ভালোবাসা কারে কয়,৫৫,৫৬
শবনম মারিয়া
পর্ব ৫৫
তূর্ণ আর পরশির সংসার ভালোই যাচ্ছে। যদিও দুজনে অফিসে ব্যস্ত থাকে। বিয়ের পরে বেশি একটা ছুটি পায় নি৷ ঘুরতে যেতে চেয়েও ঘুরতে যেতে পারে নি। তূর্ণ পরশিকে কথা দিয়েছে ও একটু সময় বের করে ওকে অবশ্যই ঘুরতে নিয়ে যাবে৷ পরশিও একটু ব্যস্ত। একটা কেস নিয়ে পুলিশ ডিপার্টমেন্টের সকলেই ব্যস্ত। পুলিশরা এতোটুকু ধারণা করেছে এই শহরে কোনো একটা ঘটনা ঘটছে। একের পর এক মানুষ নিখোঁজ হচ্ছে। তাদের পরিবারের লোকেরা এসে রিপোর্ট করছে। কিন্তু পুলিশ কাউকে খুঁজে বের করতে পারছে না৷ মূল ঘটনায় পৌঁছাতে পারছে না। তার থেকেও বড় কথা যারা হারিয়ে যাচ্ছে তাদের কারোরই ফোন ট্রাক করতে পারছে না। এটা কি করে সম্ভব? মানুষের সাথে ফোন কিভাবে গায়েব হয়ে যাচ্ছে। আর এরকম শুধু এই এলাকাতেই হচ্ছে। পুলিশ ফাইল ঘাটিয়ে দেখছে বিগত অনেক বছর ধরেই এমন নিখোঁজ হয়ে যাওয়ার কেস রয়েছ অনেকগুলো। এটা নিশ্চয়ই কোনো বড় একটা দলের কাজ। হয় তো তারা মানুষকে নিয়ে মেরে ফেলে কিংবা তাদের সাথে অন্যকিছু করে। এই কেস নিয়ে শুরু হয়েছে ইনভেস্টিগেশন। পরশি সেখানেই ব্যস্ত।
শুক্রবার দুজনেরই ছুটি। ভোরবেলা রোদের আলোতে পরশির ঘুম ভাঙলো। পরশি উঠে দেখলো বেশ দেরি হয়ে গিয়েছে। সে তাড়াহুড়ো করে উঠতে গেল। তূর্ণ তাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে রেখেছে। পরশি যেই তূর্ণকে সরিয়ে উঠতে গেল। তূর্ণর ঘুম ভেঙে গেল। তূর্ণ পরশিকে টান দিয়ে আবার নিজের বুঁকের উপর শুইয়ে নিল। পরশি ঘুমু ঘুমু গলায় বলল,
“উঠতে হবে তো।”
“না, আজকে অফিস ছুটি। ঘুমাও।”
“আশ্চর্য! তুমি ঘুমাও না। আমাকে উঠে দাও।”
“না, তোমাকে জড়িয়ে ধরে ঘুমিয়ে থাকবো।”
“হ্যাঁ, তাহলে এক কাজ করো তূর্ণ।”
“কি?”
“আরেকটা বিয়ে করো। তুমি আমাকে জড়িয়ে ধরে ঘুমিয়ে থাকবে। আর তোমার আরেক বউ সংসার সামলাবে।”
“আইডিয়া খারাপ না। কিন্তু তোমাকে সংসার সামলাতে বলেছে কে? জানো না বাসার সব কাজ আমেনা খালা সামলে নেয়।”
“হ্যাঁ, তিমি সামলে নেন। তবে আমার সংসার আমি দেখবো না? সারা সপ্তাহে সময় পাই কোথায়? একটা দিনই তো একটু সময় পাই। মেয়েদের কাছে তাদের সংসার মূল্যবাদ জিনিস। তুমি বুঝবে না।”
তূর্ণ বলল,
“হ্যাঁ, যাও। মেয়েদের কাছে সংসার মূল্যবান। আর স্বামী কিছুই না। এর থেকে বিয়ের আগে ভালো ছিল। একে অপরের সাথে সময় কাটাতাম। তুমি এতো সংসার সংসার করতে না।”
“আরে বাবা এতো রেগে গেল হবে নাকি? একটু বোঝার চেষ্টা করো আমার শ্বশুড়, দাদাশ্বশুর-দাদীশাশুড়ি এরা কি ভাববেন? আমার এদের প্রতিও তো একটা দায়িত্ব আছে। বাড়ির বউ সারাদিন অফিস নিয়ে ব্যস্ত থাকি। কারো খোঁজ খবরও তো ঠিকমতো নিতে পারি না। ”
“হ্যাঁ, বুঝেছি। এবার যাও।”
এই বলে পরশিকে তূর্ণ ছেড়ে দিলো। তূর্ণ আবার ঘুমিয়ে পড়লো। সে বেশ ক্লান্ত। তার ঘুমের প্রয়োজন। পরশি তূর্ণকে ডেকে বলল,
“তুমি আবার ঘুমাচ্ছো কেন? উঠে ফ্রেশ হয়ে নাও।”
“একটু পরে।”
“আচ্ছা।”
