ভালোবাসা কারে কয়,৪৯,৫০
শবনম মারিয়া
পর্ব ৪৯
তূর্ণ আর পরশির মধ্যে আর কথা হয়নি। পুরো একটা সপ্তাহ হয়ে গিয়েছে ঐ দিনের পর। দুজনেই অনেক কষ্টে আছে। কিন্তু কেউ কারো সাথে কথা বলছে না। পরশি কয়েকবার চেষ্টা করেছে তূর্ণর সাথে কথা বলার। তূর্ণ কথা বলেনি। পরশি ডাকলেও তূর্ণ না শোনার ভান করে চলে যায়। এসবে পরশি আরও কষ্ট পায়। তূর্ণর এরকম আচরণ মেনে নিতে পারছে না পরশি। পরশির কষ্ট দেখতে পারছেন না রেহানা। অন্যদিকে তূর্ণর বাসার সবাইও জেনেছে তূর্ণ আর পরশির মাঝে ঝামেলা হয়ে দাঁড়িয়েছে তূর্ণর মা। এটা শোনার পরেই তূর্ণর বাবা, তোহরাব সাহেব ছেলেকে বলেছেন সে যা করছে ঠিক করছে। রোকেয়া আর মিরাজ সাহেবও নারাজ তূর্ণর মায়ের উপর। যেই মহিলা ছেলেকে ফেলে রেখে নিজের ক্যারিয়ারের প্রাধান্য দিয়েছে তাকে একদমই পছন্দ করেন না রোকেয়া আর মিরাজ। তোহরাব সাহেব চাইতেন পরশির সাথে তূ্র্ণর বিয়ে হোক। তার মনে হয়েছে পরশি দায়িত্বশীল। কিন্তু এই মেয়ের সাথে রেহানার সম্পর্ক আছে শুনেই তিনি মেনে নিতে পারছেন না। তিনি ভাবছেন রেহানা যেমন চাকরির জন্য সংসার ছেড়ে দিয়েছিল পরশিও তার কাছ থেকে তাই শিখবে।
রেহানাও অনেক দুঃখিত। তার জন্যই এসব হচ্ছে। পরশি মেয়েটা ভীষণ কষ্ট পাচ্ছে তার জন্য। সে মন থেকে চেয়েছিল পরশি যেন সুখে থাকে। সে চায় তূর্ণ পরশির মতো একজন মেয়ের সাথে জীবন পাড় করুক। পরশি তূর্ণকে অনেক সুন্দর করে সামলে নিতে পারবে। আর তূর্ণও পরশিকে সামলে নিতে পারবে। কিন্তু ওদের দুজনের মধ্যে এতো বড় ঝামেলা হলো শুধু মাত্র তার জন্য। কি করবে এখন সে? পরশিকে অনেকবার বলেছে তূর্ণকে বোঝাতে
সে চলে যাবে। তার কাছে ওদের দুজনের ভালো থাকা বেশি গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু পরশি এটা মানতে চায় না। পরশি পরিষ্কারভাবে রেহানাকে বলে দিয়েছে তূর্ণ তাকে না মানলে সেও তূর্ণকে মানবে না। তূর্ণ যদি সত্যিই পরশিকে ভালোবাসে তবে সে তার ভুল বুঝবে আর রেহানাকে মেনে নিবে। পরশি চায় তূর্ণ আর রেহানার মধ্যে সব ঠিক হোক। পরশি, জানে দুই মা ছেলে একে অপরকে ভালোবাসে। শুধু তাদের মধ্যে রয়েছে ভুল বুঝাবুঝি। এই ভুল বুঝাবুঝিটা দূর হলে তূর্ণ আর তার মায়ের কষ্ট কমে যাবে। পরশি এতোদিন ধরে রেহানার কাছে গল্প শুনেছে। আর তূর্ণর কাছে শুনেছে তার গল্পগুলো। পরশি চায় দুজনের মধ্যে সব ঠিক হোক। পরশি আর তূর্ণর মধ্যে সব ঠিক হয়ে যাক, আগের মতো হয়ে যাক। কিন্তু তূর্ণর ইগোর কারণেই কিছু সম্ভব হচ্ছে না। পরশির কোনো রকমের কথা শুনছে না তূর্ণ। এই নিয়ে পরশি অনেক কষ্ট পাচ্ছে। তূর্ণর সাথে কথা না বলে থাকতে কষ্ট হচ্ছে পরশির। তূর্ণ কি তা বুঝে না?
