মন_কেমনের_বৃষ্টি #পর্ব_২৭(সিজন ২)

0
777

#মন_কেমনের_বৃষ্টি
#পর্ব_২৭(সিজন ২)
#পুষ্পিতা_প্রিমা

______________________________

জীবনের মন কেমন করা মুহূর্তগুলোতে জীবনের মোড় পাল্টায়৷ চেনা মানুষ অচেনা, আবার অচেনা অজানা মানুষগুলো খুব করে আপন হয়ে যায়। পরিস্থিতি আমাদের সেই অচেনা অজানা মানুষগুলোকে আপন করে নিতে বাধ্য করে ৷ যদিও বাধ্য করে কিছু হয়না। বরঞ্চ আমাদের বাধ্যতার কাছে হার মেনে নিতে হয়। নতুন করে সবকিছু শুরু করতে হয়৷ অতীত ভুলে বর্তমানকে আঁকড়ে ধরা শিখতে হয়। কিন্তু জীবনে চলার পথেপাথেয় যদি আকস্মিক সেই মানুষটার,সাথে আবার দেখা হয়ে যায়,যেই মানুষটার থেকে নিজেকে দূরে রাখার এত চেষ্টা, এত লড়াই। তখন?
বিস্ময় কাটিয়ে উঠতে না উঠতেই আইমির মুখ থেকে অস্ফুটস্বরে বের হয় একটি শব্দ,

‘ আদি!!!!

আদি চোখ একবার ওই দূরে নিক্ষেপ করে আবার তাকায় সামনের মহিলাটির দিকে। বলে,

‘ ইমি তুমি এখানে?

আইমির চোখে জল, মুখে হাসি। চৌধুরী বাড়ির এই বিপুল পরিবর্তন অবিশ্বাস্য। এতগুলো বছরের ব্যবধানে বাড়িটা ও অপরিচিত হয়ে গেছে। আর বাড়ির মানুষগুলো ও। কোথায় সেই আপনজন গুলো, যারা আইমি বলতে পাগল ছিল। মা তো ছোটবেলায় মারা গিয়েছে আইমির। আলিয়া আন্টিকেই সে মা ভেবে এসেছিল।
শক্তপোক্ত মনের মহিলাটি ভেতরে ভেতরে মমতাময়ী ছিলেন। আর আজিজ আঙ্কেল?
আইমি কাঁপাকাঁপা কন্ঠে জানতে চাইল।
‘ আদি আন্টি, আন্কেল? কোথায়? নেই?????

