ভালোবাসা কারে কয়,২৭,২৮
শবনম মারিয়া
পর্ব ২৭
তূর্ণ, পরশি, প্রণয়, চন্দ্রা সকলে মিলে শপিং মল থেকে বের হলো। তূর্ণ প্রণয়কে বলল,
“তুই প্লিজ একটু চন্দ্রাকে নামিয়ে দিস বাসায়। আমরা একটু অন্যদিকে যাব।”
প্রণয় খেয়াল করেছে তূর্ণ ইদানিং এই ভদ্রমহিলার সাথে বেশি সময় কাটাচ্ছে। এতোদিন শুনেছে ছাদে গিয়ে ওদের গল্প হয়। কিংবা একে অপরের বাসায়। কিন্তু আজ তূর্ণকে দেখে কেন এমন লাগলো সামথিং ইজ রং। তূর্ণর মধ্যে কিছু পরিবর্তন তো আছে। তূর্ণ কখনো চন্দ্রাকে নিয়েও শপিংয়ে আসতে চায় না। কারণ এগুলো তার খুব বিরক্ত লাগে। তাই প্রত্যেকবার দাদীকে টেনে নিয়ে আসে চন্দ্রা শপিং করতে। সেখানে আজকে ছুটির দিন না হওয়া সত্ত্বেও তূর্ণ নিজের হসপিটাল থেকে সময় বের করে এই মহিলাকে নিয়ে এসেছে শপিং মলে। চিনে না এটা কেমন কথা? শপিংমলের নাম বললে, শপিং মলে আসলে সেই দোকানটা খুঁজে বের করা এতোটা কঠিন কিছু না। তারপর আবার কৌশলে তাকে শাড়ীও গিফট করে নিল। প্রণয় যতদূর জানে তূর্ণ সবসময়ই সকল নারীদের সাথে একটা দূরত্ব বজায় রেখে চলে। তবে পরশির জন্য আলাদা কেন? তবে কি ভালোবাসায় অবিশ্বাসী মানুষটারও কাউকে ভালো লাগছে?
তূর্ণ প্রণয়কে ডাক দিল। প্রণয় ভাবনা থেকে বেরিয়ে আসলো। তূর্ণ হেসে বলল,
“কি হয়েছে? কি ভাবছিস?”
প্রণয় বলল,
“কিছু না। আচ্ছা যা তুই কোথায় যাবি। চন্দ্রাকে আমি পৌঁছে দিব।
“থ্যাংকস।”
এরই মাঝে চন্দ্রা জিজ্ঞেস করলো,
“ভাইয়া তুমি আর পরশি আপু আবার কোথায় যাচ্ছো?”
তূর্ণ হেসে বলল,
“পরশির প্রোমোশন হয়েছে। সেই সুবাদেই সে বলেছে ছোট-খাটো একটা ট্রিট দিচ্ছেন।”
চন্দ্রা বলল,
“ওয়াও আপু! কংগ্রাচুলেশনস।”
পরশি বলল,
“থ্যাংকিউ সো মাচ। তোমরাও চলো না আমাদের সাথে। ভালো লাগবে।”
চন্দ্রা বলল,
“না আপু। আমি এখন বাসায় যেতে চাচ্ছিলাম।”
তূর্ণ বলল,
“আচ্ছা তুই বাসায় যা।”
প্রণয়, চন্দ্রা আর প্রণয়িনী গাড়িতে উঠে পড়ল। প্রণয় চুপচাপ ড্রাইভ করছে আর কি যেন ভাবছে। কিন্তু চন্দ্রা আর প্রণয়িনী চুপ নেই। তারা দু’জন একে অপরের সাথে কথা বলেই যাচ্ছে। প্রণয়িনী হঠাৎ বলল,
“আন্তি আমার ঘুম আসচে।”
চন্দ্রা ওকে বলল,
“আচ্ছা। তুমি আন্টির কোলে বসেই ঘুমাও। আজ দিনে তো তোমার ঘুমানোর সুযোগ হয় নি। তুমি এখন ঘুমিয়ে পড়ো।”
প্রণয়িনী চন্দ্রার কোলে চন্দ্রাকে জড়িয়ে ধরে ঘুমিয়ে পড়ে কিছুক্ষণ পরে। চন্দ্রা খেয়াল করল প্রণয় কি যেন ভাবছে। চন্দ্রা প্রণয়ের দিক কিছুক্ষণ তাকিয়ে রইল। তারপর অন্যদিকে তাকালো।
চুপচাপ থাকতে থাকতে চন্দ্রার মাথায়ও ভাবনা এসে জেঁকে বসলো। সেই পুরোনো ভাবনাগুলো। কত বছর পর আজ চন্দ্রার এই দিনটা অন্যরকম কেটেছে! চন্দ্রা সারাটাদিন সবকিছু ভুলে ছিল। একটা বারও ওর মায়ের কথা মনে পড়ে নি যতক্ষণ প্রণয়িনী আর প্রণয়ের সাথে ছিল সে! কত সুন্দর একটা দিন উপহার দিল প্রণয় তাকে। কেন দিল? এই দিনটার জন্য হলেও চন্দ্রা সারাটাজীবন প্রণয়ের কাছে ঋণী হয়ে থাকবে। যদিও চন্দ্রা সবকিছুর জন্যই মনে হয় প্রণয়ের কাছে ঋণী। প্রণয়ের ঋণগুলো চন্দ্রার পক্ষে