মন_কেমনের_বৃষ্টি #পর্ব_১৩(সিজন ২)

0
858

#মন_কেমনের_বৃষ্টি
#পর্ব_১৩(সিজন ২)
#পুষ্পিতা_প্রিমা

মাহিদ আয়নায় খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে নিজেকে অনেকক্ষণ দেখল। নীরা আসল। বলল,
‘ মাহি নিচে তোর নানু এসেছে যাহ গিয়ে সালাম করে আয়,কথা বলে আয়। যাহ।
মাহিদ আয়না থেকে চোখ সরিয়ে মায়ের দিকে বিরক্তি নিয়ে তাকাল। বলল
‘ তোমার ছেলের দাড়ি উঠেছে।
নীরা চোখ বড় বড় করে বলল,
‘ তো কি বলতে চাইছিস? তোর বিয়ের বয়স হয়ছে? তোর দাড়ি তো অনেক আগে উঠেছে।
মাহিদ বলল,
‘ ধুররর সেটা বড় কথা নয়, বড় কথা হচ্ছে তোমার ব্যারিস্টার জামাইর জন্য আমি দাড়ি রাখতে পারিনা। বলে, আমি নাকি এখনো ছোট।
নীরা বলল,
‘ ঠিকই তো বলছে। আমার বাছা তো এখনো ছোট। বড় হলে তখন রাখিস।
মাহিদ দ্বিগুণ বিরক্ত হলো। বলল,
‘ ধুরর বড় বড় দেখালে তো আর ও ভালো। বউ পাইবো তাড়াতাড়ি। কেউ আর ছোট বলবো না।
নীরা চোখ কপালে তুলে বলল,
‘ হায় হায় এ একি বলিস তুই মাহি? তোর বাপ শুনলে এক আছাড়ে মেরে ফেলবে। আজকের দিনে মাইর খেতে চাস?
মাহিদ বলল,
‘ মাইর খাওয়া ও বড় কথা নয় বাপ। বুঝোনা ক্যান? বড় কথা হইলো তোমার ব্যারিস্টার জামাইরে কইয়্যা দিবে তার ছেলে এখন বড় হইছে। তার দাড়ি রাখা ফরজ।
নীরা খাটে বসল। পা নাড়াতে নাড়াতে বলল,
‘ ওরেব্বাপ আমি বলতে পারব না।
মাহিদ হো হো করে হাসল। বলল,
‘ তুমি ও আমার মতো বাপ বাপ শুরু করলা ক্যান। ওই ব্যারিস্টার আমার বাপ। তোমার না।
নীরা হেসে বলল,
‘ তুই আমার বাপ।
মাহিদ বলল,
‘ ধুর এখনো বিয়া সাদী ও করিনি। তুমি বাপ বানায় দিলা। বউ ছাড়া বাপ হওয়া যায় নাকি??
নীরা কপালে হাত দিল। বলল,
‘ সারাক্ষণ বউ বউ। আমার থেকে এরকম স্ক্রু ঢিলা ছেলে কোথাথেকে হলো?
মাহিদ বলল,
‘ এসব প্রশ্ন কেউ ছেলেকে করে??
তোমার বুদ্ধি হলোনা মা। আমি অর্ধেক মইরা গেলাম তোমার প্রশ্ন শুনে। অর্ধেক ইন্নালিল্লাহ পড়ো।

নীরা রেগে বলল,
‘ মুখে আসে তা বলিস না? মরবি কেন? আমার একটা মাত্র ছেলে। আমার একটামাত্র কলিজা।
মাহিদ হাসল ঠোঁট এলিয়ে। বলল,
‘ কলিজা দুইটা আছে জানতাম না। তোমার মুখ থেকে শুনলাম।
নীরা হাঁটা ধরল। বলল,
‘ ধুরর তোর সাথে কথা বলতে গেলেই আমার মাথা নষ্ট হয়ে যায়। তুই থাক তোর মতো।

