#মন_কেমনের_বৃষ্টি
#পর্ব_৩৪(সিজন ২)
পুষ্পিতা_প্রিমা
বেরোনোর সময় রেহান রাইনা রেহানের মাথায় হাত বুলিয়ে দিল। কপালের সামনের চুল ঠিক করে দিতে দিতে বলল,
‘ সবাধানে যাস। অডিশন শেষে আমাকে কল দিস।
রেহান প্রত্যুত্তরে হাসল। বলল,
‘ আচ্ছা। কাকিয়া কোথায়? চাচ্চু?
রাইনা বলল,
‘ আছে। বলে আয়। তোর চাচ্চু বেরিয়ে গেছে হয়ত।
রেহানের কোলে থাকা রাহি নীরব দর্শক। অনেকক্ষণ পর মুখ খুলল,
‘ কিউ আমাকে আদল করেনা কেন?
রেহান হাসল। রাহির গালে আদর দিয়ে বলল,
‘ সকাল থেকেই আদর দিয়ে যাচ্ছি। তারপর ও?
রাহি মুখ ফুলালো।
‘ ছিকুর রেহানের সাথে যেতে মন চায় কেন?
রেহান বলল,
‘ বড় হোন, তারপর নিয়ে যাব।
রাহি বলল,
‘ ছিকু বড় হয়না কেন?
রেহান বলল,
‘ খান না তাই। বেশি বেশি খেলে বড় হবেন। আপনি তো খেতেই চাননা।
রাহি মাথা দিয়ে রেহানকে মারল। বলল,
‘ ছিকুর রাগ হয় কেন? ছিকুর পাপপা পুঁচা কেন?
রেহান হাসল। ডাকল,
‘ কাকিয়া আমি বেরোচ্ছি। পিহু মাহিদ ওরা কোথায়?
রাহি বলল,
‘ ইশুবুনু, পরী আসেনা কেন? পিহু আসেনা কেন? মিহি আসেনা কেন? সব্বাই পুঁচা কেন?
পরী আসল। পেছনে ইশা। ইশার হাতে টিফিন বক্স। রেহানকে দিয়ে বলল,
‘ সময়মতো খেয়ে নিও। বক্স খালি চাই। বাইরের খাবার খেয়োনা।
রেহান হাসল। বলল,
‘ আসি তাহলে।
পরী বলল,
‘ রাহিকে দিয়ে দিন।
রাহি শক্ত করে রেহানের শার্ট আঁকড়ে ধরল। রেহানের গলায় মুখ গুঁজে বলল,
‘ পাপার সাথে যাব না কেন? সব্বাই এততো পুঁচা কেন?
রেহান বলল,
‘ আমরা কাল যাব। আজ না।
রাহি আর ও শক্ত করে ধরল রেহানকে। কাঁদোকাঁদো গলায় বলল,
‘ আমি যাব। পাপা নিয়ে যায় না কেন?
পরী পিহুকে ডাকল। পিহু দৌড়াতে দৌড়াতে এল। পরী বলল,
‘ পিহুর কাছে যাও। পিহু বেড়াতে নিয়ে যাবে।
রাহি শুনল না কারো কথা। বলল,
‘ না। যাব না। রেহানের সাথে যাব। রেহান নিয়ে যায় না কেন?
পিহু হাত বাড়িয়ে ডাকল।
‘ আব্বা আসো। আমরা ফিপফিপ যাব। গাড়ি চড়ব। আসো।
রাহি ফিরল পিহুর দিকে। বলল,
‘ মিছিমিছি বুলো কেন?
সবাই হেসে ফেলল। রেহান হেসে বলল,
‘ আমি কোথাও যাচ্ছি না তো। এখানেই আছি। যান পরীর কোলে যান।
রাহি বলল,
‘ পরী পুঁচা। সব্বাই পুঁচা কেন?
ইশা বলল,
‘ পিহু মাহিকে ডাকো তো।
পিহু বলে দিল,
‘ আমি পারবনা।
ইশা চোখ রাঙিয়ে তাকালো। পিহু পরীর পেছনে গিয়ে দাঁড়াল মাথা নিচু করে। বলল,
‘ মাহিদ ভাইয়ের আমি কথা বলিনা। ঝগড়া হয়েছে।
সবাই মিটিমিটি হাসল। রেহান বলল,
‘ মাহিদের কি কপাল বউয়ের মুখে এখনো ভাই ডাক শুনে।
সবাই হেসে উঠল রেহানের কথায়। পরী থামিয়ে দিয়ে বলল,
‘ হয়েছে। আপনার এত আফসোস যখন, আমি ও আপনাকে ভাই ডাকব।
রাইনা বলল,
‘ বাজে কথা বলিস না তো। তোদের আর কোনো কথা নেই। মাহিকে ডাক তো ছোট।
ইশা ডাকল মাহিদকে। ডাকার আগেই জাতির ভাই হাজির।
শার্টের হাতা গুটিয়ে মাথার চুল ঠিক করতে করতে নেমে এল সে। বলল,
‘ জাতির ভাইরে জাতি মিস করে নাকি?
