#মন_কেমনের_বৃষ্টি
#পর্ব_১২(সিজন ২)
#পুষ্পিতা_প্রিমা
পরীকে আফি অনেক খুঁজল। রান্নাঘরে দেখল পিহু। সোফায় শুয়ে শুয়ে গেমস খেলছে মাহিদ। উল্টাপাল্টা কিসব বলে বিড়বিড় করছে।
রেহান আর আদি বাসায় নেই। আফি পিহুকে ডাক দিল। বলল,
‘ পরীমা কোথায়?
পিহু ঠোঁট উল্টে বলল,
‘ পরীমা কে চোখে হারাও তুমি। আমাকে তো চোখেই দেখোনা।
আফি বলল,
‘ তুমি সবার অনেক আদর পাইছো। পরীমা তো দূরে ছিল। ওই ছোট থাকতে একটু আদর করতাম। ওরেবাবা ধরতে না ধরতে হাত তুলে বলত,
‘ আফফি মাববো।
আর মাইরগুলো ও শক্ত। ঠাসস ঠাসস মারতো। ওই মাইরের ভয়ে আমি তাকে কোলে নিতাম না। চুল গুলো টানতে থাকত। যেন গালের ভেতর দিয়ে খেয়ে ফেলবে।
পিহু খিক করে হেসে দিল। আফি বলল, তুমি নাকি শান্ত ছিলে অনেক। ফোন দিলে আদি বলত তোমার কথা। সারাক্ষণ মেয়ের কথা বলত।
পিহু সামনের চুলগুলো নিয়ে খেলতে খেলতে আহ্লাদি সুরে বলে,
‘ পাপা আমাকে অনেক ভালোবাসে। সবার চাইতে বেশি।
আফি বলল,
‘ এইভাবে বইলোনা। পরী কষ্ট পাবে। পরী মারে ও ভালোবাসে। তুমি তো অনেক দেরিতে হইছো, পরীরে দেখার জন্য তোমার বাপ নাকি ওই খান বাড়ি চলে যেত। মাঝেমাঝে আসত ও না। ওখানে থেকে যেত। ব্যাটা মেয়ে পাগল। পরদিন পরীকে সঙ্গে করে নিয়ে আসত।
পিহু বলল,
‘ দিদিয়াকে সবাই আমার চাইতে ও বেশি ভালোবাসে। দিদিয়ার মা তিনটা বাবা তিনটা। বড় মামা ছোট মামা,বড় মামি,ছোট মামি সবাই ওর মা বাবা। পাপা আর মাম্মা তো আছেই।
আফি বলল,
‘ তুমি মন খারাপ কইরোনা। তোমারে সবাই পরী মার মতো ভালোবাসে। তুমি সবার ছোট না?
মাহিদ গেমস খেলতে খেলতে বলল,
‘ তোর টাকওয়ালা জামাই তোরে দেখতে পারবো। আর কারো আদর মহব্বত তোর লাগত না বাপ। শোক পেলাইস না তো। যাহহ এইখান থাইকা। আমার মনোযোগ ছুইটা যাইতাছে।
পিহু মুখ মোচড়াল। বলল, কচুর গেমস খেলছ তুমি। কানটা তো এইখানে।
মাহিদ পা নাড়তে নাড়তে বলল,
‘ তুই বাপ জানস আমার মুখের আগে হাত চলে বেশি। তারপরে ও তুই লাগতে আসোস ক্যান?
