নিশির_অন্তিম_প্রহরে #পর্বঃ০৩,০৪

0
323

#নিশির_অন্তিম_প্রহরে
#পর্বঃ০৩,০৪
#লেখিকাঃঅনন্যা_অসমি
০৩

কাচুমাচু হয়ে দাঁড়িয়ে আছে এনাক্ষী। ভ’য়ে সে বারবার ঢোক গিলছে। তার থেকে কিছুটা দূরে দাঁড়িয়ে আছে তিন জন কোরিয়ান পু’লিশ অফিসার। সিনিয়র অফিসারের নাম চোই হান সক। নতুন এই জায়গায় দ্বিতীয় দিনের শুরুতেই যে পুলিশের দেখা পাবে তা এনাক্ষী স্বপ্নেও আশা করেনি। তবে রুমে কায়ানও আছে বিধায় এনাক্ষী এখনো পুলিশের সামনে দাঁড়িয়ে আছে, না হলে কবেই ভ’য়ে কান্না করে দিতো।

ইনস্পেক্টর হান গম্ভীর গলায় কোরিয়ান ভাষায় প্রশ্ন করলো,

” তোমার নাম কি?”

” এনাক্ষী বসু।”

” ফরেনার?”

এনাক্ষী মাথা নাড়িয়ে হ্যাঁ বোধক জবাব দিলো।

” তোমার পার্সপোট, ভার্সিটির ডকুমেন্টস সহ এই দেশে আসার সময় যা যা প্রয়োজন ছিলো দয়া করে সেগুলো আমাদের দেখালে ভালো হয়।”

হানের কথা শুনে এনাক্ষীর হৃদস্পন্দন বেড়ে যায়। সে কায়ানের দিকে তাকালে কায়ান চোখের ইশারায় নিয়ে আসতে বললো। এনাক্ষীর ভীত চেহারাটা দেখে হান বললো,

” ভ’য়ের কিছু নেই। আমারা শুধু নিশ্চিত হওয়ার জন্য দেখতে চাইছি।”

এনাক্ষী গুটিগুটি পায়ে লাগোয়া রুমটাতে গিয়ে নিজের লাগেজ খুললো। হান বাকি দু’জন পুলিশকে নির্দেশ দিলো ঘরটাকে একবার ঘুরে দেখতে।

সব ডকুমেন্টস দেখে পুলিশরা নিশ্চিত হলো এনাক্ষীর ব্যপারে। তবে এনাক্ষী এখনো জানেনা এই বিল্ডিং এ হঠাৎ পুলিশের আগমন কেন। আর কৌতূহল দমাতে না পেরে সে প্রশ্ন করেই ফেললো,

” স্যার আমি কি জানতে পারি আপনারা এখানে কেন এসেছেন?”

এনাক্ষীর প্রশ্ন শুনে সবাই তার দিকে তাকালো। এতো জোড়া চোখ যে একসাথে তাকেই দেখছে এটা ভাবতেই এনাক্ষীর অস্ব’স্তি লাগছে। ইনস্পেক্টর হান শান্ত গলায় বললো,

” আপনার উপরের ঘরে যে মেয়েটি থাকে লি রিন তাকে মা’র্ডার করা হয়েছে। যার কারণে আমরা এখানে এসেছি। আশা করি আমাদের সাথে কো-অপারেট করবেন।”

” নে।” (হ্যাঁ)

এটা বলেই পুলিশরা বেরিয়ে গেলো। কিন্তু এদিকে এনাক্ষী এখনো শ’কের মধ্যে আছে। তার সাথে কি হচ্ছে এসব। দেগু থেকে সউল এ আসার পর থেকে তার সাথে সব উল্টেপাল্টা ঘটনা ঘটে চলেছে।

কাঁধে কারো স্পর্শ পেয়ে এনাক্ষী পেছন ফিরে তাকালো। কায়ান চোখের ইশারায় তাকে ভ’য় পেতে বারণ করলো। নিজেকে একটু স্বাভাবিক করে এনাক্ষী বললো,

” আমাকে একটু উপরে নিয়ে যাবে কায়ান।”

উপরে এসে এনাক্ষী মেয়েটির লা’শ দেখতে পাইনি, সেটি পুলিশ আগেই নিয়ে গিয়েছে। তবে মাটিতে র’ক্ত ছড়িয়ে আছে। ঘরের অনেকটা জায়গা পুলিশ
কর্ডন দিয়ে ঘেরাও করে রেখেছে। চারিদিকে একবার চোখ বুলিয়ে নিলো এনাক্ষী।

” ভ’য় লাগছে এনা?”