পরশি ফ্রেশ হয়ে রুম থেকে বের হয়ে আগে দাদু দাদীর কাছে গেল। তাদের সাথে কিছুক্ষণ কথা বলল। খাবার ওষুধ সব ঠিক মতো খেয়েছে কিনা খোঁজখবর নিল। রোকেয়া আর মিরাজ সাহেব পরশির সাথে কথা শুরু করলে আর থামার নাম নেই। তারাও সারাদিন একা থাকে। কথা বলার মানুষ পেলে ছাড়তে চায় না। পরশিও তাদের সাথে অনেকক্ষণ কথা বলল। তারপর তোহরাব সাহেবের রুমে গেল তার খোঁজ নিতে। তবে তোহবার সাহেবকে খুঁজে পেল না। তারপর পরশি আমেনার কাছে গিয়ে জিজ্ঞেস করল। আমেনা বললেন তোহরাব সাহেব নাকি অনেকক্ষণ আগেই বের হয়েছেন৷ তাও সকালের খাওয়া দাওয়া না করে। এটা শুনেই পরশি চিন্তিত হয়ে গেল। পরশি তোহরাব সাহেবকে ফোন করলেন৷ তিনি ফোন রিসিভ করলেন।
পরশি জিজ্ঞেস করল,
“বাবা, আপনি কেথায়? শুনলাম নাস্তা না করেই বাহিরে গিয়েছেন। এমনটা কেন করেন বাবা। অসুস্থ হয়ে যাবেন তো।”
তোহরাব সাহেব বললেন,
“মা, আমি ঠিক আছি। একটু ছাদে এসেছিলাম। তুমি চিন্তা করো না। তুমি আর তূর্ণ নাস্তা করে নিও।”
“জি, বাবা। আপনিও দ্রুত এসে নাস্তা করে যান।”
“আসলে আমাকে একজন চা-এর নিমন্ত্রণ দিয়েছিলেন। আমি সকালের নাস্তা করেছি। তুমি চিন্তা করো না।”
পরশি কিছুটা ধারণা করতে পারছে। তোহরাব সাহেবকে চায়ের জন্য রেহানা নিমন্ত্রণ করেছেন। ইদানীং দুজনে প্রায়ই একসাথে সময় কাটান। ব্যাপারটা পরশির ভালোই লাগে। শেষ বয়সে এসে কাউকে প্রয়োজন হয়। হয়তো তাদের মধ্যে সেই সম্পর্কটা নেই। কিন্তু আজও একটা ভালোবাসা রয়ে গিয়েছে। তাদের মধ্যকার বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের জন্য এখন তারা একাকিত্ব বোধ করেন না।
পরশি সবার জন্য চুলায় রান্না চাপিয়ে দিল। পরশির ভালোই লাগে এগুলো৷ সে কখনো ভাবেনি সে এতোভালো একটা পরিবার পাবে। সবাই তাকে ভীষণ ভালেবাসে। তূর্ণ প্রতি মুহুর্তে পরশিকে আগলে রাখে। পরশির সম্পূর্ণ জীবন পাল্টে গিয়েছে তূর্ণকে পেয়ে। তার নিজেকে সবচেয়ে সুখী মানুষ মনে হয়।
পরশি রান্নাঘরে রান্না শেষ করে রুমে গেল। গিয়ে দেখে তূর্ণ এখনও ঘুমাচ্ছে। তূর্ণকে একবার ডেকে ওয়াশরুমে চলে গেল। তারপর গোসল করে বের হয়ে এসে দেখে তূর্ণ এখনও উঠেনি। পরশি চুলের পানি মুছতে মুছতে তূর্ণকে আবার ডাকলো। তূর্ণ উঠছে না। পরশি তূর্ণর কাছে গিয়ে ভেজা চুলগুলো ঝাড়া দিল। বিন্দু বিন্দু পানি ছিটে তূর্ণর মুখে লাগলো। তূর্ণ চোখ খুলে বলল,
“উফ, ঘুমাতে দাও না।”
পরশি বলল,
“আর কত ঘুমাবে শুনি?”
তূর্ণ পরশির দিক তাকিয়ে রইল। পরশিকে কি স্নিগ্ধ লাগছে! সুতি একটা শাড়ি পরেছে। ভেজা চুলগুলো সামনে এনে রেখেছে। তূর্ণ পরশির দিক কতক্ষণ তাকিয়ে রইল। পরশি তার মতো তার কাজ করে যাচ্ছে। সে আয়নার সামনে গিয়ে চুল মুছতে শুরু করেছে। তূর্ণ উঠে গিয়ে পিছন থেকে পরশিকে জড়িয়ে ধরলো। পরশি আয়না দিয়ে তূর্ণর দিকে তাকিয়ে বলল,
“কি ডাক্তার সাহেব? ঘুম ভাঙলো?”
তূর্ণ বলল,
“বাস্তবে যখন বউকে এতো সুন্দর লাগে তখন ঘুমিয়ে স্বপ্ন দেখা লস। তাই উঠে পড়লাম। এখন চোখ জুড়িয়ে আমার সুন্দর বউকে দেখবো।”
পরশি বলল,
“আজকাল উপন্যাস বেশি পড়া হচ্ছে নাকি? এতো রোমান্টিক আমার বর কবে হলো ভাবছি। এরকম কথা সে সচারাচর বলতে পারে না।”
তূর্ণ হেসে বলল,
“আপনাকে দেখলে মাথায় এগুলো আপনাআপনি চলে আসে ম্যাডাম।”
“ওহ্, তাই!”