পিহু দৌড় লাগাল। সিড়ির কাছে গিয়ে জিহ্বাটা লম্বা করে বের করে দিয়ে মাহিদকে ব্যঙ্গ করে বলল,, ভ্যা ভ্যা ভ্যা।
মাহিদ রেগে গেল। পিহু বলল, পাপা দিদিয়া বড়মার রুমে। আমি ডেকে আনছি। তুমি আসো।
মাহিদ সোফা ছেড়ে উঠে দাঁড়াল। শার্টের হাতা গুটাতে গুটাতে বলল,
‘ শালী তোরে আজ আমি খাইছি। যমের বাপের লগে তোরে বিয়া দিয়া শ্বশুড়বাড়ি পাঠাই দিমু।
পিহু দৌড় লাগাল। চেঁচিয়ে বলল,
‘ বড়পাপা আমাকে বাঁচাও। মাহিদ্দে আমাকে মেরে ফেলবে। কুত্তা। মাহিদ্দের বাচ্চা মাহিদ্দে।
মাহিদ দৌড় আর ও জোরে লাগাল। আফি বলল,
‘ আরেহ পড়ে গিয়ে দুইজন একসাথে মাথা ফাটবি। মাহি আর দৌড়াস না রে। পড়ে গিয়ে ব্যাথা পাবি। পিহুরে আর দৌড়াস না। পিহু ছাদের সিড়ি ধরল। ভয়ে গলা শুকিয়ে গেছে। মাহিদ ভাই আজ তার হাড়ঁগুড় আস্ত রাখবেনা দেখা যাচ্ছে। পিহুর পা কাঁপল। হামাগুড়ি দিয়ে হলে ও সিড়ি বেয়ে বেয়ে ছাদে উঠে গেল। ছাদের দরজা বন্ধ করার আগে তার সামনে হাজির হলো মাহিদ। কোমরে হাত দিয়ে বলল,
‘ তুই বাপ এবার কার কাছে যাইবি। তোরে আজ আমি যমের বাপের লগে বিয়া দিয়া ছাড়ুম।
ভয়ে পিহু কেঁদে দিল। বলল,
‘ আর কখনো বলব না মাহিদ ভাই। কানে ধরছি। উঠবস করতে বললে উঠবস করব। আমাকে মেরোনা।
মাহিদ ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে বলল,
‘ না না কোনো ক্ষেমা নাই বাপ। তোর সাহস বাইড়া যাইতাছে। তোরে প্রশয় দিলে তুই আমার মাথার উপর উইটা নাচবি।
পিহু কছম কেটে বলল,
‘ আমি নাচব না। আমি নাচতে জানিনা মাহিদ ভাই। সত্যি।
মাহিদ এগিয়ে গেল। পিহু দৌড় লাগাল।
দৌড়াতে দৌড়াতে বলল,
মাহিদ ভাই বৃষ্টি পড়ছে তাই ছাদ পিচ্ছিল হয়ে গেছে। আমি পড়ে গেলে হাত পা ভেঙ্গে যাবে। মাহিদ বলল,
‘ তুই বাপ তয় দৌড়াস ক্যান??
থামমম। আমি তোরে মাইরা লয়। মাইর শেষ হলে চইলা যামু। আয়। আয়। থামম।
কথা শেষ করতে না করতে পিহু চিৎপটাং হয়ে পড়ে গেল। ওমারে বলে চিৎকার করে উঠল।
মাহিদ ধরে ফেলল। পিহু হুমড়ি খেয়ে পড়ল তার উপর। মাহিদ মাথায় হাত দিয়ে বলল,
‘ ওরেব্বাপ আমার মাথা ফাইটা গেছে গা। ওরেব্বাপ ডাক্তারের বাচ্চি তুই আমারে মাইরা ফেললি। আমার মাথা গেছে গা।
চোখ বন্ধ করে বলল,
‘ আমি মইরা গেছি। তুই ইন্নালিল্লাহ পড়। পড়।
পিহু মাহিদের কান্ড দেখে দেখে হেসে দিল। গালে দুহাত দিয়ে তাকিয়ে থাকল। মাহিদ চোখ বন্ধ অবস্থায় বলল,
‘ ইন্নালিল্লাহ পড়ছস বাপ?
পিহু হেসে উঠল। বলল,
‘ নাআআআ।
মাহিদ চোখ খুলল। সাথে চিৎকার দিয়ে বলল,
‘ ওরেব্বাপ তুই আমার উপর কি করতাছোস? ওরেব্বাপ তুই সর। আমি মইরা যাইতাছি।
পিহু ভ্রু কুঁচকে বলল,
‘ কি করতাছোস মানে কি? কি করব? অসভ্যের মতো কথা বলবে না।
মাহিদ বলল,
‘ আমারে এভাবে চাইপা ধরসছ ক্যান। আল্লাহ গো তুই আমারে মাইরা ফেলবি।
পিহু বলল,
‘ আমি তোমার উপর কোথায়? তোমার পাশে। হুহহ।
তোমার গায়ের উপর পড়ার কোনো শখ আমার নাই।
মাহিদ কিছু একটা ভাবল। বলল,
‘ ধুরর এইডা কিছু হলো। তুই বাপ হিরোর গায়ের উপর পড়ার লাইগ্যা ওইভাবে দৌড়তাছিলি?
