মন_কেমনের_বৃষ্টি #পর্ব_২৩(সিজন ২)

0
726

#মন_কেমনের_বৃষ্টি
#পর্ব_২৩(সিজন ২)
#পুষ্পিতা_প্রিমা

পিছু পিছু পরী চলে আসায় পিহু তাড়াতাড়ি চোখ মুছে নিল৷ রাগে আক্রোশে যেন মাথা ফেটে যাচ্ছে তার। ততক্ষনে ওই ছেলেটি বহুদূরে চলে গিয়েছে। পরী জিজ্ঞেস করল,
‘ কি হয়েছে পিহু? এভাবে দৌড়ে এসেছ কেন? মাহির সাথে কি ঝগড়া লেগেছে আবার?
পিহু হাত দিয়ে চোখ মুছে বলল,
‘ না।
‘ তো কি হয়েছে? কাঁদছ মনে হচ্ছে?
পিহুর গলার আওয়াজ একটু বড় হলো।
‘ কিছু হয়নি বললাম না?
পরী চুপ হয়ে গেল। পেছন থেকে ইশা ডাক দিল
‘ পিহু কি হয়েছে? এভাবে কেন কথা বলছ? ও তোমার দিদিয়া।
পিহু চলে গেল পরী আর ইশাকে ডিঙিয়ে। হাঁটার ধরণে তার ভেতরের রাগ প্রকাশ পাচ্ছে। পরী,ইশা তার হাঁটার ধরণ দেখে বুঝল বেশ রেগেছে। মাহি কিছু আনেনি বলে রেগেছে?
পরী বলল, মাহিটা ও একদম অবুঝের মতো। আমার জন্য শাড়ি না এনে পিহুর জন্য আনতো তা ও হতো। ওর যে মনে ছিলনা সেটা পিহু বুঝবে নাকি?
ইশা বলল,
‘ একটা সামান্য ব্যাপার নিয়ে রাগ করার কি আছে? আশ্চর্য! আমি তোমার আব্বাকে বলে দেব পিহুর জন্য আসার সময় কিছু আনতে। রাগ কমে যাবে।
পরী বলল,
‘ আচ্ছা। আমার জন্য ও৷
ইশা হেসে দিল। পরীর মুখে হাত বুলিয়ে বলল,
‘ এ নাকি এক বাচ্চার মা। কেউ বলবে?
পরী হেসে দিল ইশার সাথে সাথে। বলল,
‘ আমি এখনো পিচ্চি আমমা, তোমার আর আব্বার কাছে।
ইশা হাসল। বলল,
‘ ঠি কাছে পিচ্চি মা আমার। রাহির কাছে যাও৷ একা একা কি করছে দেখো?
পরী যেতে যেতে বলল,
‘ ও আর কি করবে? কেন কেন করা ছাড়া আর কিছু জানে??
মা,মেয়ে দুজনই হেসে একসাথে বাড়িতে ডুকে পড়ার সাথে মিউ মিউ কন্ঠে গর্জন এল,
‘ ছিকুকে ফেলে চলে গিয়েছ কেন? পিহু কেঁদে চলে গেল কেন? পিহুকে মেরেছ কেন? ছিকুর রাগ লাগে কেন? পরী, ইশুকে মারতে মন চায় কেন?
পরী,ইশা একসাথে আওয়াজ করে হেসে উঠল রাহির প্রশ্ন শুনে।

________________

হসপিটালের করিডোরে ফাইল হাতে নিয়ে পিহু বেশ বিরক্ত নিয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছে ডক্টর শেখওয়াতের চেম্বারের সামনে। সাথে তার কয়েকজন ক্লাসমেট। একে অপরের সাথে চুপিচুপি কথা বললে ও পাশের কেবিন থেকে ডক্টর আদি চৌধুরীর গলার আওয়াজ শোনা গেল ৷
‘ এতকথা কেন?
পিহু সবাইকে ইশারায় চুপ করতে বলল৷ আদি তারমধ্যেই বেরিয়ে এল৷ তাদের সবাইকে দেখে বলল,
‘ তোমাদের স্যার চেম্বারে নেই। কারজন্য ওয়েট করছ?
পিহু চেঁচিয়ে বলল,
‘ কোথায় গিয়েছে? কতক্ষণ ধরে ওয়েট করছি। আশ্চর্য!
আদি ভালোভাবে তাকানোর সাথে সাথে পিহু চুপসে গেল। মিনমিন করে বলল,
‘ সরি স্যারর৷
আদি অন্যদিকে ফিরে হাসল। পরক্ষনেই বলল,
‘ তোমাদের স্যার ভলিবল খেলছে। আজকে সে অফ ডিউটিতে আছে।
পিহুর রাগ লাগল ভীষণ। হনহন পায়ে হেঁটে আদির সামনে গিয়ে দাঁড়ালো। বলল,
‘ স্যার কি পাগল৷ রাত জেগে ফাইলগুলো রেডি করেছি আমরা৷ আর উনি ভলিবল খেলছেন? বাহঃ। উনাকেই সবাই রোবট ডাকে?
আদি কিছু বলার আগেই পিহু হাঁটা ধরল৷ আদি ডাক দিল,
‘কোথায় যাচ্ছ পিহু?
পিহু বলল,
‘ গ্যালারিতে যাব।
বাকিরা পিহুর পিছু পিছু গেল। আদি বলল,
‘ পিহু কেমন জেদ এটা? পিহু??
পিহু শুনল না। চলে গেল৷