________________

আদি হসপিটালের উদ্দেশ্যে বের হওয়ার আগে আফির মুখোমুখি হলো। আফি বলল,

‘ আমার আজকাল লুকায় লুকায় থাকতে ইচ্ছে করে। বাড়ি থেকে বের হতে ইচ্ছে করেনা। এই রোগটার কোনো ঔষধ থাকলে আসার সময় আনিস তো।
আদি চোখ ছোট ছোট করে তাকাল। আফি বলল,
‘ ওইভাবে কি দেখতাছোস?
আদি বলল, তোমার রোগের ঔষধ এই বাড়িতেই আছে। আনতে হবে কেন?
আফি বলল, কোথায় আছে?
আদি আঙুল দিয়ে উপরে রাইনার ঘরের দিকে ইশারা করল। বলল,
‘ ওই ঘরে তোমার ঔষধ আছে। যাও।
আফি রেগে চলে গেল। ইশা হাসতে হাসতে আসল। আদির হাতে টিফিন বক্স ধরিয়ে দিয়ে বলল,
‘ বড় ভাইয়ের সাথে ও ইয়ার্কি?
আদি বলল,
‘ বড় ভাইয়ের মাথায় তার ছিড়ছে মিষ্টি।
ইশা হাসল। পড়নে হালকা গোলাপি শাড়িটা তাকে বেশ মানিয়েছে। আদি বলল,
‘ মিষ্টি তোমাকে বেশি বেশি সুন্দর লাগছে।
ইশা হুট করে লজ্জা পেয়ে গেল। বলল,
‘ আরেহ যান তো।
আদি এদিকওদিক তাকালো। বলল,
‘ মিষ্টি কেউ আছে কিনা দেখোতো?
ইশা বোকার মতো এদিকওদিক তাকালো। বলল, কই কেউ নেই তো!
আদি তার দিকে ঝুঁকে পড়ে চুমু খেয়ে ফেলল চট করে। বলল, ব্যস।
ইশা ধাক্কা সামলাতে না পেরে দুই পা পিছে গেল। বলল, বেয়াদব লোক। কেউ যদি দেখে ফেলত?
আদি মুখ কালো করে ফেলল। ইশা বলল, কি হলো?
আদি বলল, আমি বেয়াদব? বউ রেখে অন্যকাউকে চুমু খেলে আদ্দব ডাকতে?
ইশা হেসে দিল। বলল, কথায় কথায় রাগ করেন কেন? ওগুলো আমি ভালোবেসে ডাকি। বেয়াদব, লুইচ্চা ডাক্তার।
আদি মুখ আর ও দ্বিগুণ মলিন হলো। ইশা বলল, বের হওয়ার সময় এরকম করবেন না ডক্টর। মুখ কালো করে রেখেছেন কেন?
আদি বলল, যেটা দিয়েছি সেটা ফিরিয়ে দাও। তারপর হাসব।
ইশা চেঁচিয়ে বলে উঠল,
‘ না না না, মাথা খারাপ। আপনি পাগল ডক্টর। যান তো।
আদি গটগট করে হেঁটে বেরিয়ে গেল। টিফিন বক্সটা রেখে বেরিয়ে গেল। ইশা হা করে তাকিয়ে থাকল। পিছু ডেকে বলল,
‘ ডক্টর এটা কি ধরণের বাচ্চামো? ডক্টর। দাঁড়ান।
আদি দাঁড়াল না। ইশা দৌড়ে বাইরে গেল। আদির পথ আটকে বলল,
‘ ডক্টর টিফিন বক্স না নিলে আমি কষ্ট পাব। সকাল সকাল উঠে বানিয়ে রেখেছি। আপনি উদ্ভট একটা ব্যাপার নিয়ে খাবারের উপর রাগ দেখাচ্ছেন? এটা কোনো কথা ডক্টর? আপনি ছোট ছোট ব্যাপার নিয়ে রাগ করেন। আপনাকে এসব শোভা পায় না।
আদির আর ও বেশি রাগ বাড়ল। যেটা চেয়েছে সেটা তো দেইনি উল্টা আর ও ধমক দিয়ে কথা বলছে। তার রাগ লাগল।
বলল,
‘ তুমি খাও তোমার বানানো খাবার। পথ ছাড়ো।
ইশা চুপ হয়ে গেল। আদি এপ্রোন কাঁধে ফেলে, গাড়ির কাছাকাছি গেল। ইশা টিফিন বক্স লনের উপর রাখল। বলল, এখানে থাকুক। কুকুর বিড়ালে খাক। আমি আর বাসায় ডুকাবো না।
তারপর গটগট করে হেঁটে চলে গেল। আদি দরজার দিকে তাকাল। ইশা আসল না।
আদি হেঁটে আসল। টিফিন বক্সটি হাতে তুলে নিল। গাড়িতে উঠে বসল। ইশা দরজা দিয়ে উঁকি মারল। তারপর নিজে নিজে খিক করে হেসে উঠল। বলল, পাগল ডাক্তার আমার।