” আনিও।” (না)

” ঘরে চলো। এখানে বেশিক্ষণ থাকা ঠিক হবে না।”

” মেয়েটা খুব ক’ষ্ট পেয়েছে না তাই না?”

কায়ান কিছু বললো না, এনাক্ষীর হাত ধরে তাকে নিচে নিয়ে এলো। তবে এনাক্ষী ঘাড় গুঁড়িয়ে যতটা সম্ভব ঘরটাকে দেখে গেলো।

মুখ ধুয়ে এসে জানালার কাছে দাঁড়ালো এনাক্ষী। অন্যমন্সক হয়ে চিন্তা করছে কিছু। কাল রাতে ঘুমের মধ্যে সে উপর থেকে হালকা শব্দ পেয়েছিলো তবে সে এই ব্যপারে এতোটা চিন্তা করেনি। কিন্তু এখন তার ভিতর অদৃশ্য অপ’রাধবোধ কাজ করছে। সে ভাবছে নিশ্চয়ই মেয়েটাকে যখন ওই ব্যক্তিটি মা’রছিলো তখনই অসা’বধানতার কারণে শব্দটা তৈরি হয়েছে। সে যদি বিষয়টা নজর এড়িয়ে না যেতো তবে অন্তত মেয়েটা আজ বেঁ’চে থাকতো।

এসব ভাবতে ভাবতে হঠাৎ এনাক্ষীর চোখ গেলো নিচে রাস্তায়৷ কায়ান একটা লোকের সাথে কথা বলছে। লোকটার হাতে কিছু একটা দেওয়ার পর লোকটা চলে গেলো। কায়ান আশেপাশে তাকাতেই এনাক্ষী কি ভেবে যেন জানালার সামনে থেকে সরে গেলো।

সোফা চুপচাপ বসে আছে এনাক্ষী। দরজা খোলার শব্দে চোখ তুলে তাকালো সে৷ কায়ান এসেছে, হাতে তার কফি এবং একটা প্যাকেট।

” এই নাও খেয়ে নাও। তুমি এখন খাবার তৈরি করে খাওয়ার অবস্থায় নেই তাই নিয়ে এলাম। খেয়ে নাও ভালো লাগবে।”

প্যাকেট থেকে একটা কেক বের করে চুপচাপ খেতে লাগলো এনাক্ষী। তাকে চুপচাপ থাকতে দেখে কায়ান বুঝতে পারলো এনাক্ষী এখনো ভ’য়ে আছে।

” তুমি কি এখনো এই মা’র্ডারের ব্যপারে ভাবছো এনা? তুমি কি কাল রাতে কিছু টের পেয়েছিলে?”

চোখ তুলে কায়ানের দিকে তাকালো এনাক্ষী। কায়ান তার দিকে আগ্রহ নিয়ে তাকিয়ে আছে। এনাক্ষী ভাবছে কায়ানকে সত্যিটা বলবে নাকি নিজের মাধ্যমে রাখবে।

” না আমি কিছুই টের পাইনি।”

” আচ্ছা এতো চিন্তা করেনা, শরীর খা’রাপ করবে।”

” আমার সাথে কি যে হচ্ছে। সউল আসার পর থেকে এতো অদ্ভুত কান্ড আমার আশেপাশে কেন হচ্ছে ঈশ্বর জানেন।”

” এতো চিন্তা করোনা। ঈশ্বর যা করবেন তাতে আমাদের ভালোই হবেন। তুমি থাকো তাহলে আমাকে তাড়াতাড়ি অফিস যেতে হবে।”

” তোমাদের চ্যানেলেও এটা দেখাবে?”