_______________

দু’পক্ষের ছয়জন করে সদস্য মাঠে নামল। খেলা শুরু হওয়ার মাঝপর্যায়ে গাঢ় গোলাপি রঙের ড্রেস পরিহিত মেয়েটি চেঁচিয়ে বলল,
‘ রং স্যার। দিজ ইজ নট ডান। ওহহহো।
খেলা থামিয়ে ছেলেটি বিরক্তি নিয়ে তাকালো। আঙুল ঠোঁটের উপর দিয়ে বলল,
‘ জাস্ট শাট আপ জালিশা৷
তুমি খেলছ না। তাই যেরকম হচ্ছে সেরকম দেখতে থাকো।
জালিশা ভড়কে গেল। চুপ হয়ে গেল। মিনমিন করে বলল,
‘ বাংলাদেশে ভলিবল খেলার রুলস রেগুলেশনগুলো একদম উইয়ার্ড।
নিনিত জালিশাকে চুপ থাকতে দেখে হো হো করে হেসে উঠল। ছেলেটিকে বলল,
‘ বাহঃ ডেঞ্জারাস টিচার তুই। এক ধমকে চুপ করিয়ে দিলি? আর আমার স্টুডেন্ট আমাকে ধমক দিয়ে চুপ করিয়ে রাখে৷ তোর কাছ থেকে অনেক কিছু শিখার আছে ভাই৷
মাহিদ শার্টের কলার খানিকটা পেছনে ঠেলে দিল। জালিশাকে বলল,
‘ দর্শকের মতো দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে খেলা দেখো। কোনোকথা না৷ ওকে?
জালিশা মাথা নাড়াল৷ নিনিত আর ও জোরে হাসল। জালিশার রাগ লাগল নিনিতের উপর। বলল,
‘ ভাইয়া আপনি মজা নিচ্ছেন? এটা কিন্তু রীতিমত ক্রাইমের শামিল৷ আমার রাগ লাগছে। নিনিত আর ও জোরে হাসল। জালিশা আর ও রাগ লাগল। সে নিনিতকে ধরতে গেল। ধরতে পারলে আজ চুল একটা ও আস্ত রাখবেনা। নিনিত দৌড় লাগাল। পিছু পিছু জালিশা। মাহিদ আর অন্যরা হা করে তাকিয়ে তাদের দৌড় দেখছে। মাহিদ নেটে লাতি দিয়ে বলল,
‘ আমরা কি দৌড় খেলা খেলতাছি বাপ। এই পাগল দুইটা এমন কইরা দৌড়ে ক্যান বাপ?
মাথা গরম হইয়া যাইতাছে।
মাহিদ বল ছুড়ে মারল নিনিতের উদ্দ্যেশ্যে। মূহুর্তেই কোনো একটি মেয়ের আর্তনাদ ভেসে আসল। সবাই থেমে গেল৷ নিনিত দৌড়ে আসল সাথে জালিশা ও৷ মাহিদ তার জায়গায় দাঁড়িয়ে রইল। নিনিত পিহুকে তুলে বলল,
‘ লেগেছে?
পিহু অগ্নিচক্ষু নিয়ে তাকিয়ে রইল মাহিদের দিকে। নিনিতের হাত থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে নিয়ে বলল,
‘ লাগেনি তেমন। আ’ম ওকে।
জালিশা চোখ পাকিয়ে তাকিয়ে রইল পিহুর দিকে।
‘ ওয়াও সো কিউট।
শোনামাত্রই পিহু চোখ তুলে তাকালো জালিশার দিকে। পুতুলের মতো চেহারার মেয়েটি ডাগর ডাগর চোখ দিয়ে তাকিয়ে রয়েছে তার দিকে হাসিমুখে। পিহুর ভ্রু কুঞ্চন হলো। জালিশা পিহুর সামনে গিয়ে দাঁড়াল। হাসিহাসি মুখ করে তাকিয়ে বলল,
‘ ওয়াও, সো নাইচ অফ ইউ। হাই আ’ম জালিশা। ইউ?
পিহু ভাবমূর্তি বদলালো না। সে সেভাবেই বলল,
‘ আরিশা।
জালিশা হেসে উঠল। বলল,