তুই হিরোইন হইলে মাগার আমি তোর গায়ের উপর পড়তাম। কিন্তু তুই বাপ তো জংলী। এইবার আল্লাহর ওয়াস্তে তুই সর। আমারে উঠতে দে।
পিহু সরল না। আর ও একটু ঝুঁকে পড়ে বলল,
‘ মাহিদ ভাই আমি সরতে পারছিনা। কিভাবে সরতে হয়?
মাহিদ চোখ ছোট ছোট করে তাকাল।বলল,
‘ ওরেব্বাপ তোর চুলগুলা সরা। আমার মুখের উপর নাচতাছে এগুলা। সর নারে বাপ। তুই এত ত্যাড়া ক্যান। আমার মাথায় হেব্বি লাগছে। দেখবি এই মাথা ফুইলা আজ ফুটবল হইয়্যা যাইব।
পিহুর খারাপ লাগল। বলল,
‘ বেশি ব্যাথা পেয়েছ?
মাহিদ ঠেলে দিল পিহুকে। বলল,
‘ আমার হাতে শক্তি নাই নইলে তোরে এক ধাক্কায় ছাদ থেইকা ফালায় দিতাম বাপ। দরদ দেখাইতে আইছস?
পিহু আচমকা লজ্জা পেল। কি যেন ভেবে বলল,
‘ যাহহ।
মাহিদ ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে তার যাওয়া দেখল। আবার ছাদের মেঝেতে বসে বলল,
‘ ওরেব্বাপ এই শালীরে আমি মারার আগে আমি নিজে মইরা গেলাম। বাপরে বাপপ ওই শালী আবার যাহহ বইলা চইলা গেল। আমি আইতাছি হাড়া তুই ডাক্তারের বাচ্চি।
_____________
পরী তার রুমে এল। আফিকে দেখে বলল,
‘ বড়পাপা তোমার সাথে কোনো কথা নাই। আমি তোমার সাথে কোনোকথা বলতে চাইছিনা।
আফি গিয়ে চেয়ার টেনে বসল। বলল,
‘ তোমার সাথে গল্প করতে আসছি না? তুমি তো এখন আমারে চোখে দেখোনা?
পরী কাপড় ভাঁজে মনোযোগ দিল। পিহু আসল হাসতে হাসতে। আফি বলল,
‘ তুমি হাসতেছ কেন? তোমারে মারেনাই মাহি?.
পিহু বলল, আমাকে মারতে গিয়ে নিজে খেয়ে বসে আছে।
মাহিদ আসল। পরীকে টেনে খাটে বসাল। তারপর মাথা দিয়ে শুয়ে পড়ল। বলল, আমার মাথায় ওই হারামি গুতা মারছে। ফুইলাগেছে গা। দেখো। আমার ব্যাথা লাগতাছে।
আফি বলল,
‘ আর ও মারামারি কর।
পিহু বলল,
‘ বড়পাপা আমি কিছু করিনি। এই ছেলে খালি মিথ্যা বলে।
মাহিদ পরীকে বলল, তোমারে মালিশ করতে কইছি বাপ। বিলি কাটতে বলিনাই । তোমার জামাইর চুলে বিলি কাইট্যা দিও। রেহান ভাইয়ের চুলে বিলি কাইট্যা আরাম পাইবা। আমি অন্যের জামাই।
পরী ডাক দিল, মাহি??
পিহু জিহ্বায় কামর দিল। আফি বলল,
‘ আমি কিছু শুনিনাই মা।
পরী বলল,
‘ তুমি যাবে কি যাবে না? আমার রাগ উঠছে বড়পাপা ।
মাহিদ বলল, আমার রাগ তুমি তোমার বড়মার জামাইর উপর দেখাইতাছো ক্যান?
পিহু বলল, কচুর জামাই। বড়মাকে একটু ও দেখতে পারেনা।
মাহিদ বলল,
‘ ওইইই বেয়াদব। চোপপপ। বড়রা কথা বলতাছে সেখানে তুই কি?
পিহু মুখ মোচড়ালো। আফি বলল,
‘ এটা কোনো কথা হলো। আমি তোমার বড় মারে ভালোবাসিনা কে কইছে? তারে ভালো না বাসলে আমি আরেকটা বিয়া করতাম না?
