#নিশির_অন্তিম_প্রহরে
#পর্বঃ৩১,৩২
#লেখিকাঃঅনন্যা_অসমি
৩১
” কায়ান তুমি কি এখন ব্যস্ত আছো?”
” কোন দরকার?”
” হুম অনেক বেশি দরকার। আমি আমার পড়া বুঝতে পারছিনা। যদি তোমার অসুবিধে না থাকে একটু বুঝিয়ে দিতে পারবে।”
” এসো ভিতরে।”
এনাক্ষী খুশি মনে ভিতরে গিয়ে টেবিলে বসে পড়লো। কায়ান এক কাপ কফি এসে এনাক্ষীর সামনে রাখলো।
” তুমি খাবেনা?”
” না আমি একটু আগেই খেয়েছি।”
কফি শেষ হলে কায়ান এনাক্ষীকে পড়া বুঝিয়ে দিতে লাগলো। বর্তমানে বেশ ভালোই গরম পড়ছে। কায়ান খেয়াল করলো এনাক্ষী কপালে বিন্দু বিন্দু ঘাম জমতে শুরু করেছে। কায়ান উঠে টিস্যুর বক্সটা এনে টেবিলে রাখলো এবং ফ্যানটা আরো বাড়িয়ে দিলো।
” গরম লাগছে যে সেটা বলবেনা গা’ধা মেয়ে। চুপটি মেরে বসে থাকলে হবে?”
” তোমার অসুবিধে হবে ভেবে বলিনি।”
” অন্তত একবার বলে তো দেখতে। দেখো ঘেমে কি অবস্থা হয়েছে তোমার। পানি খাবে?”
” না থাক। তুমি বসো।”
কায়ান বসলোনা, রুমের ভেতরে চলে গেলো। কিছুসময় পর কিছু একটা এনে এনাক্ষীর সামনে রাখলো। বই থেকে চোখ সরিয়ে এনাক্ষী দেখলো একটা মাঝারি সাইজের চুল বাঁধার ক্লিপ। কায়ানের দিকে তাকালে সে চোখের ইশারায় তা নিতে বললো। এনাক্ষী ক্লিপটা তুলে প্রশ্ন করলো,
” এটা তুমি আমাকে দিলে কেন? এটা দিয়ে আমি কি করবো?”
” ক্লিপ দিয়ে মানুষ কি করে?” চেয়ারে বসে বললো কায়ান।
” চুল বাঁধে।”
” তাহলে আবার জিজ্ঞেস করছো কেন? চুলগুলো কোঁপা করে ক্লিপ দিয়ে আটকে নাও। তাহলে গরম কম লাগবে। গাধী মেয়ে এতটুকু বিষয়টাও আমাকে বলতে হয়। একটুও বুদ্ধি নেই মেয়েটার।”
এনাক্ষী মুখ ভেঙিয়ে ক্লিপ দিয়ে চুল আটকে নিলো।
” এক মিনিট তোমার কাছে মেয়েদের ক্লিপ এলো কোথা থেকে? তুমি না একা থাকো?” এনাক্ষী চোখ ছোট করে কায়ানের দিকে তাকালো। কায়ান হালকা করে এনাক্ষীর মাথায় ঠোকা দিয়ে বললো,
” বেশি আজেবাজে চিন্তা করো তুমি। এটা সুজির ক্লিপ। সে তার কিছু জিনিস এখানে রেখে গিয়েছে, কোন সময় প্রয়োজন হলে যাতে সমস্যা না হয়।”
” আচ্ছা সুজি অন্নির কোন খবর পেলে? আমার কাছে তো অন্নির নম্বরও নেই।”
” না কথা হয়নি, কাজে ব্যস্ত সুজি। তুমি পড়ো।”
পড়া শেষ করে এনাক্ষী কায়ানের ঘর থেকে বের হতেই ফিলিক্সের সামনে পড়ে গেলো।
” কেমন আছো ফিলিক্স? এতো রাতে কোথা থেকে আসছো?”
” কাজ ছিলো। তুমি কায়ানের বাসায় কি করছিলে?”
