মন_কেমনের_বৃষ্টি #পর্ব_৩২(সিজন ২)

0
705

#মন_কেমনের_বৃষ্টি
#পর্ব_৩২(সিজন ২)
পুষ্পিতা_প্রিমা

বিছানার উপর বাচ্চা শিশুটিকে ঠাসঠুস মেরে ভর্তা বানালো মাহিদ। হাত পা একসাথে ধরে উপরে তুলে ধপ করে আবার বিছানায় ফেলে দিয়ে বলল,
‘ আর মশকরা করবি শ্বশুড়ের লগে? করবি?
রাহি হাসছে ও কাঁদছে ও। হেসেকেঁদে বলছে,
‘ মিহি ইভাবে মারে কেন? ছিকু ব্যাথা পাই কেন?
মাহিদ ঠাসস করে পিঠের উপর মেরে বলল,
‘ ব্যাথা পাইলে কান্দোস না ক্যান বাপ? কাঁদ। বেশি কইরা কাঁদ।
ছিকু চোখ কচলে কচলে মুখে বলল,
‘ ভ্যা ভ্যাএএএএএএএএএ । এইতো কেঁদেছি। মিহি কাঁদায় কেন?
মাহিদ ছিকুর পেটে মাথা রাখল। সুড়সুড়ি দিতে দিতে বলল,
‘ তুই তোর শ্বশুড়ের মতো দুইনম্বর হিরো জামাই বাপ। এক নম্বর কখনোই হতে পারবিনা শালা। এভাবে ভ্যাএএএএ ভ্যাএএএএএ করা ছাড়া কিছুই করতে পারবিনা আর।
ছিকু এবার বেশ জোরেসোরে হেসে দেয়। মাহিদের চুল টেনে ধরে বলে,
‘ মিহি ছিকুর শুশুর কেন?
মাহিদ হা হু করে হেসে ছিকুর পাশে পড়ে গেল। ছিকুকে গায়ের উপর তুলে গাল কামড়াতে কামড়াতে বলল,
‘ তুই ব্যাটা ফাজিল, তোরে বাপছিলাম মাইয়া দিমু, তুই শালা ভালা না। খারাপ। তুই কথা চাইপ্পা রাখতে পারস না বাপ। তাই তোরে মাইয়া দিতাম না।
রাহি চোখ পিটপিট করে তাকালো। বলল,
‘ কেন দিতে না। কেন বাপ কেন?
মাহিদ আবার উঠে বসল। ছিকুর হাত পা মোচড়ে ধরে বলল,
‘ হুন এসব লেনদেন তোর আমাগো মাঝে থাকবো বুঝলি? আর কাউরে কইবি না বাপ।
রাহি বলল,
‘ কেন বুলবো না কেন?
মাহিদ ধমক দিল।
‘ চুপ কর শালা। শ্বশুর মশাই যেটা কইবে তোরে, সেটাই হুনবি শুধু। সেটাই করবি। বুঝছোস।
রাহি মাথা নাড়িয়ে বলল,
‘ শুশুর মুচাই দুক্কু দেই কেন? ছিকুর কান্না পায় কেন?
মাহিদ তাকে ছেড়ে দিল। রাহির গালের একপাশে ঠেসে চুমু খেয়ে বলল,
‘ তোর আর আমার কপাল ভালা বাপ। আমরা দুইজনই ছোডকাল থেইকা শ্বশুরের আদর খাইছি। আমি খাইছি ডক্টরের কাছ থেইকা, তুই খাইতাছস মাহিদ খানের থেইকা। তোর আর আমার রাজকপাল বাপ।
রাহি হাসল। উঠে গিয়ে বিছানা থেকে নেমে গেল। দরজার কাছাকাছি গিয়ে কোমরে হাত দিয়ে সাহস করে বলল,
‘ মিহি এত পুঁচা কেন? শুধু শুধু মারে কেন? মেরে মেরে আবাল আদল করে কেন,?
মাহিদ বলল,
‘ শালার জামাই ছাড়া পাইয়্যা তোর গলার আওয়াজ বড় হইছে এ্যাএএএ?
ছিকু কোমরে হাত দিয়ে গলা একপাশে কাত করে বলল,
‘ ইভাবে বকো কেনো? মিহিকে মারতে মন চায় কেন? ছিকুর মাথা হট হয় কেন?
মাহিদ ধীরেধীরে বিছানা থেকে নামল। বিড়বিড় করে বলল,
‘ জামাই বাপ, তুমি আমার থেকে ও দ্বিগুণ চালাক মিয়া। এর লাইগা তোমারে আমি পছন্দ করছি। আহো বাপ বুকে আহো।
রাহি মাহিদকে চুপ থাকতে দেখে বলল,
‘ ইভাবে দিখো কেন? কুথা বুলোনা কেন? মিহি এততো পুঁচা কেন? ব্যাড বয় কেন?

