#মন_গোপনের_কথা
#পর্ব_১৮
লেখনীতে, পুষ্পিতা প্রিমা
নিশিতার সাজগোছ শেষ। তার কোলের উপর ছিকু বসে আছে। সে সন্দেশ খাচ্ছে। দু হাতে দু পিস সন্দেশ। খেতে খেতে নিশিতার দিকে চোখ তুলে চাইলো। নিশিতা তার গালে টাপুস করে আদর দিয়ে বলল
‘ কি দেখে রাহিয়ান সাহেব?
‘ বুউ দিখি। নিচি বুউ কেন?
নিশিতা হাসলো। বলল
‘ নিচি বউ কেন এটা ও বলতে হবে?
‘ বলবে না কেন?
নিশিতা আবার ও হাসলো। ছিকু তার দিকে সন্দেশ বাড়িয়ে দিয়ে বলল
” সন্দেচ খাওনা কেন?
নিশিতা একটুখানি খেল। বলল
‘ ইয়াম্মি।
ছিকু কপাল কুঁচকে বলল,
‘ মুজা মুজা বলোনা কেন?
নিশিতা হেসে চেয়ারে বসে থাকা পিহুর দিকে তাকালো। মনমরা হয়ে বসে রয়েছে পিহু । নিশিতা বলল
‘ ওই তোর আবার কি হলো? মুখটা বাংলা পাঁচের মতো করে রেখেছিস কেন?
মাইশা চোখ তুলে তাকালো। পিহু চমকালো। বলল
‘ হ্যা?
নিশিতা বলল
‘ মন খারাপ কেন?
পিহু অপ্রস্তুত হাসার চেষ্টা করলো। বলল
‘ নাহ এমনি। তুই চলে যাচ্ছিস তাই খারাপ লাগছে।
‘ বাকিরা তো আছে। মিমি, ঝুমা। আরেহ চিন্তা নাই দোস্ত আমরা তো হসপিটালের পেছনে বাসা নেব। ওখানে থাকবো। রোজ দেখা হবে ইয়ার।
‘ তারপরও।
ছিকু ড্যাবড্যাব চোখে তাকালো পিহুর দিকে। নিশিতার কোল থেকে নেমে পিহুর কাছে গেল। পিহুর তার দিকে চোখ নিচে নামিয়ে তাকালো। বলল
‘ আব্বা কি দেখে ?
‘ পিহুর মন খারাপ কেন?
পিহু হাসলো। মুখ নিচে নামিয়ে ছিকুর গালে আদর দিয়ে বলল
‘ এই তো হাসলাম।
ছিকু সন্দেশ বাড়িয়ে দিল। পিহু একটুখানি খেয়ে বলল
‘ খুব মজা।
ছিকু দু’পাশে মাথা দুলিয়ে বলল
‘ মুজা মুজা।
রেহান আর পরী আসলো তখন। নিশিতা দাঁড়িয়ে পড়লো। পরী বলল, বসো বসো। রাহি কোথায়?
ছিকু গোলগাল চোখ করে তাকালো। রেহান হাত বাড়িয়ে দিয়ে বলল
‘ কাম কাম।
ছিকু দৌড়ে গেল। রেহান তাকে কোলে তুলে গালে ঠোঁট চেপে বলল
‘ আপনি আন্টিদের সাথে কি করছেন পাপা ?
‘ নিচি, পিহু, মাইচা আন্তি কেন?
সবাই হেসে উঠলো একসাথে। রেহান হেসে বলল
‘ সবাইকে নাম ধরে ডাকে এই ছেলে। নাম ধরে ডাকা ভালো না তো।
‘ কেন ভালু না কেন?
বলেই আবার সন্দেশ খেল ছিকু। পরী বলল
‘ সারাক্ষণ মিষ্টি খাচ্ছে। পেট ব্যাথা করলে আমি নেই।
‘ কেন পরী নেই কেন?
সবাই আরেকদফা হাসলো। নিশিতা বলল
‘ উফ এই গুলুমুলুটাকে কি করতে যে ইচ্ছে করে!
রেহান বলল
‘ তোমরা সবাই মিলে আমার ছেলের সাথে এমন করলে হবে?