” পড়া বুঝছিলাম না তাই গিয়েছিলাম। কোরিয়ান ভাষা আমার থেকে কায়ান আরো ভালো বুঝতে পারে।”
” আমিও তো পারি। তার উপর আমি তোমার সিনিয়র, তাহলে আমার কাছে এলে না কেন?”
” অন্য একদিন যাবো। রাতের খাবার খেয়েছো?”
” না। যাও তুমি, পড়াশোনা করে ক্লান্ত হয়ে গিয়েছো। খেয়ো বিশ্রাম নাও। আর দরজা, জানালা ঠিক মতো বন্ধ করে রেখো। বড্ড বেখেয়ালি তুমি এনাক্ষী। নিজেও জানোনা কোথায় কি করে রেখো তুমি। এখন থেকেই সাবধান হও, না হলে বড্ড বিপদে পড়বে।”
ফিলিক্সের কথা আগামাথা এনাক্ষী কিছুই বুঝতে পারলোনা। সে ফিলিক্সের কথা ভাবতে ভাবতে ঘরে চলে এলো। বইগুলো রেখে রান্নাঘরে গেলো খাবার গরম করতে। তরকারি নড়তে নড়তে এনাক্ষীর আচমকা মনে হলো তার ঘরের কিছু জিনিসের অবস্থান পরিবর্তন হয়েছে। এটা ভাবতেই এনাক্ষী গায়ে কাঁটা দিয়ে উঠলো। সে চুলার আঁচ কমিয়ে দিয়ে এনাক্ষী পুরো ঘরটা ঘুরে দেখলো। না সব আগের মতোই আছে।
” এনাক্ষী তুমি আসলেই বেশি ভাবো। ফিলিক্স হয়তো এমনিতেই বলেছে আর তুমি কিনা সেটা নিয়ে ভাবতে ভাবতে কিসব ভাবছো। আরে আমার তরকারি।”
.
.
সময় দ্রুত বহমান। গ্রীষ্মকাল চলে গিয়ে বর্ষার আগমন ঘটেছে। আজ তুমুলভাবে বৃষ্টি পড়ছে। পিচ ঢালা রাস্তা বৃষ্টির পানি ভিজে গিয়েছে। জানালার কপাট লাগিয়ে এনাক্ষীর বৃষ্টি দেখছে। এখন প্রায় অনেকটা রাত হয়ে গিয়েছে, তবে এনাক্ষীর ঘুম না আসার কারণে জানালার পাশে বসে রয়েছে। হালকা হালকা ঘুম এসে ভড় করেছিলো এনাক্ষীর চোখে তবে তা নিমেষেই উধাও হয়ে গেলো। সে সোজা হয়ে বসে জানালায় লেগে থাকা পানির কণাগুলো মুছে বাইরে আরো ভালো করে দেখার চেষ্টা করলো। মাত্রই কেউ বিল্ডিং থেকে বেরিয়ে গিয়েছে, কিন্তু লোকটা অনেক বড় রেইনকোট পড়ে থাকার কারণে এবং ল্যাম্পপোস্ট না থাকার কারণে এনাক্ষী লোকটাকে স্পষ্ট দেখতে পাইনি তবে তার দেহের গড়ন দেখে এনাক্ষীর মনে সন্দেহ হলো সে ব্যক্তিটিকে চেনে তবে কে সেটাই সে এই মূহুর্তে বুঝতে পারছেনা। কিছু একটা ভেবে এনাক্ষী কেঁপে উঠলো। সে দ্রুত লাইটটা বন্ধ করে দিলো এবং দৌড়ে গিয়ে চেক করলো সব দরজা বন্ধ কিনা। এনাক্ষী পুনরায় জানালার কাছে এসে দাঁড়ালো তবে এবার আর লোকটাকে দেখতে পেলোনা। সে দ্রুত রান্নাঘর থেকে ছোট একটা ছুড়ি নিয়ে কাঁথা মুড়িয়ে শুয়ে পড়লো। এনাক্ষী হাত-পা আস্তে আস্তে কাঁপতে লাগলো। তার মনে কেন যেন বাজে কিছু ঘটনার ইঙ্গিত দিচ্ছে।