এই ‘ নেইই ‘ শব্দটা দুমড়ে মুচড়ে দিল আদিকে। কারা নেই? মা বাবা?
কোথায় সে মমতাময়ী মা? কোথায় সে বাবা?
চশমার আড়ালে হঠাৎই দুচোখ জ্বলে উঠে আদির৷ কম্পিত কন্ঠে বলল,
‘ নেই। চলে গিয়েছে। আমাকে ছেড়ে। আমাদের ছেড়ে।
আইমি হাতের টিস্যুপেপার দিয়ে চোখে চেপে ধরে। বলে,
‘ তাই তো বলি, আইমি এসেছে অথচ আলিয়া আন্টি আসছেনা কেন?
আদি বলল,
‘ তুমি দেশে কখন ফিরেছ?
‘ কিছুদিন আগে। নিয়াজ ভাইয়ার জোরাজুরি আর জালিশার আবদারে।
‘ নিয়াজ শেখওয়াত তোমার কি হয়?
‘ ওর মামার ছেলে।
আদি বলল,
‘ জালিশাকে এজন্যই চেনা চেনা লাগছিল।
আইমি হাসে। বলে,
‘ পরী কোথায়? অনেক বড় হয়ে গিয়েছে না?
আদি দেখল৷ সোফার কাছে শাড়ি পড়া বাচ্চা কোলে নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকা মেয়েটি বাচ্চাটির কথায় হেসে হেসে গড়াগড়ি খাওয়ার অবস্থা। আদি আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়ে বলল,
‘ ওই যে শাড়ি পড়া মেয়েটি।
আইমি হাসার জন্য কথা বলতে পারল না।
‘ পরী এত বড় হয়ে গিয়েছে? বাচ্চাটি ওর?
আদি মাথা নাড়াল। বলল,
‘ মিষ্টি?
আদি বলল,
‘ আছে। কাজে বিজি হয়ত। ওর মেয়ের বিয়ে।
আইমির চোখ বড় বড় হলো। বলল,
‘ নিনিতের সাথে তোমার ছোট মেয়ের বিয়ে হচ্ছে? আরিশা তোমার মেয়ে?
আদি মাথা নাড়াল।
‘ আমার মা এইটা৷
আইমি বলল,
‘ পুরো মায়ের কার্বনকপি তাহলে। আমি আরিশাকে সামনাসামনি দেখিনি, ছবিতে দেখেছি। নিনিত দেখিয়েছে। এজন্যই মিষ্টির চেহারা চেহারা লেগেছিল। তোমার চেহারার সাথে ও মিল আছে। দুইবোনের চোখগুলো তোমার মতোই। খুব ভালো আছ আদি। কত সুন্দর একটি সংসার তোমার। আজ আমার খুব খুশির দিন হয়ত। আমার এত আনন্দ কেন হচ্ছে?
আদি বলল,
‘ তোমার হাজবেন্ড জাবির শেখওয়াত?
আইমি মাথা নাড়ল। আদি বলল,
‘ খুব ভালো মানুষকে তুমি জীবনসঙ্গী হিসেবে পেয়েছ ইমি। তুমি ভালো আছ?
আইমি মাথা নামিয়ে হাসল। নরম কন্ঠে বলল,
‘ আমাকে ভালো থাকতে হয় আদি। স্বামী,সন্তান সংসারের জন্য। আমার মেয়ে তোমার সাথে কথা বলেছে?
আদি বলল,
‘ আমার সাথে না,সবার সাথে বলেছে। খুব মিশুক তোমার মেয়ে। আমার ছেলে থাকলে ছেলের বউ বানাতাম।
আইমি হেসে উঠল। বলল,
‘ থাকলে ভালো হতো। বাংলাদেশে থেকে যাবার অনেক শখ তার। এখন তো জেদ ধরেছে কানাডা নাকি ফিরবেনা।
আদি হাসল। বলল,
‘ তাহলে বিয়ে দিয়ে তারপর ফিরো।
আইমি বলল,
‘ মেয়ে রেখে আমি কি করে ফিরব আদি? আর মেয়ে পাগলা বাপ তো কখনোই ফিরবেনা।
আদি হাসল। বলল,
‘ তাহলে মহাজ্বালায় আছো।
আইমি বলল,
‘ আর বলোনা। যাইহোক আমি মিষ্টির সাথে কথা বলব। কোনদিকে ও?

