#মন_গোপনের_কথা
#পর্ব_২০
লেখনীতে, পুষ্পিতা প্রিমা
নিশিতার বিয়ের সব ঝামেলা চুকে গিয়েছে। নিশিতার শ্বশুর বাড়ি যাওয়ার কথা ছিল মাহিদের। নিনিত তাকে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব পৌঁছে যেতে বলেছে। মাহিদের সেদিন ক্রিকেট ম্যাচ ছিল। তাই সে যাইনি। যাবেনা সেটা নিনিতকে বলেনি। নিনিত সেখানে গিয়ে মাহিদের জন্য অপেক্ষা করতে লাগলো। কারণ মাহিদ বলেছে সে সোজা নিশিতার শ্বশুর বাড়ি পৌঁছে যাবে। নিনিত মাহিদকে ফোনে পেল না। শেষমেশ পিহুর কাছে গেল। পিহু জানালো তার মাহিদ ভাইয়ের সাথে ফোনে কথা হয়নি। নিনিত তাই নীরার কাছে ফোন দিল। নীরা বলল, ও তো ম্যাচ খেলতে গেছে আব্বা। তোমাকে বলে নাই।
নিনিত বলল
‘ আমাকে তো বলছিল একা একা আসবে। আমি আর জীবনে ও ওকে কোথাও যেতে বলব না।
নিনিত রেগে ফোন রেখে দিল। নীরা রিপকে সাথে সাথে ফোন দিয়ে বলল
‘ মাহি কি করেছে দেখেছেন? নিনিতকে কথা দিয়ে নিশিতার শ্বশুর বাড়ি আর যাইনি। এটা কোনো কথা? নিনিত কিভাবে রাগ করলো!
রিপ চুপচাপ শুনলো। শেষে বলল
‘ ও সন্ধ্যায় যাবে। আমাকে বলেছে। ওরা বন্ধু বন্ধু সব ম্যানেজ করে নেবে। তুমি চিন্তা করো না।
নীরা রাগে ফোঁসফোঁস করে বলল
‘ ওহ আচ্ছা। আচ্ছা। বাপ ছেলে তলে তলে ঠিক। শুধু আমিই কিছু জানিনা। আমারে তো দরকার নাই।
রিপ হাতের কলম রেখে চেয়ারে মাথা এলিয়ে দিল। বলল
‘ সামান্য ব্যাপার নিয়ে,
নীরা ফোন কেটে দিল। সে ভীষণ রেগে গেছে। রিপ পুনরায় ফোন দিল। নীরা ফোন তুললো না। পরপর সাত আটবার কল আসার পর নীরা ফোন তুলে বলল
‘ কি চাই? কি সমস্যা?
‘ আপনি কি ব্যারিস্টারের বউ বলছেন?
নীরা কিছুক্ষণ চুপ থাকলো। গালে হাত চেপে দিয়ে হাসি চেপে বলল
‘ ইননা। কোন ব্যারিস্টার? কোনো ব্যারিস্টার মিনিস্টারকে আমি চিনিনা। ফোন রাখেন। অসভ্য পুরুষ মানুষ। অন্যের বউকে ফোন দিতে লজ্জা করেনা?
ওপাশ থেকে ভরাট গলার হাসি স্পষ্ট শুনতে পেল নীরা। রাগে কিড়মিড় করে সে বলল
‘ আবার হাসেন? বেয়াদব মানুষ। আমাকে রাগিয়ে আবার হাসেন কেন?
‘ আপনি এত রাগ দেখান কেন? অন্যের জামাইয়ের সাথে এত রাগ দেখান কিভাবে?
‘ কি? অন্যের জামাই? কার জামাই? ওমা আমি আমার জামাইয়ের সাথে কথা বলছি। অন্যের জামাই হতে যাবে কেন? অন্যজনের অত স্পর্ধা হয়ছে নাকি আমার জামাই নিয়ে টানাটানি করার?