‘ ইউ আর ভেরি প্রিটি। আ’ম ইমপ্রেসড। ইউ নো হোয়্যাট, আমি যদি ছেলে হতাম তোমার প্রেমে পড়তাম। সিউর পড়তাম৷ তোমাকে আমার খুব পছন্দ হয়েছে৷
পিহু একটুখানি হাসল৷ বলল,
‘ থ্যাংকস।
নিনিত গলা খাঁকারি দিল৷ বলল,
‘ ভলিবল খেলবে আরিশা? খেলতে এসেছ?
পিহু দাঁতে দাঁত চেপে বলল,
‘ নাআআ। আপনাকে দেখতে এসেছি। রোবট খেলতে ও নাকি জানে?
নিনিতের ভ্রু কুঞ্চন হলো৷
‘ এই মেয়েটাকে আদি স্যার তার গলায় ঝুলাতে চাইছে? কি রাগ?
নিনিত বলল,
‘ আমাকে দেখা হয়েছে?
পিহু বলল,
‘ চট করে মেডিক্যালে আসুন। আমার ফাইল দেখে নিন, আর মার্কস দিন। ফাইলটা আমাকে সাবমিট করতে হবে।
নিনিত হা করে তাকিয়ে থাকল৷ মাহিদকে বলল,
‘ মাহি আরিশাকে তুই বল মেরে কি পাগলছাগল বানায় ফেললি নাকি?
পিহু রেগে গেল৷
‘ পাগলছাগল মানে কি স্যার? আমাকে বললেন?
জালিশা পিহুকে টেনে নিয়ে গেল। চুপিচুপি বলল,
‘ রাগ করছ কেন? আসো আমরা ওদিকটাই ঘুরে আসি৷ আইসক্রিম খাবে?
পিহু অবাক হয়ে দেখল জালিশাকে৷ মেয়েটা এত ফ্রিলি কথা কি করে বলে?
জালিশা টেনে নিয়ে গেল পিহুকে৷ দূরে দাঁড়ানো মাহিদ ভ্রু উঁচিয়ে দেখল৷ পিহু তাকানোর সাথে সাথে চোখ সরিয়ে নিয়ে নিনিতকে বলল,
‘ শালা মাঠটারে ও হসপিটাল বানায় ফেলছস বাপ? তোরা ডাক্তাররা পারস৷
নিনিত হা হু করে হাসল। হাসতে হাসতে মাঠে বসে পড়ল৷ বলল,
‘ মাহি তোরকথাগুলো জোস মামা। আবার বল৷ শুনি।
মাহিদ এল। নিনিতের পিঠে দুম করে লাতি বসিয়ে চলে গেল৷ বলে গেল,
‘ তোরা খেল বাপ৷ আমি খেলতাম না। আমার কাজ পইড়া আছে৷
মাহিদ চলে গেল।
জালিশা পিহুকে টেনে নিয়ে গেল। চুপিসারে জিজ্ঞেস করল,
‘ আরিশা তুমি নিনিত ভাইয়ার হবু বউকে চেনো? সে ও নাকি মেডিক্যালের স্টুডেন্ট? আমাকে তার সাথে পরিচয় করিয়ে দেবে প্লিজ প্লিজ।
পিহু থেমে গেল। বলল,
‘ সরি। আমাকে বাড়ি ফিরতে হবে। আসছি।
পিহু চলে গেল৷ জালিশা বলল,
‘ কেউ বলেনা। কে বলবে? স্যার বলতে পারবে?
জালিশা মাহিদের কাছে ছুটে গেল৷ ততক্ষনে মাহিদ বাইকে চেপে বসেছে। বাইক স্টার্ট ও দিয়েছে৷ জালিশার রাগ লাগল।
‘ কেউ বলেনা কেন?
নিনিত বলল,
‘ কি সমস্যা ম্যাডাম?
জালিশা বলল,
‘ নো প্রবলেম৷ থাকলে ও তোমাকে বলবনা৷ সিক্রেট ইস্যু৷
নিনিত হাসল। বলল,
‘ সিক্রেট মিনস মাহিদ রাইট?
জালিশা ভ্রুকুঞ্চন করে তাকালো৷ বলল,
‘ নো। বিডিতে আমি এমনিতেই এই বছর ফিরতাম, দ্বিতীয়ত তোমার বিয়েতে এসেছি, কজ নিশিতার বিয়েতে আসিনি তাই। স্যারের সাথে আসার কথা ছিল,কিন্তু স্যার আমাকে ফেলে চলে এসেছে চালাকি করে৷ স্যার নিজে ও জানেনা আমি স্যারের চাইতে ও বড় চালাক৷