‘ এমন করব না মানে। আমি আপনার ছেলেকে মেয়ে জামাই বানাবো। হু।
নিশিতা কথায় সবাই হাসলো। ছিকু বলল
‘ কেন মিয়ে জামাই বানিবে কেন?
‘ বানাবো না? এত সুন্দর কিউট একটা ছেড়া আপনে। নো নো আমি এই সুযোগ হাতছাড়া করব না রেহান ভাইয়া। খবরদার আমার মেয়ে জামাইকে অন্য কারো হাতে তুলে দেবেন না।
পিহু বলল
‘ আল্লাহ! আমার কলিজার বউ? কলিজা জামাই হবে? না না আমার কলিজা ছোটই থাক। বড় হওয়া লাগবেনা। বড় হয়ে গেলে আমি আদর দেব কাকে?
ছিকু কি বুঝলো কে জানে? খিকখিক করে হাসলো দাঁত দেখিয়ে। পরী বলল
‘ ওমা? আপনি হাসছেন কেন? কাতুকুতু কে দিল?
‘ ভূতে কুতুকুতু দিচে কেন?
আরেকদফা হাসির ফোয়ারা বয়ে গেল সেখানে।
__________
অনেক মানুষের সমাগম পুরো বাড়িটাতে। নীরা মাহিদকে খুঁজে পাচ্ছে না। কি খেয়ে দেয়েছে কে জানে? দেখা ও দেয় না।
হাঁটতে নিশিতার ঘরে বেয়ে যেতেই পাশের একটা ঘরে দেখলো নিনিত তার মামিদের সাথে কথা বলছে। মাঝেমধ্যে সেখানে হাসাহাসি ও হচ্ছে। নীরা উঁকি দিল। দেখলো সেখানে পিহু ও আছে। হয়ত মামিদের সাথে পিহুর পরিচয় করিয়ে দিচ্ছে নিনিত। নীরাকে উঁকি দিতে দেখলো নিনিত। বলল
‘ আরেহ আন্টি ভেতরে আসুন না। আসুন।
নীরা অপ্রস্তুত হাসলো। বলল
‘ মাহিটা যে কোথায়? তাকে একবারও দেখতে পেলাম না আব্বা। তুমি দেখছ?
‘ হ্যা। আমি তো কিছুক্ষণ আগেই এলাম। বাইরে স্টেজ সাজাচ্ছে ওরা সবাই মিলে। আমরা সবাই মিলে কিছুক্ষণ আগেই খাওয়াদাওয়া করেছি। চিন্তা নেই।
নীরা স্বস্তি পেল। বলল
‘ আচ্ছা আচ্ছা। পিহু কি করে এখানে?
পিহু তাকালো। কিছু বলতে যাওয়ার আগেই নিনিত বলল
‘ মামিরা ওকে দেখতে চেয়েছিল তাই নিয়ে এলাম। পিহুকে দরকার?
নীরা বলল
‘ না না। থাক। কথা বলুক। আমি আসি। হ্যা?
‘ আচ্ছা।
নীরা চলে গেল। নিনিত বলল
‘ আরিশা তুমি থাকো। কথাবার্তা বলো। আমি আসছি। দেখে আসি কাজ কতটুকু গড়ালো। শেষের দিকে সব।
পিহু মাথা নাড়ালো। নিনিত যেতেই নিনিতের মামি পিহুর থুঁতনি তুলে ধরে বলল
‘ ওই পুঁই কালারের শাড়ি পড়া মহিলাটি কি তোমার মা?
‘ জ্বি।
‘ ওহ। আমাদের সাথে কথা বললো তো। মা মেয়ের চেহারার মিল আছে। ওই ছোট বাচ্চার মা এটা তোমার আপু?
‘ হ্যা আমার বড় বোন। আর ওনার পাশেরটা তার বর। আমার দাভাই।
‘ ওহ আচ্ছা। এখন যে এল উনি তোমার মামি না?
‘ জ্বি। একটা কথা বলি? কিছু মনে করোনা কেমন?
‘ বলুন না। তোমার আপু তোমার বড় মামিকে মা ডাকে কেন?