আফি পিহুকে ডাক দিল। বলল, পিহুমা আমার মশলা চা দিয়ে যাও।
পিহু উপর থেকে বলল, দিচ্ছি দিচ্ছি। সবুর করো বাপ।
পরী বলল, তুমি ও মাহির মতো শুরু করলে????
পিহু জিভে কামর দিল।
মিনমিন করে বলল, মাথাটা নষ্ট করে ফেলছে মাহিদ্দে।
ইশা মশলা চা নিয়ে এল। আফি জার্নাল ধরে রয়েছে মুখের সামনে। সোফায় শুয়ে আছে। ইশা ডাক দিল,
‘ দাভাই চা।
আফি তাড়াতাড়ি জার্নাল ছুড়ে ফেলল। শোয়া থেকে উঠে সোজা হয়ে বসল,
‘ চা নিল হাতে। বলল, পিহুমা?
ইশা বলল, আমি বানিয়েছি।
চা হাতে নিয়ে ইশার মাথায় এক হাত রাখল। বলল,
‘ ছোটবউ তুমি আমাকে মাফসাফ করে দিও। অনেক ভুল টুল করছি। মরার সময় তো আসতাছে।
ইশা বলল,
‘ আচ্ছা এসব বিষয় থাক। চা খান। ঠান্ডা হয়ে যাচ্ছে।
আফি চায়ে চুমুক দিল। বলল, ভালা হয়ছে। অনেক অনেক ভালা হয়ছে।
পিহু আসল। পিহু কোমরে হাত দিয়ে বলল, আমি আর চা বানাব না তোমার জন্য।
নাকিসুরে কেঁদে বলল,
‘ আর কখনো যদি আমি চা বানিয়েছি তোমার জন্য,তাহলে আমার নাম পিহু নয়।
আফি হেসে বলল
‘ রাগো কেন আম্মাজান? তোমার হাতের চায়ের সাথে কারোটার তুলনা হয়?
পিহু নাকিসুরে কাঁদল। পা ফেলে দুমদাম চলে যেতে যেতে বলল,
‘ তুমি আমার সাথে কোনো কথা বলবে না।
ইশা হেসে দিল। আফি বলল,
‘ আহা মেয়েটা রাগ করল আমার উপর।

