#মন_গোপনের_কথা
#পর্ব_১৫,১৬
লেখনীতে, পুষ্পিতা প্রিমা
১৫
সকালে ব্রেকফাস্টের সময় মাহিদকে দেখা গেল না। ছিকু চেয়ারের উপর দাঁড়িয়ে পুডিং কেটে চামচ গালে দিয়ে বলল
‘ মিহি কুথায়? আচে না কেন?
নীরা তার গাল টেনে টাপুসটুপুস আদর করে বলল
‘ বাবুসোনা মিহি পড়াতে গেছে। বন্ধুর নাকি কোচিং সেন্টার আছে। ইন্টারের ব্যাচ। ওখানে পড়াবে।
পরী বলল
‘ কোচিং?
‘ হ্যা। লাবীবের কাজিনের । পরীক্ষার্থীদের জন্য এক্সট্রা গাইড দরকার নাকি ওই কোচিংয়ে। মাহি ফ্রি আছে। তাই গেল আর কি।
ছিকু পানির গ্লাস নিতে চাচ্ছে। নিতে পারছেনা। মুনা এসে পানি খাইয়ে দিল। বলল
‘ ভাই পুডিংটা পুরো খেতে হবে তো।
‘ কেন পুরু খেতে হবে কেন? ছিকু খেতে মন চায় না কেন?
পরী বলল
‘ ঠাস করে দেব একটা। প্রয়োজনে অপ্রয়োজনে ও কেন কেন করবে।
ছিকুর ঠোঁট উল্টানো শুরু হতে লাগলো ধীরেধীরে। মুনা তাকে কোলে নিয়ে বুকের সাথে জড়িয়ে ধরে আদর করতে করতে বলল
‘ একদম নয়। পরীকে মারব। আমার ভাইকে বকেছে?
‘ কেন বুকেছে কেন? পরী ছিকুকে আদর দেয় না কেন?
রিক হেসে বলল
‘ মুনা ওকে আমার কোলে দাও। তুমি আর নীরু খেয়ে নাও।
ছিকু রিকের কোলে চলে গেল। রিপ বলল
‘ ছিকু কি পড়াশোনা করছে?
ছিকু ডাগরডোগর চোখে চাইলো। কপাল কুঁচকে গেল তার। নাক কুঁচকে গেল। সাথে ঠোঁট ও ফুলে উঠলো। চেহারাটা দেখতে মজা লাগছে। যে কারো দেখলে হাসি পাবে। রিপ হেসে ফেলল। পরী বলল
‘ দেখেছ পাপা পড়ার কথা বললে চেহারা এরকম করে তাকায়।
ছিকু ওভাবেই তাকিয়ে থাকলো। রিক হেসে উঠে ছিকুর মুখ লাগিয়ে রাখলো তার মুখের সাথে। তারপর গভীর চুম্বন আঁকলো কপালে। বলল
‘ অনেক বড় হবে আমার ভাই।
‘ ছিকুকে ভাই ডাকু কেন?
সবাই আরেকদফা হাসলো। পরী বলল, সবাই আপনার বাজে প্রশ্নের দিতে বসে নেই। ছিকু নাক ফুলিয়ে তাকালো পরীর দিকে। পিহু বলল
‘ কলিজা আপনি পিহুর কাছে পড়েন না? সেটা বলেন না সবাইকে।
ছিকু সাথে সাথে প্রশ্ন করলো।
‘ কেন? বলব কেন?
পিহু হতাশ হলো। নাহ এই ছেলের সাথে কোনো কথা বলা যাবে না।
মাহিদ বারোটার সময় ফিরলো। মুনা বলল, পরী আসার সময় কাল মিষ্টিদই এনেছিল। খাবি?
‘ এখন না।
বলেই নিজের ঘরের দিকে হাঁটা ধরলো সে। দ্রুত গোসল নিল। রোদ আর রাস্তাঘাটের ধুলোবালিতে ঘেমে যা তা অবস্থা। গোসল শেষে গায়ে ঢিলেঢালা টি শার্ট জড়ালো সে। থ্রি কোয়াটার প্যান্ট পড়ে গামছা গলায় ঝুলিয়ে মাথা মুছতে মুছতে বিছানায় পড়ে থাকা ফোনের কাছে এগোলো। কানে গানের আওয়াজ এল। সেই আওয়াজ অনুসরণ করে রুম থেকে বের হলো মাহিদ। হাঁটতে হাঁটতে গিয়ে পৌঁছুলো পরীর ঘরের সামনে। ভেতরে ফোনে গান চলছে। গানের সাথে সাথে হাত পা কোমর দুলিয়ে দুলিয়ে নাচছে ছিকু। পিহু শুয়ে শুয়ে একের পর এক গান দিচ্ছে। জিজ্ঞেস করছে
‘ এই গানটা সুন্দর আব্বা?
