথায় আমার চুল। কোথায় তার চুল।
রিপ আবার প্রশ্ন করে,
‘ তোর বান্ধবী তোর মতো করে হাসে?
ইশা মাথা নাড়ায়। বলে, একদম না। ওঁর হাসি মনকাড়া।
রিপ আবার জিজ্ঞেস করে। ‘ তোর বান্ধবী তোর মত অন্যকাউকে ভালোবাসে?
ইশা থমকে যায়। আমতাআমতা করে বলে, কি বললে?
রিপ হো হো করে হেসে দেয়। বলে,
শেষের প্রশ্নটা মজা ছিল। তোর উপর আমার অগাধ বিশ্বাস আছে। তুই আমাকে আগে জানাতি।
ইশা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললে ও অস্বস্তি দানা বাঁধতে শুরু করল। আর কত মিথ্যের পাহাড় গড়বে সে? আর কত?
রিপ তার আঙুল দিয়ে ইশার গালে টোকা দিয়ে বলে,
‘ ইশু তুই পরীক্ষায় ফেল। তোর বান্ধবীর কপাল খারাপ। একটু ও পছন্দ হয়নি আমার তাকে । তুই পরীক্ষায় পাশ করলে একটা কথা ছিল। সো তোর বান্ধবীকে বিয়েটা করা হচ্ছে না।
ইশা দাঁড়িয়ে পড়ে। বলে, রিপদা এর চাইতে ভালো মেয়ে তুমি আর পাবেনা। দেখবে মামি শেষমেশ কাঠখোট্টা টাইপের বউ এনে দেবে তোমায়।
রিপ ও দাঁড়িয়ে পড়ে। ইশার অন্য গালে হাত দিয়ে টোকা মেরে বলে,
‘ কিচ্ছু বলব না। তুই বাকিটা বুঝে নে। চুল কাটতে যাচ্ছি।
ইশা রিপের যাওয়া দেখে শুধু। গলার স্বর উঁচু করে বলে,
‘ রিপদা অর্ধেক অর্ধেক কথা বলো কেন? তোমার কথাগুলো আমি বুঝিনা।
ধপ করে কিছু একটার আওয়াজে ইশা চমকে পিছু ফিরে তাকায়। তালহা বেগম টেবিলে পানির জগ আওয়াজ করে রেখে বলে,
‘ তুই বুঝবি ও না কোনোদিন। বুঝে লাভ ও নেই।
ইশা ঠাঁই দাঁড়িয়ে রইল। তার মাথায় চিন্তা চেপে বসল। মিনুমা চিঠিটা পেয়েছে তো? পেলে ফোন দেয়নি কেন?