” হে ঈশ্বর তুমি রক্ষা করো। আমি যা ভাবছি তা যেন মোটেও না হয়। আবার কোন নিস্পাপ মানুষের যেন প্রাণ না হারাতে হয়। এই পাগল খু’নিকে তুমি ধরিয়ে দাও, রক্ষা করো সবাইকে।”
ঈশ্বরকে ডাকতে ডাকতে একসময় ঘুমিয়ে পড়লো এনাক্ষী।
এক হাতে ছাতা, অন্য হাতে লাগেজ ধরে দ্রুত পায়ে হাঁটছে সুজি। বৃষ্টিতে প্রায় অনেকখানি ভিজে গিয়েছে সে। ফ্লাইট থেকে সে নেমেছে কয়েকঘন্টা আগে। কিন্তু বৃষ্টির কারণে কোন ট্যাক্সিই এদিকে আসতে চাইনি। অগত্য অর্ধেক রাস্তা ট্যাক্সি করে এসে বাকিটা তাকে হেঁটেই আসতে হচ্ছে। তাকে দেখেই বোঝা যাচ্ছে সে খুবই ভ’য়ে আছে।
বৃষ্টির টুপুরটাপুর শব্দ, লাগেজ টেনে নিয়ে যাওয়ার শব্দ এবং নিজের হাঁটার শব্দ ছাড়াও সুজি হঠাৎ শুনতে পেলো অন্যকারো পায়ের শব্দ। শুকনো ঢোক গিললো সে। ভয়ে বুক ঢিপঢিপ করছে। সে দ্রুত হাঁটতে লাগলো, যখন সুজি বুঝতে পারলো লোকটিও তার পেছন পেছন আসছে তখন সে লাগেজ এবং ছাতাটা ফেলে দৌড়াতে শুরু করলো। দৌড়াতে দৌড়াতে আচমকাই হোঁচোট খেয়ে পড়ে গেলো সুজি, এতে বেশ ব্যথা পেলে সে। কিন্তু থেমে থাকলে চলবেনা তাকে পালাতে হবে, বাঁচতে হবে থাকে। কিন্তু হায় সে উঠার চেষ্টা করবে তার আগেই ব্যক্তিটি তাকে টেনে আবারো মাটিতে ফেলে দিলো।
” আ…….” পায়ের তীব্র ব্যথা অনুভব হতেই চিৎকার করে উঠলো সুজি। তবে সে থেমে যাওয়ার মেয়ে নয়। সেই পা নিয়েই সে অনেক কষ্টে উঠে দাঁড়ালো, কয়েক কদম এগিয়ে যেতেই লোকটি ভারী কিছু দিয়ে তার মাথায় আঘাত করলো। ছিটকে মাটিতে পড়ে গেলো সুজি। চোখ বন্ধ করে নিজের ব্যথা হজম করার চেষ্টা করলো সে। লোকটি সুজির সামনে বসে তার চুল মুঠো করে ধরে মুখটা উপরে তুললো। এমনিতেই মাথায় তীব্র ব্যথা তার উপর এভাবে চুল ধরার কারণে না চাইতেও সুজি চিৎকার করে উঠলো। সে লোকটির হাত খামছে ধরলো কিন্তু কোন লাভ হলোনা। সুজি লোকটা বুকের কাছে মুঠো করে ধরে টানাটানি করতে লাগলো। যার ফলে সেখান থেকে কিছু একটা মাটিতে পড়ে গেলো, যেটা তারা কেউ খেয়াল করেনি। সুজির বৃথা চেষ্টা দেখে লোকটি হেসে ধপ করে তার মাথাটা মাটিতে ফেলে দিলো। সর্বশক্তি দিয়ে সেই ভারী জিনিসটা দিয়ে সুজির মাথায় আ’ঘাত করলো। মুহূর্তে সাদা বৃষ্টির পানি লা’ল হয়ে গেলো। সুজির দৃষ্টি এবার ঝাপসা হয়ে আসছে, নিঃশ্বাস বন্ধ হয়ে আসছে তার।
” কায়ান তুমি…..” আর কিছু বলতে পারলোনা সুজি। আরো একটা তীব্র আ’ঘাতে চিরতরে চুপ হয়ে গেলো সে।
চলবে…….
