সেই তুমি?
পর্ব -২৪
Samira Afrin Samia(nipa)
ইফান বিরক্তি নিয়ে
— উফ্ রিহা বন্ধ করো তোমার এসব ড্রামা।
— তোমার এখনও মনে হচ্ছে আমি ড্রামা করছি?
— ড্রামা নয়তো কি?
তুমি জানো আমি তোমাকে ভালোবাসি না। তারপর ও আমাকে বিয়ে করার জন্য পাগল হয়ে গেছো। এটা ড্রামা ছাড়া আর কিছুই মনে হচ্ছে না আমার কাছে।
— আচ্ছা ঠিক আছে। আমার ভালোবাসা তোমার কাছে ড্রামা মনে হলে, হ্যা আমি ড্রামা ই করছি।
— তোমার যা ইচ্ছা তুমি করতে পারো। আমার কিছু করার নেই। আমি যাচ্ছি।
ইফান রুম থেকে বের হয়ে চলে আসছিল। তখনই মনির চৌধুরী রিহা বলে চিৎকার করে দৌঁড়ে রুমে ঢুকে রিহার কাছে এসে জোর করে রিহার হাত থেকে কাঁচের টুকরো টা নিয়ে দূরে ছুঁড়ে ফেলে দেয়।
ইফান চলে যাওয়ার সময় রিহা হাত কেটে নিয়েছে। প্রায় অনেক টা কেটেছে। লাল টকটকে রক্তের ফোঁটা গুলো টপটপ করে নিচে পড়তে লাগলো। রিহা ডলে পড়ে যেতে নিলে মনির চৌধুরী রিহা কে ধরে ফেলে।
— তুই কি পাগল হয়ে গেছিস রিহা। কি করছিস এসব?
রিহা শরীরের জোরে চিৎকার দিয়ে
— হ্যা বাবা আমি পাগল হয়ে গেছি। তবে এখনও পুরো পাগল হয়নি। কিন্তু ইফান কে না পেলে সত্যি ই আমি পুরো পাগল হয়ে যাবো।
ইফান এসব শুনে আবার পিছনে ফিরে দেখে রিহা সত্যি ই ওর জন্য হাত কেটে নিয়েছে।
রিহার এমন পাগলামি দেখে ইফান রিহার কাছে যায়।
— কি করছো রিহা। এসব পাগলামি করে কখনও কাউকে পাওয়া যায় না। তোমার এসব পাগলামোর কারনে আমি যদি তোমাকে বিয়ে করিও তাহলে কি তুমি আমার সাথে সুখী হতে পারবে।
রিহা ইফানের শার্টের কলার ধরে
— অবশ্যই পারবো। তুমি সাথে থাকলে আমার আর কিছু লাগবে না। আমি শুধু তোমাকে চাই। শুধুই তোমাকে।
— পাগলামো করো না এটা আমার প্রতি তোমার ভালোবাসা না। এটা তোমার শুধুই আমাকে নিজের করে পাওয়ার জিদ। এভাবে জীবন চলে না।
— আমি কিছু জানি না। ভালোবাসা হোক আর জিদ হোক। আমার শুধু তোমাকেই চাই।
রিহার এমন পাগলামি দেখে মনির চৌধুরী ইফানের কাছে এটা সেটা বলে কাঁদতে লাগলো।
— ইফান বাবা দেখতেই তো পারছো আমার মেয়েটা তোমাকে কতটা ভালোবাসে। ও তোমার জন্য পাগল হয়ে যাচ্ছে প্রায়।
— আঙ্কেল আপনিও ওর সাথে তাল মিলাচ্ছেন?