___________

পরী আফির কাছে এসে বসল। বলল, বড়পাপা তুমি বড়মার কাছে গিয়েছ??
আফি বলল,
‘ তার আদরের ছেলে সারাক্ষণ তার পিছু লেগে থাকে। আমি কি করে যামু? তাছাড়া ফুল টুল পাইনায়।
পরী মাথায় হাত দিল। বলল,
‘ ফুল টুল লাগবে না। তুমি যে ভুল করেছ তার জন্য সরি বলে আসবে। ব্যস।
আফি বলল,
‘ তুমি ও আমারে বুঝোনা। কেউ বুঝেনা। রেহাইন্নেকে কি বলছি সে আর আমার সাথে কথা বলেনা। সাহেবের মতো হেঁটে হেঁটে চলে যায়। বাপ হিসেবে তাকে আদর করব, মারব ও। না?
আমি তো তার কেউ নয়। তারে সারাক্ষণ আদর করে করে রাখতে হবে। শালা মায়ের মতো ভাবওয়ালা হইছে। তোমার সাথে কি খারাপ ব্যবহার করে? কথা বলে?
পরী মাথা নাড়াল। আফি বলল,
‘ না বলুক। ওই ব্যাটার কাছ থেকে দূরে দূরে থাকো। তোমাদের ডিভোর্স হয়ে গেলে তোমারে আমরা আর ও ভালো জায়গায় বিয়ে দেব।
পরী মাথা নিচু করে বসে রইল।
পিহু আসল। বলল,
‘ বড়পাপা দিদিয়া কি ডিভোর্স চেয়েছিল? তোমরা শুধু ডিভোর্স ডিভোর্স লাগিয়েছ। ডিভোর্স কি ছেলেখেলা?
আফি পরীর দিকে তাকাল। বলল,
‘ তুমি ডিভোর্স চাওনা। ওমা? এটা তো খুশির খবর! আমি তো এতদিন তোমার উপর রাগ কইরা তালে তাল মিলাইতেছি। পিহুমা কি সত্যি কইছে?
পরী উঠে চলে গেল। কিছু বলল না।
আফি তার উত্তর পেয়ে গেল। দৌড়ে রাইনার রুমে চলে গেল। রেহানকে বলল,
‘ তুই বেরোতো। তোর মায়ের সাথে কথা কমু। যাহ। তোর ঘরে যাহ।
রেহান অবাক হলো আফির ব্যবহারে। চুপচাপ মায়ের দিকে তাকিয়ে বেরিয়ে গেল। রাইনা বলল,
‘ কি চাই।
আফি বলল, মাফ চাইতে আসছি। তোমার ছেলেকে বলিও আমার সাথে কথা বলতে। আর পরীমাকে ডিভোর্স না দিয়ে সম্পর্কটাকে এগিয়ে নিয়ে যেতে।
রাইনা অবাক হলো। আফি দাঁড়াল না। রাইনাকে কিছু বলতে দিল না। চলে এল। রেহান এসে জিজ্ঞেস করল
‘ কি বলতে এসেছিল উনি?
রাইনা বলল, কি কতগুলো বলে চলে গেল।
রেহান বিরক্ত হয়ে বলল,
‘ আর আসতে দেবে না।
রাইনা বলল,
‘ পরীকে ডিভোর্স দিস না। ওর সাথে কথা বল।
রেহান বলল,
‘ সম্ভব নয়।

__________

তিনচার দিন পর রিক আসল চৌধুরী বাড়িতে। পরী তাকে দেখার সাথে সাথে জড়িয়ে ধরে কেঁদে দিল। বলল,
‘ পাপা এতদিন পর?
রিক হেসে পিঠে হাত বুলাতে বুলাতে বলল,
‘ মা টা কেমন আছে। ভালো আছে?
পরী মাথা নাড়িয়ে বলল,
‘ নাআআআআআ।
রিক হাসল। বলল,
‘ ভালো থাকা শিখতে হয়। ভালো রাখা শিখলে ভালো থাকাটা ও শিখে যাবে। তোমার ভালো থাকাটা তোমার উপর নির্ভর করছে।
রিক বলল,
‘ বিয়ে সবার একবারই হয়। এতবড় কঠিন সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে আর দুইবার ভাবো। তোমার ছোটপাপা বলেছে সে কোনো উকিলকে এই ডিভোর্স কেস নিতে দেবেনা। সো তোমাদের ডিভোর্সটা ও সম্ভব নয়।
পরী চুপ হয়ে পড়ে থাকল রিকের বুকে। কিছুক্ষণ পরপর ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠল।