রিপ আবার হাসলো। বলল
‘ তাহলে শেষমেশ আত্মসমর্পণ!
‘ একদম না। আমি আপনাকে চিনিনা। ফোন রাখেন। আর ফোন দিলে খবর আছে।
রিপ হেসে বলল
‘ ঠিক আছে।
____________
ম্যাচ শেষ করে বাড়ি ফিরলো মাহিদ। বাড়িতে ঢুকতে ঢুকতে নীরা মুনাকে ডাক দিল। মুনা ছুটে এল। বলল
‘ এসেছিস? যাহ তাড়াতাড়ি গোসল নে। নিশিতার শ্বশুরবাড়ি যাবি তো।
‘ মেরিমা কই?
‘ তোর মা তোর আর তোর বাপের উপর সেইরকম রেগে আছে। তোরা বাপ পুত নাকি তলে তলে এক। তোর মাকে কিছুই জানাস না।
মাহিদ হাসলো। ডাকলো, মেরিমাআআআচআ,,,
নীরা শুনলো কিন্তু এল না। মাহিদ হেলেদুলে নিজের ঘরে চলে গেল। গোসল নিয়ে ওয়াশরুম থেকে বের হতেই দেখলো নীরা হাতে একটা প্লেট নিয়ে হাজির।
‘ এই আপেলের টুকরোগুলো খেয়ে যেন বের হয়।
মাহিদ মাথা মুছতে মুছতে নীরার কাছে গেল।হাত দিয়ে নীরাকে আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে ধরে বলল
‘ ওমা মেরিমা রাগ করো কিল্লাই বাপের বউ?
নীরা ধস্তাধস্তি করতে করতে বলল
‘ হুহ, কে তোর বাপের বউ? আমি কারো বউ না। কারো মা না। ছাড়।
মাহিদ হো হো করে হাসলো। নীরার কপালে ঠেসে চুমু খেয়ে বলল
‘ ধুর মাইয়্যা এত রাগ টাগ ভালা লাগেনা বাপ। বাপের লগে এত রাগ দেখাও ক্যান?
নীরা শান্ত হলো। মাহিদের পিঠে চড় মেরে বলল
‘ মাথা মুছ বেয়াদব ছেলে। মাথা মুছতে তোর এত আলসেমি ক্যান বুঝিনা আমি।
মাহিদ নীরাকে তোয়ালে ধরিয়ে নিল। নীরা মাথা মুছে দিতে দিতে বলল
‘ মাইশা আমারে একটা কথা বলছে।
মাহিদ থেমে গেল। মুখ থেকে হাসি উবে গেল। বলল
‘ কি বলেছে?
নীরা ব্যস্ত হয়ে তোয়ালে ঝাড়তে ঝাড়ত বলল
‘ বলছে আর কি। তোরে বলা যাবে না যতক্ষণ না তার উপযুক্ত প্রমাণ আমি না পাই।
মাহিদ নীরার সামনে গিয়ে দাঁড়ালো। বলল
‘ আমায় বলো মা।
নীরা অন্যদিকে চোখ ঘুরিয়ে বলল
‘ বলব না। বলতে পারব না। তোর বাপকেই তো সব বলিস, আমাকে তো কিছু বলিস না। তাই তোকে ও কিছু বলব না আমি।
মাহিদ একদৃষ্টে তাকালো নীরার দিকে। বলল
‘ মা হেয়ালিপনা ভালো লাগেনা। সোজাসাপ্টা বলো কি হয়েছে। নইলে আমি এক্ষুনি মাইশার কাছে যাব।
‘ যাবিই তো। মাইশা নিশিতার শ্বশুর বাড়িতেই আছে। পিহু ওকে সাথে করে নিয়ে গেছে।
মাহিদ তাড়াহুড়ো করে আলমিরায় শার্ট খুঁজতে ব্যস্ত হয়ে পড়লো। নীরা নিজে গিয়ে খুঁজে দিল। বলল
‘ এই শার্টে তোকে ভালো লাগে।
মাহিদ কেড়ে নিল। চুপচাপ পড়ে নিল শার্ট। হাতের ঘড়ি খুঁজতে ব্যস্ত হলো। নীরা ঘড়ি, পারফিউম জুতো খুঁজে দিল। বলল