মাহিদ হাত নেড়ে বলল,
‘ তারপর?
পিহু বলল,
‘ তুমি তো মদ খেতে বড়পাপা। কাল পাপার মুখে শুনেছি।
আফি ধরা খেল। বলল, তো সে ও তো খাইতো। সে ও তো অনেকবার খাইছে। শুধু শুধু আমারে দোষ দেই।
পরী বলল,
‘ তুমি রাস্তার মেয়েদের টিজ করতে?
আফি মাথা নিচু করে বলল,
‘ ওই না। ধুরর তখন একটু হিরো হিরো ভাব ছিল না, মাইয়্যাগুলা আমারে দেখলে পটে যাইত। আমি ও একটু নাচাতাম আর কি? বিয়া তো শুধু একডারে করছি।
মাহিদ লাফ দিয়ে উঠল। বলল,
‘ ওহহহহ আন্কেল বুকে আসো। আসো।
পিহু ভেংচি কেটে বলল,
‘ এখানে তোমার মতো আর ও একটা ভুয়া হিরো আছে। মদ ছাড়া বাকি সব করে।
মাহিদ ধমক দিল।
‘ হেইই চোপপ বেয়াদব। আমি টিজ করি মাইয়াদের???
মাই্য়্যাগুলা আমারে টিজ করে। আমি সুন্দর পোলা তাই। তুই বেডি কি জানস?
পিহু বলল, বেডি তোমার বউরে ডাইকো।
মাহিদ আফিকে বলল,
‘ বড় আন্কেল তুমি জানো? আমার আঙুল দিয়ে ইশারা করলেই মাইয়্যাগুলা পটে যাই। টুমটুনি পাখি,ময়না পাখি ডাকলে তো ফিদা। আফি বলল,
‘ ধুরর ব্যাটা তুই তো ইশারা করতি। আমার কিছু করা লাগত না। আমি পাশ দিয়া হাইটা গেলেই হইতো।
মাহিদ চুপ হয়ে গেল। পরক্ষণে বলল, ধুরর তুমি মিছা কথা কও। এরকম কিচ্চু হইনায়।
আফি হা করে তাকায় থাকল। পিহু বলল,
‘ তোমাকে সবকিছুর উপরে থাকতে হবে না?
মাহিদ রেগে গেল। হাত দেখিয়ে বলল,
‘ তোর মুখ বরাবর আমি ঠাসসস ঠাসসস কইরা এমন মারা মারুম, জীবনে ও আর কথা কইতে পারবি না বাপ।
পিহু সরে দাঁড়াল। বলল, সারাক্ষণ শুধু মাইরের কথা। অন্যকিছু ব্যাটার মুখে আসেনা।
মাহিদ হাত নেড়ে আফিকে বলল, তারপর???
পরী বলল,
‘ বড়মাকে সরি বলে এসো পাপা। যাও।
আফি হকচকিয়ে গেল। বলল,
‘ ধুরর সরি কেন? আমি কইছি না তোমার বড়মারে আমি ভালো টালো বাসি। আর কিছুর দরকার নাই। আমার সামনে থ্যাইকা সইরা কি তার ভালো হইছে। লেংগা হয়ে আসছে।
পিহু চুল নিয়ে খেলতে খেলতে বিড়বিড় করে বলল,
‘ কচুর ভালোবাসা। কোনো আউটপুট তো হইনায়। দাভাই তো অন্য কারো আউটপুট। হুহহ ভালুপাসা? কচু।
আফি বলল, পিহুমা তুমি কিছু কইছো?
পিহু হেসে বলল, নাহহ। বললে তো শুনতে।
পরী বলল, যাও। বড়মাকে সরি বলে আসো। ক্ষমা চেয়ে আসো।
মাহিদ বলল,
‘ তোমার ছেলেকে ও সরি বলবা। দিদিয়া তার নাম ধরতে চাইতাছে না।
পিহু বলল,
‘ বড় পাপা যাও। যাও। নইলে তোমার সাথে কথা নাই।
রাইনা হুইল চেয়ার চালিয়ে নিজের ঘরের দিকে চলে যাই হাসতে হাসতে। বুইড়া ব্যাটার এতদিন পর ভালোবাসা জাগ্রত হচ্ছে। বেয়াদব ব্যাটা মেয়েদের সাথে নাকি এসব উল্টাপাল্টা কথা বলছে। লজ্জা শরমের বংশ নাই। তখন ও ছিল না। এখন ও নাই।
আফি উঠে দাঁড়াল। বলল, আচ্ছা বলব। আমি নিজেকে একটু প্রস্তুত কইরা লয়। আমার শরম করেনা?????