ছিকু মাথা দুলিয়ে দুলিয়ে নাচতে লাগলো। গায়ে কাপড় নেই। হাঁটুর উপর অব্দি ছোট সাইজের একটি লিনেন কাপড়ের প্যান্ট। গরমে ঘামছে তাই মুনা তাকে এটা পড়িয়ে রেখেছে। ছিকু এইবার আরামবোধ করছে। তাইতো খুশিতে নাচছে। মাহিদ পেছনে হাত গুটিয়ে দাঁড়িয়ে ছিকুর নাচ দেখতে লাগলো। ছিকু গানের সাথে সাথে তাল মিলিয়ে গাইলো
হাচ মেরী পরম পরম
পরম পরম পরম চুন্দুরী
হাচ মেরী পরম পরম
পরম পরম পরম চুন্দুরী
মাহিদের পেট ফাটা হাসি জমে থাকলো গালের ভেতর। পিহু আরেকটা গান দিল। ছিকু নাচ থামিয়ে দিল। কোমরে হাত রেখে নাকমুখ কুঁচকে মাহিদের দিকে তাকালো। কিছু বলার আগেই মাহিদ চুপিসারে তাকে কোলে তুলে মুখ চেপে ধরে তার ঘরে নিয়ে আসলো। বিছানায় ধপাস করে ছুঁড়ে মারলো। ছিকু হাত পা ছড়িয়ে শুয়ে পড়ে প্রশ্ন করলো
‘ মিহি লুকোলুকি করে পিহুকে দিখে কেন? কেন বাপ কেন?
মাহিদ তার গালে পিঠে ঠাসঠুস মেরে বলল
‘ তুই শালা ভারী বেয়াদব। তুই যে পেট দেখায়, বুক দেখায় ছোড প্যান্ট পড়ে তিড়িংতিড়িং করে নাচতাছোস তোরে আমি কিছু কইছি শালা? তুই পুরুষজাতির কলঙ্ক। বেডা বেয়াদব।
পিহু এসে দাঁড়ালো দরজার কাছে। ছিকুকে মাহিদের কাছে দেখতে পেয়ে চলেই যাচ্ছিল। আবার দাঁড়ালো একটুখানি।
ছিকু ড্যাবড্যাব করে মাহিদের দিকে তাকিয়ে বলল
‘ কেন? ছিকুকে বিদ্দব ডাকো কেন? মিহি বিদ্দব কেন? পিহুকে লুকোলুকি করে দিখে কেন?
মাহিদ সাথে সাথে তার গাল চেপে দিল। বলল
‘ শ্লা তোর খালা কালা মানুষ। তারে কিল্লাই আমি লুকায় লুকায় দেখুম? কিল্লাই? ফালতু কথা কস।
‘ কেন মিহি পিহুকে কালা বলে কেন?
মাহিদ চুপ করে থাকলো। না এই শালার লগে কোনো কথা নাই। অ কে অজগর বানিয়েই ছাড়বে।
______
দুপুরে সবাই একসাথে খেতে বসলো। মাহিদের সাথে ছিকু ও এল। পিহু রিপ আর পরীর মাঝখানে বসেছে। মাহিদ গিয়ে রিপের পাশে ছিকুকে দাঁড় করিয়ে দিয়ে নিজে ও চেয়ার টেনে বসলো। ছিকু চেয়ারে বসলে টেবিলের কিছুই দেখতে পায় না। কারণ সে ছোট মানুষ। তাই দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে খায় ও৷ অবশ্য এ নিয়ে তার ও দুঃখের শেষ নেই। কেন সে সবার মতো বসে বসে খেতে পারেনা। কেন?
নীরা আর মুনা ও এসে বসলো। মুনা বলল
‘ কয়েক মাস তো গেল। পরীক্ষা আবার কবে মাহি?
মাহিদ খেতে খেতে তাকালো। তার উত্তর রিপ দিয়ে দিল।
‘ একটু দেরী আছে।
নীরা বলল
‘ আল্লাহ এইবার যাতে পাস হয়ে যায়। এটা কোনো কথা? ভাইবা পরীক্ষায় মানুষ ফেল করে? ফেল না করলে এক্ষুণিই বউ নিয়ে আসতে পারতাম।
মুনা হেসে বলল
‘ ওর পরীক্ষার সাথে বিয়ের কি সম্পর্ক? ওর বউ দিনে কি এক মণ চালের ভাত খাবে নাকি? আমরা যা খাব তাই তো খাবে। এখনই তো নিয়ে আসতে পারিস। চাকরির কথা কি তোরা বলছিলি নাকি?
নীরা অন্যমনস্ক হয়ে বলল
‘ তাই তো। সেটা তো ভেবে দেখিনি। সমস্যা কি? ব্যারিস্টার তার নিজের বউ ও পালবে, ছেলের বউ ও পালবে। কি আশ্চর্য! আমি তো এটা ভেবে দেখিনি। আজকে একটা কাজ করি। মাইশাকে আজ একবার আমাদের বাড়িতে আসতে বলি। মাহি তুই কি বলিস?
মাহিদ খেতে ব্যস্ত। উত্তর দিল না। খাওয়া শেষে চলে যাওয়ার সময় রিপ তাকে থামিয়ে দিল। বলল
‘ তোর মায়ের প্রশ্নের উত্তর দে।
মাহিদ মাথা চুলকে বলল
‘ ওসব আমি জানিনা মা।
তারপর পর চলে গেল।
পরী হেসে ফেলল। বলল
‘ ছোট মা ভাই লজ্জা পাচ্ছে।
ছিকু প্রশ্ন করলো।
‘ কেন? মিহি নজ্জা পাচচে কেন?
