সেই তুমি? পর্ব -৩৬

0
2477

সেই তুমি?
পর্ব -৩৬
Samira Afrin Samia(nipa)

— ইফান এসব কেন বলছো?
আমি তো তেমন কিছুই করিনি।
ইফান হাসতে লাগলো
— তুই কিছু করিস নি?
কি করে পারিস তুই এসব কথা বলতে। আমার জীবনে এ পর্যন্ত যা যা হয়েছে তা সবই তো তুই করেছিস।
— ইফান আমি আমার ভুল বুঝতে পেরেছি। আর এজন্য আমি ইশিতার কাছে হ্মমা ও চেয়েছি। ইশিতা আমাকে হ্মমা করে দিয়েছে।
— সত্যি তুই তোর ভুল বুঝতে পেরেছিস?
তাহলে তো এটাও বুঝে গেছিস। ইশিতা কে ভুল বুঝে আমি তোকে বিয়ে করেছি। তোর বাবা আমাকে এক প্রকার জোর করে বাধ্য করেছে তোকে বিয়ে করার জন্য।
এখন যেহেতু তোর ভুল ভেঙে গেছে তাহলে তুই আমাকে ছেড়ে চলে যা। আমি ইশিতা কে এখনও ভালোবাসি। আমি ইশিতা কে আমার বাচ্চা কে ফিরে পেতে চাই।
— ইফান ইশিতা তোমাকে ভালোবাসে না। ইশিতা ইয়াশ ভাইয়ার সাথে অনেক সুখে আছে। তুমি আর তাদেরকে ডিস্টার্ব করো না। ইশিতা কে ইশিতার মত ছেড়ে দেও।
রিহা কথা শেষ করার সাথে সাথে ইফান রিহা কে চড় মারে।
— ইশিতা আমাকে ভালোবাসে না সেটা শুধু তোর জন্য।
ইশিতা আমাকে ভালোবাসে না বলে তুই আমাকে ইশিতা কে ছেড়ে দিতে বলছিস।
তাহলে আমি যে তোকে ভালোবাসি না,এখন তুই কি আমাকে ছেড়ে চলে যাবি?
রিহা কিছু বলতে পারছে না শুধু কেঁদে যাচ্ছে। তার ভুলের জন্য ইফান তাকে কখনও হ্মমা করবে না।
— যা হয়ে গেছে তাকে কি হাজার চেষ্টা করে ও পাল্টানো যাবে?
— কেন পাল্টানো যাবে না। তুই ইশিতা কে বলবি যা হয়েছে আমি ইশিতার সাথে যা যা করেছি তার জন্য তুই দায়ী। বলবি ইশিতা যেন আবার আমার কাছে ফিরে আসে।
— এটা সম্ভব না ইফান। তুমি কেন বুঝতে চাইছো না।
তুমি যেটা কে ভালোবাসা বলছো সেটা কি আদৌও ভালোবাসা?
তুমি যদি সত্যিকারে ইশিতা কে ভালোবাসতে তাহলে ওকে বিশ্বাস না করে আমার কথা বিশ্বাস করতে না।
ইফান রিহা কে মারতে এসেও থেমে গেল।
— তোকে ফ্রেন্ড ভেবে নিজের থেকেও বেশি বিশ্বাস করেছিলাম। যদি জানতাম তুই আমার বিশ্বাসের যোগ্য না। তোকে বিশ্বাস করা আমার জীবনের সব থেকে বড় ভুল তাহলে কখনও ই আমি তোকে নিজের ভালোবাসা থেকে বেশি প্রাইওরিটি দিতাম না।
রিহা তার ভুলের জন্য সত্যি ই অনুতপ্ত। তার পরও রিহা যা করেছে তার জন্য তাকে কোন দিনও হ্মমা না করাটাই স্বাভাবিক। রিহার তো ইফানের কাছে হ্মমা চাওয়ার ও কোন যোগ্যতা নেই।
— তোর জন্য এখন আমার সন্তান আমার পরিচয়ে জন্ম নিবে না। আমি তার মুখ থেকে কোন দিনও বাবা ডাক শুনতে পারবো না। সে কখনও জানবে না আমি তার আসল বাবা।