পিহু মুখ মোচড়াল। পরী বলল,
‘ রাহিকে নিয়ে নে তো ভাই । বাইরে নিয়ে যা। রেহান চলে গেলে আনিস আবার।
মাহিদ রাহির সামনে গেল।
রাহি ভয়ে চুপসে গেল। রেহানের গলায় মুখ গুঁজে বলল,
‘ মিহি পুঁচা কেন?
রেহান বলল,
‘ মিহি যাও তো রাহি চকলেট কিনে দাও। বাইকে চড়াও। যাও।
রাহি বলল,
‘ রাহি চকলেট খায়না কেন? ছিকু গুড বয় কেন?
মাহিদ তাকে টেনে নিয়ে নিল। রাহি চেঁচিয়ে কেঁদে উঠল। হাত পা ছুড়ে মাহিদকে মেরে বলল,
‘ মারি ফেলব মিহি। মারি ফেলব। আমি যাব। রেহানের সাথে যাব।
রেহান বলল,
‘ মাহি বাইরে নিয়ে যাও।
রাহি হাত বাড়িয়ে কেঁদে কেঁদে ডাকল,
‘ পাপার সাথে যাব। রাহিকে নিয়ে যায়না কেন? মিহি পুঁচা কেন? পরী আটকায় না কেন?
চোখমুখ লাল হয়ে গেল কাঁদতে কাঁদতে । মাহিদকে তাকে কাঁধে তুলে বাইরে নিয়ে যায়। যেতে যেতে বলল,
‘ শালার জামাই তোরে কি আইজ বিয়া দিতাছি? কান্দোস ক্যান বাপ?
রাহি কেঁদেই গেল। মাথা দিয়ে দুমদাম মাহিদকে মেরে বলল,
‘ আমি যাব। ছিকু যাবে। রেহানের সাথে যাবে।
মাহিদ বলল,
‘ যাইবো না বাপ। যাইবো না। তুই কাঁদ। আর ও জোরে কাঁদ। তোরে কাঁদাইতে আমার ভালালাগে বাপ।
রাহি আর ও জোরে কাঁদল। নাকের পানি মুছে দিল মাহিদের শার্টে। মাহিদ নাকমুখ কুঁচকে বলল, শালার বউ আর জামাই। তোরা আমার শার্টটারে বরবাদ করে দিলি বাপ। কাল বউ নাক মুছল সারারাত। আইজ সকালে তুই। শালার চেন্জ করিনাই ভালা হয়ছে। নইলে আরেকটা শার্ট নষ্ট হইতো।
রাহি কেঁদে কেঁদে বলল,
‘ মিহি মারি ফেলব। নাক মুছে দেব। সুসু করে দেব।
মাহিদ ধমক দিল।
‘ চোপপপপ ব্যাডা।
রেহান বেরোনোর সময় রাইনা আবার দৌড়ে গেল রেহানের কাছে। রেহানকে থামিয়ে দিয়ে বলল,
‘ তোর বাবাকে বলে যাহ না?কি মনে করবে?
রেহান সোফায় বসে মুখের উপর জার্নাল দিয়ে বসে থাকা আফিকে দেখল। বলল,
‘ উনি ভাব নিয়ে বসে থাকেন। আমি কি করব?
রাইনা গলার স্বর কঠিন করে ডাক দিলেন,
‘ রেহান? উনি তোর বাবা হয়৷
রেহান বলল,
‘ আমি জানি মা। কিন্তু,,,,
রাইনা বলল,
‘ কিন্তু আবার কি রেহান? তার ভুলের জন্য সে অনেকবার অনুতপ্ত হয়েছে। কিন্তু তুই এরকম করলে তো কষ্ট পাবে। আমার সাথে কত অন্যায় হয়েছে, আমি এখনো পিছ দিতে পেরেছি লোকটাকে?
রেহান থামিয়ে দিল রাইনাকে। বলল,
‘ আমি বাবাকে ভালোবাসি মা। সেই ছোট থেকেই। আমি কখনো তাকে ছাড়া কিছুই ভেবে আসিনি।
রাইনা বলল,
‘ আমি জানি তো। তাই তো বলছি, তুই এভাবে ইগনোর করলে কষ্ট পাবে। কালই তো আমাকে বলেছে,
‘ তুই নাকি দুই পয়সার দাম দিসনা তাকে। কথাটা কষ্ট থেকে বলেছে রেহান। যাইহোক, খাইয়ে পড়িয়ে তোকে মানুষ তো করেছে। তুই বড় হওয়ার সাথে পাল্টে ফেলেছে নিজেকে। সব তো তোর জন্য করেছে। ওই রাগের কারণে হয়ত মাঝেমাঝে একটু কটু কথা শোনায়। এসব সহ্য করে নিস বাবা। যারা বেশি বকে, দিনশেষে আমাদের তারাই আগলে রাখে। ওই মানুষগুলোর কাছেই দিনশেষে আমরা ভালো থাকি। আমাকে কি কম বলে? তোর কাকিয়াকে ও তো কালকে বকে দিয়েছে চা দিতে দেরি হওয়ায়। তোর কাকিয়া কি কিছু মনে করেছে। ও তো আর ও হেসেছে তোর বাবার কথায়। মেজাজ একটু খিটখিটে তাই অমন করে। তুই নিজ থেকে গিয়ে কথা বললে,খুশি হবে দেখিস। তোর ও ভালো লাগবে। যাহ।
রেহান বলল,
‘ যাব?