_____________
মাইশার মা পরপর অনেকগুলো কাপড় বের করে বিছানায় বিছিয়ে রেখেছেন। মাইশা টেবিলে বসে ফোনে মগ্ন। তিনি এই পঞ্চমবারের মতো মেয়েকে ডেকে বললেন
‘ খয়েরী রঙেরটা পড়। এটাতে তোকে দারুণ লাগবে।
মাইশা ফোনটা রেখে দিল। বলল
‘ মা প্লিজ। আমি ওদের বাড়ির বউ হয়ে যাইনি এখনো। আর আমি ওই বাড়িতেও যাচ্ছি না। জাস্ট মিঃ মাহিদের সাথে দেখা করব। কিছু কথা আছে। এসব নিয়ে বাড়াবাড়ি করোনা তো।
‘ কিন্তু মিসেস খান যে বলল।
‘ ওনি তো বলবেনই। তুমি ওনার ছেলেকে বলোনি? আমি মিঃ মাহিদকে আগে থেকে চিনি। আমি চাই ওনার সাথে আমার আগে বন্ধুত্বটা হোক। তারপর বাকিসব।
মরিয়ম বেগম মাথা নাড়ান। বললেন
‘ তাও এই খয়েরীটা পড়। এটা তোকে বেশি মানাবে।
মাইশা সেটা হাতে নিল। বলল, এবার খুশি?
মরিয়ম বেগম হাসলেন।
মাহিদের সাথে ছিকু ও বের হলো। সাথে পরী। মাইশার সাথে সে পরিচিত হবে। পিহু বেরোতে চাইলো না। নীরা মুনা জোর করে তাকে পাঠালো। একা একা এখানে কি করবে? তার চাইতে বরং ঘুরে আসা ভালো।
বিশ্ববিদ্যালয়ের পাশেই পার্কের কাছাকাছি জায়গায় মাইশার আসার কথা ছিল। পরী মাহিদকে বলল
‘ ও কোথায় রে?
মাহিদ আইসক্রিম খেতে খেতে বলল
‘ আসবে।
ছিকু এদিকওদিক তাকিয়ে পিহুকে বলল
‘ মাইচা এখুনো আচে না কেন?
পিহু হেসে উঠলো। বলল
‘ মাইশা সাজগোজ করে আসতেছে কলিজা। হবু বরের সাথে দেখা বলে কথা। চলেন আমরা অন্যদিকে যাই।
পরী বলল
‘ কোথায় যাবে?
‘ আমরা ওদিকটাই যাই দিদিয়া। ওখানে অনেক বাচ্চা আছে।
পিহু যেতে না যেতেই মাইশা চলে এল। সৌজন্যেমূলক হাসলো। বলল
‘ আসসালামু আলাইকুম।
সরি ফর লেট। রিকশা পাচ্ছিলাম না।
পরী বলল
‘ ওয়ালাইকুমুস সালাম। ইটস ওকে। কেমন আছ?
‘ আলহামদুলিল্লাহ। আপনি কেমন আছেন?
‘ আলহামদুলিল্লাহ আমিও ভালো।
মাহিদ চুপচাপ দাঁড়িয়ে রইলো। মাইশা বলল
‘ মিঃ মাহিদ চুপচাপ কেন? আর ইউ ওকে?
মাহিদ মাথা নাড়ালো। মাইশার সাথে অনেক কথাবার্তা হলো পরীর। পরী তারপর মাহিদ আর মাইশাকে একা ছেঁড়ে দিল। বলল, তোমরা কথা বলো, আমি রাহি আর পিহুকে দেখি কোথায় গেল ওরা?
পরী যেতেই মাইশা চুপ হয়ে গেল। মাহিদ ও চুপ। কোনো কথা হলো না অনেক্ক্ষণ। তারপর মাইশা নিজেই কথা বললো।
‘ মিঃ মাহিদ কারা মানুষকে কনফিউজডে ফেলে দিতে পারে বলুন তো?
‘ ডক্টর। রাইট?
মাইশা হাসলো। বলল
‘ ইয়েস। জিনিয়াস পারসন।
‘ থ্যাংকস।
‘ মিঃ মাহিদ। আজকে সন্ধ্যার কফিটা তাহলে আমিই খাওয়াই। প্লিজ।
‘ ওকে।
মাইশা পরীকে ডাক দিল। পিহুকে দেখে হাসলো মাইশা। বলল
‘ হেই পিহু কেমন আছ? তুমি এতক্ষণ কোথায় ছিলে?
পিহু হাসলো। বলল
‘ ঘুরছিলাম।
ছিকু বলল
‘ এটা মাইচা কেন? মিহির বুউ কেন?
উপস্থিত লজ্জায় পড়ে গেল মাহিদ আর মাইশা৷ পিহুর দিকে রেগে তাকালো মাহিদ। সব এই বেয়াদবের দোষ। পিহু সেদিকে তাকালো ও না। মাইশা ছিকুকে কোলে নিল। বলল
‘ কত্ত কিউট করে কথা বলে বাবুটা। আপু আপনার বাবুকে আমি নিয়ে যাব। দেবেন?
ছিকু মাইশার কোল থেকে নেমে যাওয়ার জন্য ধস্তাধস্তি লাগালো। মাইশা বলল
‘ আচ্ছা আচ্ছা ঠিক আছে বাবু। আপনাকে কোথাও নিয়ে যাব না।
‘ মাইচা ছিকুকে বাবু বুলে কেন?
মাইশা হেসে উঠলো। ওয়াও ভেরি ফানি একটা গুলুমুলু বাচ্চা।
রেস্টুরেন্টে ঢুকে নাশতা সাড়লো সবাই। তারপর আর ও কিছুক্ষণ ঘুরাঘুরি করে মাইশাকে রিকশায় তুলে দিল। মাইশা চলে যেতেই আরেকটা রিকশায় পরী, ছিকু আর পিহু উঠে বসলো। মাহিদ পরের রিকশায় বাড়ি গেল। বাড়ি ফিরতেই নীরা জেরা করলো পরীকে । মাইশার কথাবার্তা কেমন? মেয়েটা ঠিক কেমন তা শুনতে মরিয়া হয়ে উঠলো সে। পরী বলল, খুব মিষ্টি একটা মেয়ে। ভাইয়ের পাশে দারুণ লেগেছে।
‘ পিহু তোমার কেমন লেগেছে?