শোধ করা সম্ভব হবে না। চন্দ্রার আবার কষ্ট হচ্ছে। বুঁকের কোণে সেই কয়েক বছর আগের কাহিনিগুলো আবার তাকে কষ্ট দিচ্ছে। আবার মনে পড়ছে সেই দৃশ্যগুলো৷ চন্দ্রা মা, মা করে চিৎকার করছে। ভাবতেই চন্দ্রার শ্বাস আঁটকে আসছে। চন্দ্রার মন চাইছে এখনই গাড়ি থেকে নেমে চলন্ত গাড়িগুলোর সামনে গিয়ে পড়তে। একবারে শেষ হয়ে গেলে আর হবে না এই কষ্টগুলো। এই কষ্টগুলো অনেকদিন ধরে কুঁড়ে কুঁড়ে খাচ্ছে চন্দ্রাকে। চন্দ্রা অস্থির হয়ে যাচ্ছে। ঘেমে যাচ্ছে।
প্রণয় হঠাৎ চন্দ্রার দিক তাকালো। চন্দ্রার কথা এতোক্ষণ তার খেয়ালে ছিল না। সে দেখতে পেল প্রয়ণয়িনী চন্দ্রার কোলে চন্দ্রাকে জড়িয়ে ধরে ঘুমাচ্ছে। প্রণয় চন্দ্রার মুখের দিক তাকিয়ে খেয়াল করল চন্দ্রা অস্থির হয়ে যাচ্ছে। ঘেমে যাচ্ছে। প্রণয় ভয় পেয়ে গেল। সে চন্দ্রাকে উদ্দেশ্য করে বলল,
“চন্দ্রা! কি হয়েছে তোমার?”
চন্দ্রা তাকালো প্রণয়ের দিকে। তারপর কাঁপা স্বরে বলল,
“কি…কিছু না।”
“খারাপ লাগছে?”
“না।”
“এভাবে ঘেমে যাচ্ছো কেন?”
প্রণয় এসিটা বাড়িয়ে দিল। প্রণয় ধারণা করতে পারছে চন্দ্রার কি ভেবে এমন হচ্ছে। যেই ভয়টা পাচ্ছিলো তাই হলো। প্রণয় গাড়িটা থামিয়ে দিল। চন্দ্রার কোল থেকে প্রণয়িনীকে সরিয়ে নিতে চাইলো। চন্দ্রা তখন তাকালো প্রণয়িনীর দিক। আঁকড়ে ধরলো তাকে। কি নিষ্পাপ চেহারা! ঘুমাচ্ছে। কত সুন্দর লাগছে। চন্দ্রার ভালো লাগছে প্রণয়িনীকে দেখে। প্রণয় বলল,
“চন্দ্রা দাও প্রণয়িনীকে পিছনে শুইয়ে দেই। তোমার কষ্ট হচ্ছে।”
চন্দ্রা নরম স্বরে বলল,
“প্লিজ না। থাকুক ও আমার কোলে। ওকে দেখে ভালো লাগছে। দেখুন না কি মিষ্টি লাগছে আপনার ঘুমন্ত মেয়েকে!”
প্রণয় বলল,
“চন্দ্রা আর ইউ শিওর তোমার সমস্যা হচ্ছে না?”
চন্দ্রা বলল,
“না। সমস্যা হচ্ছে না। আপনি গাড়ি থামালেন কেন? আমি ঠিক আছি। আর এসিটা বাড়িয়ে দিলেন কেন? প্রণয়িনীর ঠান্ডা লেগে যাবে। কমিয়ে দিন।”
প্রণয় কতক্ষণ শীতল চোখে তাকিয়ে রইল চন্দ্রার দিকে। তারপর গাড়ি স্টার্ট দিল। চন্দ্রা আরো শক্ত করে জড়িয়ে ধরে আছে প্রণয়িনীকে। তাকিয়ে আছে ওর দিক। মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে। প্রণয়কে উদ্দেশ্য করে বলল,
“কখনো ঘুমানো অবস্থায় মেয়েকে খেয়াল দেখেছেন? কি মায়াময়!”
প্রণয় হেসে বলল,
“রোজ দেখি। ও ঘুমিয়ে যাওয়ার পর ওর দিক তাকিয়ে থাকি। কোলে ঘুমালে জড়িয়ে ধরে থাকে। মাঝে মাঝে আমি ওভাবেই ওকে নিয়ে বসে ঘুমিয়ে যাই ওকে দেখতে দেখতে।”
“কি সৌভাগ্য আপনার!”
প্রণয় হেসে দেয়।
“জানো তো আমার মেয়েকে দেখলে আমারও তাই মনে হয়। আমার ভাগ্য অনেক ভালো। সেই জন্যই আমি আমার মেয়ের বাবা। জীবনে হয় তো কিছু ভালো কাজ করেছিলাম যার ফলস্বরূপ আল্লাহ আমাকে আমার প্রণয়িনী দিয়েছেন। আমার বেঁচে থাকার অবলম্বন।”
চন্দ্রা প্রণয়কে দেখে অবাক হয়। মাঝে মাঝে মনে হয় প্রকৃত বাবা প্রণয়ই। কত ভালোবাসে মেয়েকে। অথচ সব বাবা তাদের মেয়েকে এমন ভালোবাসে না। অন্তত চন্দ্রার সেই সৌভাগ্য হয় নি যে বাবার এমন ভালোবাসা পাবে!