_______________

চারবছর পূর্ণ হলো রাহির। জন্মদিন উপলক্ষে খান বাড়ির সবাই এল চৌধুরী বাড়ি। রাহির সেই কি খুশি। প্রশ্ন করার জন্য কতোগুলো মানুষ পেল সে। রিপের কোলে যেই উঠল নামতে চাইল না। প্রশ্ন করল,
‘ ব্যারিসতার ছিকুকে আদল করেনা কেন?
রিপ হেসে বলল,
‘ এখন ও তো আদল করছি। তুমি ভালো করে পড়াশোনা করছ তো? চারবছর গেল কিন্তু।
‘ চারবছর গেল কেন?
‘ এটা কোনো প্রশ্ন হলো ছিকুভাই?
‘ এটা প্রশনো নয় কেন?
‘ এটা ও কোনো প্রশ্ন না৷ তুমি প্রশ্ন করতে জানোনা৷
‘ ছিকু প্রশনো করতে জানেনা কেন? ছিকু ছোট কেন?
রিপ রাহির পড়নের পান্জাবীর কলার ঠিক করে দিতে দিতে বলল,
‘ ছিকু বাচ্চা এখনো। বাচ্চারা কি বড় হয় কখনো?
ছিকু নিজের পড়নের পান্জাবী দেখে বলে,
‘ ছিকু পান্জাবী পড়েছে কেন?
রিপ হাসল৷ বলল,
‘ ছিকুর আজ বার্থডে। সবাই দেখবে ছিকুকে। তাই ছিকু পান্জাবী পড়ে বর সেজেছে৷
রাহি খুশি হলো।
‘ রাহি বর কেন? রাহি বউ নয় কেন?
রিপ আওয়াজ করে হেসে দিল৷ বলল,
‘ রাহি ছেলে তাই বর। মেয়ে হলে বউ হতো আর কি।
রাহি একেরপর এক প্রশ্ন করেই গেল। রিপ উত্তর দিয়ে গেল।
একে একে সবাই এসে রাহির হাতে গিফট তুলে দিল। গিফটবক্সের মাঝখানে বসে রইল রাহি। আদির দিকে হাত টেনে বলল,
‘ ডকতর কেউ ছিকুকে কোলে নেয় না কেন?
আদি হাসল। বলল,
‘ তুমি কতবড় একটা ছেলে। এখনো কোলে চড়ার অভ্যাস কেন?
রাহির রাগ লাগল৷ বলল,
‘ ছিকুর রাগ লাগে কেন?
আদি হাসল। রাহিকে কোলে তুলে নিয়ে বলল,
‘ ছিকুভাই ভারী দুষ্টু তাই।
ছিকু বলল, ছিকুভাই দুষ্টু কেন?
ইশা এসে বলল,
‘ ছিকুর ভাই দুষ্টু তাই৷
আদি বলল, মিষ্টি আমি মোটে ও দুষ্টু না। খুব ভালো?
রাহি জানতে চাইল,
‘ ডকতর ইশুকে মিষতি ডাকে কেন?
আদি ইশা একসাথে হাসল। রাহি বলল,
‘ সব্বাই হাসে কেন? ছিকুর রাগ লাগে কেন?
পরী,রেহান আসেনা কেন? কেক কাটব না কেন? মিহি আসেনা কেন? পিহু আসেনা কেন?
আদি ইশা হেসেই গেল৷ রাহি প্রশ্ন করেই গেল৷

সিড়ি বেয়ে পিহু নেমে এল হাসিহাসি মুখ করে। পড়নে ডার্ক ব্লু পাড়ের পিন্ক কালারের শাড়ি। শাড়ির কুঁচি ধরে দৌড়াতে দৌড়াতে রেহানের সামনে এসে বলল,
‘ দাভাই আমাকে দেখতে কেমন লাগছে? সত্যি করে বলবে৷ খারাপ লাগলে খারাপ। ভালো লাগলে ভালো। বলো। বলো।
রেহানকে বলতে হলোনা৷ রাহি চলে এল৷ চোখ পাকিয়ে পিটপিট করে তাকিয়ে বলল,
‘ পিহু ওয়াহ লাগছে কেন? পিহু মিষতি কেন? পিহু রাহি বউ নয় কেন?
রেহান হা হু করে হেসে উঠল৷ পিহু গাল ফুলিয়ে বলল,
‘ এখন আমাকে তোর বউ বানাতে ইচ্ছে করছে পাজি ছেলে,?
রাহি ভ্রু কুঞ্চন করে বলল,
‘ পিহু বউ বকে কেন? ছিকুকে কোলে নেয়না কেন? ছিকুকে বর ডাকেনা কেন? ছিকু পান্জাবী পড়েছে,ওয়াহ বলেনা কেন? বিটিফুল বলেনা কেন? কেন বাপ কেন?
রেহান হাসতে হাসতে বলল,
‘ শেষমেষ আমার ছেলেকে পটাই ফেললে পিহু। এটা কি ঠিক হলো?
পিহু রাহির কান টেনে ধরল। বলল,
‘ আর বউ বউ করবি?
রাহি বলল,
‘ আমাকে বউ মারছে কেন? বউ বরকে মারে কেন? বর ব্যাথা পায় কেন?
পেছন থেকে নিনিত বলে উঠল৷
‘ বর কে? বউ কে রাহিসাহেব?
রাহি ডাকল,
‘ নিনি ডকতর পিহুর বর কেন? পিহু বউ কেন? ছিকু বর নয় কেন?
পিহু ঠোঁটে কৃত্রিম হাসি ঝুলালো। রেহানকে বলল,
‘ দাভাই আমি আসছি। দেখি কতদূর গেল?। নিনিত রাহিকে কোলে তুলে নিল৷ বলল,
‘ আপনি এত প্রশ্ন করেন কেন? আপনার প্রশ্নগুলো শুনলে মাথা ঘুরাই কেন?