‘ নিজের জিনিস নিজেকে খুঁজে নিতে আর বুঝে নিতে হয় মাহি।
মাহিদ তাকিয়ে থাকলো নীরার দিকে কেমন চোখে । নীরা তার শার্টের কলার ঠিক করে দিল। হাতের কব্জিতে ঘড়ি পড়িয়ে দিতে দিতে বলল
‘ অবাক হয়ে কি দেখছিস? আমি কি ভুল কিছু বলেছি? হারিয়ে যাওয়া টাকা, ধনসম্পদ, স্বাস্থ্য, সুখ, সব ফিরে আসে। কিন্তু,,
এবার মাহিদের দিকে চোখ তুললো নীরা। মুখের দুপাশে হাত রেখে হেসে বলল
‘ সময় আর মানুষকে ফিরে আসেনা।
মাহিদ পায়ে জুতো পড়ে নিল। কোনো কথা না বলো চুপচাপ বেরিয়ে পড়লো। নীরা তার পেছন পেছন ছুটে বলল, মাহি কিছু তো মুখে দিলিনা। এই মাহি?
_____________
মাহিদকে দেখে নিশিতা খুশি হয়ে গেল। বলল, মাহিদ ভাই তুমি দুপুরে এলেনা কেন? কত মজা হয়েছিল তখন।
‘ তোমার জন্য সবাইকে রেখে দিয়েছি। রাতের খাবার খাইয়ে সবাইকে ছাড়ব।
‘ আমি আসব সেটা কে বলছে?
‘ আন্টি ফোন করে ভাইয়াকে বলছে। ভাইয়া তো খুব রেগে আছে তোমার উপর।
‘ এখন কোথায়?
‘ ওই তো জিয়াদের সাথে ছাদে। যাও না। সবার জন্য নাশতা পাঠাচ্ছি।
মাহিদ চলে গেল। নিনিত তাকে দেখে মুখ ফিরিয়ে নিল। মাহিদ গিয়ে পিঠ জড়িয়ে ধরে বলল
‘ শালা রাগ করোস ক্যা?
নিনিত বলল
‘ নিজের বোন হলে যেতে পারতি? আমি তোকে কাল রাত থেকে কত করে বললাম যে আজ নিশুর শ্বশুর বাড়ি আসতে হবে। তোর ম্যাচটাই ইমপোর্টেন্ট হয়ে গেল?
‘ তুই তো আমার দোস্ত। তুই বুঝবি কিন্তু ওদের আমি অনেক আগেই কথা দিয়েছিলাম যে আমি খেলতে যাব। সরি রে দোস্ত।
জিয়াদ হেসে বলল
‘ ভালোই হয়েছে। সবাইকে রেখে দিতে পেরেছি। চলো মাহিদ নাশতা সেড়ে ফেলি।
মাহিদ নিনিতের পিঠ চাপড়ে দিয়ে বলল
‘ রাগ কমা শালা।
নিনিত কথা বলল না। তবে মাহিদ যে শেষমেশ এসেছে সে এটাতে খুশি।
ছোট্ট করে সন্ধ্যার খাওয়া দাওয়া হলো। কম বেশি মেহমান আছে এই বাড়িতে। পিহু মাইশা আর বাকিরা গল্প করছিল নিশিতার সাথে। ইশা ফোন করায় পিহু একটু বের হয়েছে রুম থেকে। দেখলো মাহিদ নিশিতার ঘরের দিকে তাকিয়ে ফোন কথা কানে দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। পিহু বেরোতেই পিহুর মুখোমুখি হয়ে গেল। একপলক তাকিয়ে সরে পড়লো মাহিদ। পিহু মন খারাপ করে অনেক্ক্ষণ ঠাঁই দাঁড়িয়ে রইলো দরজার কাছটাই। মাহিদ আর এল না। পরে ইশার সাথে কথা বলে রুমে ঢুকে পড়লো পিহু। মাইশা তখন গল্পে মশগুল বাকিদের সাথে। পিহু তাকে ডাকলো। বলল
‘ আপনার ফোন কোথায়?