রাইনা বলল,
‘ হ্যা। যাহ।
রেহান যেতে যেতে বলল,
‘ যদি বকে?
রাইনা হেসে ফেলল।
‘ তুই কি বাচ্চা। বকলে ভয় পাবি?
রেহান বলল,
‘ বকলে তোমার দোষ।
রেহান সামনে গিয়ে দাঁড়াতেই আফি দাঁড়িয়ে পড়ল। রেহানের দিকে না তাকিয়ে বলল,
‘ আমার দাদুভাইরে কোথায় নিয়া গেছে? আনতে কও। আমি দোকানে নিয়া যায়।
রেহান ডাকল,
‘ বাবা আমি ওই,,,
আফি বলল,
‘ কি কইতাছোস স্পষ্ট কইরা কহ।
রেহান বলল,
‘ ওই,,, মানে,, আমি বেরোচ্ছি। আজকে একটা অডিশন আছে তো?
আফি বলে উঠল,
‘ তো কি হইছে? আমারে বলার কি দরকার? আমারে বলার কি দরকার? আমি কি এই বাড়ির কেউ নাকি? নাকি তোর কেউ। বলা লাগবো না।
রেহান বলল,
‘ বাবা রেগে আছ?
আফি মাথা নাড়িয়ে বলল,
‘ আমার রাগে কার কি আসে যায়? আমি কিছু কইলেই সবার রাগ চলে আসে।
রেহান হেসে ফেলল। গিয়ে ঝাপটে জড়িয়ে ধরে ফেলল আফিকে। বলল,
‘ সরি বাবা। খুব খুব সরি। আর রেগে থেকোনা প্লিজ। আমি তো তোমারই ছেলে না?
আফি চুপ করে থাকল। রেহান বলল,
‘ সরি বাবা। খুব খুব সরি। ক্ষমা করবেনা?
আফি ছাড়িয়ে নিল নিজেকে। পড়নের ঢিলা শার্টটি ঠিক করতে করতে বলল,
‘ শালার পোলা এইভাবে ধরণ লাগে?
রেহান হেসে ফেলল। আফি বলল,
‘ আসার সময় দুই প্যাকেট সিগারেট আনবি আমার জন্য।
রেহান হেসে ফেলল। রাইনা চিৎকার দিয়ে উঠল,
‘ অ্যাই না না না। ঘরদোর গন্ধ করে সিগারেটের গন্ধে। ঘর গন্ধ করে করে বাথরুম ও গন্ধ করে ফেলে। আনিস না। বদমাশ লোক।
আফি মাথা নিচু করে বলল,
‘ ছিকুভাই আর তোমার কারণে বাথরুমে খাই আরকি। এটা ও সহ্য হয়না তোমার।
রেহান হাসতে হাসতে বলল,
‘ আমি আসি বাবা। মা, কাকিয়া আসি।
আফি বলল,
‘ মনে করে আনিস। তোর মার কথা শুনিস না
রেহান দরজার কাছাকাছি গিয়ে চুপিচুপি আফিকে সান্ত্বনা দিল।
‘ আনব। আনব।
________________________
রাহিকে দোকান থেকে চকলেট,চিপস কিনে দিল মাহিদ। রাহিকে খেতে দিতেই রাহি নাক কুঁচকে বলল,
‘ রাহি চিপস খায়না কেন? বমি পায় কেন?
মাহিদ রাহি পেটে গুঁতো মেরে বলল,
‘ ধুরর শালার জামাই, তুই কি পোয়াতি আসছস বাপ? কথায় কথায় শুধু তোর বমি আসে।
রাহি ঠোঁট ফুলিয়ে বলল,
‘ মিহি পুঁচা কেন?
মাহিদ বলল,
‘ তুই জামাই পুঁচা তাই তোর শ্বশুর ও পুঁচা।
রাহি বলল,
‘ শুশুর পুঁচা কেন?
মাহিদ রাহিকে ঘাড়ে নিল। বলল,
‘ এইখান থেইকা তোরে যদি ধপ কইরা ফালায় দিই, কেমনডা লাগবো কহ দেখি।
রাহি ভয়ে কাঁচুমাচু করে বলল,
‘ মিহি ভালো কেন? গুড বয় কেন?
মাহিদ রাহিকে ঘাড় থেকে নামাল। পিঠে চাপড় দিয়ে রাহির গালে টাপুসটুপুস আদর করে দিয়ে বলল,
‘ শালার জামাই তুই মেলা চালাক বাপ। তোর কাছে মেরিজান ভালা থাকবো। তোরে দিয়া দিমু। কিন্তু উলটপালট কিছু করলে আবার লইয়্যা আসুম মনে রাখিস বাপ। তুই শালারে মাঝেমধ্যে ধড়িবাজ ও মনে হয় আমার।
রাহি মুখটা আঁজল আঁজল করে ফেলল। বলল,
‘ ছিকু ভালো কেন? গুড বয় কেন? গুড জামাই কেন?