________________

পিহুকে ডেকে নিল আদি। পিহু শাড়ির কুঁচি ধরে পা টিপে টিপে যখন আদির রুমে গেল তখন দেখল সেখানে রিক,রিপ,ইশা,মুনা, নীরা,রেহান, পরী সবাই। রেহান বলল,
‘ ভেতরে এসো।
পিহু সবার মুখের দিকে প্রশ্নবিদ্ধ চোখে তাকিয়ে ভেতরে আসল৷ বলল,
‘ কি হয়েছে?
আদি পিহুর মাথায় হাত রাখল৷ বলল,
‘ ওই একটা জরুরি কথা জিজ্ঞেস করার ছিল তোমাকে। আমরা আজকেই সব কথাবার্তা সেড়ে নিতে চাইছি। যেহেতু নিনিতের বাবা মা ও এসেছেন৷ তোমার মতামত জানতে চাইছি।
পিহু সাথে সাথে রিপের দিকে তাকালো। রিপ ততক্ষণে অন্যদিকে মুখ করে পেছনে হাত দিয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছে। পিহুর গলার আওয়াজ বড় হয়ে গেল সাথে সাথে৷
‘ আমার মতামত জানার কি দরকার পাপা? আমি তো বলেছি আমাকে কোনোকিছু জিজ্ঞেস করবে না। তোমরা যা ইচ্ছে তাই করতে পারো।
ইশা বলল,
‘ এটাই জিজ্ঞেস করতে ডেকেছে। তোমার মামারা তোমার মুখে শুনতে চেয়েছিল তাই।
পিহু রুম থেকে বেরিয়ে গেল সাথে সাথে। রিপ ও বের হলো পিহুর পিছু পিছু। পিহু যেতে যেতে থেমে গেল পেছনে কারো পায়ের আওয়াজ পেয়ে৷ রিপকে দেখে মাথা তুলে তাকালো। আবার মাথা নামিয়ে ফেলল। রিপ হাসল। বলল,
‘ ঠিক সিদ্ধান্তঃ নিয়েছ পিহু। আমি খুব খুব খুশি হয়েছি তোমার এই সিদ্ধান্তে। ভালো থেকো সবসময়।
পিহু দৌড়ে এল রিপের কাছে৷ ঝাপটে আঁকড়ে ধরল রিপকে৷ রিপ তার মাথায় হাত বুলিয়ে বলল,
‘ ভালোবাসা ও তাহলে রঙ বদলায়। জানতাম না তো৷ তুমি শেখালে।
সাথে সাথে পিহু তাকে ছেড়ে দিল। রিপকে দেখালো না তার ভেজা আঁখি যুগল। চলে গেল৷ রিপ তার যাওয়ার দিকে তাকিয়ে হাসল৷

____________

কেক কাটার সময় হলো। মোমবাতি খুঁজে না পেয়ে সবাই দৌঁড়াল এদিকওদিক। রেহান ডাকল পরীকে। পরী ডাকল ইশাকে৷ ইশা ডাকল আদিকে। কেউ মোমবাতি খুঁজে না পেয়ে পাগলপারা হলো। মৃদুমৃদু অন্ধকার রুমটির মেইন লাইট বন্ধ করা হলো মোমবাতির আলো জ্বালবে বলে। কিন্তু মোমবাতি খুঁজে না পেয়ে সবাই ছোটাছুটি লাগাল।
রাহি রিপের কোলে থাকা অবস্থায় বলল,
‘ ছিকু কেক কাটবে না কেন? লাইট জ্বলেনা কেন?
লাইটার জ্বালালো পিহু। দুটো মোমবাতি জ্বালালো মাথা নিচু করে। মোমবাতির নরম আলোয় উল্টোপাশে চোখ ফেরাতেই দেখতে পেল খুব প্রিয় একটি মুখশ্রী৷ লাইটার দিয়ে ধীরে ধীরে ছেলেটি ও জ্বালাচ্ছে মোমবাতি। মোমবাতি জ্বালাতে ছেলেটি এতটাই ব্যস্ত যে সামনে তাকিয়ে মোমবাতির নিয়ন আলোয় সামনের রমণীকে দেখার সুযোগটুকু হলোনা। রাহি হাততালি দিল,
‘ মিহি পিহু কুথা বুলেনা কেন? মিহি পিহুকে ওয়াহ বুলেনা কেন?
রিপ চেপে ধরল রাহির মুখ৷ বলে,
‘ পরী মারবে। আর কথা বলোনা।
মাহিদ মোমবাতি জ্বালিয়ে রিপের পাশে এসে দাঁড়ায়। রিপ বলল,
‘ রাহির গিফট কোথায়? তোরটা,?
মাহিদ পকেটে হাত পুড়ে সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে জবাব দিল
‘ দিদিয়াকে দিয়েছি।
রিপ মাথা নাড়ল৷ বলল,আচ্ছা ঠি কাছে৷
পিহু এসে দাঁড়ালো ইশার পাশে৷ ইশা বলল,
‘ নিকিতা আন্টির সাথে কথা বলেছ?
পিহু উত্তর দিল,
‘ হুম।
‘ নিয়াজ আন্কেলের সাথে?
‘ হুম৷
‘ নিনিতের সাথে?
‘ হুমম।

