ভালোবাসা কারে কয়,১১,১২

0
209

ভালোবাসা কারে কয়,১১,১২
শবনম মারিয়া
পর্ব ১১

দুইদিন হয়েছে পরশি নতুন বাসায় উঠেছে। অফিসের কাছাকছি এলাকায় একটা বাসা নিয়েছে। যদিও পরশির একার অনুপাতে ফ্ল্যাটটা একটু বড় হয়ে গিয়েছে। পুরো একটা পরিবারের জন্য বড় একটা এপার্টমেন্ট। অবশ্য পরশি ইচ্ছে করেই এই বাসাটা নিয়েছে। পরশির অনেকদিনের একটা ইচ্ছে ছিল ওর নিজের সুন্দর একটা বাসা থাকবে। বড় হবে৷ এক একটা রুম ও এক এক ভাবে নিজ ইচ্ছায় সাজাবে। ভাড়া বেশি হলেও পরশির পক্ষে সামলে নেওয়া কঠিন না। ওর আলাদা কোনো খরচ নেই৷ বাবা মাকেও বেশি কিছু দিতে হয় না। বাবার পেনশনের টাকা দিয়ে চলে যায়। তবুও পরশি যতদিন ঐ বাসায় ছিল অনেকটাই খরচ করতো সবার পিছে। এখন শুধু বাবা মায়ের ওষুধ আর চিকিৎসার টাকাটাই দিবে পরশি। দায়িত্ব পালন করতে করতে হাঁপিয়ে উঠেছে। এবার একটু নিজেকে ভালে রাখা যাক। নিজের ইচ্ছেগুলো পূরণ করা যাক।
একে তো অসুস্থ। ডাক্তার বলেছে রেস্ট নিতে। কিন্তু গত দুইদিনে পরশির রেস্ট নেওয়া হয় নি। বরং অনেক কাজ করতে হয়েছে। কিছু ফার্নিচার কিনেছে। একসাথে সব কিনে নি। আস্তে আস্তে প্রত্যেক মাসে সব কিনে ফেলবে। কাল শুধু একটা খাট, আলমারি, ছোট্ট একটা ডাইনিং টেবিল, চেয়ার আর অন্যান্য প্রয়োজনীয় জিনিস কিনেছে। বাজার আর রান্নার সব আসবাবপত্র কিনা হয় নি। বাহিরেই খাচ্ছে। সবকিছু গুছিয়ে হাঁপিয়ে উঠেছে। পিঠে ব্যথাটা বেড়েছে। আজ পরশি সারাদিন শুয়েই কাটিয়ে দিয়েছে। সন্ধ্যার দিক বেড়িয়েছে একটু কেনাকাটা করতে। কেনাকাটা করে বাসায় ফিরেছে। বিল্ডিংয়ের নিচে ভীর। কিসের এতো ভীর আর চিৎকার চেঁচামিচি! পরশি এগিয়ে যায়৷ এগিয়ে গিয়ে আঁতকে উঠে। একজনের লা`শ!
পরশি লোকেদের ভীরের মধ্যে একজনকে জিজ্ঞেস করলো,
“কি হয়েছে?”
“উপর থেকে লা`ফ দিয়েছে।”
“মানে?”
“মানে আর কি, হয় তো আ`ত্ম`হ`ত্যা করেছে।”
পরশি জিজ্ঞেস করলো,
“পুলিশকে জানানো হয়েছে?”
“না। এই মাত্র ঘটে যাওয়া কাহিনি। পরিবারের লোকজন জানে কি করবে।”
পরশি থানায় তাৎক্ষনিক ফোন করল। পুলিশ আসলো। লা`শ নিয়ে যাওয়া হলো ত`দ`ন্তের জন্য। পরশি ব্যস্ত হয়ে গেল কেসটা নিয়ে।

অন্যদিকে তূর্ণ বাসায় এসেছে। এসে চুপচাপ চন্দ্রার রুমে চলে গেল। এতোক্ষণে দারোয়ানের মাধ্যমে কানে সব পৌঁছে গিয়েছে তূর্ণর। তূর্ণ আমেনা খালাকে ডেকে চন্দ্রার কথা জিজ্ঞেস করলো। আমেনা খালা বললেন চন্দ্রা ঘুমিয়ে পড়েছে। তাই তূর্ণ আর কিছু বলল না। চুপচাপ নিজের রুমে চলে গেল। তূর্ণ ফোন করলো প্রণয়কে। প্রণয় প্রণয়িনীকে ঘুম পাড়িয়ে একটু অফিসের কাজ করছিল। তূর্ণর ফোন পেতেই রিসিভ করে বলল,
“হ্যালো তূর্ণ! কি হয়েছে বল?’
” কি হয়েছে বুঝতে পারছি না।”
“কেন?”
“বাসায় এসে নিচে দারোয়ানের কাছে কাহিনি শুনলাম এজন সু`ই`সা`ই`ড করেছে। ছাদ থেকে লা`ফ দিয়ে। ত`দ`ন্তের জন্য নাকি পুলিশ নিয়ে গিয়েছে।”
“হুঁ, তো?”
“তো কি? এটা কি আদৌ সু`ই`সা`ই`ড নাকি অন্যকিছু?”
“অন্যকিছু কি হবে?”
“তুই কি সব জেনে এভাবে কথা বলছিস নাকি এমনি সত্যি করে বল তো?”
“আরে বাবা আমি কিভাবে জানবো? তোর বাসায় তো আজ যাই নি আমি। আর তোর মনে হয় তুই না জানলে, আমি না জানলে খু`ন হতে পারে? হয় তো সু`ই`সা`ই`ডই হবে।”
“হোপ সো। তাই যেন হয়।”
“চন্দ্রা কোথায়? ওকে জিজ্ঞেস করলেও তো পারিস।”
“ঘুম।”
“চিন্তা করিস না। তেমন কিছু না। এটা খু`ন হলে আমি আর তুই জানতাম।”
“আচ্ছা রাখছি।”
“আচ্ছা।”