আমি তো কখনও রিহা কে ভালোবাসি নি। আর ভবিষ্যতে বাসতে পারবো কি না তাও জানি না।
— তুমি আমার মেয়েকে বিয়ে না করলে ও যে নিজেকে শেষ করে দিবে।
— আপনি একটু বুঝান রিহা কে। এমন করলে তো কিছুই ঠিক হবে না।
— প্লিজ ইফান আমি তোমাকে ছাড়া সত্যি ই বাঁচবো না।
রিহার হাতের কেটে যাওয়া অংশ থেকে এখনও টুপটুপ করে রক্ত পড়ছে।
— তোমার হাত থেকে অনেক টুকু রক্ত ঝরে গেছে রিহা। হাতে ব্যান্ডেজ করা লাগবে। আঙ্কেল আপনি ওকে ডক্টরের কাছে নিয়ে যান। নয়তো বাসায় ই ডক্টর ডাকেন। কাটা জায়গা অনেকক্ষণ খোলা রাখতে নেই।
আমি যাচ্ছি আঙ্কেল।
— তুমি চলে গেলে আমি ব্যান্ডেজ তো দূর কিছুই করবো না। আজ তুমি আমার সাথে এনগেজমেন্ট না করলে, আমাকে বিয়ে করতে রাজি না হলে, এখান থেকে চলে গেলে কালই তুমি আমার মৃত্যুর খবর পেয়ে যাবে।
— তুমি মেন্টালি সিক রিহা।
তোমার জীবনের মূল্য তোমার কাছে না থাকলে তাতে আমার কিছু করার নেই।
ইফান চলে যেতে চাইলে মনির চৌধুরী রিহা কে রেখে উঠে গিয়ে ইফানের হাত ধরে
— ইফান বাবা প্লিজ তুমি আজ এখন থেকে এভাবে চলে যেও না। পুরো বাড়ি ভরা লোকজন। আমি সবার সামনে তোমার আজ রিহার বিয়ের এনাউন্সমেন্ট করেছি। শুধু বিয়ের এনাউন্সমেন্ট না আজ এনগেজমেন্টের ও এনাউন্সমেন্ট করে ফেলেছি।
এখন যদি তুমি চলে যাও তাহলে সমাজে আমার মান সন্মান কিছুই থাকবে না।
— আমি কি করতে পারি তাতে?
আপনি তো এসব করার আগে আমাকে কিছুই জানান নি। আমার থেকে অনুমতি নেওয়ার ও প্রয়োজন মনে করেন নি। নিজে থেকে সব কিছু করে ফেলেছেন।
— তুমি কয়েক বছর ধরে রিহার সাথে আছো। রিহা তোমাকে ভালোবাসে। তোমাদের রিলেশন এতো ভালো তাই আমি ভেবেছি তুমি ও হয়ত
মনির চৌধুরী কে পুরো কথা শেষ করতে দিলো না ইফান। তার আগেই বাঁধা দিয়ে বলে উঠলো
— তাই বলে আপনিও ভেবে নিলেন আমিও আপনার মেয়েকে ভালোবাসি?
দেখেন আঙ্কেল আপনার সন্মান আপনি নিজে নষ্ট করেছেন। সমাজের মানুষের কাছে আপনার সন্মান গেলে সেটার জন্য আপনি নিজে দায়ী আমি না।
— ইফান বাবা আমার সন্মান আমার কাছে বড় না। তবে আমার মেয়েও তোমাকে ভালোবাসে।এতক্ষণে মনির চৌধুরী আর ইফান কথা বলতে বলতে রিহা সেন্সলেস হয়ে গেল। অনেকক্ষণ ধরে হাত থেকে ব্লিডিং হচ্ছে তাই মনে হয় রিহা সেন্স হারিয়ে ফেলেছে। মনির চৌধুরী ব্যস্ত হয়ে রিহা কে বিছানায় শুইয়ে দিয়ে ডক্টর কে ফোন করলো। বাড়ি ভর্তি লোকজন সবাই এটা সেটা বলাবলি করছে। কয়েক জন তো চলে যেতে লাগলো। যাদের অন্যের যেকোন ব্যাপার জানার আগ্রহ বেশি শুধু তারাই থেকে গেল। পার্টিতে একটা হোল্লর বেধে গেল।
ডক্টর এসে রিহার হাত ব্যান্ডেজ করে দিয়ে হাতে একটা স্যালাইন লাগিয়ে দিয়ে চলে গেল।
ইশিতা দুপুর থেকে গোজগাজ করছে। আর বার বার ফোন হাতে নিয়ে দেখছে। ইয়াশ এখনও বাসায় আসছে না। একটা ফোন ও দিচ্ছে না। এসবের কোনো মানে হয়। ইয়াশ নিজেই তো ইশিতা কে রেডি হয়ে থাকতে বলেছে। বলেছে অফিস থেকে ফিরে এসে ইশিতা কে ওর মামা মামীর কাছে নিয়ে যাবে। অনেক দিন হলো মামা মামী কে ছাড়া একা থাকছে ইশিতা। অনেক দিন ধরে মামার মুখ থেকে সেই মায়া মাখা কন্ঠে ইশু ডাক টা শুনে না। মামার কথা মনে হলে ইশিতার মন টা খাঁ খাঁ করে উঠে।
ইশিতা ফোন টা হাতে নিয়ে ইয়াশ কে কল করতে যাবে ঠিক তখনই ইশিতার ফোন বেঁজে উঠল। ফোনের স্কিনের দিকে তাকিয়ে দেখে ইয়াশ ফোন করেছে। সাথে সাথে কল রিসিভ করে কানে তুলে নিলো। ওপাশ থেকে ইয়াশ
— সরি। একটু লেট হয়ে যাচ্ছে তাই না?