মাইশা কথা থামিয়ে বলল
‘ ব্যাগে।
পরে আবার কথায় ব্যস্ত হয়ে পড়লো সে। কিন্তু যখন ফোন হাতে নিল তখন দেখলো অনেকগুলো কল এসেছে মাহিদের ফোন থেকে। মাইশা ফোন হাতে নিয়ে রুম থেকে বের হতেই যাচ্ছিল। একটি শক্তপোক্ত হাত টেনে নিয়ে গেল তাকে।
পিহুর চোখ এড়ালো না সেটি।
মাইশা হতভম্ব মাহিদের আচরণে। বিস্ময় নিয়ে বলল
‘ কি হয়েছে মিঃ মাহিদ? আমি কি কোনো দোষ করেছি?
মাহিদ নিজেকে শান্ত রাখার চেষ্টায় থাকলো। হাতের আঙুল দিয়ে মুখ মুছে জিভ দিয়ে ঠোঁট ভিজিয়ে বলল
‘ আপনার ফোন চেক করেছেন? কতবার কল দিয়েছি?
‘ সরি। সাইলেন্ট ছিল। আমাকে ডাকতে পারতেন। কোনো সমস্যা?
‘ মাকে কি বলেছেন আপনি? মা সেটা আমাকে বলতে চাইছেনা। কি বলেছেন?
মাইশা একটু ভড়কে গেল। আমতাআমতা করতে করতে বলল
‘ ওটা এমন একটা কথা যেটা শুধু আমার আর আন্টির মাঝখানে শোভা পায়। আপনাকে সেটি বলা যায় না মিঃ মাহিদ।
মাহিদের কপালে ভাঁজ। মাইশা বলল
‘ আর কিছু জিজ্ঞেস করবেন?
মাহিদ চুপ করে থাকলো। মাইশা বলল
‘ তাহলে আমি আসি।
মাহিদ মাথা নাড়লো একটুখানি। রাতের খাওয়া দাওয়া শেষ হলো। পিহু চুপচাপ। সবাই এত মজামাস্তি করছে তার সেদিকে মনোযোগ নেই। সবাই বেরোনোর পূর্বে নিশিতা নিনিতকে জড়িয়ে ধরে আবার কান্নাকাটি শুরু করলো। নিনিত হেসে ফেলল বোনের ছেলেমানুষী দেখে। কপালে চুমু দিয়ে বলল
‘ আমি ঘনঘন আসব বনু। এভাবে কেউ কাঁদে? তুই এভাবে কাঁদলে আমার যেতে ইচ্ছে করে।
‘ যেওনা। কেউ যেওনা৷
নিনিত আবারো হাসলো। মাথায় ঘনঘন হাত বুলিয়ে বলল
‘ মাহি আমরা আসব না? পরশু আসব। মাহি ঠিক আছে?
মাহিদ মাথা নাড়লো। নিশিতা বলল
‘ পাক্কা!
‘ পাক্কা।
‘ পিহু আর মাইশাকে ও নিয়ে আসবা।
‘ আচ্ছা আচ্ছা।
‘ পিহুকে তাড়াতাড়ি আমাদের বাড়িতে নিয়ে আসো না। আম্মা আব্বা এখন পুরো বাড়িতে একা। তুমি তো হসপিটালে সময় কাটাও। পিহুকে নিয়ে আসো। কখন আনবে?
নিনিত তারপর মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে দিতে বলল
‘ আনব।
নিশিতা খুশি হলো। পিহুকে বলল
‘ বান্ধবী এবার তোর বিয়ে খাব। মাহিদ ভাই তোমার বিয়ে ও খাব। মাইশুকে তাড়াতাড়ি নিয়া যাও। তোমাদের দুজনের বিয়েতে হেব্বি আনন্দ করব আমি। কি খুশি!