প্রণয়ের সাথে কথা বলে তূর্ণ কিছুটা শান্ত হলো। আজকাল কি যে হয়েছে! আশে পাশে মৃ`ত্যু`র খবর শুনলেই ভ`য় হয় তূর্ণর। নরমাল কেসেও তূর্ণর চিন্তা হয় খুব। প্রণয় যেহেতু কিছু জানে না আর তূর্ণও জানে না তাহলে তূর্ণ যা ভাবছে তা হয় নি। তূ্র্ণ নিশ্চিন্তে ঘুমাতে গেল।
.
পরশি ছুটিতে। তবুও এই কেস নিয়ে ব্যস্ত হয়ে গেল। তবে বেশি কিছু করতে হয় নি। পরিবার থেকে পো`স্ট`ম`র্টে`ম করতে দেয় নি। কিন্তু ছেলের পরিবারই বলছিল তাদের ছেলে আ`ত্ম`হ`ত্যা করতে পারে না। অনেক শক্ত ছেলে। আ`ত্ম`হ`ত্যা`র মতো পথ বেছে নিবে মনের দিক দিয়ে এতোটা দুর্বল ছিল না৷ কিন্তু ত`দ`ন্তে বেশি কিছু করতে হয় নি। কারণ ছেলেটার প্যান্টের পকেটে চিঠি পাওয়া গিয়েছে। সু`ই`সা`ই`ড নোট। তাতে পরিষ্কার লেখা ছিল,
“আমি আমার জীবন নিয়ে আর পারছি না৷ না আমার জীবনে কোনো কিছুর কমতি নেই। কমতি শুধু ভালোবাসার। একজন আমাকে ভালোবেসেছিল। আমি তাকে ঠকিয়েছি। এই নিয়ে আমি অনুতপ্ত। তাই নিজেকে শে`ষ করে দিচ্ছি। এতে মেয়েটার কোনো দো`ষ নেই। অনেক পা`প করেছি। সেই পা`পের প্রায়শ্চিত্ত করতে এই সিদ্ধান্ত নিচ্ছি।”

চিঠিটা পড়ার পর পরশি বলল,
“ছেলেটার সাথে যেই মেয়ের সম্পর্ক ছিল সেই মেয়েকে খুঁজে বের করো।”
একজন পুলিশ বলল,
“কিন্তু স্যার, এখানে তো মেয়ের কথা কিছু উল্লেখ নেই। তাহলে কিভাবে?”
“পরিবারকে জিজ্ঞেস করবে। নিশ্চয়ই কিছু জানে। এখন আমি বাসায় যাচ্ছি। কাল সকালে কাজে লেগে যেতে হবে।”
“স্যার আপনি তো অসুস্থ। ছুটিতে।”
“ছুটিতে থেকে লাভ নেই৷ কাজে লেগে যাব।”