পিহু একটু ভড়কে গেল। একদৃষ্টে চেয়ে থেকে কিছু ভাবলো কিছুক্ষণ। তারপর বলল
‘ আমার আপু ওখানে বড় হয়েছে। তাই মা ডাকে। আর বড় মামাকে বাবা ডাকে।
‘ ওহহ।
‘ অনেক হাসিখুশি সুন্দর পরিবার তোমাদের। আজকাল অমন দেখা যায় না। তুমি ও অনেক আদুরে একটা মেয়ে। আমার ননদ একদম পারফেক্ট ছেলের বউ পছন্দ করেছে। আমরা খুব খুশি হয়েছি। যাক তোমার বাবা ও ডাক্তার, জামাই ও ডাক্তার। তুমি ও ডাক্তার। সব মিলে ছক্কা।
পিহু একটু মলিন হাসলো। বলল
‘ আচ্ছা আপনারা বসুন। আমি নিশুর কাছে যাই। ওকে এখন বের করবে বোধহয়।
‘ আচ্ছা যাও।
পিহু বেরিয়ে এল। বুকটা ভীষণ রকম ভার হয়ে আছে। অবর্ণনীয় যন্ত্রণাগুলো গলায় কাঁটার মতো বিঁধছে। এই যন্ত্রণা থেকে কবে মুক্তি মিলবে তার? কেন জেনেশুনে এক ভয়ানক বিষমানবকে ভালোবাসতে গেল সে? না ভুলে থাকা যায়, না ঘৃণা করা যায়।
মাঝেমাঝে মনে হয় তাকে খুব ভালোবাসে মাহিদ ভাই, আবার মাঝেমাঝে মনে হয় পিহু ভালোবাসা পাওয়ার মতো কেউ না। দুটো চোখে অতরকম ভাষা কি করে হতে পারে? বোধহয় সব পিহুরই ভুল। তবে কি তার মাহিদ ভাইকে ভালোবাসাটা ভুল? তার ডাক্তারকেই ভালোবাসা উচিত ছিল বোধহয়। অন্তত দিনশেষ এত দীর্ঘশ্বাস বেরিয়ে আসতো না। ভালোবাসা শব্দটা এত তিক্ত হয়ে উঠতো না। রোজ রোজ এভাবে দুমড়েমুচড়ে মরতে হতো না। জেনেশুনে বিষ পান বোধহয় একেই বলে।
প্রসাধনীর প্রলেপের উপর কয়েকটা জল জমে গেছে ইতোমধ্যে। কে যেন পিহুর হাত ধরে ডাকা শুরু করলো। পিহু চমকে উঠলো।
‘ কে?
‘ আমি। মাইশা। তুমি এখানে দাঁড়িয়ে আছ কেন? সবাই খুঁজছে তোমাকে। চলো।
পিহু তাকিয়ে থাকলো মাইশার দিকে। আশ্চর্য একটা কথা তো তার মাথায় আসেনি। মাহিদ ভাই বিষমানব সবার ক্ষেত্রে নয়। এই মেয়েটার ক্ষেত্রে একদমই নয় ৷ এই মেয়োটার সাথে সবসময় ঝগড়া হয় না। কথা কাটাকাটি লাগেনা। মনোমালিন্য হয় না। তাহলে সব তার সাথে কেন হয়?
‘ কি দেখছ?
‘ হ্যা?
‘ ওভাবে কি দেখছ?
পিহু তোতলালো। বলল
‘ কই না তো। চলুন।
পিহু হেঁটে গেল। মাইশা তার চলে যাওয়া দেখলো। তারপর নিজেও সেদিকে পা বাড়ালো।
____________
স্টেজ সাজানোর কাজ শেষ। নিশিতাকে নিয়ে যাওয়ার জন্য তৈরি করতে বলা হয়েছে। পিহু নানারকম আইটেম গুলোর ঢালা চেক করে নিয়ে সবার হাতে এক একটা ঢালা দিল। ছিকু দৌড়ে দৌড়ে আসলো। পিহুর কাছে এসে থামলো। কোমরে হাত রেখে দাঁড়ালো। পড়নে তার লাল সাদা ডোরাকাটা টি শার্ট। কালো থ্রি কোয়াটার প্যান্ট। পড়নে সাদা কালো কেডস৷ পিহু ডাকল
‘ কলিজা?