চন্দ্রা নিজের উপরই বিরক্ত হয়ে গেল। ও বারবার চাচ্ছে জীবনের ঐ অধ্যায়টা ভুলে থাকতে। কিন্তু সবকিছুতে কেন এগুলোই মনে পড়ে যায়?
সন্ধ্যা হয়েছে। কিন্তু তূর্ণ তো অন্য কোথাও গেল। বাসায় গিয়ে চন্দ্রার খেয়াল রাখবে কে? এই চিন্তায় প্রণয় পাগল হয়ে যাচ্ছে। তূর্ণ কিভাবে ভুলে গেল চন্দ্রার কথা? সে চন্দ্রার কথা ভুলে পরশির সাথে ঘুরে বেড়াচ্ছে! আর দিন পেল না। তূর্ণর বুদ্ধি লোপ পেল কি করে? না, প্রণয় পারবে না চন্দ্রাকে একা ছাড়তে।
প্রণয় বলল,
“চন্দ্রমল্লিকা।”
চন্দ্রা তাকালো প্রণয়ের দিকে। তারপর বলল,
“বলুন।”
“তুমি হয় তো রাগ করবে জানি। তবে একটা অনুরোধ রাখবে? কেন করছি সেটা তোমার বোঝা উচিত। তুমি কি আরেকটু সময় থাকবে আমাদের সাথে? জানি প্রণয়িনী ঘুমিয়ে গিয়েছে। তারপরেও?”
চন্দ্রা সত্যিই চায় আরো সময় থাকতে। কারণ ও সবটা ভুলে থাকতে চায়। চন্দ্রা বলল,
“আমি যেখানে বলব সেখানে নিয়ে যাবেন? নিয়ে যাবেন আমায় আমার মায়ের কবরস্থানে? প্লিজ। মায়ের কাছে অনেক বছর যাই না। হঠাৎ করে খুব মন চাইছে একটু মায়ের কাছে যেতে। কথা দিচ্ছি বাসায় গিয়ে নিজের ক্ষ`তি করব না।”
প্রণয় আর কিছু বলল না। সে অসহায় দৃষ্টিতে তাকালো চন্দ্রার দিক। তারপর রওনা হলো কবরস্থানের উদ্দেশ্যে। প্রণয় জানে না এরপর কি হবে। তবুও কেন যেন চন্দ্রাকে না করতে পারল না। এখন নিজেকে অপরাধী লাগছে প্রণয়ের। ইশ! সে যদি চন্দ্রাকে না ভালোবাসতো। তাহলে ভালো হতো। সে এতোটা দুর্বল হতো না চন্দ্রার প্রতি। সে চন্দ্রাকে ভালো না বাসলে তাকে না করে দিতে পারতো। ভালোবাসা হচ্ছে একটা দুর্বলতা। সে চন্দ্রাকে ভালো না বাসলে এখন তাকে সোজা মানা করে দিত। এতো কষ্টও হতো না তার। কিন্তু এখন সে চন্দ্রার প্রতি দুর্বল হয়ে ওর কথা শুনছে।
বেশ কিছুক্ষণ পর এসে পৌঁছালো ওরা কবরস্থানে। প্রণয়িনীকে গাড়িতে রেখেই চন্দ্রা আর প্রণয় যায়।
মায়ের কবরের সামনে এসে অনেকক্ষণ চুপচাপ দাঁড়িয়ে থাকে চন্দ্রা। তারপর মোনাজাত ধরে। এরপর কান্না শুরু করে। প্রণয় চন্দ্রাকে এভাবে দেখতে পারছে না। তবুও সহ্য করে নিচ্ছে।
কিছুক্ষণ পরে প্রণয় চন্দ্রার কাঁধে হাত রাখে। তারপর বলে,
“চন্দ্রা, এখন চলো। নিজেকে সামলাও। এভাবে ভেঙে পড়ো না।”
চন্দ্রা তাকায় প্রণয়ের দিক। তারপর বলল,
“চলুন।”
গাড়িতে উঠতে যেয়ে চন্দ্রা পিছনের দিক ফিরে প্রণয়কে বলল,
“শুনুন।”
“বলো।”
চন্দ্রা হঠাৎ করে প্রণয়কে জড়িয়ে ধরে কান্না করে দিল। চন্দ্রার এরকম আচমকা জড়িয়ে ধরাতে প্রণয় অবাক হয়ে যায়। প্রণয় ব্যাপারটা সামলে উঠতে একটু সময় লাগে। অন্যদিকে চন্দ্রা শক্ত করে জড়িয়ে ধরে কান্না করতে করতে বলতে লাগল,
“অনেক অনেক ধন্যবাদ আপনাকে। আমি জানি না আপনি কেন আমার জন্য এগুলো করেন। তবে ধন্যবাদ আপনাকে। ধন্যবাদ এতো সুন্দর একটা দিন দেওয়ার জন্য। এতো বছরে আজকে প্রথম একটা দিন ছিল যে সারাদিনে আমার ঐদিনের কথা মনে পড়ে নি। আমি এই দিনে হেসেছি। প্রণয়িনীর সাথে খেলেছি। এই দিনটাকে উপভোগ করেছি। আজ অনেক বছর পর জন্মদিনে কেক কেটেছি। জানেন তো, আমার ঐ কথাগুলো মনে পড়তো শুধু। ঐ দিনের ঘটনাগুলো আমাকে কষ্ট দেয়। আমি আর মা কেক নিয়ে বসে ছিলাম। বাবা আসলে কেক কাটবো। অনেকক্ষণ পর মা বলেছিলেন, কেক কেটে ফেল চন্দ্রা। বাবা মনে হয় না আসবে। অফিসে অনেক কাজ। আমি বলেছিলাম, বাবা না আসলে আমি কেক কাটবো না। বাবা ঠিকই আসলেন। তারপর মা বাবাকে রুমে ডেকে তার সঙ্গে অনেক চিৎকার চেঁচামেচি শুরু করলেন৷ আমি দরজার বাইরে দাঁড়িয়ে স্পষ্ট শুনলাম মা বলছেন, আমি এখনও সব সহ্য করে তোমার সংসার করছি শুধুমাত্র আমার মেয়ের জন্য। তোমাকে কতবার বলেছিলাম যা খুশি করো, কিন্তু আমার মেয়ের জন্য একটা ভালো বাবা হয়ে থেকো। তোমার এসব পরকীয়া, নারীদের নিয়ে মজা এসবের জন্য আমার মেয়ের উপর যেন কোনো প্রভাব না পড়ে। তুমি শুনলে না। আজ মেয়ের জন্মদিন। কি হতো ঐ মহিলার কাছে না গেলে একদিন? কি হতো মেয়েকে একটু সময় দিলে? আমি আর পারছি না।
