চিরসাথী_তুমি_আমার – পর্ব ১২,১৩

0
349

#চিরসাথী_তুমি_আমার – পর্ব ১২,১৩
লেখনীতেঃ #রাফিজা_আখতার_সাথী
১২

যখন জ্ঞান ফিরলো তখন খেয়াল করলাম সায়নের পাশে বালিশে মাথা দিয়ে শুয়ে আছি। কতক্ষণ অবচেতন ছিলাম মনে নেই। সায়ন এখনো জেগে আছে। বউ অসুস্থ, কই রোমান্টিক স্বামীর মত বউয়ের মাথাটা বুকে নেওয়া গেলোনা!

“এভাবে কা’ন্নাকা’টি করে জ্ঞান হারাবি প্রতিদিন। বাচ্চা নেওয়া লাগবেনা গা’ধী কোথাকার।”

আমি মুখ ভার করে বললাম, “আমি অজ্ঞান হয়ে ছিলাম আর আপনি জ্ঞান ফেরার পর আমি কেমন আছি জিজ্ঞাসা না করে এসব কথা বললেন! এই আপনার ভা….?”
কথাটা শেষ করতে গিয়েও থেমে গেলাম। সে বলেছে তো আমাকে এখনো ভালোবাসে না তাহলে ‘এই আপনার ভালোবাসা’ বলবো কেন আমি!

আমার ভাবনায় পানি ঢেলে সায়ন বলল, “তোর কি মনে হয় জ্ঞান হারানোর পর আমরা চুপ ছিলাম? এতোক্ষণ সবাই ছিলো এখানে, ডাক্তার এসেছিলো। আস্তে আস্তে স্বাভাবিক হয়ে যাচ্ছিলি তাই সবাইকে পাঠিয়ে দিয়েছি। এবার আমি ঘুমাবো, বাচ্চা বাচ্চা করে জ্ঞান হারিয়ে রাত পার করে দিলি। ঘুমা তুইও, বাচ্চা নেওয়ার প্রস্তুতি নিতে হবেনা।”

আশ্চর্য, বাচ্চার জন্য এই লোকের সাথে এতো কথা বললাম। মনের দুঃখে কতই না কাদলাম তবুও লোকটা এমন ভাব করছে যেন কিছুই হয়নি। আমার মন মানানোর চেষ্টা পর্যন্ত করলোনা। আমার জ্ঞান হারানোর সময় তার কন্ঠে কত ব্যাথা ছিলো, সব আমি বুঝতে পারছিলাম। এখন উধাও সব।

আমি মন ভার করে অন্যদিকে ফেরার চেষ্টা করলাম, হঠাৎ মাথার ভিতর বিশাল একটা আঘাত লাগলো। মনে হলো যেন কেও হাজার ভোল্ট বিদ্যুতের শক দিলো আমার মাথায়। ‘উহ’ করে চিল্লিয়ে উঠলাম। সায়ন উদ্বিগ্ন কন্ঠে বলল, “কি হয়ে সাথী? মাথায়।লেগেছে না? ওদিকে কেন ঘুরতে গেলি তুই, স্বাভাবিক হয়ে শুয়ে থাকা গেলো না?”

আমি যন্ত্রণাই কান্না করে ফেললাম। সায়ন আমার অনেকটা কাছে এগিয়ে এসে আমাকে পিছন থেকে জড়িয়ে ধরে বলল, “তুই ডায়াবেটিস এর রোগী সাথী। এভাবে বাচ্চাদের মত করলে কিভাবে চলবে বলতো! রাগে রাগে কেন আগ বাড়িয়ে নড়াচড়া করতে গেলি বলতো! আমার উপর রাগ হলে নিজেকে কেন কষ্ট দিবি, আমাকে কষ্ট দিতে পারিস না?”