পিহু বলল, হুহহ, মনে হইতাছে তুমি বড়মাকে প্রপোজ করতে যাচ্ছ। আচ্ছা যাইহোক একটা ফুল ও নিয়া যাইয়ো। বড়মা খুশি হবে।
আফির শরম লাগল। তাড়াতাড়ি কেটে পড়ল সেখান থেকে।
____________
রেহান বাইরে থেকে আসল। সোফা থেকে উঠে পরী সাথে সাথে চেঁচিয়ে উঠল । রেহানের দিকে না তাকিয়ে চেঁচিয়ে বলল,,
‘ ইয়াককক সব কাঁদা। সব কাঁদা। পিহু বাইরে জুতা খুলে আসতে বলো। পিহু!!!!
পিহু দৌড়ে আসল। বলল, কি হয়েছে দিদিয়া?
পরী বলল, কাঁদা।
রেহান নিজের পায়ের দিকে তাকাল। পিহু বলল, দাভাই তোমার জুতোয় কাঁদা। জুতো বাইরে খুলে আসো।
রেহান জবাব দিল না। বলল,
‘ ভুলে গিয়েছি। সরি। রাস্তার ছেলেদের যে জুতো খুলে সম্ভ্রান্ত বাড়িতে ডুকতে হয় তা ভুলে গিয়েছি। সো সরি।
পিহু বলল, দিদিয়া ওভাবে বলেনি দাভাই। তুমি ভুল বুঝছ।
রেহান কিছু বলল না। জুতো বাইরে খুলে চলে আসল। পরী তার জায়গায় দাঁড়িয়ে রইল। ইশা হাতে প্লেট নিয়ে এগিয়ে এল। পিহুকে বলল, কি হয়েছে?
পিহু কিছু বলল না। ইশা পরীকে বলল, কি হয়েছে পরী? পরী চুপচাপ নিজের ঘরে চলে এল। কিছু বলল না।
রেহান রাইনার ঘরে যেতে না যেতেই রাইনা প্রশ্ন করল।
‘ নিচে কি হয়েছে?
রেহান বলল,কিছু হয়নি।
রাইনা বলল, তুই কেন করছিস এমনটা? ওইদিন নাকি ডিভোর্স দিয়েই দিচ্ছিলি? কি হয়েছে তোর?
রেহান বলল, ডিভোর্স দিয়ে দিচ্ছিলাম সেটা তোমার কানে এসেছে, আর ডিভোর্স নিতে এসেছিল সেটা কানে আসেনি?
রাইনা বলল, পরী?
রেহান বলল, মা প্লিজ। বাসায় আসার সাথে সাথে আমার মাথা খারাপ করোনা। আমার এসব ভালো লাগছেনা।
রাইনা কিছুক্ষণ চুপ থাকল। রেহান ফ্রেশ হয়ে অনেক্ষণ পর আসল। রাইনা বলল,
‘ কি চাইছিস তুই? সম্পর্কটা এখানেই থেমে থাকবে?