মাহিদ হা হু করে হাসে। বলে,
‘ তোরে কে গুড জামাই কইছে বাপ? মেরিজান কইতে চাইলে ও কইতে দিতাম না বাপ।
_____________________
সদ্য গোসল সেড়ে বের ওয়াশরুম ছেড়ে বের হয়েছে। মাথার চুল মুছতে চিল্লিয়ে ডাকল,
‘ জালিশাআআ???
জালিশা হুড়মুড় করে ডুকে পড়ল রুমে। পড়নের থ্রিপিছের ওড়নাটার একপাশ ছোট হয়ে, অন্য পাশ বড় হয়ে গলায় ঝুলে আছে। কোমরে হাত দিয়ে জালিশা বলল,
‘ এভাবে চিল্লাচ্চেন কেন ডাক্তারবাবু? ভয় পেলাম।
নিনিত বলল,
‘ আমার ল্যাপটপের চার্জার কোথায়? কোথায় রেখেছ?
জালিশা কোমরে ওড়না গুজে বলল,
‘ আপনার লটপট মুই দেহিনাই ডাক্তারবাবু।
নিনিত ভ্রু কুঞ্চন করে তাকালো। বলল,
এগুলো কি ধরণের ভাষা জালিশা?
জালিশা হেসে ফেলল। বলল,
‘ শিখছি। বাঙালি বউদের সব শিখে রাখতে হয়। যেদিকে যাই সেদিকে সবাই বিদেশি বিদেশি বলে।
নিনিত অধর বাঁকালো ঘাড় কাত করে। বলল,
‘ আমার কোনোদিক দিয়ে তোমাকে বিদেশি মনে হয়না। গাইয়া লাগে বরং।
জালিশা হাসল ঠোঁট এলিয়ে। বলল,
‘ তাই? আমি খুব খুশি।
নিনিতের ঠোঁট দুটো আপন শক্তিতে বড় হয়ে গেল। বলল,
‘ প্রশংসা করলাম না তো?
জালিশা বলল,
‘ এটা আমার কাছে প্রশংসা। কারণ আমি জানি আপনি মিথ্যে বলেছেন। মিথ্যে হলেও বলেছেন তো। তাই আমি খুশি৷
নিনিত বলল,
‘ বাহঃ ট্যালেন্টেড। জালিশা খুশি হয়ে এগোতে চাইল। নিনিত হাত দেখিয়ে বাঁধা দিয়ে বলল,
‘ একদম গায়ে ঝাপ দেবেনা। আমার এসব একদম পছন্দ না।
জালিশার মন খারাপ হয়ে গেল। বলল,
‘ আমি গায়ে ঝাপ দিই? এটা কি করে বললেন? খারাপ লাগলো। কষ্ট পেলাম।
নিনিত বলল,
‘ আরেহ আমি???
জালিশা চলে গেল৷ নিনিত বলল,
‘ এ কেমন বউ আমার? সামান্য কথায় রাগ করতে হয় জালিশা? তাহলে সারাজীবন সামলাবে কি করে? অ্যাই জালিশা? শুনছ?
উল্কার গতিতে যেন ছুটে এল জালিশা। ধপ করে এসে পড়ল নিনিতের বুকে। বলল,
‘ রাগ করিনি।
নিনিত ধাক্কা খেয়ে দুই পা পিছিয়ে গেল। জালিশা বলল,
‘ সরি বলেন।
নিনিত হেসে ফেলল। বলল,
‘ বলব না। জালিশা বলল,
‘ না না বলেন। আমি চিল্লিয়ে কাঁদব। সবাইকে এখানে ডেকে আনব। সবাই এখানে এসে এভাবে দেখলে আপনাকে কি ভাববে? ভাবতে বউপাগলা।
নিনিত এক ধাক্কা মারল জালিশাকে। জালিশা দূরে ছিটকে পড়ল। মাগোমা করে চিল্লিয়ে উঠল। নিনিত বলল,
‘ একদম ফালতু কথা বলবেনা জালিশা।
জালিশা উত্তর দিলনা। কেঁদেই গেল। নিনিত হাটমুঁড়ে বসে দেখল জালিশা ব্যাথা পেয়ে কাঁদছে। নিনিত বলল,
‘ পায়ে ব্যাথা পেয়েছ?
জালিশা পা সরিয়ে নিল। কেঁদে কেঁদে বলল,
‘ ছুঁবেন না আমাকে। মারেন আবার সান্ত্বনা দিতে আসেন। যান।
নিনিত তাকে জড়িয়ে ধরে ফেলল আষ্টেপৃষ্টে। জালিশার মাথায় চিবুক রেখে বলল,
‘ সরি। তুমি আমাকে রাগিয়ে দাও। সরি। খুব খুব সরি৷
জালিশার কান্না থামল না। নিশিতা দৌড়ে এল। বলল,
‘ দাভাই কি হয়েছে? জালিশা কাঁদছে কেন?