রেহান এসেই কুশলাদি বিনিময় করল রিকের সাথে। পরীকে দেখে আর সামনে এগোলো না। রিক বলল,
‘ আমি তোমার সাথে কথা বলতে এসেছি রেহান।
রেহান বলল, জি,বলুন।
আদি এল। রিককে দেখে বলল,
‘ রিকদা তুমি? ফোনে যেটা বলেছ তাহলে তা সত্যি?
রিক বলল, আমি রেহানকে সবার সামনে জিজ্ঞেস করতে এসেছি। সে কি চায়। এভাবে সবটা চলতে পারেনা।
রেহান বলল, আর জানার তো কিছু নেই। আমি ডিভোর্স দিয়ে দেব বলেছি। দিয়ে দেব। ব্যস।
সবাই আকাশসম বিস্ময় নিয়ে তাকাল রেহানের দিকে। রিক বলল,
‘ ভেবে বলছ?
রেহান বলল,
‘ এত ভাবার কি আছে? কথা তো এরকমই ছিল। বিয়ের দিন ও। বিয়ের পরের দিন ও। বিশ্বাস না হলে তাকেই জিজ্ঞেস করুন।

রিক আর আদি অবিশ্বাস্য চোখে তাকাল পরীর দিকে। পরী অসহায় হয়ে দুপাশে মাথা নাড়াল। সত্যিটা আজ নিজে অস্বীকার করতে চাইল। রেহান দাঁতে দাঁত চেপে বলল,
‘ মিথ্যেবাদী।
পরী হাতের কব্জি দিয়ে চোখের জল মুছল। রিক গর্জে বলল,
‘ পরী? রেহান যা বলছে সব সত্যি?
পরী মাথা নামিয়ে কেঁদেই গেল। আদি বলল,
‘ চুপ করে আছ কেন পরী? বলো। বিয়েকে তুমি ছেলেখেলা মনে করেছ? কি চাইছটা তুমি?
পরী তারপর ও কিছু বলল না। রিক কোনো উত্তর না পেয়ে কষে চড় বসাল পরীর গালে। পরী টাল সামলাতে না পেরে পড়ে গেল আদির পায়ের কাছে। সবাই আঁতকে উঠল
শান্তশিষ্ট রিককে এভাবে রেগে যেতে দেখে।
আদি পরীকে তুলল। পরী ঝরঝর করে কেঁদে দিল। ইশা দৌড়ে আসল। পরীর চোখের জল মুছে দিতে দিতে বলল,
‘ কেঁদোনা, সব ঠিক হয়ে যাবে। এভাবে কেঁদোনা।
ইশা জড়িয়ে ধরল তাকে। পরী বিশ্বাসস করতে পারল না তার পাপা তাকে মেরেছে। তার বুদ্ধি হয়েছে পর্যন্ত কোনোদিন পাপা তার গায়ে হাত তুলেছে বলে তার মনে পড়ছেনা। পাপার কাছে সে তো প্রাণ। পরী রিক মেরেছে,, তা ভেবে ভেবে কাঁদল।

রিক বলল,
‘ আমি ভেবেছি তোমাকে মানুষের মতো মানুষ করতে পেরেছি আমি। কিন্তু না। তুমি অমানুষ হয়েছ। আর আমি? আমি কোনোদিন ও তোমার বাবা হয়ে উঠতে পারিনি। অমানুষের বাবা আমি নই।
পরী তার দিকে তাকিয়ে তাকিয়ে কাঁদল।
রিক বলল,
‘ ভুলটা আমার। আমি কেন এই প্রস্তাবটা আনতে গেলাম। একটা নির্দোষ ছেলের জীবনটা নষ্ট করে ফেললাম।
ইশা বলল,
‘ রিকদা চুপ করো। এভাবে নিজেকে হেয় করোনা। তুমি ওকে অমানুষ করোনি। ভালোবেসেছ। চোখ বন্ধ করে যাকে ভালোবেসেছ তাকে কষ্ট দিয়ে নিজে শুধু শুধু কষ্ট পাচ্ছ।
রিক কিছুক্ষণ মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে থাকল। আদি ইশাকে দেওয়া কথা সে রাখতে পারল না। তার শিক্ষায় ভুল ছিল। সে পরীকে মানুষের মন নিয়ে খেলতে শিখিয়েছে। যে মানুষের মন নিয়ে খেলে,চ্যালেঞ্জ নেয় সে মানুষ নয়।
রিক পরীর কাছে এগিয়ে আসল। পরীর হাত ধরল শক্ত করে। টেনে অর্ধেক নিয়ে গিয়ে বলল,
‘ আমি নিয়ে যাচ্ছি ওকে।
ইশা বলল,
‘ কেন বড়দা? কি করছ তুমি?
পরী ইশার দিকে তাকিয়ে ডাকল,
‘ আমমমমা?
ইশা রিকের হাত ধরল। বলল,
‘ বড়দা পরীর কি বলছে একটিবার শোনো। এমন করোনা বড়দা। তাকিয়ে দেখো তোমার মেয়ের দিকে। দেখো। ও কি বলতে চাইছে।

