মন_গোপনের_কথা #পর্ব_৩১,৩২

0
355

#মন_গোপনের_কথা
#পর্ব_৩১,৩২
লেখনীতে, পুষ্পিতা প্রিমা
৩১

মাহিদকে ঠেলে ঘর থেকে বের করে দিল পিহু। দরজা বন্ধ করে দিল। তারপর রুমের লাইট বন্ধ করে ধপ করে শুয়ে পড়লো। মাহিদ মাথার চুল চুলকে যেতে যেতে বলল

‘ শালীর একটা চুল ও রাখুম না কাল সকালে। কত্ত বড় সাহস আমারে বাইর কইরা দিল।

পিহু কানে বালিশ চাপা দিয়ে ঘুমোলো। উফফ কি একটা জ্বালা৷ কানে ওসব কথা বাজতেই আছে। কি লজ্জাশরমের কথা।

একদম খুব ভোরে ছিকুর চেঁচামেচিতে পিহুর ঘুম ভাঙলো। এখনো কাকপক্ষী ও উঠেনি তারআগেই ছিকুসাহেব উঠে গেছে। গায়ে সাদা পাঞ্জাবি, মাথায় সাদা টুপি । পিহু বলল

‘ কি সমস্যা আপনার?

‘ ছিকু দাদুর সাথি নামাজ পচচে কেন? পিহুকে দাদু নামাজ পুড়ার জুন্য ডাকে কেন?

পিহু বলল

‘ যাচ্ছি। আপনি যান।

ছিকু গেল না। দৌড়ে গিয়ে একটি চিকন বেত খুঁজে আনলো। পিহুকে দেখিয়ে দেখিয়ে কপাল ভাঁজ করে বলল

‘ পিহুকে ইটা দিয়ে মারতে মন চায় কেন? দাদু মারতে বলছে কেন?

পিহু হেসে ফেলল৷ উঠে বসলো। বিছানা থেকে নেমে ছিকুকে তার কাছে টেনে এনে গাল টেনে দিয়ে বলল

‘ ওরেবাবা আব্বা আমায় শাসন করে?

‘ ছাচন করি কেন?

পিহু হেসে তার গালে আদর দিল। বলল

‘ এক্ষুণি যাচ্ছি কলিজা। আপনি যান।

ছিকু চলে গেল।

_____________

সোফার উপর বিড়াল ছানার মতো ঘুমোচ্ছে ছিকু। ইশা এসে তাকে দেখে বলল

‘ এত এত সকাল সকাল ওকে উঠতে বলে কে? দেখো তো কোথায় ঘুমোচ্ছে।

মাহিদ মাথার চুল ঝাড়তে ঝাড়তে এল। ছিকুকে ঘুমোতে দেখে হেসে ফেলল। বলল

‘ ছিকুশালা ওখানে ঘুম কেন?

ইশা বলল

‘ দেখেছিস কান্ড? একটু কোলে নে মাহি পড়ে গেলে তো বিপদ৷

মাহিদ গিয়ে তাকে কোলে তুলে নিল। আদি এসে মাহিদের সামনাসামনি বসলো। বলল

‘ কি অবস্থা মাহিদ সাহেব?

‘ এখন কোনো অবস্থা টবস্থা নাই বাপ। বেড়াইতে আসছি।

আদি হেসে বলল

‘ বিয়েশাদীর কি অবস্থা? দেরী আছে নাকি শীঘ্রই?

মাহিদ মনে মনে বলল

‘ শালা শ্বশুর!

‘ দেরী নাই। বিয়াতে দেরী করতে নাই।

আদি হেসে উঠলো।

মাহিদ চা নাশতা খাওয়ার পরপরই বেরিয়ে গেল। পিহু তার সামনে আসেনি। তার ভীষণ লজ্জা লজ্জা পাচ্ছে মাহিদ ভাইকে দেখলে।

___________

মাত্রই ডিউটি সেড়ে বাড়ি ফিরেছে নিনিত। নিকিতা বেগমের চিল্লাচিল্লি শুনতে পাচ্ছে সে। সে ফ্রেশ হলো মাত্র। নিকিতা বেগম চলে এলেন তার রুমে। বলল

‘ তোর সাথে কি পিহুর কোনো সমস্যা হয়েছে নিনিত?