যেভাবেই হোক আমি ইশিতা কে আবার ফিরিয়ে আনবো। আমার সন্তান কে আমার পরিচয়ে বড় করবো। এর জন্য আমাকে যা যা করতে হবে আমি তাই তাই করবো।
রিহা ইফানের কথায় কিছু উত্তর দিচ্ছে না। নিরবে শুধু কেঁদে যাচ্ছে। রিহা কে কাঁদতে দেখে ইফান আরও রেগে গেল।
— বন্ধ কর তোর ন্যাকা কান্না। এই কান্না শুধুই তোর নাটক আমার মন গলানোর জন্য। আমি তোকে খুব ভালো করে চিনি। তুই নিজে কখনও কাঁদিস না। অন্য কে কাঁদাস তুই। অন্য কে কষ্ট দিয়ে কাঁদাতে তুই আনন্দ পাস।
ইফান রিহা কে রুম থেকে বের করে দিয়ে ভেতর থেকে দরজা লাগিয়ে দিলো। রিহা কাঁদতে কাঁদতে দরজা ঘেসে নিচে বসে পড়লো। সারা রাত রিহা রুমের সামনে বাইরে ই বসে থাকলো। কাঁদতে কাঁদতে রিহা কখন এখানে বসেই ঘুমিয়ে গেল তা খেয়াল নেই।
সকালে ইশিতা এসে রিহা কে ঘুম থেকে তুলে।
— রিহা এই রিহা।
ইশিতা কয়েক বার ডাক দিলে রিহার ঘুম ভেঙে যায়। রিহা ঘুম ঘুম চোখে তাকিয়ে
— ইশিতা তুমি?
— হুম আমি।
তুমি এখানে কি করছো?
রুমের বাইরে বসে ঘুমিয়ে আছো কেন? ভেতরে কে?
সারা রাত কি এখানেই ছিলে?
রিহা কিছু বলার আগে ইফান দরজা খুলে বের হয়ে আছে।
ইশিতা ইফান কে দেখে সব কিছু বুঝে গেল। রিহার আর কিছু বলতে হলো না।
— আসলে ইশিতা
— থাক রিহা। যা বুঝার আমি বুঝে গেছি। আর কিছু বলতে হবে না।
ইফান ইশিতা কে কিছু বলতে চাইলে ইশিতা ইফান কে বাঁধা দিয়ে
— আমি তোমার কোন কথা শুনতে চাই না। তোমার সাথে কথা বলতে আমার রুচিতে বাঁধছে।
তুমি এতটা নিচ তা আমার ভাবতেও অবাক লাগছে।
রিহা তোমাকে ভালোবাসে। কেন তুমি ওকে কষ্ট দিচ্ছো। কেউ ভুল করলে তাকে কষ্ট না দিয়ে হ্মমা করে দেওয়া উচিত।
— তাহলে তুমি আমাকেও হ্মমা করে দেও। আমি ও তো আমার ভুল বুঝতে পেরেছি।
— আমি তোমাকে অনেক আগেই হ্মমা করে দিয়েছি।
— হ্মমা করে দিয়েছো। তাহলে আমার কাছে কেন ফিরে আসছো না। কেন ভাই কে এখনও ডিভোর্স দিচ্ছো না।
— তোমার মাথা ঠিক নেই।
তুমি কি বলছো তা বুঝতে পারছো না। আমি তোমাকে হ্মমা করে দিয়েছি তার মানে এই না আমি ইয়াশ কে ডিভোর্স দিবো। আর তোমার কাছে ফিরে যাবো।
— তুমি আমার কাছে ভালো ভাবে ফিরে আসতে না চাইলে ও আমি তোমাকে আমার করে নিব।
— তোমার যা ইচ্ছে হয় তুমি তাই করতে পারো।
— তোমাকে না পেলেও আমি আমার সন্তান কে আমার কাছে নিয়ে আসবো।
ইশিতা এবার ইফানের কথা শুনে জোরে চিৎকার করে উঠলো
— ইফান।
— আমার সন্তান কে আমার কাছে নিয়ে আসলে তখন তুমি বাধ্য হয়ে বাচ্চা টার জন্য আমার কাছে আসবে।
— তুমি এমন কিছুই করতে পারবে না।
— তাহলে দেখ ই না। এই ইফান কি কি করতে পারে।