রিক তাকাল না। ইশা আদিকে ডাকল,
‘ ডক্টর বড়দাকে বুঝান।
আদি কিছু বলতে পারল না। অকারণে আজ তার পুরোনো ব্যাথা ফুঁসে উঠল।
” তোমার মেয়ে ” কথাটি বারবার কানে বাজল। চোখ ঘনঘন ভিজে উঠল। নিজের সচল মস্তিষ্ক চিৎকার জানান দিল,
‘ পরী তোর মেয়ে নয়। সে পরের মেয়ে। জন্ম দিলেই কি বাবা হওয়া যায়??
মিষ্টির উপর তার একরাশ অভিমান ভর করল তার। বুকটা কেন যেন ভার ভার লাগল। পড়ার টেবিলে বসা পিহুকে টেনে এনে নিজের বুকের সাথে পিষ্ট করে জড়িয়ে ধরল। মেয়ের মাথার উপর চিবুক রেখে নীরব,নিশ্চুপ আর্তনাদে ভেসে গেল সে । পিহু বুঝল না কিছু। শুধু অনুভব করল, বাবাটা আজ ভালো নেই।
রিকের চোখের আশপাশ ভেজা। পরী ডাকল,
‘ পাপা…..
রিকের কানে ভেজে উঠল ইশার মুখ থেকে শোনা রেহানের উপর সেই অন্যায়ের ঘটনা। ছেলেটা তো নির্দোষ। অকারণে কতশত অপমান তাকে সহ্য করতে হলো পরীর জন্য।
রিক পরীকে টেনে নিয়ে যেতে যেতে বলল,
‘ তোমার আর এই বাড়িতে থাকার দরকার নেই। চলো। তুমি নিজেই যোগ্য নও রেহানের।
ইশা দৌড়ে গিয়ে রেহানের হাত ধরল। রেহান শুধু তার কাকিয়ার মিনতি অবাক হয়ে দেখল। হাতটার দিকে তাকিয়ে থাকল। পরী যেতে যেতে বারবার ফিরে তাকাল। যার দিকে আশা নিয়ে বারবার ফিরে তাকাল সে চোখ তুলে দেখলই না।