রেহান কিছুক্ষণ বিরক্ত নিয়ে তাকাল মায়ের দিকে। তারপর মায়ের কাছে গিয়ে বসল। মায়ের হাত নিজের হাতের মুঠোয় নিয়ে বলল,
‘ কোথাও একটা গ্যাপ থেকে যাচ্ছে মা। পরী এ বাড়ির মেয়ে। আর আমি কোন একটা বস্তির ফকিরের ছেলে। জন্মপরিচয় ঠিক নেই আমার। আগে কখনো এমনটা মনে হয়নি। কিন্তু ড্যাড আমাকে সত্যিটা আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে। আমি নিজেকে সেই জায়গায় ভেবেছি। যদি তোমরা কখনো আমাকে না পেতে। আমার বাসা হতো ওই নোংরা বস্তি। পরী হতো ওই আকাশের চাঁদ। আমি তাকে ছোঁয়া তো দূরে থাক মা, দেখতে ও পেতাম না। তোমাদের কারণে আমি এই জায়গায় দাঁড়িয়ে আছি। সেই আমি কি করে পরীর সাথে নিজেকে ভাবতে পারি? এতটুকু যদি বিয়েটা হওয়ার আগে বুঝতাম তাহলে কখনোই এই বিয়ে আমি করতাম না। পরীকে নিজের জীবনের সাথে জড়াতাম না। পরী আমার সাথে ভালো নেই মা। ও আমার চাইতে ভালো কাউকে ডিজার্ভ করে। আমি ওর যোগ্য নই। ও আমাকে দয়া করে মেনে নিতে পারে। চ্যালেঞ্জ নিয়ে ভালোবাসার অভিনয় করতে পারে। কিন্তু সত্যিকারের ভালোবাসতে কখনোই পারবেনা। পরীর জায়গায় আমি থাকলে আমি ও পারতাম না। কারণ কোথায় পরী? আর কোথায় আমি? আমার নিজেকে খুব ছোট মনে হয় মা। আমি যদি ওই বস্তির কোনো এক অসহায় মেয়েকে বিয়ে করতাম তাহলে ও দিনশেষে এই অনুতাপ আমাকে কুঁড়ে কুঁড়ে খেত না। কারণ আমি ও তো ওই বস্তিরই ছেলে।
রাইনার দুচোখ টলমল করে উঠল। বলল, রেহান কি উল্টাপাল্টা বকছিস তুই?
রেহান বলল,
‘ উল্টাপাল্টা নয় মা। তিক্ত হলে ও সত্যি এটাই। ভুল তোমরা করেছ, আমাকে এই বাড়িতে এনে। যদি আমি এই বাড়িতে না আসতাম, তাহলে কখনো পরীর সাথে আমার দেখা হতোনা। আর সেই ছোটকাল থেকে আমি ও আর,,
যাইহোক আমি পরীকে মুক্তি দিয়ে দেব। ওকে ওর মতো করে ভালো থাকতে দেব। ও ভালো থাকুক। আমি ও ভালো থাকব। আমার রিক আন্কেলের সাথে কথা হয়েছে।
উনি বলেছেন, উনার ভুলের প্রায়শ্চিত্ত উনি করবেন।
রাইনা বলল,
‘ কিন্তু পরীর কি হবে? ডিভোর্স মানে তুই বুঝিস?
রেহান বলল,
‘ বুঝি। ও মুক্তি পাবে। নিজের পছন্দের মানুষকে বিয়ে,,,
রাইনা মাথায় হাত দিয়ে হুইল চেয়ারে মাথা এলিয়ে দিয়ে রাখল। ফুঁপিয়ে উঠে বলল,
‘ পরীর সাথে আমি আর কাউকে ভাবতে পারিনা। তুই এমনটা করিস না রেহান।
রেহান পানি এগিয়ে দিল। বলল,
‘ মা সবাই আমাকে ভুল বুঝলে ও তুমি এটলিস্ট ভুল বুঝোনা। চাচ্চু কাকিয়া আমাকে ভুল বুঝবে আমি জানি। কিন্তু আমার কিচ্ছু করার নাই। কারণ এই বিয়েতে চাচ্চু আর কাকিয়ার মত ছিলনা। তারা হয়ত আজ যেটা হচ্ছে সেটার ঈঙ্গিত পেয়েছিল আগে।
____________
মাহিদের পরীক্ষার রেজাল্ট দিল। মাহিদ খুশির খবর সবার আগে মা আর বাবাকে জানাল। রিপ আগেই জেনেছিল। কিন্তু মাহিদ আসার জন্য অপেক্ষা করছিল। মাহিদ বাড়িতে ফিরে নীরাকে কোলে তুলে নিয়ে ঘুরাতে ঘুরাতে ক্লান্ত হয়ে নিচে নামিয়ে দিল। হাঁপিয়ে উঠে বলল, মা তুমি খুব ভার।
রিপ হেসে দিল সবার আগে। নীরা মুখ ফুলিয়ে রাখল। রিপ হেসে বলল,
‘ নীরা কম খাও। তোমার ছেলে কি বলছে দেখো।
নীরা বলল, আজ আরও ভেবে রেখেছি বেশি বেশি মিষ্টি খাব। তুই এটা কি বললি মাহি??