— সমস্যা নেই। আপনি আপনার কাজ শেষ করে সব কিছু গুছিয়ে তার পর আসেন।
— মনে হচ্ছে আজ দশটার আগে বাসায় ফিরতে পারবো না।
— ওহ। আচ্ছা তাহলে আমরা নাহয় কাল বেরোবো। আপনি বেশি চাপ না নিয়ে ধীরে সুস্থে সব কিছু সামলে নিয়ে পরে আসেন।
— তুমি কিছু মনে করবে না?
মানে আজ তোমাকে তোমার মামা মামীর কাছে নিয়ে যাওয়ার কথা বলেও পিছিয়ে গেলাম।
— কিছু মনে করবো কেন?
আপনি আমার কথা চিন্তা করে নিজে থেকে আমাকে মামা মামীর কাছে নিয়ে যাওয়ার কথা বলেছেন। এটাই আমার কাছে অনেক। আপনি যখন সময় পাবেন তখন আমাকে নিয়ে যাবেন।
ইয়াশ দরজায় হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে ইশিতার সাথে কথা বলছে।মেয়েটা এতো ভালো কেন? কখনো নিজে থেকে কিছু চাইবে না। যেটুকু দেওয়া হবে তাতেই ঢেড় খুশি। কোনো কিছুতেই কোনো অভিমান নেই। আজ মামা মামীর কাছে যেতে পারবে না এটা শুনে ইশিতার মনে মনে একটু খারাপ লেগেছে ঠিকই তবে তা বাইরে প্রকাশ করেনি।
— আচ্ছা তাহলে তুমি ঘুমিয়ে যেও। আমার আসতে অনেক দেরি হবে।
— আচ্ছা।
— রাখি এখন।
ইয়াশ ফোন রেখে দিলে ইশিতা আস্তে করে একটা শ্বাস ফেলে সুটকেস তুলে রাখতে যাচ্ছিল।
তখনও ইয়াশ দরজার সামনেই দাঁড়িয়ে কিন্তু ইশিতা তা এখনও খেয়াল করেনি। ইয়াশ রুমের ভেতর এসে সোজা বেডে শুয়ে পড়লো। ইশিতা ইয়াশ কে দেখে ভুত দেখার মত করে চোখ বড় বড় করে তাকালো।
— কি ম্যাডাম। এটা আমি আপনার হাজবেন্ড ইয়াশ চৌধুরী। কোনো ভুত না যে আপনি আমাকে এভাবে চোখ বড় বড় করে দেখবেন।
— আপনি এখানে কি করে?
আপনি তো অফিসে ছিলেন। আর আজ নাকি আসতে দেরি হবে। তাহলে?
— বাসায় ঢুকতে ঢুকতে ভাবছিলাম তোমাকে একটু চমকে দিব। কিন্তু তুমি নিজেই তো আজ যাবে না বলে আমাকে চমকে দিলে।
— তাহলে এতক্ষণ আপনি আমার সাথে মজা করছিলেন তাও আবার দরজার সামনে দাঁড়িয়ে।
— তা নয়তো কি? তুমি তো চারিদিক ভালো করে তাকিয়েই দেখো না।
— আপনি তো মহা বজ্জাত।
ইয়াশ হাসতে হাসতে শুয়া থেকে উঠে বসে।
— কি বললে তুমি? প্লিজ আবার একটু বলো না শুনি।
ইশিতা মুখ ভেংচি দিয়ে
— বজ্জাত।
— তুমি জানো জীবনে এই প্রথম কেউ আমাকে বজ্জাত বললো। শুনে ভালোই লাগলো।
— আপনি কি বলুন তো?
— তুমিই না একটু আগে বললে আমি বজ্জাত।
— জানি না কিছু।
ইশিতা বেড থেকে উঠে যেতে নিলে ইয়াশ ইশিতার হাত ধরে
— কোথায় যাচ্ছেন ম্যাম। মামা মামীর কাছে যাবেন না?