আমি কান্নার ভিতর বলি, “আপনাকে কষ্ট দিলে তো আপনি ব্যাথাটা অনুধাবন করতে পারবেন। আমি নিজেকে ব্যাথা দিলে তো আপনি সেটাও করতে পারবেন না, খালি উসপিশ করবেন।”

সায়ন কথা না বাড়িয়ে আমার মাথাটা পিছন থেকেই তার বুকে নিয়ে রাখলো। হয়তো আমাকে ঘুরিয়ে নিয়ে মাথাটা বুকে জড়িয়ে রাখতো কিন্তু আমার অসুস্থতার জন্য পারলোনা। আমার মাথার ঠিক মাঝখানে চুমু দিয়ে মুখ ডুবিয়ে রাখলো। কেও বলবে বউ অসুস্থ তাও রোমান্স! এটা আসলেই কি রোমান্স! ভালোবাসা না এটা!

“আচ্ছা আমার মাথায় জটিল কিছু হয়নি তো সায়ন?” অন্য পাশ ফিরেই সায়নকে জিজ্ঞাসা করলাম। সায়ন একটু অবাক হলো মনে হয়।
উদ্বিগ্ন কন্ঠে বলল, “জটিল মানে কি বলতে চাইছিস তুই?”

আমি বললাম, “ব্রেইন টিউমার টাইপ রোগ! নাহলে এতো মাথাব্যাথা কেন হবে। যন্ত্রণায় মনে হচ্ছে মাথার ঘিলু সব উলটপালট হয়ে যাচ্ছে। দ্রুতই মরে যাবো নাতো আমি।”

আমার কথা শুনে সায়ন যেন কিছুটা কেপে উঠলো। তার ভয় পাওয়ার মানে তো আমার ধারণায় সঠিক হতে চলেছে। কাপা গলায় বলল, “এমন কেন বলছিস সাথী? এমন জটিল কিছুই হয়নি তো। সুগার লো বা হাই হলে মাথা যন্ত্রণা করে তো। এটা এর বাইরে কিছুই না।”

আমার ইচ্ছে হচ্ছিলো তাকে জড়িয়ে ধরে বলি, “এসব কিছুই যেন না হয় সায়ন। আমি আপনার সাথে বুড়ো হতে চাই, একদম চুলপাকা বুড়ো।”

সায়ন আমাকে টাইট করে ধরতে চাইছে তবে আমার অসুস্থতার জন্য পারছেনা।আমি সাহস দিয়ে বলি, “আপনি তো জানেনই সুগার ফল হলে এমন হয় তাহলে আমার মাথার কথা শুনে এমন ভয় পাচ্ছেন কেন সায়ন?”

“প্রিয়জন অসুস্থ হলেও সামনে থাকার একটা তৃপ্তি আছে জানিস! সে যদি অসুস্থতার মধ্যে বারবার চলে যাওয়ার কথা বলে নিজেকে কি ঠিক রাখা যায় বলতো? তুই ছাড়া আমি থাকবো কিভাবে সাথী ভেবে দেখেদিস একবার? আমার বাচ্চার মা হবিনা তুই? এসব কথা বললে কিন্তু বাচ্চা দেবোনা তোকে। একদম দেবোনা।”

বাচ্চা দেওয়ার মালিক তো আল্লাহ! কি বলে এই লোক। বাচ্চাদের মত কথা, অভিমানী কন্ঠ তার। উফফ, হৃদয় কাপানো। আমাকে ছাড়া সে চলতে পারেবেনা তবুও ভালোবাসি বলবেনা, আমি প্রিয়জন তবুও আমাকে ভালোবাসেনা। এ কেমন মানুষ!