মাহিদ শার্টের হাতা গুটিয়ে নিচে নেমে আসতেই রাহি দৌড় লাগাল।
‘ ওমা মিহি এমন কেন? ওবাপ আমার ভয় করে কেন? ওরেব্বাপ মিহি পুঁচা কেন? কিউ আমাকে ধরতে আছেনা কেন? কেন বাপ কেন?

মাহিদ শুধু লম্বা লম্বা ফেলে। ছিকুর দৌড় তার কাছে কিছুইনা। ছিকু পেছনে ফিরে একবার হোঁচট খায়। আবার পেছনে ফিরে বলে,
‘ ওবাপ মিহি এত কাছে কেন? ওবাপ আমার ভয় করে কেন?

রাহির চিৎকারে সবাই ছুটে আসে। রাইনা দৌড়ে এসে কোলে নিয়ে নেয় রাহিকে। রাহি হাঁপাতে খিলখিল গা কাঁপিয়ে হাসে। রাইনার বুকে গুজে গিয়ে বলে,
‘ দাদুনি মিহি, ওই মিহি,,
রাইনা বলে,
‘ শান্ত হও, শান্ত হও আগে। তারপর কথা বলো ভাই।
রাহি ঘেমে একাকার হয়ে যায়। মাহিদের দিকে আঙুল দেখিয়ে বলে,
‘ মিহি পুঁচা কেন? মিহি দৌড়াই কেন?
মাহিদ হেলিয়ে দুলিয়ে হেঁটে রাহির কাছে গিয়ে আঙুল দিয়ে রাহির গালদুটো চেপে দিয়ে নিচে নেমে যায়। রাইনা বলে,
‘ গালটা লাল হয়ে গেল। এটা কোনো আদর হলো মাহি?
মাহিদ যেতে যেতে বলল,
‘ ধুরর এটাকে মাইর বলে। আদর না বাপ।
আফি সোফায় বসা অবস্থায় জার্নাল নামিয়ে মাহিদকে দেখে পাশে বসার সাইড দিয়ে বলে,
‘ জামাই বাবাজি বউ পাইয়্যা আমাগো খবর ভুইলা গেলা নাকি?
মাহিদ গলা কাত করে হাসে। বলে,
‘ তুমি বুড়া বয়সে আইসা বউ বউ করো, আমি করুম না বাপ?
আফি তার মাথায় চাটি মেরে বলে,
‘ ধুরর বেয়াদব,এভাবে কস ক্যান। শরম করে না? তোর বড় আন্টি এসব কথা শুনলে দুপুরের খাবার বন্ধ।
মাহিদ হেসে ফেলল হো হো করে। সোফায় গা এলিয়ে দিয়ে বলল,
‘ আমার বউডারে দেখিনা। তুমি দেখছনি?
আফি বলল,
‘ তোর বউ রান্নাঘরে ব্যাটা। পোড়া কপাল তোর, রান্নাঘরে তোর দিদিয়া আর মা,শ্বাশুড়ি আছে। রান্নাঘরে প্রেম করা আর হইল না তোর।
মাহিদ আরাম করে বসে। বলে,
‘ এভাবে কও ক্যান? শরম করে বাপ। এভাবে কইওনা।
আফি আওয়াজ করে হেসে উঠল। রাহিকে কোলে নিয়ে নিচে চলে আসা রাইনা মুখ ভাঙাল আফির হাসি দেখে। বলল,
‘ এভাবে হাসছেন কেন আশ্চর্য?
আফি চুপ হয়ে গেল। মাহিদকে বলল,
‘ রেহাইন্নের মা এমন করে ক্যা? বাপ মা দুইজনের ভাব দেখে বাঁচিনা।
মাহিদ সোফা হেলান দিয়ে গলাফাটিয়ে হাসল। নীরা দৌড়ে এল। বলল,
‘ আব্বা এভাবে হাসিস না। এভাবে হাসলে গলা ফেটে যাবে।
মাহিদ হাসি থামিয়ে বলল,
‘ তোমারে কে কইছে এসব কথা?
নীরা বলল,
‘ তোর বউ। তোর বউয়ের কাছ থেইকা আমি ডাক্তারি শিখতাছি আব্বা। কত ভালা বৌমা আমার।
মাহিদ হাসল। বলল,
‘ শিখো। ভালা ভালা। শিখাইতে যদি সমস্যা করে আমারে কইবা, মাইর দিয়ে সোজা করে ফেলমু এক্কেবারে।
নীরা জিভে কামড় দিয়ে উঠল।
‘ ছিঃ ছিঃ আব্বা এসব কি কথা? ঘরে ব্যারিস্টার আছে জানোস না? বউ পিটাইলে তোরে তোর বাপ জেলে ডুকায় দিবে আব্বা। তোর বাপ আইনের ব্যাপারে একচুল ও ছাড় দেয়না।
মাহিদ বলল,
‘ আমার বউ আমু পিডামু, বাপের কি বাপের বউ?
নীরা বলল,
‘ তোর বাপ কোনোদিন আমার গায়ে হাত তুলেনাই আব্বা। তুই তুললে কেমনডা লাগে?
মাহিদ হা হু করে হেসে উঠল। বলল,
‘ বাপ মারেনাই তো কি হয়ছে? বাপের পোলা মারবো। এবার নিয়ম পাল্টাবো।