“জি।”
“এখন ছাড়ো। কাজ আছে।”
“উহু, ছাড়বো না।”
এই বলে তূর্ণ পরশির ঘাড়ের কাছের চুলগুলো সরিয়ে চুমু খেল। পরশি বলল,
“একে তো বেলা গড়িয়ে ঘুম থেকে উঠেছো। গোসল, খাওয়া কোনোকিছুর ঠিক নেই। এখন আবার এখানে দাঁড়িয়ে এসব করে সময় নষ্ট করছো। যাও ফ্রেশ হয়ে নাও। নামাজে যাবে না?”
“হুম। তার আগে একটা কাজ আছে।”
“আবার কি কাজ?”
তূর্ণ আয়নার উপরে লাগানো একটা কালো টিপ তুলে নিল। তারপর সেটা পরশির কপালে দিয়ে বলল,
“এভাবে অনেক সুন্দর লাগে।”
“আচ্ছা। এবার যাও।”
.
চন্দ্রা আজ শাড়ী পরতে চাইছে। রাতের বেলায় বাসায় অনেক গেস্ট আসবে। প্রণয়ের সব বন্ধু আর তাদের স্ত্রীরা আসবে। চন্দ্রা সবকিছু নিজে থেকে এ্যারেঞ্জ করেছে। রান্নাটাও সে করবে। জাহানারা তার সাহায্য করতে চাইলেও শাশুড়িকে কিছু করতে দেয়নি চন্দ্রা। এই ছয় মাসে চন্দ্রা সবকিছু নিজে থেকে অনেক সুন্দর করে সামলে নিয়েছে। প্রণয়িনীকে সামলানোর পরেও শাশুড়িকে সংসারের কাজ করতে দেয় না৷ সব নিজে থেকেই করে। প্রণয়ও বাধা দেয় না চন্দ্রাকে কিছুতে। বরং তার ভালোই লাগে যে চন্দ্রা এসব নিয়ে ব্যস্ত আছে, সুখে আছে। প্রণয়ও ভালোবাসে চন্দ্রাকে সবসময় হাসিখুশি রাখতে।
চন্দ্রা আলমারি থেকে একটা শাড়ী বের করে নিল। আগে সে শাড়ী পরতে পারতো না৷ এখন ভালোভাবেই পারে। তবে কুঁচি ঠিক করতে সমস্যা হয়। প্রণয় ওয়াশরুম থেকে গোসল করে চুল মুছতে মুছতে বের হয়ে দেখলো চন্দ্রার শাড়ীর কুঁচি ধরতে অনেক অসুবিধা হচ্ছে। প্রণয় বলল,
“ওয়েট, আমি হেল্প করছি।”
চন্দ্রা বলল,
“আমি করে নিতে পারব।”
প্রণয় শুনলো না। সে বসে চন্দ্রার শাড়ী ঠিক করে দিল। প্রণয়িনী এসে দেখল। তারপর সে চন্দ্রার ওড়না নিয়ে ওর বাবার কাছে গিয়ে বলল,
“বাবা আমাকে মায়ের মতো শাড়ী পরিয়ে দাও।”
প্রণয় আর চন্দ্রা হেসে দিল। প্রণয় প্রণয়িনীকেও চন্দ্রার ওড়না পেঁচিয়ে শাড়ী পরিয়ে দিল। তারপর কোলে নিয়ে বলল,
“আমার রাজকন্যা।”
প্রণয়িনী বলল,
“তাহলে তুমি রাজা আর মা রাণী।”
“হ্যাঁ।”
চন্দ্রা বলল,
“এবার রাজকন্যা বাবার কোল থেকে আমার কোলে আসুন। বাবার নামাজ পড়তে যেতে হবে।”
প্রণয়িনী চন্দ্রার কোলে আসলো। তারপর চন্দ্রা প্রণয়িনীর চুল আঁচড়ে দিল। এরপর প্রণয়িনী বায়না করল সেও তার মায়ের চুল আছড়ে দিবে। প্রণয় বলল,
“বাবা মায়ের চুল তো বড়। মা তো ব্যথা পাবে।”
“না পাবে মা। আমি মাকে ব্যথা দিব না।”
চন্দ্রা বলল,
“আচ্ছা মা, দাও।”
প্রণয় তার একটা ঘড়ি খুঁজে পাচ্ছে না। চন্দ্রাকে জিজ্ঞেস করতেই চন্দ্রা উঠে গিয়ে আলমারির ড্রয়ার থেকে ঘড়ি বের করল। প্রণয়িনীও উঁকি দিল চন্দ্রার পিছ পিছ গিয়ে। প্রণয়িনী একটা জামা দেখে টান দিল। আলমারির সব জামা পড়ে গেল।
চন্দ্রা বলল,
“প্রণয়িনী দুষ্টুমি করো কেন মা?”
প্রণয় দেখে একটু রেগে গিয়ে বলল,
“প্রণয়িনী! দিন দিন দুষ্টুমি বাড়ছে তাই না?”