তূর্ণও পরশিকে দেখে কষ্ট পায়। কিন্তু রাগ কমিয়ে কথা বলতে পারে না। মাঝে মাঝে ইচ্ছে হয় জড়িয়ে ধরুক পরশিকে। কিন্তু পরশি তাকে চায় না এটাই তূর্ণ ভাবে। কারণ পরশি যদি তূর্ণকে চাইতো তবে সে তূর্ণকে বেছে নিতো। তূর্ণর জন্য রেহানার সাথে সম্পর্ক বিচ্ছিন্ন করতেই পারতো। কিন্তু পরশি তা করল না। এটাই তূর্ণকে বেশি কষ্ট দিচ্ছে। তূর্ণকে প্রতি মুহুর্তে ভাবিয়ে তুলছে, পরশি কি তাকে এক্টুও ভালোবাসে না? ভালোবাসলে কিভাবে এরকম দূরে দূরে থাকতে পারছে? হ্যাঁ পরশি তার সাথে কথা বলতে চেয়েছে। কিন্তু তূর্ণ মনে করে পরশি তার সাথে মিস রেহানাকে নিয়েই কথা বলবে। আর তূর্ণ তার সম্পর্কে কিছু শুনতে ইচ্ছুক না।
তূর্ণর কিছু ভালো লাগছে না। মন ভালো করার জন্য ভাবলো দূরে কোথাও থেকে ঘুরে আসা যাক। কিন্তু একা গেলেও সে পরশির ভাবনায় ডুবে থাকবে। তূর্ণ অনেক ভেবে চিন্তে প্রণয়কে ফোন দিল। প্রণয় অফিসের কাজে ব্যস্ত ছিল। কয়েকবার তূর্ণর ফোন পেয়ে প্রণয় কল ব্যাক করে চিন্তিত স্বরে বলল,
“হ্যালো তূর্ণ? কি হয়েছে? কোনো ঝামেলা হয়েছে আবার?”
তূর্ণ বলল,
“না। ভালো লাগছিল না তাই কল দিয়েছি।”
“আমি ভবলাম কি না কি হলো। তুই কোথায় এখন? হসপিটালে না?”
“না। ছুটি নিয়েছি।”
“কেন?”
“কাজে মন দিতে পারছি না। মনে হচ্ছে পেশেন্টকে ভুল ট্রিটমেন্ট দিয়ে বসবো।”
“তূর্ণ, প্লিজ স্বাভাবিক হওয়ার চেষ্টা কর ভাই। এরকম তো চলবে না।”
“হু। ভাবছিলাম একটা ব্রেক নিবো।”
“অবশ্যই। তোর একটা ব্রেক দরকার।”
“চল কোথাও ঘুরে আসি।”
“কোথায়?”
“এই শহরের বাইরে। চল কক্সবাজার যাই। মন খারাপ করলে সমুদ্র দেখতে ভালো লাগে।”
“হু। যাওয়া যায়৷ কবে যাবি?”
“আজকেই।”
“আজকে তো একটু ঝামেলা হয়ে যায়।”
“কেন? আজ কি হয়েছে?”
“মা, খুলনা গিয়েছে আপুর বাসায়। প্রণয়িনীকে কি যে করব বুঝতে পারছি না। কাল রাতে কান্নাকাটি করেছে বাবাকে রেখে ফুফির বাসায় সে যাবে না। পরে আর কি রেখে দিয়েছি। আজ অফিসে নিয়ে এসেছি। চন্দ্রার সাথে আছে এখন।”
“তাহলে প্রণয়িনীকে নিয়ে চল।”
“মাথা খারাপ? কয়েকদিন আগে সুস্থ হয়েছে। বাচ্চা মানুষ জার্নি করে অসুস্থ হয়ে যাবে।”
তূর্ণ ভাবলো প্রণয় ঠিক কথা বলছে। কি করা যায় ভাবছে তূর্ণ। তারপরেই মাথায় আসলো চন্দ্রার কথা। তূর্ণ বলল,
“প্রণয়িনীর ব্যবস্থা হয়ে যাবে। চন্দ্রার কাছে থাকবে।”
“কি বলছিস? অনেক বিরক্ত করবে চন্দ্রাকে। এমনিই কম বিরক্ত করছে না।”
“অসুবিধা নেই। চন্দ্রার সাথে আমি কথা বলব। তোর চিন্তা করতে হবে না। তুই শুধু বের হয়ে পড়।”
প্রণয় বলল,
“ঠিকাছে।”
চন্দ্রা আর প্রণয়িনী দুজনেই অনেক খুশি হলো দুইদিন একসাথে থাকবে শুনে। তাদের খুশি আর দেখে কে।
.
প্রণয় নিচে গাড়ি নিয়ে দাড়িয়ে আছে তূর্ণর জন্য। তূর্ণ নিচে নেমে গাড়িতে উঠলো। তখন পরশি দেখল তূর্ণকে। মনে মনে প্রশ্ন জাগছে তূর্ণ এখন কোথায় যাচ্ছে। কিন্তু জিজ্ঞেস করতে পারল না।
পরেরদিন বিকালে চন্দ্রা আর প্রণয়িনী ছাদে উঠলো। চন্দ্রা প্রণয়িনীকে নিয়ে ছাদে গেল। সেখানে চন্দ্রা দেখতে পেল পরশি আর রেহানাকে। পরশি চন্দ্রা আর প্রণয়িনীকে দেখে এগিয়ে গেল। পরশি জিজ্ঞেস করল,
” চন্দ্রা আজ এই সময় ছাদে যে? সাথে আবার প্রণয়িনীও আছে! কেমন আছো তুমি?”