.
সকালে চন্দ্রা ঘুম থেকে উঠে ফজরের নামাজ পড়ে নিল। এরপর ছাদে গেল। ছাদে গিয়ে প্রকৃতির হাওয়া নিচ্ছিল। হঠাৎ নিচে তাকাতেই চন্দ্রার একটু কেমন কেমন যেন লাগলো। চন্দ্রার ভাবনায় কিছু একটা এলো। এসব ভাবতে ভাবতে হঠাৎ করে ছাদে কেউ একজন উঠে এলো। এতো বড় বিল্ডিংয়ে যে কেউ যে কোনো সময় ছাদে আসতে পারে স্বাভাবিক। তবে এই সময় সাধারণত কেউ আসে না। চন্দ্রা দেখলো সাদা রঙের কামিজ পরা কালো রঙের একটা ওড়না পেঁচিয়ে এক মহিলা উঠে আসলো। চুলগুলো ছাড়া। বেশ সুন্দর চুলগুলো। তবে চন্দ্রার চুলের মতো কোমড় সমান না। পিঠের আগ পর্যন্ত। চেহারা দেখতে সুন্দর। বেশি ফর্সাও না আবার শ্যামলাও না। দুটোর মিশ্রণ বলা যায়। চোখ দুটো দেখে মনে হচ্ছে চন্দ্রাকে এখানে দেখে প্রশ্ন জেগে আছে মনের মধ্যে। কিন্তু প্রশ্ন তো চন্দ্রার মনেও জেগেছে। চন্দ্রা কিছু জিজ্ঞেস করার আগেই পরশি বলল,
“আপনি এখানে?”
“আমি তো রোজই আসি। তবে আপনাকে চিনলাম না তো?”
“আমি এখানে নতুন। মাত্র দু’দিন হয়েছে এসেছি।”
“ওহ্। কোন ফ্লোর?”
“সিক্সথ ফ্লোর।”
“সিক্সথ ডি?”
“জি।”
“ওহ্। আপনি তো তাহলে প্রতিবেশী। আমরা সিক্সথ বি তে।”
“ওহ্ আচ্ছা। তাহলে তো ভালোই।”
বলে পরশি কিছুক্ষণ থামে। থামে চন্দ্রাও। চন্দ্রা তাকিয়ে দেখে পরশিকে৷ পরশিও দেখে। চন্দ্রাকে প্রশ্নের চোখে কম দেখছে এখন। সে আগে তার সৌন্দর্য পর্যবেক্ষণ করছে। এমন সুন্দর মেয়ে পরশি খুব কম দেখেছে। বেণী করা চুল! কোমড় ছাড়িয়ে যাচ্ছে যেন। দুধে আলতা ফর্সা। চোখদুটো ভীষণ সুন্দর। হাসিও সুন্দর।
পরশি চন্দ্রাকে পর্যপেক্ষণ শেষ করে হঠাৎ জিজ্ঞেস করলো,
“রোজ আসেন এই সময়?”
“জি।”
“আজও আসলেন?”
“হ্যাঁ, কেন সমস্যা আছে?”
“কাল রাতের কাহিনি জানা নেই? বিল্ডিংয়ের সবাই তো জানে।”
চন্দ্রা কপাল কুঁচকে বলল,
“কেন? কি এমন হয়েছে?”
“সত্যিই জানেন না?”
“না। কখন হয়েছে? কি হয়েছে?”
চন্দ্রার কন্ঠে উৎকন্ঠা।
পরশি বলল,
“রাত ৮ টা ৩০ এর দিক এখানে ছাদ থেকে লাফ দিয়ে একজন সু`ই`সা`ই`ড করেছে।”
“কিহ্! বলেন কি!”
বেশ ঘাবড়ে গিয়েছে চন্দ্রা। ভয়ও পাচ্ছে।
“হ্যাঁ।”
“সত্যি? মজা করছেন না তো? এমন আগে কখনো শুনিনি। আমার ভ`য় লাগছে ভীষণ।”
“ভ`য় পাবেন না। ভয়ের কিছু নেই।”
চন্দ্রা এবার বলল,
“সত্যি করে বলুন আপনি কে? আপনি কি কোনো ভূ`ত? আপনি আ`ত্ম`হ`ত্যা করেন নি তো? আপনি! ”
চন্দ্রার কথা বন্ধ হয়ে আসছে।”
হুট করে চন্দ্রা মাথা ঘুরে পড়ে গেল পরশির সামনে। পরশি বুঝতে পারলো মেয়েটা তাহলে কাহিনি জানতো না। তাই সাহস করে এই সময় ছাদে এসেছিল। এখন কাহিনী শুনে এই হাল। পরশি কি করবে বুঝতে পারলো না। পরশি তৎক্ষনাৎ চন্দ্রাকে তুলে নিল। পরশি শক্তিশালী। তবে পিঠে ঘা নিয়ে অবস্থা খারাপ হয়ে যাচ্ছে। চন্দ্রাকে কোনো মতে টে`নে হিঁ`চ`ড়ে লিফটে করে বাসায় নিয়ে আসলো। একটু আাগেই চন্দ্রা বলেছিল ওরা সিক্সথ বি তে থাকে। তাই পরশি ঐ ফ্ল্যাটের বেল বাজালো।