নিনিত অবাক গলায় বলল

‘ নাহ। কেন?

‘ তো সমস্যা না হলে চৌধুরী সাহেব কেন বলল আমাদের আরেকটু সময় নেওয়া উচিত? হ্যানত্যান ? কেন? তোর সমস্যা নাকি পিহুর?

চিল্লাচিল্লি কেন করছে তা দেখার জন্য জালিশা মাত্রই নিনিতের ঘরের কাছাকাছি এসে দাঁড়িয়েছে। নিনিত কারো পায়ের আভাস পেয়ে দরজার কাছে গিয়ে দাঁড়ালো। তারপর বের হলো। জালিশা তাকে দেখে ভয়ে চমকে উঠলো। আমতাআমতা করতে করতে বলল

‘ মাত্রই,,,

‘ তোমার ঘরে যাও।

জালিশা মন খারাপ করে চাইলো।

‘ কি হলো? যাও।

জালিশা মন খারাপ করে চলে গেল। নিনিত ঘরে ঢুকে বলল

‘ মা শোনো,

‘ কিচ্ছু শুনতে চাই না আমি। চৌধুরী সাহেব কি লুকোতে চাইছেন আমার কাছ থেকে? তুই নিশ্চয়ই সব জানিস।

নিনিত বলল

‘ মা আমাকে কিছু বলতে তো দাও।

নিকিতা বেগম হাত ছাড়িয়ে হনহনিয়ে বের হয়ে গেল। নিশিতাকে ডেকে বলল

‘ পিহুর কি কারো সাথে সম্পর্ক টম্পর্ক আছে?

‘ না মা। ও তো ওসবে ছিল না কখনো। আমি সত্যি বলছি। আমি ওকে চিনি খুব ভালো করে।

‘ তোর ভাই কাউকে পছন্দ করে?

‘ ভাইয়া? মা তুমি কি পাগল? ভাইয়া পড়ালেখা ছাড়া কিছু বুঝে? তবে পিহুকে পছন্দ করে অবশ্যই।

নিকিতা বেগম শান্তি পেলেন না। তাই ইশাকে ফোন করলেন। ইশা প্রচন্ড ভড়কে গেল নিকিতা বেগমের গলার স্বর শুনে। শেষমেষ বলল, আমি পরীর আব্বার সাথে কথা বলে আপনাকে সব জানাচ্ছি।

ভীষণ চিন্তায় পড়ে গেল ইশা। কি বলে ফেলেছে ডক্টর?

__

নিনিত আদিকে ফোন করলো। আদি সাথে সাথেই ফোন তুলে বলল

‘ কি ব্যাপার? তোমার মা বকেছে?

‘ স্যার জালিশার আমাকে পছন্দ হতেই পারে। কিন্তু আমি তাকে পছন্দ করিনা। পছন্দ নাই হতে পারে। আমার পরিবার ও তাকে পছন্দ করে না। অপছন্দ করি কিংবা করে এমনও না। ও ভালো মেয়ে। কিন্তু আমার পরিবার আরিশাকে পছন্দ করে। আপনি প্লিজ বিয়েটা ভাঙবেন না।

‘ কিন্তু নিনিত…..

‘ আরিশা ভালো থাকবে স্যার। আপনি আমার উপর আমার পরিবারের উপর বিশ্বাস রাখতে পারেন।

কথাটুকু বলে ঘাড় ঘুরাতেই আবছা আলোয় দাঁড়ানো একটি রমণীকে চোখে পড়লো নিনিতের। আদি কি বলল সেদিকে আর কান গেল না। প্রতিভিম্বটির দিকে এগিয়ে যেতেই মেয়েটি সরে গেল। নিনিত শক্ত গলায় ডাক দিল