#নিশির_অন্তিম_প্রহরে
#পর্বঃ৩২
#লেখিকাঃঅনন্যা_অসমি
ফোনের শব্দ শুনে ঘুম হালকা হয়ে গেলো কায়ানের। ঘুম ঘুম করো হাঁতরে ফোন খুঁজে বের করলো। স্ক্রিনে সুজির নাম দেখে মূহুর্তেই ঘুম উবে গেলো কায়ানের। সে দ্রুত উঠে বসলো।
” সুজি তুমি ঠিক আছে? তোমাকে আমি কতবার ফোন করেছি কিন্তু তোমার কোন খবরই নেই। তুমি ফোন রিসিভ করছিলে না কেন? হ্যালো সুজি কিছু বলো, সুজি?”
” কায়ান।”
পুরুষালি কন্ঠ শুনে চুপ হয়ে গেলো কায়ান। এই কন্ঠ সে চেনে, এটা তো সুজির বাবার কন্ঠ।
” আঙ্কেল আপনি! সুজির ফোন আপনার কাছে কি করে? সুজি তো দেশেই নেই তাহলে ফোন…?”
” সুজি দেশে ফিরে এসেছে। তুমি প্লিজ এই হসপিটালে চলে এসো। একটু তাড়াতাড়ি এসো।”
সুজির বাবা ফোন কেটে দিলো। কায়ানের মনে কু ডাকতে লাগলো। সে একমুহূর্ত দেরি না করে দ্রুত কোনবতে মুখে পানি দিয়ে বেরিয়ে এলো। সিঁড়ি দিয়ে নামার সময় কি মনে করে এনাক্ষীর দরজায় নক করলো।
” এনাক্ষী তাড়াতাড়ি দরজা খোলো। এনাক্ষী শুনতে পাচ্ছো?”
রান্না করছিলো এনাক্ষী। কায়ানের ব্যস্ত কন্ঠ শুনে সে চুলা বন্ধ করে দ্রুত দরজা খুলে দিলো।
” কি হয়েছে?” কায়ান একপলক এনাক্ষীকে দেখে নিলো। কোন কথা না বলে এনাক্ষীকে টেনে নিয়ে যেতে লাগলো।
” আরে কায়ান কি হয়েছে? এরকম করছো কেন?”
” হসপিটালে যেতে হবে। সুজির বাবা ফোন করেছিলো।”
” সুজি অন্নির বাবা? কিন্তু তুমি না বললে অন্নি আমেরিকা?”
” আমি জানিনা, কিছু জানিনা। তুমি প্লিজ আমাকে ছেড়ে যেওনা।”
দ্রুত একটা ট্যাক্সিতে উঠে পড়লো দু’জনে। পনেরো মিনিটের মাথায় তারা হসপিটালে পৌঁছে গেলো।
” আন্টি সুজি কোথায়? আঙ্কেল কেন আমাকে হসপিটালে আসতে বললো? সুজি কখন দেশে ফিরেছে? আমাকে তো সে কিছু বলেনি।” ব্যস্তভাবে বললো কায়ান। সুজির মা হু হু করে কান্না করে উঠলো।
” আমার মেয়েটা যে আর নেই কায়ান, আমার মেয়েটাকে ওই পা’ষা’ণ খু’নি মেরে ফেলেছে। মেয়েটাকে শেষবারে মতো সুস্থ দেখতেও পেলাম না। একবার কথাও বলতে পারলাম না। কতটা অভাগা আমরা যে মেয়েটাকে বাঁচাতে পারলাম না। কায়ান আমার মেয়েটাকে মে’রে ফেলেছে, মে’রে ফেলেছে।” সুজির মায়ের কথাগুলো এনাক্ষী নিজের কানে বিশ্বাস করতে পারছেনা। বুকের মধ্যে তার অদ্ভুত অনুভূতি হচ্ছে, পানির কারণে দৃষ্টি ঝাপসা হয়ে আসছে তার। ধপ করে কিছু পড়ে যাওয়ার শব্দে এনাক্ষী পেছনে ফিরে তাকালো। কায়ান এতোটাই শক খেয়েছে যে নিজের ভারসাম্য ঠিক রাখতে না পেরে নিচে পড়ে গেলো। এনাক্ষী দৌড়ে কায়ানের কাছে এলো।