নিনিত জালিশাকে ছেড়ে দিল। বলল,
‘ পায়ে ব্যাথা পেয়েছে। আমি দেখছি।
নিশিতা সন্দিহান চোখে দেখে চলে গেল। নিনিত জালিশাকে পাঁজাখোলা করে তুলে নিল। বলল
‘ কোলে চড়ার শখ হয়েছে সেটা বললেই পারতেন।
জালিশা থামল না। কেঁদেই গেল। নিনিত তাকে খাটে বসিয়ে দিয়ে বলল,
‘ দেখি পা দেন। কোথায় ব্যাথা পেয়েছেন?
জালিশা বলল,
‘ দরকার নেই, আপনার সেবা লাগবেনা আমার।
নিনিতের ভ্রু কুঞ্চন হলো। জালিশার পা টেনে আনতেই জালিশা চিৎকার দিয়ে উঠল। বলল,
‘ আমার জোরে লেগেছে। আপনি আমাকে ধাক্কা দিয়েছেন।
নিনিতের মন খারাপ হলো। এভাবে ধাক্ক দেওয়া উচিত হয়নি। নিনিত হাতের বৃদ্ধাঙুলি দিয়ে জালিশার চোখের পানি মুছে দিল। বলল,
‘ সরি বলেছি জালিশা। আমার ভুল হয়ে গেছে।
জালিশা বলল,
‘ আমাকে বউ না মানলে বিয়ে করেছেন কেন? কেউ তো আপনাকে জোর করেনি।
নিনিত বলল,
‘ আমি তোমাকে বউ মানিনা?
জালিশা হেঁচকি হেঁচকি তুলে তুলে বলল,
‘ অন্য দশটা দম্পতির মতো আমরা না। মাহিদ স্যার আরিশাকে দেখিয়েন। কত সুন্দর দম্পতি ওরা। কত??
নিনিত থামিয়ে দিল জালিশাকে। মাথা নাড়িয়ে হেসে বলল,
‘ বুঝতে পেরেছি তুমি কি বলতে চাইছ।
জালিশা আমতাআমতা করে পেছনে চেপে গিয়ে বলে,
‘ কি বুঝতে পেরেছেন?
নিনিত তার দিকে ঝুঁকে পড়ে বলে,
‘ বুঝতে পেরেছি যে আপনি ঠিক কি চাইছেন? জালিশা চোখ বন্ধ করে বিড়বিড় করে বলল,
‘ আমি কিচ্ছু বলিনি ডাক্তার। কিচ্ছু মিন করিনি।
নিনিত নিঃশব্দে হাসল। জালিশা আর ও চেপে গিয়ে শ্বাস আটকে রাখল। নিনিত আর ও ঝুঁকে গেল তার দিকে। ঘাড়,গলার কাছে ভারী নিঃশ্বাস ফেলে এই প্রথম কম্পিত ছোঁয়া দিল। জালিশা আটকে রাখা শ্বাস ছেড়ে দিল।
____________________
ইশা রান্নাঘরে তখন মাত্রই রান্না বসিয়েছে। পিহু গুটিগুটি পায়ে হেঁটে ইশার পেছনে দাঁড়ালো। বলল,
‘ আম্মা আজ রান্না আমি করি?
পরী এসে বলল,
‘ আমার আম্মা।
পিহু ইশাকে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরে বলল,
‘ না আমার। পরী বলল,
‘ না আমার।
পিহু নাকিসুরে কেঁদে বলল,
‘ আমমা আমার।
ইশা হেসে ফেলল। বলল,
‘ এটা কোনো ঝগড়া হলো?
রান্নাঘরের দরজার কাছে মাহিদ রাহিকে নামিয়ে দিল। রাহি দরজার সামনে এসে বলল,
‘ আমমমাল। ছিকুর আমমা নয় কেন?
পরী পিহু ঘাড় ঘুরালো। পিহু দৌড়ে রাহিকে কোলে তুলে নিয়ে গালের দুপাশে আদর করে দিয়ে বলল,
‘ আমার আব্বা। পরী হেসে দিল। বলল,
‘ এইটা পুঁচা আব্বা। আমার আব্বা তো হসপিটালে। আমার আব্বা আমার জন্য আইসক্রিম আনবে, চকলেট আনবে। তোমার আব্বা সুসু করা ছাড়া আর কিছুই পারেনা৷
রাহি মুখ ফুলালো।
‘ মাম্মাম ওভাবে বলে কেন? ছিকু দুক্কু পায় কেন?
পরী ঠোঁট টানল রাহির মতো। বলল,
‘ ওমা আমার ছোট আব্বাটা এত দুক্কু পায় কেন?
মাহিদ রান্নাঘরের বাইরে থেকে বলল,
‘ আসুম নাকি চইলা যামু?