তূর্ণ ঘুম থেকে উঠে ফ্রেশ হয়ে ডাইনিং রুমে এসেছিল পানি খেতে। বেলের আওয়াজ শুনেই দরজা খুলতে এগিয়ে গেল। দেখল দরজার লকটা খোলা। তার মানে চন্দ্রা বাহিরে গিয়েছিল। তবে ও আসলে তো বেল বাজানোর কথা নয়। তাহলে কে?
তূর্ণ দরজাটা খুলে অবাক হয়ে গেল। তূর্ণ দুজনকে দেখেই অনেক অবাক হয়েছে। চন্দ্রা এভাবে কেন? আর পরশিই আসলো কোথা থেকে?
পরশিও তূর্ণকে দেখে ভীষণ অবাক। পরশি তূর্ণকে বলল,
“ডাক্তার তূর্ণ আপনি?”
“হ্যাঁ, কিন্তু আপনি? আর চন্দ্রার এই অবস্থা কেন? ওকে কোথায় পেলেন? তূর্ণ তাড়াতাড়ি চন্দ্রাকে পাঁজকোলে করে নিয়ে নিল। পরশিকেও ভীতরে আসতে বলল। তূর্ণ চন্দ্রাকে রুমে নিয়ে গেল। সঙ্গে পরশিও গেল। তূর্ণ পরশিকে বলল,
“চন্দ্রার কি হয়েছে? কোথায় পেলেন?”
“ভ`য় পেয়েছেন।”
“ভ`য় পেয়েছ মানে?”
“আমাকে ভূ`ত ভেবেছে হয় তো।”
“কিহ্? কি বলছেন।”
“আসলে আমি ছাদে গিয়েছিলান৷ উনার সাথে দেখা হলো। কথা হলো। কথায় কথায় কাল রাতের কথা বললাম। বলেছি একজন ছাদ থেকে লা`ফ দিয়ে সু`ই`সা`ই`ড করেছে। এই শুনেই ঘাবড়ে গেল। আমাকে বলল আমিই সে কি না। আসলে আমি এই বিল্ডিংয়ে নতুন। তাই আমাকে দেখেনি। এসব শুনে উনি আমাকে ভূ`ত ভেবে ভ`য় পেয়ে ছাদে সে`ন্স`লে`স হয়ে গেল। আমি বুঝতে পারিনি কি করব। কথায় কথায় ফ্ল্যাট নাম্বার বলেছিলন। তাই নিয়ে আসতে পেরেছি।”
এসব শুনে তূর্ণ মনে হচ্ছিলো এখন ও নিজেও মাথা ঘুরে পড়ে যাবে। এসব কি কাহিনি? চন্দ্রা কেন এমন করবে?
তূর্ণর ব্যাপারটা বিশ্বাস হচ্ছে না৷ তূর্ণ এসব ভাবতে শুরু করলো। পরশি তূর্ণকে গভীর ভাবনায় দেখে বলল,
“কি হয়েছে?”
তূর্ণ ভাবনা থেকে বেড়িয়ে এসে বলল,
“কিছু না। চন্দ্রা সাধারণত এমন ঘটনা শুনে নি। শুনে হয় তো ভ`য় পেয়েছে। আর আপনি তো নতুন। আগে দেখেনি তাই এগুলো ভেবেছে।”
তূর্ণ চন্দ্রার চোখে পানির ঝাপটা দিল।৷ চন্দ্রা একটু পর আস্তে আস্তে তাকিয়ে তূর্ণকে দেখতে পেল। তূর্ণকে দেখে উঠেই জড়িয়ে ধরে বলল,
“ভাইয়া! ভাইয়া!”
তূর্ণ শান্তভাবে বলল,
“শান্ত হয়ে যা। কিছু হয় নি। ভাইয়া আছি তো।”
“ভাইয়া কি হয়েছে জানো না।”
“জানি। অফিসার পরশি সব বলেছেন।”
“অফিসার পরশি?”
চন্দ্রা এবার তূর্ণকে ছেড়ে পরশির দিক তাকালো।পরশি হেসে বলল,
“ভ`য় পাবেন না। আমি ভূ`ত না। আমি পরশি। আপনার প্রতিবেশী।”
“যাক বাবা। তাহলে আপনি ভূ`ত না?”
তূর্ণ হেসে বলল,
“এই তুই কবে এতো ভীতু হলি?”
চন্দ্রা শান্ত গলায় বলল,
“ভোরবেলা আমি ছাড়া কেউ ছাদে উঠে না। একজন নতুন মানুষ এসে সু`ই`সা`ই`ডের গল্প শুনালে ভ`য় পাবো না? বেঁচে আছি তাই তো কত!”
তূর্ণ হো হো করে হাসতে শুরু করে।
পরশি বলল,
“আপনি যে জানেন না ঘটনা তা আমি বুঝতে পারিনি। তাই তো বলি এই কাহিনির পরে ভোরে ছাদে একা যায় কে?”
“জানতাম না বলেই গিয়েছিলাম। না হলে যেতাম না।”
“কিন্তু সন্ধ্যা রাতের কাহিনি কিভাবে জানেন না?”
চন্দ্রা স্বাভাবিক ভাবে বলল,
“ভীষণ টায়ার্ড ছিলাম। অসুস্থও ছিলাম। তাই কাল সন্ধ্যাবেলাতেই ঘুমিয়েছিলাম। তাই জানি না।”
তূর্ণও তাল মিলিয়ে বলল,
“হ্যাঁ, আমি এসে খোঁজ করেও জানলাম তুই ঘুমিয়ে গিয়েছিস।”
পরশি একটু হেসে বলল,
“আচ্ছা সরি। আমার জন্য ভ`য় পেয়ে গেলেন।”
“ভ`য় তো পেয়েছি। বাট ইটস ওকে। কিন্তু আমি না হয় না জেনে গেলাম। আপনি কেন জেনেও গেলেন? আপনার ভয় লাগে না?”
পরশি হেসে বলল,
“কতশত লা`শ সামনে থেকে দেখি। আমার ভ`য় টয় কিছু নেই৷ কেটে গিয়েছে।”
তূর্ণ বললেন,
“ভীষণ সাহসী মানুষ ইনি।”
পরশি বলে,
“না, তেমন কিছু না। এমনি অভ্যাস।”

চলবে…..