প্রণয়ের ধমকে প্রণয়িনী কান্না করে দিল। প্রণয় নিজে থেকেই প্রণয়িনীকে তাড়াতাড়ি কোলে নিয়ে বলল,
“সরি বাবা, সরি। কান্না করে না।”
চন্দ্রা রেগে বলল,
“দিলেন তো মেয়েটাকে কাঁদিয়ে।”
প্রণয় বলল,
“সরি।”
প্রণয়িনী মেয়েকে আদর করে তার রাগ ভাঙতে ব্যস্ত। প্রণয় চন্দ্রাকে বলল,
“চন্দ্রা ওগুলো আমি ঠিক করে রাখবো নে। তুমি কষ্ট করো না।”
চন্দ্রা বলল,
“অসুবিধা নেই। আপনি নামাজে যান। আমি ঠিক করে নিবো সব।”
“আচ্ছা।”
প্রনয় প্রণয়িনীকে শান্ত করে বের হয়ে গেল। চন্দ্রা গোছানো শুরু করল। প্রণয়িনী এসে বলল,
“মা, সরি। আমি হেল্প করব?”
চন্দ্রা প্রয়ণয়িনীকে কোলে নিয়ে বলল,
“না বাবা৷ মা করে নিতে পারব। তুমি মন খারাপ করো না। তুমি এক কাজ করো দেখো তো দাদু কি করে৷ যাও।”
প্রণয়িনী চন্দ্রার গালে চুমু দিয়ে দৌড়ে চলে গেল। চন্দ্রা হেসে দিল। তারপর আবার জামা কাপড় গোছাতে লাগলো। চন্দ্রা ভাবলো ভীতরের দিকেও অনেক অগোছালো। হাতে সময় আছে। বেশি সময় লাগবে না৷ ওগুলোও ঠিক করে রাখুক। হঠাৎ দেখলো একটা বাক্স। বাক্সটা কাঠের। কিসের বাক্স এটা? এতোদিনে তো চোখে পড়েনি। প্রণয়ের হবে হয় তো। কিন্তু কি? খুব যত্নে রেখেছে মনে হচ্ছে। খুলে দেখবে কি? চন্দ্রার ইচ্ছে করল খুলে দেখতে। বক্সটা খুলে চন্দ্রা অবাক হয়ে গেল। চন্দ্রার কতগুলো ছবি রাখা সেখানে! আর কিছু চিরকুটও আছে। চন্দ্রা নিজের ছবিগুলো দেখতে লাগলো। তারপর চিরকুট গুলো খুলল। এক একটায় এক একটা কথা লেখা। চন্দ্রা সেগুলো পড়ে অবাক হলো।
❝চন্দ্রা তোমাকে নিয়ে অনুভূতি তৈরি হয়েছে। এই অনুভূতি ভালোবাসার। তোমায় ভালোবাসি।❞
❝তুমি এমন কেন? কেন নিজেকে কষ্ট দাও? তোমাকে কষ্টে দেখলে আমার বুঁকে ব্যথা হয়। অনেক কষ্ট হয়। আমি চাই তুমি স্বাভাবিক হও। সব ভুলে যাও। সুন্দর একটা জীবন শুরু করো।❞
❝ভালোবাসার মানুষকে একটা অন্য নামে ডাকতে হয়। তোমাকে দেখে আমার চন্দ্রমল্লিকা ফুলের কথা মনে পড়ে। আজ থেকে তুমি আমার চন্দ্রমল্লিকা।❞
❝জানি তুমি কোনোদিনও ভালোবাসবে না আমায়। আমিও তোমায় বলব না ভালেবাসি। কারণ ভয় হয়। তুমি যদি এটা জানার পর আমার থেকে দূরে সরে যাও। তাই ভালো অজান্তে তুমি আমার কাছাকাছি থাকো। আমি এভাবেই ভালো থাকবো।❞
❝তোমার কষ্টগুলো আমার হয়ে যাক। কিন্তু আমার কষ্ট কম কোথায়? আমি নিজেও তো কষ্ট পাচ্ছি। তোমাকে ভালোবাসি। কিন্তু তোমায় পাবো না। তোমায় বলতে পারব না। এতো কষ্ট নিয়ে কিভাবে বেঁচে আছি? হয় তো তোমার আর প্রণয়িনীর জন্য বেঁচে আছি।❞
❝আমি জানি তুমি আমার কিছু আচরণে অনেক বিরক্ত হও। আমি মানুষটাই তোমার কাছে বিরক্তির কারণ৷ কিন্তু কি করব বলো? আমি যে তোমায় ভালোবাসি।
শুনো চন্দ্রমল্লিকা,
তোমার একরাশ বিরক্তি,
কেন বাড়িয়ে দেয় তোমাকে পাওয়ার জন্য আমার আসক্তি?❞
❝ইশ! এরমকটা হতে পারতো না? আমি তুমি আর প্রণয়িনী অন্য একটা দুনিয়ায় চলে যেতে পারতাম৷ সেখানে থাকবে না কোনো দুঃখ, থাকবে না কোনো কষ্ট।❞
এরকম আরও কিছু চিরকুট ছিল। তবে একটা চিরকুট পড়ে চন্দ্রা বুঝতে পারল এটাই প্রণয়ের লেখা শেষ চিরকুট।
❝আমি ভাবতে পারছি না। তুমি আমার হবে চন্দ্রমল্লিকা! তুমি আমাকে ভালোবাসো! আমি পৃথিবীর সবচেয়ে সুখী মানব। কথা দিলাম তোমায় আজীবন সুখে রাখবো। আজ থেকে আর এসব চাপা অনুভূতি আমার এই বন্দি বাক্সে লুকিয়ে রাখতে হবে না। কাল তোমাকে নিজের করে আনবো। তারপর আমি তোমায় এগুলো বলব। তুমি সব শুনবে।❞
চন্দ্রা বাক্সটা বন্ধ করে যত্নে জায়গা মতো রেখে দিল। চন্দ্রার চোখে পানি। এতক্ষণে প্রণয় চলে আসলো। চন্দ্রা তাড়াতাড়ি চোখ মুছলো। প্রণয় উদ্বিগ্ন হয়ে বলল,
“চন্দ্রা! কি হয়েছে? তুমি কাঁদছিলে কেন?”