“তবুও বলবেন ভালোবাসেন না?” জিজ্ঞাসা করলাম।

মাথার ভিতর অনেক্ক্ষণ নিজের ঠোঁট ডুবিয়ে গাঢ়ভাবে চুমু দিয়ে বলল, “একটুও না।

,
পরদিন সকাল দশটার দিকে মেজআপা আর মেজদুলাভাই এলো আমাদের নিতে। বিয়ের পর নাকি শ্বশুরবাড়িতে জামাই দশ-বারোদিন থাকে সে জন্য নিতে এসেছে আপা আর দুলাভাই। আমার শাশুড়ী অবশ্য দুই আপা আর দুই দুলাভাইকেই আসতে বলেছিলো। বড় আপা নিজেই ইচ্ছা করে আসেনি, নতুন আত্মীয়ের বাড়ি নাকি বেশি মানুষ যেতে নেই শুরুর দিকে। জামাকাপড় দিয়ে বিদায় করা, অনেক খরচ পড়ে যায়।
সায়নরা নাকি আমাদের নতুন আত্মীয়!
বড় আপা না আসাই বউ পাগল দুলাভাইও আসেনি।

মেজআপা আর দুলাভাইকে বেশ স্বাভাবিক লাগছে। আদৌ স্বাভাবিক লাগছে কিনা ওই বাড়ি গেলেই বোঝা যাবে। ড্রয়িংরুমে সবাই বসেছিলাম। দুলাভাই বাড়ির সবার সাথে গল্প করছিলো। আমি মেজ আপার হাত ধরে আমার ঘরে নিয়ে আসি। খাটে আপাকে বসিয়ে আমি ফ্লোরে বসে আপার কোলে মাথা রাখি। আপা আমার মাথায় হাত বুলিয়ে বলে, “কেমন ছিলি এই দুইদিন? মন টিকছে তো সাথী?”
আমি প্রশান্তির একটা হাসি দিয়ে আপার কোলেই মাথা রেখে বলি, “খুব মন টিকছে আপা। জানিস আপা সায়ন আমাকে এতো কেয়ার করে বলে বোঝাতে পারবোনা।”

আপা মাথায় হাত বুলাতে বুলাতে বলল, “এভাবে আমাকে ওখান থেকে নিয়ে এলি কেন? বাচ্চাদের মত কোলে মাথা দিয়ে আছিস কেন?”

আমি অভিমানী কন্ঠে বলি, “তুই খুব খারাপ আপা। তুই সবচেয়ে খারাপ। আমার দেখা সবচেয়ে খারাপ মানুষ তুই। নিজের ভিতরে বাড়তে থাকা একটা প্রাণকে তুই অবহেলা করছিস। নিজের ভালোবাসার অংশকে অস্বীকার করছিস।”

ভাবলাম আপা প্রেগন্যান্ট এই খবর আমি জেনেছি এটা শুনে ও অবাক হবে কিন্তু না, একদম স্বাভাবিক রইলো। আপা শূন্যে তাকিয়ে বলল,”ওটা কোনো ভালোবাসার ফসল না সাথী। স্বামী-স্ত্রীর মিলনের ফসল। কোনো ভালোবাসা নেই এটার মধ্যে।”

“ধরলাম ভালোবাসা নেই, সব মিথ্যা। কিন্তু বাচ্চাটা! ওটাও কি মিথ্যা, ওটা তোর আর দুলাভাইয়ের না? শোন আপা ভালোই ভালোই বলছি নিজেদের ঝামেলা নিজেরাই ঠিক করে নে। নাহলে সায়নে বলে বেতের মা’ইর খাওয়াবো কিন্তু!”

আপা দিক করে হেসে ফেলল। একটুপর হাসি থামিয়ে বলল, “কেন সায়ন ভাই তোকেও মা’রার ভয় দেখাই নাকি?”

আমি কিছু বলার আগেই দেখলাম সায়ন আর মেজ দুলাভাই ঘরে প্রবেশ করছ। সায়ন আমাকে এমনভাবে থাকতে দেখে একটু অন্যমনস্ক হয়ে বলল, “সাথী তুই এভাবে আছিস কেন? ঘাড়ে ব্যাথা লাগবে তো!”

আমি মাথা উচু করে প্রত্যুত্তরে একটা মিষ্টি হাসি দিলাম। কিছু বলবো তার আগেই আপা বলল, “সায়ন ভাই আপনি সাথীকে এখনো তুই-তুকারি করে কথা বলেন?”