আফি বলল,
‘ পাল্টা পাল্টা। বউ পেটানো ভালা কাজ। ব্যায়াম ও হয়। বউ ও সোজা থাকে। আমি বউ পেটাইতে পারিনাই তাই আমারে অবস্থা দেখতাছস না?

নীরা গালে হাত দিল।
‘ ওহ আল্লাহ। ভেতরে ভেতরে এত আসামী, আমি ব্যারিস্টারকে বলে আসি বাপ। আমার নিজের ছেলে ও আসামী। ও আল্লাহ, এতদিন পর আমি একটা কাজের কাজ করব।
ব্যারিস্টার খুশি হয়ে আমাকে বলবে,
‘ গুড জব নীর। তুমি কথা রেখেছ। আহা কি ভালো বউ আমার। এখন তোমাকে একদম, পুরোটা ব্যারিস্টারের বউয়ের মতো লাগছে।
ইশা ট্রেতে করে চা নিয়ে আসতে আসতে বলল,
‘ রিপদার বকা শোনার ইচ্ছে হচ্ছে তোর নীরা? তুই ও পারিস?
নীরা বলল,
‘ এভাবে বললি কেন? আমাকে বকবে কেন?
আফি ইশার হাতের ট্রে থেকে চা নিতে নিতে বলল,
‘ আমরা ভালা মানুষ ছোটবোন। আমারে পুলিশ টুলিশের হাতে ধরায় দিওনা। ভয় করে।
ইশা হেসে ফেলল। বলল,
‘ সব পাগলের কারবার এখানে।
মাহিদ হেসে উঠল। বলল,
‘ বাপের বইন, তুমি কাজ করো ক্যা? বাড়ির বউ টউ গেছে কই বাপ? ঢং ঢং কইরা খাওয়ার লাইগা বউ কইরা আনিনাই। দেখি সামনে আসতে কও। জামাইর খোঁজখবর রাখেনা ক্যা?
রাহি রাইনার কোলে থাকা অবস্থায় চিল্লিয়ে বলে,
‘ মিহি ইভাবে বুলে কেন? ইশুবুনুকে বকে কেন? ছিকুর দুক্কু লাগে কেন?
ইশা বলল,
‘ দেখেছিস কত দরদ আমার জন্য।
মাহিদ হাসল। বলল,
‘ এই ব্যাটারে কইছি আমার লগে না লাগতে। শালা মাইর ও কম খাইনা।
রান্নাঘর থেকে আসা পরী হাত মুছে মুছে আসতে আসতে বলল,
‘ তুই আমার ছেলেকে মারিস কেন ভাই? আমার বাচ্চাটা এখনো ছোট না?
মাহিদ চোখ গরম করে বলল,
‘ তোমার বাচ্চাটা পাইকা গেছে বাপ। এই পাইক্কা পেঁপেটারে আমার চিবাইয়া খায় ফেলতে ইচ্ছা করে।
রাহি গালে হাত দিল। রাইনাকে বলল,
‘ মিহি আমাকে পেপপে বুলে কেন? আমাকে খেতে চায় কেন?
রাইনা রাহির গাল থেকে হাত নামিয়ে দিয়ে বলে,
‘ মিহি তোমাকে খেতে চাইলে তুমি কামড় দিয়ে দিবে।
রাহি মাথা দুলিয়ে বলে,
‘ কামড় দেব কেন?
সবাই একসাথে হেসে উঠল। আফি বলল,
‘ কেন কেন তোমার আর কি কথা নাই ভাই? আমি কয়বার বেহুশ হই জানো? তোমার এই কেন কেন শুইনা?
রাহি ভ্রু উঁচিয়ে বলে,
‘ বিহুশ হও কেনো?