” হুম। আমাকে তাড়াতাড়ি যেতে হবে, জরুরি মিটিং আছে কিছুক্ষণ পর। সাবধানে থেকো।”

কায়ান দ্রুত এনাক্ষীর ঘর থেকে বেরিয়ে গেলো। অনেকটা সময় অতিবাহিত হলেও এনাক্ষী সোফাতেই বসে রইলো।

ট্যাক্সি থেকে নেমে কায়ান তাড়াতাড়ি নিজের ডেস্কে এসে বসলো। কম্পিউটার অন করে নিজের প্রয়োজনীয় কাগজগুলো প্রিন্ট করে মিটিংয়ের জন্য চলে গেলো।

মিটিং রুমে সবাই লি রিন নামের মেয়েটিকে নিয়ে কথা বলছে। তবে কায়ান চুপচাপ নিজের কাজগুলো মনোযোগ সহকারে চোখ বুলিয়ে যাচ্ছে। ডির্পাটমেন্ট হেড এলে সবাই উঠে দাঁড়ালো।

” জোউন আছিমেও। (শুভ সকাল)” সবাই একসাথে বো করে হেডকে বলবো। হেডও তাদের শুভ সকাল বলে বসতে বললো। এরপর সবাই নিজেদের কাজ নিয়ে কথা বলতে লাগলে। একসময় হেড বললে উঠেন,

” কায়ান আজকে সকালের খবর জানো?”

” ইয়ে। (জ্বি)” নিচু স্বরে বললো কায়ান।

” মেয়েটাকে তুমি চেনো?”

” নো স্যার। মাঝেমধ্যে সিঁড়ি দিয়ে যাওয়া-আসার সময় তার সাথে আমার দেখা হতো।”

” তার সম্পর্কে কিছু জানো? মানে গো’পন কোন তথ্য যেটা আমরা আমাদের চ্যানেলে দেখাতে পারি?”

” দুঃখিত স্যার, আমি এরকম কিছু জানিনা।”

হেড কায়ানের কথা শুনে হতা’শ হলেন। তিনি ভেবেছিলেন হয়তো কায়ানের কাছ থেকে নতুন কিছু গো’পন তথ্য জানতে পারবে, যেটা তাদের চ্যানেলে প্রচার করতে পারবে কিন্তু তা কিছুই হলোনা। হেড সবাইকে আরো কিছু কথা বলে চলে গেলেন। একে একে সবাই চলে যেতে লাগলো তবে কায়ান এখনো নিজের চেয়ারে বসে একমনে কলমটা ঘুরিয়ে যাচ্ছে।

” কি ভাবছো?”

লি সং মিন এর কথা কায়ান শুনলেও কিছু বললোনা। সং মিন কায়ানের কলিগ সেইসাথে খুব ভালো বন্ধু।

” তুমি কি কোন কারণে চিন্তিত?”

” ভাবছি মা’র্ডারের ব্যপারে। লি রিনকে আমি খুব ভালো না চিনে থাকলেও তার সাথে আমার বেশ কয়েকবার কথা হয়েছে। তার সাথে তার বাড়িতেই এতো বড় একটা ঘটনা ঘটে গেলো আর কেউ টেরও পেলোনা।”

” তুমি কি কাউকে সন্দেহ করছে?”

” সন্দেহ নয় তবে আমার মনটা কেমন যেন করছে। কেউ কিছু টের পেলোনা এটা কি আধোও সম্ভব।”

পুলিশ স্টেশনে এখন সবাই খুব ব্যস্ত। ইনস্পেক্টর হান ঘটনা স্থলের ছবিগুলো দেখছে। এরই মধ্যে জুনিয়র অফিসার কাং হু একটা ফাইল এনে টেবিলে রাখলো।

” কিছু জানতে পারলে?”

” স্যার মেয়েটার পরিবার বলতে কেউ নেই। তার বাবা-মা প্রায় তিন বছর আগে একটা ট্রেন দুর্ঘ’টনায় মা’রা যায়। মেয়েটা দু’টো রেস্তোরাঁয় পার্ট টাইম জব করে নিজের জীবন চালায়।”

” পড়াশোনা করে না?”

” না স্যার। বাবা-মা মা’রা যাওয়ার পর সে তার হাই স্কুল ড্রপ করেছে।”

” বাবা-মা হা’রা, যার আপন বলতে কেউ নেই এরকম একটা মেয়েকে কেউ কেন মারবে? কাং হু তুমি রেস্তোরাঁর নাম খুঁজে বের করো এবং আরো ডিটেইলস বের করো মেয়েটির ব্যপারে।”

কাং হু নির্দেশ পেয়ে দ্রুত কাজে লেগে পড়লো। কাং হু চলে যাওয়ার পর কিছু সূত্র খুঁজে পাওয়ার আশায় হান আবারো ছবিগুলো দেখতে লাগলো।

চলবে…..