আমি ভেবেছিলাম সায়ন হয়তো আপুকে ইগনোর করবে কিন্তু আমাকে ভুল প্রমাণ করে দিয়ে সে বলল, “সাথী দুই বড়বোনকে তুই করে সম্মোধন করি তাহলে ওকে তুমি বলি কিভাবে?”

সায়নের কথায় দুলাভাই আপার দিকে তাকিয়ে বলল, “তুমি আমি সম্মোধন হলো স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে সবচেয়ে মধুর উক্তি, ভালোবাসা বাড়ে।”

আমি উঠে দাড়ালাম। দুলাভাইকে আপার পাশে বসতে বললাম। সায়ন এসে আমার পাশে দাড়ালো, যেন আমার দাঁড়িয়ে থাকার সাপোর্ট দিতে চায় সে। আমিও ওকটু গা চেপে দাড়ালাম সায়নের। অবশ্য আপা আর দুলাভাই বুঝতে পারেনি বিষয়টি। দুলাভাইকে বললাম, “আপনারাও তো তুমি আমি করে কথা বলেন। আপনাদেরও ভালোবাসা অনেক তাইনা দুলাভাই?”

দুলাভাই কেমন একটা হাসি দিয়ে বলল, “যে তুমি বলে সে বেশি ভালোবাসে।” কথাটা শুনে আপা কেমন বিরক্ত হলো। আপা দুলাভাইকে একান্তে থাকার সময় আপনি সম্মোধন শুরু করেছে কিছুদিন হলো। দুলাভাই কথাটা আপাকে উদ্দেশ্য করেই বলেছে সায়ন ব্যাতিত সবাই বুঝতে পারলাম।

যায়হোক এভাবে অনেক সময় পার করলাম আমরা। বিকালের দিকে মেজ আপা-দুলাভাই আমি আর সায়ন আমাদের বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা দিলাম। ওখানে যাওয়াটা আমার কাছে আপাকে আর দুলাভাইকে স্বাভাবিক করার একটা প্রথম ধাপ।

ফোনে হঠাৎ মেসেজ আসলো। সায়ন সামনের সীট থেকেই মেসেজটা দিয়েছে। মেসেজে লেখা ছিলো, “তোর মেজ আপা আর দুলাভাইয়ের ভিতর কোনো সমস্যা চলছে। ভাইয়া আমাকে বলছেনা তবে অবছা অবছা বুঝতে পারছি আমি। ওদের ঝামেলাটা ঠিক করে দিতে চাই, হেল্প করবি আমাকে?”

মেসেজটা মোটেও রোমান্টিক না, না দুঃখের তবুও আমার চোখ ভিতর অশ্রুরা টালমাটাল হতে লাগলো। এই মানুষটা কি স্নিগ্ধ! আপাকে ভালোবাসতো মানুষটা বোঝায় যাচ্ছেনা যেন। মানুষের মন এতো সুন্দর হওয়ার দরকার আছে নাকি! আমার স্বামী, আমার অনুভূতিময় প্রথম পুরুষ। সায়ন, আপনাকে এতো ভালোবাসি কেন শুনবেন না?

,
চলবে ইনশাআল্লাহ

#চিরসাথী_তুমি_আমার – পর্ব ১৩
লেখনীতেঃ #রাফিজা_আখতার_সাথী

“তুই আমার স্ত্রী তবুও তোকে ‘তুমি’ করে সম্মোধন করি না। তুমি তে নাকি ভালোবাসা থাকে! আমিতো তোকেই ভালোই বাসিনা ‘তুমি’ বলবো কিভাবে? তাই তুই করেই বলি। যেদিন ভালোবাসতে শুরু করবো সেদিন নাহয় ‘তুমি’ বলবো!” শেষে একটা লাভ ইমোজি।