ইশিতা আল্লাদি কন্ঠে
— যাবো।
— তাহলে তাড়াতাড়ি রেডি হন।
— দেখেন আমি একদম রেডি। আপনি তাড়াতাড়ি ফ্রেশ হয়ে নিন। আমি মা’কে বলে আসি।
এটা বলেই ইশিতা দৌঁড়ে রুম থেকে বের হতে যাচ্ছিল।
— একদম না। একদম দৌঁড়াবে না। ছোট বাচ্চাদের মত সারাক্ষণ দৌঁড়াদৌঁড়ি করতে হয় কেন। হেঁটে যাওয়া যায় না। বার বার ভুলে যাও কেন তোমার মাঝে আমাদের সন্তান আছে।
ইশিতা মুখ কালো করে ছোট বাচ্চাদের মত ঠোঁট উল্টে
— দৌঁড়াচ্ছিলাম না তো হেঁটেই যাচ্ছিলাম।
ইয়াশ ত্যারা হাসি দিয়ে
— ওহ তাই?
— হুম।
রিহার এখনও জ্ঞান ফিরে নি। মনির চৌধুরী আর ইফান রিহার জ্ঞান ফেরার অপেক্ষা করছে। ইফান কয়েক বার চলে আসতে চেয়ে ও আসতে পারলো না। পাগল হোক যেমনই হোক রিহা তো ইফানের ফ্রেন্ড। দুই/তিন বছর ধরে এক সাথে আছে। রিহা ইফান কে পাগলের মত ভালোবাসা এটা সত্যি। কিন্তু ইফান তো রিহা কে ভালোবাসে না। এমনকি কোনো দিনও রিহা কে তেমন করে ভেবে দেখেনি। রিহা ইফানের খুব ভালো বন্ধ এইটুকু ই এর থেকে বেশি কিছু না। ইফান এক বার রিহার উপর রাগ করছে। আরেক বার নিজেই নিজেকে বুঝাচ্ছে। রিহা তো শুধু আমাকে ভালোবাসে কাউকে পাগলের মত ভালোবাসা কি অপরাধ?
রিহার জ্ঞান ফিরছে। রিহা একটু একটু করে তাকাতে চেষ্টা করছে। আর মুখে বিরবির করে ইফানের নাম বলে যাচ্ছে। রিহা যখন চোখ মেলে তাকিয়ে ইফান কে দেখতে পেল না। তখন চিৎকার দিবে উঠে বসে। ইফানের নাম ধরে ডেকে কাঁদতে লাগলো।
— ইফান তুমি আমাকে রেখে চলে গেলে। তুমি আমাকে একটু ও ভালোবাসো না। আমার জন্য তোমার মনে একটু ও মায়া নেই।
আমি শেষ করে দিব নিজেকে। সব শেষ করে দিব আমি।
রিহা হাতের ব্যান্ডেজ খুলতে নিলে ডান পাশের চেয়ার থেকে ইফান উঠে এসে।
— আমি কোথাও যায়নি। এই যে দেখো তোমার পাশেই আছি।
— তুমি আমাকে রেখে যাবে না তো ইফান?
ইফান কিছু বলছে না।
— আমি বুঝে গেছি তুমি আমাকে রেখে চলে যাবে।
এটা বলেই রিহা স্যালাইন টা হেঁচকা টান দিয়ে খুলে ফেললো। হাতের যেখানে স্যালাইনের সুই লাগানো ছিল সেখান থেকে রক্ত বের হতে লাগলো।
— রিহা কি করছো?
— তুমি চলে গেলে আমি নিজেকে শেষ করে দিব।
— পাগলামি কেন করছো রিহা। এসব করে কি হবে?
রিহা বেড থেকে উঠে গিয়ে রুমের সব জিনিস উলট পালট করে এদিক সেদিন ছুঁড়ে ফেলছে। ইফান রিহার এসব পাগলামি দেখে রিহা কে গিয়ে হালকা করে জড়িয়ে ধরে
— তুমি একটু শান্ত হও আমি কোথাও যাবো না তোমাকে ছেড়ে। তোমার কাছেই থাকবো।
রিহা ইফান কে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে শান্ত হয়ে বললো
— সত্যি বলছো তো।
— হুম।
— তাহলে চলো আমরা আজ ই বিয়ে করবো।
— মানে?
— কিসের মানে আমি তোমাকে বিয়ে করতে চাই। তুমি আমাকে বিয়ে করলে তো আমাকে রেখে আর কোথাও যেতে পারবে না।
ইয়াশ আর ইশিতা নাজমা চৌধুরীর থেকে বিদায় নিয়ে ইশিতার মামার বাড়ি যাওয়ার উদেশ্যে গাড়ি নিয়ে বের হয়ে গেল। ইয়াশ ড্রাইভ করছে ইশিতা ইয়াশের পাশে বসে একদৃষ্টিতে ইয়াশের দিকে তাকিয়ে আছে।
ইয়াশ ড্রাইভ করতে করতে সামনের দিকে তাকিয়ে থেকেই বলে উঠলো।
— এমন ভাবে আমার দিকে তাকিয়ে আছো চোখ লেগে গেলে তখন কেমন হবে?