চন্দ্রা প্রণয়ের দিক এগিয়ে গেল। তারপর বলল,
“আমি কেমন যেন ছিলাম। শুনেছিলাম ভালেবাসা মানুষকে বদলে দেয়। আমাকেও যে ভালোবাসা বদলে দিবে ভাবতে পারিনি। আপনি আমাকে বদলে দিয়েছেন। এক সময় আমি বিরক্ত হতাম না আপনার উপর? অথচ দেখুন আমি এখন আপনাকে কত ভলোবাসি। এখন আমার একমাত্র ভরসার জায়গা আপনি। আপনি আমাকে কি পরিমাণ ভালোবাসেন এটা বুঝতে পেরে চোখে পানি চলে এসেছিলো।”
প্রণয়ি চন্দ্রাকে জড়িয়ে ধরে বলল, “ভালোবাসা অনুভূতিহীন মানুষের মধ্যে অনুভূতির জন্ম দেয়। ভালোবাসা অদ্ভুত। ভীষণ অদ্ভুত!”
চলবে….
ভালোবাসা কারে কয়
শবনম মারিয়া
পর্ব ৫৬
সেদিন প্রণয়ের বাসায় ওদের ফ্রেন্ডদের গেটটুগেদার ছিল। সেখানে পরশি আর তূর্ণও উপস্থিত ছিল। কিন্তু হঠাৎ করে পরশির শরীর ভীষণ খারাপ লাগছিল। প্রচুর মাথা ঘুরছিল। তূর্ণ তাকে বাসায় নিয়ে আসলো। কয়েকটা দিন ধরেই পরশির কেমন যেন লাগছে। মাথা ঘুরছে, বমি পাচ্ছে, খেতে পারছে না। তূর্ণ বেশ চিন্তিত হয়ে গিয়েছিল। হসপিটালে নিয়ে কিছু টেস্ট করায়। তারপর টেস্ট রিপোর্ট হাতে পেয়েই তূর্ণ রিপোর্টটা দেখে পাগলের মতো হয়ে যায়৷ তার জীবনে যেন সবচেয়ে খুশির সংবাদটা সে পেয়েছে। সে বাবা হতে চলেছে। পরশি আর তূর্ণ ভীষণ খুশি। তবে ইদানীং তার ভীষণ মুড সুইং হচ্ছে। মেজাজ খিটখিটে হয়ে যাচ্ছে। অফিসে, বাসায় কোনো জায়গায় মন বসাতে পারছে না। তূর্ণ ভাবলো পরশিকে একটু দূরে কোথাও থেকে ঘুরিয়ে আনবে। তূর্ণ ছুটি নিয়ে নিল। তারপর পরশিকে বলল অফিস থেকে চার দিনের জন্য ছুটি নিতে। তারা ঘুরতে যাবে। পরশিও ছুটি নিল। দুজনে সিলেট গেল। যদিও রোকেয়া বেগম এই সময় পরশিকে জার্নি করতেই দিতে চান নি। পরশির মা আর রেহানা বেগমও মানা করেছিলেন। কিন্তু তূর্ণ তাদের বোঝালো কোনো সমস্যা হবে না। তূর্ণ আছে। আর এই সময়টায় পরশির রিফ্রেশমেন্ট দরকার। তার মানসিকভাবেও সুস্থ থাকা দরকার।
দুজনে বেশ ঘুরাঘুরি করছে। এসেছে দুইদিন হয়েছে। তূর্ণ প্রতিটা সময় পরশির খেয়াল রাখছে। ঘুরাঘুরি করে পরশির মনও ভালোই আছে।
.