ইশা হেসে দিল। পরী বলল,
‘ আয় ভাই।
মাহিদ আসল। রান্নাঘরে এদিকওদিক তাকিয়ে ফ্রিজ খুলল। বলল,
‘ আপেল বাপ কই। লুকায় আছস ক্যান বাপ? বাইর হ।
ইশা তাকে টেনে সরিয়ে দেই। আপেল বের করে দিয়ে বলে,
‘ এই নে। তোরা ছেলেরা সামনে থাকলে ও কিছুই দেখিস না।
মাহিদ বলল,
‘ জামাইরে তুমি আন্ধা কইলা? রাগ করছি বাপের বইন।
ইশা হেসে দিল আওয়াজ করে। পিহু মুখ ভাঙিয়ে বলল,
‘ আমমা আমি যাই।
মাহিদ আপেলে কামড় দিতে দিতে বলল,
‘ গো গো গো।
পিহু রেগে গেল। রাহিকে নিচে নামিয়ে দিয়ে হনহন পায়ে হেঁটে চলে গেল। রাহি মাহিদের পা ধরল শক্ত করে। হা করে বলল,
‘ মিহি ইকা ইকা আপিল খায় কেন? ছিকুকে দেয়না কেন?
আপেলে কামড় দিতে দিতে বলল,
‘ তোরে দিমুনা বাপ। সর।
রাহি গলা কাত করে বলল,
‘ তুমার গায়ে সুসু করে দিবো আপিল না দিলে।
পরী একটা দিল রাহিকে। রাহি সেটা নিল না। বলল,
‘ মিহির আপিল নিবো।
মাহিদ তাড়াহুড়ো করে খেতে খেতে বলল,
‘ দিমুনা বাপ। দিমুনা। যাহ ভাগ শালা।
পরী বলল,
‘ এখন খেতে চাইছে দিয়ে দে ভাই। তুই আরেকটা নে।
মাহিদ খাওয়া শেষে আপেলের ডাঁটা রাহিকে ধরিয়ে দিয়ে বলল,
‘ এটা খাহ বাপ। খাহ।
রাহি মেঝেতে পা লম্বা করে বসে পড়ল। পা নাচাতে নাচাতে বলল,
‘ মারি ফেলব। মিহি আপিল দেয়না কেন? পুঁচা কেন?
পরী বলল,
‘ এটা কোনোকথা ভাই? সারাক্ষণ কাঁদাস আমার ছেলেটাকে।
মাহিদ অন্য আপেলে কামড় বসিয়ে রাহিকে দিল। রাহি উঠে দাঁড়াল। হাত মুছে নেওয়ার জন্য হাত বাঁড়াল। মাহিদ এক কামড় বসালো। রাহি বলল,
‘ দাও না কেন?
মাহিদ দিতে গিয়ে আরেক কামড় বসালো। রাহি পা ছুড়ল। কাঁদোকাঁদো হয়ে বলল,
‘ মিহি সব খেয়ে ফেলে কেন?
মাহিদ আবার রাহির দিকে আপেল বাড়িয়ে দিল। রাহি নেওয়ার আগে আরেক কামড় বসালো। রাহি চেঁচিয়ে কেঁদে উঠল৷ পরী বলল,
‘ ভাই???
মাহিদ অর্ধেক খাওয়া আপেলটা দিয়ে দিল রাহিকে। হেলিয়ে দুলিয়ে চলে যেতে যেতে বলল,
‘ শালার জামাই তোর বাসি জিনিস পছন্দ, তাই তোরে বাসি বউ দিয়ুম বাপ। আমারে মাইয়ারে দিতাম না বাপ।
রাহি মাথা নেড়ে নেড়ে আপেলে কামড় দিতে দিতে বলে,
‘ মুজা মুজা। উম উম। মুজা মুজা।
_________________
চাঁদের আলোয় আলোকিত পিচঢালা রাস্তা। ল্যাম্পপোস্ট ও দাঁড়িয়ে আছে মাথা উঁচু করে। চারদিকে শান্ত পরিবেশ। বেশ কয়েকটা রিকশা চলাচল দেখা যাচ্ছে রাস্তায়। রাস্তায় হাঁটছে দুই দম্পতি। এক দম্পতির মাঝখানে একটি বাচ্চা শিশু। মা বাবার আঙুল ধরে হাঁটছে। আর বকবক করছে। পড়নে ছোট তার সাইজের পাঞ্জাবি। ঠোঁট টেনে তা মা বাবার পাশে ছেলেমেয়ে দুজনকে দেখে বলল,
‘ পিহু মিহি কুথা বুলেনা কেন?
রেহান তার পাশে পিহুকে দেখল। পরী দেখল তার পাশে হাঁটা মাহিদকে। পরী মুখ ফুলিয়ে বলল,
‘ ভাই তোদের কি হয়েছে? এত রাগারাগি কিসের?
মাহিদ হাঁটতে হাঁটতে জবাব দিল,
‘ আমি ওসব ফুচকা টুচকা খাইনা বাপ। আমি যামুনা।
পিহুর মন খারাপ হলো। কিন্তু সে কিছুই বলল না। কি না কি বলেছে সেটা ধরে বসে আছে। অসভ্য ছেলে।
রেহান বলল,
‘ এভাবে কেন বলছ মাহিদ? পিহুর খারাপ লেগেছে বোধহয়?
মাহিদ ঠোঁট বাঁকা করে হাসল। রাহির মাথায় চাটি মেরে আবার হাঁটতে হাঁটতে বলল,
‘ তো আমি কি করুম?