_____________

থমথমে মুখে নীরা হনহন পায়ে এসে দাঁড়াল রিকের পেছনে। বলল,
‘ বড়দা শুনছেন?
রিক ফোনে কথা বলা শেষে ঘাড় ঘুরিয়ে তাকালো পেছনে। বলল,
‘ কি হয়েছে নীরা? কোনো সমস্যা?
নীরা রেগে বলল,
‘ আপনার ভাই কোথায়?
রিক বলল,
‘ রিপ? আছে ওইতো বাইরে বোধহয়। এখন দেখেছিলাম। কেন?
নীরা বিড়বিড় করে বলল,
‘ আজ মেরে ফেলব একদম হাতের কাছে ফেলে।
নীরার বিড়বিড় করে বলা কথা রিক শুনে ফেলল। বলল,
‘ কি হয়েছে নীরা ? কেন খুঁজছিস?
নীরা রাগ করে চলে গেল। বলে গেল,
‘ আপনার ভাইকে বলবেন আমি ডেকেছি।
রিক হেসে দিল। মুনা দৌড়ে এল। রিককে বলল,
‘ রেগেছে কেন? কি বলেছে পাগলোনি আপনাকে?
রিক বলল,
‘ রিপকে নাকি মেরে ফেলবে।
মুনা হেসে দিল। বলল,
‘ পাগলটাকে নিয়ে রিপ এক জ্বালায় পড়ল। বউ এক জ্বালা জ্বালায়, ছেলে আরেক জ্বালা জ্বালায়। মাহির কোনো খোঁজ পেয়েছেন? কাল শেষরাতে আমার হাতে দুটো খেয়ে কোথায় যে গেল,আর এলনা। তার মা তো এই বিয়ে বাড়িকে কুরুক্ষেত্র বানিয়ে ছাড়বে। সব দোষ এখন রিপের ঘাড়ে গিয়ে পড়বে।
রিক বলল,
‘ বিয়েটা মিটে যাক। আমি দেখছি। ওর ফোন তো বন্ধ।
মুনা বলল,
‘ এমন একটা দিনে ও ছেলেটাকে নিয়ে চিন্তায় থাকতে হয়।
রিপ আসল। মুনা বলল,
‘ ছেলেটার কোনোখবর পেলি?
রিপ বলল,
‘ ওকে নিয়ে চিন্তা করোনা। ও ঠিক আছে।
রিক বলল,
‘ চিন্তা করোনা মুনা। মাহির চিন্তা করার জন্য ওর মা বাবা আছে। আমাদের চিন্তা না করলে ও চলবে।
রিপ আর মুনার ঠোঁট আপনাআপনি আলগা হয়ে গেল। রিপ রেগে গেল। বলল,
‘ তুমি আমার বড়দা নয়। আমার সাথে কথস বলতে আসবেনা একদম।
রিপ চলে গেল ক্ষেপে। মুনা বলল,
‘ এটা কি বললেন আপনি? কত কষ্ট পেল সে। আপনার ভাই না?
রিক হেসে দিল। বলল,
‘ রাগালাম। চাপ নিওনা। দিনশেষে ও আমারই ভাই। আমাদের পৃথিবী একটাই। আমরাই খান বংশের প্রদীপ। মাহি দিনশেষে আমাদের ছেলে। আমাদের সন্তান। আমাদের ভবিষ্যৎ। তার ব্যারিস্টার বাপকে রাগলে ভালো লাগে। তাই রাগাই। বুঝোনা না ক্যান বাপ?
মুনা পেট চেপে হেসে দিল। বলল,
‘ আপনাকে বাপ রোগে ধরেছে? আপনাদের নিয়ে কোথায় যায়?
রিক হাসল। দূরে এদিকওদিক দৌড়ে কাজে কাজে ব্যস্ত মেয়েটিকে ডাক দিল,
‘ মা?????
মেয়েটি তার ডাক শুনে হাসল। শাড়ি ধরে দৌড়ে আসল। এসে রিকের বুকে হামলে পড়ে বলল,
‘ পাপা খুব বিজি কাজে। বোনের বিয়ে।
রিক হাসল। পরীর মুখটা তুলে ঘাম মুছে দিল। বলল,
‘ বর কোথায়?
পরী হাসল। বলল,
‘ উনি ও কাজে।
‘ আপনার বড় আব্বাটা কোথায়?
পরী হাসল। বলল,
‘ উনি আছেন। কেন, কেন করে সবার মাথা খাচ্ছে। এখন আইমি আন্টির কোলে উঠে বসে আছে।
মুনা বলল, আইমি ও এসেছে?
পরী বলল,
‘ হ্যা। তুমি দেখোনি মাম্মা?
মুনা বলল,
‘ না। ওর হাজবেন্ড এসেছে?
পরী বলল,
‘ হ্যা। মেয়ে ও এসেছে। জালিশা।