আমি কোনো উত্তর পাঠালাম না। সায়নও অপেক্ষা না করে তার মোবাইল পকেটে রেখে দিলো। আমি কখনোই চাইনা সায়ন আমাকে তুমি বলুক। তার কাছ থেকে ‘তুই’ ডাক আমার সবচেয়ে প্রিয়। ডাকটা কান দিয়ে প্রবেশ করে মস্তিষ্ক হয়ে হৃদয়ে সুক্ষ্ণভাবে দূ’র্নীতি করে। হৃদয়কে উলটপালট করার দূ’র্নীতি।

এই পাড়া থেকে ওই পাড়া যেতে সময় কতক্ষণই বা লাগে। প্রায় চার মিনিটের মাথায় বাড়িতে পৌঁছে গেলাম। সায়নকে দেখে বাবা মা তার হালচাল জিজ্ঞাসা করলো, সায়নও উত্তর দিলো মিষ্টি করে। আমি সায়নের দিকে তাকিয়ে রইলাম। এই মানুষটা এতো সুন্দর কেন! তার দিকে তাকিয়ে ঠোঁটের কোনে মিষ্টি হাসি ফুটে উঠলো আমার। আনমনে তার চেহেরার বিশ্লেষণ করে চলেছি আমি।

হঠাৎ কারো ধাক্কায় হুশ ফিরলো। খেয়াল করলাম বড় আপা আমার পাশে এসে দাড়িয়েছে। আমার কানে ফিসফিস করে বলল, “এভাবে রাস্তা ঘাটে ওর দিকে তাকিয়ে থাকিস না। মানুষজন দেখলে বলবে আমার বাচ্চা বোনটার মাথা গিয়েছে। স্বামীর দিকেই তাকিয়ে থাকে সারাদিন।”

আমি বেশ লজ্জা পেলাম। আপা ঠিকই তো বলেছে। এভাবে তার দিকে তাকিয়ে থাকা কি ঠিক হয়েছে! আপাকে জড়িয়ে ধরে বললাম, “তুই ভালো আছিস আপা? মনে হচ্ছে কতদিন তোকে দেখিনি!”

আপা আমার মাথায় ছোট্ট একটা চড় দিয়ে বলল, “বৌভাতে গেছিলাম কালকে। আজকে আবার দেখা। তারমানে প্রতিদিন দেখা হলো তোর সাথে তাও এই কথা বলছিস? যেদিন সায়নের সাথে চলে যাবি সেদিন কেমন হবে?”

আমিও একটু ভাবনায় পড়ে গেলাম। সায়ন তো আমাকে এখন নিয়ে যাবেনা তবে একসময় তো নিয়ে যাবেই তার কাছে। তখন তো মা বাবা আপা কাওকেই কাছে পাবোনা। হয়তো বছরে একবার দুইবার দেখা হবে, ঈদের সময়। মনে হঠাৎ করেই আধার নেমে এলো।

মা আমার সামনে এসে আমাকে তার বুকে জড়িয়ে ধরে বলল, ” কেমন আছিস তুই? আমার সাথে কথা বললি না কেন এতোক্ষণ?” কানে আস্তে আস্তে বলল, “তুই কি খুশি না সায়নের সাথে?”

মা এসব কি বলছে! আমি নাকি খুশি না, তাছাড়া এটা এসব জিজ্ঞাসা করার জায়গা! আমি মাকে জড়িয়ে বলি, “আমি খুব ভালো আছি না। তুমি কেমন আছো?”

মা যেন একটু স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললো। আমি বাবার হালচাল জিজ্ঞাসা করলাম এরপর সবাই মিলে বাড়ির ভিতর প্রবেশ করলাম। আমাকে আর সায়নকে পাশাপাশি বসতে দিয়ে মা রান্না ঘরে চলে গেলো। কিছুক্ষণ পর বড় একটা ট্রে তে করে কয়েক গ্লাস শরবত আনলো। এইটুকু জার্নি করে আসলাম, এটাকে আদৌ জার্নি বলা যায়না তার জন্য শরবতের কি দরকার! মায়ের মন বলে হয়তো ভাবছে সন্তানেরা সবাই ক্লান্ত। আমরাও হাসি মুখে শরবত খেয়ে নিলাম। বাবা সায়নকে বলল, “সায়ন তুমি শরবত নাও!”

