বেদনার_রঙ_নীল একান্নতম পর্ব

0
340

#বেদনার_রঙ_নীল
একান্নতম পর্ব
লিখা- Sidratul Muntaz

শানকে স্কুল থেকে একমাসের জন্য সাসপেন্ড করা হয়েছে। তার অপরাধ, সহপাঠীর সাথে মারামারি করা। জারিফ নামের একটি ছেলেকে আঘাত করে কপালের একাংশ ফাটিয়ে ফেলেছে। প্রণয় বাড়ি ফিরে দেখল বৈঠক ঘরে সবাই এই নিয়ে আলোচনা করছে। রিসব শানকে শাসনের ভঙ্গিতে প্রশ্ন করল,” ছেলেটাকে তুই কেন মেরেছিস? এসব করার জন্যই কি তোকে স্কুলে পাঠানো হয়? কোনো ভালো ছেলে এইসব করে? তুই এতো উশৃঙ্খল কিভাবে হয়ে যাচ্ছিস?”

শান কোনো উত্তর দিল না। মাথা নিচু করে চুপচাপ বসে আছে। প্রণয় নিঃশব্দে ঘরে চলে যাচ্ছিল। ঠিক তখনি শুনতে পেল রিসব শানকে চড় দিয়েছে। প্রণয় চড়ের শব্দ শুনেই থেমে গেল। শান উঠে দাঁড়িয়ে বলল,” জারিফ মিস কিউটিপাইকে নিয়ে নেগেটিভ কথা বলছিল। আমার কি এটা সহ্য করা উচিৎ? আমি চুপ থাকতে পারিনি। তাকে ধাক্কা দিয়েছি। সে টেবিলসহ উল্টে পড়ে কপাল ফাটিয়েছে। এটা ঠিক না ভুল আমার জানার দরকার নেই। কিন্তু আবার যদি ও আমার সামনে আসে, তাহলে আমি আবারও একই কাজ করবো। শুধু ও না, যে মিস কিউটিপাইকে নিয়ে আজে-বাজে কথা বলবে তার সাথেই আমি এটা করবো। অথবা এর চেয়েও খারাপ কিছু করবো।”

সবাই হতবাক হয়ে তাকিয়ে রইল। রিসব স্তব্ধ, বাকরুদ্ধ৷ এই কথার পিঠে কি বলা যায়, ভেবে পেল না। প্রণয় সিঁড়ির গোঁড়ায় দাঁড়িয়ে সবকিছু শুনল। শান তাকে পাশ কাটিয়ে গটগট করে হেঁটে উপরে চলে গেল। প্রণয় পা বাড়ালো শানের ঘরের দিকেই।

_______
তন্বি গোসলে ঢুকেছিল। ঠিক সেই সময় পানি চলে যায়। ড্রামে জমিয়ে রাখা পানি দিয়ে সে প্রথমে কাপড় ধুঁয়ে নিয়েছিল। তাই এখন গায়ে ঢালার মতো একটুও পানি অবশিষ্ট নেই। সে বাথরুম থেকে বের হয়েছিল কাউকে পাঠিয়ে মোটর ছাড়ার জন্য বলবে। ঠিক সেই সময় খেয়াল করল বারান্দায় দাঁড়িয়ে কারো সঙ্গে কথা বলছে সামীর। তাকে ডাকতে নিলেই তন্বি শুনল,” আজমীর, দ্যাখ ভাই, এই মুহূর্তে তোকে টাকা পাঠানো আমার পক্ষে সম্ভব না। কিছুদিন পর পরই তোর হাত ফাঁকা হয়ে যায় কেন? এই পর্যন্ত তোকে কত টাকা পাঠানো হয়েছে হিসাব করেছিস?”

আজমীরের নাম শুনেই বুক ধড়াস করে উঠল তন্বির। সে সামীরকে ডাকল না। চুপচাপ দেয়ালের আড়ালে দাঁড়িয়ে কথা শুনতে লাগল।

” তোর এতো টাকার প্রয়োজন হলে একটা চাকরি কেন করছিস না? ডেনমার্কে কি তুই বসে খাওয়ার জন্য গেছিস? তোকে পয়সা পাঠাতে পাঠাতে একদিন দেউলিয়া হয়ে যাবো আমি। ”