মাহিদের পাশে এসে দাঁড়াল একটি মেয়ে৷ নিনিত ডাক দিল,
‘ জালিশা কোথায় যাচ্ছ?
আদি ইশা তাকালো। বলল, দুষ্টু কিন্তু খুব মিষ্টি মেয়েটা৷
রিপ থাকায় মাহিদ নড়েচড়ে দাঁড়ালো। জালিশাকে দেখল৷ জালিশা রিপকে বলল,
‘ আন্কেল আপনার ছেলে আপনার কার্বন কপি। তাই আমি চিনে ফেলেছি যে আপনিই স্যারের বাবা।
রিপ হাসল। বলল,
‘ গুড গার্ল। ট্যালেন্টেড৷
মাহিদ বিড়বিড় করে বলল,
‘ চুপ কর বাপ।
জালিশা রাহিকে বলল,
‘ হেই কিউট তুমি এবার কেক কাটো। মোমবাতি নিভাও৷
নিনিত তার মায়ের দিকে তাকালো। বলল,
‘ এজন্যই বলেছি ওকে না আনতে।
রাহি চোখ পাকিয়ে তাকালো জালিশার দিকে। বলল,
‘ তুমি বেশি কুথা বুলো কেন? তুমি মিহির পাশে দাঁড়াও কেন?
সবাই হেসে উঠল একসাথে। জালিশা চোখ মেরে দিল নিনিতকে৷
নিনিত চোখ রাঙালো। জালিশা তাকে পাত্তা দিল না। ইশা বারবার তাকালো জালিশার দিকে৷ কার কথা যেন মনে পড়ছে। কার চেহারার সাথে যেন মিল মিল লাগছে।

রাহি মোমবাতি নিভাতে গিয়ে দুটো ফুঁ দিল৷ যখন নিভল না, বলল,
‘ নিভে যায়না কেন? ছিকুর মাথা ঘুরছে কেন?
সবাই হেসে লুটোপুটি খাওয়ার অবস্থা।
কেক কাটার পর,খাওয়া দাওয়া ও শেষ হলো। জালিশা কেক খেলনা, টুকরোটা হাতে নিয়ে পিহুর সামনে গিয়ে বলল,
‘ তুমি আমাকে মিথ্যে বলেছ কেন?
পিহু কিছু বুঝল না। কিছু বলার আগে জালিশা কেক পুড়ে দিল পিহুর মুখে। বলল,
‘ অল দ্য বেস্ট।
পিহু হা করে তাকিয়ে রইল৷ খাওয়ার টেবিলে দু একটা ঠাট্টা-তামাশা শুরু হলো পিহু আর নিনিতকে নিয়ে। বড়রা নিজে নিজে কথা বলে,নিজেরা হাসাহাসি করছে। এটা ওটা বলছে। পিহু মূর্তির মতো বসে রয়েছে শুধু। তার সামনাসামনি বসা রিপ। কোনোমতে খাচ্ছে সে। খাবারগুলো নামছেনা গলা বেয়ে। পিহু প্লেটে হাত নাড়ছে শুধু। রেহানের পাশে মাহিদ। এটা ওটা তুলে দিচ্ছে সে মাহিদকে৷ রাহি তো চেয়ারে দাঁড়িয়ে খাচ্ছে। সাদা পাঞ্জাবী হলুদ করে ফেলেছে নিজ হাতে খেতে গিয়ে। আজ তার দাম বেড়েছে তাই পরীকে কাছে ও ঘেঁষতে দিচ্ছে না। রিপ কোনোমতে খেয়ে উঠে গেল। ইশাকে বলল,
‘ পিহুকে আবার জিজ্ঞেস করিস তো এই বিয়েতে রাজি কিনা?
ইশা বলল,
‘ তোমাদের সামনেই তো জিজ্ঞেস করা হলো। আবার কেন রিপদা?
রিপের হঠাৎ কেন যেন রাগ লাগল। সে কপট রাগ দেখিয়ে বলল,
‘ তুই মা ইশু। তোকে পিহুকে আর ও বেশি বুঝা দরকার। কিন্তু তুই??? যাহ ভালো মনে হয় তাই কর। আমি নেই এসবে৷ যাচ্ছি।
রিপ চলে গেল।
রাহি এত খুশি হলো। কি বিয়ের কথা শুনল বিয়ে বিয়ে করে মাথায় তুলল বাড়ি।
মাহিদকে ডেকে বলল,
‘ মিহি পিহুর বিয়ে হবে কেন? পিহুর বর নিনি কেন? পিহু হাসেনা কেন?
মাহিদ হাসল হো হো করে। রাহির সাথে তাল মিলিয়ে বলল,
‘ বিয়ে খামু বাপ। কি খুশি! কি খুশি!
রাহি আর মাহিদের কান্ড দেখে সবাই হেসে গড়াগড়ি।
পিহু সবার চোখের আড়াল হয়ে চলে গেল উপরে। রিপ বের হয়ে গেল চৌধুরী বাড়ি থেকে৷ নিজের ছেলের উপর আজ রাগ ঝড়ে পড়ছে৷ এদের কি মন বলতে কিছুই নেই? আশ্চর্য! এরা কি সত্যিই মন পড়তে জানেনা? ভালোবাসার তীক্ষ্ণ অনুভূতি, যন্ত্রণা গুলো তাদের ছুঁতে পারেনা কেন?