মাহিদ মিষ্টির প্যাকেট নীরার হাতে ধরিয়ে দিল। নীরার গালে টুপ করে চুমু খেয়ে নিয়ে বলল,
‘ ধুরর তুমি রাগ করছ কেন মা? সবার আগে বেশি বেশি তুমি খাও। গুলুমুলু মা আমার। তুমি খেয়ে যেগুলো বাচঁবে সেগুলা বাকিরা খাবে।
রিপ বলল, মিষ্টি খাইনা আমি। মাহিদ মিষ্টি নিয়ে গিয়ে বলল,
‘ পাপা বছরে একবার হলে ও নাকি মিষ্টি খেতে হয়। নাহলে সারাবছর নাকি খ্যাঁক খ্যাঁক করার অভ্যাস যায় না।
রিক আর মুনা দূরে দাঁড়িয়ে একসাথে হেসে উঠল। রিক বলল, দেখেছ তার বাপকে ইনডাইরেক্টলি পিঞ্চ করে কথা বলছে।
নীরা মাথা দুলিয়ে বলতে লাগল।
‘ উম আর ও বল। ভালো হয়ছে। আজ বেশি বেশি করে বল। একেবারে মুখ বন্ধ করে দে।
নীরাকে বিড়বিড় করতে দেখে চোখ তুলে তাকাল রিপ। নীরা চুপ হয়ে গেল। রিপ মিষ্টি একটুখানি খেয়ে বাকিটা মাহিদকে খেতে বলল।
মাহিদ বেজায় খুশি পুরোটা গালে পুড়ে নিল। শক্ত করে জড়িয়ে ধরল তার ব্যারিস্টার বাপকে। বলল,
‘ পাপা সারপ্রাইজটা বলবে বলেছিলে না? এবার বলো।
রিপ ও ছেলেকে জড়িয়ে ধরল। বলল, এখন না। এডমিশন টেস্টের পরে। কথা নড়চড় হওয়ায় সরি মাহি।
মাহি কিছুক্ষণ পর রিপকে ছাড়ল। বিড়বিড় করে বলল, শালার ব্যারিস্টার কথা দিয়া কথা রাখেনা।
রিক আর মুনাকে মিষ্টি খাওয়ালো।
তারপর হেলিয়ে দুলিয়ে সিড়ি বেয়ে উঠতে উঠতে তালহা বেগমকে চিল্লিয়ে বলল,
‘ দাদীরে দাদী।
কোথায় তুমি গাধী?
নাতি তোমার করছে পাস।
আইসা দেখো দিচ্ছে বাঁশ।
না আসিলে হইবো লস।
তখন শুধু পাইবা রস।
সবাই একসাথে হো হো করে হেসে উঠল। মুনা বলল,
‘ বাড়িতে না থাকলে বাড়িটা একদম চুপচাপ হয়ে থাকবে। আর থাকলে আছে মাকে নিয়ে। বিয়ে বাড়ি বানায় ছাড়বে।
তালহা বেগম লাঠিতে ভর দিয়ে দিয়ে এল। বলল,
‘ আমি মিষ্টি খাইতে পারিনা। মিষ্টির রস খাই। তুই রস রাখ, তাতেই চলবো।
মাহিদ বলল,
‘ ধুরর বুড়ি। তোমার লাইগ্যা রস আইনা রাখছি। খাইয়্যা আসো গা। আবার বেশি খাইয়্যো না। বিছানা নষ্ট হবে।
তালহা রিপকে ডাক দিল। বলল,
‘ এই রিপ তোর ছেলে আমারে কি বলে দেখ।
রিপ আসার আগে মাহিদ চলে গেল।
রুমে এসে ফোন দিল ইশাকে। বলল,
‘ ফুপী মিষ্টি সবাই খাবা। কিন্তু খবরদার ওই ডাক্তারের বাচ্চিরে দিবানা।
পিহু ফোনের এপাশে কোনোমতে গাল নেড়ে বলল,
‘ মাহিদ ভাই আবার বলোতো। গালে মিষ্টি আছে তাই কথা বলতে পারছিনা ভালো করে। শুনতে ও পাচ্ছিনা। আবার বলোতো।
চলবে,,,