ওই পাশ থেকে আজমীর কি যেন বলল। সামীর কিছুক্ষণ হু-হা করল। তারপর বলল,” আচ্ছা দেখি… আর শোন, বার-বার ফোন দিয়ে বিরক্ত করিস না। আমি ঘরে বসে তো আর কথা বলতে পারব না। তন্বি এখন বাথরুমে আছে সেজন্য ফোন ধরেছি। যেকোনো সময় ও বের হতে পারে। তাই রাখছি।”

সামীর মোবাইল রেখে পেছনে ঘুরতেই তন্বি তার সামনে দাঁড়ালো। আৎকে উঠল সামীর। তন্বি রক্তিম দৃষ্টিতে ক্রোধে কাঁপতে কাঁপতে বলল,” তুমি তাহলে আজমীরের খবর জানো?”

সামীর থতমত খেয়ে গেল। খানিকক্ষণ না বোঝার নাটক করে ভ্রু কুচকে চেয়ে রইল।

” মানে?”

” তুমি কার সাথে কথা বলছিলে? আমি সব শুনেছি।”

সামীর পাশ কাটানো গলায় বলল,” ভুল শুনেছো। আমার বন্ধুর নামও আজমীর।”

তন্বি উন্মাদের মতো চিৎকার করে উঠল,” খবরদার আমাকে মিথ্যা কথা বলবে না। সব বুঝে গেছি আমি। তুলি কোথায় আছে সেটাও তুমি জানো তাই না?”

তন্বি তেড়ে এসে সামীরের কলার চেপে ধরল। আকুল আর্তনাদ করে জানতে চাইল,” বলো আমার বোন কই আছে? বলো না!”

সামীর নিশ্চুপ। ইতস্তত করতে লাগল। তন্বি তাকে দুইহাতে ঝাঁকাতে লাগল,” বলো, বলো, বলো।আজমীরের সাথে আছে ও তাই না? ডেনমার্কে আছে?”

সামীর অন্যদিকে মুখ ঘুরালো৷ মাথা নত করে তীব্র আড়ষ্টতার সাথে উচ্চারণ করল,” না।”

তন্বি আহত হলো। কান্নামাখা গলায় প্রশ্ন ছুঁড়ল,” তাহলে কোথায়?”

সামীর রুদ্ধশ্বাসে বলল,” আমাকে আর কিছু জিজ্ঞেস কোরো না।”

তন্বি রাগে ঘরে এসে ড্রেসিংটেবিলের সব জিনিস ফেলে দিল। মেঝেতে আছড়ে পড়ে কাঁদতে কাঁদতে বলল,” তোমাকে বলতেই হবে সামীর। তুমি কি মানুষ না জানোয়ার? এতোগুলো দিন ধরে আমরা পাগলের মতো তুলিকে খুঁজে বেড়াচ্ছি। অথচ তুমি সব জেনেও একটাবার মুখ খুললে না? কিভাবে পারলে তুমি? তোমার কুলাঙ্গার ভাইয়ের খোঁজ জেনেও তুমি চুপ থেকেছো। এমনকি আড়ালে তাকে সাহায্য করছো, টাকাও পাঠাচ্ছো। এতো নীচ তুমি? তোমাকে আমি সহজ-সরল ভেবেছিলাম। কিন্তু তুমি এইভাবে ধোঁকা দিতে পারলে আমাকে?”

তন্বি মেঝেতে শুয়ে পড়ে বাচ্চাদের মতো কাঁদছিল। সামীর তার পাশে বসেই অপরাধী কণ্ঠে বলল,” বিশ্বাস করো আমি অপারগ ছিলাম। আমি ধোঁকা দেইনি।”

” চুপ। একদম চুপ। প্রতিদিন আমার চোখে চোখ রেখে মিথ্যা বলেছো। আর এখন বলছো ধোঁকা দাওনি? এই সত্যি করে বলো আমার বোন কোথায়? বলো, বলো, বলো!”

সামীর মেঝেতে বসে দেয়ালে পিঠ ঠেকিয়ে বলল,” আগে তুমি শান্ত হও। তাহলে আমি সব বলবো।”

সত্য জানার প্রয়াসে তন্বি নিজেকে শান্ত করল। যদিও তার মনের ভেতর তুফান বয়ে যাচ্ছে। সে ঠান্ডা স্বরে বলল,” আচ্ছা, আমি আর কাঁদছি না। তুমি শুধু বলো তুলি কোথায়? কেমন আছে আমার বোন?”