____________________

ইশা বরপক্ষ থেকে আগত সবাইকে বসতে বলল। অ্যাপায়ন করল। সবার সাথে হেসেখেলে যেতে যেতে থেমে গেল। রাহি কোলে নেওয়া মহিলাটি কে?
রাহি ইশাকে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে বলল,
‘ ওততো ইশুবুনু।
ইশা হাসল। আইমি ইশার সাথে হাসল। ইশা আইমির সামনে গিয়ে দাঁড়ায়। বলে,
‘ কেমন আছেন আপু?
আইমি হাসল। বলল,
‘ অনেক ভালো। তুমি কেমন আছ?
ইশা বলল,
‘ এইতো। ছিকুসোনা কি কোল দখল করে নিয়েছে?
আইমি রাহির গালে আদর দিয়ে বলল,
‘ আমার মেয়ে জামাই করব ভাবছি। পরী দেবে কি?
ইশা হেসে দিল। বলল,
‘ জালিশার মাথা খাবে কেন কেন করে?
আইমি বলল,
‘ খাবে। সমস্যা কি? এত সুন্দর পিচ্চি বর। আমার মেয়ে সামলাতে পারবে। রাহি বলোতো জালিশা সুন্দর না?
রাহি বলল,
‘ জানিচা বেশি কুথা বুলে কেন?
ইশা বলল, শুধু এটাই দোষ? তারমানে পছন্দ?
রাহি বলল,
‘ জানিচা বিটিফুল কেন?
আইমি হেসে দিল। বলল,
‘ মিষ্টি তারমানে পছন্দ হয়েছে।
রাহি বলল,
‘ জানিচা আমাকে কুলে নেয়না কেন? বর ডাকেনা কেন? আদল করে না কেন?
ইশা,আইমি হেসে কুটিকুটি হলো। রাহি প্রশ্ন করেই গেল।

_________________

বিয়ের কাজকর্ম শুরু হলো। কাজী এসে বিয়ে পড়ালো৷ পর্দার ওপাশে ঘোমটার আড়ালে থাকা পিহু নির্জীব, নিষ্প্রাণ। তাকে কবুল বলার জন্য কাজী সাহেব জেরা করলেন। সবাই উৎসুক হয়ে বসে রইল পিহুর মুুখে কবুল শোনার জন্য। আদি,আফি,রেহান,রিক আর রিপ দাঁড়িয়ে রইল দূরে। রাইনা পিহুর কানে কানে এসে বলল,
‘ মা কবুল বলে ফেল। সবাই অপেক্ষা করে আছে। পিহু? বলে ফেল। তুই কি কাঁদছিস? কেন কাঁদছিস? দেখ, আজ না হয় কাল মেয়েদের যেতেই হয় শ্বশুড়বাড়িতে। আর কাঁদিস না মা৷ সবাই অপেক্ষা করে আছে।
পিহুর গলা ভেঙে গেল। সে ভাঙা গলায় ডুকরে উঠে কাঁপা-কাঁপা কন্ঠে বলে দিল,ক__বুল,ক_বুল,ক,,,,বুল।

সবার মুখে হাসি ফুটে উঠল৷ কাজী সাহেব নিমিতের কাছে গেল। নিনিত ঘাড় ঘুরিয়ে একবার আদির দিকে তাকালো। আদি সায় জানালো। নিনিত ও কবুল বলে দিল। নিনিতের বন্ধুরা বলেই ফেলল,
‘ মামা বিয়ে করে ফেললি? এই যাহহ এবার আর রোবট হয়ে থাকিস না। একটু প্রেম ট্রেমে মনযোগ দে।
নিনিত একটুখানি হাসল। বলল,
‘ এখানে মুরব্বি আছে শালা। সাবধানে কথা বল।

রেহানের মামার মেয়েগুলো পিহুকে তুলে নিল। বলল,
‘ মুরব্বিরা চলে গিয়েছে পিহু৷ এবার ঘোমটা তুলো আমরা ছবি তুলব। এনজয় করব। বর বউয়ের সাথে ছবি তুলব।
রাইনা বলল,
‘ পরে পরে। সব পরে হবে।
মিনা, তিনা ঘোমটা সরিয়ে দিল পিহুর।বলল,
‘ পরে কিছুনা ফুপী। এখনি হবে। দিনটা বারবার আসবেনা।
তারা পিহুকে হাত ধরে টেনে নিয়ে গেল নিনিতের কাছে। দূর থেকে একটি ভদ্র মহিলার কর্কশ কন্ঠস্বর ভেসে আসল। মুহূর্তেই পরিবেশ থমথমে হয়ে গেল। নিনিতের চোখ থেমে গেল মায়ের রাগী মুখে। নিনিত জানতে চাইল
‘ কি হয়েছে মা?
নিকিতা বেগম তেড়ে আসল। বলল,
‘ ওকে দেখেছিস?
নিশিতা দৌড়ে এসে বলল,
‘ ও পিহু নয় দাভাই। এসব কি হচ্ছে?

