উল্টোরথে-১৭,১৮
১৭
সত্যি বলতে, ডিকেনের ইরিনকে ভালো লাগছে বা ভালোবাসতে পারছে তেমন না৷ তিথিকেই ভালো লাগে ডিকেনের। প্রথমে ভেবেছিল তিথি বিয়ে করে ফেলবে। তারপর জানলে তিথি হয়তো মেনে নিবে, বা তিথি কে তো ডিকেন ভালোবাসে, এটা হয়তো বুঝে যাবে।
সরাসরি বিয়ে করা সম্ভব ছিল না, কারণ ডিকেনের বিষয়ে তিথির পরিবার খোঁজ করলেই জেনে যাবে ইরিনের কথা।
তিথিকে তাই বলেছিল, চলো, আমরা কক্সবাজার চলে যাই। ওখানে বিয়ে করে তারপর বাসায় জানাই।
কক্সবাজারে ওরা চলে গিয়েছিল। তিথিও আপত্তি করে নি ডিকেনের সাথে থাকতে। ঝামেলা করল ডিকেনের বন্ধু।তিথিকে সবটা জানিয়ে দিলো।
এখন বাচ্চাটার জন্য খারাপ লাগতেছে এটাও সত্যি।
ডিকেন তাও ইরিনকে কথা বলার জন্য ডাকল।
ইরিন ঘুরছিল। তার মনটা বেশ ফুরফুরে ছিল।
ডিকেন ডাকল বলে, বেশ খুশি মনেই চলে এলো।
আমাকে ডেকেছ?
হ্যা। কিছু কথা ছিল- ডিকেন বলল।
বলো।
বাবু কই?
আম্মার কাছে।
ইরিন তোমার তিথির কথা মনে আছে?
ইরিন একটু চমকে উঠল৷ কোন তিথি? ওই যে বাসায় এসেছিল, ওই মেয়েটা?
হ্যা।
মনে আছে? কি করেছে আবার?
কিছু করে নি। ইরিন তিথি যা বলেছিল সব সত্য। ওর সাথে আমার একটা সম্পর্ক ছিল।
ইরিন স্তব্ধ হয়ে গেল। এতক্ষণ কি ভেবেছিল, এখন ডিকেন কি বলবে?
সম্পর্ক ছিল, এখন নেই, এরকম কিছু?
না সেরকম কিছু না৷ আমি তিথির সাথে থাকতে চাই, মানে আমি তিথিকে বিয়ে করতে চাই।
ইরিন হতভম্ব হয়ে বলল, আমি তাহলে বাবুকে নিয়ে….
তুমি কোনো চিন্তা করো না। আমি আমার দায়িত্বে কোনো অবহেলা করব না। বাবুর সব দায়িত্ব আমি নিব।
মানে তুমি দুই বউ রাখবে?
-ইরিন যেন শক্ত হয়ে উঠল। এরকম আগে কখনো ইরিনকে দেখে নি ডিকেন।
ডিকেন উত্তর দিতে পারল না।
উত্তর দাও।
মানে আমি তোমাকে চলে যেতে বলব না কখনো। মা তোমাকে পছন্দ করে এনেছে, তুমি খুব ভালো মেয়ে।
ইরিন শক্ত ভাবে বলল, সতীন নিয়ে আমি সংসার করব না।
আমার মা এতদিন জোর করেছে বলে আমি চেষ্টা করেছি তোমার সংসারে সব মানিয়ে নেওয়ার। কিন্তু এতবড় অপমান আমি মেনে নিতে পারব না। তুমি ছাড়াছাড়ির ব্যবস্থা করো। আমি সই করে দেব।
ইরিন উত্তরের অপেক্ষা না করে চলো গেল। ডিকেন নির্বাক হয়ে বসে রইল। ইরিনের কাছ থেকে কান্নাকাটি আশা করেছিল কিন্তু এরকম কিছু হতে পারে সেটা সে ভাবে নি।
চলবে
শানজানা আলম
উল্টোরথে-১৮
পারভেজ তিথিকে বুঝতে পারছে না। তিথির কোনো বিষয়েই কোনো আগ্রহ নেই। পারভেজ ভেবেছিল হয়তো তিথি আস্তে আস্তে ঠিক হয়ে যাবে। সংসারে মন দেবে। এত বড় একটা ঘটনার পরেও পারভেজ তিথিকে ভালোবেসে বিয়ে করে নিয়ে এসেছে। ওর মনের গভীরতা বা চাওয়া পারভেজ বুঝতে পারেনি। নিজের দুর্বলতাও বুঝতে পারে নি।
তিথি সব কিছুই করে কিন্তু কোনো কিছুতেই তার মুখে হাসি ফোটে না৷ মাঝে মাঝে ঝিম দিয়ে বসে থাকে।
তিথি, তুমি কি মন থেকে আমার সাথে থাকতে চাও না?