ভালোবাসা কারে কয়
শবনম মারিয়া
পর্ব ১২

পরশি চন্দ্রার ঘরে বসে কিছুক্ষণ কথা বলল। তেমন বিশেষ কথা না। এমনিই সাধারণ গল্প। চন্দ্রার সাথে কথা শেষ করে পরশি বলল,
“আচ্ছা আমি আজ তাহলে আসি।”
তূর্ণ বলল,
“আসি মানে কি? এসেছেন, বসুন। আমাদের সাথে ব্রেকফাস্টটা করে যান।”
“না, আসলে একটু ব্যস্ততার মধ্যে আছি। অফিসে যেতে হবে তো।”
“আরে অফিসে যাবেন মানে? আপনি না ছুটিতে আছেন?”
“হ্যাঁ, ছিলাম। তবে আর থাকতে পারছি না৷ আমার থানায় কান্ডটা ঘটেছে। মানে কালকের সু`ই`সা`ই`ড কেসটা।”
তূর্ণ আর চন্দ্রা একটু চমকে গেল। চন্দ্রা বলল,
“সু`ই`সা`ই`ড করেছে, আবার কেস কিসের?”
তূর্ণ একটু চন্দ্রার চোখের দিক তাকালো। চোখ দেখে কিছু একটা বুঝতে চাইলো। তবে চন্দ্রার চোখে সেরকম কিছুই নেই। তূর্ণ এরপর বলল,
“আরে এসবে পুলিশ কেস হয়। তুই তো সারাদিন বাসায় বসে থাকিস। চারদিক সম্পর্কে তোর ধারণা আছে?”
পরশি দুই ভাই বোনের কথা শুনে সৌজন্যতার হাসি দিল। এরপর চন্দ্রাকে জিজ্ঞেস করল,
“কেন আপনি কি করছেন? বাহিরে যান না?”
চন্দ্রা বলল,
“হুম, যাই তো। ভার্সিটি যাই। ফাইনাল ইয়ারে। এরপর জবের জন্য ট্রাই করব। আর মাস্টার্সও করব।”
“ওহ্ আচ্ছা। তাহলে তো তুমি এখনও ছোট।”
“জি, আপনাদের কাছে ছোটই।”
তূর্ণ আবার বলল,
“অফিসার আপনি কিন্তু ডাক্তারের নির্দেশ মানছেন না। আপনার ছুটির প্রয়োজন। আপনার রেস্ট নেওয়া দরকার। আপনি কি না অফিস করবেন!”
“আমি ঠিক আছি।”
চন্দ্রা বলল,
“ভাইয়া কি আপুকে চিনো?”
“হ্যাঁ। আমার পেশেন্ট।”
“ওহ্ আচ্ছা।”
পরশি হেসে বলল,
“হ্যাঁ। তোমার ভাইয়া আমাকে এ যাত্রায় বাঁ`চিয়ে দিয়েছেন।”
“কেন আপু কি হয়েছিল?” জিজ্ঞেস করলো চন্দ্রা।
তূর্ণ বলল,
“অফিসার পরশি ভীষণ সাহসী আর দায়িত্বশীল। কয়েকদিন আগে একটা হোটেলে জ`ঙ্গি হা`মলা হলো না? ওখানে গু`লি লেগে আ`হ`ত হয়েছিলেন।”
চন্দ্রা অবাক হয়ে বলল,
“সে কি! ভীষণ রি`স্ক।”
পরশি বলল,
“চিন্তা করবেন না। ঠিক আছি আমি।”
তূর্ণর এতক্ষণ একটা কথা মাথায় ছিল না। হঠাৎ মাথায় আসতেই সে বলল,
“আপনি চন্দ্রাকে যেভাবে টেনে এনেছেন আপনার পিঠে সমস্যা হয় নি? দুই, তিন দিন আগে আপনার সে`লাইটা কাঁ`টা হয়েছে। এখনও কেয়ারফুল থাকতে হবে তো!”
পরশি একটু সংকোচ করে বলল,
“আসলে বাসা পাল্টানো আর এসবে একটু পিঠ ব্যথা বেড়েছে।”
“এই তো দেখেছেন! আপনার হসপিটালে যাওয়া উচিত ছিল অথবা ফোন করা উচিত ছিল।”
চন্দ্রা বলল,
“আপু আমাকে নিয়ে আসার সময় নিশ্চয়ই অনেক ব্যথা পেয়েছেন তাই না?”
“না ঠিক আছি।”
কথাটা পরশি বললেও সত্যিই ভীষণ কষ্ট হচ্ছে পরশির। অনেক কষ্টে ব্যথাটা চেপে আছে।
তূর্ণ বলল,
“আপনি রেস্ট নিন।”
“জি।”
“এভাবে বললে হচ্ছে না ম্যাম। আপনার আসলেই রেস্ট নেওয়া উচিত।”
চন্দ্রা বলল,
“আপু আপনি অন্তত আমাদের সাথে এক কাপ চা খেয়ে যান। আমাকে এখানে নিয়ে আসলেন কষ্ট করে। একটু বসুন। আর এখন তো প্রতিবেশী আমরা। একটু না হয় গল্প করি।”
পরশি চন্দ্রাকে দেখছে শুধু। মেয়ে যেমন রূপে অপ্সরা তেমনি কথাও ভীষণ সুন্দর করে বলে। হয় তো খুব ফ্রেন্ডলি সবার সাথে। ডাঃ তূর্ণও অনেক সুন্দর করে কথা বলেন। দুই ভাই বোনের ব্যবহারই যথেষ্ট সুন্দর।
তূর্ণও বলল,
“ইয়েস অফিসার অন্তত এক কাপ চা খেয়ে যান। না হলে আমরা কষ্ট পাব।”
পরশি বলল,
“আচ্ছা। আপনাদের এতো রিকুয়েষ্ট করার পর তো আর না করতে পারছি না। তবে চন্দ্রা তো মাত্র মাথা ঘুরে পড়ে গেল। ওর তো রেস্ট নেওয়া দরকার। চন্দ্রা বলল,
“অসুবিধা নেই আপু। আমি ঠিক আছি। শুধু ভ`য় পেয়েছিলাম। আর চা হয়ে গিয়েছে। আমাদের বাসায় সকালের চা আমেনা খালা করেন। তিনি করে ফেলেছেন এতক্ষণে। আপনি বসুন।”
পরশি বসে আছে। পিঠে কেমন যেন জ্বলে জ্বলে ব্যথা করছে। খুব কষ্ট হচ্ছে। কি অবস্থা হয়েছে কে জানে! বাসায় না গিয়ে দেখতেও পারছে না। কালো ওড়না দিয়ে আবৃত ছিল পরশির পিঠ। তবে ওড়নাটা হালকা সরে গিয়েছে। পিঠ থেকে ক্ষ`র`ণ হওয়া র`ক্ত সাদা জামায় লেগে আছে। চন্দ্রা যখন এসে বসতে যায়। তখন দেখতে পায় পরশির অবস্থা। চন্দ্রা দেখে ভ`য়ার্ত গলায় চিৎকার করে উঠল।
“র`ক্ত!”
পরশি ফিরে তাকালো। তূর্ণও চন্দ্রার দিক তাকালো। তূর্ণর মনে প্রশ্ন জাগছে,