মাহিদ চা খেয়ে গলা উঁচিয়ে দেখল পরীর পেছনে পিহুকে। রাহি খেয়াল করল। বলল,

‘ মিহি পিহুকে দেখে কেন? ইভাবে দেখে কেন?
সবাই ঘাড় ঘুরিয়ে পিহুকে দেখল। মাহিদের দিকে তাকানোর আগে মাহিদ রাহির গাল জোরে টেনে দিয়ে চলে গেল। যেতে যেতে বিড়বিড় করে বলল,
‘ মত পাল্টাছি বাপ। এবার পাক্কা। তোরে জীবনেও আমার ছেড়ির লগে প্রেম করতে দিতাম না।
রাহি কাঁদোকাঁদো হয়ে বলে,
‘ মিহি পুঁচা কেন?

_________________________

স্যুটকেস থেকে কাপড় নামিয়ে গুছানোর সময় রুমে ডুকে এল একটি লোক। আইমি ঘাড় ঘুরিয়ে তাকালো। জাবির দরজা ঠেলে এসে ধপ করে শুয়ে পড়ল বিছানায়। বলল,
‘ কি দরকার ছিল ইমি? একবার প্যাক করা আবার গোছানো।
আইমি তাড়া দিয়ে বলল,
‘ মেয়ের বিয়ে মশাই, এত তাড়াতাড়ি ক্লান্ত হলে চলে?
জাবির হাসল। আইমিকে একটান দিয়ে বিছানায় বসিয়ে দিল। তারপর আইমির কোলে মাথা রেখে বলল,
‘ আমার মেয়েকে যাতে আমার মতো সিচুয়েশনে পড়তে না হয় ইমি। নিনিত সত্যি খুশি তো এই বিয়েতে?
আইমির মন খারাপ হয়ে গেল। খুব কাছে থাকায় জাবির টের পেল তার চোখের কোণায় চিকচিক করা জলের আভাস। ঝিরঝিরে কন্ঠে আইমি বলল,
‘ মাথা সরান। কাজ আছে।
জাবির হেসে ফেলল। আইমির মাথা টেনে এনে বলল,
‘ রাগ করেছ?
আইমি কিছুক্ষণ জাবিরের দিকে তাকিয়ে থাকল নির্লিপ্ত ভঙ্গিতে। তারপর কান্নাগলায় বলল,
‘ সবসময় খোঁটা দিতে থাকেন আমাকে।
জাবির একগাল হাসল। বলল,
‘ দুষ্টুমি করলাম। কেঁদোনা।
আইমি মুখ গোমড়া করে বলল,
‘ আপনি নিজেও জানেন, আমি আপনাকে ঠিক কতটা ভালোবাসি। তারপর ও খোঁচা দিতে ভুলেন না। নাকি আমি এখনো ভালোবাসতে জানিনা?
জাবির উঠে বসল। আইমির সামনাসামনি বসে দুহাতে আইমির গাল আগলে নিল। কপালে কপাল ঠেকিয়ে বলল,
‘ আর দেবনা। আই প্রমিজ। আমি জানি, এমনকি আমি জালিশাকে ও বলেছি এই কথা,
” আমি ভালোবাসতে জানিনা ” বলা মানুষগুলো একসময় খুব করে ভালোবাসে। তারা খুব সহজেই ভালোবাসার জালে আটকে যায়। যেমনটা তুমি গিয়েছ। আমি এখনো এই ইমিকে চিনে উঠতে পারিনা। যে একসময় আমাকে বলেছিল, আমি কখনোই আপনাকে ভালোবাসতে পারবনা। অথচ দেখো, সে আজ আমার চাইতে বেশি ভালোবাসে আমাকে। আমি ও বোধহয় এতটা ভালোবাসতে পারছিনা তাকে।
আইমির গাল বেয়ে জল গড়ায়। জাবির মুছে দেয়। হেসে আইমির কপালে ওষ্ঠাধর ছুঁয়ে দিয়ে বলে,
‘ আমি খুব লাকি ইমি। এ মেয়েটার ভালোবাসা আমি সত্যিই জয় করতে পেরেছি। খুব আফসোস হয়, আর ও আগে কেন তোমার জীবনে এলাম না। তাহলে তোমার জীবনে কোনো কালো অধ্যায় থাকতনা।
আইমি কেঁদে উঠে মাথা রাখে স্বামীর বুকে। বলে,
‘ আমার জীবনে কালো অধ্যায়টা আর নেই। ধুয়ে গেছে। মুছে গেছে। আমি এই মানুষটা ছাড়া এখন অন্যকিছু ভাবতে ও পারিনা। আমার নিজেরই আফসোস হয়, শুরুতেই কেন আমি এই মানুষটার প্রেমে পড়লাম না।
জাবির হাত রাখে আইমির মাথার পেছনে। হাত বুলিয়ে দিয়ে বলে,
‘ ইমি, আজ তোমার মেয়ের বিয়ে। কাঁদবে ও। কাঁদছ তুমি? দেখো কাঁদলে তোমাকে আর চেনা যাবেনা। মুখ ফুলে রাক্ষসীর মতো লাগবে একদম।
আইমি কান্না থামিয়ে দেয়। জাবিরের বুকে দুম করে মেরে বলে,
‘ মজা করছেন?
জাবির হেসে ফেলল। বলল,
‘ একদম না।
আইমি বলল,
‘ জালিশার আজ বিয়ে, আমার বিশ্বাসই হচ্ছেনা। আজ যদি বাবা থাকত, খুব খুশি হতো।
জাবির বলল,
‘ উনি দেখছেন উপর থেকে। এসব ভেবো না তো। আমার তো নিকিতা ভাবীর কথা ভেবেই অবাক লাগছে, ডেন্জারাস মহিলা। আমাদেরকে শুধু শুধু কষ্ট করে এয়ারপোর্টে নিয়ে গেল। আবার জোরদবস্তি করে নিয়ে এল। অদ্ভুত মহিলা।
আইমি বলল,
‘ আমার মেয়ে ফেলনা নয়। ওনি শেষে বুঝতে পেরেছেন, তাই আটকিয়েছে। আজ কেন যেন, আমার বড্ড খুশি লাগছে। আমার মেয়ের ভালোবাসাগুলো পূর্ণতা পাক। সে সবসময় হাসিখুশি থাকুক। নিনিত তাকে ভালো রাখুক৷
জাবির জিজ্ঞেস করল,
‘ নিনিত তোমাকে কিছু বলেছে?
আইমি হেসে বলল,
‘ তার লজ্জার শেষ নেই। মাথা নিচু করে কোনোমতে হা হু করে পালালো।
জাবির হাসল। বলল,
‘ এত লজ্জা বাবারে বাবা।