মা এগুলো বলে কান্না করছিল। হঠাৎ করে দেখলাম বাবা, না ভুল বললাম। বাবা না। অমানুষ। ঐ অমানুষটা আমার মাকে মা`রা শুরু করল। অনেক মা`রলো। মায়ের কষ্ট আমি সহ্য করতে না পেরে রুমে গিয়ে ঢুকলাম। কান্না করলাম, বাবা মাকে ছেড়ে দাও। অমানুষটা আমার কথা শুনলো না। মা অনুরোধ করল, প্লিজ মেয়ের সামনে এরকম কর না। কে শুনে কার কথা। মাকে বিচ্ছিরি ভাষায় গা`লাগা`লি করল। মায়ের শাড়ি ব্লাউজ টেনে ছিড়ে ফেলল। এরপর চলে গেল। মা এতোদিন এসব সহ্য করলেও আমার সামনে এগুলো ঘটেছে সহ্য করতে পারল না। আমাকে রুম থেকে বের করে দিয়ে দরজা আঁটকে দিল। আমি চিৎকার করে কান্না করতে থাকলাম। শুনেনি মা। আমি রুমের দরজার সামনে বসে থাকলাম। গভীর রাতে অমানুষটা বাসায় ফিরলো। দরজা ভাঙা হলো৷ তারপর শুধু দেখলাম, আমার মা ফ্যানের সাথে ঝু`লছে।”
চন্দ্রা এতক্ষণ সবটা বলছিল প্রণয়কে জড়িয়ে কান্না করেই। এটুকু বলে থামার পর কান্নার মাত্রা বাড়িয়ে দিল। প্রণয় চন্দ্রাকে সামলালো। তারপর চন্দ্রা কান্না থামালো। কিছুটা স্বাভাবিক হলো৷ দুজনেই গাড়ির সাথে মিশে দাঁড়ালো। তারপর চন্দ্রা আবার বলল,
“আমি চেয়েছিলাম লোকটার শাস্তি হোক৷ কিন্তু হলো না। আমার দাদুবাড়ির লোকেরা আমাকে বলতে দেয় নি। নানু আর মামা দুজনেই অনেক ভেঙে পড়েছিলেন। তাদের তখন মাথায় কিছু কাজ করছিল না। আর আমি চাইছিলাম না ঐ পরিবারে থাকতে। আর বাবা নামক অমানুষটা আমাকে তার সাথে রাখতে চাইছিলেন। কিন্তু অবশেষে রাখতে পারে নি। তখন আমার বয়স অনেক অল্প। বাবা মা দুজনকেই অনেক ভালোবাসতাম৷ মা ছেড়ে চলে গিয়েছে আর তাও আমার বাবার জন্য! এটা আমি কিছুতেই মেনে নিতে পারছিলাম না। ডিপ্রেশনে গিয়ে বাজে অবস্থা হলো। মায়ের মতো আমিও চাইছিলাম নিজেকে শেষ করে দিতে। তারপর মায়ের কাছ চলে যাব। কিন্তু পারলাম না৷ এরপর শুরু করলাম নিজেকে আ`ঘাত করা। যখনই কষ্ট হতো অনেক নিজেকে আ`ঘাত করতাম। এরপর থেকে আমি এই দিনটাকে ঘৃণা করি। অনেক চেষ্টা করেছিলাম ভুলে থাকতে সবকিছু। পারি না।”
প্রণয়ের চোখ শীতল। সে নিচের দিক তাকিয়ে আছে এই শীতল চোখদুটো আড়াল করতে। চন্দ্রার কষ্ট তার সহ্য হয় না। চন্দ্রা তাকালো প্রণয়ের দিক। তারপর বলল,
“কিন্তু আজ! আজকের দিনটা আমার এতো সুন্দর কাটবে আমি ভাবিনি। আমি আজ অনেক বছর পরে এই দিনে হেসেছি। নিজের শরীরে একটাও আ`চড় কাটিনি। সারাটাদিন প্রণয়িনী আর আপনি ছিলেন সাথে। দিনটাকে এতো সুন্দর করে দিয়েছেন! কিছু জিনিস এমন ভাবে উপলব্ধি করিয়েছেন! ধন্যবাদ। অসংখ্য ধন্যবাদ প্রণয় ভাইয়া। ধন্যবাদ মিষ্টি প্রণয়িনীকে। দোয়া করি জীবনে সকল রকমের সুখ যেন প্রণয়িনী পায়। আর এখানে নিয়ে আসার জন্যও ধন্যবাদ। যদিও আপনি আমার জন্য যা যা করেন তা এই ধন্যবাদ দিয়ে হয় না। কিন্তু আমার ধন্যবাদ ছাড়া দেওয়ার মতো আর কিছুই নেই।”
“আছে তো। এই যে তুমি যখন আমার সাথে, আমার মেয়ের সাথে থাকো তখন আমাদের ভালো লাগে। আমার মেয়েকে এতো যত্ন করো, আদর করো এগুলো ভালো লাগে। আমার কাছে আমার মেয়ের খুশি অনেক মূল্যবান৷ তুমি তাই দাও।”
চন্দ্রা প্রণয়ের দিক তাকিয়ে হাসে। প্রণয়ও চন্দ্রার দিক তাকিয়ে হাসে। দুজনের চোখাচোখি হয়। কতক্ষণ তাকিয়ে থাকে একে অপরের চোখের দিকে। চন্দ্রা চেয়েও বুঝতে পারে না প্রণয়ের চোখের ভাষা।
চলবে….