‘ যার সাথে বিয়ে হবে তার ভালো লাগলেই হলো। ওনি খুব ভালো মেয়ে আমি যতটুকু জানি। খুব মিশুক ও। তোমার সাথে ভালো জমবে মামি।
‘ থ্যাংকিউ আম্মাজান। আমি তোমার উপর ভরসা করে ভুল করিনাই। তোমারে আদর দিলাম যাও।
পিহু হেসে বলল, নিলাম।
‘ ছিকুকে আদর দাও না কেন?
‘ বাবুসোনা তোমারে ও আদর দিলাম যাও।
মাহিদ টিভির রিমোট চেপে টিভি বড় করলো। বিরক্ত হয়ে বলল
‘ মা এসব বকরবকর অন্যকোথাও গিয়ে করো।
মুনা বলল
‘ ওমা! দেখা করতে গেলি। হবু বউয়ের সাথে ছবি টবি তুলিস নি মাহি?
মাহিদ টিভিটাই বন্ধ করে দিল। পরী বলল
‘ ওদের মধ্যে এখনো জড়তা কাজ করছে মা। ওগুলো কাটিয়ে উঠুক তারপর ছবি তোলার কথা বলতে হবে না। কিছুদিন পরিচিত হোক। একে অপরকে জানুক।
মুনা পিহুকে বলল
‘ পিহু তোমার আর নিনিতের কয়েকটা ছবি দিও তো। কাল আমার ছোট ভাইয়ের বউ নিনিতের ছবি দেখতে চাইছিল। তোমাদের কাপল ছবি দেখতে চেয়েছে।
‘ দিদিয়ার ফোনে আছে।
পরী বলল
‘ হ্যা আমার কাছে আছে তো।
মুনা ছবিগুলো দেখে দেখে বলল
‘ দুজনকে সুন্দর লাগছে। মানিয়েছে খুব। একেবারে রাজযোটক। তোমরা কি ফোনে কথা টথা বলোনা নাকি?
‘ বলি। উনি হসপিটালে বিজি থাকেন বেশিরভাগ সময়। তাই সবসময় বলা হয় না।
নীরা বলল,, মাগোমা এরা ফোনে ও না হয় কথা বলে। আমাদের বেলায়, ধুর আমার
কথা না হয় বলি। ব্যারিস্টার ফোনে কথা বলা দূরে থাক। সামনাসামনি যদি জিজ্ঞেস করি কেমন আছেন? খাইছেন? নাউজুবিল্লাহ। ব্যাটা একটার ও উত্তর দিত না। কি পরিমাণ ভাব যে দেখাইতো। আমার ইচ্ছা করতো মাথা ফাটাই দিই। কিন্তু আমার ভবিষ্যৎ বাচ্চা মানে মাহির কথা ভেবে মারিনাই। সে বাপ কোথায় পাইতো আবার?
মাহিদ হনহনিয়ে চলে গেল। ঘরে গিয়ে চিল্লিয়ে পিহুকে ডাকলো। সবাই ভড়কে গেল। মুনা বলল, আবার কি হলো রে?
পিহু বলল
‘ আমি দেখছি।
নীরা বলল
‘ ও আল্লাহ আবার কি হলো?
পিহু যেতেই মাহিদ ধপাস করে দরজা বন্ধ করলো। পিহুর গলা চেপে ধরে দেয়ালে লাগিয়ে রাখলো৷ পিহু ছাড়ানোর চেষ্টা করলো না। কারণ গলাটা সামান্য করে ধরেছে মাহিদ। পরক্ষণে মাহিদকে জোরে ধাক্কা মারলো পিহু। বলল
‘ কি সমস্যা তোমার?
মাহিদ কিছু একটা বলতে গিয়ে ও বলতে পারলো না। শুধু বলল
‘ তুই তোর বাপকে গিয়ে বলবি তুই বিয়ে করবি না। আমার বাপকে গিয়ে বলবি আমি ও এখন কোনো বিয়ে টিয়ে করব না।
পিহু বলল
‘ তোমাকে এখন কেউ জোর করছেনা। আর আমি বিয়ে করবো। কেন করব না?
মাহিদ তার হাত তারই পিঠের সাথে চেপে ধরলো। পিহু বলল
‘ লাগছে আমার।
মাহিদ দাঁতে দাঁত চেপে বলল
‘ লাগুক৷ যা বলেছি তাই কর চুপচাপ নইলে খুব খারাপ হবে। তুই কাঁদবি।
পিহু চোখ উল্টে তার দিকে তাকালো। কিছুক্ষণ পরেই বলল
‘ আমি কেঁদেছি, তুমি ও একটু কাঁদো। নোনা পানির স্বাদ নাও। স্বাদটা বুঝা দরকার তোমার।
চলবে,,,,
#মন_গোপনের_কথা
#পর্ব_১৬
লেখনীতে, পুষ্পিতা প্রিমা
পিহুর হাতটা মোচড়ে দিয়ে চলে গেল মাহিদ। নীরা দৌড়ে এসে হায়হায় করে বলল
‘ মাহি তুই আবার মেয়েটাকে মেরেছিস? কি একটা অবস্থা? হঠাৎ তোর হলোটা কি? পিহু তো কিছুই করলো না। তুই এমন করলি কেন? এই মাহি?