#নিশির_অন্তিম_প্রহরে
#পর্বঃ০৪
#লেখিকাঃঅনন্যা_অসমি

লি রিন এর মৃ’ত্যুর একদিন অতিবাহিত হয়ে গিয়েছে। ইনস্পেক্টর হান কাং হু কে নিয়ে হসপিটালে এসেছে।

” কিছু জানা গিয়েছে ডাক্তার বোহা?”

ইশারায় তাদের দু’জনকে বসতে বললেন ডাক্তার লি বোহা।

” মেয়েটি যখন জীবিত ছিলো তখন তাকে অনেক নি’র্যাত’ন করা হয়েছে। তার মাথায় গভীর আ’ঘা’তের চিহ্ন রয়েছে।”

” ভারী কিছু দিয়ে কি আ’ঘা’ত করা হয়ছে? মানে হাতু’ড়ি, ফুলদানি?” কাং হু প্রশ্ন করলো।

” না। কোন শক্ত জিনিসের সাথে বা’রি লাগার ফলে এই ধরনের ক্ষ’ত হয়ে থাকে। ক্রা’ইম সিন দেখে যতটুকু বোঝা গেলো খু’নি তার মাথাটা দেয়ালের সাথে বেশ কয়েকবার ঠু’কেছে।”

” এর ফলেই কি মৃ’ত্যু হয়েছে মেয়েটির?” হান বললো।

” লি রিনের মৃ’ত্যুর মূল কারণ অতিরিক্ত নি’র্যা’তন এবং র’ক্তক্ষ’রণ।”

ডাক্তার বোহা এর কথা শুনে হান এবং কাং হু দু’জনেই চুপ হয়ে যায়। নিরবতা ভেঙে হান নিচু স্বরে বললো,

” মেয়েটির সাথে খা’রা’প কিছু মানে রে…”

” না ইনস্পেক্টর হান এরকম কিছুই হয়নি। তবে জীবিত থাকা অবস্থায় তার শরীরে সেই ব্যক্তিটা অনেক ক্ষ’ত করেছে। লি রিন এর পায়ের নিচে অনেক গুলো ক্ষ’ত আছে। তার মুখের গভীর ক্ষ’তগুলো আপনারা প্রথমেই দেখেছেন।”

” কিন্তু একটা ব্যপার এতো সব কিছু হয়ে গেলো অথচ কেউ কিছুই টের পেলোনা। অন্তত যখন ধ’স্তাধ’স্তি হচ্ছিলো তখন তো একটু হলেও শব্দ হওয়ার কথা ছিলো। আর কিছু না হোক মেয়েটাকে যখন মা’রছিলো তখন তার চিৎ’কার কি কেউই শুনতে পাইনি?”

” চিৎকার করলে তো কেউ শুনতে পাবে ইনস্পেক্টর কাং হু।”

” মানে? মেয়েটাকে এতোটা ক’ষ্ট দেওয়া হয়েছে আর আপনি বলছেন সে চিৎকারই করেনি!”

” খু’নি তো তাকে সেই সুযোগটাই দেয়নি। আমার ধারণা অনুযায়ী খু’নি প্রথমেই তার মুখ বেঁধে ফেলে, তারপর নি’র্যা’তন করেছে এবং সবশেষে তার জিহ্বাটাই কে’টে ফেলেছে। জিহ্বা কে’টে নেওয়ার কিছুক্ষণ পরেই আর ক’ষ্ট সহ্য করতে না পেরে লি রিন মা’রা গিয়েছে।”

জিহ্বা কে’টে নেওয়ার কথা শুনে হান এবং কাং হু দু’জনেই চমকে গেলো কারণ তারা কেউই এই বিষয়টা সম্পর্কে জানতোনা। ডাক্তার বোহার সাথে আরো কিছু বিষয় নিয়ে কথা বলে তারা হসপিটাল থেকে বেরিয়ে এলো।
.
.