__________________

পরীকে এভাবে নিয়ে আসতে দেখে সবাই অবাক হলো। কি হয়েছে? কি হয়েছে? কোলাহল পড়ে গেল।
রিক পরীকে রুমে আটকে রেখে নিচে এসে মাথায় হাত দিয়ে সোফায় বসে থাকল। কেউ কিছু জিজ্ঞেস করতে ভয় পেল। মুনা আর নীরা পরীর আর্তনাদ শুনে ও এগিয়ে যেতে পারল না। রিপ এসে কাঁধে হাত দিয়ে ডাকল রিককে। রিক মাথা তোলার সাথে সাথে সবাই চমকাল। ঘন লাল চোখদুটোর আশপাশ ভেজা। হয়ত মেয়ের কাছ থেকে পাওয়া আঘাতের কারণে। রিপ বলল,
‘ কি হয়েছে?
রিক গর্জে বলল,
‘ আমি বৃথা একজন বাবা হিসেবে। যাকে এতটা ভালোবেসেছি,সে আমার মানসম্মান, ভরসা বিশ্বাসে আঘাত করল কত সহজে? সবাই কি ভাবছে। আদি কি ভাবছে? ইশু কি ভাবছে? আমি তাদের সন্তানকে আমার কাছে রেখে কি বানিয়েছি। অমানুষ? ছিঃ।
পরীর কাছে আমি কোনোদিন কেউ ছিলাম না তার প্রমাণ আজ হাতেনাতে পেয়েছি। আজ সবচাইতে খুশির দিন আমার। তাকে গিয়ে বল,
‘ কান্না বন্ধ করতে। আমার ভালো লাগছেনা। আমি পাগল হয়ে যাব। সে জানে??, তার চিন্তায় আমার কত রাত নির্ঘুম কেটেছে। তাকে আমি একটা সুস্থ সুন্দর পরিবার দিতে চেয়েছি। একটা ভালো ছেলের সাথে জুড়ে দিতে চেয়েছি। কিন্তু পারলাম কই?
রিপ স্পষ্ট শুনল পরীর আর্তনাদ।
‘ পাপা দরজা খুলো। আমাকে এভাবে দূরে ঠেলে দিওনা। পাপা,মাম্মা। ছোটমা। ভাই।

মাহিদ বাড়ি ফিরে থমথমে পরিবেশ দেখে চমকে গেল। নীরা ইশারায় চুপ থাকতে বলল। মাহিদ পরীর ডাক শুনল।
‘ ভাই দরজা খোল। এই ভাই।
মাহিদ দৌড় লাগানোর আগে রিক ডাক দিল।
‘ খবরদার দরজা খুলবি না। তোকে ও বেঁধে রাখব।
মাহিদ মনে মনে গালি দিল।
” শালার বাপ, জ্যাঠা। এত খ্যাঁক খ্যাঁক কইরা এরা কি পাই বাপ??
পরী কিছুক্ষণ পর শান্ত হয়ে গেল। দরজার সাথে মাথা ঠেকিয়ে বসে থাকল। মুনা যখন দরজা খুলল পরীকে অজ্ঞান অবস্থায় পেল। মাহিদ দৌড়ে এসে জড়িয়ে ধরল পরীকে। গালি দিয়ে বলল,
‘ সবাইকে বাড়ি থাইকা বাইর কইরা দিমু বাপ। আমি আর দিদিয়া থাকুম শুধু।
নীরা বলল, চুপ থাক। তোর বাপ জ্যাঠা শুনলে চড়াবে।
মাহিদ রেগে গেল। কিন্তু কিছু বলল না। পরীকে কোলে করে নিয়ে গিয়ে খাটে শোয়াল। ডাক্তার ডেকে আনল। রিপ আর রিককে কাউকে পরীর রুমে ডুকতে দিলনা। দরজা বন্ধ করে রাখল। বলল,
‘ আলগা পিরিত দেখাইতে আসিও না বাপ। আমাগো একটু ভালা থাকতে দাও।
রিক চলে আসল মাহিদের কথা শুনে। রিপকে বলল,
‘ তোর ছেলে দরজা বন্ধ করে রাখছে। ডুকতে দিচ্ছে না। রিপ বলল, ডুকতে হবে না
মারার আগে ভাবো নি কেন?