নিনিতের চোখ দিয়ে আগুনের ফুল্কি বের হলো।
আইমি শক্ত হয়ে দাঁড়িয়ে রইল। জাবির বাকহারা। জালিশা কেঁদে দিয়ে আইমিকে বলল,
‘ মাম্মাম আই এম সরি। সবকিছুর জন্য সরি।
আইমি কষে চড় বসালো জালিশার গালে। জাবির আঁতকে উঠল। নিয়াজ শেখওয়াত এসে জালিশাকে তুলে নিল। জড়িয়ে ধরে বলল,
‘ আমার ছেলের বউ।
নিনিত আদিকে খুঁজল। আদিকে দেখে দৌড়ে গেল সেদিকে। বলল,
‘ স্যার, আ’ম সো সরি। সো সরি। এটা কি করে হলো স্যার? আরিশা কোথায়? স্যার এসবে আমার কোনো হাত নেই। ট্রাস্ট মি।
আদি শান্ত চোখে ইশার দিকে তাকালো। ইশা এসে নিনিতকে বলল,
‘ তোমার মাকে সামলাও নিনিত। চিন্তা করোনা সব ঠিক হয়ে যাবে।
নিনিত আদির হাত ধরল। বলল,
‘ স্যার স্যা সামথিং। জালিশা এখানে কি করে?
নিনিত জালিশার কাছে গেল। হাত ধরে টেনে নিয়ে এসে বলল,
‘ এসব কি জালিশা? বিয়ে ছেলেখেলা নয়। এই শাড়ি কোথায় পেলে তুমি? এটাতো আরিশার কাছে থাকার কথা। তোমার গায়ে কেন?
জালিশা কেঁদেই গেল৷ বলল,
‘ আমার কোনো দোষ নেই। আমি তোমাকে, ওই,,,,,
নিনিত জোরে চড় বসিয়ে গর্জে বলল,
‘ চুপ। একদমম চুপ।
জালিশা হাত দিয়ে চেঁচিয়ে কেঁদে উঠল। আইমি বলল,
‘ এই শিক্ষা আমি তোমাকে কখনোই দেইনি জালিশা। তুমি এটা কি করলে? কেন করলে? আরিশা কোথায়?
জালিশা ডুকরে উঠে বলল,
‘ এই বাড়িতেই আছে।
নিনিতের মাথায় হাত দিয়ে বসে থাকল। নিশিতা তেড়ে এসে বলল,
‘ এটা কি করলে জালিশা? কবুল তুমি বলেছ?
নিশিতাকে থামিয়ে দেয় রাইনা। বলে,
‘ হ্যা। ওকে আর বকোনা। ঘরে তোলার ব্যবস্থা করো।
নিশিতা গর্জন করল।
‘ পিহু আমার দাভাইয়ের বউ হবে। জালিশা নয়।
জালিশা কাঁদল। জাবিরের কাছে গিয়ে বলল,
‘ পাপা আমার কোনো দোষ নেই। তুমি ও আমাকে ভুল বুঝোনা,প্লিজ পাপা।
জাবির কোনো আওয়াজ করল না। আইমি মুখ ফিরিয়ে বলল,
‘ ছিঃ।
জালিশা আদির কাছে গিয়ে ঝাপটে জড়িয়ে ধরল। বলল,
‘ আঙ্কেল আমার কোনো দোষ নেই। আমি সব করেছি বিয়েটা না হওয়ার জন্য।
আদি বলল, আরিশা কোথায়?
জালিশা চোখ মুছল। বলল,
‘ ওই ঘরটাতে আছে। ইশা আন্টি দেখেছে।
আদি ইশার দিকে তাকালো। ইশা মাথা নামিয়ে ফেলল। আদি বলল,
‘ মিষ্টি???
ইশা বলল,
‘ আমাকে ভুল বুঝবেন না ডক্টর। আমি আপনাকে সব বুঝিয়ে বলছি।
আদি বলল,
‘ দরকার নেই।
রিপ এসে বলল,
‘ রাগ করছিস কেন? জালিশা নিনিতকে ভালোবাসে। হয়ত নিনিত ও।
আদি ভ্রু কুঞ্চন করে তাকালো। নিনিত মাথা নাড়িয়ে বলল,
‘ মিথ্যে কথা। আমি কখনোই,,,,,,,,,,,
জালিশা জোরে কেঁদে উঠল। নিনিত দাঁতে দাঁত পিষে বলল,
‘ হেইট ইউ। দূর হও তুমি।
জালিশা কেঁদে সোফায় বসে পড়ল। নিকিতা শেখওয়াত নিনিতকে ডাক দিল,
‘ নিনিত বাড়ি চল। রং তামাশা চলছে এখানে। তোকে আমি আর ও ভালো মেয়ে দেখে বিয়ে করাবো। চৌধুরী সাহেব এটা কি করল? মেয়েকে লুকিয়ে রেখেছেন কোথায়?
আদি কিছু বলতে পারল না। নিকিতা বেগম বের হয়ে গেলেন। নিনিত মা মা ডেকে ডেকে মায়ের পিছু পিছু বের হয়ে গেল।
আইমি শক্ত করে জালিশার হাত ধরল। টেনে নিয়ে যেতে যেতে বলল,
‘ বেশি বাড় বেড়েছ তুমি। বের করব আমি। সোজা কানাডা পাঠিয়ে দেব।
জালিশা বলেই গেল,
‘ হাতে লাগছে। ইশা আন্টি,আদি আন্কেল আমার কোনো দোষ নেই। মাম্মাম আমার কোনো দোষ নেই।
আইমি নিয়ে গেল জালিশাকে। আদি তাকালো ইশার দিকে। ইশা এগিয়ে এসে বলল,
‘ ডক্টর, আমি বলছি। আসলে,,,,,,,,