ভালোবাসা কারে কয়
শবনম মারিয়া
পর্ব ২৮
তূর্ণ আর পরশি বেশ ভালো কিছুক্ষণ সময় কাটাচ্ছে। দুজনের সময় ভালোই কাটছে। গল্পে গল্পে পরশি তূর্ণকে জিজ্ঞেস করল,
“আচ্ছা আজ চন্দ্রার জন্মদিন ছিল। তাহলে আপনি সেলিব্রেট করলেন না কেন?”
তূর্ণ কতক্ষণ চুপ রইল। পরশি তাকিয়ে আছে তূর্ণর উত্তর পাওয়ার জন্য।
তূর্ণ বলল,
“আসলে ও কখনো সেলিব্রেট করে না ওর বার্থডে। পছন্দ করে না।”
“এটা কেমন কথা? জন্মদিন কেন সেলিব্রেট করবে না? কি হাসিখুশি মিষ্টি একটা মেয়ে। ওর মতো মিষ্টি মেয়ে আমি কমই দেখেছি। এতো ভালো লাগে ওকে আমার! আপনার আমাকে বলা উচিত ছিল ওর জন্মদিনের কথা। আমরা সকলে মিলে সারপ্রাইজ দিতাম।”
“ব্যাপারটা ওর পছন্দ হতো না। ও ওর জন্মদিনে রুমের মধ্যে থাকে একা। আজ বের হয়েছিল কারণ পরীক্ষা চলছে। আর আমার বন্ধুর মেয়ে ওকে এতো পছন্দ করে ওর জন্মদিন শুনতেই ওর সাথে সময় কাটাতে চেয়েছে। তাই বাধ্য হয়ে।”
“কিন্তু কারণটা কি? ভীষণ অদ্ভুত! নিজের জন্মদিনে কে এমন করে?”
“আসলে চন্দ্রা ওর জন্মদিনের দিন ওর মাকে হারিয়েছিল। ছোট ছিল তো তাই ব্যাপারটা নিয়ে একটু ট্রমাটাইজড।”
“ওহ্। আই এ্যাম সো সরি।”
“ইটস ওকে।”
পরশির মন খারাপ হয়ে গেল। ও তূর্ণকে বলল,
“সরি। আমি না আর বেশি কথা বলব না৷ বেশি কথা বলেই আপনার মুড অফ করে দেই প্রত্যেকবার।”
“একদম না। আপনি প্রত্যেকবার আমার মুড কোথায় খারাপ করলেন? আপনি তো মজা করেন অনেক। হেসে হেসে গড়াগড়ি খাই।”
“আপনি কম মজা করতে জানেন না।”
দুজনের গল্প চলতে থাকলো। তারপর রেস্টুরেন্ট থেকে যখন বের হলো পরশির সামনে একটা ছোট বাচ্চা বেলী ফুলের মালা নিয়ে আসলো। পরশির বেলী ফুলের মালা খুব পছন্দ। সে বেলী ফুলের মালা কিনে নিল বাচ্চাটার কাছ থেকে। তূর্ণ খেয়াল করল ব্যাপারটা। সামান্য হাসলো পরশির দিক তাকিয়ে। এই মহিলার কাজ কর্মগুলো সুন্দর। ভালো লাগে তূর্ণর। একটা বেলীফুলের মালা নিয়ে কতটা খুশি! আপন মনে মালাটা হাতে পেঁচিয়ে সেটার দিক তাকিয়ে হাসছে!
তূর্ণ বলল,
“বেলীফুলের মালা পছন্দ?”