_______________

পরী তারপর দিন থেকে একদম স্বাভাবিক আচরণ শুরু করল। শুধু কথা বলল না রিপ আর রিকের সাথে। ছোট ছোট বাচ্চাদের স্কুলে শিক্ষিকার দায়িত্ব নিল। আদি ইশা আফি কয়েকবার আসল সেই স্কুলে পরীকে দেখতে।
মাহিদের এডমিশন টেস্ট শুরু হলো। মন দিয়ে পড়ল। রিপ আর পরীর তদারকির মাঝে ফাঁকি দেওয়ার সুযোগ পেলনা। রিপ তার কাছ থেকে ফোন নিয়ে ফেলল। পিহু ও ফোনে পেল না তাকে। দিদিয়ার জন্য মন পুড়ল। তাই চলে গেল একদিন খান বাড়ি। মাহিদ পরীক্ষা দিয়ে এসে পিহুকে দেখে বলল,
‘ মাইর খেতে আসছস। আয় আয় মারি। আয়।
পিহু তার পিছু পিছু গেল। বলল, মাহিদ ভাই আমাকে এতদিন পর দেখে ও তোমার মারতে ইচ্ছা করতাছে?
মাহিদ বলল, না আদর করতে ইচ্ছা করতাছে বাপ। তুই শালী হাট্টামার্কা প্রশ্ন করস ক্যান?
পিহু আচমকা লজ্জা পেল। ইশশশ মাহিদ ভাই মাঝেমাঝে ভালো কথা ও বলে। এজন্য সে পিহুর মাহিদ ভাই।

_________________

মাহিদের পরীক্ষা শেষ হলো। প্রায় কয়েকমাস কেটে ও গেল। পরী স্কুলের চাকরিটা নিয়ে নিজেকে ব্যস্ত রাখার চেষ্টা করল। রাগে, অভিমানে কেউ একজনের কথা ভুলে ও মাথায় আনার চেষ্টা করল না। কিন্তু হঠাৎ একদিন, দুইটি ছোট্ট ছোট্ট বাচ্চাকে স্কুলে নিয়ে আসতে দেখা গেল রেহানকে। দুজন দুজনকে বহুদিন পর দেখে চমকাল। বাচ্চা ছেলেমেয়ে দুইটি হাত নেড়ে টা টা দিল রেহানকে। পরীকে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে বলল,
‘ ম্যাম,,, হি ইজ মাই পাপা।
রেহানকে বলল,
‘ পাপা সি ইজ আওয়ার ক্লাস টিচার এন্ড বেস্ট টিচার।
রেহান আঙুলে তুড়ি মেরে বাচ্চা দুইটিকে বলল, গুড জব। ভালোই বলেছ।
বাচ্চা দুইটি একসাথে বলে উঠল। লাভ ইউ।

পরী দাঁতে দাঁত চেপে কাঁদোকাঁদো হয়ে বলল,
লুইচ্চা এগুলা কার বাচ্চা। মেরে ফেলব একদম।

রেহান ভ্রু উঁচিয়ে বলল,
‘ টিট ফর ট্যাট। বাই দ্য ওয়ে কেমন আছেন? গান টান কি বাদ দিয়ে দিলেন। নাকি রেহান চৌধুরীকে অডিশনে যেতে দেখে থমকে গেলেন? কোনটা? হারতে এত ভয় কেন? আদিশা খানম ভয় ও পাই?
পেছন থেকে মাহিদ বলল
‘ হয়ছে। এবার বউরে বাড়ি নিয়া যান। আদর টাদর কইরা একটু রাগ ভাঙান। এই বাচ্চা দুটোরে অনাথ রাইখেন না বাপ।
পরী রাগে ফুঁসল। ‘ ইননা এসব আমি মানিনা।
রেহান বলল, যাওয়া যাক। আপনার শ্বাশুড়ি মায়ের গলা দিয়ে ভাত নামছেনা বৌমাকে ছাড়া। কি আর করার। চলুন।
পরী বলল, যাব না।
রেহান হাত নেড়ে বাচ্চা দুটোর দিকে চকলেট ছুড়ে মেরে বলল,
‘ ম্যাম নয় মা ডাকো তো।
বাচ্চা দুইটি সমস্বরে ডেকে উঠল,
‘ মেরি মা।
মাহিদ হো হো করে হেসে বলল,
‘ শালার বাচ্চি তোরা এত ঘুষ খাইতে পারস বাপ। ঘুষ খাওয়া হারাম শালার বাচ্চারা।
বাচ্চা দুইটি বলল, পুঁচা আন্কেল। পুঁচা আন্কেল।

চলবে,,,,,,,,,,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here