‘ জালিশা দাঁড়াও। আর এক পা ও এগোবে না। দাঁড়াও বলছি।

জালিশা এক পা ও দাঁড়ালো না। রুমের দরজা বন্ধ করে কম্পিত পায়ে হেঁটে আয়নার সামনে গিয়ে দাঁড়ালো। তার হাত পায়ের সাথে সাথে ঠোঁট কাঁপছে। কাঁপছে চোখের পাতা। আয়নায় নিজের প্রতিভিম্বটিকে ভেঙে চুরমার করে দিতে ইচ্ছে হলো। তার সব সৌন্দর্য কেন এত তুচ্ছ? সে যাকে এত করে চায় তার কাছে তার কোনো মূল্যই নেই। ঠোঁট ভেঙে কান্না এল তার। এই নৈঃশব্দ্য ঘেরা রাতে ভিজে গেল তার মাথার নিচে আস্ত একটা বালিশ। কোথাও ভীষণ রকম যন্ত্রণা হচ্ছে। এত করে ভালোবাসার পরে ও যে তাকে ছাড়া অন্য কারো কাছে নিজের ভালো থাকা খুঁজে, সে মানুষটা তার না হোক। না হোক তবে।

নিনিত ভীষণ অসহায় বোধ করলো। তাইতো মাঝরাত্রে বন্ধুকে ফোন দিল। মাহিদ ফোন তুলে রসিকতা করে বলল

‘ ডাক্তার শালা এতরাতে কি মনে করে? কি অবস্থা।

‘ দোস্ত আমি একদম ভালো নেই৷ আমাকে সাহায্য কর। আমি কি করব কিছুই বুঝে উঠতে পারছিনা। আমি কাউকে কষ্ট দিতে চায় না। মাকে ও না, কাউকে ও না। আমার জন্য কেউ কষ্ট পাক সেটা আমি চাই না। তারপরও আমার দ্বারা ভুল হয়ে যাচ্ছে।
তুই কিছু একটা কর। জালিশাকে প্লিজ একটু বুঝা এসব ওর আবেগ। ও এখনো ছোট তাই ওসব পাগলামি করছে। প্লিজ কিছু একটা কর৷

মাহিদ বলল

‘ আমার কিছু করার নেই দোস্ত। শুধু বলব জালিশার জায়গায় নিজেকে দাঁড় করা। ব্যস।

চলবে,,,

#মন_গোপনের_কথা
#পর্ব_৩২
লেখনীতে, পুষ্পিতা প্রিমা

মাহিদ ক্রিকেট ঘুরাতে ঘুরাতে বাড়ি ফিরলো মাত্র। রিপকে দেখে ক্রিকেট নিচে নামালো৷ রিপ বলল

‘ সামনে তোর পরীক্ষা খেয়াল আছে?

মাথা নাড়লো মাহিদ। তারপর ঘরে যেতেই নীরা এল। বলল

‘ ছিকুর নাকি গায়ে জ্বর উঠেছে৷ কিছু খেতেটেতে চাইছেনা। নিউমোনিয়া নাকি বেড়ে গেছে।

‘ কখন হলো এসব? আমি তো কাল ঠিকই দেখে আসলাম।

‘ অসুখ-বিসুখের টাইম ঠিকানা ঠিক থাকে? তোর বড়মা ওকে দেখতে যেতে চাইছে। আমি ও যাচ্ছি। তোরা বাপ ছেলে জ্যাটা মিলে রান্না করে খাস। ঠিক আছে?

যেন মামার বাড়ির আবদার। মাহিদ বলল

‘ এ্যাহহ?

‘ হ্যা।

‘ ইয়ামপসবিল। আমি রান্না টান্না করবার পারতাম না বাপের বউ। ইয়ামপসিবল। শালা ছিকু শালা আমারে শান্তি দেই না।

‘ এভাবে বলছিস কেন? বাচ্চাটা অসুস্থ। তোর কি আর কোনো কাজ নেই ওকে গালি দেওয়া ছাড়া। তারপরও ওই বাচ্চাটা মিহি মিহি করে।

‘ করে ক্যান? আমি ওরে আমার নাম জপতে কইছি? শালা ছিকু।

নীরা বলল

‘ অত কথা জানিনা। তোর বাপ বলছে থাকতে পারবে তাই আমি আর তোর বড়মা চলে যাচ্ছি। তোরা রান্না করে খাস। শোন তোর বড় আব্বাকে রান্নাঘরে একদম পাঠাবি না। তুই আর তোর বাপ মিলে করবি। তোর বাপকে বেশি চুলার কাছে দাঁড়াতে দিবিনা। তুই করবি যা করার।

‘ ওরেব্বাপ আমি অন্যের জামাই। পারুম না। কালা হইয়্যা গেলে আমারে কেউ বিয়া করবো না। কেন বুঝোনা না বাপ?