আজকাল ইশিতার ভিষণ ভয় হয়। ইফান ঐদিন যা বলেছে তা যদি ও করে দেখায় তাহলে ইশিতা কি করবে। ইফান যদি সত্যি ই বাচ্চা টা কে তার কাছে নিয়ে যায়। ইশিতা তার বাচ্চা ছাড়া কি করে বাঁচবে?
নিজের থেকে নিজের বাচ্চা কে কিছুতেই আলাদা হতে দিবে না ইশিতা।
ইয়াশ বাইরে আছে। বাসায় যা হচ্ছে এসব ব্যাপারে কিছুই জানে না। ইশিতা ইয়াশ কে কিছু জানায়নি। ইয়াশ এসব শুনলে শুধু শুধু চিন্তা করবে।

ইয়াশ বাইরে গেছে এক সপ্তাহ হয়ে গেল। আর কিছু দিনের মধ্যে কাজ শেষ করতে পারলে খুব তাড়াতাড়ি ফিরে আসবে।
আজ নাজমা চৌধুরী বাসায় ফিরে আসবেন।
ইয়াশ সকাল থেকে ফোন করেনি। ইশিতার মন আনচান করছে। প্রতি দিন তো এই সময়ের মধ্যে হাজার বার ফোন দিয়ে খোঁজ নেয়। এটা সেটা কত কিছু বলে ইশিতা কে শাসন করে।
ইশিতা একবার চিন্তা করছে। আবার নিজেই নিজেকে বুঝাচ্ছে। হয়ত আজ কাজ অনেক তাই ফোন দিতে পারছে না। কাজ শেষ হলে ঠিকই ফোন দিবে।
দুপুর গড়িয়ে বিকেল হয়েছে। ইশিতা দুপুরে খেয়ে রুমে এসে একটু ঘুমিয়ে গেছিল। এখন ঘুম ভাঙলে ওয়াশরুমে গেল চোখে মুখে পানি দেওয়ার জন্য।
ইশিতা চোখ পানি দিতে দিতে আয়নায় তাকিয়ে ইয়াশের কথা ভাবছিল। কি হলো ইয়াশের সারা দিনে একবার ও কল করলো না। ইশিতার খোঁজ নিলো না। ইয়াশ ঠিক আছে তো। বলতে বলতেই ইশিতার ফোন বেজে উঠলো। ইশিতা বেডের উপর ফোন রেখে এসেছিল। মনে হয় ইয়াশ ফোন করেছে। ইয়াশ কে ছাড়া এসময় আর কে ফোন করবে। ইশিতা ব্যস্ত হয়ে তাড়াহুড়ো করে ওয়াশরুম থেকে বের হতে গেলে কিভাবে যেন পা পিছলে নিচে উপুড় হয়ে পড়ে যায়। পড়ে যাওয়ার সাথে সাথে ইশিতা মা গো বলে চিৎকার দিয়ে উঠলো।
বাসায় কেউ নেই। শুধু রিহা আছে। রিহা কি ইশিতার চিৎকার শুনতে পেয়েছে?
ইশিতা পড়ে যাওয়ার পর পেটে প্রচন্ড ভাবে আঘাত লাগে। ইশিতা পেটে হাত দিয়ে কুঁকড়ে জোরে জোরে চিৎকার করছে। পুরো ফ্লোর রক্তে বেসে যাচ্ছে। চোখের সামনে সব কিছু অন্ধকার দেখছে ইশিতা। কতটা কষ্ট হচ্ছে তার পরিমাপ করা যাবে না। এই মুহূর্তে ইশিতার শুধু একটাই ভয় হচ্ছে ওর বাচ্চার কিছু হবে না তো। ওর বাচ্চা ঠিক আছে তো? সব কষ্ট সহ্য করে ইশিতা নিজের বাচ্চার কথা চিন্তা করে প্রানপন চেষ্টা করছে উঠে দাঁড়াতে। তবে ইশিতা কোন ভাবেই নিজেকে তুলে দাঁড় করাতে পারছে না। অসহ্য যন্ত্রণা আর সহ্য করতে পারছে না ইশিতা।