একে একে বিদায় নিল সব মেহমান।
মাহিদ নীরাকে বলল,
‘ মা বাড়ি যাব কখন?
ইশা বলল,
‘ যাবেন কেউ। সবাই থেকে যাবে।
মাহিদ রাহিকে কোল থেকে নামিয়ে বলল
‘ আচ্ছা। তাহলে আমি চলে যাই?
মুনা বলল, তুই সেখানে গিয়ে কি করবি? থেকে যাহ তুই ও। তোর বাবা তো চলে গিয়েছে।
মাহিদ বলল, না আমি এখানে থাকব না। চলে যাব।
আদি বলল
‘ থেকে যাও মাহিদ। চলে যাচ্ছ কেন? পিহুর বিয়ে সামনে তোমাকে লাগবে আমাদের।
মাহিদ হাসল। বলল,
‘ আমার যাওয়ার সময় ঘনিয়ে আসছে। বিয়ের ডেট তাড়াতাড়ি ফেললে ভালো হয়।
ইশা বলল,
‘ তুই আবার চলে যাবি?
মাহিদ বলল,
‘ আমার এই দেশে কিচ্ছু নেই। আমার চাকরিটা ও ওখানেই। দিনশেষে আমাকে তো সেখানেই ফিরতে হবে। এবার একা ফিরব না। মা আর বড়মাকে ও নিয়ে যাব। তারা দুইভাই নাকি যাবেনা ভিটেমাটি ছেড়ে৷ পড়ে থাকুক সেখানে। যখন প্রয়োজন হবে আপনাআপনি যাওয়ার জন্য রাজি হবে।
ইশা বলল, এখানে থেকে যাহ না। বাংলাদেশে কি ভার্সিটির অভাব রয়েছে? কোনো একটা ভার্সিটিতে প্রফেসর পদে এপ্লাই কর না? হয়ে যাবে দেখিস।
মাহিদ কোনো কথা বলল না। সোফায় গা এলিয়ে বসে রইল। মাথাটা সোফার সাথে হেলান দিয়ে পা তুলে শুয়ে পড়ল। বলল, আমি এখানেই ঘুমাবো। কেউ ডিস্টার্ব করবেনা। লাইট অফ করে ঘুমিয়ে পড়ো। ইশা হাজার ডেকে ও লাভ হলোনা। মাহিদ রুমে গেলনা। সোফায় শুয়ে ঘুমিয়ে পড়ল। তারপরের দিন সকাল হওয়ার আগেই চলে গেল মাহিদ। কাউকে বলার প্রয়োজন মনে করল না।