নিনিত বলল
‘ তাহলে এবার আসি? ভালো থাকিস। আর তুই আর জিয়াদ তো যাবি পরশু দিন আমাদের সাথে।
নিকিতা আবার তাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে পাখির ছানার মতো গুঁজে গিয়ে কেঁদে উঠলো। পিহুর দিকে চোখ যেতেই চোখ সরু হলো নিনিতের। বেরোনোর সময় বলল
‘ তোমার কি মন খারাপ?
পিহু তোতলাতে তোতলাতে বলল
‘ নিশুর জন্য খারাপ লাগছে।
‘ তাহলে পরশু বাসায় চলে এসো। ও তো আসবে।
পিহু মাথা দুলিয়ে বলল
‘ চেষ্টা করব।
__________
সবাই একে একে একেক রিকশায় উঠে চলে গেল।
মাইশা বলল,
‘ পিহু তুমি ও আসো না। আমরা একসাথে যাই।
নিনিত বলল
‘ আরিশা তো আপনার আর ও সামনে লেগে যাবে। আপনি একা একা অতদূর যেতে পারবেন?
‘ কেন পারব না? পারব।
নিনিত বলল
‘ না আপনার বাবা কি বলবে আপনাকে একা ছাড়লে। মাহিদ তো আছে। ও দিয়ে আসুক।
মাহিদ তখন ফোনে মগ্ন। নিনিত বলল
‘ মাহিদ শুনছিস?
মাহিদ চোখ তুলে বলল
‘ কি?
‘ মাইশাকে দিয়ে আয়। তোর রেসপনসেবলিটি এটা।
মাহিদ বলল
‘ সিএনজি ডাক। রিকশা তো আর লাগছেনা।
‘ এখন সিএনজি কোথায় পাব? বাসস্ট্যান্ডের দিকে যেতে হবে।
‘ যাওয়া যাক।
নিনিত বলল
‘ আরিশা, তোমরা হাঁটতে পারবে?
মাইশা বলল
‘ কেন পারব না। এই তো সামনেই।
‘ তাহলে চলুন।
চারজনেই হেঁটে বাসস্ট্যান্ডে পৌঁছালো। তারপর সিএনজিতে উঠে পড়লো।
প্রথমেই নিনিত নেমে পড়লো। তারপর চৌধুরী বাড়ির সামনে পিহু। পিহু নামতেই মাহিদ পেছনে এসে বসলো। মাইশা হা নেড়ে বলল
‘ পিহু আবার দেখা হবে। বাই।
পিহু মাথা দুলালো। সিএনজি আবার ছেড়ে দিল। মাইশা বলল
‘ আপনাকে তো পিহুর সাথে একবার ও কথা বলতে দেখলাম না।
‘ দরকার ছিল না। এমনি এমনি কি কথা বলব?
‘ ওহ।
তারপর মাইশা নেমে গেল। মাহিদকে বলল
‘ আমাদের বাসায় আসুন না। মা বাবা খুশি হবে।
‘ আজ না অন্য একদিন।
আর কিছুদূর গিয়ে মাহিদ নামলো খান বাড়ির সামনে।
বাড়িতে ঢুকতেই রিপের সাথে দেখা হলো মাহিদের।
‘ মাইশা আর পিহুকে বাড়িতে নামিয়ে দিয়েছিস?
‘ হ্যা।
‘ ঘুমিয়ে পড়।
নীরা তার সামনে এসে বলল
‘ মাইশা কিছু বলেছে তোকে?
মাহিদ দৃঢ়ভাবে তাকালো নীরার দিকে।
‘ বলেনি। বলবে না বলেছে
‘ ভালো করেছে। গাঁধা একটা৷
‘ কেন গাঁধা ডাকছ মা? কি করেছি আমি?