________________

নিনিত আর জালিশার বিয়ে রাতে। দাওয়াত পড়েছে। সবার চাইতে বেশি খুশি রাহি। নতুন নতুন শার্ট আর থ্রিকোয়াটার প্যান্ট পড়ে কালো চশমা পড়ে পড়ে ঘুরছে। পায়ে সাদা কেডস। প্যান্টের পকেটে ফোন রেখে শার্টের হাতা গুটিয়ে আসতে আসতে মাহিদ বলল,
‘ জামাই বাবাজি আপনি এত সুন্দর কইরা সাজছেন কিল্লাই?
আমার মাইয়ারে পটাইবার জন্য? কিন্তু মেরিজান তো নাই বাপ। সে আসুক, তারপর তুমি হিরো সাজবা। এখন সাইজা কারে পটাইবার ধান্দা করতাছো?
রাহি আদর আদর করে বলল,
‘ জানিচা।
মাহিদ হেসে ফেলল। বলল,
‘ তোমার জানিচারে ডক্টর ব্যাটা পটাই ফেলছে বাপ। লাভ নাই।
রাহি বলল,
‘ কেন? পটাই কেন?
মাহিদ তার মাথায় চাটি মেরে চলে গেল। বলল,
‘ ড্রাইভার ব্যাটা কই দেইখা আসি। তুই জামাই ততক্ষণ কেন কেন করতে থাক।
রাহি সিড়িতে হাতের ভর দিয়ে এক পা এক পা করে উপরে উঠতে থাকে। তারপর বিড়বিড় করে বলে,
‘ মিহি পুঁচা কেন? পিহুর মতো ছিকুকে আদল করেনা কেন? আমি এখুন ছিড়ি থেকে পড়ে যাব কেন?

রেহান দৌড়ে এসে তাকে কোলে নিয়ে নেয়। বলে,
‘ কি হচ্ছে রাহি? এখব পড়ে গেলে কি হতো? বেশি বাড় বেড়েছ তুমি।
রাহির মুখ কাঁদোকাঁদো হয়ে যায়। রেহানের গালে ঠাসস করে মেরে বলে,
‘ রেহান পুঁচা কেন? ছিকুকে বকে কেন? ছিকুর কান্না পায় কেন?
রেহান হেসে উঠে৷ ছিকুর মাথা চেপে ধরে তার গালের সাথে গাল লাগিয়ে জোরে চুমু দিয়ে বলে,
‘ রাহি খুব ভালো। আর কখনো বকবো না। শুধু আদল কববো।
রাহি উৎসুক হয়ে তাকায় রেহানের দিকে। রেহান বলে,
‘ কি?
রাহি কিছু একটা ভেবে বলে,
‘ রাহি এততো ভালো কেন?