নীরা খিক করে হেসে আবার হাসি চাপা দিল। বলল

‘ যেটা বলেছি সেটা মনে রাখবি। আমরা নাইওরে যাইতাছি।

মাহিদ ধপাস করে বিছানায় শুয়ে পড়লো।

_____

ছিকুকে দেখার জন্য নীরা মুনা চলে গেল চৌধুরী বাড়িতে। রিপ নিজ হাতে রান্না করলো রাতের জন্য । লন্ডনে থাকার সময় সে নিজে রান্না করে খেত। তারপর অনেকগুলো বছর রান্না না করায় ভুলতে বসেছে। মাহিদকে ডাকলো। মাহিদ এক ডাকে সোজা দৌড়ে এল।

‘ কি লাগবে আব্বা ?

রিপ বলল

‘ লবণ আর ডিমের বাক্সটা খুঁজে দে।

‘ মাকে ফোন করি।

‘ এখানে আশেপাশে আছে। খুঁজে দেখ।

মাহিদ বিড়বিড় করলো

” শালার বাপ।

খুঁজে পেল অবশেষে। রিপ বলল

‘ ডিম ভেঙে নে তিনটা।

‘ আমি খাব না। দুইটা ভাঙি।

‘ চারটা ভেঙে নে।

‘ চারটা কেন?

‘ তুই দুইটা খাবি।

মাহিদ সোজাসাপটা তিনটা ভাঙলো। ভাঙতে গিয়ে মহামুশকিল। ডিমের খোসা পড়ে গেল ডিমের ভেতর। মহাযন্ত্রণা।
রাগ লাগলো মাহিদের। রিক এসে বলল

‘ কি করছিস বাপ ছেলে?

রিপ বলল

‘ তুমি কেন এলে? হয়ে গেছে আমার।

মাহিদ ইশারায় কি যেন বলতে চাচ্ছে রিককে। রিক জোরে বলল

‘ কি হয়ছে?

মাহিদ মাথা নিচু করে ডিমের খোসা তোলায় মনোযোগ দিল। রিপ বলল

‘ একটা কাজ ও ঠিকঠাক পারিস না?

থম মেরে দাঁড়িয়ে থাকলো মাহিদ। রিপ ডিম ফাঁটিয়ে দেখালো। বলল

‘ এভাবে ফাটতে হয়।

রিক বলল

‘ শিখ শিখ। রান্নাবান্না শিখে নে বাপ। বউরে রান্না করে খাওয়াতে হবে।

মাহিদ বিড়বিড় করে বলল

‘ ইয়ামপসিবল। ডাক্তারের বাচ্চিরে রান্না কইরা খাওয়াতে পারুম না বাপ। কাভি নেহি।

রিক বলল

‘ আজ কি দিয়ে চলবে?

‘ ওরা তো রাতের জন্য সব রান্না করে গিয়েছে। শুধু ডিম ভাজছি। বাসি খাবার খেতে পারব না তাই বেশি রান্না করতে বারণ করেছি।

রাতের খাওয়া দাওয়া কোনোমতে চললো। ওদিকে নীরা মুনাকে দেখে খুশিতে আত্মহারা ছিকু। জ্বরের শরীরে মুনার কোলে একবার, নীরার কোলে একবার যেতে লাগলো। তারপর কিছুক্ষণ পরে বলল

‘ মিহি আচেনা কেন? মিহি পুঁচা কেন?

নীরা বলল

‘ মিহিকে আবার পাঠাবো বাবুসোনা।

___________

রান্নাঘরে কাজ চলছে। মাহিদ রিপের পেছন পেছন এটা ওটা এগিয়ে দিচ্ছে। উফ মা বড়মা সারাবছর কেমনে যে রান্না করে খাওয়ায়? এই রান্নাবান্না এত কষ্টের কাজ!
রিক দুজনের কাজ দেখছে। নিজে ও কিছু কিছু সাহায্য করছে। ফ্রিজ থেকে বের করা সামুদ্রিক মাছ ধুঁতে গিয়ে ঝামেলা বাঁধিয়ে ফেলল মাহিদ। বড় কাঁটা বিঁধে গেল আঙুলের কোণায়। সে কাঁটা ছাড়িয় নিতেই গড়গড়িয়ে রক্ত বের হলো। রিপ তাড়াতাড়ি ফার্সএইড বক্স এনে ব্যান্ডেজ করালো। বলল