মাহিদ একদম পিছু ফিরে তাকালো না। সোজা চলে গেল বাড়ির বাইরে। মুনা তাকে চলে যেতে দেখে বলল
‘ আরেহ আস্তে কথা বল। রিপ শুনলে কেলেংকারী হয়ে যাবে। ওর হয়েছেটা কি?
পরী বলল
‘ আমি ও তো বুঝলাম না ভাইয়ের হঠাৎ কি হলো?
পিহুর হাতে বরফ ম্যাসাজ করতে লাগলো নীরা। পিহু চুপচাপ বসে আছে। ছিকু এসে পিহুর পাশে বসলো। বলল
‘ পিহুকে মেরেছে কেন? মিহি পিহুকে মারে কেন? মিহি বিদ্দব কেন?
নীরা বলল
‘ বেয়াদব তো। মহা বেয়াদব। আল্লায় জানে বউরে না পিটায় বাপের বাড়ি পাঠাই দেয়। এই ছেলের বিশ্বাস নেই৷ মানসম্মানের ধার ধারেনা এই ছেলে।
ছিকু কষ্ট পেল। মিহি কেন পিহুকে মারলো? পিহুর হাতে হাত বুলিয়ে দিল ছিকু। বলল
‘ পিহু কাঁদেনা, কাঁদেনা।
পিহু গালের ভেতর করে হাসলো। মুখ নিচে নামিয়ে বলল
‘ আদর দেন। তাহলে ব্যাথা কমে যাবে।
ছিকু পিহুর গালে আদর দিল। বলল
‘ পিহু আদর দেয় না কেন?
পিহু তার গাল চেপে আদর করে বলল
‘ দিলাম।
নীরা বলল
‘ আদর টাদর পরে চলবে। আগে বলো ব্যাথা লাগতেছে কিনা। মাহি তোমাকে মারলো কেন?
পিহু থেমেথেমে বলল
‘ জানিনা।
নীরা বলল, আজ আসুক। আমি দেব কয়েকটা। বেয়াদব ছেলে।
পিহু চুপ করে থাকলো। কিছুই বলল না। মাহিদ এসে ঘরে গিয়ে চুপচাপ ঘুমিয়ে পড়লো কাউকে দেখা না দিয়ে। মুনা নীরাকে যেতে দিল না। নিজেই ভাত খাইয়ে দিয়ে আসলো মাহিদকে। অবশ্য কান টেনে দিতে ভুলেনি।
সকাল সকাল নীরা তার কান টেনে দিয়ে তুললো। কাঁচা ঘুম ভেঙে যাওয়ায় মাহিদের মাথা গরম হয়ে গেল। বালিশ মেঝেতে ছুঁড়ে মেরে বলল
‘ ধুর বাপের বউ। শান্তিতে ঘুমাইতে দাও বাপ।
নীরা বলল
‘ কাল পিহুকে মেরে পালিয়েছিস কেন বেয়াদব? তোর বাপকে গিয়ে বলব?
মাহিদ চোখ কচলালো। বলল
‘ আমার কথা না শুনলে শালীরে একশ বার মারবো।
নীরা আবার তার কান টেনে ধরে পিঠে কয়েকটা দিল। বলল
‘ দাঁড়া তুই। আমি তোর বাপকে বলো আসি। তুই মাইর খেয়েছিস দেরী হয়েছে। তারপর সই খবর তোর শ্বশুরবাড়ি পাচার করব আমি। দাঁড়া।
‘ দাঁড়াইতে পারব না বাপ। যাও বইলা আসো। আমি কাউরে ভয় পাই না।
নীরা সত্যি সত্যি রিপকে টেনে নিয়ে এল। মাহিদ ভ্যাবাছ্যাঁকা খেয়ে রিপের দিকে তাকিয়ে রইলো। রিপ ও। নীরাকে জিজ্ঞেস করল
‘ কি হয়েছে?
মাহিদ ও অবাক। নীরা আমতাআমতা করতে করতে বলল
‘ এই বজ্জাত ছেলে নাকি কাউকে ভয় পায় না। কি বাবু এখন পাইছো ক্যান? হু হু?
মাহিদ কপাল কুঁচকালো। রিপ বিরক্ত হয়ে যেতে যেতে বলল
‘ তুমি ওর চাইতে বেশি ডেঞ্জারাস নীরা। এই সামান্য কথার জন্য আমাকে এভাবে ডেকে নিয়ে এলে? আশ্চর্য!
রিপ চলে গেল। মাহিদ ধপাস করে আবার বিছানায় শুয়ে পড়ে বলল
‘ ওরেব্বাপ আমি আর ও ঘুমাবো। আমারে ডিস্টার্ব করবানা আর।
ছিকু আসলো দৌড়ে। হাতে আপেল। আপেলে কামড় দিয়ে মাহিদের পিঠের উপর উঠে শুয়ে পড়লো। মাহিদ বলল নড়াচড়া করতে না পেরে বলল
‘ শালা এভাবে শুইছস ক্যান বাপ? তুই কোন মটুরে?
ছিকু আপেল গালে রেখে বলল
‘ মিহি ছিকুকে মটু বলে কেন?