আবার কি হলো? চন্দ্রা র`ক্ত কোথায় দেখল? আর র`ক্ত দেখে এভাবে চিৎকার করার কি আছে? র`ক্ত দেখে চিৎকার করা মেয়ে চন্দ্রা নয়।
তবুও তূর্ণ জিজ্ঞেস করল,
“হয়েছেটা কি?”
পরশিও জিজ্ঞেস করল,
“কি হয়েছে?”
চন্দ্রা বলল,
“আপু, আপনার পিঠে তো র`ক্ত।”
“কিহ্!” ঘাবড়ে গিয়েছে পরশি।
তূর্ণও ঘাবড়ে গিয়ে তাড়াতাড়ি উঠে আসলো। তূর্ণের কন্ঠে অস্থিরতা।
“দেখি কি হয়েছে?”
তূর্ণ দেখে বলল,
“ওহ্ নো! অফিসার আপনার তো ব্লি`ডিং হচ্ছে কা`টা জায়গা দিয়ে।”
পরশি শান্ত স্বরে বলল,
“অনেক ব্যথা করছে। কিন্তু বুঝতে পারছিলাম না।”
তূর্ণ অস্থির হয়ে গেল। চন্দ্রাকে অস্থির স্বরে বলল,
“এখুনি ফার্স্ট এইড বক্সটা নিয়ে আয়। এ্যান্ড আই নিড ইউওর হেল্প।”
“জি ভাইয়া আসছি।”
চন্দ্রা পরশিকে ওর রুমে নিয়ে গেল। তারপর তূর্ণ পরশির ব্যান্ডেজ করে দিল। আর পরশিকে বলল,
“সাবধানে থাকবেন। ফুল রেস্ট নিবেন৷ আপনারা যে কেন এইসব ব্যাপারে কেয়ারলেস! ঘা শুকাতে অনেক সময় লাগবে। সাবধানে না থাকলে ইনফেকশন হয়ে আরও ঝামেলা হবে।”
“জি। ধন্যবাদ।”
“আপনি কিন্তু অফিস করতে যাবেন না৷”
“ভেবেছিলাম তো যাব। কিন্তু এখন ব্যথা এতোটাই বেড়েছে যে একটু অস্বস্তি হচ্ছে। যেতে পারব না।”
“আমি ওষুধ দিচ্ছি৷ আপনি ওষুধ খেয়ে ঘুমিয়ে পড়বেন। ব্যথাও কমে যাবে।”
“আচ্ছা। আমি তাহলে এখন আসি।”
“আচ্ছা, গিয়ে রেস্ট নিন।”
“একা যেতে পারবেন? নাকি চন্দ্রা এগিয়ে দিয়ে আসবে?”
“না না, তার একদমই দরকার নেই। এটুকু আমি যেতে পারব। এতো বেশিও সমস্যা হচ্ছে না আমার।”
পরশি চলে গেল। পরশির একটু কেমন যেনই লাগছিল। শুধু শুধু ওর জন্য সকালবেলাই তূর্ণ চন্দ্রা অস্থির হয়ে গেল। তারপর আবার এই ব্যথাটার জন্যও এখন অফিসে যেতে পারছে না৷ মাথাটাও বেশ ধরেছে পরশির। এখন রান্না করে খেতে ইচ্ছে করছে না৷ খারাপ লাগছে। পরশি শুয়ে পড়ল।
পরশিকে নিয়ে ব্যস্ত হয়ে গিয়েছিল পর চন্দ্রার কথা আর মাথায় ছিল না তূর্ণর। চন্দ্রার সাথে কথা বলবে ভেবেছিল। কিন্তু মাথায় পরশিকে নিয়েই চিন্তা। তূর্ণ হসপিটালে যাওয়ার জন্য রেডি হচ্ছিল আর ভাবছিল একটু সামান্য ব্লি`ডিং হয়েছে তো। তাহলে তূর্ণ কেন এতোটা অস্থির হয়ে পরেছে? প্রতিনিয়ত এমন কত রোগী আসে। মাথা কাজ করে না তূর্ণর। এই মেয়ের মধ্যে কিছু তো আছে যার কারণে তূর্ণর এমন হচ্ছে। কেন? মেয়েটার মধ্যে একটা মায়া আছে।
তূর্ণ হসপিটালে যাওয়ার আগে দাদা দাদির সাথে দেখা করে নিল। তূর্ণর দাদা, মিরাজ সাহেব জিজ্ঞেস করলেন,
“সকালে কে এসেছিল?”
তূ্র্ণ বলল,
“উনি পরশি৷ আমাদের পাশের ফ্ল্যাটে নতুন এসেছেন।”
চন্দ্রা বেশ আগ্রহ নিয়ে বলল,
“জানেন নানা, আপুটা পুলিশ অফিসার। ভাইয়ার রোগী ছিল। গু`লি লেগেছিল পর ভাইয়াই অপারেশন করেছে। আমাকে নিয়ে এসে আপুর সমস্যা হয়েছে। যেখানে গু`লি লেগেছিল সেখানে ব্যথা পেয়েছেন।”
মিরাজ সাহেব বললেন,
“সে কি? তা এখন কেমন আছে?”
তূর্ণ বলল,
“চিন্তার কিছু নেই। ওষুধ দিয়ে দিয়েছি।”
রোকেয়া বেগম আগ্রহের সাথে বলল,
“আমাদের প্রতিবেশী৷ একদিন গিয়ে দেখা করব।পরিবারে কে কে আছেন? স্বামী? বাচ্চা নেই?”
তূর্ণ বলল,
“উনি অবিবাহিত। হয় তো পরিবারের সাথেই থাকেন। বাবা মা আছে হয় তো।”
রোকেয়া বেগম বললেন,
“আচ্ছা। গিয়ে দেখা করে আসব।”
চন্দ্রা বলল,
“বাহ্ ভাইয়া পেশেন্টদের এতো খোঁজ রাখো?”
তূর্ণ খাবার টেবিলে বসতে বসতে বলল,
“কথা হয়েছিল। তখন জানতে পেরেছি। উনি অসুস্থ ছিল। তাও পরিবারের কেউ আসেননি। তখন জিজ্ঞেস করেছিলাম৷ হয় তো পরিবারে একটু সমস্যা আছে।”
“ওহ্। আপুটাকে কিন্তু ভালোই লেগেছে।”
তূর্ণর খেয়াল হলো চন্দ্রার সাথে কথা বলা দরকার। তূর্ণ বলল,
“চন্দ্রা তোর সাথে একটু কথা ছিল।”
“কি বলবে ভাইয়া? এখনই বলা লাগবে? আমার লেট হয়ে যাচ্ছে ক্লাসে। ভার্সিটি যাচ্ছি।”
“আচ্ছা ঠিকাছে পরে বলব। যা তুই।”
রোকেয়া বেগম বললেন,
“চন্দ্রা লেখা পড়া তো প্রায় শেষ তাই না? তোকে কিন্তু বিয়ে দিবই। তোর ভাইয়ের মতো করলে হবে না।”
চন্দ্রা লেট হয়ে যাচ্ছে বলে দৌড়ে পালালো। তূর্ণও তাড়াতাড়ি নাস্তা করে কেটে পড়লো। নাহলে তার দাদা দাদি আবার শুরু করবে বিয়ে নিয়ে প্যাঁচাল।