ইশিতা ইয়াশের কথায় লজ্জা পেয়ে চোখ সরিয়ে নিলো।
— না ঠিক আছে নিজের হাজবেন্ড কে ই তো দেখছিলে। চোখ নামিয়ে নিলে কেন?
ইশিতা লজ্জায় লাল নীল হচ্ছে। এসবের কোনো মানে আছে শুধু শুধু ইশিতা কে লজ্জা দেওয়া।
— কি হলো গো। এতো লজ্জা পেলে কি করে হবে?
বউ আমার লজ্জায় লাল নীল বেগুনী হচ্ছে?
আচ্ছা তোমরা মেয়েরা এতো লজ্জা কোথায় রাখো বলো তো।
— জানি না।
— আচ্ছা ঠিক আছে জানতে হবে না।
ইশিতা গাড়ির পিছনের সিটের দিকে তাকিয়ে
— আচ্ছা এই ব্যাগ গুলো কিসের?
— বিয়ের পর এই প্রথম শশুড়বাড়ি যাচ্ছি। খালি হাতে যাবো নাকি?
খালি হাতে গেলে দুই শালী তো আমার মান সন্মান নিয়ে টানাটানি শুরু করে দিবে।
— মোটেও না আমার বোনেরা অমন না। তাদের জোর করে কেউ কিছু দিতে চাইলে ও তারা নেয় না।
— ওহ তাহলে তো আমি বেঁচে ই গেলাম। দুই শালী আর আমাকে পটাবে না।
— হুম।
— তার পর ও মামা মামীর জন্য তো কিছু নিতে হবে। তাই এগুলো নিয়েছি।
ইশিতা কিছু বলছে না ইয়াশের দিকে তাকিয়েই আছে। এবার ইয়াশ আর কিছু বললো না। সামনের দিকে তাকিয়ে ড্রাইভ করে যাচ্ছে।
ইফান কি করবে কিছু বুঝতে পারছে না। রিহা তার পাগলামি করেই যাচ্ছে। এখনও চিৎকার চেচাঁমেচি করে যাচ্ছে। আচ্ছা রিহা কি ইফান কে সত্যি ই ভালোবাসে?
কাউকে অতিরিক্ত মাত্রায় ভালোবেসে ফেললে ই শুধু এমন পাগলামো করা যায়। নয়তো কারো জন্য এমনিতে আর যাই করা যাক নিজের হ্মতি তো করা যায়না।
রাত প্রায় দশটার দিকে ইয়াশ আর ইশিতা মামার বাড়ি এসে পৌঁছালো। বাড়ি থেকে বের হয়েছিল ঘড়ি দেখে ঠিক নয়টা বেজে বিশ মিনিটে। এখন দশটা আসতে মোট চল্লিশ মিনিট সময় লেগেছে। মামা মামী অতি আহ্লাদের সাথে ওদের দু’জনকে বরণ করে ঘরে নিয়ে যায়।
নতুন জামাইয়ের আপ্যায়নে কোনো ধরনের কমতি রাখলেন না নাজমা চৌধুরী। এতো এতো খাবার রান্না করেছেন সব গুলো ই ইশিতার পছন্দের। ইয়াশ খেতে না চাইলে ও নাজমা চৌধুরী জোর করে সব গুলো ডিস এক এক করে ইয়াশের পাতে
তুলে দিচ্ছেন। ইয়াশের পেটে জায়গা না থাকলেও জোর করে সব কিছুই একটু একটু করে মুখে নিচ্ছে।
ইয়াশ মনে মনে বলছে
— একেই কি জামাই আদর বলে?
খাইয়ে খাইয়ে পেট ডাম বানিয়ে দিলো বাবা। এখন তো ভয় হচ্ছে মনে হচ্ছে পেট টা ই না কখন ফেটে যায়।
ইশিতা ইয়াশের অবস্থা বুঝতে পেরে মুখ টিপে মিটমিট করে হাসছে।
— চিংড়ি মাছ টা কি আর একটু নিবেন?
ইয়াশ অসহায় ভাবে ইশিতার দিকে তাকায়।
চলবে…..