আদি সর্বশক্তি দিয়ে চড় বসাল ইশার গালে। ইশা রিপের কাছে গিয়ে পড়ল। রিপ গর্জে ডাক দিল,
‘ আদি? না বুঝে শুনে ওর গায়ে হাত তুলেছিস কেন? ইশু কিছু করেনি।
আদি গর্জন করে কড়া কন্ঠে বলল,
‘ আমার মান সম্মান সব ধুলোয় মিশে গেল। নিজের মেয়ের সাথে কেউ এমনটা করে?
পরী দৌড়ে এল। বলল,
‘ আব্বা পিহু এই বিয়েতে রাজী ছিল না। ও নিনিতকে নয় মাহিকে,,,,,,

আদির ভ্রু কুঞ্চন হলো।
‘ মাহি?
পরী মাথা নাড়াল ঘনঘন। আদি বিস্ময় নিয়ে তাকালো ইশার দিকে। ইশা গালে হাত দিয়ে মেঝোর দিকে তাকিয়ে কাঁদছে। রিপ বলল,
‘ বিয়ো আর ও একটা হবে। রেহান কাজীকে ধরে নিয়ে এসো। যাও।
রেহান ছিকুকে কোলে তুলে নিল। বলল,
‘ আব্বা আমরা কাজী ডেকে আনি। চলেন।
রাহি হাসল। বলল, কাজী এত পাজি কেন? আগে আগে পালায় কেন?
রেহান বলল, এখন প্রশ্ন করার সময় নয় বাপ আমার।
রাহি হাসল। বলল, প্রশনো করার সময় নয় কেন?

