তার দেখা পর্ব- ৪ (শেষ পর্ব)

0
566

তার দেখা
পর্ব- ৪ (শেষ পর্ব)
আমিরাহ্ রিমঝিম

(কপি করবেন না)

খুব মনোযোগ দিয়ে প্রশ্নের উত্তর লিখছে মিতু। মাঝে মাঝে আবার লেখা থামিয়ে কিছুক্ষণ চিন্তা করে নিচ্ছে, হয়তো উত্তর ভুলে গেলে মনে করার চেষ্টা করছে। কাছে বসে অনন্যা চুপচাপ দেখছে মিতুর লেখা।

অনন্যার মন খানিকটা বিভ্রান্ত। তরুণদের বাসা থেকে বিয়ের প্রস্তাব এসেছে। এবার আর কোনো দেখাদেখির ব্যাপার নয়, সরাসরি বিয়ের কথাবার্তা। অনন্যার বাসার সবাই রাজি।

কিন্তু অনন্যা তো দুইদিন আগেই তরুণকে বরের পাগড়ি হাতে কমিউনিটি সেন্টারে দেখলো। অনন্যার মনে তখন প্রশ্ন জেগেছিলো বর তরুণ কিনা। এখন তার পরিবার থেকে যেহেতু বিয়ের প্রস্তাব এসেছে মানে উনি বর ছিলেন না। কিন্তু তাহলে পাগড়ি উনার হাতে ছিলো কেন? আসলেই কি ও তরুণকেই দেখেছিলো? নাকি অন্য কাউকে তরুণ মনে করেছে?

“আপু, লেখা শেষ। ”

মিতুর কথা শুনে অনন্যার চিন্তা ভাঙ্গলো। খাতাটা কাছে নিয়ে দেখতে শুরু করলো। তখন নাস্তা হাতে ঘরে প্রবেশ করলেন মিতুর মা। নাস্তার ট্রে টেবিলের উপর রেখে নিজে গিয়ে খাটের উপর বসলেন।

“অনন্যা, নাস্তা খেয়ে নাও।”

অনন্যার আগে মিতুই খাবারের উপর আক্রমণ চালালো। নাস্তা খেতে খেতে মিতুর মা গল্প জুড়লেন অনন্যার সাথে, পরশুদিনের বিয়ের দাওয়াতের গল্প।

“ বিয়ের মধ্যে একটা ব্যাপার খুব মজার লাগলো বুঝেছো অনন্যা। একদল ছেলেপেলে এসেছে, সব একই ডিজাইনের নীল পাঞ্জাবি পড়া। পরে শুনি ওরা সব বরের বন্ধু-বান্ধব।”

মিতু দৌড়ে গিয়ে ফোন নিয়ে এলো। গ্যালারির একটা ছবি বের করে বললো,

“দেখো আপু আমি বউয়ের সাথে ছবি তুলেছি।”

অনন্যা দেখতে পেলো বর-বউয়ের সাথে মিতুর তোলা ছবিটার এককোণে তরুণের চেহারাটাও দেখা যাচ্ছে। লোকটা তাহলে তরুণই ছিলো, বন্ধুর বিয়ে ছিলো তার।

মিতুকে পড়িয়ে যখন ওদের বাসা থেকে বের হলো, আকাশে তখন মেঘ জমা হতে শুরু করেছে। হেটে হেটে স্ট্যান্ডে গিয়ে দাঁড়িয়ে বাসের জন্য অপেক্ষা করতে লাগলো অনন্যা। আকাশ হালকা ধূসরবর্ণ ধারণ করেছে ততক্ষণে।

হঠাৎ বামপাশে চোখ যেতেই অনন্যা চমকে উঠলো। ওর থেকে কিছুটা দূরেই তরুণ দাঁড়িয়ে আছে। সামনে তাকিয়ে আছে সে, ভুলেও এদিক সেদিক তাকাচ্ছে না।

অনন্যা চিন্তায় পড়ে গেলো। উনি এখানে কেন? কোনো কাজে এসেছেন? অনন্যা কি গিয়ে উনার সাথে কথা বলবে? নাকি বলবে না? বললেও কি বলবে? নাহ্, গিয়ে শুধু শুধু কথা বলাটা উচিত হবেনা।

অস্বস্তি হচ্ছে অনন্যার। ব্যাপারটা কেমনজানি লাগছে। অবশ্য নিকাবে ঢাকা চেহারায় ওকে তরুণের চেনার কথা না, তবু অস্বস্তি হচ্ছে। অস্বস্তি নিয়ে রাস্তার দিকে তাকালো অনন্যা, দূরে নিজের বাস আসতে দেখে স্বস্তি পেলো কিছুটা।

“অনন্যা?”

তরুণের ডাকে হকচকিয়ে গিয়ে পাশে তাকায় ও।

“ বৃষ্টি হতে পারে। ছাতা এনেছেন সাথে?”
“ হ্যাঁ? ”

তরুণ নিজের হাতে থাকা ছাতাটা বাড়িয়ে দেয় অনন্যার কাছে।

“নিন, বৃষ্টি হতে পারে।”
“ আ- আসসালামু আলাইকুম।”
“ ওয়ালাইকুমুসসালাম। আপনার বাস চলে এসেছে বোধহয়। ”

বাস এসে থেমেছে তখন। অনন্যা দুই সেকেন্ড ইতস্তত করে তরুণের কাছ থেকে ছাতাটা নিলো। তারপর বাসে উঠে সিটে গিয়ে বসলো। বাস চলতে শুরু করলো কিছুক্ষণ পর। তরুণ তখন ফোন হাতে বাসস্ট্যান্ডে দাঁড়িয়ে।

অনন্যার হতবাক অবস্থা তখনো কাটেনি। ছাতাটা নিয়ে ঠিক করলো কিনা সেটাও ভাবছে। হঠাৎ ফোনের নোটিফিকেশন বেজে উঠলো ওর। ফোন বের করে অনন্যা দেখলো একটা অচেনা নাম্বার থেকে মেসেজ এসেছে।

“ ছাতাটা ফেরত দিতে হবে না। নিজের কাছেই রাখুন। –তরুণ ”

তরুণের মেসেজ? পরপরই আরো একটা মেসেজ এলো।

“ আমাকে বিয়ে করবেন অনন্যা? কাঠগোলাপের গাছ আছে আমাদের বাসায়।”

অনন্যা অবাক হলো। ওর যে কাঠগোলাপ পছন্দ সেটা তরুণ জানলো কেমন করে?

শেষ

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here