সামীর তন্বির দিকে তাকালো কোমল দৃষ্টিতে। তার মাথায় হাত ছুঁইয়ে সিক্ত কণ্ঠে বলল,” আমাকে ক্ষমা করে দাও তন্বি। তোমাকে জানাতে পারিনি। কিন্তু তুলি মারা গেছে।”

তন্বির মাথাটা চক্কর দিয়ে উঠল এক মুহূর্তের জন্য। পুরো পৃথিবী ঝাপসা মনে হলো। অস্ফুটস্বরে উচ্চারণ করল,” কি?”

সামীর মাথা নেড়ে বলল,” হুম৷ ও সুইসাইড করেছিল। পাঁচতলা থেকে ঝাঁপ দেওয়ার পর আর বাঁচানো যায়নি।”

তন্বি কথাটা সহ্য করতে না পেরে দুইহাতে কান চেপে ধরল। ভীষণ জোরে একটা চিৎকার দিয়েই স্তব্ধ হয়ে গেল। কিছুক্ষণ পর শরীরের সমস্ত শক্তি একত্র করে সামীরকে মারতে মারতে বলল,” তুমি মানুষ না অমানুষ? এটা কি শোনাচ্ছো তুমি আমাকে? তুমি কি সত্যি মানুষ না অমানুষ? ”

তন্বিকে শান্ত করতে দুইহাতে নিজের বুকে জাপটে
ধরল সামীর। কিন্তু তন্বি শান্ত হলো না। ডাঙায় তোলা মাছের মতো ছটফট করতে লাগল।

_________
শান ঘরে এসে দরজা আটকে দিয়েছে। প্রণয় কিছুক্ষণ দরজার বাইরে দাঁড়িয়ে থেকে কড়া নাড়ল। কিন্তু ভেতর থেকে সাড়া পেল না। তারপর বলল,” গ্রীনলাইট, দরজা খোল।”

প্রণয়ের ডাক শুনে অবাক হলো শান। কতদিন হয়ে গেছে, প্রণয় তার সঙ্গে কথা বলে না। তাকে গ্রীনলাইট বলে ডাকে না। শুধু শান কেন? প্রণয় আসলে কারো সঙ্গেই সেভাবে কথা বলে না। শুধু নিজের দুনিয়ায় ব্যস্ত থাকে। যদিও শানের এই মুহূর্তে কারো সঙ্গে কথা বলতে ইচ্ছে করছে না। কিন্তু সে প্রণয়ের ডাকে সাড়া না দিয়ে থাকতেও পারল না। প্রণয় যদি তাকে স্কুলের ঘটনার জন্য শাসন করতেও আসে, তাও সে কিছু বলবে না আজ। বরং এখন সে চায় আগের মতোই প্রণয় তাকে ঝারি মারুক, চোখ রাঙাক, পানিশমেন্ট দিক। কারণ প্রণয় আগের মতো নেই। কেমন নির্জীব হয়ে গেছে। তার আগের প্রতাপশালী রূপ আবার দেখতে চায় শান। সে দরজা খুলে দিল। প্রণয় ভেতরে ঢুকে শানের বিছানায় বসল। তারপর শানকে ইশারায় বলল তার পাশে বসতে৷ শান বসল। মাথা নিচু করে নিশ্চুপ হয়ে বসে রইল দু’জনেই।

একটু পর প্রণয় বলল,” তুলিকে মিস করিস?”

শানের চোখের পাতা ভিজে উঠল। ধীরগতিতে হ্যাঁসূচক মাথা নাড়ল। প্রণয় দ্বিধাজড়িত কণ্ঠে বলল,” যদি আর কখনও খুঁজে না পাওয়া যায়, কি করবি?”

শান অবাক হয়ে তাকাল। তারপর অবিশ্বাসীর মতো ভ্রু কুচকে ফেলল। প্রণয় এই বিষয়ে আর কোনো কথা না বাড়িয়ে বলল,” তুলিকে আমরা খুঁজে বের করবো। আমাকে সাহায্য করবি?”

শান দ্রুত গতিতে মাথা নাড়ল। প্রণয় মৃদু হেসে বলল,” এদিকে আয়।”

শান কাছে এসে প্রণয়ের বুকে মাথা রাখল। সাথে সাথেই ঝরঝর করে অশ্রু গড়াল তার চোখ দিয়ে। কিছুক্ষণের জন্য আবারও দু’জন চুপ হয়ে গেল। একটু পর শান বলল,” আমার একজনকে সন্দেহ হয়, রেডলাইট। ”

” কাকে?”