“ঐ আর কি। মাঝে মাঝে ভালো লাগে। আমার ফুল পছন্দ। আমি নিজেকে নিজে কোনো উপলক্ষে কিংবা একটা টাফ উইকেন্ডের পর ফুল দিই। ভালো লাগে।”
“বাহ্। শুনে ভালো লাগল।”
পরশি হাসলো। তূর্ণ একটা রিকশা ঠিক করল। তারপর দুজনে উঠে বসল। তূর্ণ যথা সাধ্য চেষ্টা করছে চেপে বসার। যেন পরশির অসুবিধা না হয়। তূর্ণ পরশির দিক তাকিয়ে খেয়াল করল পরশি আকাশের দিক তাকিয়ে আকাশ দেখছে। ঠোঁটে লেপ্টে আছে সামান্য হাসি। তূর্ণ চোখ ফিরিয়ে নিল। এভাবে একজনের দিক তাকিয়ে থাকলে সে আনইজি ফিল করতে পারে।
চন্দ্রা বিদায় জানিয়ে গাড়ি থেকে নেমে গেল। প্রণয় গাড়ি থেকে বের হয়ে দৌড়ে চন্দ্রার কাছে এসে বলল,
“চন্দ্রা শুনো।”
চন্দ্রা ফিরে তাকায়। প্রণয় বলল,
“বাসায় গিয়ে শান্ত থেকো। প্লিজ পাগলামি করো না।”
চন্দ্রা নরম স্বরে উত্তর দিল,
“আজ কেন যেন কিছুই করতে ইচ্ছে করছে না। ক্লান্ত লাগছে অনেক। বাসায় গিয়ে ঘুমাবো।”
“টেক কেয়ার।”
চন্দ্রা মাথা নেড়ে সম্মতি জানায়। দুজনেই দুইদিকে ফিরে চলে যাওয়া ধরে। চন্দ্রা আবার পিছের দিক ফিরে ডাক দেয়,
“প্রণয় ভাইয়া!”
প্রণয় ফিরে তাকায়।
“হুম?”
“প্রণয়িনী ঘুমিয়ে পড়েছে। সাবধানে গাড়ি চালিয়েন৷ দেখেন ও যেন আবার সীটে পড়ে গিয়ে ব্যথা না পায়।”
“আচ্ছা। আসি।”
প্রণয় চলে যায়। চন্দ্রা তাকিয়ে থাকে প্রণয়ের যাওয়ার দিক। তারপর নিজেও উপরে উঠে যায়। বাসায় গিয়ে নানা নানুর খোঁজ নেয়। তাদের সাথে কথা বলে। বিছানার কোণায় বসে ছিলেন রোকেয়া। চন্দ্রা গিয়ে নানুর কোলে মাথা রেখে শোয়। তারপর বলে,
“নানু?”
“বল।”
“মাকে নিয়ে একটু গল্প বলবে?”
চন্দ্রার দিক তাকিয়ে থাকেন রোকেয়া বেগম। তারপর বলে,
“তোর চুলগুলো কেমন যেন হয়ে আছে। আয় তেল দিয়ে দেই।”
এই বলে উঠতে যান রোকেয়া। চন্দ্রা উঠতে দেয় না। জড়িয়ে ধরে রোকেয়াকে। তারপর বলে,
“প্লিজ নানু। বলো না মায়ের কথা। আমার খুব শুনতে ইচ্ছে করছে।”
পাশে বসে থাকা মিরাজ সাহেব বললেন,
“চন্দ্রা তোর মায়ের গল্প শুনে তুই কষ্ট ছাড়া আর কিছুই পাবি না। আর কত কষ্ট পাবি?”
“কষ্ট পেয়েছি। মাকে তো পাই নি। মায়ের গল্প শুনে ক্ষণিকের জন্য মাকে কল্পনা করতে চাই। হারিয়ে যেতে চাই মায়ের মাঝে। প্লিজ বলো না।”
রোকেয়া বললেন,
“আয় মাথায় তেল দিয়ে দিচ্ছি আর মায়ের গল্প বলছি।”
চন্দ্রা তাড়াতাড়ি উঠে তেলের বোতলটা এনে নানুর হাতে দিয়ে তার সামনে বসল। দেখে চোখ ভার হয়ে আসলো রোকেয়ার। এই জীবনে সে অনেক কিছু দেখেছে। নিজের মেয়ের অস্বাভাবিক মৃত্যু। তারপর মেয়ের শেষ অংশটুকু, তার নাতনি, চন্দ্রাকেও কষ্ট পেতে দেখেছে। রোকেয়া কত কেঁদেছেন চন্দ্রার জন্য। আল্লাহর কাছে দোয়া করেছেন যেন তিনি চন্দ্রাকে ধৈর্য দেন৷ চন্দ্রার জীবনে একটু সুখ এনে দিতে চেয়েছেন।
রোকেয়া চন্দ্রার চুলে বিলি কাটতে কাটতে বলা শুরু করলেন,
“তোর মা অনেক ভালো ছাত্রী ছিল। ডাক্তারি পড়াবে তোর নানার শখ ছিল। ডাক্তারি পড়ার সুযোগ হলো। তোর মা তোর মতো রূপবতী ছিল। গুণে কোনো কমতি ছিল না। চুলগুলো তোর মতোই ছিল লম্বা আর ঘন। পড়াশোনা করতে ভালোবাসতো। ও একটু ভিন্ন রকমের ছিল। অন্যায় দেখতে পারতো না। প্রতিবাদ করতো। তোর মতো ভাই ভক্ত ছিল। তুই যেমন প্রতি অক্ষরে অক্ষরে তূর্ণ সব কথা শুনিস, তোর মাও তোর মামার সব কথা মেনে চলতো। ডাক্তারি পড়তে গিয়ে দেখা হয় তোর বাবার সাথে। প্রেম হয়। তোর বাবা বড় ছিল। উপরের ইয়ারে। বিয়ে করতে চায়। তোর মাও রাজি হয়। কিন্তু তোর মামার কড়া আদেশ পড়া আগে শেষ করতে হবে। ঠিকই পড়া শেষ করলো। চাকরিও পেল। এরপর বিয়ে দিলাম। মেয়ে আমার