পিহুর কান্না পেলেও সে কাঁদল না। রাস্তার পাশে সাদা বাল্ব জ্বলা দোকানটাতে গিয়ে থামল তারা। দোকানদার তাদের দেখে হেসে বলল,
‘ চৌধুরী বাড়ি থেকে আইছেন না আপনারা?
রেহান হাসল। বলল,
‘ জ্বী চাচা। আমাকে তো চেনেন।
দোকানদার ভালো করে দেখে বলল,
‘ হ চিনছি। তুমি চৌধুরী বাড়ির পোলা। আর এ কি চৌধুরী বাড়ির জামাই?
রেহান মাহিদকে দেখিয়ে দিয়ে বলল,
‘ জ্বী। ব্যারিস্টারের ছেলে। দোকানদার চোখ কপালে তুলে বললেন, হ তারে ও চিনছি। তার বাপ চাচা বড়ই ভালা মানুষ। ভালা করছো, তো এত রাতে বউ বাচ্চা নিয়া কই যাও বাবা?
রেহান বলল,
‘ আপনার দোকানে এসেছি। বউ বাচ্চা বোন নাকি ফুচকা খাবে। বায়না ধরেছে তাই চলে এলাম। ঘুরতে বের হয়েছি।
ফোন কানে দিয়ে মাহিদ একপাশে চলে গেল। রাহি ফুচকা গালে দিয়ে বলল,
‘ এতো ঝাল কেন? ঝাল করে কেন?
পরী পানি খাইয়ে দিয়ে বলে,
‘ পানি খাও আব্বা। পিহু প্লেট হাতে নিয়ে বসে রইল। চোখের আনাচেকানাচে ভেজা তার। কিছুক্ষণের মধ্যে বেশ ফর্মাল ড্রেসে দোকানে ডুকে পড়ল একটি ছেলে। তার পেছন পেছন একটি মেয়ে। রাহি গালে থাকা ফুচকা ফেলে দিয়ে বলে উঠল,
‘ জানিচা!!!!!
জালিশা হেসে উঠল। রাহির গাল টেনে দিয়ে পিহুর পাশে গিয়ে বসে বলল,
‘ স্যার একপ্রকার জোরদবস্তি করে এখানে এনেছে। হঠাৎ করে এই প্ল্যান?
পিহু বলল,
‘ জানিনা। দিদিয়ার প্ল্যান ছিল, আমার না। নিনিত বলল,
‘ তোমার কি শরীর খারাপ আরিশা? এরকম দেখাচ্ছে কেন?
পিহু বলল,
‘ না স্যার। আ’ম ওকে।
হাসিখুশিতে পার হলো সময়। ঝাল টক মিষ্টি কথায় কেটে গেল সুন্দর মুহূর্ত । ছোট্ট বাচ্চাটির কথায় হেসে গড়াগড়ি খেল সবাই। বৃষ্টি আসার পূর্বাভাস দেখে পরী রেহান রাহিকে নিয়ে চলে গেল। ঝলমলে চাঁদ ঢাকা পড়ল মেঘের আড়ালে। গুডুম গুডুম আওয়াজ করে বর্ষণের সংকেত দিল আকাশ। দোকানের বাইরে রাখা বেঞ্চে বসে রইল পিহু। মাহিদের তাড়া পড়ল। তারপর ও পিহু নড়ল না। জালিশা পিহুকে বলল,
‘ আমরা আসি আরিশা। তাড়াতাড়ি বাড়ি ফিরো। বৃষ্টি নামবে শীঘ্রই। স্যারের উপর আবার তুমি রাগ করে থেকোনা।
পিহু হেসে সায় দিল। নিনিত পিহুর মাথায় চাপড় দিয়ে বলল,
‘ পাগল বরটা রেগেছে তোমার উপর, আর তুমি রাগ করিওনা। আগে রাগ ভাঙাও। কথাগুলো হয়ত বেশি খারাপ লেগেছে। পিহু মাথা নাড়াল।
নিনিত মাহিদকে ডেকে বলল,
‘ তাড়াতাড়ি বউ নিয়ে ঘরে যাহ বাপ। বৃষ্টি আইতাছে।
মাহিদ ঠোঁট বাকিয়ে হাসল।
নিনিত জালিশা চলে যাওয়ার জন্য পা বাড়াল। জালিশা বলল,
‘ আপনি একদম বিজ্ঞদের মতো করে কথা বলেন। অথচ একটা খাটাশ তা আমার চাইতে ও বেশি কে জানে?
নিনিত হাসল। মোবাইলের দিকে তাকিয়ে যেতে যেতে বলল,
‘ তুমি না জানলে আর কে জানবে? বউই তো সব সিক্রেট জানে।
মাহিদ পিহুর হাত ধরল। টেনে নিয়ে যেতে যেতে বলল,
‘ চল। রাগ ঘরে গিয়া দেখাস।
পিহু নাকিসুরে কাঁদার মতো করে করে বলল,
‘ নিজে রাগ দেখাচ্ছ। আমি কোথায় দেখাচ্ছি?
মাহিদ বলল,
‘ একদম চুপ।
পিহু কাঁদল। মাহিদ বলল,
‘ তোরে কি আমি মারছি? আর তো মারতাছিনা, তয় কান্দোস কিল্লাই?