____________________

দুই গাড়িতে করে সবাই শেখওয়াত বাড়ি পৌঁছাল। তখন প্রায় সন্ধ্যা পার হয়েছে। পিহুকে দেখে নিকিতা বেগম চেয়ে রইলেন। পিহু হাসিমুখে সালাম দিয়ে জড়িয়ে ধরল নিকিতা বেগমকে। বেশখানিক্ষণ পর ছেড়ে দিয়ে বলল,
‘ জালিশা খুব ভালো মেয়ে আন্টি। স্যারের জন্য গড গিফ্টেড। স্যার খুব ভালো থাকবে আন্টি।
নিকিতা বেগম হেসে মুখ ছুঁলেন পিহুর। বললেন,
‘ তাইতো জুড়ে দিচ্ছি। তোমাদের সাক্ষী ও রাখছি। আমি চাই সবাই ভালো থাকুক। আগে হয়ত ভেবে দেখিনি, তোমার কাছে ও ভালো থাকত কিনা, কিংবা তুমি? জালিশা ভেবেছে। আর তোমার শ্বশুড়। ব্যারিস্টার বাবু কিন্তু খুব বিচক্ষণ মানুষ। অনেক ভালো মানুষ ও।
পিহু হাসল। বলল,
‘ উনি আমার আরেক বাবা। ভালোবাসার একজন। অন্যরকম মানুষ উনি।
নিকিতা বেগম হাত বুলালো পিহুর মুখে। বলল,
‘ ভালো থেকো। ভালো রেখো।

____________________

সব অনুষ্ঠান নিয়মকানুন মেনে আবার বিয়ে হলো নিনিত আর জালিশার।

বিয়ে শেষে যখন সবাই আড্ডায় বসল, মাহিদ ঘোমটার আড়ালে থাকা জালিশাকে ধমকে বলল,
‘ এই ছেড়ি ঘোমটা সরাও। এত শরম কিল্লাই করো? বিয়া করতে শরম করে নাই। এখন যত শরম। পিহু বলল,
‘ জালিশা ঘোমটা সরাবেনা একদম।
মাহিদ চুপ হয়ে গেল। পিহু চোখ রাঙিয়ে তাকালো। মাহিদ মনে মনে বলল,
‘ বউডা এইভাবে তাকায় ক্যা? এত লোকের ভীড়ে শরম করে না?

নিনিত বলল,
‘ আরিশা তুমি এর সাথে থাকো কেমনে?
পিহু লজ্জায় পড়ে গেল। মাহিদের দিকে একপলক তাকালো। সে বলতে পারেনা, একে ছাড়া থাকাই যায়না। কিছু ভাবা ও যায়না।
মাহিদ নিনিতের মাথায় চাটি মেরে পাগড়ি ফেলে দিল। বলল,
‘ তুই তোর বউয়ের সাথে যেইভাবে থাকবি, সেভাবেই থাকে। এটা কোনো প্রশ্ন হইলো বাপ?
নিনিত মাথা নিচু করে ফেলল। পিহু জিভে কামড় দিল।
‘ উফফ এই ছেলেটা শোধরানোর নয়।
নিনিত বলল, আচ্ছা, আমি যাই।
মাহিদ তাকে টেনে ধরে বসিয়ে দিল। বলল,
‘ শালার তুই এত লজ্জা পাস কিল্লাই বাপ?
নিনিত বলল,
‘ লজ্জা পাব কেন? লজ্জা পাবে জালিশা। আশ্চর্য কথাবার্তা বলিস।
মাহিদ বলল,
‘ তো আমি লজ্জা পাইছি কিল্লাই বাপ?
নিনিত বলল,
‘ তুই লেড়কি তাই।
বলতে না বলতেই নিনিত দৌড়ে গেল। মাহিদ তার পিছু দাওয়া করল।