_________________________

কলেজ থেকে ফেরার পথে ফোনকল এল ইশার। এমনিতে ও আজ তার মন ভালো নেই। মনটা বিষণ্ণ হয়ে আছে। নীরা অর্পির বকবকানি তার ভালে লাগছেনা। দুই বান্ধবীর সাথে বহুদিন পর দেখা হয়ে ও তাদের সাথে আড্ডায় মনোযোগী হতে পারছেনা সে। দুইজনের কাছ থেকে কিছুটা দূরে এসে ফোন ধরল সে। ওপাশ থেকে রিপের গলার আওয়াজ শোনা গেল। ইশা কিছু বলে উঠার আগেই রিপ ওপাশ থেকে বলল,
‘ হসপিটালে চলে আয়। পরীকে নিয়ে এসেছি।
ইশার হাত কেঁপে উঠল। ফোনটা সে শক্ত করে ধরল। বলল, পরীর কি হয়েছে রিপদা?
রিপ স্বাভাবিক গলায় বলল,
” সিড়ি থেকে পড়ে গিয়েছে । তুই চলে আয়।
ইশা নীরা অর্পিকে কিছু বলেনা। তাড়াতাড়ি অটো ডেকে নেয়। অটোতে চেপে বলল, তোরা চলে যাহ দোস্ত। আমাকে হসপিটালে যেতে হবে।
নীরা অর্পিকে কিছু বলার সুযোগ দেয়না ইশা। অটো চলে । হসপিটালের কাছাকাছি যেতেই তার ফোন আবার ও বেজে উঠে। অচেনা নাম্বার। সে ধরতে চাইল না। পরপর চারবার কল আসায় সে পঞ্চমবার কল ধরল। ফোন কানে দিতেই পরিচিত একটি কন্ঠস্বর ভেসে আসে।
” ইশা মা বলছিস? আমি তোর মিনুমা বলছি? চিনতে পারছিস?
ইশা কাঁপাকাঁপা কন্ঠে উচ্চারণ করে,
‘ মিনুমা,কেমন আছ তুমি?
মিনু কিছুক্ষণ চুপ থেকে তারপর উত্তর দেয়, ভালো আছি। তুই কেমন আছিস?
ইশা ব্যস্ত হয়ে বলে, ভালো আছি। তোমাকে যে কাজটি করতে বলেছি করেছ?
মিনু বলল,
‘ হ্যা করেছি। সব চিরকুট আমি ডাস্টবিনে ফেলে দিয়েছি। আর চিন্তা নেই। তুই এটা কেন করলি রে ইশা? ডক্টরকে ছাড়া থাকতে শিখে গিয়েছিস তাইনা?
ইশা চুপ থাকে। চোখ দিয়ে গড়াতে থাকে ফোটা ফোটা জলের নহর।
বলে, তুমি একদম ঠিক কাজ করেছ মিনুমা। ডক্টরের জন্য আমি আর কোনো পথ খোলা রাখিনি। ডক্টর থাকুক তার মতো।
ইশা ব্যস্ত পায়ে হসপিটালের দিকে পা বাড়াতে বাড়াতে বলল,
‘ মিনুমা তোমাকে আমি পরে কল দেব। এই নাম্বারটা রেখো।
ফোন রেখে দিয়ে ইশা দৌড়াতে থাকে। শিশু ওয়ার্ডের দিকে চলে যায়। রিপকে কল দেয়। রিপ ফোন ধরে ওয়ার্ড নাম্বার বলে দেয়। ইশা সেদিকে দৌড়াতে থাকে। সেই নির্দিষ্ট কেবিনে গিয়ে ইশা থেমে যায়। মুনা, রিক আর রিপ তার দিকে ফিরে তাকায়। রিক কোনোমতে বেরিয়ে পড়ে কেবিন থেকে। বেডের উপর ছোট্ট গুলুমুলু মেয়েটি চোখবুজে শুয়ে রয়েছে। থুতনির নিচে কাটা দাগটিতে অসম্ভব সৌন্দর্য উপচে পড়ছে। মায়া ঝড়ে পড়ছে। কিন্তু ঠোঁট,নাকের উপর কিসের ব্যান্ডেজ। কপালে কিসের ব্যান্ডেজ?
ইশার গাল আপনাআপনি ভিজে গেল। নার্স এসে বলল, যে কোন একজন থাকুন। বাকিরা বেরিয়ে যান। রিপ সবাইকে বলল,
‘ আমরা তো এতক্ষণ ছিলাম। ইশা থাকুক। আমরা বাইরে গিয়ে দাঁড়ায়।
সবাই বেরিয়ে যায়। ইশা তার ব্যাগ রাখে পাশের বেঞ্চে। ধীরে ধীরে এগিয়ে যায় ঘুমন্ত মেয়েটার মাথার কাছে। মেঝেতে হাটুভেঙ্গে বসে মেয়েটির মুখের কাছে মুখ রাখে। মেয়েটির ব্যান্ডেজে মোড়ানো একটি আঙুলে চুমু দেয়। কপালে দেয়। ঠোঁটে। নাকের উপর। তার চোখের জল মিশে একাকার হয়ে যায় ছোট্ট মেয়েটির মুখে। ইশা গালের একপাশ লাগিয়ে রাখে ছোট্ট মেয়েটির গালের একপাশে। চুপচাপ পড়তে জল তার চোখের কোণা বেয়ে ছোট্ট মেয়েটির মুখে। সে অশ্রুসিক্ত নয়নে খানিকটা ধরা কন্ঠে উচ্চারণ করে, এই মা। আমার মা। কোথায় ব্যাথা লেগেছে? কোথায়? এই দেখো আমি এসেছি। আমাকে বলো কোথায় ব্যাথা লেগেছে? এই দেখোনো আমমমা এসেছে। এই মা।

কেবিনের দরজা সামনে দাঁড়িয়ে ডক্টর আদি চৌধুরী ফোনের ওপাশের মেয়েটিকে বলে, রাউন্ডে আছি ম্যাডাম। কিছুক্ষণ পর ডিউটি শেষ। সোজা ফিরছি আপনার কাছে।
কথা বলা শেষ করার সাথে সাথে তার চোখ আটকে যায় খুব সুন্দর একটি দৃশ্যে। একটি মা মেয়ের গালের সাথে গাল লাগিয়ে আধ-শোয়া হয়ে আছে। মায়ের চেহারা দেখা যাচ্ছেনা। না মেয়ের। ডক্টর আদি চৌধুরীর কাছে এই দৃশ্যটি অপূর্ব সুন্দর দেখালো। সে দরজার সামনে দাঁড়িয়ে উপভোগ করতে লাগল সেই দৃশ্য।
ছোট্ট মেয়েটির পুরো মুখ ভিজে যায় ইশার চোখের জলে। অন্যদিকে ডক্টর আদি চৌধুরী দরজার সামনে দাঁড়িয়ে অদ্ভুত চোখে দেখে সেই দৃশ্য। সে বন্দী করে সেই দৃশ্য ফোন দিয়ে।

চলবে,
( আপনাদের মতামত জানাবেন)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here