সাংসারিক ছিল। সংসার আর স্বামীর সব দায়িত্ব পালন করতো। এরপর কোল আলো করে তুই আসলি। তোর জন্মের সময় কতো রকমের দুশ্চিন্তা তোর মায়ের। জন্মের পর শুধু তোর দিক তাকিয়ে থাকতো। তুই ঘুমালে তাকিয়ে তোকে দেখতো। ঘুমাইতে চাইতো না। আর বলতো, মা আমার মেয়ে একদম চাঁদের টুকরা হয়েছে। ওর নাম চন্দ্রা রাখব। তোকে চন্দ্রা কম, আমার চাঁদের টুকরা বলে বেশি ডাকতো। তোর কিছু হলেই চিন্তিত হয়ে যেত। তুই ছিলি ওর জান, ওর দুর্বলতা, ওর শক্তি। তোকে নিয়ে হাজারো স্বপ্ন ছিল।”
চন্দ্রা ডুবে গিয়েছিল ওর মায়ের কল্পনায়। চোখ বন্ধ করে ভাবছিল ওর মা ওর মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে। ও হাসছে। ওর মা ওর কপালে চুমু খেয়ে বলছে, আমার চাঁদের টুকরা। চন্দ্রা জড়িয়ে ধরে মায়ের ঘ্রাণ নিচ্ছে। মাকে জড়িয়ে ধরেছে শক্ত করে। চন্দ্রা বলছে, মা তুমি যাবে না তো?
ওর মা বলছে, আমি আমার চাঁদের টুকরাকে রেখে কই যাব?
চন্দ্রা অনুনয় করে বলছে, গেলে আমায় সঙ্গে নিও মা৷ গেলে আমায় সঙ্গে নিও।
বাস্তবে চন্দ্রা চোখ বন্ধ করে বিড়বিড় করে বলছে। মিরাজ সাহেব আর রোকেয়া একে অপরের দিকে অসহায় দৃষ্টিতে তাকালো। মিরাজ সাহেব বলল,
“নানুভাই আর না।”
চন্দ্রার হুঁশ হয়। সে তাকায় নানার দিক। রোকেয়া বললেন,
“কষ্ট পেও না৷ তুমি কষ্ট পাও তোমার মা কোনোদিন চায় না। তুমি সুখী থাকো। যেভাবে পারো সুখী থাকো। দোয়া করি আল্লাহ তোমাকে সুখী করুক।”
চন্দ্রা উঠে চলে যায়। যাওয়ার আগে বলে,
“আমি ঘুমাতে যাচ্ছি। অনেক ক্লান্ত। সকালে পরীক্ষা। পড়তেও হবে। আমাকে একটু একা থাকতে দাও।”
নিজের রুমে গিয়ে কান্না করতে থাকে চন্দ্রা। অনেক কষ্ট হয় চন্দ্রার। কিন্তু সে নিজেকে আঘাত করে না। শুয়ে শুয়ে কান্না করতে থাকে। কান্না করতে করতে ঘুমিয়ে পড়ে।
তূর্ণ বাসায় এসে চন্দ্রার কথা জিজ্ঞেস করলে আমেনা খালা জানান, চন্দ্রা ঘুমিয়েছে। ডিস্টার্ব করতে মানা করেছে।
তূর্ণ দরজার লকের এক কপি চাবিটা আমেনা খালার হাতে দিয়ে বলে,
“আমি চন্দ্রাকে নিজ চোখে দেখতে চাই। মেয়েটা আজ কেমন আছে তা আমার ভালো করেই জানা। যান গিয়ে সব ঠিক করেন।”
আমেনা রুমে গিয়ে দেখতে পেল চন্দ্রা সত্যিই ঘুমাচ্ছে । তারা যেমন ভেবেছিলেন তেমন না৷ আমেনা খালা তূর্ণকে ডাকলেন। তূর্ণ গিয়ে দেখল চন্দ্রাকে। দেখে একটা স্বস্তির নিঃশ্বাস ছাড়লো।
রুমে গিয়ে প্রণয়কে ফোন করল। প্রণয় বারান্দায় দাঁড়িয়ে ছিল। আকাশ দেখতে। বিষন্ন মনে বিষন্ন আকাশ। আকাশকেও বিষন্ন লাগছে। কারণ কুয়াশায় ঢেকে আছে চারিপাশ। আকাশ সেভাবে দেখাই যাচ্ছে না৷ কুয়াশা পরিমাণ বিষন্নতা ছেঁয়ে আছে প্রণয়ের মনে। সে রাতের বেলা চন্দ্রাকে ফোন করতে চেয়েছিল। কিন্তু কেন যেন করল না। ফোনটা বিছানায় ফেলে এসে এখানে দাঁড়িয়ে আছে অনেকক্ষণ ধরে।
চন্দ্রাকে ফোন করতে গিয়ে প্রণয়ের মন চাইলো না। কারণ প্রণয়ের মন বলছে চন্দ্রা আজ পাগলামি করবে না। কারণ চন্দ্রা তাকে বলেছ, আজ সে কিছু করবে না৷ চন্দ্রাকে আজ পর্যন্ত না করলে ও একটা কথাই বলতো আমাকে আটকানোর চেষ্টা করে লাভ নেই অথবা হেসে মজা করে সম্মতি জানাতো। যার মানে সে শুনবে না। কিন্তু আজ চন্দ্রার কথায় ব্যতিক্রম কিছু ছিল। তাই প্রণয়ের ভরসা চন্দ্রা কিছু করবে না।
প্রণয় গভীর ভাবনায় ডুবে দিল। তার চন্দমল্লিকার ভাবনায়। হঠাৎ করে কানে ভেসে আসলো মেয়ের কান্না। প্রণয় রুমে গেল। দেখল ফোন বাজার কারণে প্রণয়িনী উঠে পড়েছ। প্রণয়িনীকে কোলে নিয়ে আবার ঘুম পাড়িয়ে তারপর তূর্ণর ফোন ব্যাক করল।
“হ্যাঁ, তূর্ণ বল।”
“একটু কল দিলাম কেটে দিলি কেন?”