” তৈমুর নামের একটি লোক। অনেকদিন আগে আমাদের বাড়ি থেকে তাকে পুলিশে ধরানো হয়েছিল। আমরা ভেবেছিলাম ডাকাত। কিন্তু এখন মনে হচ্ছে সে তুলি আপুকে কিডন্যাপ করতেই এখানে এসেছিল।”

প্রণয় সজাগ দৃষ্টিতে তাকাল,” বলিস কি? আগে তোর এই কথা মনে হলো না কেন?”

” আগে মনে হয়নি। কিন্তু কিছুদিন ধরে মনে হচ্ছে।”

” ঠিকাছে। তাহলে চল আজকেই আমরা থানায় গিয়ে ওই লোকটার সব ইনফোরমেশন কালেক্ট করবো।”

” ওকে, ডান।”

প্রণয় হঠাৎ মুখ গম্ভীর করে বলল,”কিন্তু যদি ভাগ্য সহায় না হয়, যদি এমন কিছু হয় যেটা হওয়ার কথা ছিল না, তাহলে কষ্ট পাবি না কিন্তু।”

শান মাথা দুলিয়ে সম্মতি জানাল। প্রণয়ের বুকের বামপাশটা অপ্রতিরোধ্য চাপে অসাড় হয়ে আসছে। শানকে কষ্ট না পাওয়ার কথা বলছে সে। অথচ নিজেই কষ্ট-বেদনায় নীল হয়ে যাচ্ছে। তুলি পৃথিবীতে নেই; এ কথা কিছুতেই মেনে নিতে পারছে না।

__________
তন্বি কাঁদতে কাঁদতে ক্লান্ত হয়ে ঘুমিয়েই পড়েছিল। যখন তার ঘুম ভাঙে, সে দেখল ইকবাল সাহেব বসে আছেন ঘরে। তন্বি তড়িঘড়ি করে শাড়ি ঠিক করতে করতে সোজা হয়ে বসল। সামীর ঠিক তার পাশেই দাঁড়িয়ে আছে। তবে মাথা নিচু করে। ছোটবেলা থেকেই দেখে আসছে তন্বি। সামীর সবসময় বাবার সামনে এভাবে মাথা নিচু করে রাখে। ইকবাল সাহেবের চোখমুখ শক্ত। তন্বি বলল,” বাবা আপনি এখানে?”

ইকবাল সাহেব আঁড়চোখে একবার সামীরের দিকে চেয়েই তন্বিকে বললেন,” তুমি তাহলে সব জেনে গেছো, তাই না বউমা?”

তিনি কি বিষয়ে কথা বলছেন তা বুঝতে পেরেই চোয়াল শক্ত হয়ে এলো তন্বির। কঠিন স্বরে বলল,” আপনিও তাহলে সবকিছু জানতেন?”

ইকবাল সাহেব মাথা নাড়লেন। তন্বি মুখ কুচকে উচ্চারণ করল,” ছি!”

সামীর এমনভাবে তাকাল যেন তন্বি বড় অপরাধ করে ফেলেছে। ইকবাল সাহেব মোটেও অবাক হলেন না। অল্প হেসে তন্বির দিকে ঝুঁকে আসতে নিলেই সামীর কাঁপা কাঁপা গলায় ডাকল,” আব্বা…”

ইকবাল চোখ রাঙিয়ে ছেলের দিকে তাকালেন। আঙুলের ইশারায় বললেন চুপ করতে। তারপর তন্বিকে উদ্দেশ্য করে বললেন,” তুমিও কিন্তু চুপ থাকবা। যা কিছু জানছো তা সব এখনি ভুলে যাবা। খবরদার, কাক পক্ষীও যাতে টের না পায়।”

ঘৃণায় তম্বির গা গুলিয়ে উঠল। চেঁচিয়ে বলল,”কেমন মানুষ আপনারা? আমার বোনকে খু*ন করেছে আপনার ছেলে! এতো সহজে তো তাকে আমি ছেড়ে দিবো না। তাকে চৌদ্দ শিকের ভাত না খাইয়ে আমি শান্ত হবো না বুঝতে পেরেছেন আপনি?”