সায়ন, “ইয়ে মানে..” এভাবে ইতস্তত হতে লাগলো। আমার হঠাৎ মনে পড়লো সায়ন ঠান্ডা জিনিস খুব একটা খায়না। তবুও সৌজন্যের খাতিরে তার এটা খেতেই হবে। আমি কিছু বলবো তার আগেই গ্লাসটা হাতে নিয়ে তিন দমে শরবতটা খেয়ে নিলো।

বাবা মা তিন জামাই আর তিন মেয়েকে যার যার ঘরে যেতে বলল।
আমি সেই অনেক্ক্ষণ ধরে মাহফুজকে খুজে চলেছি। মাকে জিজ্ঞাসা করতেই বলল, “স্কুল মাঠে খেলতে গেছে, এখনো ফেরেনি।” আমাকে আর কথা বাড়াতে না দিয়ে ঘরে যেয়ে রেস্ট নিতে বলল, রাতে নাকি পিঠা বানানো লাগবে। সায়ন আগেই ঘরে চলে গেছে, আমিও যেতে লাগলাম। নানীকে সাথে করে নিয়ে গেলো মাও চলে গেলো।

এমনিতেই সায়ন মিষ্টি জিনিস পছন্দ করেনা তবুও জামাই আদর তার সহ্য করতেই হলো। চার রকমের মিষ্টি পিঠা আর এক রকমের ক্ষীর রান্না করেছে মা। দুই দুলাভাই বেশ মজা করে খেলেও সায়ন খুব বির’ক্ত হলো এসব দেখে। নতুন জামাই তাই হয়তো চুপচাপ মিষ্টি খাওয়ার এই অ’ত্যাচার সহ্য করে যেতে হলো।

প্রায় রাত বারোটা পর্যন্ত আপাদের সাথে আড্ডা দিলাম। আপাদের এসব প্রাপ্ত বয়স্ক কথা আমার মোটেই ভালো লাগছিলোনা। স্বামী স্ত্রীর গোপন কথা তাদেরকে কেন বলতে যাবো পাগল নাকি, লজ্জা করবেনা আমার!

বড় আপা বলল, “সাথী সায়ন কেমন রোমান্টিক রে? স্কুলে তো কাওকে আশেপাশেই ঘেষতে দিতো না। তোর সাথে কেমন রোমান্স করেছে?”

এই কথার কোনো উত্তর আদতেই কি দেওয়া যায়! আমিও চুপ ছিলাম। মেজ আপাও এমনই ফাল’তু সব প্রশ্ন করছিলো। তাই সেখান থেকে ঘরে চলে আসি। ঘরে প্রবেশ করেই দেখলাম সায়ন শুয়ে শুয়ে মোবাইল চালাচ্ছে, হয়তো ফেসবুক চালাচ্ছে। আমাকে দেখে বলল, “তোর কি স্ক্রু ঢিলা হয়ে গেছে? ঘুমাবি না তুই?”

আমি সাধারণ কন্ঠেই বললাম,”এবার ঘুমাবো। আপনি জেগে আছেন কেন, ঘুমিয়ে যেতেন! আমি তো আপাদের সাথে আড্ডা দিচ্ছিলাম। এখনো অনেক্ক্ষণ আড্ডা দিতাম, শুধু প্রসংগ পালটে গেলো তাই চলে আসা লাগলো।”

সায়ন মোবাইলটা পাশে রেখে আমার দিকে ভালোভাবে তাকিয়ে বলল,”কি কথা বলছিলো যে চলে এলি?”