“ফোনের আওয়াজে প্রণয়িনী উঠে পড়েছিল তাই। ওকে ঘুম পাড়িয়ে তারপর ব্যাক করলাম।”
“ওহ্, এক্সট্রিমলি সরি রে। বেচারি উঠে গেল আমার জন্য।”
“ইটস ওকে।”
“থ্যাংকস প্রণয়।”
“কেন?”
“তোর মতো বন্ধু পেয়ে আমি অনেক লাকি ফিল করছি।”
“কি হয়েছে বলবি তো?”
“বাসায় এসে দেখলাম চন্দ্রা ঘুমিয়ে পড়েছে। কোনো প্রকারের পাগলামি করে নি। দাদু বলল শুধু ফুপির গল্প শুনেছে। আর কিছু না। আমি অবাক ও ফুপির গল্প শুনেও রিঅ্যাক্ট করল না। চুপচাপ ঘুমিয়ে পড়ল!”
“যাক, আমি ভয়ে ছিলাম ওকে নিয়ে।”
“ও কি সারাদিনে কোনো রকম পাগলামি করেনি? রিঅ্যাক্ট করেনি?”
“একদম না। প্রণয়িনীর সাথে অনেক সুন্দর সময় কাটিয়েছে। দুইজন এতো হাসিখুশি ছিল! খুব এনজয় করেছে আজ।”
“সত্যি?”
“হ্যাঁ। দাঁড়া তোকে ওদের ছবি পাঠাই। তাহলে বুঝবি।”
প্রণয় তূর্ণকে চন্দ্রা আর প্রণয়িনীর ছবি পাঠালো। তূ্র্ণ ছবিগুলো দোখে অবাক। সত্যিই অনেক খুশি খুশি লাগছে চন্দ্রা আর প্রণয়িনীকে। তূর্ণ বলল,
“এই তুই আর তোর মেয়ে জাদু জানিস ভাই। মানে কিভাবে!”
“আমি অনেক ভেবে সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম। আমার মন বলছিল একটু ট্রাই করে দেখি। চন্দ্রা সবকিছু ভুলে ছিল সারাক্ষণ। তাই আর সমস্যা হয় নি।”
“আমি সত্যিই তোর কাছে ঋণী।”
“এই একদম মেরে ফেলব শালা। আসছে আমার সাথে ফর্মালিটি করতে। সর তো এখান থেকে।”
তূর্ণ হাসলো। প্রণয়ও হাসলো। প্রণয় এবার কৌতুহলী হয়ে তূর্ণকে জিজ্ঞেস করল,
“আচ্ছা, তূর্ণ।”
“কি?”
“তোর কাহিনি কি বল তো?”
“কি কাহিনি?”
“অফিসারের সাথে।”
“অফিসারের সাথে মানে?”
“শাড়ী দিলি যাকে।”
“এই কি বলিস! পরশির সাথে কি কাহিনি হবে। আমরা জাস্ট গল্প করি। আমাদের মধ্যে ভালো বন্ধুত্ব হয়েছে।”
“আচ্ছা, তবে ভালো বন্ধুত্ব হলে মানুষ শাড়ী দেয়?”
“এই ব্যাপারটাকে এতো সিরিয়াস নিচ্ছিস কেন? শাড়ী তো তুইও চন্দ্রাকে দিলি তো?”
প্রণয় এবার একটু থেমে যায়। তারপর বলে,
“তো তোর বোনকে আমি শাড়ী দিতেই পারি। তাও জন্মদিন ওর।”
“হ্যাঁ। একজন মেয়ে আমার সাথে গিয়েছে। তো শাড়ীর বিলটা আমারই দেওয়া উচিত।”
“আচ্ছা। আচ্ছা।”
“জি। বেশি ভাববেন না মিস্টার প্রণয় এহ্সান।”
“আচ্ছা ভাবলাম না। তোকে নিয়ে ভাবাও যায় না। তোর মনে এসব আসলে আরও আগে আসতো। এখন কি আর বয়স আছে নাকি এসবের!”
“সেটাই।”
“আচ্ছা গুড নাইট।”
“গুড নাইট।”
চলবে…..