মাহিদ নড়ে ছিকুকে পিঠ থেকে ফেলে দিল। পিঠ দিয়ে চেপে ধরলো। তারপর ফিরে ছিকুর পেটের উপর মাথা রেখে বলল
‘ শালা আমি ঘুমাইতাছি। খবরদার বিরক্ত করবিনা।
ছিকু ভ্যা ভ্যা করে কেঁদে উঠলো। মাহিদ সরে পড়লো দ্রুত। বলল
‘ শালা দূর হ।
ছিকু গেল না। শুয়েই থাকলো। মাহিদ আবার ঘুমে তলিয়ে গেল। ছিকু আপেলের কামড় দিয়ে এক ছোট একটা টুকরো হাতে নিল। মাহিদের গালের কাছে দিয়ে বলল
‘ মিহি মুজা মুজা। মুজা মুজা।
মাহিদ গালের ভেতর ঠেলে ঢুকিয়ে দিল ছিকু। মাহিদ ঘুমের ভেতরে গাল নাড়তে নাড়তে খেল। ঘুমঘুম গলায় বলল
‘ শালা কি দিছস এগুলা?
‘ আপিল দিচি।
ছিকু আবার কামড়ে আপেল হাতে নিল। আবার মাহিদকে খাইয়ে দিল।
__________
পরী এসে ডেকে তুলে ফেলল মাহিদকে। বলল, আর কতক্ষণ ঘুমাবি? উঠ।
মাহিদ উঠলো। এদের জন্য আর ঘুমানো যাবেনা।
ব্রেকফাস্টে খেতে বসেছে সবাই। রিপ বলল, ভাই ঘুম থেকে উঠেছে কখন?
পরী বলল
‘ ফজরের আযানের সময় পাপা। আর ঘুমায়নি, আমাকে ও দেয়নি।
পিহু বলল
‘ একদম বাজে। আমার মুখে বালিশ চাপা দিয়ে পালিয়েছে।
মাহিদ কপাল কুঁচকালো। এই শালা আইজ এত ভালো হইলো কেমনে? তারে জ্বালায় নাই।
সবাই খাচ্ছে। ছিকু রোজ সকালে পুডিং খায়। মুনা আজ ও পুডিং করলো। বলল,
‘ ভাই কি খাবেন আপনি? পুডিং দেব?
ছিকু ঘনঘন মাথা নেড়ে বলল
‘ না।
পরী বলল
‘ পরে খাবে মা। এখন রেখে দাও। আপেল খেয়েছে তাই খেতে চাচ্ছে না।
ছিকু মাহিদের দিকে তাকালো। বলল
‘ মিহি ছিকুর আপিল খিয়েছে কেন? ছিকুর লালা খেয়েছে কেন?
মাহিদ পাউরুটিতে বাটার লাগিয়ে বলল
‘ কিহ?
ছিকু বলল
‘ মিহি ছিকুর কামড়ে দেওয়া আপিল খিয়েছে কেন? মুজা মুজা করে খিয়েছে কেন? ছিকুর লালা খেয়েছে কেন?
মাহিদ ইয়াক বলে উঠলো। বলল
‘ কিহ?
বিছানায় ওই আপেলের টুকরাগুলো তোর গালের? আমাকে খাওয়াইছিলি?
ছিকু মাথা নাড়লো। হাসলো দাঁত দেখিয়ে। মাহিদ ইয়াক ইয়াক করতে লাগলো। পিহুকে হাসতে দেখে রাগ আর ও তরতরিয়ে বাড়তে লাগলো৷ সবার সাথে সাথে রিপ ও আমচকা হেসে উঠলো। পিহু মিটমিট করে হেসে ছিকুকে ইশারায় বলল
‘ ওহ মাই কলিজা। একদম ভালো কাজ হয়েছে । ভাগিনার লালা খাওয়া মামা মাহিদ খান।
মাহিদ আর খেল না। ছিকু খিকখিক করে হাসতে লাগলো পেট চেপে ধরে।
রিক বলল
‘ ভাইয়া আপনি আজ মিহির কাছে যাইয়েন না। খুব মারবে মিহি আপনাকে। খুব রেগে আছে।
ছিকু কোমরে হাত দিয়ে বলল
‘ কেন মারবে কেন?
______
পরী আর ছিকু থেকে গেল। পিহু দশটার দিকে মেডিক্যাল গেল। রিক অফিসের উদ্দেশ্য বেরোচ্ছিল। পিহু ও তার সাথে বেরিয়েছে। হসপিটাল থেকে বেরোতেই তন্মধ্যে নিনিতের সাথে দেখা। নিনিত বলল
‘ আরিশা নিশিতা তোমাকে ফোন করেনি?
পিহু বলল
‘ না স্যার। কেন? কোনো সমস্যা?
‘ আজকে ইমার্জেন্সি কিছু আছে?
‘ না। আমি তো এমনিতেই এসেছি।
‘ তাহলে বাসায় চলো।
‘ বাসায় কেন?
পিহু বোকা চোখে চাইলো। নিনিত বলল
‘ নিশি বলবে তোমাকে। চলো।
পিহু আর কথা বাড়ালো না। নিনিত রিকশা ডাকলো। পথে মাহিদকে দেখে রিকশা থামালো। মাহিদকে ডাকলো। মাহিদ কাছে এলনা। দূরে দাঁড়িয়ে বলল
‘ কি?