বিকেল বেলা রোকেয়া বেগম গেলেন পরশির সাথে দেখা করতে। পরশি ঘুম থেকে উঠেছে একটু আগে। ওষুধ খেয়ে ঘুম ছাড়তে পারছে না। এই সময় কলিং বেল বাজার পর পরশি গিয়ে দরজা খুলল। দরজা খুলে দেখল বেশ বয়স্ক একজন মহিলা। পরশি তাকে সালাম দিল।
সালামের উত্তর দিয়ে রোকেয়া বেগম নিজের পরিচয় দিলেন। বেগম রোকেয়া বলল,
“আমি তোমাদের পাশের বাসার। আমার নাতি নাতনি তূর্ণ আর চন্দ্রা।”
“ওহ্, আসুন। ভিতরে আসুন।”
পরশি ভীতরে নিয়ে একটা চেয়ার এগিয়ে দিল বসতে। রোকেয়া বেগম বলল,
“তোমার কথা শুনলাম চন্দ্রা আর তূর্ণর কাছে।তাই ভবলাম দেখা করে যাই।”
“জি জি ভালো করেছেন দাদু। আমি কি আপনাকে দাদু ডাকতে পারি?”
“অবশ্যই।”
“ধন্যবাদ।”
“তা তুমি কি এখানে একাই? মানে তোমার বাবা মা বা পরিবারের অন্যান্য কেউ নেই?”
“না আমি এখানে একাই এসেছি।”
“ওহ্।”
“আসলে হয়েছে কি আমরা এখানেই স্থায়ী। বাবা মা, ভাই ভাবী নিজেদের বাড়িতেই থাকেন। আমার অফিসের জন্য এদিকে বাসা নিয়েছি।”
“ওহ্। শুনলাম পুলিশে চাকরি করো। পুলিশদের তো যখন তখন ডিউটিতে দৌড়াতে হয়। এজন্য অফিসের কাছে বাসা হওয়া ভালো।”
“জি। দাদু আপনি বসুন আমি চা করে নিয়ে আসি।”
“না না আমি এখন চা খাব না।”
“একটু আনি?”
“এতো মিষ্টি করে বলো না৷ তুমি ভরী মিষ্টি। এভাবে বললে না ও করতে পারব না৷ কিন্তু আমি শুধু ভোরে চা খাই। বেশি খাওয়া মানা।”
“ওহ্। আচ্ছা। কি অবস্থা দেখুন না। আমি কিছুই কিনতে পারিনি এখনও। সবকিছু এলোমেলো। অসুস্থ না হলে সব করে ফেলতাম৷ খাবারও রান্না করা হয় না। বাসায় কিছু নেই। তাই অন্য কিছুও দিতে পারলাম না৷ আপনি প্রথম আসলেন আমার বাসায়।”
“এই এভাবে একদম বলবা না৷ আর তুমি রান্না করো নাই, খাও নাই এটা তো জানতাম না৷ রাতে আমাদের বাসায় খাবা।”
“না না দাদু।”
“দাদু ডেকেছো না? এবার দাদুর কথা ফেলতে পারবে না কিন্তু।”
পরশির খুব ভালো লাগলো রোকেয়াকে। কি সুন্দর করে কথা বলেন। কথায় কি মায়া, স্নিগ্ধতা! কি আপন করে নেন৷ এমন কয়জন পারে? প্রথম দেখাতেই পরশিকে এতোটা আপন এর আগে কেউ করেনি।