-পারভেজ জিজ্ঞেস করে ফেলল।
তিথি বলল, জানি না।
এটা কেমন উত্তর হলো তিথি। দিন পার হয়ে যাচ্ছে কিন্তু তোমার কোনো উন্নতি হচ্ছে না। এভাবে কি সংসার হবে?
তিথি বলল, আমি তো আগেই বলেছিলাম, আমাকে দিয়ে সংসার হবে না।
হ্যা বলেছ, অস্বীকার করছি না। কিন্তু মানুষ কি বদলায় না?
তিথি উঠে দাঁড়াল। পারভেজকে তার অসহ্য লাগছে। কেন লাগছে, এই ছেলেটা তো তার কোনো ক্ষতি করেনি। অথচ ওকে দেখলেই তিথি অস্বস্তি হয়, রাগ লাগে।
তিথি, তুমি কিছুদিন তোমার বাবার বাসায় গিয়ে থেকে আসো।
পারভেজ, আমি এভাবে থাকতে পারছি না। আমাকে ছেড়ে দাও। ডিভোর্স দিয়ে দাও।
পারভেজ কিছুক্ষণ চুপ করে তিথির দিকে তাকিয়ে রইল।
তিথি, তোমার মানসিক সাপোর্ট প্রয়োজন। তুমি কি সাইকিয়াট্রিস্ট এর কাছে যেতে চাও?
তোমার আমাকে পাগল মনে হচ্ছে! –
মেন্টাল সাপোর্ট নিলে কেউ পাগল হয় না তিথি।
তিথি চুপ করে গেল। কোনো মানসিক সাপোর্ট লাগবে না। তিথির প্রয়োজন ডিকেন কে। ডিকেন কাছে থাকলে সে এই পৃথিবীর সব চাইতে সুখী মানুষ হয়ে যাবে। ডিকেন বলেছে, সে তার বউকে ডিভোর্স দিয়ে দিবে।
এরকম কি হয় না! কত বাঁধা, কত সমস্যার পরে দুজন এক হয়।
তিথি উঠে ব্যাগ গুছিয়ে নিলো। সে কিছুদিন বাবার বাসায় থাকবে। এখন তো আর সমস্যা নেই। কারো সাথে কথা না বললেও সমস্যা হবে না। এখানে দম বন্ধ লাগে।
তাছাড়া বের হতেও সুবিধা হবে। একশবার শাশুড়ির অনুমতি নিয়ে বের হতে বিরক্ত লাগে।
পারভেজ একবার জিজ্ঞেস করল, সত্যি ওখানে গিয়ে থাকবে?
চলো কোথাও ঘুরে আসি!
তিথি মনে মনে বলল, তোমার সাথে স্বর্গে গেলেও ভালো থাকব না।
★★★
ইরিন বেশ ভালো রকম বদলে গেছে। ডিকেনের সামনে একেবারেই আসে না৷ যা প্রয়োজন হয় ছোটো বোনকে দিতে বলে না হয় কাজের মেয়েটাকে খাবার দিতে বলে। কয়েকদিনে ডিকেন হাঁপিয়ে উঠল। কি আশ্চর্য, যে মেয়েটাকে এত বিরক্ত লাগত৷ এত তুচ্ছ তাচ্ছিল্য করত, তার জন্য মন পোড়ে!
কেন! কেন এরকম হবে! তিথিকেও ফোন করতে ভালো লাগে না। তিথি বাবার বাসায় চলে গেছে। হয়তো বছরখানেক লাগবে সব গুছিয়ে তিথিকে বিয়ে করতে।
ডিকেন অবচেতন মনে ভাবল, একটা ভুল হয়ে গেছে, বিয়ের পরে তিথিকে নক করা উচিত হয় নি। এখন তো তিথিও মানসিক ভাবে প্রস্তুতি নিয়ে ফেলছে।
ওর জন্য সংসার ছেড়ে একরকম বের হয়ে এসেছে। তিথিকে তো ডিকেন ইগনোর করতে পারবে না। তাহলে, কি হবে!
এটাই ভাগ্য! ইরিনকে ছেড়ে দিয়ে, তিথিকে বিয়ে করবে ডিকেন! আগে তো এটাই চেয়েছিল, এখন আর এটা চাচ্ছে না কেন!
চলবে
শানজানা আলম