প্রণয়িনী বলল,
“আমি ভালো আচি। তুমি ভালো আচো পুলিশ আন্তি?”
“হ্যাঁ।”
পরশি পুলিশ আন্তি শুনে হেসে দিয়ে জিজ্ঞেস করল,
“পুলিশ আন্টি কে বলেছে?”
“আনকেল বলেচে। বলেচে তুমি আমার পুলিশ আন্তি আর এটা আমার চন্দা আন্তি।”
পরশি আর চন্দ্রা দুজনেই হাসলে প্রণয়িনীর কথায়। চন্দ্রা বলল,
“প্রণয়িনী বাসায় আছে দু’দিন। ওকে নিয়ে ছাদে আসলাম তাই এই সময়।”
“প্রণয়িনী এখানে? মানে ও তো কখনো থাকে না।”
“প্রণয় ভাইয়া আর তূর্ণ ভাইয়া ঘুরতে গিয়েছে। আন্টি বাসায় নেই। তাই তূর্ণ ভাইয়া প্রণয় ভাইয়াকে বলেছে প্রণয়িনীকে আমার কাছে রেখে যেতে।”
“তূর্ণ ঘুরতে গিয়েছে?”
চন্দ্রা আড়চোখে একবার রেহানার দিক তাকালো। তারপর বলল,
“হুম।”
পরশি এটা শুনে কষ্ট পেল। তূর্ণ এমন পরিস্থিতিতে ঘুরতে যাচ্ছে? কিভাবে পারল? এখানে পরশি কষ্ট পাচ্ছে। আর ওখানে তূর্ণ ঘুরতে গিয়েছে। একটাবারের জন্যও ওর কথা ভাবেনি? তূর্ণর কি কষ্ট হয় না? এমন কেন তূর্ণ! এগুলে ভেবে পরশির আরও খারাপ লাগছে।
রেহানা এগিয়ে আসলেন চন্দ্রা আর পরশির দিক। তারপর বলল,
“কেমন আছো চন্দ্রা মা?”
তূর্ণর পরিবারের সকলে রেহানাকে অপছন্দ করলেও তার সাথে কথা বলে। রেহানা প্রায় তূর্ণর সাথে দেখা করতে আসতো ছোটবেলায়। আর যত যাই হয়ে যাক চন্দ্রা কখনো তার মামা মামির সাথে খারাপ আচরণ করেনি। বরং ভাইকে সামলানোর চেষ্টা করেছে। চন্দ্রা বলল,
“ভালো আছি মামি। আপনি কেমন আছেন?”
“ভালো। পরিবারের সবাই ভালো আছেন?”
“জি।”
পরশির দিক তাকিয়ে চন্দ্রা বুঝতে পারল পরশির ব্যাপারটা। নিশ্চয়ই কষ্ট পাচ্ছে পরশি। চন্দ্রা পরশিকে বলল,
“পরশি আপু, তূর্ণ ভাইয়া মানসিকভাবে অনেকটা ভেঙে পড়েছে আপনার জন্য। কোনো কিছুতে মন বসাতে পারছে না। তাই সব ভুলে থাকতে প্রণয় ভাইয়ার সাথে গিয়েছে। আপু ভাইয়াকে সবসময় আপনার জন্য হাসতে দেখেছি। মন খারাপ দেখতে ভালো লাগছে না। প্লিজ কিছু করুন। আপনি তো জানেন ভাইয়া কেন মেনে নিতে চাচ্ছে না।”
চন্দ্রা তার মামির দিকে তাকিয়েও বলল,
“মামি আপনি তো জানেনই ভাইয়ার রাগের কথা। বুঝার চেষ্টা করুন।”
পরশি চন্দ্রাকে বলল,
“চন্দ্রা তোমার ভাইকে বোঝাও। আমার বিশ্বাস ও চাইলেই সব ঠিক হবে। দেখলে না আংকেলের সাথে সম্পর্ক ভালো হয়েছে। আংকেলকে ক্ষমা করেছে। তাহলে ম্যামের দিকটাও বুঝুক।”
চন্দ্রা কি বলবে বুঝতে পারছে না। তারপরেও বলল,