‘ তুই যাহ। লাগবে না।

মাহিদ গেল না। রিপ তাকে কিছু করতে দিল না। তারপর ও সে গেল না৷ এসব কাঁটাছেড়া সামান্য। বারোটা বাজবে আর কিছুক্ষণ পর। ভাতের চাল এখনো ধোঁয়া হয়নি। দরজায় কলিং বেল বাজতে লাগলো। মাহিদ দরজা খুলতে গেল। দরজা খুলে যাকে দেখলো তাকে দেখার জন্য মোটেও প্রস্তুত ছিল না সে।
পিহু ভুরু উঁচিয়ে বলল

‘ হা করে কি দেখছ? লজ্জা শরম নাই? বেয়াদব।

মাহিদ ঠোঁট বাঁকা করে হেসে বলল

‘ আরে আমার বল্টুর হবু ইসটিরি কোথাথেকে আইলো বাপ?

‘ বেয়াদব। কিসের ইসটিরি? ফালতু কথা বলার জায়গা পাও না। পথ ছাড়ো। মামাকে ডাকব?

মাহিদ পথ ছাড়লো। পিহু বাড়িতে পা রেখে মামা মামা ডাকতে ডাকতে রান্নাঘরের দিকে ছুটলো হাতের ব্যাগপত্র নিয়ে। রিপ রিক তাকে দেখে চরম অবাক। পিহি তাদের চমকে দিতে পেরে ভীষণ খুশি। রান্নাঘরের সব পাতিলরে ঢাকনা সরিয়ে দেখে বলল

‘ সব রান্না কি শেষ?

‘ না। ভাত রান্না হয়নি এখনো।

পিহু বলল

‘ আর রাঁধতে হবে না। আম্মা পাঠিয়েছে সব। তোমাদের আর রান্না করতে হবে না। এগুলো দুপুরে হয়ে যাবে। রাতে আমি রান্না করব। মামিরা কয়েকদিন থাকবে।

রিপ বলল

‘ আমাদের রান্না করে খাওয়াতে চলে এসেছ?

‘ হাহ। আম্মা পাঠিয়েছে অবশ্য। তার ভাইরা কেন রান্না করে খাবে?

রিক হেসে বলল

‘ একদম ঠিক। এটা কি রান্না করে খাওয়ার বয়স? এখন পুত্রবধূর রান্না খাওয়ার বয়স। রিপ তাকাতেই রিক সতর্ক হয়ে বোকা হাসলো। পিহু রেগে বলল

‘ কচুর বধূ।

মাহিদ রান্নাঘরের বাইরে উঁকিঝুঁকি দিতে লাগলো। রিক বলল

‘ তোর আর কোনো দরকার নাই বাপ। যাহ।

‘ বাড়ির বাইরে যাব?

রিপ বলল

‘ ফোন দিতে না হয় মতো।

মাহিদ তো উড়াল দিক সুযোগ বুঝে। ডাক্তারের বাচ্চি রাইন্ধা মর বাপ।

ইশা দুপুরের সব রান্না পাঠিয়েছে। রাতে ও খেতে পারবে।

দুপুরের খাওয়া দাওয়া সেড়ে মাহিদ আবার কোথায় যেন চলে গেল।
সন্ধ্যার পর এল। পিহু তখন কিছু সবজি ভাজি করছে। মাছ মাংস আছে। মাহিদ এসে সোজা রান্নাঘরে চলে গেল রিপ আর রিকের চোখ এড়িয়ে। পিহু গুনগুন করে গান গাইতে গাইতে রান্না করছে। মাহিদ গিয়ে বলল

‘ তোর গানের মারে বাপ। চা দে। চা খামু।

পিহু ভড়কে উঠে হাতের সবজির বাটি ফেলে দিল। ঝনঝন করে আওয়াজ হতেই চেঁচিয়ে উঠলো পিহু। রিপ আর রিক ছুটে আসতেই মাহিদ শক্ত হয়ে গেল। পিহু বলল

‘ আসার সাথে সাথে গালাগালি করো কেন? আশ্চর্য!