ইংরেজি মাসের প্রায় শুরুর দিক। এখন তুষারপাত নেই, হালকা ঠান্ডা হওয়া বইছে। লি রিন এর মৃত্যুর পর থেকে এনাক্ষী কিছুটা চুপচাপ হয়ে গিয়েছে। কায়ানও কাজের চাপে বাইরে থাকে বেশির ভাগ সময়।

বিছানা থেকে উঠে গায়ে কোট এবং মাফলার পেছিয়ে চুলগুলো ঠিক করে বেরিয়ে এলো সে। দরজা টেনে যখনই পেছনে ফিরে তাকালো তখন দেখলো একটা ছেলে দ্রুত পায়ে সিঁড়ি বেয়ে উপরে উঠে গিয়েছে। ছেলেটা এতোটাই দ্রুত উপরে উঠেছে যে এনাক্ষী ঠিকমতো তাকে দেখতেও পাইনি। বেশি ভাবলোনা এনাক্ষী, নিচে নেমে এলো।

সাত তালা বিশিষ্ট এই বিল্ডিংটায় অনেক কিছু না থাকলেও বেশ সুন্দর এবং পরিপাটি। বিল্ডিং এর সামনে এবং পেছনে খালি জায়গায় রয়েছে। সামনের জায়গাটা রাস্তার পাশে হওয়ার কারণে এটাতে বাচ্চারা খেলাধুলা করে, বড়রা হাটাহাটি করে। তবে পেছনের জায়গায়টা একটু গাছপালা দিয়ে ভরা এবং নিশ্চুপ ধরণের।

গেটের বাইরে এসে এনাক্ষী দেখলো একটা ছোট মেয়েকে। মাথায় টুপি, গায়ে বেগুনি রঙের সোয়েটার, হাত-পায়ে মোজা পড়া। একটা বিড়ালের পেছন পেছন দৌড়াচ্ছে সে। দৃশ্যটি দেখে হাসলো এনাক্ষী। বিড়ালটি হচ্ছে কায়ানের বিড়াল টামি। কি মনে করে এনাক্ষী বললে উঠলো,

” হা রিনসি।”

ছোট মেয়েটি দাঁড়িয়ে গেলো। এটা দেখে হাসলো এনাক্ষী, তার মানে সে ঠিকই ভেবেছে। হা রিন ঘুরে এনাক্ষীর দিকে তাকালো। এনাক্ষী তাকে ইশারায় কাছে ডাকলো। হা রিন টামিকে কোলে তুলে নিয়ে গুটিগুটি পায়ে এনাক্ষীর সামনে এসে দাঁড়ালো।

” হা রিন?”

” নে।”

” আনেংহাসেও, এনাক্ষী ইমনিদা।” (হ্যালো, আমি এনাক্ষী)

প্রতিউওরে হা রিন বো করে বললো,

” আনেংহাসেও, হা রিন ইমনিদা।” (হ্যালো, আমি হা রিন)

” তুমি কি আমাকে চেনো?”

হা রিন মাথা নাড়িয়ে না বললো।

” আমি দোতালায় নতুন এসেছি। কায়ান বলেছে তুমি নাকি টামিকে খুবই পছন্দ করো।”

এনাক্ষীর কথা শুনে হা রিন খুশিতে হ্যাঁ-বোধক মাথা নাড়লো।

” আমারো টামিকে ভালো লাগে। আমিও কি তোমার সাথে খেলতে পারি?”

” অবশ্যই তুমি পারো।”

এনাক্ষী হেসে হা রিনের গাল টেনে দিলো। দুধের মতো ফর্সা, গোলগাল চেহারার পিচ্চি মেয়েটাকে এনাক্ষীর বেশ ভালো লেগেছে।

” আচ্ছা তাহলে তুমি খেলো, আমি অন্য একদিন তোমাদের সাথে খেলবো।”

হা রিন টামিকে নিয়ে খেলতে চলে গেলো। এনাক্ষী মেইন গেইট দিয়ে বের হবে তখন তার মনে হলো কেউ হয়তো তাকে দেখছে। মাথা উঁচু করে উপরে তাকালো সে। উপরে তাকাতেই সে দেখতে পেলো পাঁচ তালায় একটা ছেলে দাঁড়িয়ে আছে তবে সে অন্যদিকে ফিরে কারো সাথে ফোনে কথা বলছে। নিজের মনের ভু’ল ভেবে এনাক্ষী বেরিয়ে রাস্তা দাঁড়ালো। অন্যদিকে এনাক্ষী বেরিয়ে যেতেই কেউ বাইরে বেরিয়ে এলো।