‘ উম।
‘ কি চাই আপনার।
‘ ইটা।
ঢালার দিকে আঙুল দেখিয়ে দিল সে। পিহু হেসে বলল ঢালা নিবেন?
‘ হ্যা নিব না কেন?
পিহু তাকে একটি ফুলের হালকা ভারের ঢালা দিল। ছিকু সেটি নিল। বলল
‘ মিচতি দাও না কেন?
পিহু হেসে ফেলল। বলল
‘ মিষ্টির ঢালা তো অনেক ভার কলিজা। আপনি ক্যারি করতে পারবেন না।
‘ কেন পারব না কেন?
পিহু হাসলো। মাইশা একটি ঢালা তিনটা মিষ্টি রেখে ঢালাটি ছিকুকে দিল। বলল
‘ আপনি এইবার নিতে পারবেন বাবু।
ছিকু খুশি হলো। ঢালাটি নিয়ে মাইশাকে বলল
‘ মিচতি কম কেন? বিশিবিশি নাই কেন?
মাইশা কপাল চাপড়ে বলল
‘ হায় আল্লাহ এই ছেলে তো একদম পেকে গেছে পিহু।
পিহু হাসলো। ছিকুর ঢালায় আরেকটি মিষ্টি দিয়ে বলল
‘ এখন বিশিবিশি হয়েছে আব্বা৷
ছিকু দাঁত দেখিয়ে হাসলো পিহু তার মাথায় মুখে হাত বুলিয়ে আদর করে বলল
‘ চলেন।
ছিকু পিহুর সাথে সাথে হাঁটলো। ইশা মুনা নীরা তাকে দেখে হাসলো। পরী রেহানকে বলল
‘ দেখেছেন ছেলের কান্ড? সবার সাথে সাথে তার ও তাল মিলাতে হবে।
‘ পিহু যা করবে। ওর ও তা করতেই হবে।
নিচে যাওয়ার সাথে সাথে কোথা থেকে মাহিদ এসে পেছন থেকে ছিকুকে কোলে তুলে নিল পিহুর পাশ থেকে। ছিকুর হাতে তখনও ঢালাটি ধরা। সে রেগে গেল। বলল
‘ মিহি এখুন কুলে নিচে কেন? মিচতি পড়ি যাবে কেন?
মাহিদ তার গালে টাপুসটুপুস আদর বসিয়ে বলল
‘ শালা মিষ্টি দে। মিষ্টি খামু।
বলেই একটি মিষ্টি খপ করে গালে ভেতর পাচার করে দিল। ছিকু চেঁচিয়ে উঠে বলল
‘ মিহি মিচতি খায় ফিলছে কেন?
মাহিদ তার গালে মিষ্টির অর্ধেক ঢুকিয়ে দিল। ছিকু আর কথা বলতো পারলো না। মাহিদের দিকে তাকিয়ে থাকলো। মাহিদ হাসলো। ছিকু আর না পেরে হেসে দিল। মিষ্টি খেতে খেতে কি কি সব বলতে লাগলো অস্পষ্ট ভাবে। মাইশাকে দেখে বলল
‘ আপনাকে তো দেখাটেকা যাচ্ছে না। কি অবস্থা?
‘ আমি তো এখানেই আছি। আপনাকেই তো দেখা যাচ্ছে না। আন্টি ও খুঁজছিল আপনাকে।
‘ আমি ওখানেই ছিলাম। স্টেজ সাজাচ্ছিলাম। ঠিক আছে। এনজয় করুন। আমি ছিকুকে নিয়ে যাই।
বলেই মাহিদ ছিকুকে নিয়ে চলে গেল। ছিকু যেতে যেতে বলল
‘ মিহি পিহুর সাথে কথা বলেনা কেন?
মাহিদ তার গাল নিজের গাল দিয়ে চেপে ধরে বলল
‘ চুপ থাক বাপ।
‘ কেন চুপ থাকবো কেন?
মাহিদ তাকে নিয়ে গিয়ে স্টেজে বসিয়ে দিল। নিশিতাকে ও সেখানে বসানো হলো। নিশিতা তাকে একহাত দিয়ে ধরে রেখে বলল
‘ রাহি সাহেব কি কি খাবেন?