সন্ধ্যাবেলা প্রণয় আসার পরে প্রণয়িনী তার বাবার সাথে ব্যস্ত হয়ে গেল। প্রণয়িনীর কিছু জিনিস কিনতে হবে। তাই সে বাবাকে নিয়ে বাহিরে গেল। চন্দ্রা সাথে গেল না। চন্দ্রা একটা ডকুমেন্ট খুঁজছিল। সে তার আগের ইমেইলে লগ ইন করল। অনেকদিন ধরে এই মেইলে লগ আউট করা ছিল। চন্দ্রা দেখলো কয়েকটা মেইল জমে আছে এখানে। কিন্তু সে তো অফিসিয়ালি অন্য একটা মেইল ব্যবহার করতো। এটায় কিসের এতো মেইল? চেক করতে গিয়ে চন্দ্রা বড়সড় একটা ধাক্কা খেল। এখানের অধিকাংশ মেইল আফজাল চৌধুরীর আইডি থেকে পাটানো। আফজাল চৌধুরী নামটা দেখেই চন্দ্রা কাঁপতে শুরু করল। সে অস্থির হয়ে গেল। প্রচুর পরিমাণে ঘেমে যাচ্ছে। চন্দ্রার ঠোঁট কাঁপছে। হাত কাঁপছে। সে ইমেলই ঢুকলো। তারপর ইমেলগুলো পড়া শুরু করলো।
❝চন্দ্রা, আমার একমাত্র কন্যা, আমি জানি তুমি আমাকে অনেক বেশি ঘৃণা করো। ঘৃণা করাটাই উচিত। আমি অনেক খারাপ মানুষ। আমি যা করেছি আমি তার জন্য অনুতপ্ত চন্দ্রা। আমি তোমার মাকে ভালোবাসতাম। কিন্তু কিভাবে যেন ভুল পথে চলে গিয়েছিলাম। আমি তখন আমার মধ্যে ছিলাম না৷ তোমার মা আমার কারণে অনেক কষ্ট পেয়েছে। তোমার মায়ের জন্য আমি হয় তো এই জীবনে কিছু করতে পারি নি। আমি চাইনি তোমার মা আমার জন্য এই পৃথিবী থেকে আমাকে আর তোমাকে রেখে চলে যাক। তোমার মা আমার প্রথম ভালেবাসা। তোমার মাকে ভালো রাখার দায়িত্ব নিয়েছিলাম।কিন্তু কিভাবে নিজেই তোমার মায়ের কষ্টের কারণ হয়ে উঠেছি আমি বুঝতেই পারিনি। আমি আমার এই ভুলের জন্য সারাটাজীবন অনুতপ্ত। আমি শুধু তোমার মাকে হারাইনি৷ আমি তোমাকেও হারিয়েছি চন্দ্রা। তুমি ছিলে আমার আর তোমার মায়ের জানের টুকরো। আমরা ভীষণ ভালোবাসতাম তোমায়। তোমার জন্মের সময় ডাক্তার বলেছিল তোমাকে বাঁচানো কঠিন। আমি আর তোমার মা ভীষণ ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম। আমি সারাটা রাত বসে বসে দোয়া করেছিলাম। তোমার জন্মের পর তোমায় যখন প্রথম কোলে নিলাম, মনে হলো আমি নতুন জীবন পেয়েছি। আমি নতুনভাবে সুখে থাকার মাধ্যম পেয়েছি। তোমার ধীরে ধীরে বেড়ে ওঠা দেখেছি আমি আর তোমার মা। তুমি একটু পড়ে গিয়ে ব্যথা পেলে বুঁকের মধ্যে ছ্যাৎ করে উঠতো। তোমার হাসি দেখে আমি শান্তি পেতাম। অথচ আজ কত বছর ধরে তোমায় দেখতে পারি না৷ তুমি কত বড় হয়ে গিয়েছো। জানি না কেমন আছো। তবে আমি চাই আমার কন্যা সুখে থাকুক।
তোমার মায়ের সাথে সেদিন রাগারাগি করে আমি বাসা থেকে বের হয়ে যাই৷ আমার উচিত হয়নি তোমার সামনে সেরকম করা৷ আমি তোমার মায়ের গায়ে হাত তুলেছিলাম রেগে গিয়ে। এটা তুমি নিজের চোখে দেখেছো! তোমার মা কখনো চায়নি আমাদের মধ্যকার অসুস্থ সম্পর্ক দেখে তুমি বড় হও। আমিও চাইনি। ঐদিন আমি বাসা থেকে বের হয়ে শুধু তোমার কথা ভাবছিলাম। আমার মেয়েটা কি ভাববে! আমি ওর মার গায়ে হাত তুলেছি এটা দেখার পর ও কি আমাকে আর ভালোবাসবে? আমি আর ভুল কিছু করব না। সব ঠিক করে দিবো ভেবেছিলাম। কিন্তু আমি যখন বাসায় পৌঁছাই তখন তোমার মা আর নেই। তোমার মা আমার উপর অভিমান করে তখন অনেক দূরে চলে গিয়েছে৷ আর তুমি তোমার মায়ের লাশের পাশে বসে আছো। তোমার উপর দিয়ে তখন কি গিয়েছি তা হয়তো আমি বুঝবো না। আমি চেয়েছিলাম তারপর থেকে তোমাকে আগলে রাখতে। আমার