পিহু বলল,
‘ না মারতে কখন বলছি। কখন কি বলেছি সেটা নিয়ে বসে আছ। অথচ নিজে আমাকে কত কিছু বলে সারাক্ষণ।
মাহিদ কানচাপা দিয়ে বলে,
‘ ভ্যাঁ ভ্যাঁ করিস না তো বাপ। মাথা খারাপ হইয়া যাই তোর ভ্যাঁ ভ্যাঁ শুনলে।
পিহু কেঁদেই গেল। বৃষ্টি নামল জপজপ করে। গাছগাছালি হেলেদুলে জানান দিল ভারী বৃষ্টিপাতের আভাস। বাড়ি পৌঁছাতে পৌঁছাতে দুজনই ভিজে টুইটুম্বুর হয়ে গেল।
পিহু বলল,
‘ আর ও রেগে আছ?
মাহিদ তাকে টেনে ধরে ওয়াশরুমে ডুকিয়ে দরজা বন্ধ করে দিয়ে বলল,
‘ তাড়াতাড়ি বাইর হ বাপ। আমার ঠান্ডা লাগতাছে বেশি।
পিহু বেশ খানিক্ষণ পর বের হলো। মাহিদ পিহুকে গামছা দিয়ে বাড়ি মেরে বলল,
‘ আমি আইসা যাতে দেখি চুল শুকনা। তোর চুল থেকে টপটপ পানি পড়লে আমি তোরে খাইছি বাপ।
পিহু থম মেরে বসে রইল। চুল মুছল না। বিড়বিড় করে বলল,
‘ মুছব না।
মাহিদ এসে পিহুকে একই অবস্থায় দেখল। পিহু মুখ ফুলিয়ে বলল,
‘ ওভাবে কি দেখো? মারলে খবর আছে কিন্তু।
মাহিদ হেসে ফেলল। তার হাতে থাকা তোয়ালেটা দিয়ে গলায় পেঁচিয়ে পিহুকে টেনে আনল। পিহু গলায় ব্যাথা পেল। মাহিদ তার বুকের উপর পিহুকে ফেলে পিহুর চুল মুছে দিতে দিতে বলল,
‘ তুই বাপের উপর আমি রাগ করিনা বাপ। তুই মাইর খাবি। সহ্য ও করবি। মরার আগ পর্যন্ত। টু শব্দ করলে একেবারে জিন্দা লাশ বানায় ফেলমু তোরে।
পিহু ঝাপটে দুহাত দিয়ে আঁকড়ে ধরল মাহিদকে। বুকে গুঁজে গিয়ে বলল,
‘ আমাকে এতক্ষণ কাঁদালে কেন? তুমি জানোনা, তুমি কথা না বললে আমার কষ্ট হয়। বেয়াদব ব্যাডা কিছু বুঝেনা।
মাহিদ হেসে ফেলল৷ বলল,
‘ বেয়াদব ডাক আর যাই ডাক আমার ঘুম আইতাছে বাপ। ঘুমামু আমি। বুঝছস?
পিহু নাক ফুলালো। যাও ঘুমাও গিয়ে।
মাহিদ বিছানায় গিয়ে ধপ করে শুয়ে পড়ল।
পিহুকে ডাকল,
‘ আয়।
পিহু গেলনা। জানালা খুলে দাঁড়িয়ে বাইরের তান্ডব দেখতে লাগল। খোলা ভেজাচুল লেপ্টে রয়েছে পিঠে, ঘাড়ে ৷ আজ ঝুপঝাপ করে মন কেমনের বৃষ্টি নামল৷
ঠিক সেই সময় কেমন করে যেন মন কেমনের মুহূর্ত ও চলে এল। পিহু অনুভব করল পেছন থেকে শাড়ি গলে আসা উদরে অবস্থান করা দুটো হাত। পিহু সহজাত প্রবৃত্তিতে হাত রাখল সেই হাতের উপর। ঘাড়ের কাছে ভেজা চুলের উপর তপ্ত নিঃশ্বাসে মাখামাখি হতে হতে পিহু বাকহারা হয়ে পড়ল৷ কিভাবে যেন ছেলেটির আসক্তিপূর্ণ গলা শোনা গেল।
‘ ডেকেছি না?
পিহু উত্তর না দিয়ে শুধু বলল, হুমম। মুহূর্তেই চাপা অভিমান গলে গেল মেয়েটির । তুষ্ট হলো মনপ্রাণ। ছেলেটি তপ্ত নিঃশ্বাসের আওয়াজে ভারী হলো পিহুর শ্বাসপ্রশ্বাস। মন কেমন করা হাওয়া এসে নাড়িয়ে দিয়ে গেল শাড়ি,চুল,মন । নামিয়ে দিয়ে গেল প্রেমের ঝড়। রটিয়ে দিয়ে গেল আর ও একটি ভালোবাসার রাত। রচনা করে গেল আর ও একটি ভালোবাসার গল্প।
তারপরের সময়টা দ্রুত এগোলো। প্রায় ছয়মাস পরের কাহিনী।
চলবে,
রিচেইক করা হয়নি। গঠনমূলক মন্তব্যের আশায়।