‘ বাসায় আসবি আজ? আয় না।
‘ সময় হলে।
‘ চেষ্টা করিস দোস্ত। ফোনে জানাস।
পিহু চুপচাপ বসে রইলো। মাহিদের দিকে একবারের জন্যও তাকালো না। পিহুকে দেখে নিশিতা দৌড়ে এল। টেনে তার ঘরে নিয়ে গিয়ে ঝাপটে জড়িয়ে ধরে উত্তেজিত হয়ে বলল
‘ বান্ধবী আমার বিয়ে তো ঠিক হইয়া গেছে রে। এইবার আমি বউ সাজবো। আহা কি আনন্দ আকাশে বাতাসে।
পিহু অবাকসুরে জিজ্ঞেস করলো
‘ বিয়ে? জিয়াদ ভাইয়ের সাথে?
‘ তো কার সাথে?
‘ ওহ।
পিহুর আচমকা মন খারাপ হয়ে গেল।
নিশিতা বলল,
‘তুই মন খারাপ করলি কেন? বিয়ে তো আমার। ওহ বুঝেছি আমার পরেই তো তোর বিয়ে। তাই মন খারাপ? আরেহ চিল ইয়ার। আমার মা বাবার মতো শ্বশুর শ্বাশুড়ি তুই আর কোথাও পাবি না৷ এইটা তোর বাড়ি।
‘ ভুল কথা। মেয়েদের নিজের কোনো বাড়ি হয় না। বাপের বাড়ি আর শ্বশুর বাড়ি হয়৷
‘ তুই এত বিজ্ঞদের মতো কথা বলছিস কেন রে? ধুর বাদ দে এসব। আমি তো খুব খুশি হয়েছি তোকে দেখে। কিছুক্ষণের মধ্যে মেহমান চলে আসবে। চল মায়ের কাছে।
পিহুকে নিয়ে রান্নাঘরের দিকে ছুটলো নিশিতা। পথেই নিনিতের মুখোমুখি দুজন। নিনিত বলল
‘ এভাবে দৌড়াচ্ছিস কেন? হোঁচট খেয়ে পড়লে কি হবে?
নিশিতা হেসে বলল
‘ আমি নাকি ও?
পিহু তার হাতে চিমটি দিল৷ বলল
‘ চুপ।
নিনিত বোনের দিকে একপলক তাকিয়ে মাথা দুলিয়ে চলে গেল। নিনিতের মা বাবার সাথে দেখা করলো পিহু। তারা তো মহাখুশি পিহুকে পেয়ে। আজ একসাথে মেয়ে জামাই আর ছেলে বউকে বসিয়ে খাওয়াবে। বিয়ের আগের স্মৃতি হিসেবে রাখবেন। বউ আদর, জামাই আদর। পিহু অনেকবার এসেছে এই বাড়িতে। কিন্তু আজকের মতো অস্বস্তি কোনোদিন হয়নি। আড়ষ্টতা ঘিরে ধরেছে তাকে। বারোটার দিকে মেহমান এল। মেহমানদের সাথে পিহুর আলাপ করিয়ে দিলেন নিনিতের মা বাবারা। জিয়াদের পুরো পরিবার এসেছেন। ছেলের পছন্দই তাদের পছন্দ। নিশিতা ও মহাখুশি। হাসি তার ঠোঁট থেকে সরছেই৷ পিহু দেখে আর ভাবে এই মানুষগুলো সবচাইতে সুখী।
জিয়াদকে পিহু কথার এক ফাঁকে বলল
‘ লাকি ম্যান ভাইয়া।
জিয়াদ হেসে বলল
‘ তুমি ও কম লাকি নও কিন্তু। ডক্টর সাহেব খুব ভালো এন্ড হ্যান্ডসাম পারসন।
পিহু একটুখানি হাসলো। আসলেই সে লাকি। না চাইতে ও নিনিত স্যারের মতো মানুষের সাথে জড়িয়ে যাচ্ছে সে। স্যার তার চাইতে ও ভালো কাউকে ডিজার্ভ করে। সে ভালো না। সুন্দর না। কালো।
______
পিহুকে সন্ধ্যা অব্দি থেকে যেতে হলো। নিকিতা বেগম ছাড়ছেন না। রাতটা ও থেকে যেতে বলছেন। এই মেয়েটাকে তার ভীষণ ভালো লাগতো। সেই তখন থেকেই যখন থেকেই নিশিতার সাথে পিহুর পরিচয়। ছোট থেকেই তিনি পিহুকে দেখে আসছেন। স্বভাবপ শান্ত শিষ্ট, ভদ্র একটা মেয়ে। বরাবরই এরকম একটা মেয়েকে ছেলের বউ হিসেবে কল্পনায় এঁকেছেন তিনি। কেমনে যে মিলে গেল! তবে আজ এই মেয়েটির মনের কথাটা জানতে বড্ড ইচ্ছে হলো। তাই তো প্রশ্ন করে বসলো
‘ আমার নিনিতকে তোমার পছন্দ তো পিহু? স্যার হিসেবে নয়, মানুষ হিসেবে ও নয়। তোমার চোখে লাইফ পার্টনার হিসেবে । তোমার মতামত জানাটা আমাদের জন্য ও জরুরি।
পিহু চোখ তুলে আলাভোলা চেহারায় চেয়ে থাকলো৷ কি উত্তর দেবে সে এখন? পিহুর কোনো সাড়াশব্দ না পেয়ে নিকিতা বেগম বলল
‘ কি হলো?