“তূর্ণ ভাইয়ার সবসময়ই মামির উপর বেশি রাগ। ও মনে করে মামি চলে না গেলে ওর ছোটবেলা সুন্দর হতে পারতো। সাধারণ পরিবারের মতো ওর পরিবার হতো। আর ভাইয়া এক প্রকারের জেদ নিয়েই এসব করছে। আমি যতদূর শুনেছি, মামা মামিকে বলেছিল ছেলের জন্য চাকরি ছেড়ে দিতে। আর মামি তখন ভাইয়াকে রেখে তার ক্যারিয়ারকে বেছে নিয়েছিল। তাই ভাইয়া পরশি আপুকেও দুটো অপশন দিয়েছে। আর দ্বিতীয়বারের মতো কষ্ট ভাইয়াকেই পেতে হলো। আপনি ভাইয়াকে বেছে নেন নি পরশি আপু। এটা ভাইয়াকে অনেক বেশি কষ্ট দিচ্ছে। ভিতর থেকে শেষ করে দিচ্ছে। আমি আপনাদের অনুরোধ করছি আপনারা ভাইয়াকে বোঝার চেষ্টা করুন৷ পরশি আপু এই সময়টায় আপনার ভাইয়ার পাশে থাকার কথা ছিল। কিন্তু আপনি ভাইয়ার পাশে না থেকে তার থেকে দূরে সরে গেলেন।”
এসব বলে চন্দ্রা প্রণয়িনীকে নিয়ে চলে গেল। তার আর থাকতে ইচ্ছে করল না এখানে।
বিকেলের পর থেকে পরশি কেমন যেন চুপচাপ বসে আছে। দীর্ঘ ভাবনায়। সে বুঝতে পারছে না কি করবে। সত্যিই তার তূর্ণর পাশে থাকার কথা। কিন্তু তূর্ণ তো এখন তার কোনো কথা শুনছে না। তূর্ণ কেন বুঝতে পারছে না। পরশির কি করা উচিত? এসব ভাবনায় বুদ হয়ে আছে পরশি।
অন্যদিকে রেহানা বেশ কিছুদিন থেকেই অসুস্থ ছিল। তূর্ণ আর পরশির চিন্তায় আরও বেশি অসুস্থ হয়ে পড়েছে সে। হাই ব্লাড প্রেসার। আজকে চন্দ্রার কথাগুলোতে সে আরও বেশি কষ্ট পেয়েছে। আরও বেশি ভেঙে পড়েছে। এগুলো নিয়ে তার চিন্তা আরও বেড়ে গেল। বেড়ে গেল বুঁকে ব্যথা।
.
রাতের বেলা চন্দ্রা আর প্রণয়িনী বসে আছে। চন্দ্রা প্রণয়িনীকে পড়া শিখাচ্ছে। চন্দ্রা আর প্রণয়িনীর সময় খুব ভালো যাচ্ছে। প্রণয় না থাকায় দুইজনের এই সুবিধাটা হয়েছে। প্রণয়িনীকে সবসময় তার বাবা বলে চন্দ্রাকে বেশি না বিরক্ত করতে। যাওয়ার আগেও তার বাবা তাকে বুঝিয়ে গিয়েছে যেন চন্দ্রা আন্টির কোনো সমস্যা না হয়৷ প্রণয়িনী বাবার কথা মেনে চলছে ঠিকই। প্রণয়িনী চন্দ্রাকে হঠাৎ করে বলল,
“আন্তি একটা কথা বলি?”
চন্দ্রা বলল,
“অবশ্যই বাবা৷ বলো।”
“আন্তি বাবার সাথে কথা বললে কি তুমি বির্তক হবে?”
“সে কি! আমি কেন বিরক্ত হবো?”
“বাবা বলেচে তোমাকে যেন একদম বির্তক না করি। তাহলে বাবা আসলে বকা দিবে।”
“এটা কোনো কথা? আন্টি কখনো বিরক্ত হই না তোমার উপর। তোমার যা খুশি করবে।”
প্রণয়িনী বলল,
“থ্যাংকিউ আন্তি।”
প্রণয় আর তূর্ণ রাতের বেলা সমুদ্রের পাড়ে বসে আছে। গল্প করছে। তূর্ণ প্রণয়কে জিজ্ঞেস করল,
“কি দিন আসলো। আমিও ভালোবাসলাম। ভালোবাসলাম বলেই এখন কষ্ট পেতে হচ্ছে।”
প্রণয় দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বলল,
“ভালোবাসা যে কি তাই বুঝিনা। কখনো কাউকে কষ্ট দেয়। কখনো হাসায়। কখনো মন খারাপ করে দেয়। আবার কখনো মনে শান্তি দেয়। সবচেয়ে কষ্ট তখন হয়, যখন তোমাকে তোমার ভালোবাসা মানুষটা থেকে দূরে থাকতে হয়।”
হঠাৎ করে প্রণয়ের ফোন বেজে উঠলো। প্রণয় রিসিভ করল। চন্দ্রা ফোন করেছে। প্রণয় ফোন রিসিভ করে চিন্তিত হয়ে বলল,
“চন্দ্রা! সব ঠিক আছে তো?”