এই লোককে এখন কিভাবে বলি আমাদের রোমান্স নিয়ে কথা বলতে চাচ্ছিলো আপারা। আমি চুপ করে ছিলাম, কোনো উত্তর দেইনি। সায়ন উত্তরের আশাও করলোনা মনে হলো। আমাকে বলল, “আয় শুয়ে পড়।”

আমি হাত মুখ ধুয়ে এসে সায়নের অপরপাশে শুয়ে পড়ি। শোয়ার সময় এটাই নিয়ম হয়েছে আমাদের। দেয়ালের পাশে আমি শুবো আর একদম ধারেই শোবে সায়ন। আমি নাকি ধারে শুইলে নিচে পড়ে যাবো,বাচ্চা মেয়ে বলে কথা। খেয়াল করলাম আমার বালিশে আরেকজনের মাথা। আমাকে জড়িয়ে ধরার ধান্দাই সে এমন করেছে। আমি তার দিকে ফিরলাম না, সে পিছন দিক থেকেই আমাকে জড়িয়ে ঘুমিয়ে গেলো কিছুক্ষণের মধ্যেই। আমার গায়ের উপর থাকা তার একটা হাত আমার মুখের কাছে এনে ঠোঁট প্রসারিত করে গাঢ় একটা চুমু দিলাম। এই মূহুর্তে সে ঘুমিয়ে থাকায় আমার মোটেও লজ্জা করছেনা।

“এভাবে কারো ঘুমের ফয়দা নিয়ে তার ইজ্জত লু’টে নেওয়া কবে থেকে শিখেছিস তুই?”

হায় আল্লাহ এই লোক তাহলে জেগে আছে এখনো! লজ্জায় এখন কোথায় যাই আমি! বিড়াল ছানার মত চুপচাপ হয়ে রইলাম। সায়ন আমার ঘাড়ে মুখ ডুবিয়ে বলল, “তুই এতো সর্বনা’শী কবে হলি? তোকে কাছে।পেলে বারবার হাজারবার সর্বনা’শা, ছন্নছা’ড়া হয়ে যায়। তুই এতো মায়াবতী কেন সাথী? আমার যে বড্ড তুই তুই নেশা হচ্ছে!”

আমি মিনমিন করে বলি, “যতই রোমান্টিক কথা বলেন না কেন আপনি যেটা চাচ্ছেন সেটা হবেনা, প্রচুর ঘুম পাচ্ছে আমার।”

সায়ন আমাকে তার দিকে ঘুরিয়ে নিয়ে বলল, “তোর অনুমতি কে চেয়েছে? আমার অধিকার আমি জোর করে আদায় করে নিই। অধিকারে অনুমতি লাগেনা।”

আমি বললাম,”আজকে আমি বেশ ক্লান্ত সায়ন, প্লিজ।”

সায়ন আমাকে তার বুকের সাথে মিশিয়ে নিয়ে বলল, “আমি কোনো কাপুরুষ না যে বউকে জোর করবো।প্লিজ বলার কি আছে এখানে। আমিতো মজা করেছি। তাছাড়া অধিকার তখন আদায় করতে হয় যখন অপরপারের মানুষটা তৈরী থাকে। তুই আমার পূর্ণতা, তোর থেকেও তোকে বেশি চিনি আমি। আমি সায়ন, সাথীর সায়ন। তুই ঘুমা আমি নাহয় রাত জেগে তোর আলো ভরা মুখটা দেখি। একটু হলেও তো তৃষ্ণা মিটবে।”
এই বলে সায়ন আমার মাথাটা বালিশে রেখে আমার মুখোমুখি শুয়ে আমার দিকে তাকিয়ে রইলো।

একটু এগিয়ে এসে কপালে চুমু একে দিলো। আমি আবেশে চোখ বন্ধ করে নিলাম, আর খুললাম না। আস্তে আস্তে আমার ভালো না বাসা পাগল স্বামীর সামনে ঘুমিয়ে গেলাম ভালোবাসার অপেক্ষা করতে করতে।
,
,
চলবে ইনশাআল্লাহ

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here