কোনোমতে গায়ে হলুদের সেই শাড়িটা পেছানো মেয়েটির গায়ে। ভারী মাথায় হাত দিয়ে সে কিছু ভাবার চেষ্টা করল। ঝাপসা ঝাপসা চোখে ভাসল,মাহিদ ভাই এসেছিল। তারপর তার মাথা ঘুরে উঠেছিল। পিহু তার ড্রেসিং টেবিলের সামনে স্লিপিং পিলের পাতা দেখল। হ্যা মনে পড়েছে। সে দরজা খোলার আগে দুইটা স্লিপিং পিল খেয়েছিল। কিন্তু মাহিদ ভাই? মাহিদ ভাই কোথায় গেল? তাকে রেখে কোথায় গেল?
পিহু এলোমেলো পায়ে হেঁটে রুম থেকে বের হলো। পা চলছেনা। ঘুম ভর করেছে এখনো। টলমলে সিড়ির রেলিঙ ধরে সে নিচে তাকালো। সবাইকে নিচে দেখে চেঁচিয়ে ডাকল
‘ মাম ম-ম মা।
সবাই সাথে সাথে উপরে চোখতুলে তাকালো। আদি ছুটে গেল। পিহু নিচে নামতে নামতে সিড়ির মাঝবরাবর বসে গেল। আদির পাঞ্জাবী আঁকড়ে ধরে উচ্চস্বরে কেঁদে দিয়ে বলল,
‘ পাপা বিয়ে করব না আমি। না করব না।
আদি বলল,
‘ মা কাঁদছে কেন? কষ্ট হচ্ছে? কোথায় কষ্ট হচ্ছে? কারা কি করেছে তোমার সাথে।
পিহু কাঁপাকাঁপা কন্ঠে উত্তর দিল।
‘ আমি স্লিপিং পিল খেয়েছি দুটো। খেয়েছি। পাপা দূর্বল লাগছে। পাপা আমি বিয়ে করব না। মা,, মা,, মা,,,, হি,,,,,
পিহু অজ্ঞান হয়ে পড়ল। আদি বুকে জড়িয়ে রাখল। রিপ এসে বলল,
‘ পানির ঝাপটা দে। চোখ খুলবে।
পরী এসে পানির ঝাপটা দিল।

পিহু অনেকক্ষেণ সময় পর পিটপিট করে চোখ খুলল। তা ও ঢুলুঢুলু চোখ। ঠোঁট টেনে কেঁদে দিয়ে আদিকে আঁকড়ে ধরে বলল,
‘ মাহিদ ভাই এসেছিল। এসেছিল পাপা। কিন্তু আমি, আমি ধরতে পারিনি। মাহিদ ভাই আবার চলে গিয়েছে।
রিপ আসল। বলল,
‘ মাহিদ ভাই বাইরে আছে। আর কেঁদো না। গাধাটাকে ধরে এনেছি।
পিহু পিটপিট করে তাকালো। আদির সাহায্য নিয়ে উঠে পড়ল পায়ে ভর দিয়ে, টালমাটাল পায়ে হেঁটে বের হয়ে গেল বাড়ি থেকে। কেউ পিছু পিছু গেলনা।
পিহু একবার হোঁচট খেল। ব্যাথা পেল হাতে,কপালে। আবার উঠে দাঁড়াল। চোখখুলো জোর করে খুলে রাখার চেষ্টা করে টেনে টেনে তাকালো দূরে। ঝাপসা ঝাপসা দেখা গেল ছেলেটিকে। পিহু হাত বাড়িয়ে ডাকল,
‘ মাহিদ ভাই। আমার বিয়ে,, আমার বিয়ে খেতে এসেছ?
ছেলেটি এক পা এক পা এগিয়ে আসল। পিহু ঢলে পড়ল ছেলেটির গায়ের উপর। শক্ত করে জড়িয়ে ধরে বলল,
‘ বিয়ে,,,, খেতে এসেছ? আমি বিয়ে করবনা।
ছেলেটি হাত দিয়ে নাক ঘষল। মেয়েটির চুলগুলো আঙুলে পেঁচাতে পেঁচাতে মনে মনে বলল,
‘ হ বাপ বিয়ে খাইতে আইছি, করতে ও। তুই বাপ আমারে ছাড়, গুষ্টিসহ সবাই এখন দোড় দিয়া আইবো। আমার লজ্জা করে বাপ। ছাড়। দূরে গিয়া খাঁড়া। তোর লজ্জা নাই বাপ। সব লজ্জা আমার। তোরে ও আমার লজ্জা করে। ছাড়।

চলবে,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here