“হ্যাঁ। প্রণয়িনী কথা বলবে। আপনার তো সময় হয় না মেয়ের সাথে কথা বলার।”
“আই এ্যাম সরি। প্রণয়িনীর খোঁজ নেওয়া উচিত ছিল আমার। আচ্ছা, চন্দ্রা ওকে একটু ভিডিও কলে কানেক্ট করে দেওয়া যাবে? তাহলে একটু দেখতাম মেয়েটাকে।”
“জি।”
তারপর প্রণয় ভিডিও কলে প্রণয়িনীর সাথে কথা শুরু করল। একের পর এক প্রণয়িনী বলে গেল সে সারাদিন তার চন্দ্রা আন্টির সাথে কি কি করেছে। প্রণয় বলল,
“বাবা আন্টিকে কিন্তু একদম বিরক্ত করবে না।”
“না, বাবা আমি আন্তিকে বিতর্ক করিনি। আন্তিকে জিজ্ঞেস করো।”
চন্দ্রা ফোনটা নিয়ে বলল,
“আপনিও না। মেয়েকে বারবার এক কথা বলেন। মেয়েটা আপনার ভয়ে আমায় কিছু বলেও না।”
প্রণয় চন্দ্রাকে দেখে তাকিয়ে রইল। তারপর বলল,
“আচ্ছা সরি। আর বলব না।”
ফোন কাটার পর তূর্ণ বলল,
“তুই একদিক দিয়ে ভালো আছিস প্রণয়। তোর ভালো থাকার কারণ প্রণয়িনী। আমার কোনো ভালো থাকার কারণ নেই কেন?”
“সত্যি প্রণয়িনীর জন্য আমি ভালো আছি। কিন্তু হয় তো অন্যকারো জন্য ভালো নেই।”
“মানে?”
“কিছু না। এমনিই বললাম।”
.
প্রণয়িনী চন্দ্রার ফোনে তার একটা ছবি দেখে বলল,
“আন্তি এই চবিটা অনেক সুন্দর। আমি আগেও দেখেচি।”
চন্দ্রা বলল,
“কোথায় দেখেছো?”
“বাবার ফোনে। বাবা একদিন দেখেচিল
তখন দেখেচি।”
চন্দ্রা একটু অবাক হলো। এটা চন্দ্রার দুই বছর আগের ছবি। তখন ফেসবুকে দিয়েছিল। এই এতো আগের ছবি প্রণয়িনী ওর বাবার ফোনে কিভাবে দেখল? ছবিটা তো ফেসবুক থেকে ডিলিট করে দিয়েছিল। তবে প্রণয়ের ফোন কিভাবে?
ভাবতে থাক চন্দ্রা।
চলবে….
ভালোবাসা কারে কয়
শবনম মারিয়া
পর্ব ৫০
হঠাৎ করে ভোরবেলা রেহানা অসুস্থ হয়ে পড়লেন। পরশি দ্রুত তাকে হসপিটালে নিয়ে গেল। হার্ট অ্যাটাক করেছেন রেহানা। পরশি বুঝতে পারছে না কি দিয়ে কি করবে। তূর্ণর এক বন্ধু কার্ডিওলজিস্ট। পরশিকে সে তূর্ণর সাথে দেখেছে। পরশি অস্তির হয়ে আছে। সে কি দিয়ে কি করবে বুঝতে পারছে না। পরশি সহায়তা চাইলো তূর্ণর বন্ধু ডাঃ রাহাতের কাছে। রাহাত তাকে সাহায্য করল। পরশি অনেক বেশি ভয় পাচ্ছে৷ পরশি এই সময় পাশে তূর্ণকে চাচ্ছে। কিন্তু তূর্ণ এখনও হয় তো আসবে না৷ তার উপর সে এখন ব্যস্ত আছে ঘুরাফিরাতে। তার কাছে তার মায়ের কোনো মূল্য নেই। পরশির তূর্ণর উপর অনেক রাগ হচ্ছে। পরশির এখন মনে হচ্ছে সবকিছু তূর্ণর জন্যই হয়েছে। আজীবন রেহানা নিজেকে কষ্ট দিয়ে গিয়েছেন তূর্ণর জন্য৷ তূর্ণও প্রতি মুহুর্তে তার মাকে কষ্ট দিয়েছে। এই কয়টা দিন তার জন্যই রেহানার এরকম অবস্থা হয়েছে। রেহানা এসব সহ্য করতে পারেন নি। সন্তান কিভাবে এমন করে মায়ের সাথে? রেহানার কিছু হলে পরশি জীবনেও তূর্ণকে ক্ষমা করবে না। জীবনের তূর্ণর সাথে কথা বলবে না।
ডাঃ রাহাত এসে পরশিকে জানালো রেহানার যত দ্রুত সম্ভব সার্জারী করতে হবে। এটা শুনে পরশি আরও বেশি ভয় পেয়ে গেল। তার চিন্তার বেড়ে গেল। অস্থির হয় গেল সে। তার অবস্থা দেখে রাহাত বলল,
“প্লিজ শান্ত হন। আপনার এই সময় শান্ত হওয়া প্রয়োজন। সার্জারীতে দেরি করতে চাচ্ছি না। আপনি সম্পর্কে পেশেন্টের কি হন?”
