উল্টোরথে- ১
শানজানা আলম
তুমি কি আমাকে বিয়ে করে মহান সাজতে চাইছ?
-তিথি পারভেজকে ডেকেছিল ওদের বাসার ছাদে। পারভেজ নাকি তিথিকে বিয়ে করার প্রস্তাব দিয়েছে। তিথি বিষয়টা নিতে পারছে না একদম। পারভেজ বেশ নামকরা একটা কোম্পানিতে ভালো পোস্টে চাকরি করে। ওর কোনো দরকার নেই, তিথির মত গায়ে কালি লাগা কোনো মেয়েকে বিয়ে করার।
পারভেজ ইতস্তত করে বলল, মহান সাজার কিছু নেই তিথি। তোমাকে আমার ভালো লাগে, অনেক আগে থেকেই ভালো লাগে, সেটা তো তুমি জানতে!
পারভেজ, আমাকে দেখে তোমার মিটিমিটি হাসা, একটু দুটো এসএমএস করা, বাসার সামনে ফুল রেখে হাওয়া হয়ে যাওয়া এগুলো আমাকে কখনো ইম্প্রেস করতে পারে নি। কখনো পারবেও না। মানে প্রেম ট্রেম বিষয়টা না আমার আসবে না৷ তোমার ক্ষেত্রে তো আসবেই না। তাই নিজের পথ দেখো!
তিথি একটা সিগারেট ধরিয়ে নিলো।
পারভেজ এবার একটু সাহসী হয়ে সিগারেট নিয়ে নিভিয়ে ফেলে দিলো।
এরকম কোনো জীবন হয় না তিথি। তুমি একটা ভুল করেছ, সেটা শুধরে নাও। আমাকে বিয়ে নাই করতে পারো, জীবনের উপর অত্যাচার কেন করছ!
তিথি মনে মনে দীর্ঘশ্বাস ফেলল। মাস কয়েক আগে নিজের প্রেমিকের সাথে পালিয়ে গিয়েছিল। শা★লা বাসায় না নিয়ে নিয়ে গেল কক্সবাজার। দুইদিন থাকার পরে বলল, বিয়ে করা সম্ভব না। তিথিও ছেড়ে দেওয়ার মেয়ে না। জোর করতে গিয়ে আবিস্কার করল, বদটার বাসায় বউ আছে, বাচ্চা আছে! প্রশ্নই ওঠে না ওখানে থাকার। কিন্তু ফেরার আগে বউকে সব ছবি প্রমান দেখিয়ে এসেছে।
বউটাও একটা ব্যাকবোন লেস, তিথিকে বলল, আপনি আমার স্বামীকে ভাগানোর চেষ্টা করেছেন, না পেরে এখন আমার সংসার ভাঙতে আসছেন!
তিথি অবশ্য বলে এসেছে, আপনার স্বামীকে আপনি সো কেসে সাজিয়ে রাখুন! আমি তো বুঝি নাই শালা সেকেন্ড হ্যান্ড মা★ল। অবশ্য সেকেন্ড হ্যান্ড কে বলবে, দেখুন, আরো কত মেয়ের সাথে শুয়েছে!
বিষয়টা চাপা থাকে নি! মেয়ে প্রেমিকের সাথে বের হয়ে গিয়েছিল, এরকম রসমাখা খবর, গল্পে গল্পে পাখনা গজিয়েছে অনেক দূর।
তিথির অবস্থা এখন খুবই খারাপ, বাসায় কেউ কথা বলে না। ভাবী জানিয়ে দিয়েছে, তিথি থাকলে সে আলাদা বাসা নেবে, কোনো আত্মীয় স্বজন তিথির মুখ দেখতে চায় না। বাবা তিথিকে দেখলে খাওয়া ফেলে উঠে যায়। ছোটো বোন অপমান করে কথা বলে। মানে এরকম বাজে অবস্থায় তিথির বিয়ের প্রস্তাব দিয়েছে পারভেজের বাসা থেকে। মনে হয় না, তারাও খুশি মনে রাজী হয়েছে। মুখ কালো করেই পারভেজের মা জানিয়েছেন বোধ হয়!
তুমি সত্যিই আমাকে বিয়ে করতে চাও?
হুম! সত্যিই চাই।
হাতি কাঁদায় পড়লে পিপড়াও ছাড়ে না লাথি দিতে।
তুমি কি আমাকে পিপড়া বললে!
বললাম! তোমার মত একদম মায়ের ভদ্র ছেলে আর আমি তিথি! যে কখনো কোনো নিয়ম মানে নি!
পারভেজ বলল, তিথি, তুমি এখন বিপদে আছ। তোমার বাসা থেকে তোমার যা হোক একটা বিয়ে দিয়ে দিবে। তার চাইতে ভালো তুমি আমাকে বিয়ে করে নাও!
তিথি একটু চুপ করে বলল, আমার পাস্ট নিয়ে উঠতে বসতে কথা শুনাতে পারবে না। আর পাস্টের জন্য এটা করবে না,ওটা করবে না এসব কিছুও বলতে পারবে না। রাজী?
পারভেজ বলল, ডান।
তিথি আর পারভেজের বিয়ে হয়ে গেল এক শুক্রবারে।
চলবে