ছিকু কেক দেখিয়ে বলল
‘ ওটা খাব।
নিশিতা কেক কেটে তাকে খাইয়ে দিল সবার প্রথমে। ছিকুকে দিয়ে শুরু হলো অনুষ্ঠান। পিহু এসে ছিকুর পাশে বসলো। আরেকটা কেক কেটে ছিকুর হাতে ধরিয়ে দিয়ে বলল
‘ নিচিকে খাইয়ে দেন।
ছিকু সেটা নিয়ে নিশিতাকে খাইয়ে দিল। নিশিতা তার ছোট আঙুলগুলো কামড়ে ধরলো। ছিকু চেঁচিয়ে বলল
‘ ও বাপ নিচি ইমুন করে কেন? কামুড় দেয় কেন? নিচি রাক্ষুচী কেন?
স্টেজের নিচে অবস্থান করা সবাই হেসে ফেলল।
নিশিতা পিহুকে ও বসিয়ে রাখলো তার পাশে। তারপর নিনিতকে ডেকে বলল
‘ ভাইয়া তাড়াতাড়ি আসো।
নিনিত বলল
‘ এখন না। কাজ আছে আমার।
বলেই চলে যেতে যাচ্ছিল। নিশিতা বলল
‘ ধুর তাড়াতাড়ি আসো না। আসো আসো। আসো না?
নিনিত আর না পেরে গেল। নিশিতা তাকে পাশে বসিয়ে বলল, হেই ক্যামেরাম্যান! মাহিদ ভাই, তপু ভাই, ছবি তুলো ভালো করে। মাহিদ ঘাড় ঘুরিয়ে তাকালো না। তপুকে বলল
‘ ছবি তুলে নে তো।
নীরা তাকে ছুটে এল। বলল
‘ কোথায় ছিলি আব্বা? তোকে আমি খুঁজছিলাম। কি খেয়েছিস?
‘ ওসব নিয়ে চিন্তা করতে হবে না।
নীরা হেসে তার মাথায় হাত বুলিয়ে দিল। বলল
‘ ওই দেখ পিহু আর নিনিত। কি সুন্দর লাগতেছে দুইজনকে।
মাহিদ তাকালো না।
‘ তুই আর মাইশা ও ছবি তোল। দাঁড়া আমি মাইশাকে ডাকি। দাঁড়া।
মাহিদ চুপ করে থাকলো। নীরা গিয়ে মাইশাকে ধরে আনলো কিন্তু মাহিদকে সেখানে আর নেই। তাকে আর খুঁজে পাওয়া গেল না।
নীরা তপুকে বলল
‘ মাহি কোথায় গেল রে তপু?
তপু বলল
‘ এখানেই তো ছিল আন্টি। তোমার ছেলেটা ভূতের মতো। এই আছে এই নেই।
নীরা চিন্তিত হলো। ইশা এসে বলল
‘ কি হয়েছে রে নীরু?
‘ মাহিটা হুট করে কোথায় যেন চলে গেল ইশু। মাইশার সাথে কয়েকটা ছবি নিতে বলছিলাম।
‘ মাহি বোধহয় লজ্জা পাইছে। তোর ছেলেটাকে বুঝা যায় না।
‘ একদম বাপের মতো।
ইশা হাসলো। বলল
‘ কপাল করে এমন মানুষ পেয়েছিস।
নীরা বলল
‘ ঠিক ঠিক।
বলেই দুজনেই হেসে উঠলো একসাথে।
______________
পিহু স্টেজ থেকে নেমে ছিকুকে খুঁজছে। কিন্তু পাচ্ছে না। পরীর কাছে গেল। পরী বলল
‘ রাহি তো আমার কাছেও আসেনি। তোমার দাভাইয়ের কাছে ও নেই।
রেহান বলল
‘ চিন্তা নেই। ও মাহিদের কাছে। ফোন দিয়ে জেনে নাও।
পরী সাথে সাথে ফোন দিল। ওপাশ থেকে মাহিদ বলল ছিকু তার সাথে আছে। রেহান বলল, দেখেছ? আমি ঠিক বলিনি।
পরী হাসলো। পিহুকে বলল
‘ ওকে ছাড়া সময় কাটেনা তোমার? বিয়ে হয়ে গেলে তখন কি করবে?