” গাঁধা জানেনা সে কেন গাঁধা। তোর দশা ও তাই। সেসব কথা থাক, নিশিতার বিয়ে তো চুবিয়ে গেল। এবার পিহুর বিয়ে ও খুব দেরী নেই। প্রস্তুতি নে।
‘ ওর বিয়েতে আমার কিসের প্রস্তুতি?
নীরার রাগ লাগলো। মাথায় চাটি মেরে বলল
‘ কাঁদার। তোর বোন না পিহু। বোনের বিয়েতে কাঁদবিনা?
মাহিদ আর কিছু বলল না। সোজা ঘরের দিকে চলে গেল শেষমেশ মা ও কি শুরু করলো তার সাথে?
________
ঘুমিয়ে পড়ার আগমুহূর্ত। মুখ হাত ধুঁয়ে ফ্রেশ হয়ে এসেছে নিনিত৷ ভীষণ ঘুম পাচ্ছে। কিন্তু তখনি তার ফোন বেজে উঠলো। ফোন তুলে কানে দিল নিনিত।
‘ কেমন আছ?
‘ খুব ভালো ডক্টর । আপনি কেমন আছেন?
‘ এইতো ভালো আলহামদুলিল্লাহ।
‘ আপনি কি ঘুমিয়ে পড়েছেন?
‘ নাহ ৷ তবে এক্ষুনি ঘুমিয়ে পড়ব। গুড নাইট।
‘ ফোন রাখছেন কেন? আমি তো নিশুর বিয়ের ছবিগুলো চাচ্ছিলাম। তাড়াতাড়ি দিন তো। কাল থেকে বলে যাচ্ছি আপনার তো হুশ নেই একদম।
‘ কাল সকালে মেইল করে দেব। এখন রাখছি।
‘ আপনার হবু বউয়ের ছবি যেন মিস না হয়৷ ওকে?
‘ ওকে। তুমি ডক্টর ডাকা শুরু করলে কখন থেকে?
‘ আমার তো ডক্টর ডাকতেই ভালো লাগে ভাইয়া।
নিনিত হেসে উঠলো। বলল
‘ আঙ্কেল আন্টি কেমন আছে?
‘ খুব ভালো। আপনি বিয়ে কখন করছেন?
‘ দেরী আছে।
‘ তাই? ভেরি গুড। শুভ কাজ যত দেরীতে হয় ততই ভালো।
নিনিত আবার ও হেসে উঠলো। বলল
‘ শুভ কাজে দেরী করতে নেই বলে, বোকা। তুমি দেখছি কথা ও ঠিকঠাক বলতে জানোনা। কি আশ্চর্য!
‘ আপনার কাছ থেকে শিখব। আপনি তো খুব ভালো টিচার।
‘ গুড। বাংলাদেশে চলে এসো। শেখাবো।
‘ সেটা আপনাকে বলতে হবেনা।
‘ মানে?
‘ মানে কিচ্ছু না।
‘ তুমি ভীষণ অদ্ভুত মেয়ে।
ওপাশ থেকে হাসির শব্দ এল।
বিছানায় শুয়ে পড়লো নিনিত। বলল
‘ আচ্ছা রাখো এখন। ঘুমাই।
‘ কেন? আপনার হবু বউয়ের সাথে কথা বলেন না?
‘ নাহ।
‘ কেন?
‘ আমি তোমার সিনিয়র কিন্তু ।
‘ জানি। বলুন না৷ কথা বলেন না?
‘ বিয়ের পর হবে যত কথা। রাখো। তুমি তো ভীষণ পাকনা হয়ে গেছ।
‘ হু খুব। ওকে ঘুমান। কিছুদিন পর থেকে তো আর ঘুমাতে পারবেন না।
নিনিত ভ্যাবাছ্যাঁকা খেয়ে বলল
‘ কি বললে?
খিকখিক করে হেসে ফোন কেটে দিল মেয়েটি।
চলবে,,,,