কাছে রাখতে। কিন্তু তুমি আমার কাছে আসলে না৷ আমাকে ভুল বুঝলে। আমাকে ঘৃনা করা শুরু করলে। আমার তো অনেক কষ্ট হয়েছিল বাবা তোমাকে আমার থেকে দূরে রাখতে। তোমার হয় তো তেমন লাগেনি। কারণ আমি কেবলই তোমার কাছে তোমায় মায়ের মৃত্যুর জন্য দায়ী ব্যক্তি। চন্দ্রা তোমাকে ছাড়া এতো বছর থাকতে আমার ভীষণ কষ্ট হয়েছে। হ্যাঁ, আমি বিয়ে করেছি। নতুন সংসার বেধেছি। আমার আরও সন্তান আছে। কিন্তু তুমি আমার প্রথম সন্তান। তুমি আমাকে পিতৃত্বের অনুভূতি দিয়েছো। বাবা তার সন্তানকে কখনো ভুলতে পারিনি। আমি তোহরাব ভাইয়ের সাথে অনেকবার যোগাযোগ করেছি। তোমাকে আমার কাছে নিয়ে আসার অনেক চেষ্টা করেছি। কিন্তু তোহরাব ভাই জানিয়েছেন তুমি আমার কাছে আসতে চাও না। তুমি আমাকে ঘৃণা করো। এমনকি ঐ কাহিনির পরে তুমি মানসিকভাবে অসুস্থ হয়ে গিয়েছিলে। আমার কাছে গেলে কোনোরকমের সমস্যা হতে পারে। এটা শোনার পরে আমি আর জোর করিনি। কিন্তু তোমাকে দেখতে চেয়েছি। সেই সুযোগটুকু পাইনি। আমি দুইবার দেশে গিয়েছিলাম শুধুমাত্র তোমার সাথে দেখা করতে পারি নাকি এই আশা নিয়ে। কিন্তু তোহরাব ভাই আর তোমার নানা কিছুতেই তোমার সামনে আমাকে যেতে দিবেন না। কয়দিন আগেও তোহরাব ভাইকে ইমেইল পাঠালাম। তোহারাব ভাইকে জানালাম আমার ক্যান্সার হয়েছে। আমি বেশিদিন বাঁচবো না। শুধু মৃত্যুর আগে চন্দ্রার সাথে যোগাযোগ করতে চাই। হয় তো মৃত্যুর কথা শুনে তার আমার প্রতি একটু মায়া হলো। স্বাভাবিক, মানুষ মৃত্যুর পথে গেলে তখন তার প্রতি সকলের মায়া হয়। অনেকে তো শেষ ইচ্ছেও জানতে চায়। তোহরাব ভাই ভেবেছিলেন এটা হয় তো আমার শেষ ইচ্ছে। তাই তিনি তোমার মেইল এড্রেস দিলেন। তাই আমি তোমাকে শেষবারের মতো মেইল করলাম৷ আমি সারাজীবন তোমার ঘৃণা নিয়ে বেঁচেছিলাম। সারাটাজীবন চেয়েছি তোমার কাছে ক্ষমা চাইতে, তোমার কাছ থেকে ক্ষমা পেতে। পারলে আমাকে ক্ষমা করে দিও। মেইলটা পেলে অবশ্যই রিপ্লাই করো। অন্তত শান্তিতে মরতে পারব। এটা জেনে মরতে পারব আমার চন্দ্রা, আমার চাঁদের টুকরা আমাকে ক্ষমা করেছে। পারলে একবার বাবা বলে ডেকো।
–আফজাল চৌধুরী।❞
চন্দ্রা তারপর একই মেইল এড্রেস থেকে আরেকটা মেইল দেখতে পেল। এটা আরও দুই মাস পরে পাঠানো। চন্দ্রা তাড়াতাড়ি ঢুকলো ইমেইলে।
❝চন্দ্রা আপু, আমি আসিফ চৌধুরী, আফজাল চৌধুরীর ছেলে। আপনার সৎ ভাই বলতে পারেন৷ বাবার ইমেইল আইডি দিয়ে আমি মেইল করছি। কারণ বাবার মেইল আইডি থেকে মেইল করার জন্য বাবা আর এখন পৃথিবীতে নেই। হ্যাঁ, বাবা কাল সন্ধ্যায় মারা গিয়েছেন। বাবা মারা যাওয়ার কিছুক্ষণ আগে আমাকে ডাকলেন। আমি গিয়ে বাবার পাশে বসলাম৷ বাবার হাত দুটো ধরলাম। বাবা বললেন,
“আসিফ আমি মারা গেলো তোর চন্দ্রা আপুকে অবশ্যই খবরটা পাঠিয়ে দিস। ভেবেছিলাম মরার আগে একটাবারের জন্য হলেও আমার মেয়েটার মুখ দেখতে পারব৷ ও আমাকে ক্ষমা করে দিবে। আমার কাছে আসবে। আমাকে বাবা বলে ডাকবে। কিন্তু হলো না।”