পিহু চোখ তুলে তাকালো। প্রচন্ড মন খারাপ নিয়ে বলল
‘ কেন? আমার সাথে নিয়ে যাব। ওর ভাত কি কম পড়ে যাবে?
পরী তার গাল টেনে দিয়ে বলল
‘ রাগ করছ কেন? মজা করছিলাম। আজ তোমার খুব কিউট লাগছে। তাই না?
রেহান বলল
‘ আসলেই। সেটা আমরা বললে হবে? ডাক্তার বাবু বলেছে তো?
পিহু কপাল কুঁচকে তাকালো। ধ্যাত বলে চলে গেল সেখান থেকে। রেহান বলল
‘ এই কি হলো? পিহু?
পরী বলল
‘ লজ্জা পেয়েছে। আপনি না ভাই? ওভাবে বললেন কেন?
‘ আমাকে লজ্জা পাওয়ার কি আছে?
_____________
অনেক রাত হয়েছে। অনুষ্ঠান মাঝপথে। কিছুক্ষণ পর থেকে নিশিতাকে মেহেদী লাগানো হবে। মাহিদ ছিকুকে নিয়ে আসলো। এসেই চেপে বসলো নিশিতার পাশে। মাথা চাপড়ে দিয়ে বলল
‘ কেক আর কাউরে দিতাম না বাপ। সব আমি আর আমার ভাগিনা মিলে খামু। তোরা অনেক খাইছোস।
নিশিতা মাথার পেছনে চেপে ধরে বলল
‘ আল্লায় জানে পিহুনি তোমার মাইর কেমনে খায় এত? একটাতে আমি বেহুশ। লাগছে মাহিদ ভাই।
‘ ঢং করিস না বাপ। তাড়াতাড়ি কেক কাট।
‘ দাঁড়াও আমি কাউরে ডাকি। মাইশাকে ডাকি?
‘ নাহ।
ছিকু এত কথাটথার মুডে নেই। সে কেক খাবে। ডান হাত কেকের উপর বসিয়ে একমুঠ নিয়ে ফেলল। তারপর গালে দিল। গালের সাথে লেগে গেল সব কেক। সবাই হো হো করে হেসে উঠলো। ছিকু কেক খেতে খেতে সবার দিকে বোকাসোকা চোখে তাকালো। বলল
‘ চবাই হাচে কেন? ছিকুর নজ্জা করে কেন?
বলেই হাত দিয়ে মুখ ঢাকলো সে। ডান হাতের সব কেক মুখে লেগে গেল। নিশিতা আর ও কিছু নিয়ে ছিকুর সারামুখে লাগিয়ে দিল। ছিকু কান্না করে দিবে এমন অবস্থা। মাহিদ কেক কেটে নিজে নিজে খেয়ে নিল। নিশিতাকে বলল
‘ তুই অনেক খাইছোস। এবার রেস্ট নে শালী।
খেয়ে আরেকটু কেটে সেটি হাতে নিয়ে নিশিতার গালের একপাশে লাগিয়ে দিল মাহিদ। নিশিতা চেঁচিয়ে উঠে বলল
‘ ইননা খেলব না আমি। এটা কি হলো? মাহিদ ভাই এটা কি করলে?
নাকিসুরে কাঁদতে লাগলো নিশিতা। তারপর সুযোগ বুঝে কেক নিয়ে মাহিদের দুগালে বসিয়ে ঘষে দিল নাকেমুখে। মাহিদ শেষ। ছিকু খুশিতে লাফ দিয়ে উঠলো। মাহিদের কোলে উঠে বসলো। নিজের মুখ মাহিদের মুখের সাথে ঘষা মেরে বলল
‘ মিহি ছিকুর সাথে ভূত হয়ে গেছে কেন? কেন বাপ কেন?
নিশিতা হাসলো। আরেক পিস কেক নিয়ে ছিকুকে দিল। ছিকু সেটি একটু করে খেয়ে দুহাতে মেখে নিল। সুন্দর করে মাহিদের মুখে প্রলেপ দিতে দিতে বলল
‘ মিহি ভূত কেন ? ছিকুর মুতো ভূত কেন? মিহিকে ভয় লাগে কেন?