পিহু সবজি তুলে চুপচাপ কাজ করতে লাগলো। রিপ এসে বলল

‘ কি হয়েছে পিহু?

‘ কিছু হয়নি মামা।

মাহিদ পানি খাচ্ছে। পিহু রিপের দিকে ফিরলো। বলল

‘ মাহিদ ভাই চলে এল তো। আমি ভয় পেয়ে চিৎকার দিয়েছি। বাটিটা পড়ে গেল। তেমন কিছু না।

রিপ চলে গেল।

মাহিদ বলল

‘ এই বেডি রান্নাঘরটা আমার বউয়ের বুঝছোস? সব জিনিস সুন্দর কইরা সাজায়গুছায় রাখবি বাপ। নইলে খবরদার তোরে খাইছি আমি৷

পিহু মুখ মোঁচড়ে দিয়ে বলল

‘ ঢং।

মাহিদকে চা বানিয়ে দিল পিহু। মাহিদ চা টানতে টানতে বলল

‘ না তেরে দেওয়া যাইতো না বাপ। তোর চা মজা। তোর চা খাওয়ার লগে হলে তোরে এইখানে রাইখা দিমু। বুঝছোস?

পিহু জবাব দিল না। সবজিগুলো বেসিনে ধুঁয়ে বলল

‘ ধুরর তুমি ছিলানা কত ভালো ছিলাম আমি। যাও তো আমাকে রাঁধতে দাও। নইলে আমি মামাকে ডাকবো।

‘ চুপ বেডি। ঢং করোস? তোরে কি আমি জড়াই ধরছি যে তুই কাজ করতে পারতেছোস না?

পিহু কান ঝাঁ ঝাঁ করে উঠলো। ছিঃ ছিঃ কি বেয়াদব কথা৷

পিহুকে বিরক্ত করে মাহিদ চলে গেল তার ঘরে। পিহু রান্নাবান্না শেষ করে রিপ আর রিকের সাথে বসে টিভিতে নিউজ দেখতে দেখতে গল্পগুজব করলো অনেক্ক্ষণ। ছিকুকে নিয়ে যত কথা। রিপ আর রিককে ও যেতে হবে ছিকুকে দেখতে।
তারপর রাতের খাওয়াদাওয়া শেষ করলো সবাই মিলে। রিপ মাহিদকে বলল সবাইকে বেড়ে দিতে। মাহিদকে তাই তাই করতে হলো। পিহু খেতে খেতে মিটিরমিটির করে হাসলো।

_____

রান্নাঘরের সবকিছু পিহুর সাথে গোছগাছ করতে হলো মাহিদকে। বাপের আদেশ বলে কথা৷ পিহুর উপর রেগে বুম হয়ে থাকলো মাহিদ। শালীরে উচিত শিক্ষা দিতে হবে আজ।

সব গোছগাছ করে সবাই ঘুমিয়ে পড়লো। পিহু ও ঘুমিয়ে পড়লো। কিছুক্ষণ পর ঘুম ছুটে গেল তার। পায়ের অদ্ভুত আওয়াজ আর একটি ছায়া তার ঘরের দরজার ওপাশে। দরজা লাগাতে উঠে গেল পিহু। সারা শরীর শীতল হয়ে গেল তার, বোরকা পড়া কাউকে হাঁটতে দেখে। যেন কথা বলার শক্তি ও হারিয়ে গেছে। পিহু কাঁপতে লাগলো তরতরিয়ে। সর্বশক্তি দিয়ে চিৎকার দেওয়ার সময় বোরকা পড়া অবয়বটি তার মুখ চেপে ধরলো। ফিসফিস করে বলল
‘ বেহুশ হইস না বাপ। এইতা দাদীর বোরকা। তোরে ডর লাগাতে চাইছি। কিন্তু তুই তো বাপ আমার বাপ জেঠারে ঘুম থেকে তুইলা ফেলবি।

পিহু তাকে জোরে ধাক্কা মেরে বলল

‘ বেয়াদব লোক।

মাহিদ হেসে বোরকা খুলে ছুঁড়ে মারলো। পিহুর হাত ধরে টেনে নিয়ে যেতে যেতে বলল

‘ আয়।

‘ কোথায় যাব?