” কায়ান, প্লিজ আমার দিকে দেখো। কায়ান ভেঙে পড়োনা। তুমি ভেঙে পড়লে কি করে হবে বলো? কায়ান শুনতে পাচ্ছো?” কায়ানের কাঁধে হাত রেখে বললো এনাক্ষী। এবার কায়ানও শব্দ করে কেঁদে উঠলো।
” এনাক্ষী তুমি বলো আন্টি মি’থ্যা কথা বলছে, এটা মোটেও সত্যি নয়। সুজি আমাকে ছেড়ে যেতে পারেনা৷ সুজি আমাকে কথা দিয়েছিলো সে সুস্থভাবে ফিরে আসবে, সুজি তার কথা ভাঙতে পারেনা। তুমিই বলো, তুমি তো চেনো সুজিকে। সুজি তো কথা ভাঙার মেয়ে নয়।”
এনাক্ষী বুঝতে পারছে সুজির চলে যাওয়ার ব্যপারটা কায়ান মেনে নিতে পারছেনা। এবার সে বুঝতে পেরেছে কেন কায়ান তাকেও সাথে নিয়ে এসেছে। এনাক্ষী কায়ানের মাথাটা টেনে নিজের কাঁধে রাখলো। মূহুর্তেই তার কাঁধে থাকা জামার অংশটা ভিজে গেলো। এনাক্ষীও নিরবে কান্না করতে লাগলো।
” ঈশ্বর তুমি রাখলে না আমার কথা। কেন তুমি এরকমটা করলে? এরকমটা না হলে কি খুব ক্ষ’তি হতো? সুজি অন্নির সাথেই কেন এরকমটা হলো?” মনে মনে বললো এনাক্ষী। এনাক্ষী এবার বুঝতে পারছে খু’নি তার আশেপাশেরই কেউ আর এটা বুঝতে পেরেই তার শরীর কেঁপে উঠলো।
কায়ানকে সুজির সাথে দেখা করতে দেওয়া হলো। ম’র্গের রুমটা একটু ঠান্ডা, শীতল রুমটা। গার্ড এসে একটা বক্স টেনে বের করলো যেটাতে সুজিকে রাখা হয়েছে। কায়ান কিছুক্ষণ সুজির দিকে তাকিয়ে রইলো, কিছুসময় পর তার মুখে হাসি ফুঁটে উঠলো। মুখে হাসি রেখেই সে সুজির মাথায় হাত বুলিয়ে দিলো।
.
.
কয়েকগুচ্ছ সাদাফুলের মাঝে সুজির হাস্যোজ্জ্বল একটা ছবি রাখা হয়েছে। ঘরটাতে প্রবেশ করার পর সুন্দর একটা ধুপ কাঠির গন্ধ নাকে লাগে। সাদা-কালো পোশাক পরে সুজির ফিউনারেলে এসেছে কায়ান, এনাক্ষীও এসেছে তার সাথে। তার পরনে রয়েছে সম্পূর্ণ কালো রঙের পোশাক। হল ঘরে কায়ানকে একা রেখে বাইরে চলে এলো এনাক্ষী। কিছুদূর যেতেই সে দেখা পেলো হানের।
” ইনস্পেক্টর হান আপনি এখানে?”
” এই কেসটাও আমার কাছে পড়েছে। কিম সুজিকে দেখার জন্য এলাম, সেই সাথে একটু ইনভেস্টিগেশনের জন্য। কায়ান কোথায়? নিশ্চয়ই ভেঙে পড়েছে।”
” হুম। একদম চুপচাপ হয়ে গিয়েছে, সবসময় অন্যমনস্ক থাকে।”
” এটাই স্বাভাবিক। তার সাথে কথা বলা যাবে?”