___________

মেডিক্যাল থেকে ফেরার পথে আকস্মিক এক ঘটনায় পিহু হতভম্ব হয়ে গেল। কথা বলতে ভুলে গেল। বাইকের পাশে দাঁড়ানো ছেলেটির কপাল বেয়ে অঝোরে রক্ত গড়াচ্ছে। হালকা ছাইরঙা শার্টটা রক্তে ভিজে জবজবে হলে ও ছেলেটি নির্বিকার। বাইকের চাকার মধ্যে কি যেন দেখে ছেলেটি জোরে লাতি বসাল সেই চাকার উপর। তারপর বাইকে হেলান দিয়ে আকাশের দিকে মুখ করে বসে রইল অনেকক্ষণ। কপালে হাত দিয়ে রক্তগুলো দেখল৷ তারপর চোখমুখ কুঁচকে রক্তগুলো মুছে নিতে গিয়ে দেখা গেল পুরো শার্টটা লাল রঙা হয়ে যাচ্ছে। আশেপাশের কয়েকটা লোক ছেলেটিকে পাগল উপাধি ও দিয়ে ফেলেছে৷ এভাবে রক্ত ঝড়ছে আর ছেলেটি এখনো বসে আছে? বাইকটি বোধহয় অ্যাক্সিডেন্ট হয়েছে। ছেলেটি হসপিটালে যাচ্ছেনা কেন? রক্তপড়া এভাবে কখনোই বন্ধ হবেনা।
পশ্চিম আকাশ কালচে বর্ণ ধারণ করে কিসু মুহূর্তেই বর্ষণ নামার ইঙ্গিত দিচ্ছে। পিহু ঠাঁই দাড়িয়ে রইল কিছু বলতে পারল না। কিভাবে যেন হেঁটে সে ছেলেটির সামনে গিয়ে দাঁড়াল। পা দুটো অনবরত ঠকঠক করে কাঁপছে। ছেলেটি দেখল তাকে। কপালে গাঢ় ভাঁজ পড়ল। ভ্রুকুঞ্চন হলো। বিরক্তি নিয়ে তাকাতেই দেখল মেয়েটি হাত বাড়িয়ে দিল তার কপালের পাশে। হাতে গরম রক্ত লেগে যাওয়ার সাথে সাথে মেয়েটি নিজের রক্তাক্ত হাতটি দেখে এলোমেলো ভাবে কেঁদে দিল। রক্তভেজা হাতটা দেখে এমনভাবে কাঁদতে লাগল যেন রক্তক্ষরণ তার হচ্ছে। ছেলেটি বাইকের চাবি ঘুরানোর অব্যর্থ প্রয়াস চালালো। বাইক স্টার্ট দিতে চাইল৷ কিন্তু হলোনা। মেয়েটি কেঁদেই গেল৷
মাহিদ আর ও জোরে লাতি বসাল বাইকটিতে। মেয়েটির কান্নার আওয়াজে তার মাথা ধরে যাচ্ছে। উফ বিরক্তিকর। মাহিদ এই প্রথম মেয়েটির সাথে কথা বলল,
‘ কি সমস্যা?
পিহুর কান্নার গতি বাড়ল আর ও। মাহিদ কপালের একপাশে হাত দিল। চোখদুটো মেলে তাকাতেই কষ্ট হচ্ছে । মাথায় ঝিমঝিম আওয়াজ হচ্ছে। তারমধ্যেই মেয়েটির প্যানপ্যানানি।
আকাশ আর গম্ভীর হলো। বৃষ্টি নামার আগমুহূর্ত তাই রাস্তাঘাট প্রায় খালি খালি৷ মাহিদ সহ্য করতে পারল না মেয়েটির কান্নার অসহ্যকর আওয়াজ। মেয়েটিকে বারণ করায় মেয়েটি আর ও জোরে কাঁদল। আর না পেরে জোরে কষে চড় বসালো সে মেয়েটির গালে৷ মেয়েটির অবাক হয়ে চেয়ে রইল তার দিকে। বিড়বিড় করে বলল, আমাকে মেরেছ??
মাহিদ আর ও একটি চড় বসালো পিহুর গালে। পিহু এবার দুই পা পিছু হটল। গালে হাত দিয়ে চিৎকার করে কেঁদে দিয়ে বলল,
‘ তুমি আমাকে? আমাকে?
মাহিদ মাথায় হাত দিল। পিহু বলল,
‘ পাষাণ। হৃদয়হীন।
মাহিদ তার গালে আর ও একটি চড় বসিয়ে বলল,
‘ যাহহ বাপ দূরে গিয়া মর৷ যাহ আমার সামনে থেইকা। যাহহ।
পিহু হাত বাড়িয়ে বলল,
‘ রক্ত। ব্যান্ডেজ?
মাহিদ গর্জন করে উঠল৷ সর্বশক্তি দিয়ে চড় মারল পিহুর গালে৷ পিহু টাল সামলাতে না পেরে পড়ে গেল রাস্তায়। কপাল লেগে গেল পিচঢালা রাস্তায়। আঘাত পেল। সে চেঁচিয়ে কাঁদল সাথে আকাশ ও। আকাশ ও গর্জন করে কেঁদে উঠল। তুমুল বর্ষণ নামিয়ে দিল কান্নাসরূপ৷
ছেলেটি তাকে এভাবে পড়ে থাকতে দেখে দৌড়ে গেল৷ তাকে আষ্টেপৃষ্টে ধরে বলল,
‘ যাহ বাড়ি যাহ। বেশি ব্যাথা পেয়েছিস? কপাল ফেটেছে? যাহ বাড়ি যাহ৷ আমার সামনে থাকলে মাইর খাবি। যাহ বাপ। মাথা গরম করিস না।
পিহু তাকে ছাড়িয়ে নিতে চাইল৷ মাহিদ তাকে ধরে রাখতে চাইল। পিহু ছাড়াছাড়ি,ধস্তাধস্তি করতে একসময় শান্ত হয়ে গেল। রক্তাক্ত হাতটি যখন বৃষ্টিজলে ধুয়ে মুছে সাফ হতে চলল হাতটার দিকে তাকিয়ে সে ঢলে পড়ল মাহিদের বুকে৷ শক্ত করে আঁকড়ে ধরে তিনচারবার হিঁচকির সাথে যুদ্ধ করে ডাকল
‘ মাহিদ ভাই????
ছেলেটি ততক্ষনে মাথা এলিয়ে দিচ্ছে একটু একটু করে। গলার স্বর তার ছোট হয়ে এল। সেভাবেই বলল,
‘ এজন্যই বললাম চলে যেতে। শুধু শুধু কতগুলো মার খেলি। চলে যাহহ। তোর নাকি বিয়ে??

চলবে,,,,,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here