পরশি উত্তর দিল,
“পেশেন্ট আমার বস।”
“যত দ্রুত সম্ভব পেশেন্টের ফ্যামিলিকে জানান। তাদের আসতে বলুন।”
পরশি কাকে জানাবে? রেহানার তো কেউ নেই। কেউ আসবে না। মানুষটা কতটা একা! এই সময়েও তার পাশে থাকার জন্য কেউ নেই। পরশি বলল,
“ওনার ফ্যামিলির কেউ নেই। আমিই তার ঘনিষ্ঠ। অনেক বছর ধরে আমার সাথে তার ভালো সম্পর্ক।”
তূর্ণ এমন সময় এসে বলল,
“আমি পেশেন্টের ফ্যামিলি মেম্বার। আমার মা হন। রাহাত তুই দ্রুত সার্জারী শুরু কর টাইম ওয়েস্ট না করে।”
পরশি আর রাহাত দুজনেই তাকালো তূর্ণর দিকে। রাহাত অবাক হয়ে বলল,
“কি বলছিস তূর্ণ?”
“হ্যাঁ। তুই দেরী করিস না। আমি সব ফর্মালিটিস পূরণ করে দিচ্ছি। যেটা ভালো হয় তুই সেটা কর।”
“আচ্ছা।”
পরশি থ হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। সে কিছু বুঝতে পারছে না। তূর্ণ এখানে কি করছে? সে কি করে জানলো সব? সে না ঢাকার বাহিরে ছিল এখানে আসলো কিভাবে? পরশি কিছু বুঝতে পারছে না।
তূর্ণ অনেক অস্থির হয়ে আছে। তাকে দেখে মনে হচ্ছে সে খুব চিন্তিত। মায়ের এমন অবস্থার জন্য সে প্রস্তুত ছিল না।
তূর্ণ পরশির দিক এগিয়ে গেল। তারপর পরশিকে জড়িয়ে ধরলো। পরশি অবাক হয়ে তূর্ণকে ধরলো। তূর্ণ বলল,
“থ্যাংকিউ পরশি মাকে এখানে নিয়ে আসার জন্য। মায়ের কিছু হলে আমি নিজেকে ক্ষমা করতে পারব না।”
পরশি বলল,
“তূর্ণ, তুমি কিভাবে এখানে? মানে তুমি তো ছিলে না ঢাকায়।”
তূর্ণ একটু শান্ত হলো। তারপর বলল,
“আমার কাল ভালো লাগছিল না। কেমন যেন লাগছিল। গিয়েছিলাম সবকিছু ভুলে থাকতে। কিন্তু পারছিলাম না। কাল রাতে কেমন যেন স্বপ্ন দেখলাম। দেখলাম তুমি কান্না করছো। স্বপ্নটা দেখে আমার কেমন লাগছিল। অনেকক্ষণ বসে ছিলাম। অনেক চিন্তা হচ্ছিল। তারপর প্রণয়কে ডেকে তুলে রাতের বেলায়ই ব্যাক করি। সকালবেলা এসে পৌঁছে তোমার বাসায় নক দকরলাম। কিন্তু দরজা খুলছিলে না। ঠিক এমন সময় রাহাতের ফোন পাই। রাহাত বলল তুমি হসপিটালে। এটা শুনে আরও ভয় পেলাম৷ আমি তো ভেবেছিলাম তোমার কিছু হয়েছে। তারপর রাহাত বলল, তুমি একজন মহিলাকে নিয়ে এসেছো। তারপর বুঝলাম মায়ের কিছু হয়েছে। আমি আর থাকতে পারলাম না। ছুটে আসলাম। মনে হচ্ছিল মা আমাকে ডাকছে।”
পরশি বলল,
” তূর্ণ কি হবে জানি না। কিন্তু ম্যামের কিছু হলে মেনে নিতে পারব না।”
তূর্ণ পরশিকে বুঁকে জড়িয়ে ধরে বলল,
“কিছু হবে না। মা ঠিক হয়ে যাবে।”
পরশি তূর্ণর দিক তাকিয়ে বলল,
“ম্যামকে সুস্থ হতেই হবে। তার এতোদিনের কষ্ট ঘুচে গেল। তার তাহরান তাকে মা বলে ডেকেছে। তার জন্য পাগল হয়ে গিয়েছে।”
পরশি আর তূর্ণ বসে আছে। অপারেশন শেষ হওয়ার পর ডাক্তার জানালো অপারেশন সাকসেসফুল। পেশেন্টের জ্ঞান ফিরলে তারা দেখা করতে পারবে। এতক্ষণে যেন তূর্ণ আর পরশি স্বাভাবিক হতে পারলো। তূর্ণ পরশিকে বলল,