রিহা নিজের রুমেই বসে আছে। ইফান কে নিয়ে ভাবছে। ইফান কি কখনও রিহা কে হ্মমা করবে না? রিহা তো তার ভুল বুঝতে পেরেছে। সে যা করেছে তা অন্যায় কিন্তু কেউ তার অন্যায় স্বীকার করলে তো তাকে হ্মমা করে দেওয়া উচিত তাকে একটা সুযোগ দেওয়া উচিত।
এসব ভাবতে ভাবতেই রিহার মনে হলো ইশিতা তাকে ডাকছে। আর ইশিতার কষ্ট স্বাভাবিক শুনাচ্ছে না।
— ইশিতা কি সত্যিই আমাকে ডাকছে নাকি আমার মনের ভুল?
রিহা আবার শুনতে পেল ইশিতা ইয়াশের নাম ধরে ডাকছে।
— আচ্ছা ইশিতা তো জানে ইয়াশ ভাইয়া বাসায় নেই তাহলে শুধু শুধু কেন ভাইয়া কে ডাকতে যাবে?
ইশিতা সত্যি ই ইয়াশ কে ডাকছে। এখন এই সময় ইয়াশে ই ইশিতা খুব করে পাশে চাইছে। ইয়াশ কে ছাড়া নিজেকে অনেক অসহায় মনে হচ্ছে।
— না দেখেই আসি। ইশিতার কি হলো কেন ভাইয়া কে ডাকছে।
রিহা ইশিতার রুমের দিকে যতই এগুচ্ছে ততই তার মনে অজানা একটা ভয় কাজ করছে। ভয় করার কারণ হলো ইশিতা অস্বাভাবিক ভাবে একবার ইয়াশ কে ডাকছে আরেক বার রিহা কে ডাকছে। নয়তো মাঝে মাঝে মা,মা বলে চিৎকার করছে।
— ইশিতার কিছু হলো না তো? ইশিতা ঠিক আছে নাকি
রিহা আর কিছু ভাবতে না পেরে দৌঁড়ে ইশিতার রুমে আসে। রুমে কোথাও ইশিতা নেই।
— ইশিতা কোথায় তুমি?
রিহার কন্ঠ শুনতে পেয়ে ইশিতা মনে হয় নতুন করে জীবন ফিরে পেল। ইশিতা রিহা বলে ডেকে উঠলো। রিহা ওয়াশরুম থেকে ইশিতার কথা শুনতে পেয়ে দৌঁড়ে গেল। রিহা ইশিতা কে নিচে পড়ে থাকা অবস্থায় দেখে ইশিতা বলে চিৎকার দিয়ে ইশিতার পাশে গিয়ে বসলো।
— কি হয়েছে তোমার এ অবস্থা কি করে হলো তোমার?
রিহা ও অনেক ভয় পেয়ে গেল। ওয়াশরুম রক্তে লাল হয়ে গেছে। ইশিতা পেটে হাত দিয়ে কুঁকড়ে আছে।
— রিহা আমার বাচ্চা।
ইশিতা শুধু আমার বাচ্চা, আমার বাচ্চা বলে কেঁদে যাচ্ছে।
— কিছু হবে না তোমার। আর তোমার বাচ্চার ও কিছু হবে না। আমি আছি তো।
— আমার বাচ্চা।
— আমি আছি তো তোমার পাশে। দেখো আমি তোমাদের কারোর ই কিছু হতে দিব না।
রিহা কি করবে তা ভেবে পাচ্ছে না। ইশিতা কে হসপিটালে নিয়ে যেতে হবে। তবে একা একা কি করে ইশিতা কে হসপিটালে নিয়ে যাবে। বাসায় কেউ নেই কার কাছে সাহায্য চাইবে। এদিকে ইশিতা ব্যথায় এখনও চিৎকার করে যাচ্ছে। যেভাবে ব্লিডিং হচ্ছে এতে ইশিতার বাচ্চা ঠিক আছে তো?
রিহা কিছু বুঝতে না পেরে ইফান কে ফোন করে। অনেক বার রিং হয় কিন্তু ইফান ফোন তুললো না।
— এভাবে বেশিক্ষণ ইশিতা কে রাখা যাবে না। তাহলে ওর আর ওর বাচ্চা দু’জনের ই হ্মতি হতে পারে।

চলবে…..

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here