বাবা কিছুক্ষণ কাঁদলেন। তারপর শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করলেন। বাবা আপনাকে অনেক ভালোবাসতেন। বাবার কাছে সবসময় আপনার গল্প শুনেছি। বাবা যেদিন থেকে জানতে পারলেন আর বেশি দিন সময় নেই তার হাতে তখন থেকে আপনার জন্য পাগল হয়ে উঠেছিলেন। আপনার জন্য খুব কান্না করতেন। সম্ভব হলে মৃত মানুষটাকে ক্ষমা করে দিয়েন আপু। হ্যাঁ, বাবা আরেকটা কথা বলে গিয়েছিলেন। আমাদের ছোট চাচা বাংলাদেশেই আছেন। তার কাছে গিয়ে একবার দেখা করবেন। বাবার আরও কিছু আপনাকে বলার ছিল। সেগুলো চাচার কাছে গেলেই জানতে পারবেন। আর যদি কখনো সম্ভব হয় এই দেশে এসে বাবার কবরটা দেখে যাবেন।
–আসিফ চৌধুরী।❞
চন্দ্রা মেইল দুটো পড়ার পরেই অস্বাভাবিক আচরণ শুরু করল। চন্দ্রার চোখ দিয়ে পানি পড়ছে। চন্দ্রা কাঁপছে। বিছানার চাদর খামচে ধরছে। সে নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারছে না। তার বুঁকে কেমন যেন একটা চাপা কষ্ট হচ্ছে। তার চিৎকার করতে ইচ্ছে করছে কিন্তু মুখ দিয়ে আওয়াজ বের হচ্ছে না। নিজের চুল টানা শুরু করেছে। সে উঠে গিয়ে রুমের দরজা লাগিয়ে দিল। তারপর সবকিছু ভাঙচুর শুরু করল। ভাঙা একটা কাঁচের টুকরো উঠিয়ে সেটা দিয়ে নিজেকে ক্ষত করল। রক্ত বের হচ্ছে। চন্দ্রা পাগলের মতো করছে৷
জাহানারা আর এহসান শব্দ শুনে এগিয়ে আসলেন। তারা দরজায় নক করলেন। কিন্তু চন্দ্রা শুনছে না। জাহানারা প্রণয়কে ফোন করলেন। প্রনয় আর প্রণয়িনী বাসার কাছাকাছিই ছিল। প্রণয় দ্রুত চলে আসলো। চন্দ্রার কথা শুনেই প্রনয় ভয় পেয়ে গেল। প্রনয় বাসায় এসে দরজায় নক করছে। চিৎকার করে চন্দ্রাকে ডাকছে। তাকে দরজা খুলতে বলছে। চন্দ্রা শুনছে না। দরজা খুলছে না। প্রনয় কোনো উপায় পাচ্ছে না কি করবে। এহসান সাহেব প্রনয়কে বলল দরজা ভাঙতে। জাহানারা তখন বললেন আগে লকের চাবি দিয়ে দেখতে খুলে কিনা৷ প্রনয় দ্রুত দরজা খুলল। দরজা খুলে দেখে চন্দ্রার অবস্থা খারাপ। প্রণয় তার বাবা মাকে বলল,
“চন্দ্রার একটু স্পেস লাগবে। আমি ওকে সামলে নিচ্ছি। তোমরা প্লিজ প্রণয়িনীকে নিয়ে সরে যাও।”
প্রণয়িনীকে নিয়ে এহসান সাহেব আর জাহানারা সরে গেলেন।
প্রনয় রুমে ঢুকে দেখে চন্দ্রার ভয়ানক অবস্থা। নিজের গায়ে হাত পায়ে কেটছে। পাগলামি করছে। কান্না করছে। কেমন যেন করছে। প্রণয়ের খুব চিন্তা হচ্ছে। না জানি কি হয়েছে। চন্দ্রর শ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছে। প্রণয় চন্দ্রাকে ধরে বলল,
“চন্দ্রা শান্ত হও। কি হয়েছেটা কি? আমাকে বলো।”
চন্দ্রা বলার চেষ্টা করছে। কিন্তু পারছে না৷ তার কথা আটকে যাচ্ছে। সে চিৎকার শুরু করল। প্রণয় চন্দ্রাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো৷ চন্দ্রার মাথায় হাত বুলিয়ে বলছে,
“চন্দ্রা শান্ত হও। নিশ্বাস নেওয়ার চেষ্টা করো৷ কান্না থামাও। আমার কথা শুনো।”
চন্দ্রা কান্না করতে করতে বলল,
“প্রণয় আফজাল চৌধুরী মারা গিয়েছে।”
“কি?”
“হ্যাঁ, আফজাল চৌধুরী মারা গিয়েছে। আমাকে মেইল করেছিল। আমি আফজাল চৌধুরীকে খুন করতে পারলাম না প্রণয়। আমার মায়ের মৃত্যুর প্রতিশোধ নিতে পারলাম না। প্রণয় আমার কি হবে? আমি, আমি আফজাল চৌধুরীকে খুন করার জন্য বেঁচে ছিলাম। আমার জীবনের লক্ষ্য ছিল আফজাল চৌধুরীকে খুন করে আমার মায়ের মৃত্যুর প্রতিশোধ নিবো। ও স্বাভাবিকভাবে কেন মরে গেল? কেন? কেন?”
চন্দ্রা চিৎকার করতে করতে জ্ঞান হারিয়ে পড়ে গেল। প্রণয় ডাকলো,
“চন্দ্রা! চন্দ্রা তাকাও। চন্দ্রা কি হলো?”
প্রণয় ভয় পেয়ে যাচ্ছে। সে দ্রুত চন্দ্রাকে নিয়ে হাসপাতালে গেল।
চলবে….