.
রাতের বেলা রোকেয়া নিজে গিয়ে পরশিকে ডাকলেন। পরশি আর না করতে পারল না। তাকে বাধ্য হয়ে সেখানে যেতেই হলো। সেখানে গিয়ে মিরাজ সাহেবের সাথে দেখা করে ভালো লাগল পরশির। মিরাজ সাহেব আর রোকেয়া বেগম এই দু’জন মানুষকে পরশির ভীষণ ভালো লেগেছে। চন্দ্রাও বেশ ভালো মেয়ে। আর তূর্ণ! সে ভীষণ ভালো। পরশির এই লোকটার ব্যক্তিত্ব সেদিন থেকেই খুব ভালো লাগে, যেদিন পরশির সাথে বসে গল্প করেছিল। পরশির মন ভালো হয়ে গিয়েছে তূর্ণ কথা শুনে। পরশির দুঃসময়ে তার পাশে কেউ ছিল না। একা ছিল। তখন যেন তূর্ণ তাকে মানসিকভাবে অনেকটা সাপোর্ট করেছে৷ কয়জন মানুষ এমন হয়?
খাওয়া শেষে তূর্ণ আর পরশি গিয়ে ড্রয়িং রুমে কিছুক্ষণ বসল। কথা বলল। তূর্ণ পরশিকে বলল,
“আপনার বাসায় কি ঝামেলা হয়েছে? এইজন্য আপনি আলাদা বাসায় চলে এসেছেন?”
পরশিকে এরকম প্রশ্ন করে তূর্ণই বিভ্রান্ত হয়ে গেল। পরশিকে এভাবে পারসোনাল প্রশ্ন করা ঠিক হয় নি। সে আবার নিজে থেকেই বলল,
“আই এ্যাম সো সরি। পারসোনাল ব্যাপার নিয়ে কথা বলে ফেললাম। আসলে হসপিটালে তো দেখেছিলাম আপনার ভাই মিসবিহেইভ করেছিল আপনার সাথে। তাই ভুলে বলে ফেলেছি। সরি।”
“ইটস ওকে। হ্যাঁ, বাসায় ঝগড়া করেই এসেছি। আপনার একটা কথা খুব ভালো লেগেছিল। সেটা ছিল নিজেকে নিয়ে ভাবা! সত্যিই এখন আমি নিজেকে নিয়ে ভাবতে চাই। তাই সব রকমের ঝামেলা থেকে বের হয়ে আসছি। নিজে ভালো থাকব।”
তূর্ণ পরশির কথা শুনে তার দিকে তাকিয়ে থাকল কতক্ষণ। ওর বিশ্বাস হচ্ছে না পরশির ওর কথাগুলো ভালো লেগেছে।
“কি হলো? কি ভাবছেন?” জিজ্ঞেস করল পরশি।
তূর্ণ বলল,
“কিছু না।”
পরশি বলল,
“আচ্ছা আজ আমি আসি। রাত হয়েছে। থ্যাংকস ফর দ্যা ডিনার। আর সত্যি বলতে আপনার পরিবারের সবার সাথে সময়টা আমার খুব ভালো কেটেছে। দাদু দাদিকে আমার অনেক ভালো লেগেছে।”
“আপনার যখন ইচ্ছা আমাদের সাথে গল্প করতে চলে আসবেন।”
“ধন্যবাদ।”

চলবে….

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here