“পরশি তুমি ঠিকই বলেছিলে। বাবা-মা যা করেছেন তাই নিয়ে আমার নিজের এমন করা উচিত না। তাদের প্রতি আমারও কর্তব্য আছে। সময় থাকতে এগুলো না করলে পরে নিজেই কষ্ট পাবো। সত্যিই, আমার এতক্ষণ মনে হচ্ছিল মায়ের কিছু হয়ে গেলে আমি কি করব? আজীবন আমি অপরাধবোধে ভুগতাম৷ এক সময় আমি ঘৃণা করতাম আমার বাবা মাকে। কিন্তু আজ মনে হলো আমার দুনিয়ায় এই মানুষ দুটো অনেক গুরুত্বপূর্ণ। এদের ভালো থাকায় খারাপ থাকায় আমার আসে যায়। আজ মায়ের কিছু হলে আমি নিজেকে কিভাবে ক্ষমা করতাম। আমি মেনে নিতে পারতাম না পরশি।”
পরশি তূর্ণর কাধে হাত রেখে বলল,
“প্লিজ শান্ত হও তূর্ণ। আমি অনেক খুশি তুমি বুঝতে পেরেছো। ম্যাম আজ অনেক খুশি হবেন৷ একটু আগেও আমার তোমার উপর ভীষণ রাগ হচ্ছিল। মনে হচ্ছিলো সব দোষ তোমার। কিন্তু এখন তোমার জন্য মায়া হচ্ছে। কষ্ট পেও না প্লিজ।”
“সত্যিই সব দোষ আমার। আমার জন্য মা কষ্ট পেয়েছে। আমি খুব খারাপ ছেলে। আমার জন্য মা এতো বেশি অসুস্থ।”
“না, তূর্ণ। এভাবে বলো না। তোমার জন্যও এসব সহজ ছিল না।”
রেহানার জ্ঞান ফিরলো। তূর্ণ আর পরশি গেল রেহানার সাথে দেখা করতে। তূর্ণকে দেখে রেহানার চোখ গড়িয়ে পানি পড়লো। তিনি অনেক খুশি হয়েছেন। তিনি ভাবেননি তার ছেলে আসবে। তূর্ণ মায়ের কাছে যেতে অপরাধবোধ করছিল। সাহস পাচ্ছিল না আগানোর। পরশি তাকে বলল,
“তূর্ণ ম্যাম ডাকছেন এদিকে আসো।”
তূর্ণ সামনে আগালো। পরশি রেহানার দিক তাকিয়ে বলল,
“এমন অসুস্থ হলেন কেন? ছেলের চিন্তা করেছেন একবারও? পাগলের মতো অবস্থা হয়ে গিয়েছিল।”
রেহানার কথা বলতে কষ্ট হচ্ছে তারপরেও বলল,
“তাহরান এসেছে, আমার ছেলে এসেছে! এই জন্যই হয় তো মৃত্যুর নিকটে গিয়েও ফিরে আসলাম।”
তূর্ণর চেখ শীতল। সে মায়ের হাত ধরে বলল,
“মা সরি। সবকিছুর জন্য সরি। আমি অনেক খারাপ ছেলে।আমার উচিত হয় নি এতোদিন তোমার আর বাবার সাথে খারাপ ব্যবহার করার। তোমরা প্লিজ রাগ হয়ে আমাকে ছেড়ে যেও না। প্লিজ মা। আমি আর কষ্ট দিবো না তোমাদের। আমাকে ক্ষমা করে দাও।”
রেহানা বলল,
“বাবা, তুই ক্ষমা করে দে। আমি মা হিসেবে কিছু করিনি তোর জন্য। তোকে কষ্ট দিয়েছি। তোকে আমার কাছে নিয়ে রাখতে পারিনি। আমি দুঃখিত। আমাকে ক্ষমা করে দে বাবা।”
“মা এসব বলো না। তুমি শুধু আমার পাশে থেকো।”
রেহানা হেসে বলল,
“পাশে থাকবো বলেই তো যাই নি। এখনও অনেক কাজ বাকি। আমার তাহরান আর পরশির বিয়ে বাকি। নাতি নাতনিদের সাথে খেলা করা বাকি।”
পরশি রেহানার কথায় লজ্জা পেল। তূর্ণ হেসে বলল,
“হ্যাঁ। বুঝেছো তো পরশি?”
পরশি তূর্ণকে বলল,
“চুপ।”
তারপর রেহানাকে বলল,
“ম্যাম আপনি রেস্ট নিন।”
তূর্ণ বলল,
“মা, দেখেছো তোমার পুত্রবধূ লজ্জা পাচ্ছে।”
পরশি বলল,
“কিসের পুত্রবধূ! বিয়ে করেছো আমাকে?”
তূর্ণ বলল,
“করে ফেলবো। মা শুধু সুস্থ হয়ে বাসায় ফিরুক।”
রেহানা বললেন,
“আমার তো বিশ্বাস হচ্ছে না, পরশি আমার ছেলের বউ হবে।”
তূর্ণ বলল,
“বিশ্বাস করে নাও মা।”
.
রেহানার অসুস্থতার কথা শুনে তোহরাব সাহেব আসলেন রেহানার সাথে দেখা করতে। রেহানা তাকে দেখে অবাক হলো। তোহরাব সাহেব জিজ্ঞেস করলেন,
“কেমন আছো?”