‘ আইসক্রিম খাইতে যামু বাপ। আয়। আওয়াজ করিস না। বাইরে তালা লাগাইয়া চইলা যামু।

পিহু বলল

‘ মামারা জানলে কি বলবে। ধুর আমি যাব না। আমার ভয় করে।

মাহিদ তার হাত ছেড়ে দিল। একাই হনহনিয়ে চলে যেতে যেতে বলল

‘ যাহ তোরে লাগতো না৷

পিহু কিছুক্ষণ চুপ থেকে তার পিছু পিছু যেতে যেতে বলল

‘ যাচ্ছি। রাগ করে কেন?

রাত এগারোটা। আকাশটা ঝলমলে। সড়কবাডির আবছা আলোয় হাঁটছে দুজন কপোত-কপোতী। মাহিদ পিহুর হাতটা টেনে নিয়ে গেল৷ রাস্তায় এখনো অনেক মানুষের চলাফেরা। কত ব্যস্ত মানুষ৷ মাহিদ আইসক্রিম কিনে আনলো৷ পিহুর দিকে একটি বাড়িয়ে দিয়ে বলল

‘ ধর খাহ। আর আমারে গালি দে।

পিহু নিয়ে বলল

‘ গালি দেব কেন?

মাহিদ হাসলো৷ কিছু বলল না৷ পিহু আইসক্রিম খেতে খেতে এদিকওদিক দেখছিল৷ রাতের পরিবেশ অন্যরকম সুন্দর। মাহিদকে হুট করে কোথায় যেন চলে গেল৷ আবার হুট করে কোথা থেকে দৌড়ে এল।
পিহু বলল

‘ একা রেখে কোথায় যাও? বাড়ি যাব। চলো।

‘ যাহ বাপ দূর হ। যাহ। মাইনষ্যে কত রাত অব্ধি ঘুরাঘুরি করে জানোস? শালা অশিক্ষিত।

পিহু মুখ কালো করে বলল

‘ তো এনেছ কেন?

হনহনিয়ে হাঁটা ধরলো পিহু। মাহিদ তাকে আটকালো না৷ হাঁটতে অনেকদূর চলে গেল সে। মাহিদের কোনো সাড়াশব্দ না পেয়ে ভয় করলো। সে একা যাবে কি করে?

ভয়ে গা ছমছম করে উঠলো পিহুর। মাহিদ ঠিক সেসময় দৌড়ে এল। পিহু নিজের ভয়ার্ত রূপ না দেখিয়ে সোজা হাঁটতে লাগলো। মাহিদ সামনে এসে দাঁড়ালো। পেছনে হাত লুকোনো। পিহু সামনে পিছু পিছু হাঁটতে হাঁটতে বলল

‘ দাঁড়া না।

পিহু দাঁড়ালো না। মাহিদ বলল

‘ আমি পিছু হাঁটতেছি। পড়ে যাব।

‘ যাও।

মাহিদ হেসে ফেলল। লুকোনো হাত দুটো সামনে আনলো। একগুচ্ছ টকটকে রক্তাত্ত লাল গোলাপ। পিহু থমকে গেল। মাহিদ বলল

‘ ধর। একদম দশ টাকা দিয়ে দিয়া দিছে। বেচাকেনা নাকি শেষ। তোরে আমি ভালা টালা বাসি, ধর তাই বাসি ফুল দিলাম। ধর। বাসি হলেও ফুলগুলা কিন্তু সুন্দর। ধর।

পিহুর চোখ ঝাপসা। ফুলগুলো নিল কম্পিত হাতে। মুখ দিয়ে কথা বেরোচ্ছেনা তার। চোখের জলগুলো ফেলার জন্য কোথাও পালাতে ইচ্ছে হলো।
মুখ দিয়ে অস্ফুট স্বরে বের হলো

‘ তুমি সত্যি মাহিদ ভাই? মাহিদ ভাই কখনো আমার সাথে ভালো করে কথা বলেনা।

মাহিদ হেসে উঠে তাকে টেনে বাহুবন্ধনে আবদ্ধ করে মাথার উপর ঠোঁট চেপে বলল

‘ যাহ বাপ আমি তোর কোনো ভাই টাই নই। আমি তোর জামাই।

চলবে,,,,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here