বাড়ি থেকে বেরিয়ে হাঁটতে হাঁটতে এনাক্ষী একটা রেস্তোরাঁয় এসে থামলো। ভেতরে ঢুকে দেখলো অনেকেই বসে আছে। কেউ গল্প করছে, কেউ অফিসের কাজ করছে তো কেউ পড়াশোনা করছে। রেস্তোরাঁয় খুব বেশি শব্দ নেই। একটা বাবল টি নিয়ে এনাক্ষী যখন বেরিয়ে আসবে তখন কারো ডাকে সে থেমে যায়। বাম পাশে তাকিয়ে দেখলো একটা সুদর্শন পুরুষকে। পুরুষটিকে চিনতে তার বেগ পেতে হলোনা, ইনস্পেক্টর চোই হান সক। হানকে একবার দেখলো এনাক্ষী। পুলিশ ইউনিফর্ম নেই এখন৷ পড়নে লম্বা একটা কালো কোট। দুধের মতো ফর্সা দেহে বেশ ভালো মানিয়েছে এটা। মাঝারি সাইজের চোখ, গোলাপি ঠোঁট সাথে কপালে পড়ে আছে বেশখানিকটা চুল৷ সব মিলিয়ে তাকে কোন কে-এক্টর থেকে কম লাগছেনা।

” মিস এনাক্ষী, তুমি কি আমাকে শুনতে পাচ্ছো?”

হানের কথা শুনে এনাক্ষী নিজের ভাবনা থেকে বেরিয়ে এলো।

” আমাকে চিনতে পেরেছো?”

” আপনাকে কি করে ভুলতে পারি ইনস্পেক্টর হান। আপনি এখানে যে? গার্লফ্রেন্ডের সাথে ডেটে এসেছেন বুঝি?”

” না, লি রিন নামক মেয়েটির সম্পর্কে খোঁজ নিতে এসেছিলাম।”

” এখানে?”

” মেয়েটা এখানেই কাজ করতো। তাই এসেছিলাম তার সম্পর্কে খোঁজ নিতে। তুমি এখানে কি করছো?”

” বাসায় একা ভালো লাগছিলো না তাই হাঁটতে বের হয়েছি।”

” সাবধানে থাকবে। যেহেতু তুমি এখানে নতুন, এখানের নিয়মকানুন সম্পর্কে ভালো করে জানেনা তারউপর তোমার উপর তালায় কিছুদিন আগে এতোবড় একটা ঘটনা ঘটেছে তাই বের হলে সবসময় সাবধানে থাকবে। সম্ভব হলে নিজের সুরক্ষার জন্য সাথে কিছু রেখো।”

এনাক্ষীর বোধগম্য হলোনা হানের এতো কেয়ারিং কথার। তবে সে ভাবলো সে একজন ফরেনার এবং এই শহরে নতুন বলে হান সহানুভূতির কারণে কথাগুলো বলেছে। এনাক্ষী হালকা হেসে মাথা নাড়িয়ে হানের কথা সম্মতি জানালো।

” চলো তোমাকে পৌঁছে দিয়ে আসি।”

” না না তার প্রয়োজন নেই। আমি চলে যেতে পারবোনা।”

” সম’স্যা নেই, এমনিতেও আমার ওখানে কাজ আছে। এদিকে যখন যাচ্ছি চলো একসাথে যায়। যেতে যেতে তোমার থেকে ওই বিল্ডিং সম্পর্কেও জেনে নেওয়া যাবে।”

কথা বলতে বলতে হান এবং এনাক্ষী তাদের গন্তব্য স্থলে পৌঁছে গেলো। যাওয়ার আগে হান আবারো এনাক্ষীকে নিজের ফোন নম্বর দিলো সেইসাথে সাবধান করলো এবং কোন সন্দে’হজনক কিছু দেখতে পেলেই তাকে জানানোর অনুরোধ করলো।

দরজা খুলে যখনই এনাক্ষী ভিতরে প্রবেশ করবে তখন পাশের ঘরের দরজাটা খুলে গেলো। এনাক্ষী ঘাড় গুঁড়িয়ে দেখলো কায়ান দাঁড়িয়ে আছে।

” তুমি কখন এসেছো?”

” কিছুক্ষণ আগে। কোথায় গিয়েছিলে? এসে দেখলাম তোমার দরজা বন্ধ৷”

” ভালো লাগছিলো না, তাই হাঁটতে গিয়েছিলাম। আচ্ছা আমি এবার যায়, আমার কিছু কাজ আছে। তোমার সাথে পরে কথা হবে।”

দরজা বন্ধ করে দিলো এনাক্ষী। কিছুসময় দাঁড়িয়ে থেকে কায়ানও দরজা বন্ধ করে দিলো।

চলবে……

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here