“দেখতেই পাচ্ছো। তা তুমি কেমন আছো?”
“ভালো। তূর্ণর কাছ থেকে জানলাম তুমি এতোটা অসুস্থ। তাই ভাবলাম দেখা করি।”
“ধন্যবাদ।”
তোহরাব সাহেব আর রেহানা কেউই কথা খুঁজে পাচ্ছেন না। তবে রেহানার ভালো লাগছে এতো বছর পরেও লোকটা তার অসুস্থতা কথা জেনে তাকে দেখতে এসেছেন। রেহানা বলল,
“ছেলের সাথে তোমার সম্পর্ক এখন কেমন?”
“আগে তো ভালো ছিল না। কিন্তু এখন ভালো। সবই পরশির জন্য।”
“হুম। পরশির জন্য আমাদের ছেলের মধ্যে পরিবর্তন এসেছে।”
“হ্যাঁ। ভুলটা আমাদের ছিল। আমরা তূর্ণর জন্য কিছু করিনি। ওকে একা ফেলে রেখেছি। ওর রাগ করাটা স্বাভাবিক ছিল। তবে ও আমাদের ক্ষমা করেছে এটায় অনেক শান্তি পেয়েছি। এবার শান্তিতে মরতে পারব।”
রেহানা সামান্য হেসে বলল,
“ছেলের বিয়ে দাওনি এখনো। আগেই এই চিন্তা করো না।”
হাসলেন তোহরাব সাহেব। দুজনের মধ্যে কিছুক্ষণ কথা হলো। সম্পর্ক কত অদ্ভুত! এক সময় যেই মানুষ দুটো ভালোবেসে বিয়ে করেছিল, আজ তাদের মধ্যকার সম্পর্ক শুধু তারা তাদের সন্তানের বাবা মা। এছাড়া নিজেদের সেই আগের ভালোবাসা সম্পর্ক নেই। তাদের কথাগুলো এখন শুধু তাদের ছেলেকে ঘিরেই। তূর্ণও স্বার্থক। তার বাবা মার ভালোবাসা সে পেল। দেরি করে হলেও সে তার বাবা মায়ের ভালোবাসা থেকে বঞ্চিত হয় নি। বঞ্চিত হয় নি সে তার প্রিয় মানুষটার ভালোবাসা থেকেও।
.
রেহানা সুস্থ হওয়ার পর পরশির বাসায়ই থাকছে। তূর্ণ খুব করে বলেছিল তার কাছে থাকতে। তোহরাব সাহেবও বলেছিলেন রেহানাকে তার ছেলের কাছে থাকতে। কিন্তু সে বলল সে পরশির কাছেই থাকবে। আর তূ্র্ণও পাশেই থাকে। চাইলেই সে তার মাকে কাছে পাবে।
তূর্ণ মায়ের কাছে থাকার বাহানায় পরশির সাথেও সময় কাটাতে পারে। দুজন মাঝে কিছুদিন একে অপরের থেকে দূরে থেকে ভীষণ কষ্টে ছিল।
আজ সন্ধ্যায় তূর্ণ পরশির সাথে বের হলো। দুজনে একসাথে সময় কাটাচ্ছে। রিকশায় করে ঘুরছে। হঠাৎ মেঘের গর্জন। শুরু হলো ঝুম বর্ষণ। তূর্ণ দ্রুত রিকশার হুড টেনে দিল। পরশি হুডটা নামিয়ে দিল। তূর্ণ অবাক হয়ে বলল,
“কি করছো? ভিজে যাবে তো।”
“হ্যাঁ, ভেজার জন্যই তো হুড ফেললাম।”
“ঠান্ডা লাগবে পরশি। তোমার কোল্ড এ্যালার্জি।”
পরশি তূর্ণর ঠোঁট আঙুল রেখে বলল,
“একদম চুপ ডাক্তার সাহেব। এসব জ্ঞান আপনার পেশেন্টদের দিবেন। ভুলে যাবেন না আমি আপনার প্রেমিকা, পেশেন্ট নই। প্রেমিকাকে জ্ঞান না, প্রেম দিতে শিখুন প্রেমিক। এসব এলার্জি প্রেমের সামনে কিছু না।”
তূর্ণ হেসে বলল,
“আচ্ছা। আর এটার কি হবে এতোদিন যে প্রেমিককে দূরে রাখলেন?”
“প্রেমিক বুঝি দূরে রাখেননি?”
“হুম। এখন শাস্তি কি?”
“এই কয়দিনেরটা পুষিয়ে দিন।”
তূর্ণ চোখ মেরে বলল,
“আর ইউ সিরিয়াস?”
পরশি বলল,
“বেশি দুষ্টুমি করলে রিকশা থেকে ফেলে দিবো।”
তূর্ণ রিকশার হুডটা টেনে পরশির পিঠে হাত রেখে পরশিকে শক্ত করে ধরে পরশির ঘাড়ে চুমু খেল।
পরশি শিহরিত হয়ে উঠলো।
চলবে…..