” মনে হয়না কায়ান এখন কিছু বলার অবস্থায় আছে। তবে চেষ্টা করে দেখতে পারেন। সে হলে আছে, চলুন আমিও যাচ্ছি।”
সুজির ফটোর সামনে হাঁটু গেড়ে বসে আছে কায়ান। চোখ দিয়ে টপটপ করে পানি পড়ছে তার।
” এটা তুমি কি করে পড়লে সুজি? আমাকে ছেড়ে, তোমার পরিবারকে ছেড়ে কি করে স্বার্থপরের মতো চলে যেতে পারলে? দেশে আসার আগে একটাবারও কেন আমাকে জানালে না তুমি? জানালে হয়তো আজ তুমি আমারদের মাঝে থাকে। সব দো’ষ আমার, আমিই তোমার মৃ’ত্যুর জন্য দায়ী। ক্ষ’মা করোনা আমাকে, মোটেও ক্ষ’মা করোনা।”
কথাগুলো বলতে বলতে মাটিতে কপাল ঠেকিয়ে আরো জোড়ে কান্না করতে লাগলো কায়ান।
পেছনে দাঁড়িয়ে আছে এনাক্ষী এবং হান। কায়ানের কান্না শুনে এনাক্ষী বহু কষ্টে নিজের কান্না আটকে রেখেছে। তারা অপেক্ষা করছে কায়ানের একটু স্বাভাবিক হওয়ার। প্রায় অনেকটা সময় পর কায়ান শান্ত হলো। এনাক্ষী ধীর পায়ে এসে কায়ানের পাশে বসলো।
” কায়ান ইনস্পেক্টর হান এসেছেন তোমার সাথে কথা বলার জন্য। তুমি একটু কথা বলবে?”
কায়ান চোখ মুখে উঠে দাঁড়ালো। চোখ-মুখ ফুলে গিয়েছে তার।
” ইনস্পেক্টর হান আমি আপনার সব প্রশ্নের উওর দেবো তবে এখন নয়। কাল আমি স্টেশনে আসবো। অনেক গুরুত্বপূর্ণ কিছু বলার আছে। আপনার কি কালকে সময় হবে?”
” অবশ্যই। তুমি কাল এসো, যেহেতু সুজি তোমার ক্লোজ ফ্রেন্ড আশা করি তুমি আমাদের গুরুত্বপূর্ণ কোন তথ্য দিতে পারবে। আর তুমি সাবধানে থেকো। বলা যায় না কখন কি হয়ে যেতে পারে।”
” হুম।”
” আর এনাক্ষী তোমাকে আগেও বলেছি, আবারো বলছি পরিস্থিতি খুব একটা সুবিধার নয়। আশা করি বুঝতে পারছো তোমাকে আরো সাবধানে থাকতে হবে। তুমি এখনো পুরোপুরি এখানের কিছুই চেনোনা, তাই সাবধানে চলাফেরা করবে। হাতের কাছে সেফটির জন্য কিছু রাখবে। আর ভুলেও ভুল করে বারোটার পর তুমি বাড়ির বাইরে বের হবেনা। পারলে তুমি কোন হোস্টেল বা অন্যকারো সাথে শেয়ারে বাসা নিয়ে নাও। একা থাকা এখন অনেক বিপদজনক হয়ে গিয়েছে। না হলে চাইলে তুমি আমাদের ব্লিডিংএ চলে আসতে পারো। আমি, আমার পরিবার বিশেষ করে হিতোমি আছে।”
” না তার দরকার নেই ইনস্পেক্টর হান। আমি আছি তো। এনাক্ষীর কোন ক্ষতি আমি হতে দেবোনা।” ব্যস্ত কন্ঠে বললো কায়ান।
” তা হলে তো ভালোই। ওকে একটু দেখে রাখবে। বুঝতেই পারছো কেন আমি বারবার একি কথা বলছি৷ যেহেতু সুজির সাথে ওর একটা কানেকশন আছে। এনাক্ষী তোমার কোন অসুবিধে হলে কোন দ্বিধা ছাড়া আমাকে বলবে। আমি তোমার ব্যপারে কোন রিস্ক নিতে চাইনা। তোমার কিছু হয়ে গেলো আমি বা সিস্টার কেউই মেনে নিতে পারবোনা।”
” চিন্তা করবেন না ইনস্পেক্টর হান। আমি এখন আরো সর্তক হবো। আপনি হিতোমিকে দেখে রাখবেন। বিপদ কিন্তু তার উপরও আছে।”
এনাক্ষী জন্য হানের এতোটা চিন্তা কায়ানের মধ্যে অদ্ভুত অনুভূতি জাগালো। তবে সে কিছু বললোনা, চুপ করে অন্য কিছু ভাবতে লাগলো।
চলবে…….