তন্বির গলার শিরা-উপশিরা নিমেষেই ফুলে উঠল। বিদ্যুৎ প্রবাহিত হলো শরীরে। সামীর ভ্যাবাচেকা খেয়ে বলল,” তুমি আমার আব্বার সামনে এসব কি বলছো তন্বি। চুপ করো। একদম চুপ।”

তন্বি মুখ বাঁকিয়ে বলল,” আব্বা না, জল্লাদ উনি।”

ইকবাল সাহেব সজোরে থাপ্পড় মারলেন তন্বির গালে। ছিটকে বিছানায় উল্টে পড়ে গেল তন্বি। চড় খেয়ে সে যতটা না বিস্মিত হলো তার চেয়েও দ্বিগুণ বিস্মিত হলো যখন দেখল সামীর এই বিষয়ে একদম উচ্চবাচ্য করছে না। অস্ফুটস্বরে সে কেবল বলল,” আব্বা, কি করলেন এটা?”

ইকবাল গর্জন করে উঠলেন,” চুপ। আজকে থেকে এই বান্দী ঘরের বাইরে যেতে পারবে না। কারো সাথে কথাও বলতে পারবে না। তাও যদি তেজ না কমে, তাহলে খাবার-পানি কিচ্ছু দিবি না। বেশি তেজ বাড়ছে না? তেজ কমাতে হবে।”

সামীর আর্তনাদ করে বলল,” এমন করবেন না আব্বা। মাফ করে দেন। ও বুঝে নাই।”

” ও সব বুঝছে। ওর জন্য আমার পোলা ফাঁসবো। আমি তো সেটা হতে দিবো না। আজকের থেকে ওর সবকিছু বন্ধ।”

ইকবাল সাহেব সামীরকে নিয়ে ঘর থেকে বের হয়ে গেলেন। তন্বি দৌড়ে আসতে নিলেই তাকে ধাক্কা মেরে বিছানায় ফেলে দেওয়া হলো। তারপর বাইরে থেকে দরজা আটকানো হলো। তন্বি ছটফটিয়ে উঠল। সবেগে দরজায় চপোটাঘাত করতে লাগল। চেঁচালো, কাঁদল, গলা ফাটিয়ে ডাকল। কিন্তু কেউ এলো না। সামীরও না। বাবার কথা ছাড়া সে একচুলও নড়বে না। তন্বি দেরিতে হলেও বুঝতে পেরেছিল সামীর সহজ-সরল নয়। সে নিছকই একটা কাপুরুষ!

___________
যে থানায় তৈমুরের নামে মামলা করা হয়েছিল সেখান থেকেই তৈমুরের পুরো নাম, ফোন নাম্বার আর ঠিকানা খুঁজে বের করল প্রণয়। তারপর সুযোগ বুঝে একদিন তৈমুরের বাড়িতে হানা দিল। সাধারণ একটি মেসের ছোট্ট ঘরে থাকে তৈমুর। দুপুরে জায়গাটা নীরব থাকে। মেসের বসবাসকারীদের মধ্যে বেশিরভাগই এই সময় কাজে যায় আবার কেউ ভাতঘুমে ব্যস্ত হয়। তৈমুর নিজের ঘরে ঘুমিয়ে ছিল। প্রণয় তার বিছানার কাছে বসে শব্দ করল। তৈমুর হাই তুলে পেছনে ফিরতেই অপরিচিত একজন লোককে বসে থাকতে দেখে চমকে উঠল।

” আপনি কে ভাই? ঘরে কিভাবে ঢুকলেন?”

প্রণয় জবাব দিল না। শীতল দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল। আতঙ্কে কণ্ঠ শুকিয়ে গেল তৈমুরের। আবার বলল,” এই ভাই, কে আপনি?”

সে উঠে দরজার কাছে যেতে নিলেই পিস্তল বের করল প্রণয়। তাই দেখে তৈমুর নিজের জায়গাতেই স্থির হয়ে গেল। একফোঁটা নড়াচড়া করার সাহস পেল না। প্রণয় ঠান্ডা কণ্ঠে বলল,” আমি যা যা প্রশ্ন করছি সবকিছুর উত্তর দাও৷ নাহলে…”

তৈমুর হড়বড় করে বলল,” যা বলবো সত্যি বলবো স্যার, একটা কথাও মিথ্যা বলবো না৷ কসম।”

চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here