মাহিদ সর্বশেষে বলল
‘ তোর কাম শেষ হয়ছে শালা?
নিনিত এসে এসব দেখে বলল, হায় হায় এসব কি?
নিশিতা টিস্যু দিয়ে গালের এক পাশটা মুছতে মুছতে বলল
‘ মাহিদ ভাই আর কি।
ছিকু মাহিদকে ভূত বানিয়ে দিল। অন্যদিকে নাচগান হচ্ছে। নিশিতার ছোট ছোট মামাতো বোনগুলো নাচছে। ছিকু সেখানে চলে গেল দৌড়ে দৌড়ে। তাদের মাঝখানে ঢুকে পড়ে নাচতে লাগলো হাত তুলে পা তুলে।
‘ অ্যারে দেদে দে দে দে দে ইয়া হাম তুচচে লে লে।
চিটি মার চিটি মার চিটি মার চিটি মার চিটি মার।
পরী তাকে ডাক দিয়ে বলল
‘ সোনা পড়ে যাবে। চলে এসো।
ছিকু চেঁচিয়ে চেঁচিয়ে বলল
‘ মার চিটি, মার চিটি, মার চিটি, মার চিটি মার।
পরীর সাথে সাথে সবাই হেসে উঠলো।
মুখের কেক ধোয়ার জন্য ওয়াশরুমের দিকে পা বাড়ালো মাহিদ। নিকিতা বেগমের সাথে দেখা পথে। তিনি বললেন
‘ তোর একি অবস্থা রে মাহিদ?
‘ আগে মুখ ধুয়ে আসি বাপ। এখন কোনো কথা বলতে পারুম না। সরো সরো।
‘ তুই কি হলি? না পুত, না ভূত।
বলেই হাসলেন তিনি। মাহিদ ওয়াশরুমের দিকে পা বাড়ালো। সেখানে পিহুর মুখোমুখি। কপাল কুঁচকে তাকালো পিহু। যেন মাহিদের এই রূপ দেখে সে বড়োই বিরক্ত। আঁড়চোখে পরখ করে কি যেন বিড়বিড় করলো সে। এইবার মাহিদ সরু চোখে তাকালো। সমস্যা কি?
পিহু দাঁড়াতে চাইলো না আর। চলে যেতেই শাড়ির আঁচলে টান পড়লো। পেছনে না ফিরেই গর্জে বলল
‘ শাড়িটা আমার না।
মাহিদ ছেড়ে দিল সাথেসাথে। দু গালে ভালোভাবে হাত ঘষলো। তারপর নিঃশব্দে হেঁটে এসে দাঁড়ালো পিহুর পেছনে। খুব কাছটায়। হাত দুটো নিয়ে গিয়ে সোজা পিহুর গালে বসিয়ে দিল। পিহু শিউরে উঠলো।
হাত দুটোর উপর নিজের হাত বসিয়ে শক্ত করে ধরে ছুঁড়ে ফেলল।
তারপর মাহিদের দিকে গরম চোখে তাকালো। যেন এখনি সব ভস্ম করে দেবে। তবে মুখ ফুটে কথা বললো না। মাহিদ বেশিকিছু করলো না আর। শুধু এগিয়ে গিয়ে তার গাল পিহুর দু গালে লাগালো৷
পিহু শক্ত হয়ে গেল৷ পিহুকে এই অবস্থায় দেখে আকাশ বাতাস কাঁপিয়ে হেসে উঠলো মাহিদ। হাসতে হাসতে তার হাত দুটো পিহুর গাল আকঁড়ে ধরলো। পিহু বিড়বিড়িয়ে রাগে কিড়মিড় করে বলল
‘ তোমার ছায়ায় আমার অস্বস্তি। ছোঁয়াতে মরণ। আমায় ছাড়ো মাহিদ ভাই।
মাহিদ ছাড়লো না। বরঞ্চ তখনই তার ভেজা ঔষ্ঠাধরের দীর্ঘ প্রত্যক্ষ চুম্বন চেপে বসলো পিহুর ললাটের চারপাশে। আর বন্ধ চোখের পাতায়।
আর কানে আসলো, আমি রোজ মরি, এবার তুই ও মরে যাহ।
চলবে,,,,,
রিচেক করা হয়নি।