রাহি পরীর কোল থেকে নেমে পিহুর কোলের উপর বসে গেল। জালিশা রাহির সাথে হাসল। রাহি ও একটু মিষ্টি পটানোমার্কা হাসল। যখন দেখল জালিশা তার সাথে হাসছে। পিহুর কোল থেকে ধীরে ধীরে নেমে জালিশার কোলের উপর গিয়ে বসে গেল। জালিশা হাসল। জালিশা তাকে গালে আদর করে দিয়ে বলে,
‘ কি কিউট বাচ্চা। উম্মাহ৷
ওমা! রাহি লজ্জা পেয়ে গেল। মাথা নিচু করে ফেলল৷ পিহু বলল,
‘ আব্বা লজ্জা পেয়েছ নাকি?
রাহি আড়চোখে তাকায় পিহুর দিকে। ফিসফিস করে বলে,
‘ জানিচা কিউত বুলে কেন?
পিহু হেসে ফেলল। বলল,
‘ আব্বা কিউত তো তাই বলে আর কি।
রাহি বলল,
‘ জানিচা বিটিফুল কেন?
পিহু হেসে বলল,
‘ জানিচা বউ তাই। তোমার জানিচাকে পছন্দ হয়েছে?
রাহি মাথা দুলালো।
‘ পচনদো হয়েছে কেন?
পিহু আর জালিশা একসাথে হেসে উঠল। জালিশা রাহিকে কোলে নিয়ে তুলে বলল,
‘ এইতো। এদিকে দেখো। দেখো।
রাহি তাকালো না।
জালিশা হাসতে হাসতে বলল,
‘ এ কেমন লজ্জা আরিশা৷
পিহু ও হাসতে হাসতে বলল,
‘ লজ্জা ও একটা সংক্রামক রোগ৷
জাতির ভাইয়ের কাছ থেকে সবার কাছে ছড়াইছে সেটি।
জালিশা হাসল। বলল,
‘ জাতির ভাই কে?
রাহি বলল,
‘ মিহিকে জাতিল ভাই ডাকো কেন?
পিহু হেসে বলল,
‘ উনি জাতির ভাই, তাই ডাকি।

_____________________

খাটের উপর জালিশার পাশে বসে রইল রাহি। জালিশা ডাকল,
‘ বাবু মুখ কালো কেন? কথা বলছ না কেন?
রাহি চোখ তুলল একবার৷ বলল,
‘ তুমি ছিকুর মতো কেন কেন বলো কেন?
জালিশা হেসে দিল। বলল,
‘ ওলেবাবা কি লাগ?
রাহির ভ্রুকুঞ্চন হলো। বলল,
‘ তুমি ছিকুকে বাবু ডাকো কেন?
জালিশা আরেকদফা হাসল। পিহু বলল,
‘ আব্বা আসো। আমরা চলে যাই।
জালিশা বারণ করল।
‘ আর কিছুক্ষণ থাকো আরিশা। পিহু বলল, আপনার বর আমাদেরকে এখানে দেখলে পালাবে। আর আসবেনা।
জালিশা হেসে ফেলল। বলল,
‘ আর কিছুক্ষণ থাকোনা?
পিহু বলল,
‘ আমাদের বাড়ি ফিরতে হবে।

হুট করে মাহিদ চলে আসল। রাহিকে কোলে নিয়ে পিহুর হাত শক্ত করে ধরল। জালিশাকে বলল,
‘ টা টা। গুড নাইট জালিশা ফালিশা।
আমার ঘুম পাইতেছে বাপ। যাই।
জালিশা বলল,
‘ স্যার? এখন,,, আরেকটু,,?
মাহিদ পিহুকে টেনে বের করল। পিহু দরজার কাছে গিয়ে নিনিতকে দেখে লজ্জায় পড়ে গেল। মাহিদ ধাক্কা দিল নিনিতকে। বলল,
‘ যাহহ শালা তোর লাইগ্যা আমার ঘুম বাপ, আমার সাথে রাগ কইরা আবার চইলা গেছে। যাহহ, বউরে লইয়্যা থাক। আমি আমার বউরে লইয়্যা চইলা যাই।
রাহি বলল,
‘ মিহি নিনিকে মারল কেন? নিনি কাঁদেনা কেন?
মাহিদ ফট করে বলে ফেলল,
‘ জামাই বাবাজি তুই চুপ থাক।
নিনিত আর পিহু হা করে থাকল। মাহিদ চোখ বড় বড় করে পিহুকে টেনে নিয়ে গেল। নিনিত ধপাস করে এসে পড়ল বিছানায়। জালিশা ভয় পেয়ে গেল।
বলল,
‘ কি হয়েছে? কি হয়েছে?
নিনিত বলল,
‘ মইরা গেলাম বাপ। এই মাহিদ্দে জীবিত মানুষ কবরে ডুকানোর ক্ষমতা রাখে। জালিশা হেসে ফেলল। নিনিত তার পা লম্বা করে বলল,
‘ জালিশা পা দেখো সোজা করে রেখেছি। ফটাফট সালাম কালাম করে নাও। এরপর আর সুযোগ পাবেনা। আমি ঘুমাবো।
জালিশা হেসে বলল,
‘ আচ্ছা। নিনিত বলল,
‘ এই না না।
জালিশা বলল,
‘ না না কেন?
নিনিত বলল,
‘ ঘুম বাপের লাইগা কিছু কইতে পারতাছিনা।
জালিশা তার বুকের দুমদাম মেরে মেরে বলল,
‘ ঘুমান। ভুলে ও চোখ খুললে খাইছি আপনাকে।
নিনিত হেসে উঠে। জালিশা ও হেসে উঠে। বরের বুকের উপর মাথা রেখে বলে,
‘ বরগুলো এত পাগল হয় কেন বাপ?