পিহু আমতাআমতা করতে করতে বলল
‘ হ্যা পছন্দ। উনি পছন্দ হওয়ার মতোই একজন মানুষ।
_________
রাতে পিহুকে আর রাখা গেল না। সে চলে যাবে। নিনিত ও বলল থেকে যেতে। পিহু বলল অন্যদিন থাকবে। নিকিতা বেগম ছিকুর জন্য দুটো কেকের বক্স দিয়ে বলল এগুলো পাকা বুড়োটার জন্য। ওকে দেবে। বাচ্চা মানুষ। হাতের দিকে তাকিয়ে থাকো কেউ বাইরে থেকে গেলে। পিহু হেসে ফেলল।
নিনিত রিকশা ডাকলো। দুজনই উঠে পড়লো। রাস্তাটা ঝলমলে। আকাশে চাঁদটি। সড়কবাতির আলো দরকার নেই আজ। রিকশা ভালো লাগছে পিহুর। তবে খারাপ ও লাগছে অকারণে। অস্থির লাগছে কেমন জানি। পাশে বসা মানুষটার জন্য বোধহয়। নিনিত নীরবতা কাটিয়ে প্রশ্ন করলো, এইবার পরীক্ষা কেমন হলো? প্রশ্ন সহজ লেগেছে আমার।
‘ ভালো। কিন্তু কমিউনিটি মেডিসিনে আমার তেমন একটা ভালো হয়নি।
‘ সমস্যা নেই। ফোর্থ ইয়ারে ভালো করবে। প্যাথলজি,মাইক্রোবায়োলজি,ফার্মাকোলজি এই তিনটা ফোর্থ ইয়ারের। আমি জানি তুমি ভালো করবে।
‘ এত কনফিডেন্স নিয়ে কি করে বললেন?
‘ আমার আপনার উপরে বিশ্বাস আছে ম্যাডাম।
কথাটাই কেমন যেন লাগলো পিহুর। উফফ কেন যে এই মানুষটার জীবনে সে এল? আর ও ভালো কেউ আসতে পারতো।
হসপিটাল থেকে কিছুটা দূরে রাস্তার পাশে মাহিদকে দেখা গেল লাবীব আর তপুর সাথে। নিনিত রিকশা থেকে নামলো। রিকশাওয়ালা বলল সাহেব বেশিক্ষণ দাঁড়াইতে পারুম না। আমার পোলাডা অসুস্থ। ঔষধ নিয়া যাইতো হইবো।
নিনিত ওয়ালেট থেকে টাকা বের করে ভাড়া মিটালো। পিহুকে বলল
‘ আমরা অন্য রিকশা নেব। একটু আমার সাথে আসো। মাহিদকে দেখলাম৷
নিনিতের পিছুপিছু পিহু হেঁটে গেল। নিনিতকে ঘাড় ঘুরিয়ে তাকালো সবাই। তপু বলল
‘ নিনিত যে! নিশুর নাকি বিয়ে ঠিক হয়েছে?
‘ তো? তোদের কেন যেতে বললাম আজকে? মাহিদ যাসনি কেন? এই মাহিদ?
মাহিদ কিছু বলতেই যাচ্ছিল। লাবীব পিহুকে বলল
‘ আরেহ পিহু তুমি তো আমাদের ভাবি হয়ে যাবে আর ক’দিন পরে। এখন তো আর নাম ধরে ডাকা যাবে না।
পিহু একটুখানি সৌজন্যেতামূলক হাসলো। মাহিদ বলল
‘ একেবারে তোর বিয়ের পাকা কথার সময় যাব। চিল চিল।
নিনিত তার পিঠ চাপড়ে দিয়ে বলল
‘ তার আগে নিশুর বিয়ে। তখন যাবি না?
‘ যাব যাব।
‘ তুই কি বাড়ি যাচ্ছিস নাকি?
‘ হ্যা।
‘ ওহ তাহলে তো আরিশাকে ও সাথে নিয়ে যেতে পারিস। ও নাকি তোদের বাসায় যাবে। রাহি আর ওর মা নাকি ওখানে?
‘ হুহ।
‘ তাহলে রিকশা ডেকে আনি। আমি গেলে আন্টিদের আবার ঝামেলা বাড়বে । ওনারা ছাড়বেন না কিছু না খাইয়ে। তার চাইতে বরং তুই সহ চলে যাহ।
মাহিদ আর কিছু বলল না। নিনিত পিহুকে বলল
‘ আরিশা ঠিক আছে? তোমার মাহিদ ভাইয়ের সাথে চলে যাও তাহলে?
পিহু মাথা নাড়ালো। রিকশা এল। পিহু উঠে বসলো। নিনিত বলল
‘ মাহিদ উঠে পড়।
মাহিদ চুপচাপ উঠে পড়লো। রিকশা চলতে শুরু করলো। পিহু নড়েচড়ে বসলো একটু। কথা বললো না। রিকশা কিছুদূর যেতেই মাহিদ নিজ থেকেই বলল
‘ নিশুর বিয়ে কখন?
‘ এই মাসের শেষের দিকে।
‘ ওহ। তাইলে তার পরের মাসে তোর বিয়ে। শালী আমার হাতে এখন টাকা পয়সা নাই বাপ। আমি বিয়ার গিফট দিমু কি করে তোদের দুই বান্ধবীদের?
‘ তোমার গিফট না পেলে বিয়ে আটকে থাকবে না মাহিদ ভাই।
মাহিদ চিন্তিত হয়ে বলল
‘ সেটা ঠিক। কিন্তু আমার বিয়ের সময় তোর গিফট আমার চাই। না দিলে বিয়া করতাম না।
‘ কি বলো? গিফট! তোমাকে কি গিফট দেওয়া যায় বলোতো?
‘ তোর যা আছে সব দিয়া দিবি। দরকার পড়লে তোরে দিয়া দিবি।
চলবে,