__________________________

নিচে সবার সাথে কথা বলে যেতেই যেতেই মাহিদের ধুপধাপ আওয়াজ ভেসে উঠল উপর। পিহু উপরে তাকালো। মাহিদ গর্জে ডাকল,
‘ ওই এইখানে কি করস বাপ? আয়।
পিহু জিহ্বায় কামড় দেয়।
‘ কি বেয়াদব ছেলে।
পিহু থমথমে মুখ নিয়ে দরজা ঠেলে ঘরে ডুকে। মাহিদ ছুটে এসে মাথায় ঠাসস করে মেরে বলে,
‘ কয়বার ডাকছি তোরে? এতক্ষণ কি করস?
পিহু মুখ ফুলিয়ে রাখল৷ বলল,
‘ সবসময় মারো।
মাহিদ রাগল। বলল,
‘ চোপপ। তোর জামাই আমি। মারমু কাটমু। যা ইচ্ছা তাই করুম। আয় এদিক আয়।
পিহু দুই পা পিছু হেঁটে বলে,
‘ না যাব না।
মাহিদ কন্ঠে খাদে নামিয়ে বলল,
‘ আয়। আর মারুম না। আদর করুম আয়। আয়। তাড়াতাড়ি আয় তো।
পিহু বলল,
‘ না যাব না। সবসময় মারো। আমি তোমার মার খেতে আছি এখানে?
মাহিদ বলল,
‘ আহা রাগ করিস কেন? আয় রাগ ভাঙায় দি আয়। আয়।
পিহু বলল,
‘ মারো আবার কাছে ডাকো। যাবনা। তোমার মারগুলো আমি ব্যাথা পাই।
মাহিদ বলল,
‘ আবার মুখে মুখে কথা?
পিহু বলল,
‘ একশবার বলবো। মারবে আবার ঢং করবে।
মাহিদ গেল। শক্ত করে পিহুর হাত ধরল। বলল,
‘ আয় আদর করি। আর রাগিস না।
পিহু ছাড়াছাড়ি করার ধস্তাধস্তি লাগালো। বলল,
‘ লাগবেনা তোমার আদর। মেরে ফেলো।
মাহিদ পাঁজাখোলা করে কোলে তুলে নিল। বলল,
‘ ময়না পাখি, টিয়া পাখি, সোনাপাখি কাইন্দো না কাইন্দো না।
পিহু হেসে দেয়। কিন্তু মুখ কালো করে রাখে। বলে,
‘ ছাড়ো।
মাহিদ তাকে উপর থেকে ধপ করে ফেলে দিয়ে বলে,
‘ যাহ। ছাড়লাম।
পিহু বলল,
‘ হাড়গুঁড় ভেঙ্গে গেল। আবার ও মারলে।
মাহিদ কোমরে হাত দিয়ে হাসল৷ ধপ করে পিহুর পাশে পড়ে গিয়ে বলল,
‘ মইরা তো যাসনাই।
পিহু মুখ ফুলালো।
মাহিদ তাকে টানল
দূরত্ব কমিয়ে এনে ঠাসস করে চড় বসালো পিহুর গালে। বলল,
‘ চুপপ থাক ডাক্তারের বাচ্চি। একদম চুপ।
পিহু কেঁদে দেয়। মাহিদ তাকিয়ে থাকে। পিহু কাঁদতে কাঁদতে বলে,
‘ মেরে ফেলো।
মাহিদ তাকে টেনে ধরে । চোখ টোখ মুছে দেয়। গলার পাশে মুখ গুজে কাঁপানো স্পর্শ দিয়ে বলে,
‘ আদর দিতাছি বাপ। আর কান্দিস না।

চলবে,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here